গল্পঃ অনুভূতির গল্প

গল্পঃ অনুভূতির গল্প

তাসফি আহমেদ



-ধুরর! ভালো লাগে না। ইচ্ছে হয় মরে যাই!
আমি কথাটা বলে মুখ বাঁকিয়ে, কপাল কুচকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। পাশে আমার বন্ধু গুলো ছিল। এবং মিহিনও ছিল। বন্ধু গুলো হেসে বলে উঠল,
-তো বেটা তুই মরে যা না। তোকে ধরে রেখেছে কে?
এই বলে ওরা অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ল। আমি তখনও নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অল্প খানিক হাসলাম। কথাটা এমনিই বলেছিলাম। তেমন বিশেষ কারণ নেই। হুটহাট এমন অদ্ভুত কথা বলে ফেলি আমি। বন্ধুদের হাসির শব্দ শুনে আমিও হাসলাম খানিক। মুখে হাসি রেখে ওদের দিকে তাকালাম৷ তাকাতেই মিহিনের দিকে চোখ গেল। সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি হাসি মুখেই তাকালাম। ও মুখ শক্ত করে তাকিয়েই থাকল৷ আমি খানিকটা অবাক হলাম। সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। মিহিনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কেবল। আমার মনে হলো আমি কথাটা ঠিক বলিনি। আমার ওই কথাটা বলা ঠিক হয়নি। মিহিনের চোখ চট করেই চিকচিক করে উঠল। ও দ্রুত ক্লাস রুমের দিকে চলে গেল। আমি ওর পিছু নিলাম। বন্ধু গুলো যে যার মতো কথা বলতে থাকল। আমি মিহিনের হাত টেনে ধরলাম। মিহিন তা ছাড়িয়ে ক্লাস রুমে ঢুকে গেল। নিজের সিটে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল। আমি ভীষণ আহত হলাম। হৃদয়টা খানিক ক্ষত হলো যেন৷ আমি ওর সিটের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। বলি,
-আমি এমনি এমনি বলেছিলাম। তেমন কিছু মিন করিনি।
মিহিন চুপ করে থাকে। ওর মুখ শক্ত হয়ে আছে। যেন বহু কষ্টে ভেতরের আর্তনাদকে আঁটকে রাখছে। আমার মন আরো খারাপ হয়। এই অল্প আগেও মেয়েটা ভীষণ হেসেছিল। পাগল বলে আমার মাথায় মৃদু জোরে আঘাত করেছিল। আমি হেসে বলেছিলাম,
-তুমি আমাকে পাগল করেছে। এর জন্যে তুমিই দায়ী৷
মেয়েটা তখন কী সুন্দর করে হেসেছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলাম। তার চেহারার স্নিগ্ধতা আমার ভেতরে অনুভূতির জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। আর এখন তার মুখটা কী ভীষণ কালো। চেহারা মলিন। যেন কিছু একটা মেয়েটার মুখের হাসিটা চট করেই কেড়ে নিয়ে গেছে। আমি আবার বলি,
-প্লীজ মিহিন।
আমার কণ্ঠ নরম হয়। বুকের ভেতর প্রচণ্ড অস্থিরতা। মিহিন কথা বলে না। হুট করেই উঠে দাঁড়ায়। তারপর নিজের ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়৷ আমি কী করব ভেবে পাই না৷ কেমন জানি লাগতে থাকে। পাগল পাগল লাগে৷ আমিও বেরিয়ে যাই ক্লাস থেকে। মিহিনের পিছু পিছু হাঁটি। বলি,
-সরি মিহিন।
মিহিন একটা শব্দ করে না৷ দ্রুত গতিতে হাঁটতে থাকে। আমি ওর পিছু পিছু যেতে থাকি৷ কথা বলি না৷ কথা বললে ও আরো রেগে যাবে৷ আমি চাইনা ক্যাম্পাসে কোনো সিনক্রিয়েট করুক ও৷ ওর যা রাগ৷ রাগলে স্থান কাল বিবেচনা করে না৷ আমি চুপচাপ হাঁটতে থাকি। মিহিন গেইটের কাছে এসে রিক্সায় উঠে। আমি উঠতে গেলেই বলে,
-খবরদার উঠবা না৷ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো৷
আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম৷ মেয়েটা কান্না করছে। চোখ ভরা জল৷ নাক লাল হয়ে আছে। মুখে স্পষ্ট রাগ দেখছি আমি। বলি,
-সরি তো। আমি তেমিন কিছু মিন করে বলিনি মিহিন।
-একটা কথাও বলবা না। এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। যদি পিঁছু নিয়েছো তো খবর আছে৷ মামা চলেন।
আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকি। মন মানে না৷ হুট করেই আরেকটা রিক্সা নিয়ে মিহিনের পিছু করি৷ জানি আমাকে দেখলে সে রাগবে। চিল্লাবে৷ কিন্তু কিও বা করার। দোষটা তো আমার। মিহিন আমাকে অনেকবার বলেছে আমি যেন এই ধরনের কথা আর কখনই না বলি৷ কিন্তু আমার ওসব এতো খেয়াল থাকে না। হুটহাট মনে যা আসে বলে ফেলি। এই যেমন একটু আগে বললাম। সব কিছুই ভালো ছিল৷ সুন্দর ছিল। তারপর হুট করেই যেন মেঘ করল আকাশে। বৃষ্টি শুরু হলো। মুশলধারায় বৃষ্টি৷ মেয়েটা মনে কষ্ট পায়৷ কান্না আসে তার। আঁটকে রাখার ভীষণ চেষ্টা। অথচ পারে না৷ আমার কাছে তার লুকানোর সাধ্য নেই৷ তাই সে ক্লাস থেকে চলে যায়। আমি বেশ বুঝতে পারি৷ সে বাসায় গিয়ে রুম বন্ধ করে কান্না করবে৷ অনেকক্ষণ কাঁদবে৷  আমি জানি৷ তার চোখের নিচে কালি পড়বে। চোখ ফুলে যাবে৷ ভীষণ অভিমানী সে৷ তাকে সহজে মানানো যায় না। মিহিন নিজের বাসার সামনে নামে। ভাড়া মিটিয়ে এদিকে তাকাতেই দেখে যায় আমায়। আমার দিকে তাকিয়ে থাকে কেবল৷ আমি এখান থেকে স্পষ্ট দেখি, রাগে, অভিমানে লাল হয়ে যাওয়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। এই মূহুর্তে আমার খুব ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে  ধরি। ক্ষমা চাই৷ অথচ আমি পারছি না। মিহিন ভেতরে চলে যায়। আমি অনেকক্ষন ওদের এলাকার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করি। তারপর বাসায় আসি৷ রাতে ফোন দেই৷ রিঙ হয়।কিন্তু সে ফোন তোলে না৷ অনেকক্ষন ফোন দেই৷ সে ফোন বন্ধ করে দেয়। আমি অসহায়ের মতো বিছানায় পড়ে থাকি৷ বুকের ভেতর কী ভীষণ অস্থিরতা। কিছু একটা যেন আঁটকে আছে বুকের কাছে। চাপা বেদনা ছড়িয়ে দিচ্ছে সমস্ত শরীরে। আমি শুয়ে থাকি। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করি। ঘুম আসে না। কেমন কেমন লাগে৷ দম বন্ধ হয়ে আসে যেন। একবার উঠে গিয়ে পড়তে বসি৷ এক পৃষ্ঠা পড়তেই আমার ওর কথা মনে পড়ে যায়। আমি নিজেকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে রাখি। লাভ হয় না৷ মেয়েটা ভোলা সম্ভব না৷ কখনই না৷ সে আমার সমস্ত হৃদয়ে জড়িয়ে আছে৷ এখন যেন আমার মস্তিষ্কের সমস্ত নিউরন নিজের করে নিয়েছে৷ শেষ রাতে ঘুম হলো৷ তাই সকালে উঠতে দেরি হয়৷ যার কারণে ভার্সিটিতে যেতেও দেরি হয়৷ প্রথম ক্লাস মিস হয়৷ হোক তা, আমি এসেছি মিহিন নামক মেয়েটার জন্যে। তাকে একবার দেখার আসায়। কাল রাত থেকে তার সাথে আমার কথা হয় না। আমার ওর সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন। আমি ক্লাসে যাই৷ শেষ বেঞ্চে বসি৷ ব্যাগ রেখে মিহিনের কাছে যাই৷ ও গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ ফোলা। আজ কাজল মাখেনি৷ মুখে একটুও মেকাপ দেয়নি। মিহিনের মুখ আজো শক্ত হয়ে আছে। আমি ওর হাত ধরি৷ বলি,
-সরি মিহিন। এক্সট্রিমলি সরি। আমি আর কখনই এমন বলব না৷ প্লীজ৷
আমি আমার হাত ছাড়িয়ে নেয়। বলে,
-আমি সিনক্রিয়েট করার আগে যাও এখান থেকে৷ আমি চাই না তুমি অপমানিত হও।
-তুমি আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলো৷ কিন্তু প্লীজ এভাবে এভয়েড করো না আমায়৷ আমি সহ্য করতে পারি না।
মিহিনের রাগ যেন মাথায় চড়ে যায়। ও উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে,
-স্টপ ইট তাসফি। আমাকে বিরক্ত করো না আর৷ যাও এখান থেকে। যাও?
আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম কেবল। আমার চোখ খানিকটা ঘোলাটে হয়ে এলো যেন। ক্লাসের সবাই তখন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি তাও বলি,
-প্লীজ!
মিহিন আরেকটু জোর দিয়ে বলে,
-তুমি যাবা? নাকি আমি বের হবো?
ঠিক তখনই স্যার ক্লাসে এলেন৷ সবাই দাঁড়িয়ে গেল। আমি মিহিনের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। স্যার এদিকে এসে বলেন,
-কোনো সমস্যা মিহিন? ও তোমাকে বিরক্ত করছে?
মিহিন কিছু বলে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে৷ স্যার আমার দিকে তাকান। কি জানি কী ভেবে স্যার আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দেন৷ আমি আশার সময় স্যার বললেন,
-ভালো ভালো ছেলেরাও একটু স্বাধীনতা পেলে বিগড়ে যায়।
আমি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম। মন খারাপ। কান্না পায় না বটে, বুক ভার হয় কেবল। আমি ক্যাম্পাসেও দাঁড়াই না৷ হাঁটতে থাকি। গেইট দিয়ে বেরিয়ে বাইরে ফুটফাত ধরে হাঁটতে থাকি। মন বড় অস্থির। তাকে শান্ত করা মহামুশকিল। আমি অনেকটা পথ হেঁটে যাই৷ মন খারাপ হলে আমার হাঁটতে ভালো লাগে। হাঁটলে যেন মন স্থির থাকে খানিক। বেলা প্রায় শেষ দিকে। আমি বাসার দিকে যাই৷ বাসার গেইটের কাছে আসতেই দেখি মহিন ভাই দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখতেই তিনি হন্তদন্ত হয়ে বললেন,
-কিরে? কোথায় ছিলি এতোক্ষন? ফোন তুলছিস না কেন?
আমি ভ্রু কুচকে বলি,
-ফোন দিয়েছেন?
-তোর খবরও নেই?
-ফোন সাইলেন্ট ছিল মনে হয়৷ কেন? কোনো বিশেষ জরুরি?
মহিন ভাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তারপর বলেন,
-মিহিন এসেছিল। অনেকক্ষণ বসে ছিল৷ যেতে চাচ্ছিল না৷ পরে আমি জোর করে বাড়ি পাঠালাম৷
-এসেছিল কেন?
-জানি না। কাঁদছিল।
-খুব ক্লান্ত মহিন ভাই। বুয়া কি রান্না করেছেন আজ?
-তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে?
-হয়েছে খানিক। আমি ক্ষমা চেয়েছি। সে ক্ষমা করেনি। পাথর মেয়ে ও। বড় শক্ত মন তার৷ গলানো যায় না মহিন ভাই।
আমি সিড়ির কাছে এসে দাঁড়াই। মহিন ভাই আমার সাথে সিড়ি ভাঙ্গতে থাকেন। বলি,
-মেয়েরা এতো জটিল কেন মহিন ভাই?
মহিন ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বলেন,
-মেয়েরা একটা রহস্য৷ যেটা কখনই সলভ করা যায়নি।
-এটা আবার কেমন রহস্য? যে রহস্য সলভই করা যায় না সেটা কি রহস্য হয়?
-তোর কী হয়েছে? শরীর দূর্বল লাগছে যেন৷ কণ্ঠ যেন মরে আসছে।
-মহিন ভাই, আমার পাঁ ব্যাথা করছে। আমি আজ অনেকক্ষন হেটেছি।
-কতক্ষন?
-সাড়ে এগারোটা থেকে এখন পর্যন্ত।
-তাসফি? তুই কি পাগল হয়েছিস? মাথা ঠিক আছে?
-আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি মহিন ভাই। আমার মাথা ঠিক নেই। মেয়ে নামক রহস্য আমি সমাধানই করতে পারছি...
-চোপ! কথা বলবি না আর। কিছু খেয়েছিস?
-কিছু খাইনি।
মহিন ভাই ধাক্কা দিয়ে রুমের দরজা খুললেন। আমায় ধরে নিয়ে বিছানার কাছে বসালেন। বড় ক্লান্ত এই শরীর, মন। বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আমি। মহিন ভাই আমার জুতা খুলে নিয়ে সেল্ফে রাখেন। তারপর রান্না ঘরে গিয়ে আমার জন্যে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসেন। আমি মাঝে মাঝে বেশ অবাক হয়৷ আমার জন্যে কী মায়া মানুষটার। যদি হতো,আমি এই মানুষটার ছোট ভাই,ইনি কী জানি করত! আমি পানি খাই। মহিন ভাই ভাত নিয়ে আসেন আমার সামনে। হাত ধোয়ান। নিজের হাতে খাইয়ে দেন। আমি হুট করেই উনাকে জড়িয়ে ধরি। পাগলের মতো কান্না করি আমি। বলি,
-ভাইয়া আমি ভালো নেই। আমার মন ভালো নেই।
তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। বলেন,
-সব ঠিক হয়ে যাবে৷
বলি,
-মেয়েটার এতো রাগ কেন? এতো শক্ত কেন সে? আবার দেখো, নিজ থেকেই ছুটে এলো। তাও আসতো না। ক্লাসে আজ ওর জন্যে স্যার আমায় ক্লাস থেকে বের করে দিলেন। খুব আঘাত পেলাম আমি। প্রিয় স্যারটাও আমাকে রাস্তার ছেলে ভাবলো।
মহিন ভাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
-কথা বলিস না৷ খেয়ে নে জলদি। ঘুমাতে হবে তোকে। বেশ ক্লান্ত তুই ভাই৷
আমি খেয়ে নেই। তারপর বিছানার উপর শুয়ে পড়ে৷ মোবাইলের ডাটা অন করে ফেসবুকে একটা পোষ্ট দেই,"আজ আমার সত্যি সত্যিই মরে যেতে ইচ্ছে করছে। পৃথিবী বড় অদ্ভুত। এটাকে বুঝার সাধ্য আমার মতো মানুষের নেই। এমন নির্বোধ মানুষের এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কী লাভ?" কাউকে মিন করে নয়। মনের ভেতরের একটা কথা লিখে পোষ্ট করলাম মাত্র। ডাটা অফ করে চোখ বন্ধ করতেই যেন রাজ্যের ঘুম চেপে ধরল আমায়। অনেকক্ষণ ঘুম হলো৷ কখন উঠলাম জানি না। কিন্তু উঠার পর বিছানার পাশে কেউ একজনকে দেখলাম। মুখ ফুলিয়ে কান্না করে সেই জন৷ যেন বড় কষ্ট তার৷ আমি ভালো করে দেখি তাকে। আরে! মিহিন? এখানে কেন? এতো রাতে? কয়টা বাজে? আমি মোবাইলের ক্রিনে সময় দেখি। সাড়ে নয়টা বেজে গিয়েছে। আমি বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে বসতে বসতে বলি,
-তুমি? এতো রাতে এখানে কেন?
মিহিন অগ্নি দৃষ্টিতে দেখে আমায়৷ চোখে মুখে কী ভীষণ রাগ লেপ্টে আছে। আমি চুপ হয়ে যাই। ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। সে বলে,
-কই ছিলা সারাদিন?
আমি চুপ থাকি। সে বলে,
-ফোন রিসিভ করোনি কেন? কাল সারা রাত ফোন দিয়ে জ্বালালে। আর আজ আমি ফোন দিতেই ভাব চলে এলো শরীরে? খুব ভাব আপনার তাই না?
মেয়েটার গলা ধরে আসে যেন। আমি চুপ থাকি। সে বলে,
-কতো করে বলি এসব উল্টাপাল্টা কথা আমার সামনে বলবা না। কে শুনে কার কথা৷ যেন আমার কথা কোনো দামই নেই তার কাছে৷ আমাকে সে কিছুই মনে করে না৷ নিজের মৃত্যু চায় অথচ আমার কথা ভাবেও না৷ আমি যে তার কেউ সেটা সে মনেই করে না৷ তাহলে অন্তত এটা ভাবতো যে কেউ একজন তার তার মৃত্যু কথা শুনলে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না৷
মেয়েটা কথাটা বলেই ফুঁপিয়ে উঠলো খানিক। কান্নাটা চেপে ধরে আছে সে। আমি চুপ থাকি। সে বলে,
-আমি কি কম ভালোবাসি তাকে? তার বাবা মা কি তার কম কেয়ার করে? তাহলে কেন সে মরতে চায়? কিসের এতো কষ্ট তার?
মিহিন কেঁদে ফেলে এবার৷ আমি বলি,
-আমি তখন কথার কথা বলেছিলাম।
-চুপ করো তুমি। জানো না এসব বলতে নেই? জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে৷ এসব নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলা যে ঠিক না সেটা কি তুমি জানো না? তোমাকে এক কথা কতবার বলতে হবে? আমার কষ্ট হয় এসব শুনলে। মনে হয় আমি তোমার কাছে কিছুই না৷ তোমার কষ্ট দূর করতে পারি না৷ তোমাকে বুঝতে পারি না৷ কেন এমন করো তুমি? আমার কথা শুনো না কেন? তুমি জানো না তুমি আমার কতোটা জুড়ে আছো? তোমাকে আমি কী পরিমাণ পছন্দ করি৷ ভালোবাসি। জানো না? তাহলে এমন কথা বলো কেন?
মিহিন কান্না করতে থাকে৷ আমি চুপ থাকি৷ কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। মিহিন হঠাৎই করেই উঠে দাঁড়ায়৷ বিছানার উপর উঠতে উঠতে বলে,
-আবার ফেসবুকেও পোষ্ট দিয়েছে। একে সেই দিনের কষ্ট। আজ আবার একই কাজ করলে। এই তুমি কি মানুষ হবা না?
মিহিন বিছানার উপর উঠে আসে। বলে,
-এতো কষ্ট দাও কেন হ্যাঁ? কেন দাও। দাঁড়াও। দেখাচ্ছি আজ তোমায়? আমায় রাগানোর ফল পাবে তুমি৷ আজ তোমাকে ওয়াদা করতেই হবে৷ আর কখনই এমন করবা না৷ কখনই না৷
তারপর হঠাৎ করেই আমার উপর আক্রমণ করে সে। আমার কোলের উপর বসে গলা চেপে ধরে বলে,
-মেরে ফেলব আজ তোকে। তুই আমার লাইফটা শেষ করে দিয়েছিস। তোকে আমি কেন দেখেছি৷ কেন তোর প্রেমে পড়েছি৷ এতো কষ্ট পাওয়া জন্যে! বল আর কষ্ট দিবি? বল? দিবি?
আমি খানিকটা কেশে উঠি। বলি,
-দম আঁটকে যাচ্ছে৷
মিহিন চট করেই হাত ছেড়ে দেয় গলার কাছ থেকে। বলে,
-সরি!
তারপর শব্দহীন কান্না করে৷ আমি নিজেকে সামলে সেই। মিহিন আমার গালে হাত রাখে৷ বলে,
-এমন কেন তুমি?
আমি ধরে আশা গলায় বলি,
-আমি আর কোনভাবে ক্ষমা চাইবো বলো? কোন ভাবে চাইলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে?
-ক্ষমা চাইতে হবে না৷ তুমি ওয়াদা করো আর কখনই এমন কথা বলবা না৷
-আর কখনই এমন কথা বলব না৷
তার আমি চুপ থাকি। সেও চুপ থাকে। আমার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। কী যেন খুঁজে বেড়ায়। তারপর চট করেই কপালে চুমু খায়। বলে,
-খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না?
আমি মাথা উপর নিচ করি। মৃদু স্বরে বলি,
-হু।
মিহিন আমাকে চট করেই জড়িয়ে ধরে। নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
-তোমায় কষ্ট দিলে আমার কী হয় জানো? আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। সব দোষ আমার রাগের৷ আমি কখনই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না৷ কেবল তুমি ছাড়া৷ তুমিই আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারো৷ ক্লাসে যা হয়েছে তার জন্যে সরি৷ খুব সরি৷ ক্ষমা করো আমায়৷ প্লিজ।
আমি কিছু বলি না আর৷ মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরি কেবল৷ সরি মেয়েটাকে না৷ আমার প্রশান্তিকে৷ আমার পৃথিবীকে৷ যার সাথে একদিন কথা না বললে আমার দুনিয়াটাই পাল্টে যায়। এই যে আজ একটাদিন পার করে দিলাম। উলোটপালোট একটা দিন৷ যাই হোক এই দিনের শেষটা আমার বিরুদ্ধে যায়নি। আমার পক্ষেই এসেছে।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ।

Bangla-choto-golpo|Bangla-romantic-love-story|valobashar-golpo


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url