গল্পঃ ওরা কারা? যারা নিরাকে নিয়ে যাচ্ছে

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo.


গল্পঃ ওরা কারা যারা নিরাকে নিয়ে যাচ্ছে 

ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম। আমি সাথে আরাফাত। আরাফাত নেমে গিয়েছে আগের স্টপেজে।তাই সিটটা ফাঁকা।নেক্সট স্টপেজ-এ  আসতেই যাত্রিরা বেহুশ হয়ে গেল।কেউ নামার জন্যে আর কেউ উঠার জন্যে। সেদিকে খেয়াল না দিয়ে আমি অন্য এক দিকে ধ্যান দিলাম।এক মা তার বাচ্ছা কে খাওয়াচ্ছে।এর থেকে মনোরম দৃশ্য আর কি হতে পারে।তাই প্রান ভরে দেখে নিলাম। কেউ একজন  ধপাস করে আমার পাশের সিটে বসল।মেয়ে একটা। । সে কেমন তা আমি দেখতে পাচ্ছি না।কারন তার মুখ হিজাব দিয়ে বাধা ছিল।অবশ্য আমি সেদিকে এত বেশি খেয়ালও দেই নি। কে বসছে না বসছে তা দেখে আমার কি লাভ।নিজের মতই বসে রইলাম।তবে ভালো লাগছে এই কারনে যে কোন মেয়ে আমার পাশে বসেছে। প্রথম তো।তাই বেশ অনন্দই লাগল। রমনি হঠাৎ  বলে উঠল,
:কেমন আছিস?
আমি দ্রুত মুখ ঘুরালাম।এ কন্ঠ আমি চিনি।অনেক দিন আগের কন্ঠ।সেই যে শুনেছি।হঠাৎ-ই হার্টবিট টা বেড়ে গেল।মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সে আবার বলে উঠল,
:চিনতে পারিস নি?
আমি এবার শত ভাগ নিশ্চিত হলাম যে এই মেয়েই সেই মেয়ে যার কন্ঠ আমি চিনি।।আমি খুব ঘেমে গেলাম।হস্তদন্ত হয়ে বললাম,
: তুই নিরা না?
:মনে রেখেছিস তাহলে ।
:তোকে কি ভুলা যায় বল?
পরক্ষনে মনে হল কথাটা বলা ঠিক হয় নি।তখন কথা ঘুরিয়ে বললাম,
:মানে তোদের কি আর ভুলা যায় বল।ও মুখের সামনের অংশ খুলে আমার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকালো ।মুখের সামনের দিকটা খোলাতে আমি স্পট ওকে দেখতে পেলাম।কতদিন পর যে এই মুখ খানা দেখিতাছি।আগের মতই হালকা বেশে সেজে এসেছে ও।ওর এই জিনিসটা খুব ভালো লাগে।মুখে তেমন বেশি কিছু মাখে না।ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। আমি তাকিয়েই আছি ওর দিকে।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করছি আমি।ও বলল,
:কেমন আছিস?
:এই যা দেখছিস। তুই?
:ভালো নেই রে?
:সেকি? কি হয়েছে?
:জানি না।
: এ কেমন কথা?
:হৃদয়টা খুব শুন্য শুন্য লাগে রে।
:কেন? ছেঁকা খেয়েছিস বুঝি?
:ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।আমিই ছেঁকা খেলাম নাকি সে ছেঁকা খেল।
:কে সে?
:আছে একজন। তবে তার অবস্থা আমার থেকে আরো খারাপ বলে মনে হয়।
:বলা যায় না আমাকে?
একেবারে আহত হয়ে কথাটা বললাম।মনটাই খারাপ হয়ে গেল এতদিন পর দেখা হয়ে যদি প্রিয়তমার মুখে এমন কথা শুনে তাহলে কার ভালো লাগবে?
ও রাগি লুক নিয়ে বলল,
:নাহহ! বলা যায় না।তোকে আমি বলব না।
:কেন? আমাকে বলবি না কেন?
:আমার ইচ্ছা?
:অহ! সরি।
:তোর কথা বল।
:কি বলব?
:প্রেম করিস?
:হুম।
:কয়টা?
:আমি তোর মত না যে সাত আটটা প্রেম করব।
:কিহ? আমি সাত আটটা প্রেম করি?
:তা নয় তো কি?
:যাহহ! তোর সাথে কথাই বলব না।
:আমার কি আর ঠেকা পড়েছে যে তোর সাথে কথা বলব।
এই বলে চুপ হয়ে গেলাম।নিরাও! কেউ কোন কথা বলল না।
আমার স্টপেজ চলে এসেছে।তাই আমি ওকে বললাম,
:জায়গা দে নামব।
ও কিছুই বলল না।হাতের ব্যাগ টা নিয়ে নেমে পড়ল। আমি নেমেই হাঁটা দিচ্ছিলাম। ও বলে উঠল,
:পালাচ্ছিস?
আমি পিছন ফিরে বললাম,
:না।পালাব কেন?
:তাহলে চলে যাচ্ছিস যে?
:এমনি।তোর সাথে জগড়া করার ইচ্ছে নেই।
:আগের মতই রয়ে গেলি।
:তুইও
:মোটেও না।তুই পরিবর্তন হয়েছিস। আমি না।
:যদি বলি তুইও।
ও কথা ঘুরিয়ে বলল,
:কপি খাওয়ার সময় হবে?
:খাওয়া যায়।
:তাহলে চল?
:হুম চল।
.
কপির অর্ডার টা ও নিজেই করেছে।আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি।মন ভরে দেখে নিলাম। আর কখন দেখি না না-দেখি তারও ঠিক নেই।।ও ব্যাগের ভিতর কি জানি দেখছে।
আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।এই মেয়েটাকে আমি অনেক আগ থেকে চিনি।ক্লাস নাইন থেকে।ওর সাথে সেখানেই পরিচয়।ওকে আমার খুব ভালো লাগে।খুব বললে ভুল হবে।বেসম্ভব ভালো লাগে।শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে হয়।দু'বছর ওকে দেখেই কাটিয়ে দিলাম আমি।একটু কথাও বলি নি। ও নিজেও কথা বলে নি। শুধু আমাকে তাকিয়ে দেখত।এতে অবশ্য আমার বড় ধরনের সমস্যা হত।কিন্তু ও যে গ্রিন সিগনাল দিচ্ছে এটা ভেবেই ভালো লাগত। ব্যাস এতটুকুই। আমাদের চোখাচোখিইই হয়েছে শুধু।আর কথা হয় নি । এই প্রথম ওর সাথে আমার এত কথা হয়েছে।কিন্তু আমি কিংবা ও এমন ভাবে কথা বললাম যেন একে অপরের অনেক ক্লোজ। জানিনা কেন এমন হয়েছে।
আমি ওকে খুব খুব খুব ভালোবাসি। তবে তা কখনই বলি নি ওকে।না বলার মূখ্যম কারন হল আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।বুঝেনই তো।এই বয়সে প্রেম করলে ভবিষ্যৎ-এ মুছিগিরি বা রিক্সা চালাইতে হবে। তাই এইদিক থেকে নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতাম।
আরেকটা কারন হল এই বয়সটা প্রেমের বয়স না।নিজেকে গড়ে তোলার বয়স। আর এ বয়সে যা হয় সব আবেগ।
এই দুই কারনে তাকে বলা হয়ে উঠেনি "আমি তোমাকে ভালোবাসি "আর জিবনে বলতে পারব কি না তাও সন্দেহের বেপার।তবে তার জন্যে আমার হৃদয়ের চিলেকোঠায় একটু হলেও জায়গা  থেকেই যাবে আজিবন।তার শুন্যতা আমাকে ভোগাবেই।
:কিরে কি এত ভাবছিস?
:নাহ।তেমন কিছু না।
ও এবার খুব নরম স্বরে বলল,
:তুই সত্যিই কি প্রেম করিস? 
:তোকে কেন বলব?
:ইয়ার্কি বাদ দে।বল না সত্যিই কি কাউকে ভালোবাসিস?
:বলব না।তুই আমাকে বলেছিস?
ও চুপ হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর আবার বলল,
:বল না?
আমি বললাম,
:না।তবে ভালোবাসতাম।
:কাকে?
:আমার সামনে বসা মেয়েটি কে।
:কখন তো বলিস নি।
:আমাদের জন্যে প্রেম মানায় নারে।আমরা শুধু দেখেই যাই। বুঝিসই তো।
:এখনো আদি যুগে পড়ে রইলি?
: আদি যুগ কোথায়? এখন তো আধুনিক যুগ।
:তাহলে এসব বলছিস যে?
:যা সত্যি তাই বললাম।
:জানিস আমি কাকে ভালোবাসি?
:হুম জানি।
:কে সে?
:সামনে বসা ছেলেটিকে।
:নাহহ।আমি তাকে ভালোবাসি না।
:তাহলে কাকে?
:অন্যকাউকে।
:সত্যি?
:হুম (খানিকটা অভিমানের স্বরে)
:তাহলে চলে যাই?
আমি উঠার আগেই ও এসে আমার পাশে বসল।
:কোথাও যেতে দিব না তোকে।কত দিন পর তোকে পেয়েছি।
এ এগুলেই একেবারে মেরে ফেলব।
:যেতে দিবি না কেন?
:ভালোবাসি তাই।
:একটু আগেই যে বললি ভালোবাসিস না।
:মিথ্যা বলেছি।
এই বলে ও আমার হাতটা ধরল।আমি হাতটা সরিয়ে নিলাম।কেমন জানি সিউরে উঠলাম।প্রথম কোন মেয়ের স্পর্শ পেলাম। ও আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
:হাত দে বলছি?
:কেমন জানি লাগে।
:তুই হাত দিবি?
:এই নে
ও হাতটা খুব শক্ত করে ধরল।আমিও সায় দিলাম।ও বলে উঠল,
:জানিস তোর জন্যে আমি কত কেঁদেছি? আমি এক প্রকার খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু মা বাবা অনেক বুঝিয়ে খাওয়াত।তোকে খুঁজেছিলাম।কত খুঁজেছিলাম। বলার বাহিরে।পেলাম না তোকে।
:এই তো আজ পেলি।
:হুম তোকে কোথাও যেতে দিব না আর।আমার কাছে রেখে দিব।আমি যে তোকে প্রানের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।
:আমিও রে তোকে খুব ভালোবাসি।
এই বলে তাসফি নিরাকে জড়িয়ে ধরল। দুজনেই কেঁদে দিল।তাসফি খুব শক্ত করেই  জড়িয়ে ধরল ওকে।হঠাৎ কোন কিছু পাওয়ার আনন্দ তারা উপভোগ করছে। ভালোবাসার প্রজাপতি গুলো ওদের চার পাশে উড়তে লাগল।ভালোবাসার আনন্দে তারা হেসে উঠল। পাশে প্রজাপতি গুলো উড়ে সেই আনন্দ আরো দ্বিগুণ করে দিক। কি মনোরম ছিল সে দৃশ্য।
হঠাৎ-ই কেউ নিরা কে টান দিল।কালো জামা পরিহিত কেউ।একজন নয় তিন জন।তারা নিরাকে টানছে।কিন্তু তাসফি নিরাকে  ছাড়ছে না।নিরাকে তারা টেনে নিয়ে নিল। নিরা চিৎকার করছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।
:তাসফি ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তাসফি। বাঁচা আমাকে।আটকা ওদের তাসফি। ।ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।
তাসফি লাপ দেয় কিন্তু ধরতে পারে না। কেউ তাকে পিছন থেকে টেনে ধরে আছে।নিরার গলার আওয়াজ এখনো আসছে।কান্না করছে ও।খুব কান্নার আওয়াজ আসছে।তাসফি বাঁচাও বলে চিৎকার দিচ্ছে।কিন্তু তাসফি বাঁচাতে পারছে না।তাসফি নিজেও কেঁদে দিল।খুব কান্না শুরু করে দিল। বলল,
:ছেড়ে দাও আমায়।আমি নিরার কাছে যাব।ছেড়ে যাও।নিরা। আমি আসছি নি।তুই কান্না করিস নারে।আমি আসছি। তারা পৃথিবীতে আমাদের এক হতে দিল না।তারা বড় নিষ্ঠুর। এই পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর। তুই কান্না করিস না।আমি আসছি।

এই বলে তাসফি কান্না শুরু করে দিল।চিৎকার করে কান্না করল ও।ওর আশে পাশের পাগুল গুলো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রতিরাতে এই সময়ে এই পাগলাগারদের কেউ ঘুমাতে পারে না। স্বপ্নটা দেখে সে ঘুম থেকে জেগে উঠে।তারপর শুরু হয় কান্না। তাসফির কান্নার আওয়াজে সবার ঘুম ভেংগে যায়।তারা নির্বাক হয়ে তাসফির কান্না দেখে।
.
সেদিন তারা বাস থেকে নামে নি।নেমেছে তাদের আত্না।স্টপেজ-এ আসার আগেই গাড়িটির এক্সিডেন্ট হয়। বাসটা ছিল পাব্লিক বাস।টাইমের গাড়ি।টাইম দেওয়া থাকে।এই টাইমের ভিতরে তাদের মূল গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।দেরি হলে জরিমানা হয়।।সেদিন  গাড়িটিরও অনেক দেরি হয়ে যায়।ড্রাইভার জরিমানার ভয়ে গাড়িটি খুব স্পীডে চালায়।এতে পথিমধ্যে গাড়িটির এক্সিডেন্ট করে।সেখানে প্রান হারায় নিরা।মাথায় আঘাত মেয়ে পাগল হয় তাসফি। তবুও নিরাকে ভুলে না সে।এই হল ভালোবাসা। পৃথিবী আসলেই বড় নিষ্ঠুর।

ভুলত্রুটি মার্জনীয় 
তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url