গল্পঃ খুনসুটি

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo.


গল্পঃ খুনসুটি


:কই তুমি?
:বাড়িতে। তুমি কই?
:আমি একটু মার্কেটে আসলাম।
:তুমি আমাকে ছাড়া মার্কেটে গেছ?
:হুম একটু দরকার ছিল।তাই আসলাম।
:কি এমন দরকার যে আমাকে একবার জানানোও যেত না।আমাকে তোমার সাথে নেওয়া লাগত না।তবে একবার বলতে তো পারতে যে আমি মার্কেটে যাচ্ছি।।
:আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।আর করব না। এবার আমাকে একটু হেল্প কর তো।
:কি করতে হবে?
:হাজার পাঁচেক টাকা হবে?
খুব বিনয়ের সাথে কথাটা বলল ও।তবে আমার রাগ এখনো কমে নি।আমি রাগত স্বরে বললাম,
:হুম আছে আমার কাছে।
:তাহলে একটু নিউ মার্কেট চলে আস না প্লিজ।আমার টাকা গুলো চুরি হয়ে গেছে নাকি কোথায় হারিয়ে গেছে ঠিক বুঝতে পারছি না।এখন দোকানদারের টাকা দিতে পারছি না।
:হুম তুমি থাক আমি আসছি।
এই বলে ফোনটা কেটে দিলাম।রুমে চলে আসলাম।আমার কাছে কিছু টাকা ছিল। বস্তিতে কিছু ছেলে মেয়েদের জন্যে শপিং করার জন্যে রেখেছিলাম।এই ছাড়া তেমন কোন টাকা নেই।আমার আর মিহিন (যার সাথে আমার কিছুক্ষন আগে কথা হয়েছিল, আমার গফ) দুজনে মিলে মার্কেটিং করে এসেছি।তাই টাকা তেমন নেই।কিন্তু ওর এখন আবার মার্কেট করার কি দরকার। মেয়েরা যতই মার্কেট করে না কেন এদের কখনো মার্কেট করা শেষ হবে না।
 আট হাজার টাকা আছে এখানে।ছয় হাজার টাকা নিয়ে চলে গেলাম।
.
গিয়ে দেখি তিনি দাঁড়িয়ে আছে দোকানের সামনে।আমার রাগ এখনো কমে নি।মেজাজটা খুব গরম। নিজেকে সামলে  ওর সামনে গেলাম।ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নিশ্চই বুঝতে পেরেছে যে আমি রেগে আছি।ওর এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।কিভাবে জানি ও আমার মনে কি চলছে তা আমার চেহারা দেখে বলে দিতে পারে। আমার অন্তরের সকল খবর যেন ওর জানা।
আমাকে দেখে মিহিন কিছু বলল না।মুখ খানা কালো করে দোকানে ঢুকে গেল।দশটা শপিং ব্যাগ। এক হাতে পাঁচটা আরেক হাতে পাঁচটা নিয়ে বলল,
:টাকা গুলো দাও।পরশু তোমাকে দিয়ে দিব।
এটা শুনার পর আমার মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল।অনেক কষ্টে রাগটা চেপে ধরে টাকা গুলো দিলাম। দোকান দেখে কিছু বললাম না।তা না হলে কয়েকটা চড় দিলামও ওকে।
মার্কেট থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা নিল ও।রিক্সায় উঠে কোন কথা বললাম না।কথা বলতেই মন চাচ্ছে না।অন্য সময় রিক্সায় উঠলে আমি ওর হাত ধরতাম কিন্তু এখন ধরতেও মন চাচ্ছে না।অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওর দিকে তাকাতেও মন চাচ্ছে না।কি ভাবে কি ও।প্রথমত আমাকে জানয়ে মার্কেটে গেছে।দ্বিতীয়ত আমাকে বলছে আমার টাকা আবার ফিরিয়ে দিবে।আমি ওর বফ। আমার কাছ থেকে ও টাকা চাইতেই পারে।আমার সাধ্যি থাকলে দিব।না থকলে দিব না।তাই বলে আমার থেকে টাকা নিয়ে আবার ফিরত দিতে হবে? তাকাবই না ওর দিকে । 
:এই আমরা চলে এসেছি।নেমে পড়।
আমি কিছু না বলে নেমে গেলাম আরেহহ এ তো বস্তি। ও এখানে কেন এসেছে?
কিছুক্ষণ পর কিছু ছোট ছোট বাচ্ছা ওকে ঘিরে ধরল এদের কে আমি চিনি। আমি এদের জন্যেই টাকা রেখেছিলাম।এখন বিষয় টা পরিষ্কার হয়েছে।আমি খুব খুব খুশি হলাম।এরা কত কষ্টে থাকে।ঈদটাও এদের ভালো কাটে না।আমরা তো ভালো থাকি।ঈদটা ভালো কাটাই।কিন্তু এরা? মানুষ হিসেবে আমাদেরই তো মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।এই ছোট একটা উপহারে যদি ওদের মুখে হাসি ফুটে তাহলে মনের মাঝে কেমন জানি এক প্রশান্তি কাজ করে।খুব ভালো লাগা কাজ করে।
 ওর এমন কাজটা ভালো লাগলেও ওর প্রতি রাগটাও আমার কমে নি।
আবার রিক্সাতে চড়লাম। পাশ থেকে মিহিন বলে উঠল,
:মামা মনিপুরী পার্কে যাব।
:আইচ্ছা।
আমি কিছু বললাম না।চুপ করে রইলাম।অন্য দিকে তাকিয়ে আছি।ও আস্তে করে আমার হতটা ধরল।আমি আড় চোখে তা দেখলাম। তারপর হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।ও খুব অবাক হল।বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আবার ধরল।আমি আবার ছাড়িয়ে নিলাম।আবার আরো অবাক হচ্ছে ও।ও বুঝতে পেরেছে বেপারটা। তারপর আবার হাতটা খুব শক্ত করে আমার বাহুতে মাথাটা রাখল।আমি কিছু বললাম না।
পার্কে ঢুকে এক জায়গায় বসে রইলাম। আমি এখনো কথা বলতে পারছি না। কথা বলতে মন চাচ্ছে না। 
ও আমার হাত ধরে বসে আছে।আমি ছাড়াতে পারছি না হাতটা। খুব শক্ত করে ধরে আছে।
কিছুক্ষন পর আমি ওর দিকে তাকালাম।  আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকাতেই দেখলাম কয়েকফোটা জল ওর গাল বেয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম।এই বার ও আমার থুতুনি ধরে ওর দিকে ফিরালো।আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ও আবার দুই হাত দিয়ে আমার মুখের দু'পাশ চেপে ধরে  ওর দিকে ফিরালো । ওর মুখের সামনে আমার মুখ নিয়ে ভেজা গলায় বলল,
:এই কি হয়েছে। এমন করতেছ কেন আমার সাথে হুঁ? আমার দিকে তাকাচ্ছা না কেন? কি হয়েছে?
আমি কিছু বললাম না।মুখটা আবার ঘুরিয়ে নিলাম।আবার আমার মুখটা ওর দিকে ফিরালো।
:কি হয়েছে? এই তাসফি? এই? খুব রাগ করেছ হুম।
এইবার মুখ খুললাম আমি। বললাম,
:রাগ করার মত কাজ করলে কি রাগ করব না?
:...........
:আচ্ছা এই দেখ।
এই বলে ও বেঞ্চ থেকে নেমে  দাঁড়ালো।তার কান ধরে বসে পড়ল।আবার দাঁড়াল। আমার চোখতো কপালে উঠে গেছে।দ্বিতীয় বার যখন বসবে তখন আমি উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই  আমি ওকে বললাম,
:পাগল হয়েছ।এমন করতেছ কেন?
:কি করব বল?  তুমিই তো রাগ করে আছ।কথা বলছ না।আমার দিকে তাকাচ্ছ না।কষ্ট হয় না আমার?
:তো কি করব? রাগ করার মত কাজ কর কেন?
:এই দেখ।আবার কান ধরলাম।আর জিবনেও এমন ভুল হবে না।
:হুম মনে থাকে যেন!
 :হুম থাকবে।
:জানো তোমাকে আমি কত ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি তো তাই এমন করি।
:হুম আমি বুঝি।আমিও তো তোমাকে খুব ভালোবাসি।
:নাহ।আমি বেশি ভালোবাসি।
:নাহহ।আমি বেশি।
:নাহহ। আমি।
:নাহহ।আমি।
ঝগড়াতো হবেই।তারপর আবার মিল হবে।এর মাঝেই দুজনের ভালোবাসা ফুটে উঠবে।

ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url