Bangla Golpo: বন্ধুত্ব

বাংলা ছোট গল্প। বাংলা গল্প| Love Stories Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.

Bangla Golpo: বন্ধুত্ব 

(শেষ পর্ব)

তাসফি আহমেদ
.

রাতে আমরা সবাই নিশাদের বাসায় ছিলাম। অনেক কথা বললাম ওর সাথে।হাসি তামাসা করলাম। সদ্য প্রেমে পড়া মাসুদ ও তার প্রেমিকা নিয়ে বিশদ আলোচনা হল।অনেক রাত পর্যন্ত প্লানিং চলল কিভাবে নিশাদের স্বপ্ন কন্যাকে খুঁজে পাওয়া যায়।নিশাদের কাছ থেকে ওর ভার্সিটির এড্রেস নিলাম।কিন্তু ও কোথায় থাকে সেটা ঠিক মত জানা গেল না।নিশাদ কেবল এতটুকু বলেছে যে মেয়েটা ভার্সিটির আশেপাশেই থাকে।যাক কি আর করার।অস্র কম হলেও যুদ্ধে যে নামতেই হবে।নিশাদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে হলে আমাদের একটু কষ্টতো করতেই হবে।আর যাই হোক প্রানের বন্ধু আমরা।এক বন্ধু কষ্ট পাবে আর আমরা বসে বসে কেবল তা দেখেই যাব সেটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।সকাল হলেই যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে।তাই আমাদের এখনই ঘুমিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।পাঁচ জন বিচ্ছিন্নভাবে শুয়ে পড়লাম।কে কোথায় শুয়েছি সেটা আমরা কেউই জানি না।
.
খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম।নিশাদের বাসা থেকে বের হয়ে আগে নিজের বাসায় গেলাম।ঠিক আটটা ত্রিশ মিনিটে সবাইকে টং দোকানের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্যে বললাম শুধু নিশাদ আর রাফি ছাড়া।রাফিকে বললাম নিশাদের সাথে থাকতে। ওর সাথে থেকে ওকে সাহস দেওয়ার প্রয়োজন।আর কারো সাথে যখন কথা বলে তখন কষ্ট গুলো ভুলে থাকা যায়।তাই রাফিকে রেখে আসলাম।টং দোকানের সামনে আসতেই দেখলাম সিফাত আমার আগে এসে বসে আছে।আমাকে দেখতেই মৃদু হাসল ও।আমি গিয়ে বেঞ্চিতে বসলাম।অপেক্ষা করছি মাসুদের জন্যে। কখন ও আসবে।ও আসল না। আমরা অনেক্ষন বসে থাকার পরেও ও আসল না। আমার মেজাজটা এবার সত্যিই গরম হয়ে গেল।ছেলেটার সত্যিই কি কোন সময়জ্ঞান নেই।এমন একটা সিরিয়াস কাজ করতে যাচ্ছি এখানেও তার লেট।সিফাতের দিকে তাকাতেই দেখলাম ও চেহারায় একরাশ বিরক্তি খেলা করছে।সাথে রাগও। যেন মাসুদকে সামনে পেলে আস্ত খেয়ে ফেলবে।পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম। ওকে ফোন দিতে যাব ঠিক তার আগেই ওর ফোন এসে হাজির। ফোন ধরেই দিলাম একটা ঝাড়ি। ওপাশ থেকে খুব শান্ত একটা কন্ঠ স্বর ভেসে এল।আর যাই হোক মাসুদ এমন একটা ঝাড়ি খেয়ে এত সুন্দর ভাবে কথা বলার ছেলে না।কিন্তু ও এমন করছে কেন?আমি যথেষ্ট কর্কশ গলায় বললাম,
:কি ব্যাপার! তোমার সমস্যা কি?
:না দোস্ত।কোন সমস্যা না।আসলে পেটে একটু ব্যাথা করছে তোরা যা।আমি যাব না।
:কি যাতা বলছিস! তুই যাবি না মানে?
:হ রে দোস্ত।এই শরির নিয়ে যেতে পারব না।তোমার যা।
:ধুরর বেটা ভনিতা ছাড়। তাড়াতাড়ি চলে আয়।
এবার ও একটু উচ্চস্বরে বলল,
:বলেছি না যাব না।তবুও এমন প্যাক প্যাক করছিস কেন?
:আচ্ছা! তাহলে তুই যাবি না?
:না!
:ঠিক আছে।তোর সেই নীল জামাওয়ালীর কাছে গিয়ে তোর সুনাম করতে কিন্তু বেশি সময় লাগবে না।
ও পাশ থেকে ও বিড় বিড় করে কি জানি বলছিল।মনে হয় বলছিল,
আজ ভেবেছি ওকে দেখতে যাব।এই শালাদের জ্বলায় সেটাও হল না।ধুরর!
আমি কিছু বললাম না।চুপ করে থাকলাম।মাসুদ বলল,
:রাখ! আসছি!
এই বলে ও ফোন কেটে দিল।ফোন পকেটে রাখতেই আমার চোখ গেল সামনের রাস্তার দিকে।মাসুদ আসছে।আচ্ছা! তাহলে উনি এতক্ষণ লুকিয়েছিলেন।ভেবেছেন কোন রকম ভনিতা করে পার পেয়ে যাব।হাহা! কিন্তু আমি তা মোটেও হতে দিব না।ও এসেই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকল।হয়ত আমাদের মুভমেন্ট বুঝার চেষ্টা করছে।আমরা যে রেগে আছি সেটা আমরা ওকে মোটেও বুঝতে দিলাম না।কেবল অপেক্ষায় রইলাম কখন ও এসে বসবে আর আমরা ওকে ধরে একটা ধোলাই দিব।কিন্তু ও আসল না।হাত পাঁচেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকল।আমাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।বলল,
:কি রে! রেগে আছিস!
সিফাত নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারল না।তাই মাসুদের দিকে ছুটে গেল।মাসুদ হয়ত এটারই অপেক্ষায় ছিল। তাই সিফাতকে নড়তে দেখে দৌড়াতে শুরু করল।সিফাতও থামল না।দৌড়াতে থাকল ওর পিছন পিছন। আমি তাই করলাম।আর যাই হোক মাসুদকে একটা ধোলাই না দিয়ে শুভ কাজ সম্পন্ন করতে যাচ্ছি না আমরা। মোটেও না।ওকে আচ্ছা মত একটা পিটুনি দিয়ে তারপর গন্তব্যে যাব।
.
তিন ঘন্টার জার্নি শেষে অবশেষে আমরা সেই ভার্সিটিটার সামনে গিয়ে পৌঁছালাম। এখন ত্রিশ মিনিট হল দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু মেয়েটার কোন খবরই পাচ্ছি না।ভয়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাসের ভিতরেও যেতে পারছি না।গেলেই ভার্সিটির পোলাপান ধরে পিটুনি দিবে।প্রথমত কাউকে চিনি না।তারউপর যদি শুনে মেয়ে খুঁজতে এসেছি তাহলে তো কথাই না।মার খেয়ে বাড়ি যেতে হবে। একটাও মিস হবে না।তাই ভিতরে গেলাম না।
.
ভার্সিটিরর সামনের দোকানে বসেছিলাম আমরা।হঠাৎই মাস্তান টাইপের একটা পোলা আমাদের সামনে এসে বসল।তার পিছনে তার কয়েকটা চ্যালাপ্যালা ছিল।কলার উঠিয়ে কি একটা হুলুস্থুর ভাব তার।আমরা চুপ করে থাকলাম।সে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
:কি রে! তোদের মতলব কি? সে কখন থেকে দেখতেছি তোরা ক্যাম্পাসের আশেপাশে ঘুরতেছছ।কোন বদ মতলব নাই তো?
আমরা কি বলল ঠিক ভেবে পেলাম না।ভয়ে অনেকটা গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।আমি একটু ভালো করে লক্ষ্য করলাম যে আমি খানিকটা ঘামিয়ে গিয়েছি।মাসুদ আর সিফাত কিছু বলছে না দেখে খানিকটা ভেবে ভাংগা ভাংগা কন্ঠে আমি বললাম,
:আসলে ভাই আমরা এখানে রাকিব হাসান শান্ত নামক একজন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি।উনার নামে অনেক সুনাম শুনেছি আমাদের কলেজের নেতা জহির ভাইয়ের কাছ থেকে।তাই দেখা করতে চলে এলাম।
কথাটা শুনেই দেখলাম লোকটার চেহারার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।চেহারায় মাস্তানি ভাবটা কেটে গিয়ে হাসির ঝলক দেখা দিল সেখানে।নিজের কলারটা ঠিক করে ছেলেটা বলল,
:কোন ভার্সিটির তোমরা?
:অমুক ভার্সিটির।
:এতদূর থেকে তোমরা কেবল আমার সাথে দেখা করতে আসলা।বিশ্বাস হচ্ছে না।
কথাটা শুনেই মাসুদ এমন একটা ভাব করল যেন ছেলেটাকে আমাদের সামনে দেখে মহা খুশি ও।উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। বলল,
:আরে! আপনিই তাহলে রাকিব ভাই? আগে বলবেন না? ভাই আপনার নামে অনেক কথা শুনেছি জহির ভাইয়ের কাছে।একজন রাজনীতিবিদ যে এত ভালো হতে পারে সেটা আমাদের আগে ধারনা ছিল না।কি খাবেন ভাই।বলুন।
দোকানদারের দিকে তাকয়ে মাসুদ বলল,
:অ্যাই ভাই।রাকিব ভাই কি খাবে দিন তো
:আরে না না না! কি করছ।তোমরা আমার মেহমান! আমার সাথে দেখা করতে এসেছ।আর আমাকেই খাওয়াতে চাচ্ছ! এটা হয় না।অ্যাই জামাল(দোকানের ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে)এরা কি খাবে দে।এত জার্নি করেএসেছ।খুব ক্লান্ত তো হবাই।
:না ভাই।আমরা কিছু খাব না।বাদ দিন।
:আরে নাহ! এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।কিছুতো তোমাদের খেয়ে যেতেই হবে।
এরপর আর কি।জোরাজোরি করে খাওয়ালেন আর ফ্রিতে অনেক বয়ান দিলেন তিনি।আমরা এমন একটা ভাব করছি যেন আমরা উনার কথা গুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনছি। কিন্তু আসলেই আমরা উনার কথা শুনছিলাম না।খাবারের দিকে মনযোগ আমাদের।বিশেষ করে সিফাত ও মাসুদের।
.
রাকিব ভাই আমাদের পেট পুরে খাওয়াল। অবশ্য দোকানে এমন আহামরি কিছু ছিল না যে খেলেই পেট ভরে যাবে।আমরা যখন উনার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে দোকান থেকে কিছুটা দূরে আসলাম তখন মাসুদের হাসি কারে কয়।হাসতে হাসতে একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে ও।আমি আর সিফাতও কম হাসলাম না।হাসতে হাসতে পেটের চামড়া ব্যাথা হয়ে গেল।এত বোকা মানুষ এই পৃথিবীতে আছে সেটা আমাদের জানা ছিল না।প্রত্যেক কলেজ বা ভার্সিটিতেই এমন কিছু ছোট ছোট নেতা থাকে।যারা নিজেকে খুব চালাক ভাবে। বাস্তবে তারা তেমন কিছুই না।এখানে এসেই রাকিব ভাইয়ের ছবি দেখলাম।উনার নামটাও এখানে এসেই দেখলাম।তারপর তিনজন মিলে প্ল্যানটা করলাম। কারন অচেনা ভার্সিটি বা কলেজে গেলে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
.
আমরা যখন অট্টহাসিতে ব্যাস্ত ঠিক তখনই চোখ গেল ভার্সিটির গেইটের দিকে।মেয়েটাকে কেমন চেনাচেনা লাগছে।পকেট থেকে ফোন বের করে নিশাদের দেওয়া ছবিটার সাথে মিলালাম।আরে হ্যাঁ! এই তো সেই মেয়ে।নিশি।এই তো নিশি।সিফাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,
:দোস্ত পেয়ে গেছি।
:কি পেয়েছিস।
:মেয়েটাকে।
সিফাতকে দেখালাম।মাসুদও সেদিকে তাকাল।আমরা যখন ওর দিকে তাকিয়ে আছি ও তখনই আমাদের দিকে ফিরল।এবং আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকল।আমরা খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম।ও দেখে ফেলে নি তো যে আমরা ওর দিকে তাকিয়েছিলাম।আমরা সবাই চোখ ফিরিয়ে নিলাম।এমন ভাব করলাম যে মেয়েটার দিকে আমরা তাকাইই নি।কখন দেখিও নি।মেয়েটা আমাদের দিকে আসতে থাকল।তারপর আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।আমরা কিছু সময় থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।ছবির সাথে মেয়েটার খুব একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি না।চোখের নিচে কালী পড়ে আছে।মুখটা শুকিয়ে আছে। আহারে! বেচারি মনে হয় খুব কষ্টে আছে। আমরা ওর পিছু নিতে থাকলাম। এক সময় মেয়েটা একটা গলির ভেতর দিয়ে ঢুকল। আমরাও ঢুকলাম।গলির শেষ মাথায় একটা চায়ের দোকান আছে।মেয়েটা সেই দোকান পেরিয়ে মোড় নিল।তারপর সোজা চলে যেতে থাকল।আমার থেকে ভীষণ ক্লান্ত লাগল আমি ওই চায়ের দোকানের বেঞ্চিটাতে বসে পড়লাম।সিফাতও বসল।মাসুদ দাঁড়িয়ে থাকল।বলল,
:কি রে! আর যাবি না?
:নাহ! দোস্ত।তুই আর সিফাত যা।আমি এখানে আছি।
:আমিও যেতে পারব না।ক্লান্ত লাগছে।(সিফাত)
:আচ্ছা ঠিক আছে। আমি যাই।তোর এখানে বস।কোথাও যাবি না।(মাসুদ)
:আচ্ছা।(আমি)
.
চায়ের অর্ডার দিলাম।চা যখন অনেকটা শেষ হয়ে আসছিল তখন আমার চোখ গেল গলির মোড়ের দিকে।যেদিকে মাসুদ গিয়েছিল।আমি তাকাতেই দেখলাম মাসুদ দৌড়ে আসছে।চোখ-দুটো বড় বড় করে দৌড়ে আসছে।ওর চেহারা লাল হয়ে আছে।খুব জোরে দৌড়াচ্ছে ও।আমি ওকে আগে কখনই এত জোরে দৌড়াতে দেখি নি।যখন ও অনেকটা কাছে চলে এসেছিল তখন একটা কুকুরের ডাক কানে আসল।মাসুদের পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা কুকুর দৌড়ে আসছে।ওরে বাপরে। ওকে আবার কুকুর ধরল কিভাবে।আমরা চা এর কাপ হাতে রেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলাম কেবল।মাসুদ আমাদের সামনে দিয়ে দৌড়ে যেতে যেতে বলল,
:দৌড়া দোস্ত।দৌড়া! কুকুরটা পাগল।
এটা শুনে আমার বুকটা একটু মুছড়ে উঠল।যাস শালা।শেষমেশ কুকুরের হাতে ধরা খাইতে হল।মাসুদ দৌড়ে চলে যেতে থাকল।ওর পিছনে তখনও কুকুরটা ছিল।আমি চায়ের দামটা দিতেই গিয়ে দেখলাম দোকানি হাসছে।বল্ল,
:ভাইজান।এইবার বুঝবে ঠ্যালা।হাহাহা।
আমরা আর সেদিক তাকালাম না।মাসুদ যেদিকে দৌড়ে গিয়েছে আমরা সেদিকে দৌড়ে গেলাম।
.
মাসুদের মুখটা লাল হয়ে আছে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।আমি আর সিফাত কেবল বোকার মত ওর দিকে তাকিয়ে আছি।নিরাবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম,
:তোরে কুকুর ধরল কি ভাবে?
মাসুদ কিছু সময় কিছু বলল না।একটু থেমে ও বলল,
:মেয়েটার বাসাটা ছিল দারুন। আমার জীবনে এত সুন্দর বাসা দেখি নি।মেয়েটা গেইট দিয়ে ঢুকে যাওয়ার পর আমি কিছু সময় বাইরে থেকে বাসাটা দেখলাম।গেইটের ভিতরে একটা ফুলের বাগান ছিল।মিষ্টি একটা গ্রান আসছিল সেখান থেকে।আমি যখনই গেইট ফাঁক করে ভিতরে পাঁ দিলাম তখনই আমার পাঁ কুকুরের লেজে পড়ে গেল।কুকুরটা শুয়ে ছিল।যখনই লেজে চাপা পড়ল তখনই ও চেঁচিয়ে উঠে আমাকে দৌড়াতে থাকল।যাক বাবা।আল্লাহ বহুত বড় মুছিবত থেকে হেফাজত করেছে।
:তা তুই কি আকাশের দিকে তাকিয়ে গেইট খুলে ভিতরে ঢুকেছিলি?
:না।বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে!
:তোর এসব অভ্যাস কখনই যাবে না।চল বাড়ি যাই।
.
এত দৌড়াদৌড়ি কেবল নিশাদের জন্যেই।আমরা বন্ধু গুলোই এমন।সবার কিছু না কিছু গুন আছে।যার কারনে সবার কাছে সবাই খুবই গুরুত্বপূর্ন।যতক্ষন একসাথে থাকি হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি।মাঝে মাঝে একজন অন্য জনের উপর প্রচন্ড রেগে যায়। কেউ কারো সাথে কথা বলে না কয়েক ঘন্টা কেবল।এটা ঠিক কয়েক ঘন্টাই।আমাদের মাঝে কখনই ঝগড়া বিবাদ নিয়ে বিশাল গ্যাপ নিজেদের মাঝে তৈরি হয় নি।একজন রাগ করলে কিছু সময় পর অন্যজন ঠিকই মানিয়ে নিতাম।আবার শুরু হয় আড্ডা মজা মাস্তি।একটু ভালোবাসা একটু রাগ একটু মায়া নিয়েই আমাদের বন্ধুত্ব।
.
পরের দিন নিশাদকে নিয়ে ছুটলাম তার প্রিয়তমার পানে।মনের মাঝে কিছুটা উত্তেজনা কাজ করছে।নিশাদ নিশিকে প্রথমে দেখে কি করবে? কেমন রিয়েক্ট করবে ও। বা নিশি কেমন অনুভব করবে? দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরবে নাকি কিছু সময় ছলছল চোখে তাকিয়ে নিশাদকে দেখবে।কথা গুলো মনে হতেই আনমনে হেসে উঠলাম। আচ্ছা আমার বাকি বন্ধুদের মাঝেও কি এমন উত্তেজনা কাজ করছে?
.
আমরা একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি।নিশি আসছে।সেদিন যে পথে যাচ্ছিল আজও সেই পথে যাচ্ছে।মুখটা শুকিয়ে আছে।চোখের নিচের কালী গুলো আরেকটু গাঢ় হয়েছে।কেমন আনমনা দেখাচ্ছে ওকে।বড় বিষন্ন ওর চেহারা।মনে হয় জিবনে হাসতে শিখে নি মেয়েটা।মাথা নিচু করে হাঁটছে।নিশাদকে পাঠিয়ে দিলাম।আমরা আড়ালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলাম কেবল।নিশাদ পেছন থেকে ডাক দিল নিশিকে।
:নিশি?
নিশির বুকটা হুট করেই ধক করে উঠল। দ্রুত পিছন ফিরে তাকাল।তাকাতেই দেখল নিশাদ দাঁড়িয়ে আছে।নিশাদের মুখটা শুকিয়ে আছে।চোখের নিচে কালি পড়ে আছে।চুল গুলো অগোছালো হয়ে আছে।নিশি কেবল নিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকল।আমি ভালো করে লক্ষ্য করলাম যে নিশির চোখ দুটো ছলছল করছে।চোখের কোনাটা চিকচিক করছে।নিশি দৌড়ে এল না।এসেই নিশাদকে জড়িয়ে ধরল না।নিশি নিশাদের দিক হতে চোখ ফিরিয়ে নিল।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকল।নিশাদ দৌড়ে গেল ওর কাছে।ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এল।বলল,
:কি ব্যাপার! এত দিন তুমিই তো আসতে চেয়েছিলে।এখন চলে যাচ্ছ কেন?
:ছাড়ুন আমায়।
:না! ছাড়ব না।
:ছাড়ুন বলছি?
নিশাদ ওকে ছেড়ে দিল।দু হাত দিয়ে নিজের কান ধরল।আড়ালে থেকে আমরা হাসি থামাতে পারছিলাম না।তবুও কোন রকমে হাসি চেপে দাঁড়িয়ে থাকলাম।নিশাদ নিজের কান ধরে বলল,
:সরি! প্লিজ এবার মাপ করে দাও।আর এমন হবে না।প্লিজ।
:নাহ! তোমার কোন মাপ নেই।কেন এসেছ এখানে।চলে যাও।
:না! যাব না।তুমি ক্ষমা না করলে আমি এখান থেকে একটুও নড়ব না।
:আমি ক্ষমা করার কে? আর তাছাড়া আপনি তো কোন ভুল করেন নি।ভুল তো আমার।আমি কেন আপনাকে ভালোবাসতে গেলাম।এটাই তো আমার আপরাধ।তারই ফল এখন ভুগছি।ফালতু সময় নষ্ট করবেন না।চলে যান।
:তোমার চোখ তো ভিন্ন কথা বলছে।
:আপনাকে যেতে বলেছি।চলে যান।
:এভাবে বল না প্লিজ নিশি। কষ্ট আমিও পেয়েছি।কেবল তুমি একা পাও নি।নিজেকেই তো আমি হারিয়ে ফেলেছি।তোমায় কত খুঁজেছি তার হিসেব নেই।মোবাইলের ব্লক লিষ্ট থেকে তোমায় আনব্লক করেছি।কিন্তু ফোন নাম্বারটা বন্ধ পাই।ফেবুতেও তোমাকে হারিয়ে ফেলি আমি।তোমার নামে অন্য কোন আইডিই পাই নি।তুমি জানো না।অনেকটা পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।মনের মাঝে কেবল তোমায় বসিয়েছে।তুমি গেঁথে গিয়েছ এই হৃদয়ে। সারানোর কোন উপায়ই নেই নিশি।তোমাকে মন থেকে সরাতে পারছিলাম না।বন্ধু গুলোর থেকেও দূরে সরে গিয়েছি।আর দেখ! এখান পর্যন্ত আসতে কেবল ওরাই সাহায্য করেছে।অন্য কেউ করে নি।এটাও ভালোবাসা নিশি।এটাও ভালোবাসা।তোমার ভালোবাসার টানে এখানে এসেছি।কেবল তোমার জন্যেই।হ্যাঁ! তোমায় ছাড়া হয়ত আমার থাকতে কষ্ট হবে।তবে তাই থাকব।আমি জানি যত কষ্টই থাকুক না কেন আমার বন্ধু গুলো আমায় আবার আগের মত করে তুলবে।চলে যেতে বলেছ।চলে যাচ্ছি।কিন্তু যখন আমায় চাইবে তখন বড্ড দেরি হয়ে যাবে।ভালো থেকে।
কথা গুলো একসাথে বলল নিশাদ।গলাটা খানিকটা ভিজে এসেছিল শেষের কথা গুলো বলার সময়।চোখ দুটো ছলছল করছিল।ক'ফোটা জল গাল বেয়েও পড়ল।নিশির চোখের আড়াল হল না সেটা।নিশাদ চলে আসবে।এমন সময় নিশি ওর হাত চেপে ধরল।হাত ধরেই ডুকরে কেঁদে উঠল ও।নিশাদ ওর দিকে ফিরতেই ও নিশাদকে জড়িয়ে ধরল।কান্না ভেঙে পড়ল ও।বলল,
:তুমি হয়ত আমায় ছাড়া থাকতে পারবে।কিন্তু আমি সেটা মোটেও পারব না।তোমায় ছাড়া আমি মোটেও থাকতে পারব না নিশাদ।তুমি আমার শ্বাস নিশ্বাসের সাথে মিসে গিয়েছ।তোমায় চাইলেই আমি দূরে ঠেলে দিতে পারি না।বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায় নিশাদ।খুব বেশিই ভালোবাসি।
নিশি নিশাদকে জড়িয়ে ধরে আছে।কান্না করছে ওরা দুজনেই।আশেপাশের লোকজন আড় চোখে দেখছে।কেউ কেউ মনে মনে বাঝে ধারনা করছে।আবার কারো দেখার সময়ও নেই।আমরা আড়ালেই তাকিয়ে থাকলাম।আমার পাশের বন্ধু গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওদের চোখেও জল।খুশির জল।বন্ধুর মুখে হাসি ফোটাতে পেরে খুশি ওরাও।খুশি আমিও।আপনারাও খুশি হোন।হাসি খুশি থাকুন। ভালো থাকুন। বিদায়।
.
উৎসর্গ :এমন কিছু ভালো বন্ধু ও এমন একটা প্রেয়সীর জন্যে।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url