গল্পঃ ভালো আছি আমি ৪

গল্পঃ ভালো আছি আমি।

তাসফি আহমেদ


শেষ পর্ব

(প্রথম পর্ব গুলোর লিংক নিচে দেওয়া হলো।)

মীরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তার দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল৷ সে যেন চাইছে না আমি সেখানে যাই৷ অনামিকার সাথে দেখা করি৷ যে মেয়েটি ডাক বার্তা নিয়ে আসলো আমি তাকে বললাম,
-আপনার অনামিকা ম্যামকে গিয়ে বলুন উনি আসতে পারবেন না৷ উনার তেমন সময় নেই৷
মীরা আমার কথাটা শুনে খুশি হলো যেন৷ তার চেহারাটা উজ্জ্বল হয়ে এলো। সমস্ত মুখে যেন বিজয়ের হাসি।
ডাক বালিকা গেল না৷ সে দাঁড়িয়ে থাকল৷ অবাক হলাম খানিক। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-কী ব্যাপার? আপনি যাচ্ছেন না কেন?
মেয়েটা খানিকটা ভীত স্বরে বলল,
-ম্যাম বলেছেন আপনি এমন কিছুই বলবেন৷ তারপরও যেন আমি আপনাকে রিকোয়েস্ট করি৷ আপনি যেন আমার সাথে আসেন৷
-আপনার কী ধারণা? আপনার রিকোয়েস্টে আমি যাবো?
-এখানে আমার ধারণার কিছু নেই৷ আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি।
-আপনি গিয়ে বলুন, তার সাথে দেখা করার কোনো কারণ নেই আমার কাছে। কারণ থাকলেও আমি দেখা করবো না।
মেয়েটা চলে গেল। আমি মীরার দিকে তাকালাম একবার। বললাম,
-আমি যাই৷
এই বলে হাঁটা ধরলাম। মীরা দৌড়ে এসে পথ আগলে দাঁড়াল। বলল,
-চলে যাচ্ছেন কেন? আরো কিছুক্ষণ থাকুন না!
আমি খানিকটা গম্ভীর গলায় বললাম,
-থাকার ইচ্ছে নেই৷ আমার ভালো লাগছে না। আমি চলে যাবো।
মীরার মুখ কালো হয়ে গেল৷ আমি তোয়াক্কা করলাম না৷ গেটের দিকে হাঁটা ধরলাম। মীরাও পেছন পেছন আসতে থাকল৷ একসময় আমার পাশাপাশি হাঁটতে থাকল৷ মন মরা স্বরে বলল,
-এমন করছেন কেন? একটু থাকলে কী হয়!
কী বাচ্চা সুলভ আবদার৷ কীভাবে প্রত্যাখ্যান করি। আমার হৃদয়ের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল৷ কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো আমার। খানিকটা কষ্ট হলো বটে, তবে নিজেকে সংযত রেখে বললাম,
-কিচ্ছু হয় না৷ আমার এমনিই থাকতে ইচ্ছে করছে না৷
-এখনও রেগে আছেন আমার উপর?
-না।
-সত্যি করে বলুন।
-সত্যি করেই বলছি৷
-এমন করেন কেন?
-কেমন করি?
-এই যে এতো রাগ দেখাচ্ছেন৷
-রাগ দেখালাম কই?
-এইযে এতো কঠিন ভাষায় কথা বলছেন আমার সাথে৷ আপনার চেহারা বলছে রেগে আছেন৷
-আমি রেগে নেই।
-সরি তো বলেছি আমি। আবার বলতে হবে?
-হবে না। সরি বলার কিছু হয়নি৷ আমি রেগে নেই।
-আমি স্পষ্ট দেখছি আপনি রেগে আছেন।
আমি কিছু বললাম না৷ ভার্সিটির মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে এলাম। ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকলাম। মীরাও আমার সাথে সাথে হাঁটতে থাকল। আমি বললাম,
-কই যাচ্ছেন আপনি?
-আপনার সাথে যাচ্ছি।
-আমি তো বাসায় যাবো।
-এখন?
-হ্যাঁ।
মীরা মলিন মুখে তাকালো। বলল,
-একটু থাকুন না আমার সাথে। আজ আমার বার্থডে।
কথাটা বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল সে৷ মুখটা একদম কালো হয়ে গিয়েছে। এই যেন কেঁদে দিবে৷ আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তার আগেই একটা গাড়ি এসে থামলা আমাদের পাশে। গাড়ির কাচ নামতেই অনামিকার চেহারা স্পষ্ট হলো। কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷ আমি ওর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। মীরার দিকে তাকালাম। অনামিকা গাড়ি থেকে নেমে গেল। আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। নিজ থেকেই বলল,
-একটু এদিকে আসবে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
-কেন?
-আসো না। প্লীজ।
পুরনো সেই অনুভূতিটা আবার জেগে উঠল। এই প্লীজ শব্দটা শুনলে আমি যে কতো মুগ্ধ হতাম! মনে হতো এই মেয়ের জন্যে সব করতে পারবো। সব৷ আমরা মীরার কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। মীরা ঠিক তখনই সেখান থেকে চলে গিয়েছে। তার জন্যে আমার একটু মন খারাপ হলো৷ একটু না। বেশিই হলো৷ আহ! আজ মেয়েটার জন্মদিন ছিল৷ তার সাথে এমন বিহ্যাভ না করলেও পারতাম। আপসোস হতে থাকলো। অনামিকা একদম আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। বলল,
-কেমন আছো?
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
-এইতো। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
-আমি কেমন আছি জানতে চাইবে না?
আমি হাসলাম খানিক। বললাম,
-ভালো থাকার জন্যেই তো চলে গেলে। জিজ্ঞেস করার কী আছে!
অনামিকার চোখে জল দেখলাম আমি। আমার কেমন জানি লাগল। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল যেন। অনামিকা বলল,
-আমি ভালো নেই যে। একদমই ভালো নেই।তপুও। কেউই ভালো নেই। একটা অপরাধবোধ আমাদের দুজনকে যেন তিল তিল করে মারছে। শাকের, আমাদের ক্ষমা করে দাও প্লীজ৷ খুব মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছি আমরা।
অনামিকা কান্না করে দিল। মাঝরাস্তায় তার মতো একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি কান্না করছে, তাও আবার আমার মতো একজন মানুষের জন্যে, ব্যাপারটা অন্য রকম দেখায়। লোকজন যেন জড়ো হতে শুরু করলো৷ আমি ওকে বললাম,
-গাড়িতে গিয়ে বসো!
ও আমার দিকে চট করেই তাকালো। আমি আবার বললাম,
-যাও। গাড়িতে বসো।
অনামিকা গাড়িতে গিয়ে বসল। আমি ওর পেছন পেছন গেলাম। গাড়ির বাইরে থেকে বললাম,
-তোমার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। কার প্রেম কোথায়,কখন হয় বলা মুশকিল। তবে কিছু ব্যাপার...
আচ্ছা থাক। ওসব না বলি। তুমি চলে যাও। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
অনামিকা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কেবল। আমি একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। বললাম,
-যা হবার হয়ে গিয়েছে। পরিবর্তন যা হবার তাও হয়ে গেছে। আমি সত্যিই তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি। তপুর সাথে সুন্দর করে একটা জীবন যাপন করবে৷ এই আমার কামনা৷
অনামিকা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি বললাম,
-ড্রাইভার ভাই, যান।
.
পরের দুদিন মীরার কোনো খবর পাওয়া গেল না৷ দুদিনে আমি গুনে গুনে মোট চারবার কল দিলাম৷ তাও ধরল না। অতিরিক্ত কিছু করিনি৷ মীরা তার মতো থাকুক। নিজেকে গুছিয়ে নিক সুন্দর করে৷ এমনটাই আমার চাওয়া। আমিও নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি৷ মীরাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেটা আমার জন্যে মঙ্গলকর। আসলে মুখে মুখে অনেক কথাই বলা যায়। তবে তা বাস্তবায়িত করা মুশকিল। আমি ভেবেছি, মীরার ভাবনা ছেড়ে দিবো, সব গুছিয়ে নিবো, সুন্দর করে চলা শুরু করবো, এসব ভাবনাতেই সহজ। বাস্তব বড় কঠিন৷ তাকে সহজে ভোলা যায়। মস্তিষ্কের নিউরনে আঠার মতো লেগে আছে সে। অবসর পেতেই যেন সমস্ত মস্তিষ্ক গ্রাস করে নেয়৷ হৃদয় জুড়ে চলছে তার রাজত্ব৷ রাতে ঘুম হয় শেষ অংশে। চোখে ঘুম ধরে না। কি জানি, কেবল মীরার কথাই মনে পড়ে। এসব পেছন ফেলতে চাইছি, যতই চাইছি ততই যেন গভীর হচ্ছে। ব্যাথা বাড়ছে৷ বাড়ুক৷ কিছু ব্যাথাও বড় আনন্দকর৷

অফিসে আসতেই অয়নার সাথে দেখা। আয়না আমার কলিগ। বয়সে আমার বয়সীই কিংবা তারচে' কিছু বেশি। বললেন,
-আপনার সাথে কথা আছে শাকের সাহেব৷
আমি হাসলাম। বললাম,
-কী কথা!
-অফিস শেষে দাঁড়িয়েন। কফি খেতে খেতে না হয় বলব।
এই বলে তিনি মুচকি হাসলেন। বিপরীতে আমিও হাসলাম। অফিস থেকে বের হতে হতে সাড়ে পাঁচটার বেজে গেল। আয়না এবং আমি এক সাথেই বের হলাম। বের হতেই দেখলাম মীরা দাঁড়িয়ে আছে। আমি খানিকটা অবাক হলাম৷ মেয়েটাকে কেমন জানিন লাগছে। কেমন জানি উষ্কখুষ্ক। চোখমুখ শুকিয়ে আছে। বড্ড আনমনা। চোখময় তার তীব্র বেদনা।  আমাকে আয়নার সাথে দেখে যেন চমকে উঠল সে৷ মুখটা কালো হয়ে গেল দ্রুত৷ চোখ জোড়া যেন চিকচিক করছে। মীরার কাছে পৌঁছাতেই বললাম,
-কী ব্যাপার? হঠাৎ এই সময়ে এখানে?
সে ধরে আসা গলায় বলল,
-কোথাও যাচ্ছেন?
আমি আয়নাকে দেখিয়ে ববললাম,
-হ্যাঁ। উনি আজ কফি অফার করলেন৷ কিছু কথাও আছে উনার সাথে!
এই বলে মৃদু হাসলাম। মীরা কেমন জানি গলায় বলল,
-ও আচ্ছা।
তারপর একদম চুপ হয়ে গেল। নিশ্চুপ। স্থির হয়ে গেল। যেন নড়তেও পারছে না এমন৷ আমি বললাম,
-আসি তাহলে।
মীরা কিছু বলল না। সে কেবল দাঁড়িয়ে থাকল। আমি স্পষ্ট তার চোখে কষ্ট দেখলাম। বেদনায় যেন দুচোখ ফেটে যাচ্ছে তার৷ তীব্র কান্না আঁটকে আষাঢ়ে মুখ করে তাকিয়ে আছে আনমনে। আমি আয়নার সাথে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু মনে মনে মীরাকে নিয়ে ভীষণ ভাবতে থাকলাম আমি। আসার সময় মুখটা কেমন জানি করে রেখেছিল। কেমন কাঁদো কাঁদো ভাব। বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠল। কেঁদে উঠল যেন। বড্ড মায়া হল মীরা মেয়েটার জন্যে৷ এমন একটা মানুষের সাথে ওই বেচারি জড়ালো যে তাকে কেবল কষ্টই দেয়৷ কেবল কষ্ট দেয়৷ অয়নার সাথে সেদিন সন্ধ্যায় অনেকক্ষণ কথা হলো৷ সে এক ডিভোর্সি নারীর সন্ধান দিল। আমাকে বলল তার সম্পর্কে। আমি বললাম ভেবে দেখব। 'ভেবে দেখব' বলে এলাম, অথচ রাতের শেষ হতে চলল আমি কেবল মীরার ভাবনায় ডুবে আছি৷ কেবল তাকেই ভাবছি। ভেবে ভেবে চোখ ভেজাচ্ছি। চামড়ায় আঘাত লাগলে রক্ত ঝরে৷ হৃদয়ের আঘাত অস্পষ্ট। ওই অস্পষ্ট আঘাতে রক্ত নয়, জল ঝরে। চোখের জল। আমিও এখন দু এক ফোঁটা জল ফেলছি। কারণ আমি ব্যাথা পেয়েছি। অস্পষ্ট এক ব্যাথা৷

দু'দিন পরের কথা৷ অফিস গেলাম। চোখেমুখে তখনও ঘুম লেগে আছে। আয়নায় নিজেকে দেখে খানিকটা চমকে উঠলাম। চেহারাটা যেন কেমন হয়ে গেছে। কোনো প্রাণ নেই যেন। চোখে নিচে কালি জমে কেমন ভূতুড়ে মার্কা হয়ে গিয়েছে। এখন নিজেকে নিজে দেখলেই কেমন জানি লাগে। আমি নিজের ডেক্সে কেবল গিয়ে বসলাম, ঠিক তখনই এক ভদ্রলোক আসলেন আমার কেবিনে৷ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললেন,
-ভেতরে আসবো?
আমি মৃদু হেসে বললাম,
-জ্বী আসুন।
তিনি আসলেন ভেতরে। আমি বসতে বললাম। বললাম,
-বলুন, কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
ভদ্রলোক মুচকি হেসে বললেন,
-যা সাহায্য চাইবো তাই-ই কি করতে পারবেন?
-যা ব্যাংক রিলেডেট তা অবশ্যই পারবো৷
-আমি যার জন্যে আসলাম তা ব্যাংক রিলেটেড নয়। হার্ট রিলেটেড।
-মানে? ঠিক বুঝলাম না!
-আমার একটা মেয়ে আছে৷ কেবল একটা মাত্র মেয়ে। আপনি তাকে চিনেন। নাম মীরা।
আমি খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কী বলব ভেবে পেলাম না৷ খানিকটা চুপ থেকে বললাম,
-আপনি মীরার বাবা?
উনি হাসলেন। বললেন,
-হ্যাঁ।
-আমার কাছে আসার কারণ?
-একটাই কারণ। আমার মেয়েটা ভালো নেই৷ একদমই ভালো নেই। আমি চাই আমার মেয়েটা ভালো থাকুক৷ যেটা কেবল আপনার দ্বারাই সম্ভব।
-কী হয়েছে মীরার?
উনি খানিকটা চুপ করে গেলেন। আমি আবার বললাম,
-বলুন না। কী হয়েছে মীরার?
-তেমন বিশেষ কিছু নেই৷ মেয়েটা হুট করেই কেমন জানি হয়ে গেল। জন্মদিনের দিন খুব খুশি হয়ে বাসা থেকে বের হলো৷ অথচ ফিরল মুখ ভার করে৷ সেই যে মুখ ভার হলো, বহু চেষ্টার পরেও আমি তার মুখে হাসি ফুটাতে পারিনি। সেদিন রাতে দেখলাম কাঁদছে। কী ভীষণ কান্না৷ আমার জীবনে আমি কাউকে এতো কাঁদতে দেখিনি৷ বিশ্বাস করুন...
-আঙ্কেল আমি আপনার ছোট৷ আমাকে তুমি করে বলুন প্লীজ৷
-তুমি বিশ্বাস করবে না, পাগলের মতো কান্না করছিল ও। অথচ আমাদের সামনে আসলে একদম সাবলিল। দেখলে কেবল মনে হয় সামান্য কোনো বিষয়ে মন খারাপ তার। আমরাও তেমন ভেবেছিলাম। কিন্তু ওকে হঠাৎ কাঁদতে দেখেই আমার বড় কষ্ট হলো। আমি তার কান্নার কারণ খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসলাম তোমার কাছে৷ মেয়েটা কখনই মুখ ফুটে কিছু চায়নি আমার কাছে। আমি জানি, কখনই চাইবে না। তাই আমাকেই আগ বাড়িয়ে দিতে হয়। শাকের, তুমি কি পারবে আমার মেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে?
আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। এই মূহুর্তে কী বলা উচিৎ আমার জানা নেই৷ তবুও কাঁপা কাঁপা স্বরে বললাম,
-আঙ্কেল, আসলে...
-আসলে টাসলে কিছুই না। আমি জানি তোমার সম্পর্কে সব৷ এসব নিয়ে চিন্তা করিও না আর। যুগ পাল্টেছে৷ মানুষের ধ্যান ধারনাও পরিবর্তন হচ্ছে৷ এসব নিয়ে এতো ভাবাটা বোকামি। নিজে তো ভাবো ভাবো, সেই কষ্টটা পায় আমার মেয়ে৷ আমি চাই না আমার মেয়ে আর কষ্ট পাক। কেমন?
আমি কিছু বললাম না৷ চুপ করে থাকলাম কেবল।
.
ভার্সিটির গেটের কাছে যেতেই অহনার সাথে দেখা৷ বললাম,
-কই যাচ্ছো অহনা?
অহনা রাগি ভাবে তাকালো আমার দিকে। কঠিন স্বরে বলল,
-তা জেনে আপনার কী!
আমি খানিকটা আহত হলাম। বললাম,
-ক্যাম্পাসে মীরা আছে? কোথায় পাবো ওকে?
-কেন খুঁজছেন ওকে? কষ্ট দিতে? আর কতো কষ্ট দিবেন ওকে হু?
-বেশি কথা বলিও না৷ কোথায় আছে বলো৷ ওর সাথে জরুরি দেখা করতে হবে৷
অহনা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছু সময়। তারপর বলল,
-আসুন আমার সাথে।
আমি অহনাত সাথে নিয়ে গেলাম। সে আমাকে একটা গাছ তলায় নিয়ে এলো৷ এখানে এসে দেখলাম মীরা বসে আছে৷ মন মরা ভাব তার। দেহে যেন প্রান নেই। আমি অহনা ফিসফিসিয়ে বললাম,
-চলে যাও তুমি। আমাদের কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে৷
অহনা চলে গেল না৷ তবে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি মীরার পাশে গিয়ে বসলাম৷
আমার উপস্থিতি টের পেতেই খানিকটা নড়ে উঠল ও৷ একটু দূরে সরে বসল। বললাম,
-এতো মনযোগ দিয়ে কার কথা ভাবছিলে মীরা?
মীরা জবাব দিল না। সে চুপচাপ বসে থাকল। আমি আবার বললাম,
-খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি?
মীরা উঠে যেতে চাইলো৷ অনেকটা দাঁড়িয়ে গেল সে৷ আমি তার হাত টেনে ধরল। নিজেও দাঁড়িয়ে গেলাম। বললাম,
-খুব রেগে আছো তাই না?
সে এই প্রশ্নেরও জবাব দিলো না৷ বলল,
-হাত ছাড়ুন আমার।
-ছাড়ার জন্যে তো ধরিনি আমি।
মীরা চট করেই আমার দিকে তাকালো৷ তার চোখ জোড়া জলে পরিপূর্ণ। সে ধরে আসা গলায় বলল,
-আজীবন যে এভাবে ধরে রাখবেন তাও তো বলেননি৷
-যদি এখন বলি!
-আমাকে বলে কী লাভ। সেদিন যার সাথে কফিশপে গেলেন তাকে গিয়ে বলুন। আমাকে কেন বলছেন?
-বিয়ে তো আমি তোমাকে করবো৷ উনাকে তো না৷
-হুহ। ঢং। আসছে বিয়ে করতে৷ যান এখান থেকে আপনি৷ অনামিকার সাথে কথা বলুন। অফিসের কলিগদের সাথে কফি খান। আমি কে? আমার কাছে কেন এসেছেন?
-তোমার কাছে এসেছি কারণ তুমি নাকি গোপন ব্যাথায় ভুগছো। আমি ভাবলাম সারিয়ে দেই৷ এখন যদি তুমি না চাও তবে আর কী করার।
মীরা এবার কঠিন চোখে তাকালো। বলল,
-কেবল ব্যাথা সারাতেই আসছেন?
-কেউ চাইলে অন্য কিছুও করতে পারি আমি।
-অন্য কিছু কী?
-বিয়ে!
-আমার তো আর কাজ নেই৷ আপনাকে বিয়ে করবো৷ হুহ৷
আমি চুপ থাকলাম খানিক। তারপর বললাম,
-ওইদিন আমার অফিস কলিগ একটা বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। এখন মনে হচ্ছে সেই প্রস্তাব নিয়ে ভাবতেই হবে৷
মীরা যেন চট করেই রেগে গেক। আমার একদম কাছে চলে এল সে। আমার শার্টের কলার চেপ ধরে বলল,
-আপনি আমাকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে করেই মেরে ফেলবেন৷ আপনি জানেন আমি আপনার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না৷ তারপরও এসব বলেন কেন হু?
-না বলতে তো কাছে আসো না তুমি। এই যে এখন বললাম, এখন এলে।
-খুব চালাক হয়েছেন আপনি তাই না?
-একটু আধটু হতেই হয়৷
এই বলে আমি হাসলাম। মীরাও ভেজা চোখে হাসল। বলল,
-আপনি জানতেন আমিন আপনাকে পছন্দ করি তাই না?
আমি হাসলাম। বললাম,
-জানতাম। তব ভয়ে আগাইনি৷ কিন্তু আজ কোনো ভয় কাজ করছে না৷ আজ কেমন জানি স্বাধীন স্বাধীন লাগছে৷ মনে হচ্ছে মনে মনে আমি ভীষণ কনফিডেন্সে।  আজ কথাটা বলতে পারবো৷ অবশ্যই পারবো৷
মীরা শান্ত স্বরে বলল,
-কোন কথা?
আমি হাঁটু গেড়ে বসলাম ওর সামনে। বললাম,
ভালোবাসার একটা স্পেশাল রঙ আছে৷ স্পেশাল অনুভূতি আছে৷ আমি সেই স্পেশাল রঙ দেখতে চাই তোমায় নিয়ে৷ আমি স্পেশাল কিছু অনুভব করতে চাই তোমায় নিয়ে৷ আমি সমস্ত তোমাকেই ফিল করতে চাই মীরা৷ ভালোবাসার নতুন ভুবন সাজাতে চাই তোমাকে নিয়ে৷ মীরা, উইল ইউ ম্যারি মি?
মীরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তার চোখ ভর্তি জল। মুখ ভর্তি হাসি। উজ্জ্বল চেহারা। চট করেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরল। বাচ্চাদের মতো কান্না করতে থাকল৷ আমিও তাকে আলিঙ্গন করে নিলাম ভালোবাসার পরম স্পর্শে৷




ভুলত্রুটি মার্জনীয়৷ 
-তাসফি আহমেদ।

Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url