গল্পঃ নিতুর ভালোবাসা

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo.


গল্পঃ নিতুর ভালোবাসা 


খুব অন্ধকার।কারেন্ট টা ছিল এতক্ষন।কিন্তু এখন নেই।নেহাত গ্রাম বলেই এমন লোডশেডিং মেনে নিচ্ছে রুপা।সে থাকে শহরে। তাই লোডশেডিং এর সাথে এতটা পরিচিত নয় সে।পড়া লিখা এই শেষ হল বলে।ওর সামনে বসে আছে তাসফি। গ্রামের ছেলে ও।বেশ ফর্সা ওর চেহারা।গায়ে একটা কালো টি-শার্ট।পরনে পেন্ট। চুল গুলো গোছানো। তাসফি বসে বসে ভাবছে রুপা এটা কি পরলো।এক সম্ভবত পালাজু না কি জানি বলে এটাকে ।আমার ঠিক মনে নেই। আর একটা শার্ট পরেছে।ছেলেদের শার্ট মেয়েরা পরতে এই আমার প্রথম দেখা।আরো শার্ট ওর হাঁটু অব্ধি।না ততটুক নয়।একটু উপরে।তবে এই বেশে ওকে রূপবতী লাগছে। হৃদয় কেড়ে নেওয়ার মত রূপবতী। তাসফির ভাবনার ছেদন ঘটে রুপার ডাকে।  রূপা বলল,
:কি নিবি? চা? না কপি?
আমি নির্লজ্জের মত বললাম,
:কপি  হলে বেশ হবে।
ও মৃদু হেসে বলল,
:আচ্ছা!
চেয়ার ছেড়ে ও চলে গেল।কপি আনতে। মেয়েটার সাথে আমার ছোট বেলা থেকেই পরিচয়। দির্ঘ দশটি বছর ছিলাম ওর সাথে। ছিলাম বলতে এক সাথে পড়া লিখা করতাম। ওর প্রতিটি প্রয়োজনেই আমার নিদারুণ ভুমিকা ছিল।কিছু খেতে ইচ্ছে করলেই আমাকে বলবে।যাই হোক , মূল কথা হল ওর সাথে আমার চলচলটাই বেশি ছিল।ঘুমানো টা ছিল আলাদা।ওদের বাসায় থেকেই পড়ালিখার বন্দবস্ত করে বাবা।আমিও না করি নি।তখন পড়ালিখাটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।এভাবেই এক সময় মনে হয় আমি ওকে ভালোবাসি।যখন ওরা চলে যায় তখনও আমার মনে হত আমি ওকে ভালোবাসি।যাওয়ার সময় সে কি কান্না।নাক কান সব লাল হয়ে গিয়েছে কান্না করতে করতে। আমি শুধু ওকে বললাম, "ভালো করে পড়ালিখা করিস "তোর মা বাবা যেটাতে খুশি হয় তুই তাই করিস। "
ও শুধু মাথা উপর নিচ করল।তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
যাই ভালো থাকিস। নিজের খেয়াল নিস। আমি কিছু বললাম না।দু ফোটা জল পেললাম। ও চলে গেল।আর দেখি নি ওকে।এর কিছুদিন পর্যন্ত আমার মনে হত আমি ওকেই ভালবাসি। কিন্তু তারপর? তারপর এটা আবেগ ছিল সেটা বুঝতে পারলাম। এতদিন ওর সাথে থাকার পর একটা মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। শুধু এতটুকুই।ভালোবাসা এত সহজে হয় না।তারপরেও মনে হত আমি ওকে ভালবাসি। কিন্তু যখন মনে হত এই বয়সে যাই হয় সব আবেগ তখন ভালবাসা পালাতো।তবে প্রথম প্রথম ওকে খুব মিস করতাম। পরে নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।আর রূপাও যোগাযোগ করে নি পরে।কাজে ভিড়ে সব হারিয়ে যায়।
রুপা কপির মগ নিয়ে এসেই দেখে তাসফি খুব মনযোগ দিয়ে কি জানি ভাবছে।।একদিকে তাকিয়ে ভাবছে। রুপার খুব ইচ্ছে হল ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে। ইচ্ছেটা অবশ্য অপূর্ন রাখল না।খুব মন ভরে দেখল।কত দিন দেখেনি ছেলেটা কে।কেমন জানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। নাহ! তাকিয়ে থাকলে হবে না।
:নে! কপি নে।
:ধন্যবাদ
:কি এত ভাবছিস? কোথায় হারিয়ে গেলি।
:তোর কথাই ভাবছিলাম।
:আমার কথা?
:হু।
:কি ভেবেছিলি?
:তোকে দেখতেই  মুছে যাওয়া সৃতি গুলো আবার নেড়ে উঠল।
:মুছে পেলেছিস সৃতি গুলো?
:কিছু সৃতি মুছে পেলার চেষ্টা করলেও মুছে পেলা যায় না?
:চেষ্টা করেছিস নাকি?
:হুম অনেক।
:তুই এত নিষ্ঠুর?
:নিষ্ঠুরতার কি পেলি রে?
:তুই সৃতি গুলো মুছে পেলার চেষ্টা করেছিস।
:তুই মনে রেখেছিলি?
একথা শুনার পর রুপার আর কিছু বলল না।পড়ালিখা নিয়ে এতই ব্যাস্ত ছিল যে হারিয়ে যাওয়া সৃতি গুলো আর খুলে দেখে নি।যেভাবে রেখেছে সেভাবেই পড়ে ছিল মনে ডায়েরী তে।
:তোর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে।
:বিশ্বাস কর আমি বিন্দু পরিমাণ সৃতি ভুলি নি।হ্যাঁ এটা সত্য যে কখন হারিয়ে যাওয়া সৃতি গুলো মনে করার চেষ্টা করি নি।
:তাহলে কে নিষ্ঠুর?
:দুজনেই
এই বলে দুজনেই হেসে উঠল।
হাসি থামিয়ে রুপা বলল,
:তা করছিস কি?
:এই গ্রামে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেখাশুনা করছি।
:তার মানে তুই শিক্ষক?
তাসফি মৃদু হাসল। রূপাও! হাসি থামিয়ে রুপা বলল,
:তা মাষ্টার মশাই কেমন চলছে?
:বেশ ভালোই।তোর কি খবর?
:এই যা দেখছিস!
:এত শুকিয়ে গেলি যে?
:মেডিকেলের স্টুডেন্ট। বুঝিস-ই তো।
:তা তো বটেই।
:তোর স্বপ্ন টা?
:সব স্বপ্ন তো আর পূরন হয় না?
:তুই তো ভালো স্টুডেন্ট ছিলি।বিসিএস-এ তো টিকে যেতি।
:মাস্টার্সটা পাশ করতেই বাবার ধন সম্পদ পুরিয়ে গেল।আবার বিসিএস?
:পরে আর চেষ্টা করিস নি?
:এখনো করছি।এই চাকরিটা পেয়েছি মাস খানেক হল।তবে এর প্রতি মায়াটা পড়ে গিয়েছে। অন্য কিছু করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।ছোট ছোট বাচ্ছা গুলোর সাথে খুব ভালোই লাগে।তুই কি করছিস?
:পড়ালিখা শেষ।চাকরির অফার আসছে।তবে সেগুলো করব না।
:সেকি? কেন?
:ভাবছি গ্রামেই কিছু একটা করব।গরিব মানুষ গুলোর জন্যে কিছু করার প্রচেষ্টায় আছি।
:আমি শুনেছি মানুষ শহরে গেলে আর আসতে চায় না।তুই তো তার উল্টো।
:তুই জানিস আমি কেমন।
:তা ঠিক।
:তা বিয়ে টিয়ে কি করার ইচ্ছে আছে,?
:আর বিয়ে?
:মানে?
:বিয়ে সাদি করার ইচ্ছে নেই রে।
:ছেঁকা টেকা খেয়েছিস নাকি?
:নাহহ! তেমন কিছু না।
:তবে কাউকে ভালবাসিস?
রুপা খুব উৎসাহের স্বরে কথা গুলো বলছে। ও চাচ্ছে যেন এর উত্তর না হয়।যার জন্যে এত ত্যাগ সে যদি অন্য কাউকে ভালবাসে তাহলে তা কখনই মেনে নেওয়া যায় না।ওর বুক কাঁপছে। কি জানি বলে তাসফি। রুপা আবার বলল,
:কি হল। বলিস না যে?
:নাহহ!
বেশ খুশি হল ও।খুব আনন্দ হচ্ছে ওর।রুপা খুব মজা নিয়ে বলল,
:এত সুদর্শন একটা ছেলেকে কেউ কি ভালবাসার প্রস্তাবও দেয় নি?
:সে আর বলতে। পেয়েছি কয়েকটা। তবে তাদের মাঝে একজন ছিল যাকে আমি ভালবাসি।
আনন্দের ঘরটা নিমিসেই ভেংগে গেল।
দুঃখের বাসা তৈরি হল।খুব দুঃখ।রুপা কেঁদে দিল।কয়েক ফোটা জল ওর গাল বেয়ে পড়ল।তাসফি ওর সামনে থাকা সত্ত্বেও দেখতে পেল না যে রুপা কান্না করছে।তাসফিও কান্না করছে।তবে তা অন্য কারো জন্যে।রুপা তা দেখতে পেল না। কারন খুব অন্ধকার চার পাশে।এরা কান্না করে।তবে আওয়াজ হয় না।তাই কেউ বুঝতে পারে না।
দুজনেই চুপ।ভেজা কন্ঠে রুপা বলে উঠল,
:কে সে?
এই বলেই সে চুপ হয়ে গেল। আর কথা বলল না।কথা বলবে তাসফি। কারন এইবার কথা বলার পালা তাসফির।
:নিতু রানি দাশ।আমাদের সাথেই ভার্সিটিতে পড়ত।
রুপার খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে যে তুই শেষ মেষ কোন হিন্দু মেয়ের সাথে? কিন্তু কিছুই বললনা।
তাসফি বলল,
:আমি ভার্সিটি গেলে আসেপাশে  তেমন কিছুই খেয়াল করতাম না।যত দুষ্টামি বন্ধুদের সাথে ক্লাসেই করতাম। তাই ক্লাসের একটা মেয়ে যে আমাকে মাঝে মাঝে লুকিয়ে দেখত তা আমি খেয়াল করতাম না।আমাদের যখন পরিক্ষা শুরু হল তখন আমার ঠিক পিছনের সিটে একটা মেয়ে বসেছে।নাম নিতু রানি দাশ।পড়ালিখায় বেশ ভালো।আমি আর ও পরিক্ষার সময় খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই।একে অপরকে খুব হেল্প করতাম। তবে মজার কথা হল ওর সাথে আমার পরিক্ষার সময়েই বেশি কথা হত।ক্লাসে কিংবা বাইরে তেমন কোন কথাই হত না।আমি আমার মত ও ওর মত।তবে ওর সাথে পরিচয় হবার পরেই দেখতাম ও আমাকে দেখছে।চোখা চোখি হলেই একটা হাসি দিত।আমিও তার সাথে সাথে একটা মৃদু হাসি দিতাম।আমি ওকে খুব কম সময়েই হাসতে দেখতাম। কখনই বেশি হাসত না ও।আমার সাথে চোখা চোখি হলেই হাসত। বেশ ভালোই লাগত।
অনার্স প্রথম বর্ষের পরে ওর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়।কথা বলতাম। হাসতাম। দুষ্টামি করতাম। আমি আর ও না।সাথে আরাফাত, মিহিন,রিপাত, রুহি,লুবনা, তারেক,রাহুল এরা সবাই ছিল।আড্ডা দেওয়া সময় নিতু সব সময় আমার পাশেই বসত। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাতো।ধরা পড়ে গেলে বলতাম,
:কি রে? তাকিয়ে আছিস যে?
ও লজ্জা পেয়ে নিচের ঠোট খানা দাত দিয়ে চেপে ধরে চাপা হাসি দিত। ওর এই হাসিটাই আমার বেশ ভালো লেগেছিল সেদিন।ও লজ্জা পেয়ে বলত,
:এমনি।
আমি যখনি বুঝতে পারি ও আমার প্রতি দুর্বল আর আমি ওর প্রতি তখনি আমার পথটা ভিন্না করে পেলি।আর মাঝে আমার বড় তপাত। সবচেয়ে বড় কথা হল
ও হিন্দু আমি মুসলিম।।আমরা শুধু কষ্টই পাব।এর চেয়ে বেশি কিছু না।আমাদের কখনই মিল হবে না।জানিস আমি চেষ্টা করলেও ওকে এড়িয়ে চলতে পারতাম না।কিভাবেই বা পারব।  ও সব সময় আমার পাশেই থাকত। আমি বলতে পারতাম না যে তুই আমার সাথে হাঁটবি না।তুই অন্য কোথাও যা।কিন্তু বলতে পারতাম না।বিবেক বাধা দিত। 
৩য় বর্ষের শেষ দিকে ও আমাকে প্রপোজ করে।আমি ওকে বেপারটা বুঝাই।কিন্তু না সে বুঝবেই না।নিতু বলে ও নাকি মুসলিম হয়ে যাবে।তবুও যেন ওকে আমি মেনে নেই।কিন্তু আমি না করে দেই।কারন ওর বাবা -মা কিংবা আমার বাবা-মা কেউই বেপারটা খুব সহজে নিবে না।সমাজ তা মেনে নিবে না।জানিস ও খুব কান্না করত। খুব। ভার্সিটিতে সবার সামনে আমার পাশে বসে কান্না করত।আমি বুঝাতাম।কিন্তু না সে বুঝবে না।৪র্থ বর্ষের শেষে প্রায়।বিদায় অনুষ্ঠান হচ্ছে।সবাই হরেক রকমে সেজেগুজে এসেছে।নিতুও! খুব মায়াবী লাগছিল ওকে।মন চাচ্ছিল খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি খুব ভালবাসি তোকে।কিন্তু না।আমি বলতে পারি নি।আমি চলে গেলাম সেখান থেকে।ওর আশেপাশেও থাকতাম না।কষ্ট হত।অনুষ্ঠান চলছে। আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে।হঠাৎ-ই মেসেজ এর টোন বেজে উঠল। নিতুর মেসেজ।
:কই তুই? একটু  ১১০ নং রুমে আসতে পারবি?
আমি লিখলাম
:কেন? 
:আসতে বলছি আসবি।আবার কেন কিসের?
আমি কিছু লিখলাম না।আরাফাত কে নিয়ে রওনা দিলাম।সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় দেখলাম লুবনা দাঁড়িয়ে আছে।নিতুর সাথে এসেছে নিশ্চই। আমি কিছু বললাম না।লুবনার মনটাও কেন জানি খারাপ মনে হচ্ছে। আমি আর আরাফাত যখন উঠতে যাব তখন ও বলে উঠল,
:আরাফাত তুই এখানে থাক। ওকে যেতে যে।
আমি বললাম 
:কেন?
ও মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে বলল,
:নিতু বলেছে।
আরাফাত নিজেই নেমে গেল আমি কিছুই বলি নি।আমি উপরে উঠতে উঠতে ভাবতে থাকলাম কি হতে যাচ্ছে। আমার খুব ভয় করছে।১০৮ নং কক্ষ পেরুতেই নয় কক্ষের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ আমাকে হেচকা টান দিল।একেবারে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।আরে নিতু দরজা আটকালো কেন?
:কিরে দরজা আটকালি যে?
:আমার মন চাইছে তাই।
:সবাই কি ভাববে।
:কে কি ভাবল তা দিয়ে আমি কি করব? আমি কিছু বললাম না।ও আমার সামনে আসল।দুপাশের কলার টা চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে আমাকে চেপে ধরল।আমি ঘেমে গিয়েছি।ভয়ে ভয়ে বললাম,
:কিরে এমন করছিস কেন?
ও তার উত্তর না দিয়ে বলল,
:এত ভালোবাসিস বলিস নি কেন?
:এর উত্তর তোর নিশ্চই অজানা নয়।
:আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
:বেশ তো।করে নে।তার জন্যে এত কিছুর কি দরকার।
:তোর কি হবে? তুই থাকতে পারবি?
:আমরা পুরুষ জাতি অনেক কিছুই আছে যা না পারলেও পারতে হয়।
:কিন্তু আমি পারব না রে। তোকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে ভাবতেই পারি না।
:না তোকে পারতেই হবে। তোর বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করতেই হবে।
ও আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
:সেদিন বিয়ে নয়।আমার লাশ বের হবে আমাদের ঘর থেকে।
আমার বুকটা কেন জানি কেঁদে উঠল। কি বলে পাগলি মেয়ে টা।আমার জন্যে নিজের প্রান দিবে? এত পাগলি হলে চলে।কেউ আমাকে এত ভালোবাসে এতেই আমি অনেক খুশি।আর কি লাগে। আমি ওকে ছাড়িয়ে ওর এক হাত আমার মাথায় নিয়ে বললাম,
:যদি সত্যি ভালোবাসিস তবে বল নিজের কোন ক্ষতি করবি না? বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবি?
ও ঝট  হাতটা নামিয়ে নিল।আমি বললাম  
তাহলে কি আমাকে ভালোবাসিস না?
:একটু মরতেও দিবি না নাকি? মরেই শান্তি পেতাম।এখন কি সেটাও দিবি না।
আমি বললাম,
:সত্যি ভালবাসিস না?
এ কান্না করতে করতে কাঁপা কাঁপা হাতটা আমার মাথায় রাখল।আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।লাল হয়ে গিয়েছে।আমি আর পারছিলাম না।নিজেও কেঁদে দিলাম।
ও বলল,
:একটা আবদার রাখবি?
:বল। দেখি পারি কি না।
ওর হাত আমার মাথাতেই ছিল। হাতটা নামিয়ে কানের পাশ দিয়ে গলা আনলো  অন্য হাতও উঠালো।দুহাত দিয়ে গলা চেপে ধরল।অনাকাংক্ষিত কিছু ঘটতে যাচ্ছে।জিবনের প্রথম এমন কিছু হতে যাচ্ছে।পুরো শরিরটা শিউরে উঠল।গরমের মাঝেও শীতল অনুভূতি।কতক্ষণ যে এভাবে ছিলাম ঠিক মনে।অন্য কিছু করে নি ও।এই একটা কিসই চাইছিল ও। জানিস এখনো আমি প্রতিদিন এক গহন্টা ওকে মনে করি।এখনো ওর কথা ভেবে কান্না করি।
এই শেষ।আর কোন শব্দ নেই।দুজনেই চুপ। দুজনেই কান্না করছে।কিন্তু আওয়াজ হচ্ছে না।তাসফি বলে উঠল,
:কিরে কান্না করছিস যে,,,,?
:তুই কি আমাকে এত অন্ধকারের মাঝে দেখছিস?
:না তবে অনুভব করছি। ছোট বেলার সেই আবেগ থেকে।
:ছোট বেলার আবেগ?
:নাহ।কিছু না।গেলাম।ভালো লাগছে না।
:কই যাচ্ছিস।আমার উত্তর দিয়ে যা?
:এর উত্তর আমার কাছে নেই।গেলাম।
অন্ধকারের আভায় মিলিয়ে গেল তাসফি। কষ্ট হচ্ছে ওর।ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।এমনটাই করে আসছে ও।রুপার কথা ভাবছে।ও কান্না করছিল। আমি বুঝি।সব বুঝি।বুঝার বয়স আমার হয়েছে।
.
তাসফি বাচ্ছাদের পড়াচ্ছে।সবাই পড়ছে।সব স্টুডেন্টরাই ওর ভক্ত।স্যার বলে না।ভাইয়া বলে ডাকে।তাসফিও তাদের সাথে রসিকতায় মেতে উঠে।এতে একটু হলে কষ্ট লাগব হয়। তাসফি পড়াচ্ছে।হঠাৎ-ই রুপার আগমন। রুপা ঢুকতেই  বাচ্ছার দাড়িয়ে গেল।
তাসফি বিস্মিত হয়ে বলে উঠল,
:কিরে হঠাৎ এখানে?
:তোকে আর এই বাচ্ছা গুলোকে দেখতে এলাম।
:দাঁড়া পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
সবাই শুন ইনি হচ্ছে মিস রুপা।তোমাদের,,,,,
আমি কিছু বলার আগেই ও বলে উঠল,
:তোমাদের ভাবি।মানে তোমাদের তাসফি ভাইয়ের হবু বউ।
আমি জানতাম এমন কিছুই হবে।রাত থেকেই বেপারটা আমাকে ভাবাচ্ছে।
আমি আস্তে করে বললাম,
:পারবি?
:তুই পাশে থাকলে সবই পারব।
.............সমাপ্ত.......
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url