Love story in bangla - ডায়েরীর গল্প | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি

Love story in bangla - ডায়েরীর গল্প | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি


Love story in bangla - ডায়েরীর গল্প | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি



ভূমিকাঃ Love story in bangla - এবং মিহিন। Bangla Love Story - ভালোবাসার গল্প, বাস্তবিক গল্প, ফিকশন, নন-ফিকশন, ভৌতিক, রহস্যময় থ্রিলার গল্পে সমৃদ্ধ আমার এই ছোট্ট ব্লগটি। বাংলা ছোট গল্পের এই অনন্য-অসাধারণ জগতে আপনাকে স্বাগতম। ভীষণ অপূর্ণতায় ভরপুর আমার গল্প গুলো। তাও লিখি। লিখলে মনের মাঝে কেমন অদ্ভুত এক প্রশান্তি মিলে। বিশেষ করে  ভালোবাসার গল্প গুলো। কারণ এই ভালোবাসার গল্প গুলোতে আমার এক প্রেমিকা থাকে। কাল্পনিক প্রেমিকা। তারে ভীষণ ভালোবাসি আমি। 

Love story in Bangla - "ডায়েরীর গল্প।"
তাসফি আহমেদ


মিরা ডায়েরিটা হাতে নিল।হাতে নিতেই অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল তার।জীবনে এই প্রথম ও কারো ডায়েরি পড়ছে তাও আবার গোপনে।ডায়েরির মালিকও জানে না যে তার ডায়েরি হারিয়ে গিয়েছে।ডায়েরিটার একটা নাম।আছে।নামটা হল "মিরা এবং আমার ডায়েরি।" মিরা প্রথম এই লেখাটা দেখেই কৌতূহল বসত ডায়েরিটা নিল এবং লুকিয়ে ফেলল।মিরা প্রথম পেইজ উল্টালো খুব স্বাভাবিক ভাবেই। উল্টাতেই ও চমকে গেল।এত সুন্দর কারো লেখা হয়! মিরা মুগ্ধ হয়ে কেবল পড়তে থাকল।

৪ই মার্চ-

মা খুব জোর করছিল।তিনি আজ আমাকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবেনই। আমি সোজাসুজি বলে দিলাম যাবো না।কোন মতেই যাবো না। সবে চাকরিটা পেয়েছি। এখনই কি বিয়ে করতে ইচ্ছে হয়! কত প্ল্যান-পোগ্রাম করে রেখেছি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবো। আর তিনি এখন আসছেন আমাকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যেতে।কোন মানে হয়! আমি ভাবলাম ব্যাপারটা এখানেই চুকে যাবে।মা বেশি জোরাজুরি করবে না।কিন্তু কিসের কি? মা আমার রাগ করে, মুখ লাল করে, গাল ফুলিয়ে বসে আছে।রান্নাও করছে না।তার একই কথা, আমাকে নিয়ে তিনি আজ মেয়ে দেখতে যাবেনই।একপ্রকার বাধ্য হয়েই গেলাম।কিন্তু গিয়ে যে এভাবে চমকে যাবো ভাবতেও পারি নি।মেয়েটাকে দেখার পর আমার কেবল মনে হতে লাগল আজ যদি ওকে দেখতে না যেতাম তাহলে অনেক কিছু মিস করতাম।একজন রূপবতী রমনিকে দেখা হত না।পৃথিবীতে যে এত সুন্দরী একটি মেয়ে আছে জানা হত না।তাকে দেখে আমি যে চমকটা পেয়েছিলাম সেটার রেশ কাটিয়ে উঠতে খানিকটা সময় নেয়।পাশ থেকে মা চিমটি না মারলে বোধহয় ঘোরই কাটত না।মেয়েটা দারুণ মায়াবী। চোখ দুটোয় যেন তীব্র মায়া খেলা করে।ঠোঁটে লিপষ্টিক ছিল।পরনে গোলাপি কালারের একটা শাড়ি।আশ্চর্য! আমার পছন্দের রং এটা।মেয়েটা কিভাবে জানলো? কাকতালীয় হতে পারে।

Bangla New Love Story - তাকে ফিরে পেলাম। 


মেয়েটার একটা সুন্দর নাম আছে।ছোট করে বলল কেবল মিরা হবে।পুরো নাম মিরা হাসান।সেদিন কোন মতে বাড়ি ফিরেছিলাম কেবল।কিন্তু মনটা যেন ওদের বাড়িতেই রয়ে গেল।মিরার কাছে।বাড়িতে এসে কেবল তার কথাই ভাবতে থাকলাম।ওর কথা ভাবলেই আমার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়।যেমনটা হয়েছিল ওকে দেখে।সমস্ত শরীরে যেন শীতল বন্য বয়ে যায়।অদ্ভুত শিহরণ জাগায় মনে।যেমনটা আমার আজ এখন হচ্ছে। এখনো কেবল মেয়েটার মায়াবী মুখটা আমার সামনে ভাসছে।ডায়েরিতে লেখা প্রতিটা অক্ষরে যেন তার মুখচ্ছবি দেখি।আশ্চর্য! এসব কি হচ্ছে আমার মাথে।কেন হচ্ছে! একটা মেয়েকে দেখে এসেছি কেবল।এই দেখাতেই যে এতবড় কান্ড ঘটে যাবে ভাবতেও পারি নি।রাত প্রায় তিনটা বেজে গিয়েছে। তবুও ঘুম আসছে না।ঘুম আসছে না দেখেই তো ডায়েরি লিখতে বসলাম।লিখা তো শেষ। এখন কি করি? আল্লাহ আমার ঘুম দাও চোখে।
মিরা পৃষ্ঠা উল্টালো।উল্টানোর সময় তার ঠোটের কোণে সুক্ষ হাসি ঠাই পেলেও চোখে বরাবরের মতই বিষন্নতা রয়ে গেল।
৬ই মার্চ-
খবরটা শুনার পরই আমার মাঝে ভীষণ রকমের আনন্দ হতে লাগল।আমার হাতে চাঁদকে এনে দিলেও আমি এতটা খুশি হতাম না যতটা হয়েছি আজকের খবরটা শুনে।আমি আল্লাহের কাছে শুকরিয়া আদায় করি।যাক তিনি আমার উপর সদয় হয়েছেন। একটু আগে মাগরিবের নামাজ পড়লাম।সাথে দু'রাকাত নফল নামাজও পড়ে এলাম।কারণ মাগরিবের খানিকক্ষণ আগে মিরার আব্বু ফোন করে জানিয়েছে ওদের পক্ষ হতে কোন দ্বিমত নেই। আমাদের পক্ষ থেকে দ্বিমত না থাকলে কথা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।কথাটা শুনে আম্মু এত খুশি হল যে তার চোখে জল চলে এল।আমার মা-টা এত আবেগি! আমি খুশির চোটে মাকে জড়িয়ে ধরি। মা যেন আরেকটু খুশি হল। কাল বা পরশু মা ওদের বাসায় যাবে।গিয়ে আমাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি করে আসবে।আমার এত আনন্দ হচ্ছিল যে বলে বুঝাতে পারবো না।কথা গুলো কারো কাছে শেয়ার করতে পারলে ভালো লাগত।শেয়ার করার মত মানুষ আমার নেই।বন্ধুও নেই।যারা ছিল তাদের সাথে যোগাযোগও নেই।আমিই যোগাযোগ করি না।কেন করি না সেটা জানি না।তবে আমার ইচ্ছে হয় না।ছোট বেলা থেকেই এমন আমি।কেউ ননা থাকায় ডায়েরি লিখতে বসে গেলাম।এই ডায়েরিটা নতুন কিনেছি।সেদিন মিরাকে দেখে আসার পরই গিয়ে কিনে আনি।এটা কেবল আমার আর আমার মিরার ডায়েরি। এখানে কেবল আমাদের কথা লিখা হবে,আমাদের ভালোবাসার কথা লিখা হবে।তাই মাগরিবের নামাজ পড়ে এসেই লিখতে বসে গেলাম।আমার যেন তর সইছে না।এত খুশি লাগে কেন?  
মিরা পরের পৃষ্ঠা উল্টায়।উল্টানোর সময় ওর ঠোটের কোন বিন্দু মাত্র হাসি ঠাই পায় না। চোখ দুটোয় যেন বিষন্নতা প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে।
৭ই মার্চ-
রাত প্রায় দেড়টা বেজে গিয়েছে।এত রাত! তবুও আমার ঘুম আসছে না।এতদিন আসতোনা মায়াবিনীকে   ভেবে। আজ আরেকটা এসে যোগ হল।এখন আমার তীব্রভাবে অস্বস্তি হচ্ছে, প্রচন্ড আনন্দ হচ্ছে এবং লজ্জা হচ্ছে ভীষণ।তিনটা জিনিস একসাথে হওয়ার একটা কারণ আছে।সেটা হল আমার হাতের ছোট্ট কাগজের টুকরোটা।যেখানে মিরার নাম্বার আছে।সন্ধ্যার সময় আম্মু এসে দিয়েছিল। এখন ওকে ফোন করব কি করব না সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। করতে ইচ্ছে হয়।কিন্তু করে কি বলব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।ভাবতেই লজ্জায় গড়িমসি খাচ্ছি।এদিকে ঘুম যেন আসছেই না।মায়াবিনী        যেন আমার চোখের পাতায় লেগে আছে।আমার রক্তের কণিকার সাথে একেবারে লেপ্টে আছে সে।আমার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে আমি যেন তার উপস্থিতি টের পাই।আমার মনের গহিনে যেন সে নিজে বসে আছে।আর আমাকে তার মত করে চালাচ্ছে।একজনের ভিতর দুজন। আমার ব্যাপারটা তেমনই।এক আমি আর এক আমার ভেতরের মিরা।আমি যদি ঘুমাতে যাই তখন সে জেগে থাকে।চোখের পাতা জোড়া বুজলেই যেন তার চেহারার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে চোখের সামনে। যেন জলজ্যান্ত মিরা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভেতরের মিরা ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমার ঘুম আসে না। শেষ রাতে প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে যখন আমার ভেতরের মিরা চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়ে ঠিক তখনই আমার ঘুম আসে।এর আগে না।এই যে, এখনো ঘুম আসছে না।রাত সাড়ে তিনটা বাজতে চলল।
মিরা পৃষ্ঠা উল্টায় খুব গম্ভীর ভাবে।তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে।মুখটা যেন একটু একটু করে কালো হতে থাকে।ঠিক যেমনটা আষাঢ়ের আকাশে মেঘ এসে একটু একটু করে জমা হয়ে কালো হয়ে যায়।
৮-ই মার্চ -
আজকাল খুব বেশি ডায়েরি লিখছি।এ আমার আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।তবে এতটা আগ্রহ এর পূর্বে ছিল না।এখন যেন আগ্রহ বাড়ছে।দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। দিনে বা রাতে একটু সময় পেলেই লিখতে বসে যাই।যা মনে আসে কেবল তাই লিখে যাই।গতকাল একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
মিরার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়|পনেরো দিন পর বিয়ে।তাহলে হিসেব অনুযায়ী ওর সাথে আমার বিয়ে আমাগী তেইশ তারিখে হবে।তেইশ তারিখ! সে তো বহুদূর! এতদিন অপেক্ষা করবে কে? মাকে কথাটা বলতেই মা উচ্চস্বরে হেসে উঠল।যেন আমি কোন জোক্স বলেছি।এক মুহূর্তের জন্যে আমার নিজেকে জোকার মনে হল। মা হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,"যে ছেলে বিয়ে করতে চাচ্ছিল না আজ সেই ছেলে বলছে বিয়ের ডেট এত দূরে কেন? এই তোর কি হয়েছে রে? ক'দিন ধরেই লক্ষ্য করছি তুই কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিস। ব্যাপারটা কি! প্রেমে টেম পড়ে যাস নি তো!" মায়ের কথা শুনে আমি মাথা চুলকাই।তারপর এক গাল হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিই। মা আবার উচ্চস্বরে হাসে।তার হাসি দেখে আমার লজ্জার সীমা থাকে না।জলদি করে মায়ের সামনে থেকে চলে আসি।

একটু আগে মা এসেছিল।এসে আমাকে কাঁদিয়ে গেল।কি দরকার ছিল এসব বলার।এখন নিজেও ঘুম যাবে না আমাকেও যেতে দিবে না।আমার মা-টা আসলে এমনই।আসলেই একটু বেশি আবেগি।এই একটু আগের কথা।আমি শুয়ে শুয়ে মায়াবিনীকে ফোন দেওয়ার কথা ভাবছি।ঠিক তখনই মা এসে হাজির।তার মুখ আগ থেকেই গম্ভীর ছিল।দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে একটু আগে কান্না করে এসেছে।মায়ের চোখ-মুখ দেখেই আমি অস্থির হয়ে উঠি।কি হয়েছে মার! নিশ্চই বাবার ছবিটা দেখে কান্না করেছে। এছাড়া আর হবেই বা কি। 
মাকে নিয়ে আর পারা যায় না।কত করে বলি যে পুরনো সৃতি গুলো না মনে করতে কে শুনে কার কথা।তিনি ভুলতে তো পারছেনই না বরং বারবার মনে করে কষ্ট পাচ্ছে। মা এসে ঠিক আমার পাশে বসল।আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,"সাদিক! আজকের দিনটার কথা কি তোর মনে আছে?" আমার চোখ-মুখ চট করেই গম্ভীর হয়। হঠাৎ-ই যেন চলে যাওয়া বিষন্নতা আবার ফিরে এসে আঁকড়ে ধরে আমায়।আমি চোখ মুখ কালো করে বলি, "মনে থাকবে না কেন মা?এই দিনটা কি ভুলা যায়!"
 মা হঠাৎ-ই কান্না করে দেয়।ভেজা গলায় বলে,"তোর বাবা আসলেই একটা স্বার্থপর। কি দোষ করেছি আমরা? কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেল! থেকে যেতে পারতো না! খুব ক্ষতি হত থাকলে?" 
মায়ের চোখের জল আমার সহ্য হয় না।আমি মায়ের চোখের জল মুছে দেই।বলি, 
"এমন করে বলো না মা।বাবা কষ্ট পাবে। মানুষ কেবল পৃথিবীতে একা আসে না।আসার সময় লিখিত একটি দলিল নিয়ে আসে।যার নাম মৃত্যু। মা, সকলকেই মৃত্যু বরণ করতে হবে।এটা খোদাতায়ালার বিধান।আমরা কিছুই করতে পারব না।খামোখা এসব বলো না।খারাপ লাগে আমার।" 
মা আবার ভেজা গলায় বলে,
"দেখ না আমরা কত আনন্দ করছি। আর সে উপরে একা একা  বসে আছে। মজা নিচ্ছে। তার কি আমাদের কথা একটুও মনে পড়ে না।"
 আমি বলি,
       "মনে পড়ে মা।আমারা খুশি থাকলে তিনিও খুশি থাকবেন।আর আমরা দুঃখে থাকলে তিনি কেবল কষ্টই পাবেন মা।অথচ জীবিত থাকা কালে বাবা আমাদের সুখের কথা চিন্তা করত।আর সে আমাদের থেকে আলাদা হতেই আমরা তাকে দুঃখ দিচ্ছি ! মা প্লিজ কেঁদো না।বাবা কষ্ট পাবে।"
 মা আর কাঁদে না।চুপ করে মুখ গম্ভীর করে বসে থাকে।আমি কেবল তার চেহারার বিষন্নতাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি।সে কতটা কষ্টে আছে তা বুঝার চেষ্টা করি। মা নিঃশব্দে ফিরে যান।আমি জানি তিনি আজ ঘুমাবেন না।ঘুম আসবে না।নিজের বারান্দায় গিয়ে বসে থাকবেন। আজ বাবার মৃত্যু বার্ষিকী ছিল।এই দিনেই অফিস যাবার পথে কার এক্সিডেন্টে মারা যান বাবা। মা খুব ভালোবাসতেন বাবাকে।তাই আজ চব্বিশ বছর পার হওয়ার পরও বাবাকে ভুলতে পারেন নি।বছরের এই দিনটায় মায়ের দেখা খুব কম পাই আমি।এই দিনে মা একা থাকতে পছন্দ করেন।আমাদেরকে যে মানুষটা একাকিত্ব নামক একটা জীবন দিয়ে গিয়েছেন তার কথা ভাবে মা।মাঝে মাঝে নিজে নিজের সাথে কথা বলতে শুনি।আমার এত দ্রুত বিয়ে করার পিছনে এই মায়ের একাকিত্বই দায়ী। বাসায় সারাদিন একা পড়ে থাকেন।মা তোমাকে আর এক থাকতে হবে না।খুব শীঘ্রই তোমার কথা বলার সাথি আসছে।আসলে দুজনে মিলে অনেক গল্প করো।আমি কেবল দেখব আর মুগ্ধ হব।সেই দিনটার অপেক্ষা আছি আমি।অনেক লিখেছি।আর না।রাত চারটা বেজে বিশ হল।
মিরা পৃষ্ঠা উল্টায় খুব দ্রুত।তার চোখ মুখ এবার একেবারে কালো হয়ে আছে।খুব গম্ভীর। যেকোনো মুহূর্তে কেঁদে দিবে ও।

১৬-ই মার্চ-
সময় যাচ্ছে না।আমার খুব অস্থির লাগছে।সময় যাচ্ছে না কেন? তেইশ তারিখ আসতে আর কত যুগ লাগবে কে জানে।আমি দিনদিন অস্থির হয়ে উঠছি। উল্টাপাল্টা কাজ করে যাচ্ছি কেবল।এই কদিনে ওকে একবারের জন্যেও কল দেই নি।খুব ছোট করে একটা মিসড কল দিতাম কেবল।যেন না ধরতে পারে।আমি ওকে কল দিচ্ছি না আর ওর কল ধরছিও না।কি করব।লজ্জার আবেশে আঁটকে যাই আমি। আশ্চর্য! আমার আগে এত বেশি লজ্জা হত না।এখন হচ্ছে কেন? কাল আবার ওর ভার্সিটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।সকালে গিয়ে বিকেলে আসলাম। পুরোটা সময় ক্যাম্পাসের বাইরে ঘুরাঘুরি করেছি। আর বারবার মিরাকে খুঁজেছি।হুট করেই দেখা মিলে ওর।একটা ছেলের সাথে হাঁটছে।সুদর্শন ছেলে।আমার ভীষণ হিংসে হল।আশ্চর্য! সে আমার বউয়ের সাথে হাঁটছে কেন? আমার মেজাজটা যেন গরম হতে থাকল। বেটা আর কাউকে পেলি না।আমার বউকেই পেলেই।মিরা ক্যাম্পাস থেকে বের হতে হতে বিকেল হয়ে যায়।আমি ওর জন্যে অপেক্ষা করি।দেখা করব আজ। একটা রেস্টুরেন্ট গিয়ে অনেকক্ষণ দুজনে মিলে গল্প করব।ও কি কি পছন্দ, অপছন্দ জেনে আসবো। এক প্রকার চাপা উত্তেজনা কাজ করতে থাকে আমার মাঝে।মিরা গেইট দিয়ে বের হয়।আমি প্রস্তুত হয়েই আবার অপ্রস্তুত হয়ে যাই।মিরা একা নেই।তার পাশে সুদর্শন ছেলেটি আছে। তবুও আমি এগিয়ে যাই।কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়! মিরা আর ছেলেটি রিক্সায় উঠে চলে যায় আমি আসার আগেই।আমার খারাপ লাগে ভীষণ। পরক্ষণে এটা ভেবে মন ভালো হয় যে প্রব্লেম কই! কদিন পর তো ও আমার বউ হচ্ছেই।আসুক আমাদের বাড়ি।বুঝাবো তাকে যে অন্য ছেলেদের সাথে হাঁটা কাকে বলে। আমি থাকতে অন্য ছেলের সাথে হাঁটবে কেন ও।
মিরা পরের পৃষ্ঠা উল্টায়।উল্টানোর সময় ওর হাত কাঁপছিল একটু একটু। ও জানে সামনে কি হতে চলেছে।খারপ কিছু হতে যাচ্ছে।অনেক খারাপ।ভাবতেই মিরার গা কাটা দেয়।চোখের কোণায় বিন্দু বিন্দু জল জমতে থাকে।মিরা পৃষ্ঠা উল্টায় খুব সাবধানে।

২১-ই মার্চ-
ডায়েরি লিখতে পারছি না।প্রচুর ব্যস্ততার মাঝে দিন গুলো চলে যাচ্ছে।আমাদের এত বেশি আত্মিও নেই।তাই পুরো বিয়ের কাজ করার মত বা সাহায্য করার মত তেমন কেউ নেই।কেবল ফিরুর মা ছাড়া।সে আমাদের ঘরে কাজ করে।তার একার পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব নয়।তাই আমি এবং মা মিলে কাজ করছি। শপিং করতে হচ্ছে। এদিক সেদিক যেতে হচ্ছে।তাই ঠিক সময় হয়ে উঠে না।প্রিয় ডায়েরি! তুমি কেবল আর কটা দিন অপেক্ষা কর! মায়াবিনী আসুক।তখন দুজনে মিলে লিখব।তখন তুমি মশাই ঠ্যালা সামলাতে পারবে না। তাই আগ থেকেই বিশ্রাম নাও।ঠিক আছে।আজ গেলাম।
আজকের লিখা এতটুকুই ছিল। সাদিক আর কিছু লিখে নি।মিরা পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে লক্ষ্য করল ওর হাত কাঁপছে।ভীষণ ভাবে কাঁপছে। ওর বুকের ভেতর অদ্ভুত অনুভূতি হতে থাকল।কষ্টেরর অনুভূতি। তীব্র রকম কষ্টে ভুগছে ও। মিরা পৃষ্ঠা উল্টায়।উপরে লেখা তেইশ তারিখ। লেখাটা দেখেই মিরার বুক কেঁপে উঠে।মিরা চোখ বুজে ফেলল।চোখের কোণা বেয়ে ক'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল   কেবল। ওর কষ্ট হচ্ছে।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বারবার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। মিরা পৃষ্ঠাটার দিকে তাকায়। কাগজের লেখায় পানি পড়লে লেখা কেমন জানি হয়ে যায়। কালী ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃষ্ঠায়।তেইশ তারিখের পৃষ্ঠাটাও তেমন।যেন কেউ পানি ঢেলে দিয়েছে।মিরা ঠিক বুঝতে পরল যে এগুলো কিসের পানি।এগুলো সাদিকের চোখের পানি।তা না হলে বাকি পৃষ্ঠা গুলো হতে এই পৃষ্ঠা ভীন্ন কেন? মিরা চমকে উঠে যেন।মানুষটা এত কান্না করেছে! কেবল আমাকে প্রথম দেখায় ভালো লাগায়! মিরা চোখ-মুখ শক্ত করে আবার পড়তে থাকে।
তেইশে মার্চের গল্প।
২৩-ই মার্চ-
আমি সত্যিই কত বোকা। ভার্সিটিতে পড়া মেয়ে মিরা তার যে একটা প্রেমিক থাকতে পারে সেটা একবারের জন্যেও ভাবি নি! কেন ভাবি নি? কেন এত বোকা হতে হল আমায়। এই আমার এই বোকামির কারণে আমার মা-টা সারাদিন কেঁদে গিয়েছে।এখনো কাঁদছে। বারবার নিজেকে দোষারোপ করছে। মায়ের কান্না আমার একদমই সহ্য হয় না। মাকে গিয়ে যে শান্তনা দিব সেই উপায়ও নেই।কি শান্তনা দেব? কি বলব? কিছু বলতেও পারবো না।কেবল কান্না করা ছাড়া। ইশ! মিরা যখন ফোন দিত ততখন ফোন তুললে হয়ত এমন হত না। ও নিশ্চই বারবার বলতে চেয়েছে কথাটা। আমিই মূল গাধা। আমার গাধামির জন্যে মা কষ্ট পাচ্ছে। আমি পাচ্ছি। খবরটা শুনার পর যেন আমার সারা শরীরের রক্ত সব পানি হয়ে গেল। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি।ডুকরে কেঁদেছি কেবল।মিরা অন্য কাউকে ভালোবাসতো।হুলুদের অনুষ্ঠানের পরেই নাকি তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। মেজেতে বসে বসেই কেঁদেছে।শক্ত পাথার হয়ে বসে বসে কেঁদেছি। আমার আবেগি মা-টা সোফার উপর বসে আছে।তার চোখ-মুখ গম্ভীর। প্রথম প্রথম কান্না করে নিই।তারপর চট করেই কান্না শুরু করেই দেয়।আমার সহ্য হয় না । মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি শক্ত করে।ওপাশে ফিরুর মা-ও কাঁদে।তার চোখে জল খেলা করে। টেবিলে সমস্ত শপিং করা জিনিস গুলো সাজানো। সব কিছু প্যাকিং করা শেষ।কাল সকাল হতেই পাঠিয়ে দিতাম।পাঠানো হয় নি তাদের। তাদেরও অভিমান জাগে ।  সবাই যেন কান্না করছে।হাহাকার করছে তারা।মা কত সখ করে একটা হার কিনেছিল। নিজের ছেলের বউকে দিবে বলে। মায়ের সখ পূরণ হল না।আমার মায়াবিনী আমার আমাদের ঘর আলো করে এল না। বরং সে বিষন্নতা ছড়িয়ে গেল।কষ্ট দিয়ে গেল সবাইকে।আমাদের বাকি জীবনটা একাকিত্বেই কাটবে। কেউ আসবে না হাসাতে। আমায় মায়ের একাকিত্বের সঙ্গি হবে না কেউ। তার গল্প বলার সাথি হারিয়ে গিয়েছে।সে অন্য কারো হাত ধরেছে।অন্য কারো  ঘর আলোকিত করতে গিয়েছে সে।অথচ আমি তাকে মন প্রাণ দিয়ে চেয়েছি।নিজের জীবন দিয়ে হলেও চেয়েছি।সে একটুও বুঝল না।বুঝার কোন উপয়ও ছিল না।আমি কোন উপয় রাখি নিই। 

আমাকে বাকি জিবন কেঁদেই যেতে হবে।অনেক কাঁদতে হবে।কষ্ট পেতে হবে।মায়াবিনী অন্য কারো ভাবতেই আমার খারাপ লাগে।কষ্ট হয়।বুক যেন ছিড়ে যায় আমার।হায় খোদা! আমার কপালটা কি এতই পোড়া! আমি পারব না মায়ের কষ্ট সহ্য করতে। কোন মতেই পারব না।মায়াবিনীর যে প্রতিচ্ছবি মনে ছিল সেট কেবল খোঁচায়।কষ্ট দেয়।এই কষ্ট সহ্য হবে না আমার।এর চেয়ে ভালো মরে যাই আমি। একেবারে চলে যাই বাবার কাছে।যাই মা।আমার পাগলি মা।কষ্ট পেও না।তুমি কষ্ট পেলে আমার সহ্য হয় না।বিদায়...মা তোমায় শেষবার ডাকছি। "মা"...
মিরার বুকটা ধক করে উঠে।সাদিক সুইসাইড করতে গিয়েছিল! মিরার কষ্ট হয়।এক বুক কষ্ট নিয়ে পরের পৃষ্ঠা উল্টায়। সেখানে লিখা,
"মরতে পারি নি।আমি কেবল বোকা নই। আমি কাপুরুষ। ভয় পাই। মায়াবিনীর মায়ায় ঘুম না আসায় ঔষধ এনেছি ঘুমের।সেখান থেকে পুরো এক পাতারর ট্যাবলেট  হাতে নিলাম।মুখে দিতে যাবো ঠিক তখনই আমার মায়ের কথা মনে পড়ল। তার চেহারা ভাসল আমার চোখের উপর।তার মায়া ময় মুখটা ভাসল একটি স্নিগ্ধ হাসির রেখা তার চেহারায়।আমি আর পারি নিই।এই চেহারা দেখে মারা যাওয়া যয় না।যে কেউ বহু কষ্ট সইতে পারবে তবুও এই মায়ের হাসি মুখ দেখে নিজেকে শেষ করে দিতে পারবে না।মারা যাওয়া এক কথা আর নিজেকে মেরে ফেলা ভিন্ন কথা। মাকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।কোন মতেই সম্ভব নয়।আজীবন একটা কষ্টের ভোজা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে আমাকে।ভোজা বয়ে বেড়াবো তবুও আমার পাগলি মা-টাকে ছাড়া থাকতে পারব না আমি।

ডায়েরিরর লেখা শেষ এরপরের অনেক গুলো পৃষ্ঠা পর্যন্ত মিরার নাম লেখা। কেবল মিরার নাম।মিরা পৃষ্ঠা উল্টায়! ডায়েরি শেষ হয় নি।এখনো অনেক পৃষ্ঠা বাকি।মিরা ডায়েরি বন্ধ করে দেয়। বুকের সাথে লেপ্টে দেয় ডায়েরিটাকে। একজন মানুষ কেবল একজনকে একবার দেখে এতটা ভালোবাসতে পারে জানা ছিল না মিরার।মিরার কষ্ট হয়। প্রচন্ড রকমের অপরাধবোধ  কাজ করে ওর মাঝে। সেই বোধটাই কষ্ট দেয় ওকে।ভীষণ কষ্ট দেয়।মিরা চোখ মুখ শক্ত করে বসে থাকে।তার চোখে জল জমে আস্তে আস্তে। একটু পরই গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।মানুষটার কাছে যদি আজকের ডায়েরিটা থাকত তাহলে সে আজ অনেক বড় করে একটা লেখা লিখত। তিন বছর পর হুট করেই কাকতালীয় ভাবে ঠিক মার্চের তেইশ তারিখেই আমার সাথে তার দেখার কথা লিখত।কিভাবে কাটল সময় তা লিখত। কিন্তু ঘটনাক্রমে ডায়েরিটা আজ আমার কাছে।মানুষটা ভুলে ফেলে গিয়েছিল ডায়েরিটা ।অফিস ব্যাগে ছিল।ভুলে পড়ে যায়।উনি খেয়াল করেন নি।আমি তুলে নেই ওটা উনার অজ্ঞাতসারে। কাবারের উপরের নামটা পড়েই চমকে যাই।"মিরা এবং আমার ডায়েরি।"
এখানেই কৌতূহল জাগে।তাই লুকিয়ে নিয়ে নেই।উনার সাথে এভাবে আমার দেখা হয়ে যাবে সেটা আমি কখনই ভাবি নিই।উনিও নিশ্চই ভাবে নিই। প্রথেম তো উনাকে চিনতেও পারলাম না।উনি নিজে এসে পরিচয় দিয়েছেন।চোখ দুটো ছোট ছোট করে মায়া মায়া দৃষ্টিতে বলল,"আপনি মিরা না! "

রেস্টুরেন্টে যতক্ষণ কথা বলেছি ততক্ষণ উনি কেবল আমার কথা শুনেই গিয়েছেন।কেবল হু হা ছাড়া একটা শব্দও করেন নি।আর আমার দিকে তাকিয়েছিলেন একভাবে।তার এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে তখনো বুঝি নি।এখন বুঝলাম। নিরবে, অদৃশ্য ভাবে একটা পরিবারকে কষ্ট দেই আমি নিজের অজান্তেই।স্বার্থপরের মত চলে যাই আমার ভালোবাসার হাত ধরে। আচ্ছা আমি যখন বলেছি কার এক্সিডেন্টে আমার স্বামী মারা যায় তখন কি উনি খুশি হয়েছেন। হয়েছেন মনে হয়! উনার চোখ তাই বলছিল।এই প্রথম কাউকে দেখেছি  যে কারো মৃত্যুতে চরম খুশি হয়েছে।তবে উনি  সমবেদনাও জানিয়েছেন।মানুষটা এত পাগল।আমাকে নিজে বাসায় পৌছে দিয়ে গেল।এই ভেবে যে রাত দশটা।আমি কিভাবে একা একা বাসায় যাবো! মানুষটা এখনো আমায় নিয়ে ভাবে! ছি ছি কি সব ভাবছি আমি। এ অন্যায়। এটা হয় না।আমি উনাকে নিয়ে ভাববো না। আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারি না।কোন মতেই না এখানে আর থাকা যাবে না।কাল ভোরেই রওনা দিব।মানুষটা যদি আবার চলে আসে এখানে! উনার চোখের দিকে তাকাতে পারবো না আমি।তাকালেই আমার ভীতরের সব যেন গুলিয়ে যায়। ভোরের ট্রেন ধরতে হবে। ডায়েরিটা কি করব! নিয়ে যাই এটা।অন্তত তার একটা সৃতি আমার কাছে থাকুক।মিরা উঠে পড়ে চট করেই।মানুষটার কথা আর ভাবা যাবে না। মায়া ধরবে।যেমনটা উনাকে ধরেছে।কিছু গোছগাছ করতে হবে।যাই। 

.
মিরা স্টেশনে বসে আছে।ট্রেন আসতে একটু দেরি হচ্ছে।ভোরের ট্রেন পাওয়া যায় নি।নয়টার ট্রেনে যেতে হবে এখন।লাইনের কোথায় যেন একটু প্রব্লেম দেখা দিয়েছে। মিরা বসে থাকে। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে।ওর মুখে বিষন্নতা লেগে আছে কেবল। চোখ দুটো যেন ফুলে আছে।লাল হয়ে আছে।মিরা যেতে চাচ্ছে না।তবুও যেতে হচ্ছে ওকে।এতটা স্বার্থপর হতে পারবে না ও। কখনই না।ট্রেন আসে।মিরা উঠে দাঁড়ায়।মাথা নিচু করে ট্রেনের দিকে এগোয়।হাঁটতে হাঁটতে চোখে জল জমে ওর।বাঁ হাত দিয়ে চোখের জল মুছে।ঠিক তখনই ও সামনের কেউ একজনের সাথে ধাক্কা খায়। মুখ তুলে সরি বলতে যাবে ঠিক তখনই ও সাদিকের মুখ দেখে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে ভীষণ । একটু ফোলা ফোলা। মিরা চোখ দুটোর দিকে তাকায়। চমকে উঠএ ও!চোখ দুটো যেন চিৎকার করে বলছে যে মিরাকে সে ভালোবাসে। ভীষণ ভালোবাসে। মিরাকে ফিরিয়ে নেয়ার তীব্র বাসনা নিয়ে সাদিক ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকল দেয়াল হয়ে। মিরা যেতে চায়।সাদিক বাধা দেয়।ভারি গলায় বলে,
"একবার না হয় সুযোগ দাও আমাকে।প্রথম সুযোগ তো বিধাতা দিল না।দ্বিতীয় সুযোগটা অন্তত আমাকে দাও।তা না হলে এই মন অন্য কাউকে ঠাই দিবে না তার  নীড়ে।"
"দেখুন পাগলামি করবেন না।আমি তাসফিকে খুব ভালোবাসি।ওকেই প্রথম এবং শেষ  বিয়ে করি। আর বিয়ে করার ইচ্ছে আমার নেই।"

"প্লিজ! এবার আমি সত্যি সত্যিই মরে যাবো। এমনটা করো না।তাসফিকে তুমি ভালোবেসো।আমি কিচ্ছু বলব না।তোমাকে আমাকে ভালোবাসতেও হবে না।কেবল আমাকে ভালোবাসতে দিও।যদি বল তাহলে তোমাকে টাচও করব না।প্লিজ! যেও না।"
মিরার বুকের ধক ধক শব্দ যেন কেবল বেড়েই যাচ্ছে।ঠোট কাঁপছে ওর।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
"উঁহু! এটা পসিবল না মি. সাদিক। আমায় ক্ষমা করবেন।"
মিরা সামনে পাঁ বাড়ায়।সাদিক চট করেই ওর হাত ধরে ফেলে।বলে,
"প্লিজ! অন্তত আমার মায়ের জন্যে হলেও আসো।সে এখানও তোমাকে আমার বউ ভাবে।কেবল তোমাকেই।তুমি বিশ্বাস করবে না আমাদের কাজ করে ফিরুর মা, সেও তোমার অপেক্ষায় আছে।তাদের বিশ্বাস তুমি ফিরে আসবে।ওদের বিশ্বাসটা ভেঙ্গ না প্লিজ।প্লিজ..."
সাদিক কান্না সামলাতে পারে নি।শেষমেশ বাঁদ ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ও।মিরা কেবল তাকিয়ে থাকে।চোখের কোণা বেয়ে জল পড়ে কেবল।সাদিক ওর হাত ধরে আছে।ওর অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।অসঙ্গায়িত একটা অনুভূতি যার  নাম ভালোবাসা।মিরা এক দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়েই থাকল।ততক্ষনে ট্রেন ছেড়ে দেয়।ট্রেনের হুসেল বেজে উঠে।সাদিক আরেকটু শক্ত করে মিরার হাত ধরে।মিরার খবর থাকে না।ট্রেন চলে যায় তার খবর থাকে না! সে কেবল কারো মায়ায় আবেশিত হল মাত্র।এখান থেকে ছুটে গিয়ে ট্রেন ধরা আসলেই দুষ্কর ব্যাপার।যাত্রি বহুল স্টেশন। মানুষের সমাগম বেশি।কারো দেখার সময় আছে আর কারো ফিরে তাকানোর সময়ও নেই।যারা তাকায় না তারা খুব সুন্দর একটা দৃশ্য মিস করে। একজন ব্যার্থ প্রেমিকের সফলাতা তারা দেখে না।প্রনয়ে জয়ি হয়ে সে যে খিল খিল শব্দ করে হাসে তা দেখতে পায় না।দুজন প্রেমিকের এমন মিল তারা দেখে না।তারা আসলেই বোকা।পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম একটা দৃশ্য তারা দেখল না।তারা আসলেই আমার মত অভাগা। তা না হলে কি নিজেকে মেরে নিজের প্রমিকাকে সাদিক্কার হাতে তুলে দিতাম! 
.
গল্পটা আমার এক প্রিয় বন্ধুকে উৎসর্গ করছি সম্প্রতিতে যার বাবা মারা গিয়েছে। উনার জন্যে দোয়া করি এবং বন্ধু তৌহিদের আগামীর পথ চলা যেন সুগম হয় সেই দোয়া এবং প্রত্যাশা রাখি।
.
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url