গল্পঃভালোবাসার ঘ্রাণ

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo.


গল্পঃভালোবাসার ঘ্রাণ


: কিরে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
:এমনিই! ভালো লাগছে না।
:এই তাসফি?তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?  কি হয়েছে রে? 
:মন খারাপ রে দোস্ত।
:কি হয়েছে বলতো?  
: ভাবছি  মিহিন কে আর পড়াতে যাব না।
:কেন? কি হয়েছে? আর টিউশানি টা ছেড়ে দিলে তুই চলবি কি ভাবে? আরো সামনে ঈদ।
:নারে দোস্ত! মেয়েটার ব্যবহারে,কথা বলার স্টাইল টা অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। ঈদটা আমি যেকোনো ভাবে কাটাতে পারব।সেটা সমস্যা হবে না।
:ওর ব্যবহার পরিবর্তন, কথা বলার ধরন পরিবর্তন! কথাটা ঠিক বুঝলাম না দোস্ত।
আমি আরাফাত এর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম। ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম,
:এখনো বুঝিস নি?
ও শুধু মাথা নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করল।
:এত বড় হয়েছিস এই বেপারটা বুঝিস না।
:বুঝায় বল।
:আরে বেটা সে আমাকে প্রেমের প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে।পড়াইতে গেলে শুধু তাকিয়ে থাকে।পড়তে চায় না শুধু কথা বলে।
:বাহহ! দোস্ত!তোর তো একটা হিল্লে হয়ে গেল।অবশেষে  এই আমিই সিংগেল  রয়ে গেলাম।
এই বলে ও মৃদু হাসল।কেন জানি ওর হাসিটা আমার বিরক্তির কারন হয়ে  দাঁড়ালো।খুব বিরক্ত লাগছে।এমনিতেই ভালো লাগছে না।তার উপর ওর এই হাসি!!!ও এমনিই। বেশি কথা বলে।বেশি হাসে।যা আমার খুব বিরক্ত লাগে।এত বেশি হাসে কেন ও? সেটাও জানি না।ছেলেটা অন্য রকম।বর্তমানে সে আমার বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
ও হাসি থামিয়ে বেশ সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলল,
: আচ্ছা তুই ওকে ভালোবাসিস?
ওর এমন কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।এত সিরিয়াস ভাব! ওর চেহারাটাও কেমন অচেনা লাগছে।আমি ওর এমন দৃষ্টি ভঙ্গী আর দেখি নি।অন্তত এই ৪ বছরে আমি এমন দেখি নি।আমি খুব অবাক হলাম।খুব! আমার চুপ থাকা দেখে ও বলল,
:কি রে কথা বলছিস না যে?
আমি বিস্ময় কাটিয়ে বললাম,
:আচ্ছা তুইই বল এমন একটা মেয়েকে কার না ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।
:তাহলে ওর সাথে তোর প্রেম করতে সমস্যা কোথায়?
আমি মন খারাপ করে বললাম, 
:তুই তো জানিসই আমার বাবা একজন নিচু শ্রেনীর সরকারি চাকরিজিবি।যে বেতন পায় তা দিয়ে এত বড় সংসার চালিয়ে আমার পড়ালিখার খরচ চালাতেই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। আমাদের সাথে যে প্রেম করার মত সৌখিনতা যায় না।জিবনে অনেক কষ্ট করে এত দুর এসেছি। তাই চাই না প্রেম করে আমার লক্ষ্যকে নষ্ট করতে।
:তুই এখনো আদিযুগে পড়ে আছিস। শুন!  কাল তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাব।তুই তো আমাকে অনেক প্রশ্ন  করতি।সব গুলোর উত্তর পাবি।সন্ধা হলেই যাব।
:আচ্ছা ঠিক আছে।
.
ঘুম আসছে না।কাল কি এমন দেখাবে আরাফাত আমাকে।উত্তেজনায় ঘুম আসছে না।আবার মিহিন কে নিয়ে টেনশনে আছি।কাল একবার যাব ভাবছি।গিয়ে বলে আসব যে আমি আর আসতে পারব না।পরে যা হয় হবে।
নাহহ! ঘুম আসছে না।একবার ছাদে গিয়ে ঘুরে আসি।
.
ছাদে উঠেই দেখলাম কেউ একজন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।সম্ভবত কোন মেয়ে। এক চোখে তারা দেখছে।চাঁদ নেই।সে আজ পৃথিবীর প্রেমিক দের কাছ থেকে আড়ি নিয়েছে।সে আসবে না আজ।
আমি আমার মত উঠলাম।উঠেই এক পাশে চলে গেলাম। মেয়েটা আমার দিকে ফিরল।আরেহ! এতো মিহিন। এত রাতে ছাদে কি করছে।উত্তেজনা বসত বলেই পেললাম
:কি বেপার মিহিন, এত রাতে তুমি ছাদে কি করছ?
:কিছু না স্যার।ভালো লাগছিল না।তাই একটু আসলাম।
দেরি হলেও বুঝতে পেরিছি যে মেয়েটা আমার উপস্থিতি টের পেতেই চোখের জল গুলো মুছে পেলেছে।কিন্তু তার গলাটা এখনো ভেজা।চোখের পাঁপড়ি গুলোতে যে হালকা পানি জমে আছে তা আমি বেশ টের পেয়েছি।অবাক করা বেপার হল এত অন্ধকারের মাঝেও  আমি ওর চোখের জল দেখছি কি ভাবে? কান্না করতে করতে ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে যাওয়া আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কেন? শুনেছি মানুষ প্রেমে পড়লে নাকি কিছু অদ্ভুত শক্তি লাভ করে।কিছু শক্তি যেন আপনা আপনি নিজের মাঝে চলে আসে।এই যেমন প্রেয়সীর মনে কি চলছে তা বলে দেওয়া।এমন কিছু শক্তি। আচ্ছা তাহলে কি আমি ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছি।আমার মাঝেও কি কোন শক্তি ঢুকে গিয়েছে? আচ্ছা ও কান্না করছে কেন? আমার জন্যে? নাকি অন্য কিছু? প্রশ্ন গুলোর উত্তর  জানা খুব প্রয়োজন আমার। তাই জিজ্ঞেস করলাম,
:কান্না করছ কেন?
:কই? আমি তো কান্না করছি না?
:নাহহ! তুমি কান্না করেছ। গুরুজন কে মিথ্যা বলতে নেই। বল কেন কান্না করছ?
কথা গুলো একটু জোরেই বললাম। 
আমি আমার আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছি।হঠাৎ -ই উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি।আবার খুব মন খারাপ হচ্ছে। ও বলল,
:আপনার ভুল ধারনা স্যার।আমি কান্না করছি না।আপনি থাকেন আমি গেলাম।
এই বলে সে হন হন করে চলে গেল। বেপারটা ঠিক বুঝে উঠলাম না।চিন্তার বিষয় ছিল আগে দুইটা। এখন আরো একটা যোগ হল।তিনটা বিষয়ই আমাকে চারিদিক হতে ঘিরে ধরেছে। এখানে এসেছি নিজেকে ফ্রেশ করতে।কিন্তু হল উল্টা।ফ্রেশ তো দুরে থাক।আরেটা চিন্তা মাথায় আছড়ে পড়ল।নাহহ! এখানে আর থাকা যাবে না।
রুমে চলে আসলাম। এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ভাবনা গুলো বার বার আমার মস্তিষ্ককে নাড়া দিচ্ছে।এক সময় সে স্থির হয়ে গেল।আর নাড়তে পারছে না।সে অচল হয়ে গেছে।আমি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলাম।ঘুমের রাজ্যে  হারিয়ে গেলাম 
রোজার মাস।তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওকে পড়াতে চলে গেলাম।ওর কলেজ ও বন্ধ।তাই সকালেই পড়াই।
কয়েকবার ডাকার পর ওর মা দরজা খুলে দিল।আমি ভিতরে ঢুকে সোফায় বসলাম। মিহিন নাকি ঘুমাচ্ছে। তাই আন্টি ওকে ডাকছে।
: মিহি এই মিহি? উঠ মা। তাসফি আসছে। উঠে পড়তে বস।
কিছুক্ষণ কোন আওয়াজ আসল না।তিনি আবার ডাকলেন। তাও না।আবার ডাকলেন। এই বার সাড়া দিল সে।উচ্চ স্বরে বলল,
:মা তুমি উনাকে বলে দাও যে আজ আমি পড়ব না।আমার আজ ভালো লাগছে না।
:আচ্ছা।
আমি কথা গুলো শুনেছি। তাই দাঁড়িয় গেলাম।আন্টি আসল,
:মিহি কাল পুরো রাত ঘুমায় নি।জেগে ছিল।  আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিল ।কত করে বললাম কি হয়েছেরে মা।কিন্তু কিছু বলছে না।শরির খারাপ মনে হয়। তাই আজ পড়তে চাচ্ছে না।তুমি বাবা কিছু মনে নিও না।
:না আন্টি। সমস্যা নেই।আসলে আন্টি.....
আমি খানিকটা ইতস্তত বোধ করলাম। আন্টি বলল,
:কিছু বলবে বাবা?
:আসলে আন্টি আমি আর আসব না।পরশু বাড়ি ফিরব। 
:আরে হ্যাঁ। তাইতো? আমি তো ভুলেই গিয়েছি যে তুমি বাড়ি যাবে।সংসারের এত কাজ। সব গুলিয়ে ফেলি। আর বৃদ্ধা হয়ে যাচ্ছি তো।
:না না আন্টি সমস্যা নেই।
:আচ্ছা তুমি বস আমি আসছি।
এই তিনি গেলেন।যাওয়ার সময় মিহিন কে বলে গেলেন যে
:এই মিহি তাসফি চলে যাবে।দেখা করবি না?
কথাটা বলতে দেরি ওর রুমের দরজা খুলতে দেরি  হয় নি। আমি আর আন্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আন্টি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল।
আমি তো তাকিয়েই আছি।সারা রাত ঘুমায় নি।তাই ওর চোখ গুলো খানিকটা লালচে হয়ে আছে।মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।আমি কিছু বললাম না।মাথা  নিচু করে বসে রইলাম।
ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
:স্যার আপনি চলে যাবেন কেন?
আমি মৃদু হেসে বললাম,
:কয়দিন পরেই তো ঈদ।বাড়িতে যেতে হবে না?
:হুম তাই তো।আচ্ছা আবার আসবেন কখন?
: আর আসব না।
:কেন স্যার?
:এমনি।
:আপনার তো এখনো পরিক্ষাই শেষ হয় নি।
:হুম তা ঠিক। 
:তাহলে আর আসবেন না কেন?
:আসব।তবে এখানে আর আসব না।অন্য কোথাও উঠব।
:কেন? এখানে উঠলে সমস্যা কি?
:এমনিই
:না স্যার আপনি এখানেই থাকবেন
:না তা হয় না মিহিন
:কেন....
আন্টি চলে আসছে।মিহিন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।আন্টি বললেন,
:এই কি হয়েছেরে? তুই ওকে বিরক্ত করছিস কেন?
:দেখ না মা।স্যার নাকি আর আসবে না এই বাড়িতে। 
:সেকি? কেন বাবা? তোমার কি কোন সমস্যা হচ্ছে?
:না আন্টি তেমন কিছু না।আসলে ভার্সিটির পাশেই একটা বাসা পেয়েছি। সেখানে যেতে চাচ্ছিলাম ।যাওয়া আসার সুবিধা হবে আর কি 
:হুম তা  তো ভালোই।নিজের যে ভাবে ভালো হয় সে ভাবেই চলবে।এই নাও।
তিনি আমাকে একই খাম দিলেন।আমি খামটা নিলাম।ততক্ষনে মিহিন ওর রুমে চলে গিয়েছে।তারপর ঠাশশ দরজা ওফ হয়ে গেল।
আমি আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
খুব খারাপ লাগছে মিহিন এর জন্যে। আমি কি করব।আমিও তো নিরুপায়।
.
ভালই লগছিনা।তাই ঘুমিয়ে গিয়েছি।এর মাঝে মিহিন নাকি কয়েকবার উঁকি দিয়ে গেল।আমার খোঁজ নিল।
আমি কিছু বললাম না।চুপচাপ আবার শুয়ে পড়লাম।
ইফতারি করার বেশ কিছুক্ষণ পর আরাফাত বলল 
:চল!
:কোথায়?
:আরে তোকে কাল বললাম না যে এক জায়গায় নিয়ে যাব।
:ওহহো! সরি দোস্তো। আমি  ভুলে গিয়েছি।
:হুম এখন চল।
:ওকে। চল।
.
বেশ জমকালো অন্ধকার এখানে।পথ টা সরু ওর হাতে মোবাইলের আলো।আশেপাশে কয়েকটা জোনাকিপোকা আছে।তবে আমরা যতই সামনে যাচ্ছি ততই তার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।ওর মোবাইলের আবছা আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে ওর মুখটা খুব গম্ভির হয়ে আছে।বিষন্নতায় ঘেরা ওর চেহারা।যতই সামনে যাচ্ছি ওর গম্ভিরতা বাড়ছে।সাথে সাথে ওকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে। ওর চেহারার ভাব মূর্তির পরিবর্তন হচ্ছে।ওকে এখন বড় অচেনা মনে হচ্ছে।অচেনা রূপ।আমি অবাক হয়ে ওকে দেখছি।ও এক চোখে সামনে তাকিয়ে আছে।এমন ভাবে হাটছে যেন অনেক আগ থেকেই সব চিনা ওর।
হঠাৎ-ই ও এক জায়গায় এসে থামলো।একটা বেঞ্চ দেওয়া সেখানে।এই একটাই বেঞ্চি এখানে দেখলাম। অনেকটা পথ হেটে এসেছি। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।তাই বসেই পড়লাম । কিন্ত আরাফাত বসল না।ও দাঁড়িয়ে রইল।মোবাইলের লাইটটা ওফ করে দিল। খুব অন্ধকার হয়ে গেল জায়গাটা।আমি লক্ষ্য করলা লাইটটা বন্ধ করার সাথে সাথে কোথা থেকে যেন হাজারো জোনাকিপোকা এসে জোড় হল। একেবারে আমাদের কাছেই।আমার কানের পাশে একটা। নাকের সামনে একটা। মাথার উপর একটা। আমি বেশ বিস্ময় নিয়ে বেপারটা উপভোগ করলাম । আমি হাসলাম। এক রাস ভালোলাগা কাজ করা শুরু করে দিল।মনটা ভিশন ভালো হয়ে গেল। আমি জিবনে এত জোনাকিপোকা একসাথে দেখি নি। হঠাৎ আরাফাত বলে উঠল,
:এরা কারা জানিস? 
:কারা আবার।জোনাকিপোকা?
:এরা শুধু জোনাকিপোকা না।এরা আমার বন্ধু।আমার আর মিমির ভালোবাসার সাক্ষী।
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।অবাক হয়ে বললাম,
:তোর আর মিমির ভালোবাসর সাক্ষী?
:হ্যাঁ। মিমি আমার ভালোবাসা। আমার হৃদ স্পন্দন  ছিল ও।
তোরা বলতি না যে আমি এত হাসি কেন? এত মজা আমি কিভাবে করি? আমি কেন বছরে দুইবার জন্ম দিন পালন করি? প্রতি রাতে তোদের না বলে আমি কোথায় চলে যাই?
এই সব গুলোর উত্তর হচ্ছে মিমি।
এই বলে ও থামলো। 
আমি ব্রু কুছকে ওর দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছুই বললাম না।
ও আবার বলল,
:মিমি সাথে আমার ভার্সিটিতেই পরিচয়।অনার্স প্রথম বর্ষেই ওর সাথে আমার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।জানিস সেদিনের সেই মিমিও এত হাসিত।বেশি কথা বলত।ঘুর ঘুরি করত।আড্ডা মাস্তিতে লেগে থাকত। আর আমি ছিলাম রস কস হিন এক মানুষ।ওর সাথে থেকে আমি হেসেছি।বেশি কথা বলা শিখেছি।কিন্তু আমি তখনো জানতাম না যে ও কেন এত হাসত? কেন এত আমেজে থাকত? যদি জিজ্ঞেস করি তো সে এড়িয়ে যায়।
আমমি ওকে প্রনয় এর জন্যে প্রস্তাব দেই।ও রাজি হয় না।আমি ওর কাছে বার বার যাই  ও ততবার ফিরিয়ে দেয়।আমি তখনো জানতাম না যে ও কেন এমন করছে। আমার অবস্থার খুব অবিনীত হচ্ছে।এমন দেখে ও একদিন বলল,
:কাল সন্ধায় আমার বাসার সামনে আসিছ।তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাব।
আমি তো মহা খুশি। সন্ধায় গেলাম।ও আমাকে সোজা এখানে নিয়ে আসল।আমি বেশ অবাক হলাম।তবে এমন পরিবেশে আসলে সবার মনই ভালো হয়ে যাবে।আমি হাসলাম।খুব হাসলাম। কিন্তু ও হাসে নি।একটুও হাসে নি।মুখ কালো করে এই বেঞ্চিতে বসে ছিল।জানিস এই বেঞ্চটা ও নিজেই দিয়েছে।ও বসার জন্যে।
কিছুক্ষণ পরেই আমার সব অবসান কাটিয়ে ও আমার প্রশ্নের উত্তর দিল।আমার সকল প্রশ্নে উত্তর ও এক কথায় দিল।আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি স্থির হয়ে গেলাম। আমার নিল আকাশটাতে কালো মেঘ বাসা বাঁদল।ঘন কালো মেঘ। আমি বসে আছি।আর ও বসে বসে কান্না করছে। খুব কান্না করছে। সেও আমাকে ভালোবাসে।খুব ভালোবাসে।কিন্তু ও যে  আর বেশি দিন নেই এই পৃথিবীতে।তাই বলতে পারে নি।
খুব নিরাবতা চারপাশে।ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। আমি আস্তে করে ওর হাতটা ধরলাম।ওর থুতুনি ধরে মাথাটা উপরে উঠালাম।কপালে একটা চুমু দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম।ও আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।বুকে মাথা রেখে খুব কান্না করছে। সেদিন ওকে ভালোবাসার অঙ্গিকার দিলাম যত দিন বাঁচবে তত দিন।আমরা প্রতি রাতেই এখানে আসতাম।দুজনে দুজনের হাত ধরে বসে থাকতাম।আর জোনাকি গুলো আমাদের ঘিরে উড়ে বেড়াত।
আমি ওর ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরন করার চেষ্টা করতাম।জানিস প্রতিদিন রাতে ও ফোন করে খুব কান্না করত।জানিস  যেদিন ওর অবাস্থা খুব বেগতিক সেদিন আমাকে হাসপাতালে ডেকে নিল । একে বারে শুখিয়ে গেছে ও।আমি আসা মাত্রই ওর বাবা মা বের হয়ে গেল। আমি ওর পাশে বসলাম । ওর কোমল হাতটা ধরলাম।ও মিট মিট করে আমার দিকে তাকালো। কয়েকফোটা জল ওর গল বেয়ে পড়ল।জানিস ওর অন্তিম সময়েও ও আমাকে ওর পাশে চেয়েছিল।আমি ছিলাম ওর পাশে।জানিস সেদিন ও আমার বুকে মাথা রেখেই হারিয়ে গেল।কোথায় হারিয়ে গেল।আর পেলাম না ওকে।আমি ওকে একেবারে হারিয়ে পেলি।
এই বলে আরাফাত কান্না শুরু করে দিল।মাটিতে বসে পড়ল।খুব কান্না করছে ও।কিন্তু আজিব বেপার হল জোনাকিপোকা গুলো। সেগুলো যেন আরাফাত কে জড়িয়ে ধরে আছে।ওর গায়ে বসে আছে।ওকে সান্তনা দিচ্ছে।আমি আর পারছিলাম না।বন্ধুর এমন কান্না দেখে আমিও কেঁদে দিলাম।তাহলে কি ও এই কারনে দুইবার জন্মদিন পালন করে?প্রতিরতে আমাদের না বলে এখানে আসে?নিজের কষ্ট চাপা দিতেই কি এত হাসে? ওর যে এমন এক অতিত আছে তা কেউই বলবে না।এই আরাফাতের সাথে আগের আরাফাতের মাঝে যেন কোন মিল নেই বেশ তফাত। 
.
কিছুক্ষন পর আরাফাত উঠে চোখের পানি গুলো মুছে আমাকে বলল,
:শুন মিহিন যে তোকে ভালোবাসে সেটা তো তুই জানিসই।আমিও জানে।ওর মাও জানে।আর তুই যে ওকে ভালোবাসিস সেটা শুধু আমি জানি।আর কেউ না।তুই দারিদ্রতার দোহায় দিয়ে ওকে ছেড়ে যাচ্ছিস। কিন্তু তুই কি একবারও ভেবে দেখিছিস তুই চলে গেলে ওর কি হবে। ওর বিয়ে হবে ঠিকই।তবে ও কখনোই ওর স্বামী কে ঠিক ভাবে ভালোবাসতে পারবে ন।কোথাও তোর শুন্যতা ও পাবেই।শুধু ও না।তোর বেলায়ও তেমন হবে।কখনো পারবি অন্য কাউকে ওর জায়গাটা দিতে।ভেবে দেখ তোদের সাথে আরো দুজন মানুষ বিনা দোষে কষ্ট পাবে।কি দরকার খামখা অন্য কাউকে কষ্ট দেওয়া? আর মিহিন তো তোর কাছে তেমন কিছুই চায় নি।শুধু চেয়েছে তোর বুকে মাথা রাখতে। ও কখনোই তোর পথের কাটা হবে না।ও তোর লক্ষ্য নষ্ট করবে না।কারন তোর লক্ষ্য আর ওর লক্ষ্য এক।মানুষকে ভালোবাসতে টাকা লাগে না।মন লাগে ভাই মন লাগে।আর তুই তো চাকরি করবিই,,, নাকি? 
আমি চুপচাপ ওর কথা শুনছি। কিছু বলছি না।বলতে পারছি না।
জোনাকি গুলো এখনো আছে।ওরা আনন্দে উড়ছে।ও আবার বলে উঠল,
:দেখ তোকে মেয়েটা কত ভালোবাসে।রোজা রেখে কোন মেয়ে এত রাতে ঘর থেকে বের হবে না।কিন্তু তোর কথা বলে ফোন দিয়েছিলাম।দেখ মেয়েটা চলে এসেছে।শুধু তোর জন্যে রে শুধু তোর জন্যে।
আমি হুট করে মাথা উপরে তুললাম।মিহিন সামনে দাঁড়িয়ে আছে।অস্রু শিক্ত চোখ তার।কিছুবলছে না ও।কিন্তু ও এখনে কেন? আরাফাত ওকে আসতে বলেছে? হয়তো।কিন্ত বড় অদ্ভুত বেপার হচ্ছে এত অন্ধকারের মাঝেও আমি মিহিন এর কোমল চেহারাটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। চোখ গুলো একেবারে ফুলে গেছে।বুকটা কেমন জানি করে উঠল। কেন জানি খুব কষ্ট হল চেপে রইলাম সে কষ্ট।  
আরাফাত বলে উঠল,
:ভাইরে সব ভালোবাসা ফেইক হয় না।কিছু ভালোবাসা আছে যা বাস্তবতাকেও হার মানায়।এই মেয়েই তার উদাহরন।জানিস তোর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যে, তুই কি করিস না করিস, তোর খেয়াল রাখার জন্যে ও আমাকে সব সময়ই বলত তোকে যেন দেখে রাখি।
ভাই দেখে রাখিস ওরে। ওকে খুব শক্ত করে তোর সাথে বেঁধে রাখিস। জগৎ-এ এমন মেয়ে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের বেপার।থাক। আমি গেলাম।
এই বলে ও ফিরতি পথে হাঁটা ধরল। 
আমি চুপচাপ বসে আছি।মিহিন এসে আমার পাশে বসল।আমি ওর দিকে তাকালাম। এক রাস মায়া নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নাহহ! আমি ওর দিকে তাকাতে পারছি না।ওর চোখের গভীরতা বোঝা বড় দায়।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।ও বলে উঠল,
:আজো কি চুপ করে থাকবেন? তাকাবেন না আমার দিকে?
:আসলে... মানে...
::আসলে... মানে এগুলো কিছুই না।
এই আপনি আমাকে ভালোবাসেন তবুও বলতে পারেন নি কেন? 
:তুমি তো জানই.....
ও খানিকটা অভিমানের স্বরে বলল,
:আমাকে বললেই তো পারতেন। খামখা এত কষ্ট দিলেন। আমি ওয়েট করতে পারতাম।যত দিন না আপনি চাইতেন।
:আমি বুঝতে পারি  নি।
:আপনি তো কিছুই বুঝতে পারেন না।হুহ!
:তোমার হাতে এটা কি?
এই কথা বলার সাথে সাথে ও হাতটা লুকিয়ে পেলল।ওর চেহারায় ভয় দেখা দিল।
:নাহ কিছু না।
আমি বললাম,
:আমি এই মাত্র দেখলাম কিছু একটা তোমার হাতে । কি দেখাও তো।
:নাহ।বলছি তো কিছু না।
আমি কঠোর স্বরে দেখলাম,
:দেখাও বলছি..?
:আরে বাদ দেন না।বলছি তো.....
ওকে থামিয়ে কঠোর স্বরে  বললাম,
:তোমাকে দেখাতে বলছি।দেখাও?
ও আস্তে আস্তে করে হাতটা সামনে আনল।এক পাতা ট্যাবলেট। নামটা অন্ধকারের মাঝে দেখছি না।আমি বললাম,
:এটা তো ঔষধ। এখানে নিয়ে আসছ কেন?
:আসলে আরাফাত ভাই ফোন দেওয়ার সাথে সাথে চলে আসছি তো।তখন এটা হাতে ছিল।তাই এটা ভুলে নিয়েই চলে আসছি।
:কিসের ঔষধ এটা?
ও ভয়ে ভয়ে বলল,
:ঘুমের..
:ঘুমের ঔষধ??
মূহুর্তেই আমার বুকটা ধক করে উঠল। ঘুমের ঔষধ? তারমানে ও.....
:এই তুমি পাগল হয়েছো।যদি কিছু হয়ে যেত?
খুব তাড়াতাড়ি কথাটা বললাম। ও বলল,
:তো কি করব? যে কথা বলে গেলেন ঘরে এসে।তা শুনার পর ঘুম জিবনেও আসবে না।তাই একে বারেই ঘুমাই যেতে,,,,,,
আমি ওর মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলাম। ওর চোখের জলে আমার হাতটা ভিজে গিয়েছে।আমার চোখটাও যেন ভিজে আসল।এই গড়িয়ে পড়বে বলে।
: এত ভালোবাস কেন হু? কেন?
ও চুপ করে আছে।কথা বলছে না।কান্না করছে।দুজনেই চুপ।কেউ কথা বলছে না।কথা বলতে পারছে দুজন।হঠাৎ-ই তাসফি মেয়েটা কে জড়িয়ে ধরল।মেয়েটিও নিজেকে ওর বাহুডোরে গুটিয়ে নিল।দুজনেই কাঁদছে।খুব কাঁদছে।এমন ভাবে দুজনের মিল হবে কেউই ভাবতে পারে নি। হঠাৎ-ই যেন বদলে গেল।সেই আনন্দেই দুজন কাঁদছে।তাদের এই কান্না দেখে তারা গুলো মিটি মিটি হাসছে।জোনাকি গুলো ভালোবাসার আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে।চারপাশটা যেন ভালোবাসার গন্ধে ভরে গেল।কি মনোরম সেই গন্ধ।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url