গল্পঃ তাহলে কি কেউ আছে?

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo.


গল্পঃ তাহলে কি কেউ আছে? 

.
ঘরে এসে মাত্র ঢুকলাম। তখনি ফোনটা বেজে উঠল।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি মাসুদ এর ফোন।কি বেপার! ও এখন ফোন দিচ্ছে কেন? মাত্রই তো ওর সাথে কথা বলে বাড়ি ফিরলাম। এখন আবার ফোন দিল কেন?
ফোনটা ধরে বললাম,
:কিরে? মাত্রই তো আসলাম এখন আবার ফোন দিলি যে?
ও ভারি কন্ঠে বলল,
:তোদের বাড়ির পিছনের দিকটায় একটু আসতে পারবি?
:কেন? কি হয়েছে রে?
আওয়াজ আসল না।লাইনটা কেটে গেল।
আমি তাড়াতাড়ি করে লাইটটা নিয়ে হাটা শুরু করে দিলাম। রাত প্রায় বারোটা। বৃ্ষ্টি হয়েছিল কিছুক্ষন আগে।গাছের পাতা বেয়ে পানি ফোটা গুলো মাটিতে পড়ছে।সাথে টুপ টুপ আওয়াজও হচ্ছে।আমি হাটছি আর ভাবছি কি হয়েছে? ও এমন কন্ঠে কথা বলল কেন?
আমি পৌঁছতেই দেখলাম মাসুদ মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে। আমি যে আসছি সে দিকে ও খেয়ালি নেই। আমি ওকে ভালোভাবে দেখলাম।ও ঘেমে গিয়েছে।হাতে মোবাইলের লাইট জ্বলছে।হাতের রগ গুলো টান টান হয়ে আছে।বৃ্ষ্টি হওয়ার পর তাপমাত্রা খানিকটা কমেছে।হালকা ঠান্ডা লাগছে।কিন্তু ও ঘামছে কেন? আমি ওর হাত নাড়া দিয়ে বললাম,
:এই মাসুদ,এই,!মাসুদ!
ও কিছু বলল না।আমি আবার বললাম,
:দোস্ত কি হয়েছেরে তোর? মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
:হু!
এই বলে ও চোখ বড় করে আমার দিকে তাকালো। আমি ওর এই চাহনি দেখে খানিকটা ভয় পেলাম। ভয় চাপা দিয়ে বললাম,
:কি রে বেটা? হয়েছেটা কি? এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
:ধুরর বেটা! মজা রাখ।একটুর জন্যে মারা পড়তাম।
:কেন? কি হয়েছে?
:আমি তোর সাথে কথা বলে মোবাইলের আলো জ্বেলে বাড়ি ফিরছিলাম।এই ত্রিমুখী রাস্তা আসার পর শরিরটা কেমন জানি ভারি হয়ে গেল।আমি তেমন গুরুত্ব দিলাম না।আমি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাটছিলাম।আমার কেন জানি মনে হল কেউ আমার পিছনে আসছে।আমি হুট করে পিছনে ফিরে তাকালাম। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখলাম না।সেদিকে আলো মারলাম। সোজা রাস্তা সম্পুর্ন খালি দেখা যাচ্ছে। সে দিকে তাকানো অবস্থায় আমার কানের পাশ দিয়ে হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে গিয়েছে।আমি আবার পিছন ফিরলাম।কেউ নেই।খুব শুন্যতা। হঠাৎ মনের মাঝে ভয় জেগে উঠল। আমি সামনে এগোলাম।তবুও মনে হচ্ছে আমার পিছনে কেউ আছে।আবার তাকালাম।নাহহ! কেউ নেই। আবার সামনে ফিরলাম।পিছনে ফিরতেই দেখলাম একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।আমি লাপ দিয়ে উঠলাম। কুকুর টা হেঁটে চলে গেল। এরপর হঠাৎ-ই আমার খুব শীত লাগল।শুধু মনে হল আমার আশেপাশে খুব শীত।আমি সামনে এগোলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি হাঁটতে পারছি না।খুব কষ্ট হচ্ছে হাঁটতে। আমি কয়েক'পাঁ যাওয়ার পর হঠাৎ-ই রাস্তার পাশের কাঠাল গাছটা ভেংগে আমার সামনে পড়ল। ভাংগে নি!! মাথা নুয়ে আমার সামনে আছড়ে পড়ল। আর একটুর জন্যে আমার মাথায় পড়ে নি।আমি ছিটকে পড়ে যাই।তারপর শীত লাগা থেকেই হঠাৎ ঘেমে যাই।অস্থিরতা কাজ করে।আমার কেমন জানি অনুভব হয়।
আমি ওর কথা শুনে বললাম,
:কই গাছতো সোজাই আছে।
:আরে বেটা তুই আসার আগে সেটা আবার দাঁড়িয়ে গেল।বিশ্বাস না হলে এই দেখ,কচি পাতা গুলো পড়ে আছে।দেখ!
আমি ওর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকাই।মাসুদ ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম,
:তো তুই কি বলতি চাচ্ছিস?ভূত টুত টাইপের কিছু??
: হ্যাঁ!!
:আরে বেটা আমরা এইসব নিয়ে কাজ করি।এসবের প্রতি বিশ্বাস রাখা আমাদের মানায় না!
:আমিও তো তাই বিশ্বাস করি না।কিন্তু আজ যা হল....
:কিছুই হয় নি।সব তোর মনের ভুল।
:কি? মনের ভুল?
:হুম।তুই মোবাইল চালাতেই চালাইতে আসছিস তাই না?
:হুম!
:এটা হচ্ছে তোর ভয় পাওয়ার মূল পয়েন্ট।
:মানে?
:শুন।যখন মানুষ নিরবে কোন কাজ করে, তখন সে তা খুব মনযোগ দিয়ে করে।কারন চারিদিকে যখন নিরব থাকে তখন তার সম্পুর্ন মনযোগ থাকে সে বর্তমানে যে কাজ করছে তার উপর।একাধারে মোবাইল চালানোর কারনে তুই একটা ঘোরের মাঝে চলে গেছিস।তোর পিছনে কেউই আসছিল না।গাছের পাতা বেয়ে বৃ্ষ্টির পানি টুপ টুপ করে পড়ছিল। চারিদিকে নিস্তব্ধ থাকার কারনে ও ঘোরের মাঝে থাকার কারনে তোর মনে হয়েছিল যে তোর পিছনে কেউ আছে।এটা স্বাভাবিক। সবার ক্ষেত্রেই এটা হয়।বা এটাও হতে পারে যে পায়ের আওয়াজ বারবার প্রতিধ্বনিত হওয়ার ফলে একটা কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে।তাই সেটা একবার ও পাশে গিয়ে আবার ফিরে আসছে।আর রাতে সব কিছু নিস্তব্ধ থাকে তো।তাই ছোট শব্দও বড় শুনা যায়।।
:আচ্ছা এটা মানলাম।কারন এমন একটা গল্প ছোট বেলায় স্কুলে থাকতে পাড়েছি।এই পয়েন্ট মেনে নিলাম।তার পরের পয়েন্ট যে,আমার শীত লাগা,কুকুরটা,গা
ছটা পড়ে গিয়ে আবার উঠে যাওয়া,আবার আমার গরম লাগা এগুলো কি হবে?
:প্রথমত বৃ্ষ্টি হয়েছে।বৃ্ষ্টির কারনে হালকা শীত শীত লাগছে।আর এমনিতেই তো মৃদু হাওয়া বইতেই পারে নাকি?
:কিন্তু হাওয়াটা যে আমার কানের পাশে দিয়ে গেল? আমি নিজ কানে তার শোঁ করে যাওয়ার আওয়াজ শুনেছি।
:তুই হেলুসিনেশনে ভুগছিলি।বললাম না ঘোরের মাঝে ছিলি! আর কুকুর তো আসতেই পারে। গ্রামেতো কুকুরের অভাব নেই।
:হুম তাও ঠিক।
:তারপর কি বলছিলি জানি? ভুলে গিয়েছি।
:গাছটা পড়ে গিয়ে আবার উঠে যাওয়া।
:তুই হেলুসিনেশনে থাকার কারনে তোর এমন মনে হয়েছে।বাস্তবে তেমন কিছুই হয় নি।
:তাহলে পাতা গুলো?
:বিকেল বেলা গাছের মালিক হয়ত এই কাঠাল ফল পেড়েছে।তখন হয়তো কিছু কচি পাতা গাছ থেকে পড়েছে।তুই কি সিউর যে পাতা গুলো আগে ছিল না এখানে?
:না আমি সিউর না।তুই আসার আগেই সেগুলো দেখলাম।
:তাহলে! এখন বুঝেছিস? আর তোকে ঘামিয়েছে এই কারনে যে তুই এতক্ষণ হেলুসিনেশনে ছিলি।হঠাৎ-ই হেলুসিনেশন থেকে বের হাওয়াতে তোর স্নায়ুতন্ত্রে রক্তচলাচল খুব বেড়ে যায়।পুনরায় শরির আগের মত কার্যকলাপ শুরু করে দেয়।এই কার্যকলাপ সাধন করতে কিছুটা শক্তির ব্যায় হয়।যার ফলে তোর মাঝে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এই অস্থিরতার কারনেই তুই ঘেমে গিয়েছিস।
:হুম তা বুঝলাম। তবে.....
:এত কিছু বলার পরও কি "তবে" থাকবেই?
ও হেসে উঠল।ওকে সায় দেওয়ার জন্যে আমিও হেসে উঠলাম।ও বলল,
:না দোস্ত।আর 'তবে' নেই।
:হুম যা।এবার নির্ভয়ে বাড়ি যা।
:ওকে দোস্ত গেলাম।
:হুম যা।ভয় পাবি না।
:ওকে।
ও চলে যাচ্ছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখছি।আমি জায়গা টাতে দাঁড়িয়ে রইলাম। কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছি।আমার গা-টাও কেমন ভারি হয়ে আসছে।কেউ একজন হাঁটছে। হঠাৎ-ই কট মট আওয়াজ হচ্ছে।কিছু একটা ভেংগে আমার দিকে আসছে।সম্ভবত কাঠাল গাছটা !! মাথার উপর তাকাতেই........
আয়ায়ায়ায়ায়ায়া।শব্দ হল।..........................  সত্যিই কি কেউ আছে? 
-
-
------------সমাপ্ত----------
উক্ত বিষয়ক লিখাটি আমার প্রথম লিখা।তাই ভালো না লাগতেই পারে। ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলবেন।ধন্যবাদ
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url