.
৩
নাসা হতে বেশ ক'টা ভিডিও ছাড়া হল নাসার ওয়েবসাইটে। মিডিয়ায় প্রচার করা হল গ্রিন ওয়ার্ল্ড এর ভিডিও।সোশাল মিডিয়াতেও ঝড় তুলেছে ভিডিও গুলো।যে ভিডিও গুলো মহি করেছিল।এসব দেখেই মিডিয়া পাগল হয়ে খুঁজছে জামাল সাহেবকে।কিন্তু উনাকে কোথাও পাওয়া গেল না।এদিকে এসব দেখে আঁতকে উঠছে পৃথিবীবাসি।তাদের মনের মাঝে একটা ভয় ঢুকে গেছে।এর সপ্তাহ খানেক পর দেখা মিলল জামাল সাহেবের। খুব আর্জেন্টলি একটা মিটিং ডাকা হয়েছে।যেখানে নাসার বর্তমান শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানি "উইন ক্লার্ক" রয়েছেন।আরো বেশ ভালো ভালো বিজ্ঞানিরা রয়েছেন সেখানে।জামাল সাহেব এক এক করে নিজের সব গুলো পরিক্ষার রিপোর্ট বের করলেন।প্রথমে মাটির গুনগত মানের রিপোর্ট। অবশ্য টোটাল সব কিছুর রিপোর্টই আছে এখানে।পজিটিভ আর নেগেটিভ। তারপর কিছু গাছের বাকল এবং পরিশেষে যে প্রানিটা নিয়ে এসেছে তার সম্পুর্ন রিপোর্ট।তিনি এক এক করে প্রজেক্টরের মাধ্য সব তথ্য গুলো উপস্থাপন করতে থাকলেন।তিনি বললেন,
"আমরা সম্প্রতিতে একটা বড়সড় আবিষ্কার করেছি। এতে নাসার মর্যাদা কয়েক গুন বেড়ে গেছে।তাই আমরা সবাই খুশি। কিন্তু গ্রহটা আমাদের জন্যে যতটা খুশির বন্যা বয়ে এনেছে তার চেয়ে বড় দুঃখের বন্যা নিয়ে এসেছে।আমারা মানব জাতি তথাপি এই সমগ্র বিশ্ব আজ হুমকির মুখে।"
জামাল সাহেব এতটুকু বলে থামলেন। মিটিং-এ অবস্থি সকল বিজ্ঞানি
উনার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হুট করেই একজন বলে উঠল,
"আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন বলুন তো।প্লিজ একটু ক্লিয়ার করে বলুন।"
জামাল সাহেব লেপ্টপে কি জানি করলেন।এর পরেই প্রজেক্টরে আলোয় বেশ ক'টা ছবি ভেসে উঠল।জামাল সাহেব বলে উঠলেন,
"এটা হচ্ছে ওখানকার যে মাটি তার রিপোর্ট। আমরা খুব দুঃখিত এই কারনে যে আমরা ওখানে কোন পানির নাগাল পাই নি। তার আগেই আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়। তবে যে মাটি এনেছি সেটা অনেক উপকার করছে।এই মাটি গুলো হলদেটে।কারন এই মাটি তার গুনগত মান হারিয়ে ফেলছে।কিছু একটা যেন ওই গ্রহের মাটির রস গুলোকে ছুসে নিয়ে যাচ্ছে।তাই এটি কাদাটে থেকে হলদে হয়ে গিয়েছে।এটা হল ওই গ্রহের মাটির পি এইচ রিপোর্ট। যার মান ২.৩৪।যা থেকে বুঝা যাচ্ছে এই মাটি অম্লীয়।তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল মাটি অম্লীয় হলে সেখানে এত সবুজ গাছ কিভাবে টিকে আছে।আমি এর উত্তর এখনও পাই নি।তবে যে গাছের বাকল আমি নিয়ে এসেছি তা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে গাছ গুলো এসিড মাটির উপর টিকে থাকার যোগ্যতা রাখে।অবশ্য সেটার লিমিটেশনও আছে।মাটির এই এসিডিও মান যদি কখনও ১ পয়েন্টের নিচে নেমে আসে তাহলে ওখানকার সকল গাছ মারা যাবে।কারন ওই গাছ গুলো ১ পয়েন্টের নিচের পিএইচ মান সহ্য করতে পারে না।১ পয়েন্ট এর পিএইচ মাটির উপর টিকে থাকার ক্ষমতা সেই গাছ গুলো রাখে না।এখন কথা হল এই মাটি গুলোর পি এইচ মান কি আদৌ কমবে।সেটার উত্তরও আছে।আমি মাটির পিএইচ মান নির্ধারণ করার সময় একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে আমার কাছে যা মাটি ছিল সেগুলোর প্রতিটি মাটির কণা গুলোর পিএইচ মান এক না।প্রতিটি কণার মাঝে পিএইচ মানের পার্থক্য রয়েছে।আমি ভিন্ন ভিন্ন করে রিসার্চ করে দেখেছি।এটা হল তার রিপোর্ট। সব গুলো মাটির পিএইচ এক না।কারো ২.১৪।কারো আবার ফাইবও আছে।তাই আমার বিশ্বাস আমরা যদি আবার ওই গ্রহে যাই এবং সেখান থেকে কিছু মাটি নিয়ে আসতে পারি তাহলে মাটির পিএইচ মানের পরিবর্তন দেখতে পাব।কিন্তু সমস্যাটা সেখানে না। সমস্যা হচ্ছে এই পিএইচ মান কমে যাওয়া এবং গাছ গুলোর মৃত্যু হয়ে যাওয়া।যেখানে "দ্যা গ্রিন ওয়ার্ল্ড" এ বসবাসরত প্রানি গুলোর প্রধান খাবার হল এই গাছ গুলোর সবুজ পাতা।যা আমি প্রানীটি পর্যবেক্ষণ করে জেনেছি।এমনকি এদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না তবে এটাই সত্য যে প্রানি গুলোর প্রজনন ক্ষমতা এত বেশি যে এরা বছরে দুইবার বাচ্চা জন্ম দেয়।শুধু একটা বাচ্ছা নয়। আমার ধারনা মতে চার কিংবা পাঁচটার নিচে নয়। কারন যে প্রানী গুলো মেয়ে তাদের ডিম্বক এত বড় যে চার পাঁচটা বাচ্ছা সেখানে থাকা অসম্ভব কিছু নয়।ইভেন আমরা যে প্রানিটাকে এখানে এনেছি সেটা ছিল মেয়ে।কোন পুরুষ প্রানির সাথে ওর সদ্য মিলন হয়েছে।তাই আমরা তার পেটে তার ছোট ছোট বাচ্ছাদের পেয়েছি।পাঁচটা বাচ্ছা একসাথে।তাদের বয়স দেড় দুই মাস হবে।
এটা হল সেই মহিলা প্রানিটার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্ট। "
জামাল সাহেব থামলেন।একটু দম নিলেন তিনি। ততক্ষনে উপস্থিত বিজ্ঞানীগন তাদের সামনে ভেসে উঠা চিত্রটা ভেসে উঠল। সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছে।খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে তারা।জামাল সাহেব আবার বলা শুরু করলেন,
"একটি মহিলা প্রানি যদি এতটা বাচ্ছা দেয় তাহলে ভেবে দেখুন সেখানে কত মহিলা প্রানি আছে আর তারা প্রতিবছর কতগুলো বাচ্ছা ফোটায়। তাহলে যদি গাছ গুলো মারা যায় তাহলে তারা গাছের পাতা খেতে পারবে না। ক্ষুদায় পাগল হয়ে যাবার উপক্রম হবে।পাগল হয়ে তারা আমাদের পৃথিবির দিকে ছুটে আসবে।কারন একমাত্র সবুজ পাতা আমাদেই এখানেই পাওয়া যাবে। আপনারা ভাবছেন ওরা কিভাবে আমাদের এই বিশ্ব আসবে? আপনারা কি জানেন এই প্রানি গুলোর মেধা এত তীক্ষ্ণ যে এমন হাজারো রকেট তারা খুব কম সময়ে বানিয়ে ফেলতে পারবে। কারন এদের মেধা ক্ষমতা,দক্ষতা আমাদের মানুষের তুলনায় কয়েক গুন বেশি।এই হচ্ছে আমাদের নিয়ে আসা প্রানিটার ব্রেনের রিপোর্ট।" স্ক্রিনে একটা ব্রেনের চিত্র ভেসে উঠল।তার পাশে আরেকটা ব্রেনের চিত্র জামাল সাহেব বলে উঠলেন,
"এখানে ডানের চিত্রটা মানুষের আর বাঁয়ের চিত্রটা ওই প্রানিটার এবার আপনারাই বিচার করুন তাদের মেধার ক্ষমতা সম্পর্কে।মানুষের মস্তিষ্কের গঠন আর ওদের মস্তিষ্কের গঠনে কতটা পার্থক্য ।"
উনি আরো কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিলেন দুটো মস্তিষ্ক সম্পর্কে।
সবাই নিস্তব্দ হয়ে দেখছে কেবল।কিছু বলছে না।আসলে এই সময় কেউ কিছু বলার অধিকারে থাকে না।এটা এখানকার বর্তমান নিয়ম। কেউ যদি কিছু উপস্থাপন করে তাহলে তার উপস্থাপনার মাঝখানে কেউ কোন প্রশ্ন করতে পারে না।প্রশ্ন থাকলে সাথে সাথে নোট করতে হয় এবং বক্তব্যের শেষে এক এক করে প্রশ্ন গুলো করতে হয়।এটা এখানকার নিয়ম।
জামাল সাহেব আবার বলতে লাগলেন,
"তাছাড়া মাটির পিএইচ মান যদি এভাবে কমতে থাকে তাহলে ফিউচারে এই গ্রহটা ব্লাষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।০.০০০০ তে চলে এলে সেটা অবশ্যই ব্লাষ্ট হবে। আমি সিউর যে ঠিক তার আগেই তারা ওই গ্রহ ছাড়তে চেষ্টা করবে এবং আমাদের দিকে আক্রমণ করতে এগিয়ে আসবে।তাই আমাদের এখান থেকে যদি আরেক বার ওই গ্রহে যাওয়া যায়,গিয়ে যদি আবার কিছু মাটি নিয়ে আসতে পারি তাহলে খুব ভালো হবে। যার ফলে আমরা সঠিক তথ্যটা জানতে পারব। আমার বিশ্বাস আমি যেমনটা বলেছি তেমনটাই হবে।আর যদি তাই হয়ে তাহলে আমাদের তথা এই পুরো বিশ্ববাসি ধ্বংসের সম্মুখীন।দেটস অল।"
জামাল সাহেবের বক্তব্য শেষ।তিনি টেবিলের উপরে থাকা পানির বতল থেকে এক ঢোকে অনেকটা পানি খেয়ে পেললেন।উনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।পানির বতলটা রেখে তিনি উপস্থিত বিজ্ঞানিদের দিকে তাকালেন।একজন বলে উঠলেন,
"আপনার তথ্য গুলো যে সত্যি সেটা আমরা বুঝব কি ভাবে।"
জামাল সাহেব একটা ফাইল বের করলেন।বললেন,
"এই ফাইলটা দেখুন। সকল রিপোর্টের তথ্য এখানে আছে।আপনার চাইলে দেখতে পারেন।আর যদি এটাও না বিশ্বাস করেন তবে চলেন আমার সাথে ফরেনসিক ল্যাবে। নিজ চোখে দেখতে পাবেন। "
ফাইলটা তিনি এগিয়ে দিলেন।বিজ্ঞানী মাইকেল হুইস প্রথমে হাতে নিয়ে দখতে লাগলেন।তারপর তিনি ফাইলটা উইন ক্লার্ক এর কাছে দিলেন।তিনিও ফাইলটা ভালো ভাবে পরক্ষ করলেন।কিছু সময় সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল।সবাই উনার দিকে তাকিয়ে আছে।একটা শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে এখানে। কারন উনি যদি একবার মত দিয়ে দেন তাহলে আর কেউই না করতে পারবে না।তাই সবাই উৎসুক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছে।বিজ্ঞানী ক্লার্ক ফাইলটা টেবিলের উপর রাখলেন।শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন জামাল সাহেব্র দিকে।বললেন,
"আপনার ফাইলটা যথার্থ। একটু ভুলও আমি দেখতে পাই নি।আপনার এই জিনিসটা আমার বেশ ভালো লাগে আপনি নির্ভুল ভাবে কাজ করেন।তাই আমার মতে আপনি ভুল কিছুও বলছেন না।তবে আমরা এত তাড়াতাড়ি ওই গ্রহে আরেকটা রকেট পাঠাতে পারব না।আর তাছাড়া আমরা একবার গিয়ে ওই প্রানি গুলোকে ভড়কে দিয়েছি।তাই তারা সেই প্রতিশোধ নেওয়া জন্যে ওখানে ওঁত পেতে থাকবে।এবং আমরা সেখানে যাওয়ার পরেই আমাদের উপর আক্রমণ করবে। তারা অনেকটা সতর্ক হয়ে যাবার কথা। তাই চিন্তাভাবনা না করে হুট করেই কিছু করা ঠিক হবে না।আমরা সবার সাথে আলোচনা করে আপনাকে সিদ্ধান্ত জানাব।ঠিক আছে?"
জামাল সাহেব সবিনয়ে বললেন,
"জি স্যার! ঠিক আছে।সমস্যা নেই।তবে দ্রুত হলেই ভালো হয়।আসি! "
৪
জামাল সাহেব কে বেশ কদিন ছুটি দেওয়া হল|তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের দেশে ফিরে এলেন|হাজারো সৃতি,মায়া, ভালোবাসা জড়িয়ে আছে এই দেশে|দেশটার প্রতি একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে জামাল সাহেবের|তাই যখনই সুযোগ পান তখনই ছুটে আসে বাংলার তরে|বাংলা মায়ের কাছে ফিরে আসেন তিনি|যেখানে তার সকল আত্মিয়স্বজন রয়েছে|আছে একটা পাঁচ বছরের ছেলে ও একটা তিন বছরের ফুটফুটে কন্যা সন্তান|জামাল সাহেব প্লেন থেকে নেমেই জোরে একটা শ্বাস নিলেন|এয়ারর্পোট থেকে বের হয়েই জামাল সাহেব দেখলেন তার দুই বাচ্ছা ও অভিমানি স্ত্রী দাড়িয়ে আছেন|স্ত্রীর দিকে একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলেন তার দু চোখ ছলছল করছে|জামাল সাহেবকে দেখতেই তার বাচ্ছা দুটো 'আব্বু' বলে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল|জামাল সাহেবও ওদের জড়িয়ে ধরলেন|আলত করে কপালে চুমু খেলেন|ওদের নিয়ে এগিয়ে এলেন তার স্ত্রীর কাছে|মিসেস অর্পা তার স্বামির দিকে তাকলেন না আর|অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেন|জামাল সাহেব কাছে গিয়ে বললেন
"কেমন আছ?"
মিসেস অর্পা অন্যদিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বললেন
"ভালো|"
ব্যস আর কিছু বললেন না|চুপ হয়ে থাকলেন|এতে জামাল সাহেব একটু আহত হয়েছেন বটে|তবে কিছু বললেন না|
.
নিধি ও অনিক রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছে|সারাদিন বাবার সাথে দুষ্টামি করে ক্লান্ত তারা|তাই খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল ওরা|খাবার টেবিলে জামাল সাহেব আর অর্পা চুপচাপ বসে আছে|কেউ কোন কথা বলছে না|জামাল সাহেব খুব আশ্চর্য হলেন|এমনতো হওয়ার করা না|অন্তত অর্পার ক্ষেত্রে|মেয়েটা এত কম কথা বলে না|বেশ প্রানবন্ত ও|কি এমন হয়েছে যে অর্পা এত রেগে আছে|জামাল সাহেব খেতে বললেন,
"অর্পা! কি হয়েছে বল তো?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?"
অর্পা বেশ কিছুক্ষন কিছু বললেন না|হুট করেই উঠে গেলেন|বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে রুমে চলে গেলেন|জামাল সাহেব অবাক হয়ে দেখলেন কেবল|কিছু বললেন না|নিজের অবাক ভাব কাটিয়ে জামাল সাহেবও উঠে দাঁড়ালেন|নিজের প্লেট আর অর্পার প্লেট ধুয়ে গুঁছিয়ে রাখলেন|ডাইনিং টেবিলের সব কিছু গুঁছিয়ে রুমে গেলেন|অর্পাকে রুমে পেলেন না তিনি|বারান্দায় গিয়ে দেখলেন অর্পা বুকের উপর দুহাত বাঁজ করে তাকিয়ে আছে উজ্বল চাঁদের দিকে|জামাল সাহেব একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেন যে চাঁদের আলো পড়ে অর্পার চোখের কোনা চিকচিক করছে|
জামাল সাহেব হস্তদন্ত হয়ে বললেন,
"অর্পা কি হয়েছে তোমার|এমন করছ কেন?আমি কি কোন ভুল করেছি?"
অর্পা কিছু বলল না এবারেও|মুখটা অভিমানি করে রাখল|জামাল সাহেবের অবাক হওয়ার মাত্রা আরেকটু বেড়ে গেল|উনি অর্পাকে উনার দিকে ফিরিয়ে বললেন,
"কি ব্যাপার?তুমি কাঁদছ কেন?কি হয়েছে?"
অর্পা ভেজা গলায় বলল,
"তুমি আমার সাথে কথা বলবানা একদম|"
জামাল সাহেব বললেন,
"কেন?আমি আবার কি করলাম|"
"কি কর নি সেটা বল|আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি বা কেমন আছি একবার ফোন করে খবর নিয়েছ?এসব বাদ|একবার তো অন্তত ফোন দিবা|তুমি তো তাও কর নি|"
"এমন ভাবে বলছ যেন জিবনেও ফোন করি নি|মাত্র বিশ দিন হবে ফোন করি নি|আগে তো করতাম|"
"তোমার কাছে মাত্র মনে হচ্ছে?তুমি বিশ্বাস করবে না আমি কত টেনশনে ছিলাম|প্রতিটা দিন আমার কাছে মনে হয়েছে যেন এক যুগ|কাজ সেরেই বসে থাকতাম তোমার ফোনের আসায়|এই তুমি ফোন করবে বল|ফোন বেজে উঠলেই সব কাজ ফেলে চলে আসতাম ফোনের কাছে|না|তুমি ফোন কর নি|তুমি জান প্রতিটা রাতে আমার ঘুম যেতে হত এক অজানা ভয় নিয়ে|তোমার কিছু যদি হয়ে যেত?তাহলে আমি আমরা কি নিয়ে বাঁচব বল|জানো আমার মাঝে মাঝে খুব কান্না করতে ইচ্ছে হত|কি কপাল|সেটাও পারতাম না|বাচ্ছ দুটো হাজারো প্রশ্ন করত|ওরা কত কান্না
করেছে তোমার জন্যে|বাবা কই বাবা কই করে আমার মাথা খেয়ে পেলত|কত মিথ্যা বলছি ওদের|হুট করেই একটা মানুষ|এমন গায়েব হয়ে গেলে খারাপ লাগে না?কষ্ট লাগে না?টেনশন হয় না?এগুলো তোমার কাছে মাত্র মনে হয়?"
"এই দেখ|এই কান ধরেছি|আর কখনও এমন ভুল হবে না|প্লিজ!
"লাগবে না কান ধরা|তুমি যাও এখান থেকে|"
"কোথায় যাব আমি?"
"যেখান থেকে এসেছ সেখানে চলে যাও|"
"আচ্ছ|বাই|চলে যাচ্ছি|"
এই বলে জামাল সাহেব দাঁড়িয়ে থাকলেন|অর্পা কিছু সময় পর বলে উঠল,
"কই! যাচ্ছ না যে|"
"যেতাম তো|কিন্তু কেউ একজন চাচ্ছে আমি এখানে থাকি|তার পাশে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকি|"
"না! কেউ চাচ্ছে না|তুমি চলে যাও|"
"হুহ! বললেই হল|তার দু চোখ আমায় স্পষ্ট বলছে আমি যেন থাকি|কিন্তু সে আমার সাথে অভিমান করে দাঁড়িয়ে আছে|মুখে কিছু বলছে না|তবে চোখ অনেক কিছু বলছে|"
মিসেস অর্পা চুপ করে থাকলেন|কিছু বললেন না|জামাল সাহেব একটু এগিয়ে এলেন|অর্পার হাত ধরে বললেন,
"এত অভিমান করে থেক না|বল! কি করলে তোমার অভিমান ভাঙ্গবে|বল! "
"তোমাকে আমাদের সাথে থাকতে হবে|নতুবা আমাদেরকে তোমার সাথে নিয়ে যেতে হবে|"
"তোমাদেরকে নিয়ে যাওয়া সম্ভনা ওখানে|খুব রিস্কি ব্যাপারটা। তুমি তো জানই বেশ কিছু দিন আগে আমার উপর সেখানে হমলা হয়েছে|অল্পের জন্যে
গুলি লাগে নি|আবার কখন হামলা করে তার ঠিক নেই|আমার এমন সাফল্য দেখে কিছু সাদা চামড়ার বিনির হিংসে হচ্ছে|তারা এখনও আমার পিছু ছাড়ে নি|তারউপর তোমাদের নিয়ে গিয়ে তোমাদের জিবন কিভাবে হুমকির মুখে পেলতে পারি বল?"
"ওখান থেকে চলে আসছ না কেন তুমি|কি লাভ ওখানে থেকে নিজের জিবনকে ধ্বংসের মুখে ফেলা?"
"ওখানে থাকার করনেই তো আজ আমি এত বড় আবিষ্কার করতে পেরেছি|এই দেশে হলে তো এটা সম্ভব হত না|"
"তোমার জিবন থেকে কি ওই আবিষ্কার বড়? যেখানে তোমার জিবনের সাথে আরো তিনটি প্রান জড়িয়ে আছে|তারা তোমার কাছে বড় নয়?"
"তুমি জান না ওখানে আমার সময় গুলো কিভাবে কাটে|প্রতিটা মূহুর্তে তোমাদের কথা মনে হয়|মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় এই কাজ ছেড়ে চলে আসি একেবারে|কিন্তু এর প্রতি একটা নেশা চড়ে গিয়েছে|নিজের দেশকে সমগ্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরার নেশা|তুমি কি তা চাও না অর্পা?"
"আমি চাই|অবশ্যই চাই|তোমাকে টিভিতে দেখে সবাঈ যখন তোমার সুনাম করে তখন আমার গর্ব হয়|কিন্তু এর জন্যে আমি তোমাকে হারাতে চাই না|কখনই না|"
"তবুও তো আমাকে এগিয়ে যেতে হবে|ভয় পেয়ে...|"
"আর কোন কথা নয়|তুমি এখানে ফিরে আসবে এবং এই দেশে যা আছে তা দিয়ে তুমি এগিয়ে যাবে|আমি এবং আমরা সবাই আছি তোমার সাথে|"
"আচ্ছা দেখি|"
"উহু! কোন দেখা দেখি নেই|যা বলছি তাই|"
জামাল সাহেব মৃদু হাসলেন|মিসেস অর্পার অভিমান ভাঙ্গাতে পেরে খুশি তিনি|বললেন,"আচ্ছা ঠিক আছে|তোমার কথাই সই|তবে আমাকে আগে এই দেশ তথা এই বিশ্বকে বাঁচাতে হবে|"
"পৃথিবি কে বাঁচাতে হবে?বুঝলাম না|"
"হুম|তাই|শুন..."
জামাল সাহেব এক এক করে সব কথা তার স্ত্রীকে বললেন|মিসেস অর্পা যতই শুনছেন ততই যেন অবাক হচ্ছেন|হুট করেই উনার মনে একটা ভয় ঢুকে গেল|অজানা ভয়ে উনার তনুমল হূদয় শিহরিত হল|জামাল সাহেব সেটা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন|আস্তে করে স্ত্রীর হাত ধরলেন|বললেন,
"ভয় পেও না|আমি আছি|"
মিসেস অর্পা মৃদু হাসলেন|আস্থা ভরা দৃষ্টিতে তাকালেন স্বামির দিকে|বললেন,
"তুমি আছ আমার সাথে|আর থাকবেও|এই বিশ্বাস আমার আছে|এই বিশ্বাসের উপর ভর দিয়েই তো তোমার সাথে আমার পথ চলা|"
জামাল সাহেব কিছু সময় তাকিয়ে থাকলেন|স্ত্রীর দিকে|এতে মিসেস অর্পা একটু লজ্জা পেলেন|জামাল সাহেব হুট করেই বলে ফেললেন,
"খুব ভালোবাস আমায় তাই না?"
মিসেস অর্পা কিছু বললেন বটে|তবে লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেলেন|জামাল সাহেব একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেন তার স্ত্রীকে|একটা অদ্ভুত জিনিস তিনি আবিষ্কার করলেন|চাঁদের মিষ্টি আলো আর লজ্জার লাল আভা মিলে মিসেস অর্পার মুখে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যে সৃষ্টি হচ্ছে|উনি উনার স্ত্রীকে এত সুন্দর অবস্থায় কখনই দেখেন নি|জামাল সাহেব মহিত হয়ে মিসেস অর্পার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন|
.
হুট করেই জামাল সাহেবের ফোনে একটা কল এল|জামাল সাহেব স্তম্ভিত হয়ে ওপাশের কথা গুলো শুনলেন কেবল|মিসেস অর্পা রান্না ঘর থেকে এসেই দেখলেন জামাল সাহেব স্তম্ভিত হয়ে আছে|উনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন যে উনার স্বামি আর থাকছে না|খুব তাড়াতাড়িই চলে যাবেন|জামাল সাহেব ঠিক তাই করলেন|অস্রু শিক্ত চোখে বিদায় নিলেন নিজ দেশ থেকে|
.
চলবে...
.
দুঃখিত। আসলে এইট প্রথম একটা সাইন্স ফিকশন লেখা আমার।ভুল আর অপূর্নতায় ভরপুর গল্পটা।আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ
0 মন্তব্যসমূহ