Bangla Golpo: বন্ধুত্ব

Bangla Golpo | Bangla new golpo | bangla Valobasar Golpo | Bangla Romantic Golpo


Bangla Golpo: বন্ধুত্ব

তাসফি আহমেদ


নিশাদ একা একা বসে আছে। মুখে বিষন্নতা।কালো হয়ে আছে মুখটা।ভীষণ কালো।আমি স্পষ্ট দেখছি ওর মুখে কষ্ট ভাসছে। কাউকে কষ্ট দিয়ে নিজে কষ্ট পাওয়ার কষ্ট।আশ্চর্য! আমি নিশাদকে কখনই এমন অবস্থায় দেখি নি।ছেলেটা বেশ প্রানবন্ত।হাসি খুশি থাকে সব সময়। বেশ স্মার্টও।চোখে একটা চিকুন ফ্রেমের চসমা আছে।যা ওর সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।বেশ কয়েকটা প্রপোজালও পেয়েছে।তবে তা গ্রহন করে নি।বর্তমান সময়টা নিজেকে গড়ার সময়। নিজের ভবিষ্যৎ ঠিক করার সময়।প্রেম নামক বেড়াজালে আঁটকে নিজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার ইচ্ছে ওর একদম নেই।আমি অবশ্য সেটা নিয়ে চিন্তিত নই।আমি চিন্তিত এমন উচ্ছ্বাসিত ছেলেটা হুট করেই এমন মন মরা হয়ে গেল কেন? কেন এত নিশ্চুপ হয়ে গেল ? ঠিক কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।আমি দূরেই দাঁড়িয়ে থাকলাম।ওর কাছে গেলাম না।দূর থেকেই ওর দিকে একটু ভালো করে লক্ষ্য করলাম! আরে ছেলেটা কান্না করছে। প্যান্টের পকেট হতে ছোট্ট কালো রঙের রুমালটা বের করে চোখ মুছল ও।নাহহ! প্রিয় বন্ধুর এমন কষ্ট দেখে আমার ভালো লাগল না।একদমই না। ভীষণ কষ্ট হতে লাগল আমার।খারাপ লাগতে লাগল।আমি আর ওর কাছে গেলাম না।এই সময়ে একা থাকাই ভালো।খামখা ওখানে গিয়ে ওকে বিভ্রান্ত করতে চাই না।চলে এলাম সেখান থেকে।
.
মোড়ের টং দোকানের সামনে এসেই রাফি আর সিফাত কে ফোন দিলাম।দোকানের বেঞ্চিতে বসে পড়লাম।চায়ের অর্ডার দিতেই একটা কথা মনে পড়ে গেল।আরে! আমি তো মহা ভুল করে ফেলেছি! মহা ভুল! আমি মাসুদকে ফোন দেই নি।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের অতি প্রিয় একটা নাম।যে না থাকলে আড্ডাটা ঠিক জমে উঠে না। যিনি অতিব জ্ঞানের অধিকারি। আমি তাকেই ফোন দেই নি? কি কান্ড! এ কি করলাম আমি! তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম তাকে। ওরা আসতে আসতে এক কাপ চা খাওয়া যাক। ওদের সাথে না হয় আরো এক কাপ খাওয়া হবে।চায়ের প্রতি মারাত্মক নেশা আমার।
.
আমার চা খাওয়া শেষ।ওরা তখনও আসে নি।কিছু সময় পরই দেখলাম রাফি আসছে।এর পরেই সিফাত আসল।কিন্তু জ্ঞানি মাসুদের এখনও খবর নেই।আমি ওর অপেক্ষাতেই বসে আছি।ঠিক তখনই সিফাত বলে উঠল,
:কি রে? হঠাৎ এত জরুরি তলব করলি যে?
ওর সাথে তাল মিলিয়ে রাফি বলল,
:হুম।কেন ডাকলি বলত?
আমি বললাম,
:একটু অপেক্ষা কর।বলছি!
:অপেক্ষা করব কেন? (রাফি)
:কেন?তোর কি খুব তাড়া আছে? (আমি)
:না।ঠিক তা না।কিন্তু অপেক্ষা করব কেন?
:একটু অপেক্ষা কর ভাই। বলতেছি।
পাশ থেকে সিফাত মৃদু বলে উঠল,
:আমি বুঝতে পেরেছি! কেন ও অপেক্ষা করতে বলছে!
রাফি ওর দিকে ভ্রু কুছকে তাকাল।বলল,
:কেন?
সিফাত আমাদের দিকে তাকাল।বলল,
:তুই নিশ্চই পি. এন. ও. (মাসুদের অতিরিক্ত জ্ঞানের জন্যে ওকে এই ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে!) সাহেবের জন্যে অপেক্ষা করছিস?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।রাফিও হাসল।বলল,
:ও! আচ্ছা! এই ব্যাপার? তা স্যার কি আসতেছে?
আমি বললাম,
:হুম।উনি আসছেন।কিন্তু হারামি এত দেরি করছে কেন?
রাফি বলল,
:ও সারা জিবনই ছিল লেট মাস্টার।
:কথাটা মন্দ বলিস নি! (সিফাত)
:হুম।একদম সত্য।(আমি)
.
সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাজ পথ কাঁপিয়ে আসল আমাদের অত্যন্ত জ্ঞানী বন্ধু মাসুদ।একটা থ্রি-কোয়ার্টার আর ঢিলেঢালা গেঞ্জি পরিহিত, উসকোখুসকো চুল-ওয়ালা ছেলেটাই মাসুদ। এসেই ধপাশ করে বেঞ্চিতে বসল।আমরা তিন জনই ওর দিকে তাকিয়ে আছি।আমাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও মৃদু হাসল।বলল,
:কি রে? এভাবে তাকিয়ে আছিস যে?
আমি রুক্ষ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
:একদম কথা বলবি না তুই! দশ মিনিটের কথা বলে তুই আধ ঘন্টা লাগিয়েছিস!
সিফাত বলে উঠল,
:শালারে ধইরা গন পিটুনি দিলে ওর শিক্ষা হইব।
ও বলল,
:আরে ভাই একটু বুঝার চেষ্টা কর! আসার সময় ছোট বোন ধরছিল ওর চোকলেট নিয়ে আসতে। চকলেট দিয়ে আসতেই একটু দেরি হয়ে গেল।
আমি বললাম,
:আচ্ছা! ওসব বাদ দে।কাজের কথায় আসি।
:হুম! বল।কেন এত জরুরি ডাকলি।(মাসুদ)
:তোরা কি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস?(আমি)
:কি? (রাফি)
:নিশাদ আমাদের থেকে কেমন জানি দূরে চলে যাচ্ছে।আড্ডা দিতে খুব একটা আসে না।মাঝে মধ্যে একবার আসলেও আনমনা হয়ে বসে থাকে।লক্ষ্য করেছিস ব্যাপারটা?(আমি)
:হুম।ব্যাপারটা আমি বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করছি।ও কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি। (সিফাত)
:আমিও লক্ষ্য করেছি ব্যাপারটা।কিন্তু কি হয়েছে ওর? (রাফি)
আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখনই চোখ গেল মাসুদের দিকে। চোখ পড়তেই দেখলাম সে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরাও সেদিকে তাকালাম। দেখলাম দুইটা মেয়ে যাচ্ছে।ও সেদিকে তাকিয়ে আছে।আমার মেজাজটা হুট করেই গরম হয়ে গেল।রাফি আর সিপাত কিছু না বলেই ওর উপর হামলা করল।ধুম ধুম করে কয়েকটা দিল ওর পিঠ বরাবর।বেচারা মার খেয়ে একেবারে লাল হয়ে গেল।ওর গায়ে হাত দিলেই ও একেবারে লাল হয়ে যায়।যখন ও খুব হাসে কিংবা মারামারি করে তখনও ওর মুখটা এমন লাল হয়ে যায়।ক্লাসের সবাই ওকে লাল মাসুদ বলে ডাকত এক সময়।মাসুদ যখন পিটুনি খেয়ে লাল হয়ে আছে তখনই সিফাত রেগে মাসুদের দিকে তাকিয়ে বলল,
:তুই কখনো ঠিক হবি না।আমরা এমন একটা সিরিয়াস মেটার নিয়ে আলোচনা করছি আর তুই কি না বাইরে তাকিয়ে মেয়ে দেখছে।ছিঃ! 
রাফি আরো রেগে বলল,
:ফাউল একটা।কত করে বললাম এসব অভ্যাস বাদ দে। না।কে শুনে কার কথা।সে তাকাবেই। অ্যাই! এগুলো যে খারাপ সেটা কি তুই জানছ না।
ওরা দুজনে মিলে মাসুদকে সেই একটা ঝাড়ি দিল।আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম।ছেলেটা মার খেয়ে ঝাড়ি শুনে একেবারে চুপশে গেছে। মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।আমি আরো বেশি আশ্চর্য হলাম যখন দেখলাম এত মার খাওয়ার পরও ও বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করল না।এটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারি নি।আর যাই হোক এমন একটা ধোলাই খেয়ে ও ভুলেও চুপ করে থাকার মত ছেলে না।দশটা ঘুসি খেলেও একটা সে দিবেই।যে করেই হোক।আমি ওর দিকে তখনও তাকয়ে থাকলাম। কাহিনী কি? কিছু বলছে না কেন ও? নাহ্! চুপ করে থাকা যায় না। বললাম,
:তুই কি আসলেই পুরনো সেই মাসুদ? আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। কি হয়েছে বলত! মার খেয়েও তুই একটু প্রতিবাদও করলি না।কেন?
আমার কথাটা শুনেই মৃদু হাসল ও।মাথা তুলে তাকাল।একটু হাসতেই লাল হয়ে গেল ও।নাহহহ! ও আসলেই আমাদের সেই মাসুদ না
যাকে আমরা চিনি।কিছু একটা হয়েছে ওর।ওর চোখ বলছে ওর কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে।আমি আবারো বললাম,
:কি হয়েছে? কাহিনী কি?
রাফি আর সিফাতও কিছু বলল না।চুপ করে থাকল কেবল।মাসুদ আবারো হাসল।তারপর বলল,
:ইয়ে মানে আসলে হয়েছে কি? আমি মানে...
:কি ইয়ে মানে করছিস। কি হয়েছে খুলে বল।(সিফাত)
ও খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল,
:আসলে যে দুইটা মেয়ে গেল না ওদের মধ্যে যে নীল কালারের জামা পরেছে ওই মেয়েটাকে দেখলেই আমার কেমন জানি অনুভুতি হয়?
:কেমন?(রাফি)
:কেমন? এখন কি ভাবে তোদের বলি।কি ভাবে অনুভুতিটা ব্যক্ত করি।(মাসুদ)
:ইয়ে! আমি বুঝে গেছি।(আমি)
:তুমি তো বুঝবাই!আফটার অল তুমি লেখক মানুষ! তা কি বুঝেছিস সেটা আমাদের এই দুই অধমকে একটু বুঝিয়ে বলবি? (সিফাত)
মাসুদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
:মাসুদ! বলব? (আমি)
মাসুদ কিছু বলল না।কেবল হাসল।ওর মুখটা আগের থেকে আরেকটু লাল হয়ে গেল।আমি বললাম,
:শুন তোমরা! আমাদের অতি প্রিয় বন্ধু প্রেমের বেড়াজালে আটকে গিয়েছে।
:মানে?(রাফি)
:মানে ও প্রেমে পড়ে গিয়েছে।তাই না মাসুদ।(আমি)
মাসুদ এবার চওড়া হাসি দিল।মাথা নেড়ে সায় দিল।পাশ থেকে সিফাত বলল,
:হা হা হা।মানে তুই ফাঁইসা গেছিস দোস্ত।তা ট্রিট কবে দিচ্ছিস? 
ট্রিটের কথাটা শুনেই আমাদের তিন বন্ধুর চোখ যত তাড়াতাড়ি আনন্দে চিকচিক করে উঠল ঠিক তত তাড়াতাড়ি মাসুদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। লজ্জা ভাবটা আর থাকল না।একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
:এই ভয়ে এতদিন তোদের কিচ্ছু বলি নি।ভাবছি তোদের না বইলা ভিতরে ভিতরে মেয়েটাকে পটিয়ে ছুটিয়ে প্রেম করব। শালা তোদের জ্বালায় সেটাও হইল না।
:হাহা বন্ধু। সেটা তো হচ্ছে না।যদি ট্রিট না দাও তাহলে এই আমরা তিন জন গিয়ে ওই মেয়েটাকে বলে দিব আমাদের মাসুদ কত ভালো ছেলে।কি বলব? (আমি)
:তোদের পাঁয়ে পড়ি ভাই।তোরা যে আমার কতটুকু সুনাম করবি সেটা আমার জানা আছে।আর মেয়েটা অনেকটাই পটে গেছে।আমার এত দিনের পরিশ্রমে তোর জল ঢেলে দিস না।
:তাহলে ট্রিট হচ্ছে? (রাফি)
মাসুদের মুখটা চুপশে গেল আবার।মুখটা কালো করে বলল,
:এখন কি আর করার।এছাড়া তো আর কোন অপশনই নেই।(মাসুদ) 
:হেহে!যাক অনেক দিন কারো কাছ থেকে ট্রিট পাই নি।আজ মাসুদ তাহলে ট্রিট দিচ্ছে।(আমি)
:আজ মানে?মেয়েটাকে তো এখন প্রপোজই করি নি।আগে করি।দেন দেখা যাবে।(মাসুদ)
:আচ্ছা ঠিক আছে।কাজের কথায় আসা যাক। (আমি)
:হুম।বল।কি হয়েছে।(মাসুদ)
.
আমরা চার বন্ধু বসে আছি নিশাদদের বাসার ছাদে। অর্ধ চন্দ্রের মত গোল হয়ে বসেছি আমরা।সামনে বসে আছে নিশাদ। চোখে মুখে তখনও ওর বিষন্নতা লেগেছিল।চুপচাপ বসে আছে ও।আমরাও চুপ হয়ে আছি। সেদিন চায়ের দোকানে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে আমরা সবাই মিলে নিশাদের কাছে যাব এবং ওর কি হয়েছে সেটা জানতে চাইব।তাই আজ এখানে আসা।অনেক রিকুয়েস্ট করায় বলতে রাজি হয়েছে ও।আমরা সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছি।আর নিশাদ তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে।বিষন্নতা খেলে করছে চারদিকে।কালো বিষন্নতা। বিষন্ন সন্ধ্যায় নিশাদ নিজের বিষন্নতার গল্প বলবে।আমরা শুনব।স্রোতা রূপে বসে আছি আমরা।অনেক্ষন যাবত ও কিছু বলছে না।হয়ত কথা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে।গল্প বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।একটু সময় নিয়ে ও বলল,
:আমি সবে নতুন গল্প লিখা শুরু করেছিলাম।এই মাস তিনেক হবে।তাসফি যেদিন থেকে লিখছে তার বেশ কিছুদিন পর থেকে আমি লিখালিখি শুরু করেছিলাম।শুরুর অল্প কিছুদিন পরেই একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।গল্প পাগলি একটা মেয়ে।প্রচন্ড গল্প খোর ছিল ও।আমার খুব ভালো একজন ভক্ত ছিল ও।সেই সুবাদে তার সাথে আমার কথা হত কেবল।সে আমার ভক্ত হওয়ায় আমিও তার সাথে কথা বলতাম।আমি যখন লিখালিখি শুরু করি তখন তাসফি আমায় একটা কথা বলেছিল।"লেখালিখি করবি ভালো কথা তবে মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় মোটেও দূর্বল হবি না। আর কোন প্রেম নিবেদন পেলে গ্রহন করবি না। এবয়েড করে চলবি।বলবি তোর প্রেয়সী আছে।এরা আসলে তোকে নয় তোর গল্প করে ভালোবাসবে। যখন গল্প থাকবে না তখন দেখবি তারা কেউই থাকবে না।" কথাটা আমি খুব একটা গায়ে মাখি নি।তবে প্রেম করব না। ফেবুতে প্রেম করবই না।তাই আমি নিজেকে দূর্বল না করে তার সাথে কথা বলতে থাকলাম।একসময়মেয়েটা আমাকে সত্যি সত্যিই প্রপোজ করে।আমি সরাসরি না করে দেই নি।কেবল কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকলাম।তা দেখে হয়ত মেয়েটা ভাবল আমিও তাকে ভালোবাসি।তাই ভালো ভাবে কথা বলছে।একদিন যখন মেয়েটা জানতে চাইল আমি আসলেই তাকে ভালোবাসি কি না। আমি বললাম,
:দেখুন! আমি প্রেমে কখনই বিশ্বাস করি নি। ফেবুতে প্রেম! এটা তো পসিবলই না।
আমার এমন মেসেজ পেয়ে মেয়েটা হুট করেই চুপ হয়ে গেল।সেদিন আর মেসেজ দিল না মেয়েটা। কয়েকদিন কথা হল না মেয়েটার সাথে।একদিন দেখলাম মেয়েটা আমাকে নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছে।
"একটা ভুল ভাবনা আজ আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।আমি ভেবেছিলাম সে আমায় ভালোবাসে।তার সাথে কথা বলার সময়েও আমার একবারের জন্যেও মনে হয় নি যে সে প্রেমে বিশ্বাসি না।এমন ভাবনা আমায় কষ্ট দিচ্ছে।বুক ফাটা কষ্ট! আর সহ্য হয় না।"
এটা দেখেই আমার ভীষণ খারাপ লাগল।আমি তার আইডিতে গেলাম।সেখানে গিয়ে দেখলাম আমাকে নিয়ে আরো অনেক গুলো পোষ্ট দিয়েছে সে।এসব দেখে আমার আসলেই খুব খারাপ লেগেছিল।তবুও আমি পাষানের মত চুপ করে থাকলাম।তাকে কোন মেসেজও দেই নি।
.
এর কিছুদিন পরেই সে আবার আমায় মেসেজ দেয়।
আমি এবয়েড করার চেষ্টা করি।তবুও পারি না।মেয়েটাকে কোন ভাবেই এবয়েড করতে পারি না।ওর মেসেজ গুলো দেখে ওর প্রতি আমার দূর্বলতা বৃদ্ধি পায়।মাঝে মাঝে দু একটা কথা হত।এতটুকুই! আমি এর বেশি ওকে একটু সময়ও দিতাম না।মেয়েটা তখনও আমায় মেসেজ দিত।আমায় নিয়ে পোষ্ট দিত।আমি কিছু বলতাম না।চুপ হয়ে থাকতাম। এরপর একদিন আমার ফোনে একটা কল আসে।অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে।
:কেমন আছ?
:ভালো! তবে আপনাকে ঠিক চিনলাম না।কে আপনি?
:আমিই! আমি কষ্টে ভুক্ত এক নারী! কেউ আমায় কষ্ট দিয়েছে।সেই কষ্টে ভুগছি আমি।
:পরিচয় দিন?
:খুব প্রয়োজন?
:অপরিচিত কারো সাথে খুব একটা কথা বলি না আমি।
:নিশি! আপনি চিনেন আমাকে।
:সেই নিশি! যার সাথে আমার ফেবুতে কথা হত।প্রেম নিবেদন করেছিল।সেই?
:হুম।আমি সেই।
কথাটা ও খানিকটা ভিজে গলায় বলল।আমি বিরক্ত হলাম।বললাম,
:নাম্বার কই পেয়েছেন?
:আপনার অন্য আইডিতে।নাম্বার হাইড করেন নি।কেন করেন নি শুনি? মেয়েরা ফোন দিবে! এই ভেবে?
:বাজে বকবেন না।ফোন রাখুন।
:না! রাখব না।
:রাখুন বলছি!
:না।
:তাহলে আমি রাখছি।
:প্রশ্নেই আসে না।ফোন আমি দিয়েছি। তাই রাখার অধিকার আমারই আছে।তোমার নেই।
আমি বেশি কিছু বললাম না আর।টুপ করে কলটা কেটে দিলাম।কিছু সময় চুপচাপ বসে থাকলাম কেবল।ভাবতে থাকলাম কথা গুলো।ঠিক তারপরই মেয়েটা আবার ফোন দিল।খুব বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরলাম।এক ঝাড়ি দিব তার আগেই আমি শুনতে পেলাম মেয়েটা কান্না করছে। সেদিন ভীষন কান্না করেছিল ও।একটা কথাও বলে নি।কেবল কেঁদেছে ও।আমি মূর্তির মত বসে থাকলাম।মেয়েটা কান্না করছে।কান্নার শব্দটা কান দিয়ে ঢুকে একেবারে আমার হৃদয়ে আঘাত হানল আমার বুকটা খানিকটা কেঁপে উঠল।কেবল একটা কথাই মনে হতে থাকল।আর যাই হোক কোন ভাবেই এই মেয়েকে আর এবয়েড করা যাবে না।কোন মতেই না।একটা ছেলের পক্ষ্যে একটা মেয়েকে এবয়েড করার মত কঠিন কাজ আর কিছুই হতে পারে না।
.
মেয়েটার সাথে আমার রিলেশন শুরু হয়েছিল মাস খানেক হবে।খুব ভালো যাচ্ছিল দিন গুলো।গল্পের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। নিশাদের পাশের নিশি নামটা যোগ হয়েছে।আমি যদি ভুলেও ওর নাম পরিবর্তন করে অন্য কোন মেয়ের নাম দিতাম তাহলে ও রেগে একেবারে আটখানা হয়ে যেত।ফোন দিয়ে ঝাড়ি দিত আমায়।তারপর বাধ্য হয়ে আমায় নাম পরিবর্তন করতে হত।আমাদের রিলেশনের বয়স যখন এক মাস বাইশ দিন তখন থেকেই আমার মনে কেন জানি একটা ভয় ঢুকে গেল মনে।তাসফির কথাটা মনে পড়ে গেল আমার।ফেবুতে প্রেম হয় না।কখনই সত্যিকার প্রেম হয় না এখানে।একবার হারিয়ে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।কথা গুলো হুট করেই আমার মাথায় চেপে বসল।তাসফি তো খারাপ কিছু বলে নি।সত্যিই তো।আমি ওর সাথে প্রেম করলাম।যদি কোন প্রব্লেম হয়ে যায় তাহলে? এই মেয়েকে আমি কই খুঁজে পাব।পরে ছ্যাঁকা খেতে হবে।আমি খুব কাছ থেকে একজন কে দেখেছি।যে ছ্যাঁকা খেয়ে আজ অবস্থা প্রায়ই খারাপ।অয়ন! অয়ন ভাই কে তো চিনিস?
এতটুকু এক সাথে বলল নিশাদ।একটু থামল।আমরা কেবল শুনে গেলাম।কেউ বিন্দুমাত্র শব্দও করলাম না।গল্পটা অনেকটা জমে উঠেছে।গল্পে ও আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে।হ্যাঁ! কথা গুলো ওকে আমি ঠিকই বলেছি।আমি আজ পর্যন্ত কাউকে দেখি নি যে ফেবুতে প্রেম করে খুব ভালো আছে।কাউকে দেখি নি।আমি বললাম,
:হু! অয়ন ভাইকে চিনি আমি।আমার খুব ক্লোজ বন্ধু বলা যেতে পারে।তার গল্পটা আমি জানি।ইশ! উনার কি বাজে অবস্থা? ভাতের মত সিগারেট খায়।সারাদিন নেশায় পড়ে থাকে।কোন কাজকর্ম করে না।পড়া লিখা তো সে কবেই শেষ।
আমি থামলাম।উনাকে শুধু আমি না।সিফাত, রাফি, মাসুদও চিনে।তবে ওরা উনার গল্প জানে না।নিশাদ আবার আকাশের দিকে তাকাল।আকাশ দেখা যায় না।কালো হয়ে আছে।গুটগুটে অন্ধকার হয়ে আছে।চারপাশে ঘন অন্ধকার নেমে এসেছে সে কখন।ওর গল্পের ভিতর এতটাই জমে গিয়েছিলাম যে কল্পনায় ভাসতে থাকলাম।বাস্তবে কি হচ্ছিল সেটা আমি ঠিক টের পাই নি।চাঁদ এখনো পুরোপুরি আলো দেয়নি।একটু পরেই চাঁদের আলো আসবে।নিজেকে বিলিয়ে দিবে চারপাশে।উজ্জ্বল হবে ধরনী।নিশাদ কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল,
:আমি জানতাম না আমি এতটা নিষ্ঠুর হব।এত কঠিন আমার হৃদয় হবে সেটা আমার জানা ছিল না।তখন কেবল একটাই চিন্তা মাথায় খেলছিল।আমি যদি এখন ওর সাথে ব্রেক আপ করে ফেলি তাহলে পরবর্তিতে ওর সাথে যদি আমার ব্রেক আপ হয় তাহলে এখন যে কষ্ট পাব তারপর আরো বেশি কষ্ট পাব।এর চেয়ে বরং এখনই এই রিলেশনটা ভেঙ্গে দেওয়াই উত্তম হবে।আমি সত্যি সত্যিই তাই করলাম।ওর সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে যায়।যেদিন ব্রেক আপ নিচ্ছিলাম সেদিন ও ভীষন কান্না করেছিল।বারবার বলেছিল আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।আমি তোমার সাথে ফ্লট করছি না।বিশ্বাস কর আমায়।
আমি জানি না তখন আমার কি হয়েছিল। ওর কান্না শুনে আমারো ভীষণ কান্না পেল।আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।কষ্ট গুলো চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরতে থাকল। আমি ফোন কেটে দিয়েছি সেদিন।ফোন কেটেই কান্না শুরু করে দেই।আমি জানি না আমি সেদিন কেন কান্না করেছি।তবে এটা সত্য যে আমার জীবনে আমি এত কান্না করি নি।কতক্ষণ কান্না করেছি সেটা আমার মনে নেই।আমি যখন কান্না করছিলাম ও তখনও আমায় ফোন দিচ্ছিল।পুরো জিবনের জন্যে ফোনটা কেটে দেই।ব্লক লিষ্টে ফেলে দেই ওর নাম্বার। ব্লক দেই ফেবু থেকেও।মুছে ফেলি নিশি নামক ভালোবাসা কে।জানিস আমি সত্যি সত্যিই ওকে মুছে ফেলতে পারি নি।ওর ভালোবাসাকে মুছে ফেলতে পারি নি।এই বুকের বাঁ পাশটা যতবার ধপধপ করে ঠিক ততবারই আমার ওর কথা মনে পড়ে।খেলতে গেলে, আড্ডা দিতে গেলে,মোট কথা সর্বত্রই কেবল ওর কথাই মনে পড়ে।ওকে ভুলে থাকাটা আমার জন্যে একটা চেলেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।আমি পারছিলাম আর থাকতে।তাই তোদের থেকেও আমি আড়াল হয়ে যাই।জানি না আমার সাথে কি হচ্ছে আর কি হতে যাচ্ছে। তবে এটা জানি যে মেয়েটাকে এই অল্প কয়দিনে আমি প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি ওকে ছাড়া থাকাতে পারব না।মোটেও না।
একদিন দেখবি আমার দম আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে আর আমি মারা গেছি।আমি আর নেই।আমি ওকে থাকাতে পারছি না আর।কিছুতেই না।
এতটুকু বলেই ছেলেটা কান্না করে দিল।মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল ও।ওর কান্নার আওয়াজ আমার হৃদপিন্ডে গিয়ে বিধল।আমার হৃদয় মৃদু কেঁপে উঠল।পুরো শরিরটা শিউরে উঠল।হুট করেই আমার চোখ ছলছল করে উঠল।চোখের পানি জমা হতে থাকল।আমি আমার পাশের তিনটা ছেলের দিকে তাকালাম।ওরা নিশাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ওদের চোখের কোনাটাও চাঁদের মৃদু আলো চিক চিক করছে।আমি কেবল ওদের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। ওরাও কান্না করছে।নিশাদের দিকে তাকিয়ে ভেজা গলায় বললাম,
:আমি তো তোকে ভালোবাসতে নিশেধ করি নি।কেবল বলেছি এটা থেকে দূরে থাকতে।আর একবার যখন প্রেমে পড়েই গেছিস তাহলে ফিরিয়ে দিলি কেন তাকে? কেন ওর প্রপোজাল গ্রহন করলি? কেন ওর আইডি আগে থেকেই ব্লক দিলি না।
ও কান্না করতে করতে বলল,
:আমি জানি না আমি কি করেছি।কেন করেছি।কেবল একটা কথাই জানি যে নিশিকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারছি না।দিন যতই যাচ্ছে হৃদয়ে তত বেশিই ক্ষত দেখা দিচ্ছে। জ্বালা করছে ভীষণ।
প্রেম হারানো ছেলে কিংবা মেয়েদের বুঝি এমনই হয়।বিনা আগুনে জ্বলে এভাবেই বুঝি তাদের হৃদয় জ্বলে যায়।বিনা ক্ষত না হয়েই বুঝি এভাবে জ্বলতে থাকে ব্যার্থ প্রেমকিদের মন।আসলে হৃদপিন্ডের কোথাও ক্ষত হয় না।কোথাও অদৃশ্য আগুন জ্বলে না।অদৃশ্য আগুন কেবল আত্মায় লাগে।ক্ষত কেবল আত্মাই হয়।আর সেই আত্মাই জ্বলন সৃষ্টি করে।অসহ্য জ্বলন।আমি ঠিক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। পাশে বসা সিফাত, রাফি আর মাসুদও এগিয়ে আসল।ওরাও ওকে জড়িয়ে ধরল।সবাই আবদ্ধ হলাম ভালোবাসার বন্ধনে।বন্ধুত্বের ভালোবাসার বন্ধন। চাঁদের আলো ফুটেছে। আলোটা আমাদের গায়ের পড়ছে। চারজন মিলে জড়িয়ে ধরে থাকা একটা ছেলের গায়েও চাঁদের মিষ্টি আলো পড়ছে।ভীষণ ভালো লাগছে আমাদের। যেন আমাদের এমন বন্ধুত্ব দেখে চাঁদটাও ভীষণ খুশি।
.
পরবর্তি পর্বে সমাপ্তি
.
উৎসর্গ : প্রিয় বন্ধু গুলো ও উপরোক্ত গল্পের মেয়েটা।।(যার নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে)
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url