গল্পঃ ভ্রম

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo.


গল্পঃ ভ্রম

২য় ও শেষ অংশ 


:বাহহ! আপনার চেহারাতো খুব সুন্দর।
আরেকটা কমেন্ট হচ্ছে
:আমি তো আপনার উপর ক্রাস খেলাম
আরেকটা হচ্ছে
:আপনাকে দেখে মনে হয় না যে আপনি এক বাচ্ছার মা!
তারপর আরো কত কমেন্ট।একটা কমেন্ট দেখে আমার খুব খারাপ লাগল। কমেন্ট টা কি সেটা বলব না।তবে বাজে একটা। পিসি টা বন্ধ করে মিহিন কে নিয়ে না খেয়েই শুয়ে গেলাম।
মিহিন কে শোয়াতেই ও কান্না শুরু করে দিল।সেকি কান্না।আমি থামাতেই পারছি না।।হঠাৎ-ই রুহি রুমে ঢুকল।
:বাচ্ছাটাকেও একটু সামলে রাখতে পারো না।কি যে  কর না তুমি? দেখি দাও তো।
আমি ওকে রুহির কাছে দিয়ে দিলাম।রুহির কাছে যেতেই মিহিনের কান্না বন্ধ হয়ে গেল।কি অদ্ভুত বেপারটা। এটাই মায়ের  বড় গুন।এমন কান্ড দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল।তবে রুহির প্রতি রাগ আমার বিন্দ মাত্রও কমে নি।
আমার জন্যে না হোক,অন্তত মিহিন এর জন্যে হলেও রুহি কে দরকার।তাই ওকে কিছু বললাম না।
রুহি মিহিন কে নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করা শুরু করে দিল। আমি ওর পাশ কাটিয়ে ছাদে চলে আসলাম। রুহির এমন আচরন সত্যি আমাকে ভাবাচ্ছে।কি হয়েছে ওর? এমন করছে কেন? গ্রামের মেয়ে ও।খুব সহজ সরলও বটে।আমারি দোষ।কেন যে ওকে আইডিটা খুলে দিলাম।এখন আমাকেই এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। ছাদে দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভাবলাম।নাহহ।ছাদেও ভালো লাগছে না।রুমে গিয়ে ঘুমাতে হবে।সরকারি চাকরি আমার।কাল শুক্র বার।শনিবারেও বন্ধ আছে।তাই ভালো করে ভেবে চিন্তে ওকে বুঝাতে হবে।এখন ঘুমাব।খুব ঘুম পাচ্ছে। একটা ঘুম দিব। একেবারে সকাল ১০টা ১১টা যতটুকু যায়।রুমে যাওয়ার সময় দেখলাম ও খাবার রেডি করছে।আমি ওকে বললাম,
:আমি খাব না।
:কেন?
:খেতে ইচ্ছে করছে না।
ও প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে রইল।আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
কিছুক্ষন পর রুহিও আসল।চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে পড়ল।
মাঝ রাতে আমার মনে হল আমার বুকের উপর কেউ আছে।আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম রুহি আমার বুকের উপর শুয়ে আছে।আমার ছোট লোক বলে আবার আমার বুকেই শুয়ে আছে।ও আমাকে ফকির বলেছে।কথাটা মনে পড়তেই আমি ওর মাথাটা আমার বুক থেকে নামিয়ে ওর বালিশে রেখে দিলাম।ও অস্ফুট স্বরে কি জানি বলল।আমি ঠিক বুঝলাম না।মাথাটা বালিশে রাখার পর ও হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।ও আবার ধরল।আমি আবার ছাড়িয়ে নিলাম।ও ঘুমের ঘোরেই এমন করছে।কয়েকবার আমি ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।কিন্তু কোন কাজ হল না।ও আবার আমাকে জড়িয়ে ধরল। এমন ভাব করছে যে আমাকে ওর লাগবেই।আমি পিছন ফিরে শুলাম। ও পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি আর ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম না।
.
:তাসফি! তাসফি! উঠ! সকাল হয়ে গিয়েছে।আর কত ঘুমাবে? উঠ?
:........
:এই তাসফি? উঠ
:হুম...
:উঠ।সকাল হয়ে গিয়েছে।খাবে চলো!
:কি হয়েছে? সকাল সকাল এমন শুরু করছ কেন? জানো না যে আজ অফিস বন্ধ?
:তো কি হয়েছে? নাস্তা করতে হবে না। আর আমি ঠিক করছি আমরা আজ ঘুরতে যাব।ঘরে একা একা বোর হয়ে যাচ্ছি।
:না।আমি কোথাও যেতে পারব না। তুমিও কোথাও যেতে পারবে না?
:প্লিজ চলোই না।গেলে কি হয়?
আমি কয়েক মিনিট ভাবলাম যে কথা গুলো ওকে বলতে হবে।তার জন্যে এটাই মুখ্যম সুযোগ।
নাস্তা করে দুজনে রওনা দিলাম।আমাদের নিজস্ব গাড়িতে।ও ড্রাইভার কে একটা রেস্টুরেন্ট এর নাম বলল।আমি বললাম,
:রেস্টুরেন্ট-এ কেন?
:আমার এক বান্ধুবি আসবে।ওর সাথে দেখা করব।
:কথা ছিল ঘুরতে যাওয়ার।
:হুম!  আমরা তো ঘুরতেই যাচ্ছি।
মেজাজটাই বিগড়ে গেল।আমি গাড়ির এক পাশে চলে এলাম।জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি।ও বলে উঠল,
:তোমার কি মন খারাপ?
:হুম
:বলছি তোমার কি মন খারাপ?
:নাহ! মন খারাপ হবে কেন?
:তোমাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
:নাহহ! কিছু না!
:তুমি যেতে না চাইলে আমরা আবার বাড়ি ফিরে যাই।
:নাহহ! তা লাগবে না।যেতে যাতে চাইছো যাও।
:নাহহ! তোমার মন খারাপ।তাই যেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি মনে মনে বললাম,
এত আলগা ফিরিত যে কোথা থেকে আসে।
:নাহহ!চল! আমি ঠিক আছি!
:সত্যি তো?
:হুম!
:তাহলে কাছে এসে বস।
অগত্যা ওর পাশেই বসলাম। 
.
আমরা গাড়ি থেকে নামতেই আমাদের সামনে একটা কালো কার এসে দাঁড়ালো।সেখান থেকে একটা মেয়ে নামলো। টাইট ফিটিং এক জামা পরেছে।তার উপর এভারেস্ট এর মত উঁচু তার জুতা। চোখে সানগ্লাস।। ঠোটে গাঢ় লিপস্টিক। আর আটা ময়দা তো আছেই। সে গাড়ি থেকে নেমেই রুহির সাথে কুশল বিনিময় করল।রুহিও!
গাড়ি থেকে আরেকজন নামল।সম্ভবত মেয়েটার স্বামী। দেখে মনে হয় নেশা দ্রব্য সেবন করে।চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।তবে প্যান্ট শার্ট বেশ দামি মনে হচ্ছে।সে এসেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল । আমিও সায় দিলাম।কুশল বিনিময় করলাম।
.
সবাই এসে বসল।আমি বললাম,
:কি খাবেন বলেন
মেয়েটা বলে উঠলো,
:আরে ভাইয়া রাখেন।আগে কথা বলে নি।
:আপনাদের যা ইচ্ছে।
: তো আপনি কি করেন ভাইয়া?
:এই একটা ছোট খাটো সরকারি চাকরি করি।
:যারা সরকারি চাকরি করে তারা একটু কিপ্টা হয়।
আমি ওর দিকে তাকালাম। তবে কিছু বললাম না।মেয়েটা বলে উঠল,
:এত কৃপণতা করবেন না।ও যা চায় দিবেন।বউকে দিবেন না তো কাকে দিবেন।
:হু
:আপনাকে দেখেও কিন্তু মনে হয় আপনি কৃপণ। আমার স্বামীর দিকে তাকান।টাকা হাতে থাকলেই কেবল উড়ায়।এইতো সেদিন একটা ডায়মন্ড এর রিং দিয়েছে।
আমি কিছু বললাম না। আমি রুহির দিকে তাকালাম। ও একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার মেয়েটার দিকেও তাকাচ্ছে।মেয়েটা আবার বলে উঠল,
:এই রুহি শুন না! সেদিন যে শাড়িটা তোকে পাঠিয়েছিলাম জানিস তার দাম কত?
:কত?
:পনেরো হাজার। সেটা রবিন আমাকে কিনে দিয়েছে।ওফ শাড়িটা যে দারুন রে! আমি পরার পর রবিন তো চোখ ফেরাতেই পারছে না।
রুহি বলল,
:হুম।
:তোর কথা বল?
:আমার কথা আর কি বলব? যা দেখছিস তাই?
:হুম তাও ঠিক।তোর কপালটাই খারাপ । এমন এক পরিবারে গেলি।
মেয়েটা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল।আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।বললাম,
:আমি একটু আসছি । আপনারা চালিয়া যান।
এই বলে চলে আসলাম।আর কত অপমানিত হব।আসার সময় শুনলাম মেয়েটা বলছে,
:তোর স্বামি কেমন জানি? খেত মার্কা।বলদ।
আরো কিছু বলছিল  আমি চলে আসাতে শুনতে পেলাম না।খুব আশ্চর্য লাগছে যে রুহি বিন্দু মাত্র প্রতিবাদ করল না? রাগটা আবার বেড়ে গেল।বাইরে গিয়ে সিগারেট ধরালাম। ভালো লাগছে না
কিছুক্ষন পর রুহির ফোন।
:হুম বল।
:কই আসো না কেন?
:কেন? আর কি অপমানিত হওয়ার বাকি আছে?
:প্লিজ চলে আস।আমরা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি।প্লিজ চলে আসো।
আমি ফোনটা কেটে দিলাম।
.
গিয়ে দেখলাম ওরা বসে আছে।আমি বসতে যাব তার আগেই মেয়েটা বলে উঠল,
:ভাইয়া কি খাবারের বিল দেওয়ার ভয়ে চলে গেলেন নাকি।
আমি মৃদু হেসে বললাম,
:নাহ।তেমন কিছু না।একটু ফ্রেশ হতে গেলাম আর কি।কিছু মনে নিবেন না।আর বিল দেওয়ার মত আমার যথেষ্ট টাকা আছে।বিল কেন? আপনাদের আজেকের দিনের যত খরচ হবে তার বিল দেওয়ার মত টাকাও আছে।কত খরচ করবেন আপনারা।দশ হাজার? বিশ হাজার? হা হা হা।এগুলো আমারে কাছে শুধু হাতের ধুলাবালি মাত্র।
এই বলে রুহির দিকে তাকালাম। ওর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমি আবার বললাম,
:আপনি যতটা ভাবছেন ততটা কৃপণ আমি নই। খেয়ে নিন।খাবার ঠান্ডা হয়ে আছে।
এই বলে আমি আমার প্লেট টেনে নিলাম। আরেকটা অদ্ভুত জিনিস হল মেয়েটা এত কথা বলল, কিন্তু ওর স্বামি টু-শব্দও করল না।কেমন আজিব বেপার। পুরাই মেয়েটার বিপরীত।
আমি আবার বললাম,
:নিন! নিন! শুরু করুন।
আমি খাওয়া শুরু করলাম।ওরাও শুরু করল।
খাওয়ার পর আমি বললাম,
:বিলটা কিন্তু আপনার এই কিপ্টা ভাইয়াই দিবে।
মেয়েটার স্বামি বলে উঠল,
:নাহ! তা কি করে হয়।বিলটা আমিই দিব।
:আপনি তো দুহাতে টাকা উড়ান।আজ তাদের একটু শান্তি দিন।
তারা চলে গেল।আমি আর রুহি বসে রইলাম।রুহি ঠিক বসে নেই।মোবাইলে কি জানি করছে।
কিছুক্ষন পর, একটা ছেলে এসে বলল,
:আপনিই কি রুহি জাহান?
রুহি তাড়াতাড়ি বলে উঠল,
:হুম! আমিই।বসুন।
:ধন্যবাদ!
:তা কেমন আছেন?
:এইতো ভালো। আপনি?
:এই আছি আর কি?
তারা কথা শুরু করল।আমি অবাক হলাম যে ছেলেটাকে আমি চিনি না? কোথায় তার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবে, তা না করে তারা নিজেরাই কথা শুরু করে দিয়েছে।আর ছেলেটাও কেমন। নিজে থেকে পরিচয় হতে চায় নি। বড় অদ্ভুত। আমার মিহিন এর কথা মনে পড়ে গেল। বাবুটা বাড়িতে মায়ের কাছে একলা।না জানি কি অবস্থা। রুহির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।আমাদের বাবুটা হাঁটতে পারে।তবে ঠিক মত হাঁটতে পারে না।
নাহহ! আমার মন টিকছে না।দ্রুত যেতে হবে। আমি রুহির পাশ থেকে উঠে চলে গেলাম।ও হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে বা হয়তো কিছুই বুঝে উঠতে পারে নি।আমি সেদিকে তাকালাম না।বিলটা দিয়ে বের হয়ে ড্রাইভার কে বললাম,
:চাচা! আপনি রুহি কে নিয়ে চলে আসবেন।আমি গেলাম।
:ঠিক আছে বাবা।তুমি যাও।
আমি চলে গেলাম।বাড়িতে গিয়ে দেখলাম বাবুটা কান্না করছে আর মা ওকে থামাচ্ছে।আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে কোলে নিলাম।
:মা ওকে ফিডার দিছো?
:হুম! কিছুক্ষন আগেই খাওয়ালাম।
মায়ের মন খারাপ। আমরা কেন এত দেরি করেছি তার জন্যে আমাকে বকা দিচ্ছেন। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু শুনে গেলাম।
শেষে বলল,
:বউমা কোথায়?
আমি বললাম,
:আসবে কিছুক্ষন পর।
:তোদের যা ইচ্ছে তা কর। আমি রুমে গেলাম।বেয়াদব। 
আমি কিছু বললাম না।বাবু কান্না করেই যাচ্ছে। বাবুকে নিয়ে পায়চারি করা শুরু করে দিলাম।
কান্না থামছেই না।তাই ওকে নিয়ে ছাদে গেলাম। কোন রকম কান্না থামালাম। 
ছাদ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম গাড়ি চলে এসেছে। তার মানে রুহি চলে এসেছে? আমি তাকিয়েই রইলাম।হ্যাঁ রুহিই আসছে।গাড়ি থেকে দৌড়ে বের হল । আমি মনে মনে বললাম,
:আসো আজকে। বুঝাব মজা।দরকার হলে ওকে তালাক দিব।চাই না ওকে । গ্রামের মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি একটু সুখ পাব বলে! এই তার সুখের নমুনা? পুরো দিন ওর সাথে কথা বললাম না।রাতে খেয়েই মাঝখানে মিহিনকে দিয়ে আমি এক পাশে শুয়ে রইলাম।রুহিকে ঘুমাতে হবে মিহিনের পাশে।আমার পাশে নয়।জানি আমার কষ্ট হবে।তবুও এই মেয়ের কাছ থেকে একা থাকার চেষ্টা করতে হবে।উকিলের সাথে কথা হয়ে গেছে।এখন জাস্ট অপেক্ষ।ও আমার পাশে এসে বলল,
:আমি কই শুবো?
:কেন? খাটে?
:জায়গা দাও।
:মিহিন এর পাশে জায়গা আছে।সেখানে ঘুমাও।
:না।আমি তোমার পাশে ঘুমাব?
:আলগা ফিরিত বাদ দিয়ে ঘুমাও।
এই বলে আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম।ও কিছু না বলে খুব জড়সড় হয়ে শুয়ে রইলো। নাহহ! আমার ঘুম আসছে না।ঘুম আসবে কি ভাবে,? আমার ঘুমের ঔষধ তো রুহিই।ওকে বুকে না নিলে যে ঘুম আসে না।
আমি উঠে গেলাম।ভালো লাগছে না।সিগারেট খেতেই হবে।তাই তাড়াতাড়ি ছাদে উঠে গেলাম। সিগারেটটা ধরিয়েইই খুব জোরে টানা শুরু করলাম।কয়েকটান দিতেই সেটা শেষ হয়ে গেল। আরেকটা ধরাতে যাব তার আগেই কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।বুঝতে পারছি কে?ওর গায়ের গন্ধ আমার জানা।ওর নিশ্বাস আর খুব চেনা সিগারেট টা ধরিয়েই  ওকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।বললাম,
:কয়েক মাসের মধ্যেই ডিবোর্স পেপার পেয়ে যাবে।যাও এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দাও।
:তুমি এই কথা বলতে পারলে?
:তুমি যদি আমাকে ফকির বলতে পারো তাহলে আমি কেন এই কথা বলতে পারব না। তুমি যদি তোমার ফ্রেন্ড কে দিয়ে আমাকে অপমানিত করতে পারো তাহলে আমি কেন এই কথা  বলতে পারব না।আর ছেলেটা? আমাকে একবার বলে দেখতে। আমি মাকে আর বাবুকে নিয়ে একে বারের জন্যে চলে যেতাম।আমারি দোষ, তোমাকে আইডিটা খুলে দিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল করলাম।এখন তারই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।তোমাকে সেই ছেলের হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমি নিয়েছি।যাও নিচে গিয়ে শান্তিতে ঘুমাও।
:আরে উনি শুধু একজন ভালো লেখক।তাই তার সাথে কথা বললাম।
:মিথ্যা বলিও না।আর যাই হোক আমার সাথে তো একটু পরিচয় করিয়ে দিতে পারতে। যেভাবে আলাপ শুরু করে দিলে আর এমন ভাব করলে যেন আমাকে চিনোই না।
আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। তবে তা ওর আড়ালে কষ্ট হচ্ছে। কি চেয়েছি।আর কি হয়েছে।
ও কিছুই বলছে না।ওর কান্নার আওয়াজ পেয়েছি পিছন থেকে।ভেজা কন্ঠে বলল,
:আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে।তবে তুমি বিশ্বাস কর,আমি ছেলেটাকে শুধু একজন লেখক হিসেবেই চিনি। এর চেয়ে বেশি কিছু না। আর মিম যে তোমার সাথে এমন করবে সেটা আমার জানা ছিল না।আর হ্যাঁ ওই দিন আমি ফকির বলেছি।কিন্তু তুমি বিশ্বাস কর আমি মন থেকে বলি নি।সব মিমের কারনে হয়েছে । ও ওর স্বামিকে এমন ভাবে তুলে ধরেছিল যে কারনে আমি এমন কথা বলেছি।
:যে কারনেঈ হোক নিজের স্বামিকে কখনই ছোট করতে নেই।
:তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমার ভুল হয়ে গেছে।এই বলে ও কান্না শুরু করে দিয়েছে।আমিও কান্না করছি।তবে তা ও দেখছে না।আমি বললাম,
:তুমি যাও।তোমার কারনে আমার বাবুটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।তোমার মত মা আমি জিবনে দেখি নি। তুমি থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
:এমন কথা বলো না প্লিজ আমার কষ্ট হয়। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।জানো আমার আজ ঘুম আসছে না। কেন জানো? কারন তুমি পাশে নেই তোমাকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারি না।তোমাকে আমার পাশে চাই তাসফি । প্লিজ এমন করিও না।
আমি কিছু বললাম না।দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ-ই খুব বৃষ্টি শুরু হলো।আমি পিছন ফিরে হাঁটা দিলাম।ওর দিকে তাকালাম। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। খুব ভালো লাগছে ওকে।মন চাচ্ছে ওর চোখের জল গুলো  মুছে দেই।কিন্তু আমি তা করলাম না।হাটা দিলাম।ওর পাশ দিয়ে যেতেই ও আমার বাহু খামচে ধরল।এক টানে ওর সামনে নিয়ে গেল।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বলল,
:থাকতে পারবে আমাকে একা পেলে?
আমি বললাম,
:হুম।পারব।(কথাটা খুব কষ্টে বললাম)
:কিন্তু আমি পারব না।
অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
:পারতে হবে।
:নাহ! আমি পারব না!
:বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তোমার এইসব কথা শুনার ইচ্ছে আমার নেই। 
ও চুল গুলো লেপ্টে গেলো।মুখ বেয়ে পানি পড়ছে। গোলাপি ঠোটের উপর গড়িয়ে পানি পড়ছে । ও বলল,
:এতো টা নিষ্ঠুর হইও না প্লিজ।আমার কষ্ট হয়।
:তুমি কি কম নিষ্ঠুর হয়েছে? কে বলেছে ফেবুতে পিক দিতে? কমেন্ট গুলো পড়তে ভালো লাগে তাই না।আর আজ যা করলে?
:তোমার দুপায়ে পড়ি প্লিজ এমন করিও না আমার সাতে।বলছি তো আমার ভুল হয়ে গেছে।এই তোমার পাঁয়ে পড়লাম।
এই বলে ও আমার দুপা জড়িয়ে ধরল।বলল,
:প্লিজ ক্ষমা করে দাও।আর এমন হবে না।এই কথা দিচ্ছি। আর এমন হবে না।
ও কান্না করছে।আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি যে কান্না করছি এটা সে বুঝতে পারছে না।ওকে উঠালাম।খুব জোরে জড়িয়ে ধরলাম।ও সায় দিল।।হ্যাঁ ও বুঝেছে! ও আর কখনই এমন ভুল করবে না।কারন আজ সে সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছে।।যা ওর জন্যে দরকার ছিল আমি মাথা তুলে কপালে একটা চুমু দিলাম। চোখ দু'টো ফূলে গিয়েছে।তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।নজর যাচ্ছে ওর গোলাপি দুই ঠোটের দিকে।ও বলল,
:কি দেখ?
আমি লজ্জা পেয়ে বললাম 
:নাহ! কিছু না।
কিন্তু ও কিভাবে জানি বুঝে গেল আমি কি চইছি।তারপর? তারপর ও আমার গলা জড়িয়ে ধরল। দুজনেই খুব কাছাকাছি। ওর ঠোট দুটো এগিয়ে আসছে আমার দিকে।শুধু আমার গ্রহণ করার পালা।কি সুন্দর ওর ঠোট গুলো।নিশ্চই খুব মজা হবে।খুব কাছে চলে এসেছে ও।নিস্তব্ধ চারিদিক। শুধু বৃষ্টি। পড়ার টুপ টুপ আওয়াজ হচ্ছে ।   দুজনেই বৃষ্টির মাঝে হারিয়ে গেল গভির ভালোবাসায়।ভালোবাসার গন্ধে ভরে গেল চার দিক।কি নির্মম সেই গন্ধ।
-------সমাপ্ত ------
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url