Bangla Golpo: মেয়েটি ৩

বাংলা ছোট গল্প| Bangla Love Stories| Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.
Bangla Golpo


Bangla Golpo: মেয়েটি 

(তৃতীয় পর্ব)

.

আমি চোখ মেললাম৷ পুরোটা মেলতে পারলাম না৷ আলো পড়ছিল চোখে৷ ঝাপসা ঝাপসা চোখে তমার চেহারাটা দেখলাম। খোলা চুলে কোনো এক রাজকন্যা দাঁড়িয়ে আছে যেন৷ আমি ঘুম জড়ানো স্বরে বললাম,

-কী করছো এখানে?

তমা চট করেই জবাব দিলো,

-তোমাদের জন্যে নাস্তা নিয়ে এসেছি৷ জলদি করে উঠো৷ নাস্তা খাবে৷ 

-আমার শরীর খারাপ। উঠবো না এখন৷ তুমি নাস্তা রেখে যাও৷ 

তমা খানিকটা চুপ থেকে বলল,

-শরীর কি বেশি খারাপ?

-তা জেনে তোমার কাজ নেই৷ তুমি চলে যাও৷ 

-এমন ভাবে বলছো কেন?

-আমি অসুস্থ মানুষ। অসুস্থ মানুষ কোন সময় কী কথা বলে তা বোঝা মুশকিল৷ তুমি দাঁড়িয়ে থাকলে দেখা যাবে আমি আরো বাজে কিছু কথা বলবো৷ তা শুনে তুমি কষ্ট পাবে৷ তারচে বরং তুমি চলে যাও৷ 

আমি পাশ ফিরে শুলাম। ভাবলাম তমা চলে যাবে৷ কিন্তু সে গেল না৷ দাঁড়িয়ে থাকলো। বলল,

-তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?

-না তো! হঠাৎ এই প্রশ্ন?

-কেন? তোমাকে কি আমি এমনিতেও এই প্রশ্ন করতে পারি না?

আমি চট করেই কিছু বলতে পারলাম না। কী জবাব দিবো তাও বুঝতে পারলাম না। তমা নিজ থেকেই বলল,

-তুমি এক্সিডেন্ট করেছো এই কথাটা আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করনি। কতোটা নির্দয় তুমি৷ একটা ফোন কলই তো৷ বেশি কিছু তো না!

আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। মেয়েটার স্বর কেমন জানি ভেজা ভেজা লাগছিল। বলার মতো কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সে কথাটা মিথ্যা বলেনি। হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটাকে অন্তত একবার ফোন দেওয়া উচিৎ ছিল৷ কিন্তু আমি দেইনি৷ তার কথাও আমার তেমন বিশেষ মনে পড়েনি৷ দু'একবার পড়লেও ফোন দেওয়াটা জরুরি প্রয়োজন মনে করিনি৷ এমনটা কেন হয়েছে? মেয়েটিকে তো আমি যথার্থ আপন ভাবি৷ সেই সূত্রে হলেও তাকে অন্তত এই ব্যাপারটা জানানো উচিৎ ছিল। না জানানোর একটা কারণ এটা হতে পারে যে আমি অসুস্থ ছিলাম। হুশ ছিল না। তাই তাকে ফোন দেওয়া হয়নি৷ কিন্তু আসলেই কি তাই ঘটেছে? কে জানে! তমা আবার নিচু স্বরে বলল,

-তাও আমি হাসপাতালে গেলাম। তোমার জন্যে চিন্তা হচ্ছিলো আমার। তাই দেখতাম  যাওয়া। কিন্তু ওখানে গিয়ে যখন দেখলাম তুমি একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছো তখন আর ভেতরে যাওয়ার সাহস পাইনি৷ দরজার কাছ থেকেই ফিরে এসেছি৷ নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছিল আমার৷ মনে হচ্ছিল এতো সুন্দর একটা মেয়ের সামনে গিয়ে আমি কোনো কথাই বলতে পারবো না৷ তার সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই আমার৷ এমনটা কেন মনে হয়েছিল তা আমি জানি না৷ তবে আমার ভালো লাগছিল না। কেমন জানি রাগ হচ্ছিলো৷ এ জন্যেই আসলে সেদিন দেখতে এসে এমন করেছি৷ ইচ্ছে করেই করেছি। 

কথাটা বলেই তমা চলে গেল। আর এক মূহুর্তও অপেক্ষা করলো না। আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। 

.

এরপর প্রায় দশ দিনের মতো তমার চেহারা দেখিনি আমি৷ আমিও ঘর থেকে বের হতে পারছিলাম না৷ প্রতিবন্ধীর মতো জীবন যাপন করছিলাম৷ একা একা আর ভালো লাগছিল না৷ তাই আজ বিকেল হতেই ছাদের দিকে এলাম। এই বাসায় লিফট আছে। ছাদ পর্যন্ত৷ সহজেই ছাদে আসা যায়৷ বাঁ পায়ের উপরও মোটামুটি ভর দিতে পারছি৷ হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে ফেলেছি। হাতটা মোটামুটি সেরে গিয়েছে৷ ব্যান্ডেজটা খোলা ঠিক হয়েছে কি না কে জানে! ছাদে এসে অল্প কিছুক্ষণ বসতেই তমা এসে হাজির হলো। আমাকে এখানে দেখতেই বেশ অবাক হলো সে৷ অবাক হয়ে জানতে চাইলো আমি এখানে কী করছি। শরীর স্বাস্থের কী খবর! এসব কথা! তার সাথে কথা বলে মনেই হলো না যে রাগ করে আছে৷ সেদিন সে যেভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম এই মেয়ের সাথে আমার আর কখনই কথা হবে না৷ মেয়েটা এখন যেভাবে কথা বলছে শুনে মনে হচ্ছে সে বেশ প্রসন্ন৷ মনের মাঝে গোপন কোনো ব্যাথা নেই৷ আমার সাথে বেশ ফ্রি৷ একদম আগের মতো৷ আমি মোটামুটি খুশিই হলাম। যাক মেয়েটা এসব ভুলে গিয়েছে৷ কিন্তু আচমকা লারার নাম নিতেই সে কেমন জানি আবার অস্বস্তিতে পড়ে গেল। যেন এই মূহুর্তে লারার নামটা নেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি৷ বড় অন্যায় হয়েছে। আমার এখন মনে হচ্ছে ঠিক এই কারনেই তমা চলে গিয়েছে। তার চলে যাওয়ার মূল কারণ এটিই। তা না হলে সে এভাবে চলে গেল কেন? হাসপাতালে গিয়েও দেখা করলো না লারা মেয়েটির কারণে। আশ্চর্য ব্যাপার! ওই মেয়েটার সাথে এই মেয়েটার অন্তর্নিহিত কোনো বিদ্বেষ আছে নাকি? তারা কি একে অপরকে আগ থেকেই চিনে? বান্ধুবি? কোনো কারণে ভেজাল হওয়ায় এখন একজন অন্যজনের নামও নিতে পারছে না এই ধরনের কিছু?কে জানে!

.

পরের দিন সকাল বেলাতেই তমা এসে হাজির। এই মেয়েটি যেদিনই আমাদের বাসায় আসবে সঙ্গে করে কিছু না কিছু অবশ্যই নিয়ে আসবে৷ আজও নিয়ে এসেছে৷ সকালের নাস্তা৷ গরুর মাংস আর রুটি৷ নাস্তা পেয়ে বেশি খুশিই হলাম। তাও বললাম,

-কেন যে এমন কষ্ট করতে গেলে! নাস্তা বানানো হয়তো বাসায়। 

-বুয়ার হাতের রান্না৷ কেমন হয় কে জানে৷ তাই নিয়ে এলাম৷ তবে আসার অন্য একটি কারণ আছে। 

-কী কারণ?

তমা খানিকটা চুপ থেকে বলল,

-কারণটা যেমনই হোক তোমাকে রাজি হতে হবে। 

-আগে কারণটা শুনি তো! 

তমা এবারেও চুপ থাকলো। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

-তোমাকে আজ বাইরে যেতে হবে৷ আমার সাথে। 

-বাইরে মানে?

-মানে একটু ঘুরে আসবো আরকি৷ কতোদিন তুমি ঘর থেকে বের হওনা! 

আমি তাকিয়ে থাকলাম মেয়েটার দিকে। কী বলব ভেবে পেলাম না৷ তমাও কেমন করে জানি তাকালো৷ আমি বললাম,

-এখানে দম বন্ধ লাগছিল তমা৷ ভালোই বুদ্ধি করেছো। বাইরে একটু ঘুরে আসা যাবে৷ মনটাও হালকা হবে। 

তমা চট করেই বলল,

-মনটা ভার নাকি? 

আমি হাসলাম। বললাম,

-তা নয়৷ তবে ফ্রেশনেস প্রয়োজন৷ 

তমা কিছু বলল না৷ হাসলো খানিক৷ 

.

আমরা বিকেলের দিকে বের হলাম।  তমা নিজেদের গাড়ি নিলো৷ সে ড্রাইভ করছে৷ ড্রাইভিং জানে সে৷ লাইসেন্সও আছে। আমি তার পাশের সিটে বসলাম। বললাম,

-ড্রাইভিং জানো কবে থেকে?

ও খানিকটা হেসে বলল,

-অনেক আগ থেকেই৷ বাবা শিখিয়েছিলেন৷ 

আমি হাসলাম। বললাম,

-ভালোই তো চালাও। 

তমা হাসলো। কিছু বলল না৷ আমরা তিনশো ফিটের দিকে গেলাম। ফ্রেশ রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে তমার গাড়ি। আমি জানালা দিয়ে মাথাটা বের করে খানিকটা বাতাস নিলাম। এতো ভালো লাগছিল যা বলার মতো না৷ তমা একটা জায়গায় এসে গাড়ি দাঁড় করালো৷ তারপর সে নামলো৷ আমিও এপাশ থেকে নামার চেষ্টা করলাম। তমা এপাশে এসে আমাকে ধরলো। কেমন জানি একটা স্বরে বলল,

-একা একা নামতে বলেছে কে? আমি আছি না? একটু অপেক্ষা করলে সমস্যা কী?

আমার তখনই কেমন জানি লাগল। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো আমার। আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। আমরা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এখানে মৃদুমন্দ বাতাস আছে৷ অদ্ভুত শীতল বাতাস৷ সমস্ত গা ছুঁয়ে যায় একদম। তমা আমার পাশে দাঁড়িয়ে। তার গা থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে৷ কেমন জানি মোহময় সেই ঘ্রাণ। তমা বলল,

-কেমন লাগছে?

আমি মৃদু হেসে বললাম,

-অসাধারণ লাগছে। 

তমা হাসলো। তার মুখ উজ্জ্বল। যেন আমার মাঝে এই মূহুর্তটা বিলিয়ে দিয়ে ভীষণ আনন্দিত সে৷ সে যেন কিছু একটা করতে পেরেছে। অত্যন্ত প্রিয় জনের জন্যে কিছু একটা৷ তমা বলল,

-হাঁটবে?

আমি বললাম,

-চলো। 

আমরা পিচঢালা রাস্তায় হাঁটতে থাকলাম। আমার পাশে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দরী এক বালিকা৷ এই মূহুর্তটা আমার কাছে অন্যরকম মনে হলো। এটি যেন অদ্ভুত কোনো আনন্দে ঘেরা৷ প্রবল মোহ মিশে আছে এতে। তমা চট করেই আমার হাত ধরে ফেলল। আমার সমস্ত শরীর শিউরে উঠল তখন। কেমন শীতল একটা স্রোত আমার সমস্ত শরীরে বয়ে গেল৷ আমি যেন জমে গেলাম। আমার কেমন জানি লাগতে থাকে৷ আমি আড় চোখে তমাকে দেখি। তার চেহারায় ভীষণ উত্তেজনা। কিছু একটা নিয়ে যেন সে প্রচণ্ড খুশি৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সেরা খুশি মানুষ৷ কিন্তু তার এতো খুশি হওয়ার কারণ কী? আমার সঙ্গ নাকি চট করেই আমার হাত ধরে ফেলা? অথচ খুশি তো আমার হওয়ার কথা ছিল। অনেক দিন পর একটু পরিষ্কার বাতাস পেলাম, সুন্দর, মনোরম একটা পরিবেশ পেলাম, এতে আমার আনন্দ হওয়া উচিৎ। অথচ আমার চেয়ে অধিক আনন্দিত সে হয়ে আছে৷ এর কারণ কী? কিংবা আমার কাছেও আজ অন্যরকম লাগছে কেন? কেন নিজেকে ভীষণ অচেনা মনে হচ্ছে? কেন আজকের এই অন্যরকম অনুভূতি? মানুষের মনের উপর চারপাশের পরিবেশটা বিশেষ ভাবে প্রভাব ফেলে। পরিবেশের উপর নির্ভর করে মনের অবস্থান পরিবর্তন হয়৷ এখানেও কি তাই হচ্ছে? আজ অনেক দিন পর হঠাৎ বাইরের এমন স্নীগ্ধ পরিবেশ দেখে বিশেষ ভালো লাগছে? নাকি অন্যকিছু? আমি বুঝতে পারলাম না৷ কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলাম স্বল্প পরিচিত একটি চেহারা দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। একদম আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তার চেহারায় রাগ৷ সে যেন পারলে আমায় চিবিয়ে খায়। তার পরনে ব্লু জিন্স আর হোয়াইট টপস। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। ফর্সা চেহারা৷ ফর্সা চেহারার মানুষ রাগলে স্পষ্ট বোঝা যায়৷ এদের চেহারা লাল হয়ে যায়৷ এই লাল হয়ে যাওয়া চাঁদবদন দেখতে অনেক যুবকেরা পছন্দ করে৷ আমিও সেই দলের একজন। আমি লারাকে দেখে মৃদু হাসলাম। বললাম,

-কেমন আছেন?

মেয়েটি কিছু বলল না। কেবল আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার তাকিয়ে থাকার মধ্যে যেন কিছু একটা ছিল। সেই কিছু একটা কী তা আমি বেশ টের পেলাম। মেয়েটা মনে মনে বেশ দুঃখ পেয়েছে বোধহয়!


আমি ভেবেছিলাম লারার সাথে আমার আর দেখা হবে না৷ এই ব্যাপারে আমি মোটামুটি নিশ্চিতই ছিলাম। কিন্তু আজ আচমকা এখানে দেখা হয়ে যাবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি৷ আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তমার চেহারাটা কেমন চুপসে গিয়েছে চট করেই। কেন এমন চুপসে গেল তা আমি বুঝতে পারলাম না। আশ্চর্য ব্যাপার। এই মেয়ের মাঝে মাঝে কী হয়ে যায়? এইতো এতোক্ষণ বেশ প্রাণবন্ত ছিল। এখন আবার হঠাৎ কী হলো? লারার ব্যাপারটা আসলেই কেন এই মেয়েরা চেহারার বারোটা বেজে যায়? লারা প্রায় অনেকক্ষণ পর নিজেকে সামলিয়ে বলল,

-কেমন আছেন আপনি?

আমি খানিকটা হেসে বললাম,

-আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। আপনার খবর কী?

লারা সেই প্রশ্নের জবাব দিলো না। হয়তো প্রয়োজনবোধ করল না। বলল,

-পাঁয়ের অবস্থা কী? পেইন আছে?

-জি না৷ মোটামুটি ভালোই আছে। দ্রুতই সেরে যাবে আশা করছি। 

-হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেললেন যে? হাত কি সেরে গিয়েছে?

-মোটামুটি সেরেছে।

-মোটামুটি সারলে ব্যান্ডেজ খুললেন কেন? 

-এমনি! ভালো লাগছিল না। 

-আশ্চর্য! এটা কোনো কথা? এতোটা খামখেয়ালি হলে হয়? আপনার ব্যান্ডেজটা খোলা মোটেও উচিৎ হয়নি। একদম সেরে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিতেন৷ 

ঠিক সেই সময়েই সে আমার পাশে তমা মেয়েটিকে লক্ষ্য করলো এবং বলল,

-আরেহ! ইনি কে?

মাঝে মাঝে এমন হয়৷ যে বিষয়টিকে আমরা অধিক গুরুত্ব দেই আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় সমস্ত ধ্যান সেদিকেই নিয়ে যায়৷ আশপাশের অব্জেক্টের দিকে তেমন বিশেষ খেয়াল দেয় না৷ লারার ব্যাপারেও হয়তো সেটাই ঘটেছে। সে প্রথমে তমাকে লক্ষ্য করেনি। এখন করেছে। আমি বললাম,

-ও হচ্ছে তমা। আমার ফ্রেন্ড৷ আর তমা উনাকে তো চেনোও। লারা চৌধুরী। আমার এই অবস্থার কারিগর! 

এই বলে আমি হাসলাম। লারা লজ্জিত হয়ে হাসলো। বলল,

-হাই! 

তমার হাসি ফ্যাকাসে। সে বলল,

-হ্যালো। আমি তমা ইসলাম।

-আপনি আমাকে চেনেন নাকি?

-চিনি বলতে হাসপাতালে দেখেছিলাম। 

-কোন হাসপাতালে?

-আপনাদের হাসপাতালে। ওর সাথ গল্প করছিলেন। তখন দেখলাম। 

-অহ আচ্ছা। তাসফির সাথে দেখা করতে এসেছিলেন নিশ্চয়ই। 

-জি। 

এরপরের ঘটনা খুব দ্রুতই ঘটে গেল। লারা আমাকে তার বান্ধুবি গোত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আমার পরিচয় পেতেই তার বান্ধুবি গুলোর মাঝে কেমন জানি গুঞ্জন শুরু হলো। এটি কিসের গুঞ্জন তা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না৷ তবে এতো গুলো বালিকার এটেনশন পাচ্ছিলাম এটি আমার ভালোই লাগছিলো। এতো কিছুর মাঝেও তমার চেহারার পরিবর্তন ঘটলো না৷ বরং তার চেহারা যেন আরো কালো হলো। তাকে কেমন অস্থির লাগল। সব শেষ লারা বলল,

-আপনার নাম্বারটা দিন তো? 

আমি হাসি মুখে নাম্বার দিলাম। সে একটা কল দিয়ে বলল,

-এটা আমার নাম্বার। লারা দিয়ে সেভ করে রাখবেন। 

আমি হেসে বললাম,

-আচ্ছা। যাই, পরে দেখা হবে। 

লারা হাসলো কেবল। আমরা গাড়িতে না ওঠা পর্যন্ত সে দাঁড়িয়ে থাকলো। তমা গাড়িতে উঠেও কোনো কথা বলল না৷ চুপচাপ থাকলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের মতো করে চালাতে থাকলো। আমি বললাম,

-কী ব্যাপার? তোমাকে কেমন অস্থির লাগছে তমা৷ কী হয়েছে? 

তমা কিছু বলল না৷ এদিকে তাকালোও না। যেন আমার কথা সে শুনেইনি। আমি আবার বললাম,

-তমা?

ও আমার দিকে ফিরে দেখলো একবার। কিছুই বলল না। তবে তার দৃষ্টি অনেক কিছুই বলে দিয়েছে৷ সে অত্যন্ত রেগে আছে এখন। রাগের অন্তিম পর্যায়ে আছে সে৷ আমি বুঝতে পারলাম না এখান রাগের কী হলো? এই মেয়েটা রাগছে কেন? রাগে ফুঁসতে থাকার কিছু কি ঘটেছে? আমি  কোমল স্বরে বললাম, 

-একটা কফিশপে থামিয়ো। কফি খাবো। 

তমা কোনো কথাই বলল না৷ আমিও চুপচাপ থাকলাম। কে জানে কোন সময় কোন ঝড় শুরু হয় আবার।


গাড়িটি এসে থামলো তমাদের বাড়ির সামনে। সে গাড়ি কফিশপে থামায়নি। নিজেদের বাসার সামনে থামিয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে ভেতরে ঢুকে গেল সে। আমার দিকে ফিরে তাকালোও না। আমি ঠিক সেই মূহুর্তে মনে মনে ভেবেই নিয়েছি, যাই হোক না কেন, এই মেয়ের সাথে আমার আর কখনই কথা হবে না৷ কখনই না৷ কিন্তু মেয়েটি আজ এমন করেছে কেন?

এতোটা রেগে গিয়েছে কেন? আমি এই ব্যাপারটা বুঝতেই পারছিলাম না৷ ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম। ভালোই টেনশনে ফেলে দিলো মেয়েটা৷ 

.

চলবে...


.

ভুলত্রুটি মার্জনীয় 

-তাসফি আহমেদ।

এই যে, পরের পর্ব এখানে

চতুর্থ পর্ব 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url