Header Ads

ভালোবাসার গল্প - মিহিন এবং 'আমি'র গল্প | লিখেছেন তাসফি আহমেদ

 
ভালোবাসার গল্প - মিহিন এবং 'আমি'র গল্প | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি




ভালোবাসার গল্প - মিহিন এবং 'আমি'র গল্প | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি

 

ভূমিকাঃ ভালোবাসার গল্পবিষাদ, তিক্ততার গল্প, ফিকশন, নন-ফিকশন, ভৌতিক, রহস্যময় থ্রিলার গল্পে সমৃদ্ধ আমার এই ছোট্ট ব্লগটি। বাংলা ছোট গল্পের এই অনন্য-অসাধারণ জগতে আপনাকে স্বাগতম। ভীষণ অপূর্ণতায় ভরপুর আমার গল্প গুলো। তাও লিখি। লিখলে মনের মাঝে কেমন অদ্ভুত এক প্রশান্তি মিলে। বিশেষ করে ভালোবাসার গল্প গুলো। কারণ এই ভালোবাসার গল্প গুলোতে আমার এক প্রেমিকা থাকে। কাল্পনিক প্রেমিকা। তারে ভীষণ ভালোবাসি আমি।

আপনি চাইলে এই গল্প গুলোও পড়তে পারেন- ভালোবাসার গল্প ১, ভালোবাসার গল্প ২, ভালোবাসার গল্প ৩, ভালোবাসার গল্প ৪ভালোবাসার গল্প ৫, ভালোবাসার গল্প ৬


ভালোবাসার গল্প -  মিহিন এবং 'আমি'র গল্প

(তাসফি আহমেদ) 


রাত এগারোটা পঁয়তাল্লিশ বাজে৷ আমি তখন শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছিলাম। ঠিক তখনই আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো। 
'একটু ছাদে আসবেন?' 
আমি খানিকটা অবাক হয়ে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নাম্বারটাও অপরিচিত। এতো রাতে মেসেজ দেওয়ার মতো তো তেমন কেউ নেই আমার। তাহলে কে দিল এই মেসেজ। তৎক্ষনাৎ আমার বাড়িওয়ালার মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেল। ওই পাঁজি মেয়েটাই হবে নিশ্চিত। কিন্তু সে আমায় ছাদে ডাকছে কেন? তাও আবার এতো রাতে? আমি সত্যিই অবাক হলাম। সে আবার মেসেজ দিল, 
'আসবেন?' 

আমি কী লিখব বুঝতে পারছিলাম না। রিপ্লাই না দিয়ে বসে থাকলাম। ছাদে যাব কি যাব না সে ব্যাপারে ভাবতে থাকলাম। মেয়েটার নাম মিহিন। মিহিন চৌধুরী। আমরা যে বাড়িতে থাকি ওই বাড়ির মালিকের মেয়ে৷ খুবই সুশীল ও ভদ্রঘরের মেয়ে। এমনটাই আমি ভেবেছিলাম প্রথম থেকে৷ তার পিতামাতাও যথেষ্ট ভদ্র এবং উচ্চ শিক্ষিত। সেই সুবাদে আমার ভাবনাটা আরো দৃঢ় হলো। প্রথম প্রথম তার সাথে আমার কথা হতো না৷ 

 বিশেষ করে আমিই কথা বলতাম না৷ মা বারণ করেছিলেন যেন তার সাথে যেন খুব একটা কথা না বলি৷ না মিশি৷ কারণ বাড়িওয়ালা নাকি আগেই বলে রেখেছেন তাঁর মেয়ের সাথে এই বাড়ির কোনো ভাড়াটিয়ার ছেলের সাথে যেন বন্ধুত্ব না হয়৷ কথাবার্তা না হয়৷ এই কথাটা যেন আমার ইগোতে লেগে গেল। ভদ্রলোকের ধারণা হয়তো সব ছেলেই চিপকু টাইপের হয়। মেয়ে দেখলে এগিয়ে গিয়ে কথা বলবে। বন্ধুত্ব করবে। 

ভদ্রলোকের এই ভ্রান্ত ধারণাটা ভাঙ্গাতে হবে৷ মূলত এই কারণেই আমি মেয়েটাকে আরো এড়িয়ে চলতাম। মেয়েটাও প্রচণ্ড অহংকারী। তার যেন ভাবের শেষ নেই৷ একদিন বিকেলে ছাদের দিকে যেতেই দেখলাম সে বাচ্চা একটা মেয়েকে শাসাচ্ছেন। বলছে, 
-এই মেয়ে, তোমাকে ছাদে আসতে বলল কে হু? এসেছো ভালো কথা, আমার বাগানে কেন আসবে? ফুল ছিড়ো কেন? এটা কোন ধরনের বদ অভ্যাস? আর কখনই এমন করবে না তুমি। আজ থেকে তোমার ছাদে আসা বন্ধ। ঠিকাছে?

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

মেয়েটা এতো কর্কশ স্বরে বলল যে ছোট্ট মেয়েটা তখনই কেঁদে দিল। সেদিন আমি ছাদের দরজার কাছ থেকেই ফিরে এলাম। ছাদে আর যাইনি। এরপর থেকে মোটামুটি মেয়েটাকে আরো ভালো করেই এড়িয়ে চলতাম। সে ছাদে যেত বিকেলে৷ আমি যেতাম সন্ধ্যায় কিংবা রাতে। সে ভার্সিটি থেকে ফিরত বিকেল বেলা। তার আসার একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল। আমি সে সময়টায় বের হতাম না৷ তবে মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে যেত। আমি আমার মতো করে বের হয়ে যেতাম৷ তার দিকে চোখ তুলেও তাকাতাম না৷ 

মেয়েটাও প্রথম প্রথম আমার দিকে তাকিয়েও দেখতো না৷ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকত। তারপর হঠাৎ দেখলাম সে আমায় আড় চোখে দেখছে৷ আচমকা একদিন চোখাচোখি হয়ে গেল। কী মারাত্মক চোখ দুটো তার৷ আমার সমস্ত শরীর যেন শিউরে উঠল। আমি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিচের দিকে চলে গেলাম। মিহিনের সাথে আমার দেখা সাক্ষাত যা হয় সিড়িতেই। হয় উঠতে কিংবা নামতে। মেয়েটা বাড়ি থেকে তেমন বের হয় না৷ 

ভার্সিটি থেকে বাসা এবং বাসা থেকে ভার্সিটি৷ মাঝে মাঝে অবশ্য বন্ধুদের সাথে বের হতো শুক্রবারে। সে বিষয়ে বিস্তর জানি না আমি। এভাবেই এড়িয়ে চলছিলাম কিছুদিন।মেয়েটা হয়তো তখন ঠিকই বুঝে গেছে আমি তাকে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে চলছি৷ এই ব্যাপারটা আমি একদিন বুঝতে পারি৷ আমি সেদিন ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম৷ পথে হঠাৎই দেখলাম মিহিন ফিরছে৷ 

আমাকে দেখতেই সে রাস্তার মাঝে এসে দাঁড়ালো। রিক্সাওয়ালা বাধ্য হয়ে রিক্সা থামালো। থামতেই মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে এলো৷ যেন রিক্সায় উঠে বসবে। আমি তার আগেই বললাম, 
-কী ব্যাপারে? রাস্তা আঁটকে দাঁড়ালে যে?
সে আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে রিক্সায় উঠে গেল এবং আমার পাশে একটু জাগায় ছিল, সেখানে বসে পড়ল৷ অগত্যা আমাকেও সরে বসতে হলো। সে বসতেই বলল, 
-এই মামা চলেন!

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

আমি কিছু বললাম না। চুপ করে থাকলাম। রিক্সাওয়ালাও দেখি কিছু বলল না৷ কিছু সময় কাটল দু'পক্ষের নিরবতায়৷ হুট করেই মিহিন বলে উঠল, 
-সমস্যা কী আপনার? 
আমি অবাক হয়ে বললাম, 
-মানে? কিসের সমস্যার কথা বলছো? 
-আমাকে তুমি করে বলবেন না৷ আমার অস্বস্তি লাগে৷ অপরিচিত কারো কাছ থেকে তুমি শুনতে অভ্যস্ত নই আমি। 
 আমি এবার চরম পর্যায়ে অবাক হলাম এবং কিছুটা অপমান বোধ করলাম৷ সে আমার ছোট দেখেই তাকে তুমি করে বলছি! আর সে আমাকে ডায়লগ শুনাচ্ছে? যে ডায়লগটা আমি সর্বদা দিয়ে থাকি আজ সে সেই ডায়লগ আমাকে দিচ্ছে? ব্যাপারটা আসলেই হাস্যকর এবং অপমানজনক লাগল আমার কাছে৷ 

আমি কিছু বললাম না৷ চুপ করে থাকলাম। সে আবার বলে উঠল, -কই বললেন না তো সমস্যা কী আপনার? আমি বললাম, 
 -অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত নই আমি৷ আপনি প্লিজ নামুন রিক্সা থেকে। 
সে কিছু সময় আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো৷ ভ্রু কুচকে এলো তার৷ মুখটা লাল হয়ে এলো৷ উত্তরটা হয়তো তার পছন্দ হলো না৷ সে খানিকটা চেঁচিয়ে বলল, 
-খুব ইগো আপনার তাই না? নিজ থেকে কথা বলতে এসেছি বলে ভাব বেড়ে গিয়েছে? 
আমি রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম, 
-এই মামা থামেন তো! 
রিক্সা থামল। আমি মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে কঠিন স্বরে বললাম, 
-নামুন। 
 মেয়েটা আরো রাগি চেহারায় তাকালো। আমি তা উপেক্ষা করে বললাম, 
-আপনি নামবেন নাকি আমি নেমে যাবো? সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, 
-আপনাকে আমি দেখে নিবো। 
তারপর রিক্সা থেকে নেমে গেল সে৷ আমি নিজের মতো করে চলে এলাম। বাসায় পৌঁছে বিকেল বেলা বের হলাম৷ ফিরলাম সন্ধ্যার পর। বাসায় ঢুকতেই দেখলাম ঘরে পিনপতন নীরবতা।

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

আমাকে দেখতেই আম্মু ডাক দিলেন। আম্মুর রুমে যেতেই দেখলাম আব্বু আর ছোট বোনটা সেখানে বসে আছে। আব্বুকে অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে। নিশ্চয় তিনি কোনো ব্যাপারে রেগে আছেন। আমি বললাম, 
-কী ব্যাপার! তোমরা সবাই এখানে? কোনো মিটিং হচ্ছে নাকি? 
 আব্বু কঠিন স্বরে বললেন, 
-জ্বী আপনাকে নিয়েই মিটিং হচ্ছে। আপনার কুকর্মের কারণে যে আমার মান-সম্মান হানি হচ্ছে তা কি আপনি বুঝতে পারছেন? 
আমি ভ্রু কুচকে বললাম, 
-মানে? কী বলছো? 
-মিহিনের সাথে কী হয়েছে তোর? 
-কী হবে? কেন? সে কি কিছু বলেছে? 
-হ্যাঁ। তার মা এলেন বিচার নিয়ে। তুই নাকি তার মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস?
 -ওই মেয়ে বলল আর তোমরা সেটা বিশ্বাস করে নিলে? 
-ওই মেয়ে অযথা মিথ্যা বলবে কেন? বরং তোর উপর আমার বিশ্বাস নেই৷ এমন কাজ একমাত্র তুই করতেই পারিস। 

 -তোমার কোনদিনও বা আমার উপর বিশ্বাস ছিল! 
-মুখের উপর কথা বলবি না। খুব বড় হয়েছিস তুই তাই না? বেয়াদবির একটা লিমিট থাকে। তুই ধীরে ধীরে সেই লিমিটটা ক্রস করছিস। 
-আশ্চর্য! কী বেয়াদবি করলাম আমি! 
-ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে যে ওই মেয়ে তোর কাছে লিফট চাইলো তুই তাকে লিফট দিলি না কেন? 
-এই কথা কে বলল? ওই মিহিন? 

-হ্যাঁ। এও বলেছে যে তুই নাকি অনেক রুড বিহেভ করেছিস। মানলাম তুই তাকে লিফট দিবি না কিন্তু রুড বিহেভ করার কী প্রয়োজন ছিল? আমার মান সম্মান লুজ করতে তোর খুব মজা লাগে তাই না? 
-ওয়েট! আমি এক্ষুনি ওকে ডেকে আনছি। বেয়াদব মেয়ে... 
-খবরদার যদি এখান থেকে এক পাঁ নড়েছিস! ওখানে গিয়ে লংকা কাণ্ড বাধানোর কোনো প্রয়োজন নেই৷ মান সম্মান নষ্ট করিস না আর। 
-বাবা, তুমি জানো না ওই মেয়ে কতো বড় বেয়াদব। এই যে এই কথা গুলো বলল না, এসব মিথ্যা। আমি... 
-হয়েছে হয়েছে! আর বলতে হবে না তোকে। তুই যে মিথ্যা বলছিস সেটা তোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এখন যা। বিদায় হ এখান থেকে।

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

আমি বোকার মতো বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। একবার তাকালাম মায়ের দিকে৷ তিনিও যেন রেগে আছেন। ছোট বোনটার দিকে তাকাতেই দেখলাম সে মিটমিট করে হাসছে। একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে এলাম সেখান থেকে। মেজাজটা ভীষণ খারাপ হলো৷ দুদিন রাগ করে বাবার সাথে কথা বলিনি৷ মায়ের সাথেও খুব একটা কথা বলিনি৷ রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছিল যেন৷ 

দুদিন পর হঠাৎই মিহিনের বাবার সাথে দেখা৷ তিনি নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে দেখতেই ডাকলেন৷ আমি তাঁর সামনে যেতেই তিনি বললে, 
-কেমন আছো? 
আমি খানিকটা হেসে বললাম, 
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো৷ আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল? 
-এইতো ভালো আছি। একটা কথা ছিল তোমার সাথে। 
আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। মিহিনের ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বলবেন না তো৷ আমি মুখ মলিন করে তাকালাম উনার দিকে৷ উনি কোমল কণ্ঠে বললেন, 
-মিহিনের সাথে তোমার কিছু হয়েছে? 
 
আমি চট করেই কিছু বললাম না৷ চুপ করে থাকলাম খানিক৷ মাথা নিচু করে নিলাম। তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মিহিন মিথ্যা বলছে৷ তার কথা গুলো বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না আমার। আসলে মেয়েটা একটু পাগলাটে টাইপের। হুটহাট কী না কী কাণ্ড করে ফেলে বুঝাই যায় না। তার মা তাকে আশকারা দিয়ে দিয়ে এমন করে তুলছে৷ তুমি বলতো ও যা বলেছে তা কি সত্য? 
 আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, 
-না, আঙ্কেল। সত্য নয়৷ 
তিনি হাসলেন। বললেন,
-আমার অনুমান মিথ্যা হয় না। তোমার আব্বু তোমাকে নিশ্চয়ই অনেক বকেছেন তাই না? 
আমি মাথা নিচু করে থাকলাম। তিনি বললেন, 
-আচ্ছা, ঠিকাছে। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলে নিবো৷ আর মিহিনের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি তোমার কাছে। ঠিকাছে?

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

আমি লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বললাম, 
-না না আঙ্কেল। ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। ওই ব্যাপারটা আমি ভুলে গিয়েছি৷ বাদ দিন এসব৷ 
তিনি হাসলেন। বললেন, 
-আচ্ছা মিহিন কি তোমার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে? নাকি কোনো ভাবে তুমি নিজে... 
-ও নিজেই কথা বলতে এসেছে আঙ্কেল। মাঝ পথে রিক্সা দাঁড় করিয়ে হুট করেই রিক্সায় উঠে বসল সে। এরপর... 
-আচ্ছা থাক। আর বলা লাগবে না। যাও তুমি। 
এই বলে তিনি হাসলেন৷ তাঁর হাসিটা কেমন জানি লাগল আমার কাছে৷ অদ্ভুত রকম। এর আগেও তিনি হেসেছেন৷ কিন্তু তখন তার হাসিটা এমন লাগেনি এখন যেমন লাগছে। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না৷ চলে এলাম সেখান থেকে৷ পরেরদিন সকালে সিড়ি বেয়ে নামছিলাম। তৃতীয় তলার কাছে যেতেই দেখলাম মিহিন দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখতেই সে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে নামতে থাকলাম। ওর কাছে যেতেই ও আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। বলল, 
-কথা আছে আপনার সাথে। 
আমি কিছু বললাম না। পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইলাম। সে আবার পথ আগলে দাঁড়ালো। আমি কড়া দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। সে কিছু একটা বলবে ঠিক তার আগেই আমি বললাম, 
-দেখুন, আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই৷ আপনার থাকলেও আমি শুনতে প্রস্তুত নই। প্লিজ বিরক্ত করবেন না৷

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

এই বলে আমি নিচের দিকে নেমে চলে এলাম৷ মেয়েটাকে দেখলাম নিজের জায়গাতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এরপরের দিনও সেই একই কাজ করলো৷ আমার পথ আগলে দাঁড়ালো। বলল, -আপনার এতো ভাব কেন বলুন তো! আমি কোনো জবাব না দিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে। মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে গেল। সত্যি বলতে আমার খানিকটা মায়া হলো তার জন্যে৷ পরেরদিন তাকে ওই জায়গায় পাইনি। আমি ভাবলাম তৃতীয় দিনও সে উপস্থিত থাকবে এবং সে কিছু জিজ্ঞেস করলে তার জবাব দিবো আমি। অথচ মেয়েটা সেদিন আসলোই না। এর ঠিক দুদিন পর তার দেখা পেলাম। সিড়ির কাছে মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ তার বড় মলিন। আমি তার কাছে যেতেই সে বলল, 
-খুব শক্ত আপনার মন৷ এতো নিষ্ঠুর! আপনার মতো ছেলে আমি জীবনে দেখিনি। 

 মেয়েটা আজ পথে আগলে দাঁড়ালো না। দূর থেকে কথা গুলো বলল। আমি বললাম, 
-একজন অপরিচিত ছেলে নিষ্ঠুর হোক কিংবা শক্ত মনের হোক তাতে আপনার কী বলুন তো! 
মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে তাকালো আমার দিকে। বলল, 
-ওই দিনের জন্যে আমি খুবই দুঃখিত। রেগে গিয়ে ওই কথাটা বলে ফেলেছিলাম। প্লীজ ওটার জন্যে রেগে থাকবেন না। বরং পারলে আমাকে তুমি করেই ডাকবেন। তাতেই আমার ভালো লাগবে! 
-বাব্বাহ! আজ দেখি কথাবার্তার ধরন ভিন্ন লাগছে! 
মেয়েটা মৃদু হাসল। আমি বললাম, 
-আমি আপনাকে আপনি করেই ডাকব। আপনি যত যা-ই বলুন৷ তা বাবার কাছে মিথ্যা বিচার দেওয়ার কারণ কী ছিল শুনি?

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

-রেগে গিয়েছিলাম অনেক। রাগলে আমি কী করি তা আমি নিজেও টের পাই না। 
-রেগে করেন আর না রেগেই করেন না কেন, আপনি কাজটা ঠিক করেননি। 
মেয়েটা মলিন স্বরে বলল, 
-সরি। 
আমি হাসলাম। তারপর নিচের দিকে নামতে থাকলাম। দু'সিড়ি নামতেই সে বলল, 
-আচ্ছা, একটা কথা বলবেন? 
আমি বললাম, 
-জ্বী বলুন। 
সে কিছুটা সময় চুপ থাকল। তারপর  বলল, 
-আমি কি দেখতে খুব খারাপ? 
আমি মুচকি হাসলাম। বললাম, 
 -হঠাৎ এই প্রশ্ন? 
-বলুন না৷ 
-না। খারাপ হবেন কেন। আপনি দেখতে তো ভালোই। 
-তাহলে আপনি আমাকে দেখেন না কেন? একটু তো তাকিয়েও দেখেন না৷ 
আমি হাসলাম। কিছু না বলেই চলে এলাম সেখান থেকে। মেয়েটা আমার দিকেই তাকিয়ে থাকল তখন। এর কিছুদিন পর ওর ছোট বোনকে পড়ানোর জন্যে বলা হলো আমাকে। আমি সোজা নিষেধ করে দিয়েছি৷ ওর বাবাকে একটু খোঁচা দিয়ে বলেছি, 
-বাড়ির মালিকের মেয়েদের আমি পড়াই না আঙ্কেল। আশপাশের মানুষ উল্টাপাল্টা ভাবে৷ 
তারপরও ভদ্রলোক অনেক জোর করলেন৷ আমি আমার "না" এর উপরই স্থির থাকলাম। সেদিন রাতে মিহিনের সাথে দেখা হয় ছাদে। ছাদে তখন আমি একা ছিলাম। কানে হেডফোন গুঁজে ফেসবুকিং করছিলাম। এমন সময় সে এসে দাঁড়ালো আমার পাশে। তাকে দেখতেই হেডফোন খুলে ফেললাম আমি৷ বললাম, 
-কিছু বলবেন?

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। বলল, 
-নিজের কথাই ঠিক রাখছেন। আপনি করেই বলছেন৷ 
-এমনটা তো আপনারই চাওয়া ছিল। 
-তার জন্যে কি আমি সরি বলিনি? 
-তা বলেছেন। তবে সরিতে কাজ হবে না৷ আমি আপনাকে আপনি করেই ডাকব। আর আমি যা সিদ্ধান্ত নেই তাতেই অটল থাকি। 
মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে গেল৷ চট করেই কিছু বলে ফেলল না৷ মাথা নিচু করে রাখল। আমি ততক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম৷ তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলাম। মেয়েটা আসলেই অসাধারণ রূপবতী। একদম মুগ্ধকর। সে বলে উঠল, 
-আপনি আমার কারণে রাতের বেলা ছাদে আসেন তাই না? 
আমি কিছুটা সময় চুপ থেকে বললাম, 
-হ্যাঁ। মনে করুন তা-ই। 
 -আমাকে এতো এভয়েড করেন কেন হু? আমি না একদমই নিতে পারি না৷ অসহ্য লাগে৷ দম বন্ধ বন্ধ লাগে৷ আশ্চর্য ব্যাপার কেউ আমাকে এভয়েড কেন করবে? আমি তো দেখতে শুনতে খারাপও না৷ সব ছেলেই আমার দিকে তাকায়। ফ্লার্ট করে। আর সেখানে  আপনি কী না আমাকে তাকিয়েও দেখছেন না? এমন কেন আপনি? 
-সেটা একান্তই আমার ইচ্ছে। দুনিয়ার সব ছেলেই যে আপনাকে দেখবে, আপনার সাথে ফ্লার্ট করবে তা তো নয়৷ -তাই বলে আপনি আমাকে একটু দেখবেনও না? 

আমি মৃদুস্বরে হাসলাম। বললাম, 
-এখন কি আপনি আমাকে জোর করবেন আপনাকে দেখার জন্যে? 
-প্রয়োজনে তা-ই করব। 
এবার খানিকটা শব্দ করে হাসলাম। বললাম, 
-এই কথা বলতে ছাদে এসেছেন? 
-না। 
-তাহলে কেন এসেছেন? 
 -আমার ছোট বোনকে পড়াবেন না কেন? 
-বাসার মালিকের মেয়েদের পড়াই না আমি। 
-কেন পড়ান না? 
-সমস্যা আছে৷ লোকজন উল্টাপাল্টা ভাবে। 
-লোকজনের ভাবনায় কান দেই না আমরা। আপনি আমার বোনকে পড়াবেন। এটাই ফাইনাল। 
-দুঃখিত। সম্ভব হবে না৷ 
-নিজের দাম বাড়াচ্ছেন?
-আশ্চর্য ব্যাপার, দাম বাড়ালাম কই? 
-এতো করে বললাম তারপরও রাজি হচ্ছেন না। 
-আমি আসলে কোনো মেয়ে স্টুডেন্টই পড়াই না৷ পড়ালেও ক্লাস ফাইভের উপরে না৷ আর যে ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে থাকে সেই ঘরে পড়াতে যাই না আমি৷

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

মেয়েটা কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থাকল। আমিও তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। সে বলল, 
-আপনি নিজেকে কী ভাবেন? মেয়েরা আপনাকে দেখলেই আপনার প্রেমে পড়ে যাবে?
-আমি কথাটা সেভাবে বলিনি। প্রেম কোথায় কীভাবে হয়ে যায় তা বলা মুশকিল। আর প্রেম হবে এই ধরনের স্থান গুলো ত্যাগ করি আমি। 
-তাহলে আমার জন্যেই আমার বোনকে পড়াবেন না? আমি হাসলাম। বললাম, 
-ধরুন তাইই! 
-আপনি কি ভাবছেন আপনার সাথে আমার প্রেম হবে? 
-হওয়াটা অস্বাভাবিক তো না। 
-ভুল ভাবছেন আপনি। আপনার সাথে আমার কখনই প্রেম হবে না৷ 
-আমিও তাই চাই৷ আপনার সাথে আমার প্রেম না হোক৷ 
 -এমনটা চাচ্ছেন কেন? 
-যে কারণে আপনি ভাবছেন আপনার সাথে আমার প্রেম হবে না ঠিক সেই কারণে আমি চাচ্ছি না৷ 
-বুঝলাম না কথাটা৷ আমি মৃদু হাসলাম। বললাম, 
-বুঝা লাগবে না। আর কিছু বলবেন? 
-কেন? আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে কি কিছু বলা লাগবে? আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। বললাম, 
-কথা এতো প্যাঁচান কেন হু? 
-আমি কথা প্যাঁচাই? 
-অবশ্যই প্যাঁচান।

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

-ফালতু কথা বলবেন না। প্যাঁচানোর অভ্যাস আপনার থাকতে পারে। আমার নেই। আমি মর্মাহত হয়ে তাকালাম তার দিকে। বললাম, 
-খানিকটা রসিকতাও নিতে পারেন না আপনি। অহেতুক রেগে যান। এতো রাগ কেন আপনার? 
-তা জেনে আপনার লাভ কী? 
 আমি তার দিকে থেকে ফিরে তাকালাম। কানে হেডফোন গুঁজে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মেয়েটা চট করেই টান দিয়ে আমার হেডফোন খুলে ফেলল। বলল, 
-ভদ্রতা শিখেন নি? কাউকে পাশে রেখে কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনা যে বাজে অভ্যাস তা কি জানেন না? 
আমি বললাম, 
-আপনি এখনও যান নি? আমি ভাবলাম আপনি চলে গিয়েছেন। 
-আপনার দেখি অনেক সাহস৷ খোঁচা মারা কথা বলে অপমানিত করছেন। 
 -খোঁচা মারা কথা কখন বললাম? 
-এই যে বললেন এখনো যাইনি কেন? আপনি তো আকারে ইঙ্গিতে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলছেন। -
তা যখন বুঝতেই পারছেন তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? 

মেয়েটার মুখটা চট করেই লাল হয়ে গেল। চোখে জল জমে গেল তার৷ দাঁতে দাঁত চেপে সে রাগি একটা লুক দিল। আমি খানিকটা হাসলাম। ভারী মজা লাগল আমার কাছে৷ রাগে মেয়েটার শরীর কাঁপতে থাকল৷ সে রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি বললাম, 
-এতো রাগ কেন আপনার? 
-জানি না৷ 
 -শুনলাম রাগ উঠলে আপনি নাকি অনেক কিছু ভাঙচুর করেন? 
-হ্যাঁ। করি৷ 
-এখন করছেন না কেন? 
-এখানে ভাঙ্গার কিছু নেই৷ 
-ওয়েট! 
এই বলে আমি ওর বাগানে গিয়ে সেখান থেকে ছোট্ট একটি ফুলের টব এনে তাকে দিলাম। বললাম, 
-ধরুন৷ এটা ভাঙ্গুন।
 সে এবার আরো বেশে রেগে গেল৷ টবটা আমার কাছ থেকে নিতে চাইলো৷ আমি শক্ত করে ধরে ফেললাম। সে জোর করে টান দিল। তবে আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারলো না৷ পারলে নিশ্চিত টবটা সে ভেঙ্গে ফেলত। আমি টবটা এক পাশে রেখে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম, 
-এতো রাগ আপনার?

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

সে কিছু বলল না৷ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল। ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে সে। আমার কাছে তার নিঃশ্বাস ফেলাটাও দারুণ লাগল। তার নাকের ডোগাটা লাল হয়ে আছে। ছাদে লাইট থাকাতে ভালোই হয়েছে৷ এই মেয়ের রাগান্বিত চেহারাটা ভালোই উপভোগ করা গিয়েছে। আমি তার আরেকটু কাছে গিয়ে বললাম, 
-যে রাগটা নাকের ডোগায় এসে জমেছে তাকে ওখানেই থাকতে দিন। বাইরে বের করবেন না৷ তা না হলে এমন নিষ্পাপ গাছ গুলো অযথাই কষ্ট পাবে। 
সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তার চোখ ছলছল করছে৷ 
আমি বললাম, 
-এতো রাগ ভালো নয়। বড় হয়েছেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন৷ 
সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমার চোখে চোখ রাখল। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। বললাম, -এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। তাহলে কিন্তু সত্যিই প্রেমে পড়ে যাবেন। 

এই বলে আমি হাসলাম খানিক। মেয়েটাও মৃদু হাসি দিয়ে উঠল। লজ্জায় লাল হলো এবার। মুখ নামিয়ে নিলো৷ তার লজ্জামিশ্রিত হাসিটা অসাধারণ লাগল৷ যেন লাল টুকটুকে একটা গোলাপ সবেই তার পাপড়ি গুলো মেলতে শুরু করল। আমি ওর সামনে থেকে সরে এসে তার পাশে দাঁড়ালাম। রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। মেয়েটা মৃদু স্বরে বলল, 
-টবের গাছটা দেখছেন? ওটা আমার ভীষণ পছন্দের৷ 
 -এখন তো ভেঙ্গেই ফেলতেন। অহেতু রাগের কারণে। 
-ধন্যবাদ আপনাকে৷ গাছটাকে বাঁচানোর জন্যে৷ 
আমি হাসলাম। কিছু বললাম না৷ সে নিজ থেকেই বলল, 
-একটা কথা কী জানেন, আমার রাগটা উঠেছিল আপনার উপর৷ ভীষণ রেগে ছিলাম৷ সেই প্রথম দিন থেকেই৷ আমি ভাবতাম সবাই আমাকে দেখে৷ আপনি কেন দেখেন না? খুব দ্বিধায় পড়ে গেলাম। এক সময় মনে হতো থাকল আমি আসলেই সুন্দরী না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো৷ বাবা, মা, বান্ধুবি সবাইকে এই প্রশ্ন করে বিরক্ত করে ফেললাম যে আমি আসলেই সুন্দরী কি না৷ এরপর রিক্সায় নিজে ভাব দেখিয়ে আমাকে নামিয়ে দিলেন৷ সিঁড়িতে আমি আপনার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। রাগ নিয়েই এক প্রকার সরি বলতে এলাম৷ আপনি আমার কথা শুনলেন না। দ্বিতীয় দিনও না।

ভালোবাসার বাংলা গল্প সমগ্র | লেখক- তাসফি আহমেদ

নিজেকে আরো ভীষণ অসহায় মন্র হতো থাকলো। ভাবলাম এই মানুষটা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না! কেন দিচ্ছে না? তৃতীয় দিন আপনাকে প্রশ্নটা করলাম। সত্যি বলতে সেদিন আপনার উত্তরটা শুনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি লাগল আমার কাছে। সে রাতে বেশ ঘুম হলো আমার। এতো ভালো লাগছিল তা বলার মতো না৷ এইযে আমার বোনকে পড়াবেন না বলেছেন, এর জন্যেও রেগে ছিলাম। ছাদে আসলাম আপনাকে শাসাতে। খুব বকবো আপনাকে৷ আপনাত মুখের উপর অনেক গুলো কথা বলে চলে আসবো৷ কিন্তু কী হলো? উল্টো আপনি আমাকে আরো রাগিয়ে দিলেন। এই সব গুলো ব্যাপারের মাঝে একটা জিনিস আমি খুব কমন পেলাম এবং অদ্ভুত কিছু আবিষ্কার করলাম আমি। আপনি জানেন সেই অদ্ভুত জিনিসটা কী? 
 আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
-না তো৷ কী সেটা? 
মেয়েটা হাসলো। রহস্যময় হাসি। বলল, 
-অন্য একদিন বলব৷ আজ না৷ 
-আজই বলুন৷ 
-জ্বী না। 
-আপনাকে বলতেই হবে। 
-না বললে কী জোর করবেন? 
-অবশ্য করবো৷ 
-জোর করলেও আমি বলব না। 
-বলুন বলছি। 
-উহু৷ আমি মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মেয়েটা রেলিঙের সাথে মিশে গেল একদম। আমাদের মাঝে তখন স্বল্প কিছু দূরত্ব। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমার চোখের দিকে৷ কী গভীর দৃষ্টি তার৷ আমি বললাম, -এভাবে তাকাবেন না প্লীজ৷ সে তার মুখটা আরেকটু কাছে নিয়ে এসে বলল,
 -আমি তাকাবো৷ 
-না। তাকাবেন না আপনি৷ 
-তাকালে কী হয়?
আমি তার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালাম। বললাম, 
-আমার কেমন জানি লাগে। প্লীজ৷ তাকাবেন না। 
-আমি তাকিয়ে থাকব৷ আপনি আমাকে বাধা দিতে পারবেন না৷ 
-বড় জেদি মেয়ে আপনি। নিজের কথাই উপরে রাখবেন। 
-হ্যাঁ৷ তা-ই করবো৷ 
আমি চুপ করে গেলাম। তার কথাটা ভাবতে থাকলাম। তার সাথে আমার এতো দিনের দেখা, এই কয়দিনের মাঝে কোন জিনিসটা কমন? এবং সে আসলে কী আবিষ্কার করল? আমি ভাবতে থাকলাম। .

প্রথম পর্ব।
 
(দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্তি।)
 
 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.