Bangla Golpo: মেয়েটি ২

বাংলা ছোট গল্প| Bangla Love Stories| Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.
Bangla  Golpo


Bangla Golpo: মেয়েটি 

(দ্বিতীয় পর্ব)

.


তমা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,

-চিঠিতে কী লিখেছিলে তুমি? 

-তেমন কিছু না৷ 

সে আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, 

-আমাকে বললে সমস্যা আছে?

-না, সমস্যা থাকবে কেন?

-তাহলে বলো?

তমা আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে চিঠির লেখা গুলো কী ছিল তা বললাম। বলার সময় লক্ষ্য করলাম চিঠির প্রতিটি কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমি বেশ গুছিয়েই বলতে পারছি। ব্যাপারটা বেশ অবাক করলো আমায়। 

"মিস লারা,

আপনি যখন চিঠিটা পড়ছেন তখন নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন যে আমি আপনাদের হাসপাতাল থেকে পালিয়েছি৷ পালিয়েছি বলতে হচ্ছে কারণ, আমি আপনাকে না জানিয়েই এসেছি৷ এটাও এক ধরনের পালিয়ে যাওয়া। আর এই কাজটি না করলে আপনি আমাকে আপনাদের হাসপাতাল থেকে রেহাই দিতেন না৷ হাসপাতাল আমার জন্যে খুবই অস্বস্তিকর এবং অসহ্যকর জায়গা৷ ভালো লাগে না৷ আপনাকে এই কথাটা বললে আপনি বোধহয় শুনতেন না৷ আমাকে রেখে দিতেন হাসপাতালে। যাই হোক আমার উচিৎ ছিল আপনার উপর রাগ করা এবং আমার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার আপনার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া৷ কিন্তু আপনার চেহারায় অপরাধবোধটা এমন ভাবে দেখেছি যে আমার মনে হয়েছে আপনার উপর রাগ করাটা বোকামী হবে৷ এতো সুন্দর একটা মানুষের উপর রাগ করা যায়? চিকিৎসার ব্যয়ভারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো আমি অর্ধেক দিবো৷ বাকিটা আপনি৷ এতে কারো মনের মাঝেই কোনো ব্যাপারে খুঁতখুঁতে কিছু থেকে যাবে না৷ আমি জানি আপনি এই ব্যাপারে অত্যন্ত অখুশি হবেন৷ কিন্তু আমাকে এমনটা করতে হয়েছে কারণ আপনার উপর সমস্ত ভার পড়লে আমার খারাপ লাগতো। দয়া করে মনে কষ্ট রাখবেন না৷


বিনয়ে

তাসফি।"


তমা আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

-এভাবে তাকিয়ে আছো যে? ভুল কিছু লিখলাম নাকি?

তমা কিছু বলল না৷ মুখ ফিরিয়ে নিলো৷ আমি চুপচাপ তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছু সময় যেতেই তমা বলল,

-মেয়েটা বেশ সুন্দরী ছিল?

আমি হাসলাম। বললাম,

-তা তো ছিলই৷ বেশ স্মার্টও! স্বরটা এতো মিষ্টি!

তমার গলা দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো যেন। কিছু বলল না৷ তার চেহারাটা কেমন জানি হয়ে গেল৷ আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না৷ অল্প কিছু বাদেই তমা বলল,

-যাই। সন্ধ্যা হয়ে আসছে৷ 

আমি অবাক হয়ে বললাম,

-আজ এতো দ্রুত চলে যাবে?

-হু। 

-কেন?

-কেন আবার কী? আমার যেতে ইচ্ছে হয়েছে যাবো৷ ব্যস!

-আশ্চর্য ব্যাপার। তুমি দেখি রেগে যাচ্ছো। কী হয়েছে?

-কিছু হয়নি৷ আমি যাই৷ আমার ভালো লাগছে না। 

কথাটা বলেই তমা চলে গেল। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। আশ্চর্য ব্যাপার। এই মেয়ের হলোটা কী? প্রতিদিন তো ঠিক সন্ধ্যা হবার পরেই সে চলে যায়৷ আজ এতো দ্রুত চলে গেল কেন? আমি ছাদের পশ্চিম কর্ণারে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ তমা মেয়েটি এই বাড়ির মালিকের বড় কন্যা৷ এই বড় কন্যা অত্যন্ত সুশীল এবং ভদ্র৷ একে আমার বেশ পছন্দ। পছন্দের কারণ হচ্ছে তার চোখে নিচ বরাবর খানিকটা গাল জুড়ে মিইয়ে যাওয়া কালো রঙ এক গুচ্ছ মায়ার মতো জমে আছে। এটি কিসের দাগ তা আমি জানি না৷ তবে মেয়েটার এই দাগটা আমার কেন জানি ভালো লাগে৷ হালকা শ্যামলা বর্ণের চেহারায় এটিকে অত্যন্ত মায়াময় মনে হয় আমার৷ এমন কেন মনে হয় তার কারণ অবশ্য আমি খুঁজে পাইনি৷ অনেকেই এই দাগ নিয়ে তাকে নানান কথা বলে। তার পিতামাতাও মেয়ের এমন দাগ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছে৷ আমি ভেবে পাই না এখানে চিন্তার কী আছে! মেয়েটাকে তো এতে দারুণ লাগছে! তাহলে চিন্তা কিসের? বিয়ের ব্যাপারে? তাহলে এমন ছেলে বেছে নিলেই তো হয় যে তাকে এমন দাগ থাকা অবস্থায়ও ভালোবাসবে৷ দুনিয়াতে তো ছেলেদের কাল পড়েনি৷


সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। আলো নিভু নিভু করছে৷ আমি ছাদের কার্ণিশের কাছে দাঁড়িয়ে আছি৷ তমা প্রায় বিকেলেই আমার সাথে আড্ডা দেয়৷ বলতে গেলে তার সাথে আমার একটি বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। যদিও এ নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি কখনও৷ সে বিকেল বেলা ছাদে আসে। আমার সাথে নানান বিষয়ে গল্প করে৷ মাঝে মাঝে এই আড্ডায় সাদিক যোগ হয়৷ আমরা এক যোগে সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দেই৷ অন্যান্য বাড়িওয়ালা হলে এই ব্যাপারটিতে রাগ করতেন৷ কিন্তু এই বাড়িওয়ালা তা করেননি। তিনি আমাদের ফ্ল্যাটটা ভাড়া দেওয়ার সময়ই অত্যন্ত নিঁখুত ভাবে পরিক্ষণ করে ভাড়া দিয়েছেন। প্রায় ঘন্টা খানেক উনার নানান প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে আমাদের। বিসিএস পরীক্ষাও এতো কঠিন হয় কি না কে জানে! তবে এই কারণেই হয়তো তিনি নিশ্চিত আছেন যে এখানে ভয়ের কিছু নেই। এছাড়া অন্য আরেকটা কারণ হতে পারে৷ সেটা হচ্ছে তমা। তমা মানুষের সাথে বিশেষ মিশে না৷ ভার্সিটিতেও তার তেমন কোনো বন্ধুবান্ধবও নেই৷ কেবল বিকেল বেলা আমাদের সাথে প্রাণ খুলে যা আড্ডা দেয়৷ ব্যস। এতটুকুই। তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, 

-বন্ধুবান্ধব বানাতে তেমন পছন্দ করি না। একটু ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। আর তাছাড়া কেউ বন্ধু হলেই মুখের দাগটা নিয়ে আলোচনা করে৷ এটি আমার পছন্দ না৷ 

তমার খারাপ লাগাটা অস্বাভাবিক নয়। এটি তার দূর্বলতা। তার দূর্বলতা নিয়ে আলোচনা হলে সে তো ব্যাথা পাবেই৷ কিন্তু এই মেয়ে আজ হঠাৎ এভাবে চলে গেল কেন? এভাবে যাওয়াটা তার ঠিক হয়নি৷ বেশ অন্যায় হয়েছে৷ আমি মনে মনে কেমন জানি একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। এই ব্যাথার মূল উৎস কোথায় তা অবশ্য আমার জানা নেই৷ আমি পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সূর্য তখন ঢুবে গিয়েছে। চারপাশে ঝাপসা একটা আলো খেলা করছে৷ এই আলোটা হারিয়ে যাচ্ছে শহরের বাতি গুলোর আড়ালে। 

.

বাসাতে ফিরে আসার পর আমি ভেবেছিলাম তমা সবার আগে আমাকে দেখতে আসবে৷ সে সারাবাড়ি চিৎকার চেঁচামেচি করে মাথায় তুলে রাখবে৷ তার চেহারায় অবাক একটা ভাব লেগে থাকবে৷ তাকে ভীষণ বিষন্ন দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটল না৷ এই বাড়িতে আসার তিনদিন পর তমা আমায় দেখতে এলো। তাও তেমন বিশেষ আগ্রহ দেখা গেল না তার মাঝে৷ সে এসেই কলিংবেল বাজালো। দরজা খুলে দিলো সাদিক৷ কিছুক্ষন পর আমার ডাক এলো। আমি তখন ডান পাঁয়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারতাম। তবুও সাদিকের সাহায্য লাগেই। সাদিক আমায় এক পাশ থেকে ধরে রাখলো। আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভাঙ্গা হাত পা নিয়ে উপস্থিত হলাম তমার সামনে। সে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকলো। আমি তাকে দেখতেই হাসলাম। সেও হাসলো। বললাম,

-ভেতরে এসে বসো?

সে আবারো হাসলো। বলল,

-নাহ। সমস্যা নেই৷ শুনলাম তুমি এক্সিডেন্ট করেছো৷ তাই দেখতে এলাম। 

আমি বেশ অবাক হলাম। কেউ এভাবে দেখতে আসে? আসলে অন্তত ভালো করে তো দেখে? নানান প্রশ্ন করে। কীভাবে কী হয়েছে এসব জানতে চায়। কিন্তু এই মেয়ে এসবের কিছুই জিজ্ঞেস করলো না৷ সে দরজায় দাঁড়িয়ে থেকেই বলল,

-এখন কেমন আছো?

আমি না হেসেই বললাম,

-এই তো! মোটামুটি। 

এ কথার পরেই তমা বলল,

-আচ্ছা। আজ তাহলে যাই৷ নিজের যত্ন নিও। পরে কথা হবে। একটু তাড়া আছে আমার। 

এই কথাটা বলেই তমা চলে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম তার গমন পথের দিকে। মেয়েটা এমন একটা ভাব করলো যেন আমি অপরচিত কেউ৷ এই বাসার একজন ভাড়াটিয়া। ভাড়াটিয়াদের সাথে যেমন আলোচনা করা উচিৎ তমা আমার সাথে তেমনই আলোচনা করেছে৷ তারপর চলে গিয়েছে। এই ব্যাপারটা আমায় অত্যন্ত দুঃখিত করলো৷ আমি বেশ ব্যাথা পেলাম। অবাক হয়ে ভাবলাম মেয়েটা কি আমার এক্সিডেন্টের খবর আজ জেনেছে? সাদিককে একবার জিজ্ঞেস করবো? করলে আবার সে কী ভেবে বসে! সে আবার অন্যকিছু ভাববে না তো? সাদিক নিজ থেকেই বলল,

-এটা কী হলো?

আমি কিছু বললাম না। সোফায় গিয়ে বসলাম। সাদিক আমার পাশে বসে টিভি ছেড়ে দিলো। আমি বললাম,

-ও হয়তো এক্সিডেন্ট এর ব্যাপারটা আজই জেনেছে। 

-না৷ আজ নয়৷ আমি তো তোর এক্সিডেন্টের খবর পেতেই তাকে ফোন করে জানালাম। আমাকে এক গাদা উপদেশ দিলো। ভালো করে তোর খেয়াল রাখতে বলল। 

আমি অবাক হয়ে বললাম,

-হাসপাতালেও দেখতে এলো না?

-আমাকে বলেছিল যাবে৷ কিন্তু ও যায়নি। তোদের মাঝে কি কোনো ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে নাকি?

-নাহ। তেমন কোনো ঝগড়া তো হয়নি৷ 

-তাহলে এই মেয়ে এমন করলো কেন?

-বাদ দে। মেয়েদের বোঝা হচ্ছে দুনিয়ার সবচে কঠিনতম কাজ৷ এদের মুড কখন ভালো হয় আবার কখন খারাপ হয় এসব বোঝাই মুশকিল। 

সাদিক কিছু বলল না আর। চুপ করে থাকলো। আমি বললাম,

-দেখা গেল কাল আবার নিজে থেকেই দেখা করতে আসবে। খুশি খুশি স্বরে কথা বলবে।

সাদিক বলল,

-এই ধরনের মেয়ে গুলোকে আমি ভীষণ হেট করি৷ এরা নিজের মর্জির উপর ডিপেন্ড করে চলে। অপরপক্ষের মানুষটির অনুভূতি জানার চেষ্টাও করে না৷ যা ইচ্ছে তাই করে৷ 

-কিন্তু তমা তো তেমন মেয়ে নয়? 

-যেমনই হোক। সে কাজটা ঠিক করেনি৷ 

-যাক। যা হবার হয়ে গেছে৷ এসব নিয়ে আর কথা বলিস না। 

সাদিক কিছু বলল না। আমার পাশ থেকে উঠে গেল৷ আমি একা একা সোফায় বসে থাকলাম। তমা আসলেই কাজটি ঠিক করেনি। 


সে রাতে আমার বেশ গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো। সাদিক কাউকে ডাকলো না৷ সে নিজে নিজেই আমার মাথায় পানি ঢালল। একটা স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিলো। এই কাজটাই সে ভালো পারে। স্যান্ডউইচটা আমি পুরো খেতে পারলাম না। তেঁতো তেঁতো লাগছিল। বমির বেগ পাচ্ছিল৷ কিন্তু বমি এলো না৷ ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। মাথায় পানি দেওয়ায় একটু শান্তি লাগছি৷ শেষ রাতে গা ঘামিয়ে জ্বরটা নেমে গেল। ঠিক সকাল হতেই বেল বাজলো। তখন কয়টা বাজে আমার মনে নেই৷ বেলের শব্দে আমার ঘুমের ঘনত্বটা কমে আলো৷ খানিকটা বিরক্ত হলাম। পাশ ফিরে শুনতেই কারো কণ্ঠ শুনতে পেলাম। 

-এই, উঠো?

আমি যারপরনাই অবাক হলাম। আশ্চর্য! এটা তো তমা স্বর। মেয়েটা এখানে কী করছে? আর কেনই বা এসেছে? আচ্ছা আমার কি এই মূহুর্তে চোখ খোলা উচিৎ? তার সাথে কথা বলা উচিৎ? নাকি সে আমায় কষ্ট দিয়েছে বলে তার উপর রাগ করে থাকা উচিৎ? আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকলাম। ঠিক সেই সময় আবার সেই মিষ্টি স্বরটা ভেসে এলো,

-এই? উঠো তো? আর কতো ঘুমাবে?

আশ্চর্য! এতো মিষ্টি করে ডাকার কী প্রয়োজন? এভাবে ডাকলে তো না উঠে পারা যাবে না৷ 

.

চলবে...

(প্রতিদিন একটু একটু করে লিখবো ভাবছি৷ দেখি কী হয়! বড় বেড়াজালের মাঝে দিন যাচ্ছে৷ তাই লিখাটা ঠিক ভাবে হচ্ছে না৷ কিছু মনে রাখিয়েন না আপনারা৷)

.

ভুলত্রুটি মার্জনীয় 

-তাসফি আহমেদ।


পরের পর্ব  পড়তে ক্লিক করুন-


তৃতীয় পর্ব

প্রথম পর্ব


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url