১০০ শব্দের গল্প

বাংলা ছোট গল্প। ১০০ শব্দের গল্প


১০০ শব্দের গল্প

রফিক সাহেব আজ ভীষণ খুশি।খুশিতে আত্মহারা। ফুরফুরে মন নিয়ে জমিতে কাজ করছেন।কাজ করার ফাঁকেফাঁকে উনাকে হাসতে দেখা যায়।কেউ প্রথম দেখাতেই পাগল বলবে উনাকে।প্রখর রোদ মাঠে।রোদে গা যেন জ্বলে যায়।গা বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ে।এ অবস্থায় কেউ ঠিক হাসে না।খিটখিটে মন নিয়ে কাজ করতে হয়।কিন্তু রফিক সাহেব তা করছেন না।উনাকে একটুও ক্লান্ত দেখাচ্ছে না।মনের সুখে কাজ করছেন।কাজ করার ফাঁকেফাঁকে একটু একটু হাসেন।মাঝে মাঝে আনমনে গুন গুন করে গান গেয়ে উঠেন তিনি।
.
রফিক সাহেবের খুব ইচ্ছে, উনার ঘরে একটা ছোট্ট ফুটফুটে রাজকন্যা যেন আসে।একটা মেয়ে সন্তানের বাবা হওয়ার ইচ্ছে উনার।যাকেই কথাটা বলে সে শুনেই একটু ভড়কে যায়।আশ্চর্য হয় ভীষণ।কেউ কেউ বলে,
"কোত্থেকে এইসব ফাউল চিন্তা তোমার মাথায় আসে রফিক মিঞা।তুমি জানো একটা মাইয়ার পিছন কত টাকা খরচ করতে হয়।বিয়ে দিতে কত ঝামেলা হয় সেটা কি তুমি জানো না? তারউপর যদি কালো হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই।জীবন তামাতামা হইয়া যাইব রফিক মিঞা।"
এসব শুনে রফিক মিঞা কিছু বলে না।চুপ করে থাকে।আশ্চর্য ব্যাপার হল উনি এসব বলাতে একটুও মন খারাপ করেন না।কথা গুলো গায়ে মাখেন না। শুনে যান মাত্র।উনার ইচ্ছে একটা মেয়ে সন্তান যেন উনার ঘরে আসে।
.
রফিক মিঞার একটা ছেলে আছে।নাম তপু।সবে ক্লাস ফোরে পড়ে।ভীষণ মেধাবি ছেলেটা।যদি ঠিক মত পড়ে যেতে পারে তাহলে জীবনে বড় কিছু একটা করতে পারবে। রফিক মিঞার স্ত্রী রাফিয়া আক্তার গর্ভবতী। একটা সন্তান হবে।কিন্তু সেটা ছেলে না মেয়ে হবে সেটা কেউই জানে না।জানার কোন উপক্রমও ছিল না।কিন্তু সেদিন হুট করেই পাশের বাসার চাচি এসে রফিক সাহেবকে একটা কথা বললেন।
:তোমার স্ত্রীর অবস্থা দেখে কি মনে হয় জানো?
রফিক মিঞা খানিকটা অবাক হলেন। বললেন,
:কি?
:যে হারে বমি করছে তা দেখে মনে হয় মেয়েই হইব।
:বলেন কি চাচি।আমার মেয়ে সন্তান হইব?
:হু! তোমার বউকে দেখে তো সেটাই মনে হয়। সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় যদি মা ঘন ঘন বমি করে তাহলে ধরে নিতে হবে যে মেয়ে সন্তান হবে।
:আলহামদুলিল্লাহ্! খোদা তোমার কাছে লাক্ষ শুকরিয়া। তুমি আমার কথা শুনছ খোদা।আমার কথা শুনছ।কই গো।তপুর মা?
কই তুমি...
এই বলে রহিম মিঞা বউকে ডাকতে ডাকতে ঘরের দিকে গেলেন।পাশের বাড়ি চাচি রফিক সাহেবের এই অবস্থা দেখে ভীষণ অবাক হলেন।ভাবলেন,
"মেয়ে সন্তান হবে এতে এত খুশির কি আছে?"
উনি সত্যিই অবাক হলেন ভীষণ।
.
রফিক সাহেব খানিকটা ক্লান্ত হয়ে গেলেন কাজ করতে করতে।যত খুশি থাকুকই না কেন ক্লান্তি সে আসবেই।তাই তিনি একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে গাছ তলায় বসলেন।এমন সময় দেখলেন উনার ছেলে তপু আসছে।খালি গায়ে। খালি পায়ে।পরনে একটা হাপ প্যান্ট মাত্র।হাতে একটা প্লেট দেখা যাচ্ছে।ডাকনা দেওয়া।অন্য হাতে পানির বতল।নিশ্চই উনার জন্যে খাবার নিয়ে আসছে।কিন্তু খাবার নিয়ে যে তপু এল এটা দেখেই প্রচন্ড অবাক হলেন রফিক মিঞা।তপু সাধারণত খাবার নিয়ে আসে না।কারন এই সময়ে ও স্কুলে থাকে।তাই আসতে পারে না।আবার কখনও কখনও খেলতে চলে যায়।হাজার বার বললেও আসে না ও।খেলবে তো খেলবেই।তাই বাধ্য হয়ে উনার স্ত্রীই নিয়ে আসে।কিন্তু আজ তিনি এলেন না।তপু এসেছে।ওর বাবার জন্যে খাবার নিয়ে এসেছে।তাই খানিকটা অবাক হতে হচ্ছে রফিক সাহেবকে।
.
:কিরে বাবা! তুই এলি যে।
খানিকটা ক্লান্ত স্বরে কথাটা বললেন রফিক সাহেব।
:আইজ থেকে আমিই আসুম বাজান।
:কেন? তুই আসবি কেন?
:আমি ছাড়া আর কে আছে যে আসবে।মা তো এখন অসুস্থই।এখন যদি মা এখানে আসে তাহলে তো মায়ের ক্ষতি হইব।কষ্ট হইব।মায়ের কষ্ট হইলে তো আমার বইনে কষ্ট পাইব।আমি আমার বইনরে কষ্ট পাইতে দিমু না বাজান।
রফিক সাহেব আবারও প্রচন্ড অবাক হলেন।ছেলের দিকে ছলছল চোখে তাকালেন।এতটুকু ছেলে আর কত বড় কথা বলছে। উনি সত্যিই অবাক হচ্ছেন ভীষণ।বললেন,
:তা তোর স্কুল করবে কে?
:সেটাও আমি ভাইবা রাখছি বাজান।আমি ক্লাসের ফাঁকে আইসা তোমারে ভাত দিয়ে যামু।এতে আমার যে পড়া গুলো বাদ পড়ব সেগুলো আমি পরে পড়ে নিমু।
রফিকের সাহেবের অবাক হওয়ার মাত্র ছাড়িয়ে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে সংযত রেখে বললেন,
:থাক।তোর এত কষ্ট করতে হইব না।আমি বাড়ি গিয়া খাইয়া আসমু।
:লাগব না।তুমি এমনিতেই কাম কইরা ক্লান্ত হইয়া যাও।তোমার যাওন লাগব না।আমি নিয়া আমু।
এমনিতেই তুমি আমাগ জন্যে কত কষ্ট কর।
রফিক সাহেব কিছু সময় ছেলের দিকে চেয়ে থাকলেন।শেষমেশ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।ছলছল চোখে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।
.
রফিক সাহেব নিজে খাচ্ছেন আর ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছেন।তপু খুশিতে বাবার হাত থেকে খেয়ে নিচ্ছে।আহহ! এর থেকে সুন্দরতম দৃশ্য আর কি হতে পারে।গাছ তলায় বাতাস বয়ে যাচ্ছে।সেই বাতাস রফিক সাহেব ও তপুর গায়ে লাগছে।বাতাস লাগতেই এক অনন্য শিহরন জাগে হৃদয়ে। ভালো লাগে ভীষণ।যেন বাবা পুত্রের এমন দৃশ্য দেখে প্রকৃতিও বেশ খুশি।
খাওয়া শেষে রফিক সাহেব বললেন,
:তো গায়ের জামা কই?
তপুর একটু মন খারাপ করল।আস্তে করে বলল,
:মা ধুয়ে দিয়েছে।শুকাচ্ছে রোদে।
রফিক সাহেব আর কিছু বললেন না।চুপ করে থাকলে কিছুক্ষণ। তপুর জামা একটাই।সবুজ কালারের একটা শার্ট।কেউ একজন দিয়েছিল একদিন।স্কুলে পরে যাওয়ার জন্যে।তপুর জামা ছিল না।যেগুলো ছিল তার অনেকটা ছিড়ে গিয়েছে।তেলাপোকা কেটে দিয়েছে।ইঁদুর তার ধারালো দাঁত দিয়ে কুচিকুচি করে পেলেছে সব।সবুজ জামাটা পাওয়ার পর রফিক সাহেব আর কোন জামা কিনে দেন নি ছেলে কে।দেন নি বললে ভুল হবে।দিতে পারেন নি।পর্যাপ্ত টাকা ছিল না।তাই কিনে দিতে পারেন নি।রফিক সাহেব একটু ভালো করে ছেলের দিকে তাকালেন।দেখলে তপু অন্যদিকে তাকিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে বসে আছে।রফিক সাহেবের খারাপ লাগল ভীষণ। বললেন,
:সর্দার টাকা দিব কিছু।(সর্দার বলতে জমির মালিক।যার জমিতে কাজ করে রফিক সাহেব।)
তপু তখনও অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল।রফিক সাহেব আবার বললেন,
:ভাবছি তোর জন্যে একটা প্যান্ট, জামা আর এক জোড়া জুতা কিনমু।
তপু বাবার দিকে চোখ ফিরাল।গোল গোল চোখে বাবার দিকে চেয়ে বলল,
:আমার লাগব না বাজান।তুমি আমার বইনের লাইগা কয়েকটা জামা কাপড় কিনে আন।আর মায়ের জন্যে কিছু ভালো খাবার।আমি বইতে পড়েছি বাবা।এই সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের খুব ভালো করে যত্ন নিতে হয়।ভালো ভালো খাবার খাইতে হয়।
:তা তো জানি রে।দেখি কিছু টাকা বাড়িয়ে নিতে পারি কি না।তাহলে তোগ সবার লাইগ নিয়া আসমু।
তপু কিছু বলল না।মৃদু হাসল।হুট করেই একটা কথা মনে পড়ে গেল ওর।ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
:বাজান জানো? যুদ্ধ নাকি শুরু হইছে।
:কি বলছ।কই আমি তো শুনি নাই।
:আমি এখন আইতেই শুনলাম।মহি চাচা সহ সবাই রেডিওতে কি জানি শুনছিল।ওরাই আমারে কইছে।দেশের অবস্থা নাকি ব্যাপক খারাপ।
:কই।আমি তো আগে হুনি নাই।চল দেখি বাড়ি চল।আইজ আর কাম করুম না।ক্লান্তি লাগছে।
:চল।বাজান মহি চাচারা নাকি যুদ্ধে যাইব।
:তাই নাকি?
:হ বাজান।তুমি যুদ্ধে যাইবা?
:তুই যুদ্ধ মানে বুঝছ?
:না বুঝার কি আছে।লড়াই করা।এই তো।
:তা যুদ্ধে যে আমার জান যাইব সেটা তুই জানছ?
:বাজান! তুমি দেশের জন্যে প্রান দিতে ভয় পাও। তুমি জানো না দেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ।এটা বইতে পড়েছি বাজান।আরো কত লিখা আছে।নিজেরে দেশের জন্যে প্রান দেওয়ার কথাও বলা আছে।
:তা আমি গেলে তোদের দেখব কে?
:আমি আছি না।আমি দেখমু।তুমি যাও বাজান। দেশের জন্যে যুদ্ধ কর।
রফিক সাহেব হাসলেন মৃদু। এই ছোট্ট ছেলেটা অনেক কথা বলে ফেলেছে। বড় বড় কথা।রফিক সাহেব বললেন,
:আইচ্ছা যামুনে।এখন বাড়ি চল।
:চল।
রফিক সাহেব আর তপু বাড়ির দিকে গেল।রফিক সাহেবের এক হাতে প্লেট বাটি।অন্য হাতের তর্জনীর আঙ্গুল ধরে আছে তপু।তপুর অন্য হাতে পানির বতল। দুজনে ধীর পাঁয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।
.
বেশ কিছু দিন পর :
এলাকার অবস্থা বেশি ভালো না।মিলিটারিরা নাকি আসছে।স্কুল মাঠে ক্যাম্প করছে।গ্রামের বাজারটা জ্বালিয়ে দিয়েছে।অনেক গুলো বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।তবে তপুদের বাড়ি এখন আসে নি।রফিক সাহেব আজ টাকা পেয়েছেন। সর্দারের পিছন এতদিন ঘুরে আজ টাকা পেয়েছে।তাও আবার অর্ধেক টাকা।ভীষণ মন খারাপ হল উনার।তবুও কিছু বললেন না।মন খারাপ করে চলে এলেন। তিন মাইল হেঁটে গিয়ে নিজের অনাগত মেয়ের জন্যে কিছু জামাকাপড় কিনে আনলেন।স্ত্রীর জন্যে কিছু ফল।এগুলো আনতেই অনেক টাকা চলে যায়।আবার চাল ডালও কিনতে হবে।তাই অনেক চিন্তা করে তপুর জন্যে শুধু একটা শার্ট কিনলেন।আর কিছুই কিনলেন না।তপু অবশ্য এসব পেয়েই বেশ খুশি।নিজের শার্টটা ততবার দেখি নি যতবার নিজের বোনের জন্যে কেনা জামা গুলো দেখেছে।দুহাত বুলিয়ে দিচ্ছে জামার উপর। এটা দেখে খুব ভালো লাগল রফিক সাহেবের।তপুর মায়ের খুব ভালো লাগল। উনিও আল্লাহের কাছে শুকরিয়া আদায় করেন যে এমন একটা ছেলে পেয়েছেন তিনি।সন্ধায় বসে বসে তারা জামা গুলো দেখছিলেন।এমন সময় দরজায় ঠক ঠক শব্দ হল। দরজা খোলার আগেই দরজা ভেঙ্গে দিল কেউ।দরজা গলে রুমে ঢুকল কিছু মানব চামড়াধারি জানোয়ার।ঘরে ঢুকেই সব কিছু তচনচ করে দিল।রফিক সাহেব বাধা দিলেন।বাধা দিতেই এক মিলিটারি একটা চড় দিলেন রফিক সাহেবকে।তিনি ছিটকে পড়লেন মাটিতে।প্রথমে তপু ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।কিন্তু বাবাকে এভাবে মার খেতে দেখে ভীষন রেগে গেল।রেগে গিয়ে এক কামড় বসিয়ে দিল সেই মিলিটারির হাতে।সে কামড়ের জ্বালা সইতে না পেরে তাৎক্ষণিক তপুকে গুলো করে দেয়।তপু আস্তে করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ওর সবুজ শার্টটা রক্তে লাল হয়ে যায়।উচ্ছ্বসিত তপু হুট করেই নিথর হয়ে যায় মাটিতে পড়ে।কথা বলে না আর।হাসে না।'বইন আইব' বলে চিৎকার করে না।সবুজ জামা আর লালা রক্তে যেন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি হয়েছে। যেন একটা লাল সবুজের পতাকা স্থির, নিথর হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।রফিক সাহেব চিৎকার দিয়ে উঠলেন।উনার স্ত্রীও।উনিও বিছানা হতে নেমে এলেন।রফিক সাহেব ছেলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে উনার চোখ দুটো ছলছল করতে থাকে।ভীষন কষ্ট হয় উনার।যেন বুক ছিড়ে যাচ্ছে।রফিক সাহেব তীক্ষ্ণ, শক্ত দৃষ্টিতে তাকালেন সেই মিলিটারির দিকে।মিলিটারির কলার চেপে ধরলেন তিনি।খুব জোরে একটা চড় মেরে দিলেন।চড় খেয়ে রাগটা মাথায় ছটে যায় মিলিটারির। নিজেকে সামলাতে না পেরে বন্দুকের গোড়া দিয়ে বেশ কয়েকটা আঘাত দিলেন রফিক সাহেবের মাথায়।রফিক সাহেব নিজেকে সামলাতে পারেন না। তাৎক্ষনাত মাথায় হাত দিয়ে দিলেন।তীব্র চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।রক্তে ভেসে গেলে উনার মাথা। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন মাটিতে। উনার স্ত্রী কেবল তাকিয়ে আছেন।কিছু বলছেন না।বলতে পারছেন না।কান্না করতে পারছেন না।চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে না।কেমন জানি হয়ে গেছেন।যারা কান্না করতে পারে না তারা তাদের কষ্ট গুলো ঝেড়ে ফেলতে পারেন না।এতে কষ্ট দ্বিগুণ বেড়ে যায়।উনি দৌড়ে এলেন স্বামির কাছে।রফিক সাহেবকে ধরতে যাবেন তার আগেই উনার চুল ধরে টেনে নিয়ে আসা হয়। কিছু বিবৎস বাণী শুনা যায় মিলিটারির প্রধানের মুখ থেকে।তারপর উনাকে নিয়ে আসা হয় খাটের উপর।
.
রফিক সাহেব মিটমিট করে তাকালেন।কানে কিছু আওয়াজ ভেসে আসছে।গোঙ্গানির আওয়াজ।মাথাটা ভীষন ব্যাথা করছে।ক্লান্ত চোখে তাকালেন বিছানার দিকে।দেখলেন উনার স্ত্রীর দু হাত বাঁধা।সম্পুর্ন উলঙ্গ। এক নরপিছাস উনার গায়ের উপর শুয়ে আছে।রফিক সাহেবের স্ত্রীর চিৎকার করছে।কষ্টে যেন বুক ফেটে চিৎকার আসছে।উনি চিৎকার দিচ্ছেন।বলছেন,
"আমাকে ছেড়ে দিন।আমার পেটে বাচ্ছা আছে।দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন...।"
কিন্তু কেউ সে চিৎকারের শুনছে না।।সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না।ওই পশু গুলোও শুনল না।ক্ষুদার্ত বাগের মত ঝাঁপিয়ে পড়ছে রফিক সাহেবের স্ত্রীর উপর। রফিক সাহেব একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলেন মিলিটারির প্রধান চেয়ারে বসে আছে। তার গায়ে জামা নেই।সিগারেট টানছে মনের সুখে।রফিক সাহেব কোন মতে উঠে দাঁড়ালেন।টলতে টলতে পাগলের মত ছুটে গেলেন স্ত্রীর দিকে। উনার গর্ভবতী স্ত্রীর দিকে। তার পেটে উনার সন্তান রয়েছে।মেয়ে সন্তান।রফিক সাহেবকে উঠে আসতে দেখেই এক মিলিটারি সৈনিক গুলি করে দেয় উনাকে। উনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায় উনার শরির।তীব্র চিৎকার ভেসে আসে রফিক সাহেবের স্ত্রীর গলা হতে। চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করেন।
পাক সেনারা এক এক করে ভাতের মত ভোজন করতে থাকে রফিক সাহেবের স্ত্রীর শরিরটাকে।ছি! কি বিবৎস তারা।এরা কি আসলেই মানুষ?ছি! মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হয়।একজন গর্ভবতী মেয়ের উপর কিভাবে এত অত্যাচার করতে পারল।
এক সময় এত ধকল সইতে না পেরে নিস্তেজ হয়ে যায় রফিক সাহেবের স্ত্রীর শরির।শিথিল হয়ে যায়।মারা যান তিনি মারা যায় উনার ভিতরে মানুষটা।যে কারো বোন।কারো স্বপ্ন।কারো মেয়ে।উলঙ্গ অবস্থাতেই উনাকে রেখে যায় মানুষ রুপি জানোয়ার গুলো।
.
লাল সবুজের পতাকা হয়ে শুয়ে থাকে তপু।দু চোখ খোলা।তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। যে চোখ বলছে,
:আমায় ক্ষমা করে দাও বাবা।আমি তোমাদের দেখে রাখতে পারি নি।আমার বোনকে বাঁচাতে পারি নি। একজন আদর্শ ভাই হতে পারি নি।আদর্শ ছেলে হতে পারি নি।
রফিক সাহেবের দু চোখ খোলা।যে চোখে তখনও স্বপ্ন ভাসছিল।একটা মেয়ে সন্তানের স্বপ্ন।একটি ঘর আলোকিত করে আসা রাজকন্যার বাবা হওয়ার স্বপ্ন। উঁহু।সেই স্বপ্ন আর পূরন হয় নি। হবেও না আর।
রফিক সাহেবের বউয়ের দুচোখ খোলা।যে চোখে শুন্যতা ভাসছে।কষ্ট ভাসছে।অপূর্নতা ভাসছে।নিজের স্বামির স্বপ্ন পূরনের অপুর্নতা।
জামা দুটো পড়ে আছে মাটিতে।নতুন কিনে আনা জামা গুলো।সেগুলো আর কাউকে পরানো হবে না।মাটিতেই পড়ে থাকবে।একসময় মাটি খেয়ে ফেলবে জামা গুলোকে।ফল গুলো পঁচে যাবে।নষ্ট হয়ে যাবে।যেভাবে নষ্ট হয়েছি একটি স্বপ্ন।যেভাবে নষ্ট হয়েছিল একজন মায়ের সম্মান।ঠিক সেভাবেই নষ্ট হয়ে যাবে ফল গুলো।জামা গুলো খেয়ে নিবে মাটি।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url