Bangla Golpo: এডভান্স প্যারা

বাংলা গল্প| Bangla Love Stories| Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.


Bangla Golpo: এডভান্স প্যারা

তাসফি আহমেদ

.
নিশাদ আর নিশির মাঝে ক'দিন ধরেই খুব ঝগড়া চলছিল।তুমুল ঝগড়া।কেউ কাউকে সাইড দিতে রাজি না।কেউ সরিও বলবে না।দুজনেই রেগে আছে।আবার দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতেও পারবে না।এটা কেমন ভালোবাসা সেটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
.
 সেদিন নিশাদ ফোন দিয়ে খুব কান্না করেছিল।নিশি নাকি ওর ফোনও তুলছে না।নিশির সাথে কথা না বলে থাকতে পারছে না।খুব মিস করছে ওকে।আমার খুব খারাপ লাগল। নিশির কেমন লাগছে সেটা আমার জানা নেই তবে নিশাদের অবস্থা দেখে আর ঠিক থাকতে পারলাম না।আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।তাই আজ ওদের দুজনকেই এক করেছি। এই মুহুর্তে আমি, নিশাদ ও নিশি দাঁড়িয়ে আছি ভার্সিটিরর এক কোনে।ওদের সবটা বুঝিয়ে বললাম।দুজনের মধ্যে একজনকে সরি বলতেই হবে।না চাইলেও সরি বলতে হবে।নিজেদের মাঝে ভালো বোঝাপড়া না থাকলে প্রেম হয় না।আমি যখন ওদের ব্যাপারটা বুঝাচ্ছিলাম  ঠিক তখনই আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমাকে আড়াল থেকে দেখছে।আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।কেউ কেন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে।মনের ভুল ভেবে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিলাম।ঠিক তখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল বলে আমার মনে হয়।কিন্তু যখনই নিশি আমার দু হাত ধরে কিছু বলছিল তখনই আমার মনে হতে থাকল কিছু একটা যেন ঠিক নেই। কিছু একটা হতে যাচ্ছে।অন্য রকম কিছু একটা।এমনটা আমার মন বলছিল।নিশি আমার হাত ধরে কান্না করতে করতে বলল,
:ভাইয়া আমি আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছি না।আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন।যে কথা গুলো নিশাদের বলার ছিল সেগুলো আপনি বলে দিয়েছেন।আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না।
এতটুকু বলে ও থামল।নিশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
:সব সময় তো উনার সাথেই থাক! কিছু শিখতে পার না? 
ওর দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিশি আমার দিকে তাকাল।তারপর বলল,
:অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমি বুঝলাম না।এত ধন্যবাদ দিচ্ছে কেন এই মেয়ে।অবশ্য কিছু মেয়ে এমনই হয়।অতি আবেগি যাকে বলে আর কি।এমন মেয়েরা যখন আবেগি হয়ে পড়ে তখন ওরা নিজেরাও জানে যে ওরা কি করছে।কি করবে সেটাও ঠিক করতে পারে না।আবেগ থাকা ভালো। তবে অতিরিক্ত আবেগ মোটেও ভালো না।আবেগের বশে এক সময় এরা নিজেদেরও হারিয়ে ফেলে।আমি ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম।তারপরেই নিশি একটা অবাক করা কান্ড ঘটাল।হুট করেই আমাকে মৃদু ভাবে জড়িয়ে ধরল।ঠিক তখনই আমার ফোনটা হালকা কেঁপে উঠল। নিশি সেটা বুঝতে পারল না।আমায় জড়িয়েই ধরেই ও কান্না শুরু করে দিল।বলতে লাগল,
:আমায় ক্ষমা করে দিবেন ভাইয়া।আমিও আসলে না বুঝে নিশাদকে কষ্ট দিয়েছি।আর ভাইয়া আপনার সাথে ওকে রেখে কিছু শিখাবেন। তা না হলে ও গাধা গাধাই রয়ে যাবে।
আমি বললাম,
:আচ্ছা ঠিক আছে।আমি আছি তো।আর কান্না করতে হবে না আপুটার।
নিশি আমাকে নিজের ভাইয়ের মত দেখে।আমিও তাই করি।নিজের তো বোন নেই।তাই ওকে নিজের বোনের মতই দেখি।
নিশাদ তখনও আমাদের দিকে তাকিয়েছিল। বেচারার মনটা এমনিতেই খারাপ ছিল।নিশি আমাকে জড়িয়ে ধরেছে দেখে ওর মুখটা আরো কালো হয়ে গেল।চুপশে গেল কিছুটা।
নিশি আর নিশাদকে বিদায় দিয়ে ফোনটা বের করলাম।স্ক্রিনের দিকে  তাকিয়েই আমার চোখটা ছানাবড়া হয়ে গেল।"N প্যারা" থেকে তিনটা মিসড কল এসেছে।আমি খানিকটা ভড়কে গেলাম।অবাক হলাম ভীষন।এই মেয়ে কেন আমায় কল করেছে।খানিকটা টেনশনে পড়ে গেলাম আমি। এন প্যারা মানে ননষ্টফ প্যারা।এই মেয়েটার সাথে যবে থেকে আমার দেখা হয়েছে তবে থেকেই আমায় দৌড়ের উপরে রেখেছে।প্যারার উপর রাখে আমারে।তাই এই নাম দিয়েছি।
.
সেদিন আমি চন্দ্রগ্রহন দেখছিলাম।১৫০ বছর পর আজ পূর্ন চন্দ্রগ্রহণ হচ্ছে।তাই দেখতে ছাদে এলাম। আমি আবার চন্দ্রগ্রহণ দেখলে খানিকটা ইমোশনাল হয়ে যায়।যখন চাঁদটা পুরো কালো হয়ে গিয়েছিল তখন আমার চোখে আপনা আপনিই পানি চলে এসেছে।আমি ঠিক বুঝতে পারি না কেন আমার সাথে এমন হয়।কেবল সেদিকে তাকিয়ে থাকলেই চোখে জল চলে আসে।আমাকে এভাবে দেখেই মেয়েটা খানিকটা হেসে উঠল।ওর হাসির শব্দ পেয়ে আমি খানিকটা চমকে উঠলাম।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম মিহিন দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটা তখনও হাসছিল।আমি কিছুটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।ঠিক তখনই টের পেলাম যে আমি খানিকটা রেগে যাচ্ছি।ওর হাসির শব্দ যত শুনছি আমি ততই রাগটা বেড়ে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে কন্ট্রোল রাখলাম।ও হাসি থামিয়ে বলল,
:লাইফে এই প্রথম কাউকে দেখলাম যে চন্দ্রগ্রহণ দেখে কান্না করছে।এই যুগে এটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি না।
ঠিক তখনই আমি আমার রাগটা প্রকাশ করলাম।বললাম,
:আপনাকে কি কেউ মেনে নিতে বলেছে? আর আপনি কে? এখানে কি করছেন?
:ওয়েট! ওয়েট! রেগে যাচ্ছেন কেন?আর আমি যদি কোন ভুল না বলে থাকি তাহলে আপনি নিশ্চই বাড়িওয়ালা চাচার ছেলে?নামটা কি যেন? কি যেন? ও হ্যাঁ! মনে পড়েছে।তাসফি! তাই না?
আমি এবার খুব বড় রকমে হতভম্ব হলাম।মেয়েটা আমার সম্পর্কে জানে।আর আমি কিছুই জানি না? আশ্চর্য! কে এই মেয়ে?আমি গলার স্বরটা একটু শান্ত করে বললাম,
:আপনি কে? ঠিক চিনলাম না।আর আমাকেও বা কিভাবে চিনেন? 
:আমি এই বাসায় নতুন এসেছি।তিন দিন হয়েছে!
:কই আমি তো দেখি নি।আর কখনই বা আসলেন!
:আপনাকে দেখিয়ে তো আর আমি আসব আর যাব নাকি।তবে ঘর গুছিয়ে শেষ করতে করতে সময় চলে যাচ্ছিল আর কি।তাই বাসা থেকে বেরও হই নি।
:ও আচ্ছা! নাম কি আপনার?
:মিহিন! 
এটা বলে মৃদু হাসল ও।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
:শুধুই কি মিহিন? আশেপাশে কিছু নেই?
ও পূর্বের হাসিটা মুখেই রাখল।একইভাবে হেসে বলল,
:এতটুকু জেনে রাখলেই চলবে।
এই বলে মেয়েটা আমার সামনে থেকে বিদায় নিল।আমি কিছু সময় কেবল সেদিকেই তাকিয়ে থাকলাম।যখন চাঁদের দিকে তাকালাম তখন দেখলাম চন্দ্রগ্রহণ প্রায় শেষ হয়ে আসছে।চাঁদটা মৃদু ভাবে আলো দিতে শুরু করেছে।আমার কেন জানি মনে হল চাঁদের উপর থেকে যেমন কালো ছায়া টা চলে যাচ্ছে তেমনই আমার জিবন থেকে শান্তিতে থাকাটা চলে যাচ্ছে।অন্তত মেয়েটার চোখ দেখে আমার এটাই মনে হল।খুব বড়সড় পরিবর্তন হতে চলেছে আমার জিবনে।হলও তাই।প্রথম দেখায় ভাবলাম মেয়েটা খানিকটা শান্ত  হবে।কয়েকদিন যাবার পর বুঝতে পারলাম আসলে মেয়েটা কতটা শান্ত।
.
আমার আম্মু আমাকে খুব একটা বকত না।যথেষ্ট আদর করতেন।তবে বাবা মাঝে মাঝে রাগ দেখাতেন।তাই বাবাকে খানিকটা ভয় পাই আমি।সংসারের কাজে আমাকে কখনও প্রয়োজন ছিল না।বাজারের কিংবা কোন কিছুর প্রয়োজন হলে বাবাই এনে দেন।আবার মাঝে মাঝে খুব প্রয়োজন হলে আমাকে আনতে হত।এই যেমন ঘরে লবন শেষ।বাবা অফিসে বাসায় কেবল আমি আর আম্মু। তখন আমাকেই যেতে হয়।বেশি কষ্ট হয় না।বাসার পাশেই দোকান আছে।এমনি বাজারটাজার আমি করি নি কখনও।মা কিংবা বাবাও কিচ্ছু বলতেন না।
.
হুট করেই আমি লক্ষ্য করলাম যে ইদানিং মা আমাকে বাজার করতে বলছেন।খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠাচ্ছেন।আমি ঠিক কোন কিছুই বুঝে উঠলাম না।বাবাও বলছেন বাজার করতে।জিবনে বাজারে যাই নি।লোকে গাদাগাদি হয়ে থাকা মাছ কিংবা সবজি বাজার আমার সব সময়ই অপছন্দ ছিল।এত ভীড় আমার মোটেও ভালো লাগত না।এখন যেতে হচ্ছে।বাজার করতে হচ্ছে আমাকে। এরপর থেকেই মা আমাকে নানান কাজের হুকুম দিতে শুরু করলেন।কি আর করব।ছোট একটা বোন নেই যে ও করবে।এদিকে মায়েরও কষ্ট হয়।তাই আমি না করি না।সব কাজ করতাম।
.
ক'দিন আগে আবার আমার শার্ট প্যান্ট  ধুয়ে দিলেন তিনি।আমাকে বললেন,
:অ্যাই তাসফি! যা তো এগুলো একটু ছাদে শুকাতে দিয়ে আয়।
আমি শুয়ে শুয়ে ফেবু চালাচ্ছিলাম।মায়ের কথাটা শুনেই আমার মেজাজটা খানিকটা খারাপ হয়ে গেল।বললাম,
:তুমি যেতে পার না? আমাকে যেতে বলছ কেন?
:একটু যা না বাবা।রান্না ঘরে কাজ আছে আমার।তাই যেতে পারছি না।একটু কষ্ট করে দিয়ে আস না?
মা এমন ভাবে কথাটা বলল যে আমি আর না যেয়ে পারলাম না।কথাটা শুনে মায়া হল অনেক।তাই চলে গেলাম।ছাদে যেতেই দেখলাম মিহিন দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখতে পেয়েই মৃদু হাসল।আশ্চর্য! এই মেয়ে আমাকে দেখলে এত হাসে কেন? প্রেমে ফেলার ধান্দা নয় তো? আমি যখন কাপড় গুলো দড়িতে দিচ্ছিলাম তখন মিহিন বলল,
:বাহ।দেখে ভালো লাগল যে মায়ের কাজে হেল্প করছেন।
আমি হাসলাম।বললাম,
:কি করব বলুন! আমার তো আর ছোট বোন নেই। তাই আমাকেই করতে হয়।আর তাছাড়া আমি প্রায়ই মায়ের কাজে সাহায্য করি।(একটু বাড়িয়ে বললাম আরকি)একটা কথা বলব?
:জি বলুন!
:ইয়ে মানে আসলে আমার তো কোন ছোট বোন নেই।আপনি যদি আমার ছোট বোন হতেই তাহলে খুব ভালো হত। অন্তত দু বেলা জগড়া করা যেত।আর আমার কাজ গুলোও করতে।
কথাটা শুনেই মিহিনের হাস্যজ্জ্বল চেহারাটা মলিন হয়ে গেল।কপট রাগ নিয়ে বলল,
:আমি কেন আপনার বোন হতে যাব?
:আমার বোন নাই তাই।
:কোন প্রয়োজন নেই।আমি আপনার বোন হতে পারব না।
:প্লিজ!
:আপনার মাথায় ডিষ্টার্ব আছে।তাই এমন কথা বলছেন।যান গিয়ে ডাক্তার দেখান।হুহ!
:প্লিজ।বুঝার চেষ্টা করুন...
:ধ্যাত! আপনি না! আপনি আসলেই একটা পেইন।ধুরর...
এই বলে ও হন হন করে চলে গেলাম।ও চলে যেতেই আমি অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়লাম। যাক! ভালো ভাবে যব্দ করা গিয়েছে।একেবারে মন মত হয়েছে।ভালো একটা রিভেঞ্জ নিতে পেরেছি।ও যা করেছে তার জন্যে ওকে এমন আরো শাস্তি পেতে হবে।ঘটনা তেমন কিছু না।আমার মা বাবার এমন পরিবর্তনের মূল কারন হল মিহিন।যত শলাপরামর্শ ওই দিয়েছে। ওর জন্যেই আমাকে বাজারে যেতে হচ্ছে।সেদিন বাসায় এসেই যখন শুনলাম মিহিন আর মা কথা বলছিল তখন আমার খুব ইচ্ছে হল একটু আড়ি পাতি।পাজি মেয়েটা কি বলছে সেটা শুনতে ইচ্ছে হল আমার।কিন্তু যখন ও বলল,"ঠিক করেছেন আন্টি! উনার সাথে এমনই করা উচিৎ। কাজকর্ম না করে খেয়ে খেয়ে ষাড় হচ্ছে একটা। এখন থেকে উনাকে দিয়েই কাজ করাবেন।এদের মত ছেলেদের এভাবেই শায়েস্তা করা উচিৎ।" কথাটা শুনার পরই আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তাহলে এই কারন।এ জন্যেই তো বলি আমার আলাভোলা মা টা হুট করেই এত চালাক হল কি ভাবে।তাই এই রিভেঞ্জটা নিলাম।সবে শুরু।সামনে আছেই।আর পড়ুক সামনে।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাসায় আসলাম।বেল বাজাতেই মা দরজা খুলে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছু সময়।তারপর সোজা রান্না ঘরে চলে গেল।কি হয়েছে জানি না তবে মায়ের চোখ বলছে কিছু একটু হয়েছে। খারাপ কিছু একটা। আমি রুমে ঢুকতেই দেখলাম বাবা সোফায় বসে আছে।গম্ভির হয়ে আছে উনার মুখ।কি ব্যাপার বাবা অফিস যায় নি।ও! আজ তো উনাদের অফ ছিল।কি একটা কারনে উনাদের আজ ছুটি দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু বাবাকে এত গম্ভির দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে? আমি কিছু বললাম না।নিজের রুমের দিকে যেতে থাকলাম।আমার রুমের দরজার সামনে যখন পৌঁছে গেলাম ঠিক তখনই বাবা আমায় ডাক দিলেন।আমি ধীর পাঁয়ে উনার সামনে গেলাম।উনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।চোখ বড় বড় করে মুখ লালা করে আমার দিকে তাকালেন।যেন আস্ত খেয়ে ফেলবেন।আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম।কিছু বলতে পারছি না।কেবল ঢোক গিলেছি কয়েকবার। বাবা বললেন,
:আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি?
:কি কি কি শুনেছ বাবা?
:তুই নাকি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াস? ক্লাস করিস না।আর নাকি কত গুলো  প্রেম করিস।
:কই না তো! আমি তো ঠিক মত ক্লাস করি।তুমি ভার্সিটি গিয়ে দেখতে পার। আর আমি কোন প্রেমটেম করি না।
:তাহলে এগুলো কি?
এই বলে তিনি ফোনে বেশ কয়েকটা ছবি দেখালেন।বললেন,
: এগুলো কি?
আমি ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছু সময়। আরে এ তো নিশু।ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।আরেকটা ছবিতে হাত ধরে আছে।এই ছবি তুলল কে?আর বাবাকেও বা দিল কে?আমি এবার সত্যিই অবাক হলাম। বললাম,
:বাবা ও আমার প্রেমিকা না।ছোট বোন বলে ডাকি ওকে!
:চুপ! একদম চুপ! আমাকে কি বোকা পেয়েছিস?আর মিহিন আমায় সবটা বলেছে।এও বলেছে যে তোরা দুজন নাকি আগে প্রেম করতি।এখন আর করিস না।তুই নাকি ব্রেক আপ নিয়েছিস! কথা কি সত্যিই।
:আরে না বাবা।কি...
:চুপ।বেয়াদব ছেলে।ছিঃ তোকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি।এই শিক্ষা পেলে তুমি।ভালো হয়েছে মিহিন আমাকে বলেছে আগে।তা হলে তুই তো পুরোই বখে যেতি।
:আমি সত্যি...
:দূর হ তুই আমার সামনে থেকে।যা! রুমে যা! স্টুপিড একটা।
আমি মাথা নিচু করে চলে আসছিলাম।আমাকে যখন বাবা ঝাড়ি দেয় তখন মা থাকে না আশেপাশে।ঝাড়ি শেষে আসে।যেমনটা এখন এসেছেন।বাবার জন্যে চা নিয়ে এলেন তিনি।যখন আমার রুমের দরজার সামনে চলে এসেছি তখন শুনলাম বাবা গুনগুনিয়ে মাকে বলছে "এখন মিহিনের বাবার সাথে কথা বললেই হল।মিহিনও রাজি হবে নিশ্চই। ওদের বিয়ে দিলে মন্দ হবে না।মেয়েটাও ভালো।কি বল।"
মা বললেন
"আমিও তাই ভাবছি।"
আমার মনে হল যে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিৎ। কেননা এই মেয়েকে বিয়ে করলে আমার জীবন আর জীনন থাকবে না।তেজপাতায় পরিনত হবে।আমি বললাম,
:ওই বজ্জাত মেয়েকে আমি বিয়ে করব না।
বাবা বললেন,
:চুপ! একদম চুপ।যা বলছি তাই হবে। তুই ঘরে যা।আর আগামি দুই ঘন্টা তুই আমার সামনে আসবি না।
কি আর করার।নিজেকে খানিকটা অসহায় মনে হল।তবে আমি নিশ্চিত যে বাবা কিংবা মা জোর করে কোন ভাবেই ওর সাথে আমার বিয়ে দিতে পারবে না।মোটেও না।তবে এই মেয়ে আমার এ অবস্থার জন্যে দাই।যে করেই হোক ওকে এর উপযুক্ত শাস্তি দিতেই হবে।তা না হলে এ মন শান্তি পাবে না।
.
চার পাঁচ দিন হল মিহিনকে দেখছি না।এদিকে আমি রিভেঞ্জ নিব বলে অপেক্ষায় আছি।কই ও।ওকে পাচ্ছি না কেন?কি হয়েছে ওর।কোথায় গিয়েছে? অসুস্থ হয়ে পড়ে নি তো? আমার টেনশন হল খানিকটা। আমি আশ্চর্য রকম ভাবে আবিষ্কার করলাম যে আমি মিহিনকে প্রচন্ড মিস করছি।ওর জন্যে আমার টেনশন হচ্ছে এখন।আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কেন আমার এমন হচ্ছে
অথচ সেদিনও আমি ওকে শত্রুর চোখে দেখতাম।আর এখন তেমন কিছুই মনে হচ্ছে না।কেবল একটা জিনিস ছাড়া।যে করেই হোক মিহিনের সাথে আমার দেখা করতে হবে।কথা বলতে হবে। যে করেই হোক।তা না হলে যেন আমি দম বন্ধ হয়ে  মরে যাব।লজ্জায় ওদের বাসায়ও যেতে পারি না।আন্টি আঙ্গেল আবার কি মনে করেন।
.
আমি যখন দরজা দিয়ে বের হলাম ঠিক তখনই দেখলাম মিহিনের বাবাকে।আমার দিকেই আসছেন তিনি।মুখে খানিকটা সংকোচ বোধ দেখা যাচ্ছে।কিছু বলবেন আমাকে। আমার সামনে এসেও তিনি কিছু সময় কিছু বললেন না।আমি বললাম,
:কিছু বলবেন আঙ্কেল?
:আসলে কিভাবে যে বলি? তুমি তো জানই! আমার একটা মাত্র মেয়ে! তাই প্রচন্ড জেদিও।যা বলবে তাই করবে।ইদানিং দেখছি ও খুব বাজে ব্যাবহার করে ঘরের সবার সাথে।এমনকি নিজের ছোট ভাইটার সাথেও।কি হয়েছে কিছু বলেও না।চুপচাপ বসে থাকে।কি যে হয়েছে ওর! কাল রাতে খুব জ্বর এসেছিল।জ্বরের ঘোরে তোমার নাম নিয়েছিল বেশ কয়েকবার। তোমার সাথে কি ওর কিছু হয়েছে?
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই বাবা কথা বলে উঠলেন। বললেন,
:আরেহ! আফজাল সাহেব যে! আশুন আশুন।আমি নিজেই আপনার কাছে যেতাম।যাক! আপনি চলে এলেন আগেই।
উনি কিছু বুঝলেন না।কেবল বাবার দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকলেন। বাবা বললেন,
:কি? বুঝতে পারছেন না তো? আশুন।সব বলছি।
এই বলে উনাকে বসার ঘরের দিকে নিয়ে গেলেন।যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
:তুই তোর কাজে যা।
আমার আবার কি কাজ।আমার তো কোন কাজ নেই। তাহলে বাবা কোন কাজের কথা বলছেন?
.
আমি যখন মিহিনের রুমে ঢুকলাম তখন দেখলাম ও খাটের সাথে হেলান দিয়ে দু'পা মেলে বসে আছে।কোলের উপর একটা বালিশ। আমাকে দেখতেই ও চেঁচিয়ে উঠল।বলল,
:এই! এই আপনি এখানে কেন হু! এখানে কি করছেন আপনি?
:আস্তে আস্তে এত চেঁচাচ্ছ কেন?
এই বলে আমি বিছানায় ওর পাশে বসলাম। ও খানিকটা অবাক মিশ্রিত রাগ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এর আড়ালে অনেক অভিমান জমা আছে সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।বললাম,
:জ্বর বাধালে কি ভাবে?
ও কিছু বলল না।চুপ করে থাকল।অন্যদিকে তাকাল ও।আমি আবার বললাম,
:আচ্ছা! সেদিন ফোন দিয়েছিলে কেন?
এটা বলে যেন আমি ওর রাগ আরো বাড়িয়ে দিলাম।ওর রেগেমেগে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছু সময়।আমি আবার বললাম,
:আম সরি! আসলে আমি ফোনটা ধরতে পারি নি। একটু ঝামেলায় ছিলাম।
এবার মিহিন আর নিজের রাগ ঠিক রাখতে পারল না আর।বলল,
:আমার ফোন ধরার সময় কোথায়! আপনার তো অনেক জিএফ আছে।তাদের সাথে থেকেই আপনার সময় পার হয়।আর তাছাড়া আপনি এখানে এসেছেন কেন! যান না! গিয়ে ওই জিএফ গুলোর সাথে আড্ডা মারুন।যত্তসব!
:কি যাতা বলছ।আমার জিএফ আসবে কোত্থেকে!
:ঢং কইরেন না।আমি সব জানি।
:তোমাদের মেয়েদের সমস্যা কি জানো! তোমরা একটু বেশিই বুঝ।
এই বলে আমি ফোন বের করে নিশি আর নিশাদের কয়েকটা ছবি দেখালাম।বললাম,
:এই মেয়েটা নিশাদ মানে আমার বন্ধুর প্রেমিকা। ওদের মাঝে ভেজাল হয়েছিল। সেটাই মিটিয়ে দিচ্ছিলাম।
:তাহলে ও আপনার হাত ধরল কেন? তারপর আবার জড়িয়েও ধরেছে।কি বজ্জাত মেয়ে।জানেন আমার তখন ইচ্ছে হয়েছিল ওই মেয়েটাকে গিয়ে কয়েকটা দেই।পুরো গা যেন জ্বলে যাচ্ছিল।অসহ্য লাগল ভীষন।বেয়াদব মেয়ে আমার জিনিসের দিকে নজর দেয়।কত বড় সাহস তার।তখন কেবল আপনি ছিলেন। তা না হলে ওকে আমি...
এত টুকু বলেই মিহিন জিহ্বায় কামড় দিল।তারপর নিজের দুহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেলল।লজ্জা পেল বোধ হয়।আমার থেকেও ভালো লাগল ব্যাপারটা।বললাম,
:কেন? আমায় কোন মেয়ে ধরলে তোমার জ্বলে কেন?
ও কিছু বলল না।চুপ করে থাকল কেবল।মাথা নিচু হয়ে আছে ওর।আমি মুখ টিপে হাসলাম কেবল।সত্যিই এই লজ্জা মিশ্রিত চেহারাটা আমার ভীষন ভালো লেগেছে।যেন আমার সব কিছু উজাড় করে দেওয়া যাবে এই চেহারাটার দিকে তাকিয়ে।বললাম,
:সেটা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু তুমি এগুলো আমার বাবাকে কেন বললে?
মিহিন আমার দিকে তাকাল হুট করেই।বলল,
:খুব রেগে গিয়েছিলাম।মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল।তারউপর আপনি আমার ফোনও ধরেন নি।তাই এসেই আপনার বাবাকে দেখালাম।আর ওগুলোও বানিয়ে বলেছি।জানেন এই জন্যেই আমার জ্বর এসেছে।রাগটা কোন ভাবেই কমছিল না।তাই মাথায় পানি দিয়েছি কেবল।তবুও কমে নি। তাই গোসল করেছি এক ঘন্টা ধরে।কোন লাভ হয় নি। এখনো কমে নি রাগ।
:তুমি জানো তুমি আমার কত বড় ক্ষতি করেছ?
:কি?কি করেছি? 
:আমার বাবা আর তোমার বাবা মিলে আমাকে মারার প্লেন করছে।
:মানে?
:মানে আমাদের বিয়ের আলোচনা করছে ওরা।
মিহিন যেন আকাশ থেকে পড়ল। চোখে জল চলে ওর চট করেই।বলল,
:কি কি বলছেন?
:যা বলছি তাই।
:সত্যিই! ইয়াহু!আমার যে কি খুশি লাগছে সেটা বলে বুঝাতে পারব না।
এই বলে ও আমায় জড়িয়ে ধরল।জড়িয়ে ধরেই কেঁদে দিল ও।আমি বললাম,
:পাগলি! কান্না করছ কেন?
:হঠাৎ এমন খুশির কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলাম না।চোখের জল গুলোও বিনা বাধাতে পড়ছে।
:এত ভালোবাস আমায়?
ও আমাকে ছেড়ে দিল।ছেড়ে দিয়ে মাথা উপরনিচ করল কেবল আমি ওর চোখের জল গুলো মুছে দিলাম। বললাম,
:যদি এতই ভালোবাসতে তাহলে এত প্যারা দিতে কেন শুনি?
:যেন বিয়ের পর আর না দিতে হয়।এখন সব ঠিক থাকলে বিয়ের পর আর প্যারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
:তা তুমি কি আগ থেকেই জানতে যে আমাদের বিয়ে হবে?
:হুম।আমার এমন কথা নেই যে বাবা শুনে নাই।আর আমি তো বেশি কিছু চাই নি কেবল নিজের ভালোবাসাকে চেয়েছি।
:যদি আমি না মানতাম
:তোমাকে মানতে বাধ্য করতাম।তুমি চিন না আমাকে।
:বাহ্! দারুন।তা এডভান্স প্যারা যেহেতু দিয়েছ সেহেতু এডভান্স...
আমার আর বলার প্রয়োজন হয় নি।বালিকা আমার চোখ দেখেই বুঝে নিল আমি কি চাচ্ছি।অতঃপর কোমল দু ঠোটের ঠান্ডা, গা শিউরে উঠা শিহরন অনুভব করলাম আমি কেবল। 
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url