Bangla Golpo: অদ্ভুত ছেলেটি ১
বাংলা ছোট গল্প |
Bangla Golpo: অদ্ভুত ছেলেটি
তাসফি আহমেদ
প্রথম পর্ব
গ্রীষ্মের আবির্ভাব ঘটল।গরম থেকে শীতই অনেক ভালো বলে মনে করে রুপা।গরমটা একেবারেই সহ্য করতে পারে না মেয়েটা। গেল কয়েকদিন ধরে গরম একটু বেশিই পড়েছে।একটু বেশি গরম পড়লেই বৃ্ষ্টি আসে।এটা স্বাভাবিক। ছোট বেলা থেকেই এমনটা দেখে আসছে রুপা।ওর মা ওকে কথাটা বলেছিল। ঘুম থেকে উঠেই বারান্দায় চলে আসল রুপা।হুম বৃ্ষ্টি আসবে।আকাশ টা কেমন কালো হয়ে আছে ।ঘন কালো মেঘে আকাশটা ছেয়ে আছে। কিছুক্ষন পরই বৃষ্টি নামবে। রুপার মাঝে কেমন জানি উত্তেজনা শুরু হয়ে গেল। ওর বিরক্তভরা মুখে হাসির রেখা দেখা দিল।কিছুটা আনন্দেরও। কত দিন পর বৃ্ষ্টি দেখবে রুপা।তাই প্রচন্ড কৌতুহল সৃষ্টি হচ্ছে ওর মাঝে। বৃ্ষ্টি যখন নামে, তখন তা দেখতে খুব ভালো লাগে।আনন্দধারা বয়ে যায় রুপার হৃদয়ে। শীতল অনুভুতি হয়।বৃ্ষ্টির ফাঁকে ফাঁকে যখন স্নিগ্ধ, মন মুগ্ধকর হিমেল বাতাস বয়ে সেটা একেবারে রুপার হৃদয় ছুয়ে যায়।আহহ! কি অসাধারণ সেই বাতাস। রুপা দৌড়ে গিয়ে ফ্রেশ হল।তারপর রুপা বারান্দায় গিয়ে চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিতেই রিপা কে ডাক দিয়ে বলল এক কাপ চা দিয়ে যেতে।রিপা ওদের বাড়িতে কাজ করে।কাজ করে বললে ভুল হবে।পার্ট টাইম কাজ করে।অল্প কিছু কাজ করে চলে যায় অন্য বাসায়।সেখানেও এমন অল্প অল্প কাজ করে রিপা।তবে খুব লক্ষি, ভালো ও ভদ্র স্বভাবের মেয়ে ও।খুব চতুরও বটে।
আকাশটা আরেকটু কালো হল।শান্ত, মৃদু বাতাস বয়ে গেল।রুপা চোখ বুঝে তা অনুভব করল। খুব ভালো লাগল সেটা রুপার কাছে।তারপরেই আস্তে আস্তে বৃষ্টির ফোটা বড় বড় করে পড়ছে।কিছু সময় পরই বৃষ্টির ফোটা ঘন হয় পড়তে শুরু করল।রুপা তা মন মুগ্ধ হয়ে দেখছে।ছয় তলার ডান পাশের বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে রুপা।মৃদু বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে।ওকে সুন্দর দেখাচ্ছে।খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে।যে কোন ছেলে দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে রুপার।
ওদের বাসার বা 'পাশের বিল্ডিংটা পাঁচ তলা।রুপাদের বারান্দা থেকে সেই বিল্ডিং এর ছাদটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
রিপা চা দিয়ে চলে গেল।রুপা গরম চায়ে মুখ দিচ্ছে আর বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে।হঠাৎ-ই খুব জোরে দরজা খোলার আওয়াজ হল। সম্ভবত স্টিলের দরজা।তা না হলে এত জোরে আওয়াজ হত না।শব্দের উৎসের দিকে চোখ দিতেই রুপা দেখল,তাদের বা 'পাশের বিল্ডিংটার ছাদটায় কেউ একজন আসল।একটা ছেলে।পরনে একটা নীল শার্ট। একটা প্যান্ট। দেখে মনে হয় খুব ময়লা হয়ে গিয়েছে ওর শার্ট আর প্যান্ট। মুখের দাড়ি আর গোঁপ বেশ বড় ।তাকে আরকেটু ভালো করে পরক্ষ করলে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সে খুব তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসেছে এবং কিছুটা হাপিয়ে গিয়েছে।মুখে খানিকটা ক্লান্তির ছাপ। কিছুক্ষন পরেই রুপা দেখল ছেলেটা দুহাত দুদিকে দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে।রূপা কিছুটা অবাক হল।কারন কোন ছেলেকে ও কখনও এমনভাবে বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নি।ছেলেটা নড়ছেও না।রুপা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকাল।তারপরেও রুপা কিছুক্ষন পর পর সেদিকে তাকায়।ছেলেটা জায়গা থেকে নড়ছে না।চোখও খুলছে না।বৃষ্টিতে ভিজছে ।রুপা এবার উঠে এসে ছেলেটাকে আরেকটু কাছ থেকে দেখতে লাগল।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রুপা। তবুও ছেলেটা নড়ে না।রোবটের মত দাড়িয়ে আছে।রূপার অবাক হওয়ার মাত্রাটা আরেকটু বৃদ্ধি পেল।রুপা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।মৃদু বাতাসে রুপার খোলা চুল গুলো উড়ছে।রুপা শান্ত দৃষ্টিতে ছেলেটার ভিজে যাওয়া দেখছে।শার্ট প্যান্ট ভিজে চুপশে গিয়েছে।চুল গুলো লেপ্টে গিয়েছে।ছেলেটার বন্ধ চোখ গুলো খুব ভালো লাগল রুপার।অনন্য শিহরণ হল ওর হৃদয়ে ।
বৃষ্টি থেমে গেল।আকাশটা এখনও খানিকটা কালো হয়ে আছে।তবে আগের মত না।রুপা ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখল ছেলেটা চলে গিয়েছে।রুপা সেদিকে আশ্চর্য ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
আজ ছয় মাস হয়েছে রুপারা এই বিল্ডিং এ উঠেছে।আশেপাশের এলাক গুলোও ভালো মত চেনা হয়ে গিয়েছে রুপার।এই বিল্ডিং, পাশের বিল্ডিং এরও অনেক লোককে চিনে ও।তবে কথা হয় নি আরকি।রুপা ভাবে এই অদ্ভুত ছেলেটাকে তো আগে কখন দেখি নি।কে এই ছেলে?
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।রুপা তাড়াতাড়ি উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল।চা বানাবে ও।ওর বাবার জন্যে চা বানাবে।ওর বাবার নাম জোনায়েদ আহমদ ভুঁইয়া । সরকারি চাকুরী করেন তিনি।।তাই খুব ব্যাস্ত থাকেন তিনি। তবে নিজের মেয়েকে কম সময় দেন না । খুব টাইম মেন্টেন করে চলে জোনায়েদ আহমদ। অনেকটা গোছাল বলা যায়।রূপাও হয়েছে ওর বাবার মত।
রুপা চা বানিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়তে গেল।রুপার বাবা নামাজ পড়ে এসে বসার ঘরে বসলেন।ওদের বসার ঘরটা অনেক বড়।তিনি সোফায় বসতে বসতে টিভির রিমোট নিলেন। সবুজ বাটনটা চাপ দিতেই টিভি চলে উঠল।তিনি হাঁটুর উপর হাঁটু দিয়ে বসে আছেন।আর চ্যেনেলে ঘুরাচ্ছেন।কিছুক্ষণ পরেও যখন রুপা আসছে না,তখন তিনি রুপা বলে ডাক দিলেন।রুপা ও পাশ থেকে বলল,
আসছি বাবা আসছি।
তিনি আবার টিভির দিকে তাকালেন।কিছুক্ষণ পর রুপা আসল। একে একে সব কিছু সামনের ড্রেসিং টেবিলটাতে রাখল।দুইটা চায়ের কাপ।একটা প্লাক্স।একটা বাটি ডাকনা দেওয়া।আর
দুইটা চামুচ।ডাকনা দেওয়া বাটিটা দেখে তিনি কিছুটা অবাক হলেন।এই চিনামিক্সের বাটিটা তিনি রুপার মা নিশির সাথে কিনেছে।নিশির খুব পছন্দের বাটি ছিল ওটা। তিনি কিছুটা অবাক হয়ে বললেন,
এইটাতে কি রে মা ?
এই বলে তিনি ডাকনা টা সরালেন।রুপা পাশ থেকে বলে উঠল,
ফুডিং! এইটা ফুডিং বাবা!
তিনি আরেকটু অবাক হয়ে বললেন,
কিরে তুই ফুটিং বানানো কবে শিখলি?
এই তো সেদিন।ইউটিউব থেকে।
তিনি কিছুটা নরম স্বরে বললেন,
জানিস তোর মাও না খুব ভালো ফুটিং বানাত।আমার খুব ফেভারিট ছিল এটা।ওর ও।
রুপা বলল,
আমি জানি বাবা।বাবা তোমার কি মায়ের কথা খুব মনে পড়ে?
তিনি মুখ কালো করে বললেন,
মনে তো পড়েই। এতটা বছর ছিলাম।কিন্তু সামান্য একটু ভুলের জন্যে সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল?
এই বলে উনি একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লেন।কিছুটা হতাশাও দেখা যাচ্ছিল উনার মুখে।
রুপা কিছুটা উৎসুক ভঙ্গিতে বলল,
বাবা তুমি কিন্তু আজও আমাকে বল নি যে মা কেন তোমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে ?
তিনি চুপ করে রইলেন।রুপা বাবার চুপ করে থাকা দেখে আর কথা বাড়াল না।থাকুক না।তার কিছু অতি গোপনীয় কিছু তার কাছেই থাকুক।সব গোপন কথা শুনতে হবে তেমন তো কথা না।রুপা ফুটিংটা ওর বাবার দিকে বাড়িয়ে দিল।তিনি চামুচ দিয়ে সেটা খাচ্ছেন।তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছেন।রুপা তা আনন্দ সহকারে দেখছে।খুব খুশি লাগছে রুপার কাছে।কিছুটা হলে ওর বাবার মাঝে ও প্রশান্তির ছাপ দেখল।
রূপার মায়ের চলে যাওয়ার কারনটা রুপা জানে না।ওর মা যখন চলে যায় তখন রুপা নবম শ্রেনিতে পড়ে।সেদিন ক্লাস থেকে ফিরেই দেখে ওর বাবা সোফায় মুখ গোমরা করে বসে আছে।মাকে যখন পুরো ঘরেও খুঁজে পেল না তখন ও ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করে।ওর বাবা বলে,
তোর মা চলে গেছে।আমাকে আর তোকে একা রেখে চলে গিয়েছে।আমি এখন কি করি বল।কি করি!
এই বলে উনি কান্না শুরু করে দিলেন। রুপা অবাক হয়।সে ভেবে পায় না কি করবে।নিজে কান্না করবে নাকি বাবাকে শান্তনা দিবে সে ভেবে পায় না।কেন জানি সেদিন ওর বাবাকে দেখে খুব মায়া হল ওর।মায়ের কাছে ফোন করে চলে যাওয়ার কারন জিজ্ঞেস করে।তিনিও বলতে নারাজ। উল্টা তিনি বললেন,
তুই চলে আয় মার কাছে।মা তোকে খুব ভালো রাখব।ওই বেয়াদবের সাথে তুই থাকিস না।চলে আয় মা।এখানে তোর নানা নানি সবাই আছে।।এবং...
রুপার মা অনর্গল অহেতুক বকছেন দেখে রুপা ওর মাকে থামিয়ে বলল,
ভালো থেক মা।রাখলাম।
এই বলে ফোন কেটে দেয় ও।এখন অবশ্য ওর মায়ের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়।তিনি মাঝে মাঝে ওর সাথে দেখাও করেন।আর যাই হোক উনিও তো মা!
'
এই কয়েকদিনের ব্যস্ততায় রুপা অনেকটাই ভুলে যায় সেই অদ্ভুত ছেলেটার কথা।মনে পড়তেই ছেলেটার চোখ দুটো ভেসে উঠল রুপার চোখে।চোখ গুলো বন্ধ ছিল। তারপরেও কেন জানি রুপার কাছে সেই চোখ দুটো খুব ভালো লাগল।
রাতে পড়ছিল রুপা।হঠাৎই আকাশে আওয়াজ পেল ও।ঘুড়ুম ঘুড়ুম আওয়াজ হচ্ছে।রুপা দৌড়ে বারান্দায় গেল।হুম।বৃষ্টি আসবে।রুপা দৌড়ে গিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এল।ততক্ষনে বৃষ্টি প্রায় চলেই এসেছে।রুপা আজও আবিষ্কার করল ছেলেটাকে।ছেলেটার ছায়া মূর্তি রুপা স্পষ্ট দেখতে পেল ।তাদের বিল্ডিং এর ছাদে।দাড়িয়ে আছে।সহজ সরল ভঙ্গিতে। আজ হাত দুটো নামান।চোখ দুটো খোলা।এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে।রুপা অদ্ভুত ভাবে আবিষ্কার করল যে সে ছেলেটার দু চোখ স্পষ্ট দেখতে পারছে।কেন? অন্ধকারে তো ওর চোখ দেখার কথা না।তাহল ও দেখছে কেন? প্রেমে পড়লে নাকি মানুষের মাঝে এমন অদ্ভুত শক্তি দেখা যায়।তাহলে কি রুপা ছেলেটার প্রেমে পড়েছে? এ বিষয় নিয়ে রুপাকে কেমন জানি চিন্তিত দেখাচ্ছে।তারপরেও ও ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।।চোখ দুটো ভালো লাগলেও ছেলেটার ড্রেস ভালো লাগেনি রুপার।এই দুই দিন দেখল ছেলেটাকে।দুই দিনে একই ড্রেস? কিছু একটা ভেবে রুপা আবার ছেলেটার চোখের দিকে তাকাল।এ যে হারিয়ে যাবার উপক্রম। রুপা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল।আবার তাকাল।আবারো চোখ ফিরিয়ে নিল।নাহহ! রুপা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না।তবুও রুপা তাকাল চোখ দুটোর দিকে। রুপা তাকিয়ে আছে।চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না আর।হয়ত এখানেই কানেক্ট হয়ে গিয়েছে।দিন দিন রুপার ছেলেটার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
রাতে বিছানায় এপাশ ওপাশ ঘুরল রুপা।তবে ঘুম এল না।চোখ দুটো বন্ধ করলেই যেন চোখ দুটো ভেসে উঠে।রুপা উঠে লাইট জ্বালাল।এক গ্লাস পানি খেল। কিছুক্ষণ হাঁটা হাঁটি করল রুপা।তখনই রুপা ওর বাবার গলার আওয়াজ পেল।
:কি রে মা ঘুমাস নি?
রুপা দরজা খুলে দেখল ওর বাবা দাঁড়িয়ে আছে।রুপা বলল,
:শুয়েছিলাম বাবা।তবে ঘুম আসছে না।তুমি ঘুমাও নি?
:নারে!তোর মা যাওয়ার পর আর ঠিক মত ঘুমাতে পারি না।তুই জলদি ঘুমিয়ে পড় মা।তা না হলে শরির খারাপ করবে।
এই বলে তিনি চলে গেলেন।রুপা তার বাবার গমন পথের দিকে তাকিয়ে আছে।
'
:ছেলেটা কে চিনিস?
নিপা চা দিয়ে যাওয়ার সময় রুপা কথাটা বলল।আজও বৃষ্টি হচ্ছিল।অভ্যাগত ভাবে রুপা বৃষ্টি দেখতে বসল।কিন্তু আজও যখন দেখল ছেলেটা বৃষ্টিতে ভিজছে তখন কেমন জানি খটকা লাগল রুপার কাছে।কারনটা জানা খুব দরকার। তাই নিপাকে কথাটা বলল।কারন ও আশ পাশের অনেক ঘরে কাজ করে।নিশ্চুই ছেলেটার সম্পর্কে কিছু হলেও জানার কথা।
:কোন ছেলেটা আফা!
রুপা খানিকটা বিরক্ত বোধ করল।এই আফা ডাকটা ওর কাছে কেমন জানি লাগে।নিপা কয়েকবার নিষেধও করেছে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।
:এই তোকে না বলছি আমাকে আফা বলবি না।আর কত বার বলব।আপু বলতে পারিস না?
নিপা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছে যে রুপা বিরক্ত বোধ করছে এবং সামান্য রেগে যাচ্ছে।নিপা জানে রুপা রাগলে কি হবে। তাই সে সহজ ভাবে বলল,
:ভুল ওইগেছে আপু।আর ওইব না।তা আপু কি এই পোলার কথা কইছেন।
ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল নিপা।
:হুম। ওই ছেলেটাই।চিনিস?
:হ।তারে তো চিনি।খুব বালা মানুষ।
:তা ছেলেটা বৃষ্টি এত ভিজে কেন?
:কে জানে।তয় ভাই জান কিন্তু খুব বালা মানুষ। আচার ব্যবহারও ভালো।
:নাম কি জানিস?
:হ।জানিতো।তাসফি। পুরা নাম শাকের আহমদ তাসফি। তয় আম্নে এত প্রশ্ন করতাছেন কেন? ভাইজানকে কি আম্নের বালা লাগছে?
মৃদু হেসে কথাটা বলল নিপা।
রুপা ঝাড়ি দিয়ে বলল,
:বেশি বুঝিস ক্যান? যা এখান থেকে? যাহ?
:আন্নেই তো থাকতে কইলেন।
:এখন আমি তোকে যেতে বলছি।যা?
:যাচ্ছি।যাচ্ছি! রাইগেন না আপু।
এই বলে নিপা চলে গেল।রুপা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
আল্লাহ এই মেয়ে এত কথা বলে কিভাবে।পুরো মাথা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।
মাথা থেকে হাত সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল ছেলেটা নেই কি অদ্ভুত।
'
আজ আরেকটা রাত কাটবে নির্গুম ভাবে।কি করবে রুপা।ইজি চেয়ারে বসে চিন্তা করতে থাকে রুপা।কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে যায় সে নিজেই টের পায় না।
রুপা আজ ভার্সিটি যায় নি।বসে আছে নিপার জন্যে।কখন নিপা আসবে।কখন ও তাসফির সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবে।কতক্ষণ নিজের রুমে পায়চারী করে।তারপর বসার রুমে এসে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।রুপা সকালে উঠে নিজেই বাবার জন্যে নাস্তা বানাল।তারপর বাবাকে অফিস পাঠিয়ে দিল।রুপার বাবা নিপার আচরণে কিছুটা অবাক হলেও কিছুই বললেন না।এটা যে মঙ্গলকর সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন।
রুপা সকল কাজ করে বসে আছে নিপার জন্যে। কখন সে আসবে।তাকে আজকে কাজ করতে দিবে না।আজ যতক্ষণ থাকে ও ততক্ষণ তাসফির সম্পর্কে শুনবে রুপা।কিন্তু রুপাকে হতাশ হতে হল। আজকে নিপা আসে নি।মনে হয় আর আসবে না।মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় রুপার। কাজের সময় কিছুই ঠিক মত হয় না।সব কিছু সময় বুঝে।রুপা খুব দ্রুত নিপাকে ফোন দিল।কয়েকবার রিং হওয়ার পর যখন ধরল তখন নিপা ফোনের ওপাশ থেকেই শুনতে পেল রুপার ঝাঁঝাল কন্ঠ।
:এই নিপা তুই আজ আসিস নি ক্যান? এত কাজ কি তোর বাপে করবে? হ্যাঁ।
:....
:চুপ করে আছিস কেন? কথা বল?
:আপু মা টার কি জানি একটা রোগ দেয়া দিছে।তাই হেরে লইয়া ডাক্তারের কাছে আইছি।
:ওওও।সরি আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারি নি সরি রে।
:আন্নে না বুইজতে পাইরলেও আঁই কিছুটা বুঝতে পাইচ্ছি।
:কি?
:তাসফি ভাইয়ের সম্পর্কে কিছু জানতে চাই তাই না?
:তুই কেমনে বুঝলি?
:কাইল আমুনে।হেকতে বুঝায় কমু।
এই বলে ফোন কেটে দিল নিপা।রুপা কিছুটা অবাক হয়।কি ভাবটাই না দেখাইল মেয়েটা।
'
অনেক দিন পর আজ রুপা নিজের ডায়েরি লিখতে বসেছে।কিছুটা হলেও খারাপ লাগছে রুপার কাছে।আজ যখন বৃষ্টিতে তাসফি ভিজতে ছিল তখনই রুপা দেখতে পেল তাসফি হাঁটু ভেঙ্গে বসে আজর ধারায় কাঁদতে শুরু করল।মাঝে মাঝে দু একটা চিৎকারও দিয়েছিল।কি ভয়ংকর সেই আর্তনাদ। যেন বুকে চেপে থাকা হাজারো কষ্ট বেরিয়ে আসছে।বাঁধ ভাঙ্গা কষ্ট। কেন জানি চীৎকারটা ঠিক রুপা হৃদয়ে লাগল খানিকটা ব্যাথা অনুভব করল রুপা।সেটাই আজ লিখতে বসছে রুপা।সাথে একটা প্রশ্ন।তাসফি কেন এত কষ্ট ভরা কান্না করছিল?
'
:ভাইজান কিন্তু বালা মানুষ। তবে...?
নিপা শান্ত ভঙ্গিতে কথা বলল।রুপা ততটা অস্থিরতা নিয়ে বলল,
:তবে?:আসলে মাস ছয়েক আগে ভাইজান কোত্থাইকা যেন হস্তদন্ত হয়ে বাসায় আসে।আই তখন তাদের ঘরের ফ্লোর মুছতাছি।হে আইসাই রুমে গিয়া দরজা আটকাইয়া দিল।
এই বলে নিপা থামল।রুপা আরো অস্থিরতা নিয়ে বলল,
:তারপর?
:তারপর থাইকাই সে কেমন জানি ওই যায়। বেকের লগে বাঝে ব্যবহার করে। ঠিক মত খায় না।আর বৃষ্টি আইলেই খামি ভিজে।আর রাইতে নাকি উনার রুমের থাইকা কান্নার আওয়াজ আইসে।
:কি বলিস? তাকে দেখে তো তেমন মনে হয় না।
:কি জানি।তবে আমার মনে হয়ে কি আপু তারে নিশ্চই ভুতে ধরছে। তা না হইলে কেও এমন হাগলামি করে?
:ধুরর! কি যা তা বলছিস। যা তো আমারে একলা থাকতে দে।
:হা। বুঝি আপু।সব বুঝি।
:কি বুঝছ?
:অনেক কিছু।আম্নের চোখ দেইখাই বইলা দেওয়া যায়।
:কিভাবে?
:চোখে ভাষা দেইখা আফা আপনের চোখের ভাষ।
:তুই আবার আফা বলছিস।
:মাপ করবেন। গেলাম। আম্নের আবার মেজাজ গরম হইলে তাল ঠিক থায় না।
:কি বললি তুই? ওই শুনে যা।কি বললি?
তার আগেই নিপা দৌড়ে স্থান ত্যাগ করে।
'
কিছুদিন পর,
একদিন রুপা বসে বসে বৃষ্টি দেখতে ছিল।তাসফিও তখন মেঘে ভিজতেছিল।রুপা তাসফির দিকে তাকিয়ে রইল।যেন হাজার বছরের চেনা এই তাসফি। যতই দেখে ততই ভালো লাগে রুপার। তাই সে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর রুপা দেখল তাসফি ছাদের উপর পড়ে গিয়েছে। একেবারে নিথর হয়ে পড়ে রইল।রুপা বুকের ভিতরটা খানিকটা নড়ে উঠল। হারিয়ে ফেলার ভয়টা নাড়া দিয়ে উঠল রুপার ভিতর। রুপা আর তাকিয়ে না থেকে দৌড় দিল।প্রানপনে ছুট দিল রুপা।যেন কোন অতি প্রিয় জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে।
'
দ্বিতীয় পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন প্লিজ।খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ