গল্পঃ স্বপ্ন ২

বাংলা গল্প| Love Stories Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.


গল্পঃ স্বপ্ন

(২য় ও পরিশেষ)
.

আমি ভয়ে ভয়ে ওর রুমের দিকে গেলাম।
নক করে বললাম,
:মেম আসব?
ও কি জানি দেখছিল।চোখ তুলে বলল,
:হুম আসুন
আমি সোজা গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালাম। ও আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো। আমি ভাবলাম যাক বাঁচা গেল।মেম কিছুই মনে করেন নি।কিন্তু কিছুক্ষন পর ও চোখ বড় করে উচ্চ স্বরে বলল,
:এইটা অফিস। প্রেম আলাফ করার জায়গা নয়।
এই বলে ও থামল। আমি ওর নিরাবতা দেখে বললাম,
:সরি মেম।আপনি ভুল বুঝতেছেন। আমি রুপার সাথে,,,,,
এই বলে আমি জিবে কামড় দিলাম।ওকে তুমি করে বলতে বলছে।কিন্তু আমি আপনি করে বলে পেললাম। ও চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
:আমার মুখে মুখে তর্ক করছেন কেন হু? এই জন্যে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
:আমার চাকরিটা খাবে না প্লিজ।আমি তোমার যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নিব।প্লিজ আমার চাকরি টা খেয়ে আমাকে আবার বেকারত্ব দান করিও না।প্লিজ!
:ওই!! চাকরি কি খাওয়ার জিনিস হুঁ।এমনিতেই মেজাজ খারাপ। তার উপর এসব আজে বাঝে বকে মাথা খাবেন না বলে দিলাম।
:সেকি মানুষের মাথাও কি মানুষ খেতে পারে নাকি?
এই বলে আবার জিবে কামড় দিলাম। যাহহ! চাকরিটা চলেই গেল।
:ইউ!! গেট লষ্ট প্রোম মাই রুম।
এই বলে ও দাঁড়িয়ে গেল।
আমি যেভাবে এসেছি ঠিক সেভাবেই চলে গেলাম।নিজের ডেক্স এ এসে বসলাম। অনেক ভাবনা আমাকে আঁকড়ে ধরল।আবার শুনতে হবে যে "তুই বেকার?
"
রূপাও কিছু বলতে পারছে না।বেচারি মুখ কালো করে বসে আছে।কি রে ভাই একটু কথাই তো বললাম। তাই বলে....
.
কিছুক্ষন পর আবার ডাক পড়ল।নাহহ! এইবার এই মেয়েকে কিছু বলতেই হবে।কি পেয়েছেটা কি হুম।বস হলে হয়েছে আর কি।তাই বলে এত ভাব।যাই।চাকরি তো যাবেই।শেষমেশ একটা ঝাড়ি দিয়ে আসি।
একেবারে বুক ফুলিয়ে গেলাম ওর রুমে।
কিন্তু কিসের কি! আমি ওর সামনে যেতেই সব গুলিয়ে পেললাম। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
ওর চোখের দিকে তাকালে আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না।
 কিছুক্ষন পর আবার রুম থেকে বের হলাম।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমারো মন খারাপ। কি থেকে কি হয়ে গেল। এমনটা তো আমিও ভাবি নি।আমার ডেক্স এর সামনে এসে ফাইল আর কাগজ পত্র গুলো গুছিয়ে আবার ওর রুম এর দিকে গেলাম।কেউ টু-শব্দও করল না।সবাই তাকিয়ে  আছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে আমি চিড়িয়াখানায় নতুন নিয়ে আসা কোন পশু।তাই সবাই আমাকে দেখছে। । ওর রুমে ডুকার আগে একবার সবাইকে দেখে নিলাম।তারপর একটা হাসি দিয়ে ওর রুমে ডুকে গেলাম।নিশ্চই সবাই অবাক হয়েছে। অবাক তো হাওয়ারি কথা।যেখানে আমি অবাক হয়ে গেলাম সেখানে ওরা তো অবাক এর উপর অবাক হওয়ার কথা।আসলে আমার এই  চাকরিটা শেষ।আবার নতুন চাকরিও হয়েছে।বুঝলেন না তো? আসেন বুঝিয়ে বলি।আসলে ওর রুমে যাওয়ার পর  ও আমাকে বলল যে আপনার শাস্তি পেতে হবে। তাই শাস্তি হিসেবে আমার ববর্তমান চাকরি টা শেষ।চলে গেছে।রুহি এই চাকরি নিয়ে আবার নতুন চাকরি দিল।সেই চাকরিটা হল ওর প্রাইভেট সহকারী হতে হবে।যতক্ষণ অফিসে আছি ততক্ষন ওর সাথে থাকতে হবে। আমি এই কথা শুনে হাসব না কাঁদব সেটাই বুঝতেছি না।আবার বেতনও বাড়িয়ে দিয়েছে।তাই আর না করি নি।অল্প কয়দিনই তো।শুধু বিসিএস-এ একবার টিকে গেলেই এই চাকরি ছেড়ে দিব।
এতে অবশ্য আমার অন্য দিক দিয়ে ভালোও হয়েছে।ওকে খুব কাছের থেকে দেখতে পাব।আবার ভয়-ও হচ্ছে।যদি ধরা পড়ে যাই?
আমি ভাবছি আমিই শুধু এই ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।কিন্তু সেও যে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে এটা আমি এখন টের পাচ্ছি। সকালে এসে সারা দিন ওর সাথে থাকি।অফিস ছুটির পর ও আমাকে আমার বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসে।আমি না করেছিলাম। কিন্তু সে দিবেই দেব।এদিকে ও এখন আমাকে তুমি করেও বলা শুরু করে দিয়েছে।মোট কথা খুব ভালোই কাটছিল দিন গুলো।হঠাৎ-ই এক দিন ও সবাইকে দেখি বিয়ের কার্ড দিচ্ছে।আমার বুকটা ধক করে উঠেছিল।মাথাটা কেমন জানি ঘুরছিল।কেমন জানি কষ্ট হচ্ছিল। ও যখন আমাকে কার্ড টা দিল তখন আমি মাথা নিচু করে কার্ডটা নিলাম।কার্ডটা নিয়েই আমি উল্টা ঘুরে গেলাম।ও আমার পিছনে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।ততক্ষনে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে গেছে।ও পিছন থেকেই বলল,
:আমার বড় বোন এর বিয়ে।তোমাকে অবশ্যই থাকতে হবে।কি থাকবে তো।
আমি  কোন রকমে বললাম যে,
:হ্যাঁ অবশ্যই থাকব।
:তুমি ওই দিকে তাকিয়ে আছ কেন? আমার দিকে তাকাও।
:নাহহ! এমনি তাকিয়েছি।তুমি যাও আমি আসছি।
ও চলে গেল।আমি এক লাপ দিয়ে হাতের আংগুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করে আস্তে করে বললাম,
:ইয়েস! ইয়াহহু। হা হা হা হা।আমি কি বোকা। কি ভাবছি আর কি হল।
এই বলে হাসতে লাগলাম।
এই কাঁদলাম। এখন হাসছি।বেপারটা আজিব না? মানুষ এমনি।
.
ওর বোনের বিয়ে কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ও বিয়ে করছে। যে হারে শপিং শুরু করছে। মাঝখানে আমার অবস্থা খারাপ। সব শপিং করে আমার হাতে তুলে দিবে।কি যে জ্বালায় পড়লাম।আল্লাহ তুমি আমাকে উদ্ধার কর।
ও আমার জন্যে একটা শার্ট আর পাঞ্জাবী কিনেছি। পছন্দ আছে বলতে হবে।আফটার ওল আমার হবু বউ বলে কথা। আবার মনে হল কোথায় কি।আমি তো ওকে বলিই নি যে আমি তাকে ভালোবাসি।কথায় আছে না যে গাছে কাঁঠাল গোঁপে তেল।আমার এখন সেই অবস্থা আর কি। ওকে এখনো বলিই নাই।তার আগেই হবু বউ? এটা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেল।
:এই কি ভাবছ।চল,,
:তোমার শপিং শেষ হয়েছে?
:হুম আমার তো শেষ।তোমার কোন কাজ আছে এখানে?
:নাহ! আমার কি কাজ থাকবে।
:তাহলে দাঁড়িয়ে আছ কেন।চল?
:হুম চল।
গাড়িতে কেউই কথা বললাম না।আমার হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।তাই কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আমি এমনি।হঠাৎ মন খারাপ হলে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না।
গাড়ি থেকে নেমে চলে যাওয়ার সময় ও বলল,
পাঞ্জাবীটা পরেই কিন্তু আসবে। মনে থাকে যেন।
আমি শুধু মাথা নাড়লাম।ঘরে এসে অনেক ভাবলাম।আমার সাথে কি রুহির কখনো মিল হবে? আমি কি ওকে পাব? এই চিন্তা গুলো আমাকে যেন চারিদিক থেকে গ্রাস করে পেলছে।নাহহ! আর ভাবতে পারছি না।ঘুম আসছে ঘুম যাব।
কোন কিছুর খবর নেই। দিলাম এক ঘুম।ঘুম থেকেই উঠে ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে ফোন নিয়ে ছাদে উঠলাম।ফোনটা খুলে দেখলাম রুহির অনেক গুলো কল দেওয়া।ওর সাথে আমার ফোনে তেমন কথা হয় না।কিন্তু আজ এত কল দেওয়ার কারন কি?।ফোন দিলাম।রিং হচ্ছে।ফোন ধরেই বলল,
:এই তুমি কই
:এই তো বাড়িতে। কেন?
:এত গুলো কল দিলাম। ফোন ধরলা না কেন? হুম?
:আসলে গুমিয়ে গেছিলাম।তাই ধরতে পারি নি।কেন ফোন দিছিলা?
:কেন তোমাকে কি ফোন দিতে কারন লাগে নাকি?
:না! তা নয়।আসলে তুমি তো তেমন ফোন দাও না। তাই বললাম আরকি।
:দি নাই । তবে এখন থেকে দিব।কোন সমস্যা?
: না সমস্যা হবে কেন?
:একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
: কি বল
:আজ মার্কেট থেকে ফেরার সময় তোমার মন খারাপ ছিল কেন? সত্যি করে বলবা কিন্তু
:কিছু না। এমনিই।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।তারপর ফোন অফ।
পুরো রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি।কেন জানি খুব টেনশনে কাটল রাত টা।সকালে গুম থেকে উঠলাম।আজ শুক্রবার। আজ ওর বোনের বিয়ে।কিন্তু আমার মনটা খারাপ।কেন? জানি না।ভালোই লাগছে না।নাস্তা করেই চলে গেলাম মার্কেট-এ।রনি,রিহান,রায়হান,রিপা,তানিয়া, রানু, অবিনাশ। এরা বস্তিতে থাকে। তবে এদের সাথে আমার অনেকটা সময় কেটে গেছে।পড়ালিখা চলা কালিন সময় থেকে এদের সাথে আমার পরিচয়। এদের সাথে খেলতাম, এদেরকে পড়াতা,দুষ্টামি করতাম।ওদের মেনারস শিখাতাম।কিভাবে কার সাথে কথা বলতে হবে।কিভাবে কাউকে সন্মান করতে হবে। এসবই শিখাতাম।ভালো লাগত।এখানে আসলেই আমার মনভালো হয়ে যেত।চাকরির সুবাদে এত দিন আসতে পারি নি।না জানি কি মনে করে ওরা।জানি ওরা জামা গুলো পেলে খুব খুশি হবে।তবুও এত দিন যাই নি।
.
আমি বাড়ি যাওয়ার পর মা খুব রেগে গেল।রুহি নাকি আমাকে এসে খুজে গেছে।না পেয়ে মাকে বলে গেছে যে,আমরা যেন তাড়াতাড়ি যাই।আমি মাকে বললাম,
:মা তোমারা একটু পরে আস।আমাকে আগে যেতে হবে।
:হুম তুই যা আমার এখনো অনেক কাজ পড়ে আছে সেগুলো সেরেই তারপর যাব।
:হুম ঠিক আছে।
আমি তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে চলে গেলাম ওদের বাড়ির দিকে।
বাহহ! সেই তো বাড়িটা।খুব ভালো করে সাজিয়েছে বাড়িটা।এতে এর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।আমি ভিতরে যেতেই এক ময়দা সুন্দরির সাথে দেখা।আমাকে দেখেই বলল,
:ভাইয়া একটু দোকানে যেতে পারবেন?
: কেন?
:আসলে আমার ছোট ভাইটা চকলেট খাবে বলে কান্না করছে। কোন ভাবেই ওর কান্না থামাতে পারছি না।একটু যদি এনে দিতেন।
রাগ আর মেজাজ টা কোন রকমে ধরে রেখে ছোট একটা হাসি দিয়ে বললাম,
:জি আচ্ছা।
চকলেট নিয়ে এসে পড়লাম আরেক ঝামেলায়।কোথায় হারিয়ে গেল যে মেয়েটা। ওই তো।ডাক দিলাম।
:এই যে মিস! দাড়ান ।আপনার চকলেট।
:ওহহ।সরি।আসলে মা ডাকছিল।সরি এবং ধন্যবাদ।
আমি হালকা হেসে বললাম,
:ওকে,,,,,
কথাটা বলা শেষ হয় নি।কেউ আমার বাজু ধরে একটান দিল।টানছে তো টানছেই। ওইদিকে ওই মেয়েটা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে হয়ত বুঝতে পারছে না বিষয় টা।রুহি একটা রুমে এনে দরজা বন্ধ করে শুরু করল অত্যাচার।মারছে তো মারছেই।থামা থামি নেই।
:ওফহহ! লাগছে তো। ছাড়! আরে মারছ কেন?
:চুপ বেয়াদব। চুপ।কথা বলবি না।আমার রাগ না কমা পর্যন্ত মার খাবি।একটা কথাও বলবি না।
:এ কেমন বিহেভ রুহি।
:বিহেভ এর কি দেখলি।হু।কি দেখলি।ফোন বন্ধ। বাড়িতে খুঁজে আসলাম। সেখানেও নেই।আবার এখানে এসে মেয়েদের সাথে টাংকি মারা। হুঁ। আজ তোকে মেরেই পেলব।
এই বলে আরেক ধপা হয়ে গেল।রোমান ও এই মেয়ের কাছে হারবে।কি শক্তি রে বাবা।পুরো বিয়েতে আমাকে ওর পাশে পাশে রাখল।কোন কথা নাই।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে হল।অনেকে আড় চোখে তাকাচ্ছিল। কিন্তু রুহি তা পাত্তাই দিল না।ওর বান্ধুবি রা আমাকে ওর পাশেই দেখেই শুরু করল হাসি তামাসা।বন্ধুরা এমনি।পঁচানির সুযোগ পেলে হাত ছাড়া করে না।
ওর বোনের বিয়ের দুই দিন পরেই আমার বিসিএস পরিক্ষা শুরু হল।এরই মাঝে ওর সাথে আমার ফোনআলাপ ও হত।ও জানত না যে আমি বিসিএস দিচ্ছি। ওর অগোচরেই পরিক্ষা দিচ্ছি । অফিসে যেতাম।আসতাম।মাঝে মাঝে ওর সাথে ঘুরতে যেতাম।আমি বুঝতে পারি যে ও আমার প্রতি দুর্বল। কিন্তু আমি যে ওকে গিয়ে বলব যে "আমি তোমাকে ভালোবাসি "সে যোগ্যতাটাই আমার নেই।এই কথা বলার সাহসও তো আমার নেই।একটা ডিসিশন নিলাম।আমি যদি বিসিএস টিকি তাহলে ওকে প্রপোজ করার চেষ্টা করব।আর যদি না টিকি তাহলে ওর কাছ থেকে অনেক দুরে চলে যাব।জানি কষ্ট হবে। তবুও ওর সুখের জন্যে যদি ওকে ছেড়ে চলে যেতে তাহলে আমি তাই করব।
.
আজ আমার সব চেয়ে খুশির দিন।কারন আমি আমার স্বপ্ন পুরুন করেছি।আমি আমার লক্ষে পৌঁছেচি।বাবা কে বলাতে বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরল।এক প্রকার কেঁদেই দিল।কারন এই স্বপ্নটা আমার একার না। আমার বাবাও খুব চাইত যে আমি একজন মেজিস্ট্রেড হই।কিন্তু আর্থিক অবস্থার কারনে তিনি এই সম্পর্কে কিছু বলেন নি।শুধু মাকেই বলেছে।আর তখন আমি আড়াল থেকে তা শুনে গেছি।তারপর শুরু হয় আমার লক্ষ্যে পৌছানোর যুদ্ধ।অফিসে গেলাম মিষ্টি নিয়ে । সবাইকে খাওয়ালাম। সবাই খুশি। শুধু একজন ছাড়া।রুহি! হ্যাঁ ও ঠিকি মিষ্টি খেল।কিন্তু আমি সিউর ছিলাম যে ও কষ্ট পেয়েছে।
ও খুশি না।মন খারাপ ওর।
কিছুদিন পর সোজা ওর রুমে গেলাম রিজাইন পেপার দিয়ে চলে আসলাম।ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।
আমি বাড়ি চলে আসলাম।ভাবলাম কি করা যায়।হঠাৎ-ই ওর ফোন।
:হ্যালো
:দেখা করতে পারবে?
আমার কলিজা যেন নড়ে উঠল।ওর কন্ঠটা কেমন জানি শোনাল। আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি ও কান্না করেছে।তাড়াতাড়ি বললাম
:হুম অবশ্যই।
:হুম আমার অফিসের সামনে আস।
আমি ওর অফিসের সামনে গেলাম।ও দাঁড়িয়েই ছিল।সোজা গাড়িতে গিয়ে বসল।আমিও ওকে অনুসরণ করে গাড়িতে উঠলাম।
গাড়িটা সোজা চলে আসল মনিপুরী পার্কে।নেমেই আমার হাত ধরে পার্কের ভিতরে নিয়ে গেল।তারপর আমাকে বসাল।নিজেও বসল।কোন কথা নেই।চুপচাপ। আমিই নিরাবতা ভেংগে বললাম,
:কি হল চুপ কেন?
:নিশ্চুপ
:এই রুহি....
মেয়েটা এবার কেঁদেই দিল।ওর কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না।
:এই তুমি কান্না করছ কেন?
:.....
:এই রুহি কান্না করছ কেন?
:সুখে কান্না করি।কথা বলবা না
আমি চুপ করে গেলাম।মেয়েটা এক চোখে কান্নাই করে যাচ্ছে।নাকের ডগাটা লাল হয়ে গেছে।গাল বেয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে।
আমি আর সহ্য না করতে পেরে বলেই দিলাম কথাটা।
:রুহি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ও আমার দিকে হা করে তাকালো। যেন সে এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না।
:কি?
আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই বললাম,
:নাহ কিছু না। এমনি। কিছু না।
ও রাগে রাগে খোভে আমায় একটা চড় দিল।তারপর কলার ধরে হেচকা একটান দিয়ে বলল,
:আগে বলছিস যেটা সেটা এখন আবার বলবি।যদি না বলিস তাহলে এখানেই খুন করে দেব।নে বল এবার।
কি মেয়েরে বাবা।শেষেমেশ আমাকেই প্রপোজ করতে হল।
মেয়েরা এমনি।বুক ফাটবে তবুও মুখ পাঠাবে না।
.
আজ আমাদের বাসর রাত আমি যথা সময় রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। এর আগে রিপাত বলে গেছে যে,
:বন্ধু যাও বিড়াল মারো।এটাই মুখ্যম সুযোগ বেড়াল মারার।পরে কিন্তু আর এমন চান্স পাবা না।
:ধুরর বেটা। যা এখান থেকে।
: তা তো যেতে বলবিই।এখন অন্য একজন আছে না।আমারি কপাল পোড়া।আমিই এখনো সিংগেলই রয়ে গেলাম।গিয়ে দেখি কাউকে পাই কি না।
:আরে যা যা।তোর মত ছেলে আবার প্রেম করবে।
:কিহ? এত বড় কথা।দেখ কালই
একটা পডাই নিয়া আসমু। গেলাম।
এই হল দরজার বাইরের কাহিনী  এখন আমি দরজা ভিতরে।
আমি ওর সামনে গেলাম । ও সালাম করল।তারপর আবার যথাস্থানে বসল।
ও বলল,
:জানো তুমি যখন আমার দিকে রাস্তায় প্রথম তাকিয়েছিলে আমি খুব বিরক্ত বোধ করছিলাম। তারপর মার্কেট এ দেখা।সেদিন আমিই তোমাকে দেখিছি যে তুমি আমাকে পাগলের মত খুঁজছ।আমার জন্যে নিজের বন্ধু কে মারলে।তারপর অফিসে চাকরির ইন্টার্ভিউ দেওয়া।জানো সেদিন তোমার বোকা বোকা চেহারা দেখে আমার এত ভালো লেগেছে যা বলে বুঝাতে পারব না।চাকরি তে জয়েন করার পর থেকে আমি লক্ষ্য করলাম তুমি আমাকে দেখছ।আমিও যে তোমাকে দেখতাম না তা নয়।আমিও তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। তোমাকে দেখার জন্যে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসি।তোমাকে মন ভরে দেখি।তুমি বুঝতে কি না তা জানি না।তবে এটাই সত্যি।জানো তোমাকে আমি কত ভালোবাসি? তোমার জন্যে আমি প্রতিদিন দোয়া করতাম যেন তুমি বিসিএস এ টিক।প্রতিদিন দু রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করতাম।
:ওয়েট ওয়েট। তুমি জানো কিভাবে যে আমি বিসিএস দিচ্ছি?
:তা যেনে তুমি কি করবা।তুমি বিসিএস এ টিকছ এটা ছিল আমার সবচেয়ে খুসির খবর। কিন্তু জানো সেদিন আমি কেন জানি হাসতে পারি নি।খুব কান্না আসছিল। তোমাকে আআর কাছে
পাব না।তুমি অন্য কোথাও চাকরি করবে।অন্য মেয়ের সাথে মিসবে, আমাকে ভুলে যাবে।এগুলো ভাবতেই খুব কষ্ট হত।
এতটুকু বলে ও থামল।কয়েকফোটা চোখের জল ওর গাল বেয়ে পড়ল। ও আর কিছু বলতে পারছে না।ওর কান্না আমার একেবারেই সহ্য হয় না।তাই ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ও কান্না করছে না।তবে চুপচাপ আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আমি বলল,
:ওই রিপাত বলল বিড়াল মারতে। কিন্তু বিড়াল পাব কই এখন।আর মারবও বা কি ভাবে? 
ও আমার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলল,
:এদিকে আস আমি তোমাকে বিড়াল মারা শিখাচ্ছি।এত বড় হয়েছ এখনো বেড়াল মারাটাও শিখলে না।
আমিও অবুজ শিশুর মত ওর সামনে গেলাম।  তারপর হঠাৎ-ই  ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম।  রুহির নরম তুলতুলে গোলাপি দুই ঠোট আমার দুই ঠোটের মাঝে।দুই হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে আছে।আমার পুরো শরির কেঁপে উঠল।অজানা শিহরণ বয়ে গেল মনের ভিতর দিয়ে।শান্তির শিহরণ। আমি কেঁপে উঠেছি দেখে রুহি আমাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরল।দুজনেই হারিয়ে গেলাম ভালোবাসার অতল গহ্বরে।পুর্নিমার চাঁদটা এমন ভালোবাসা দেখে খুব হাসে।খুব হাসে।সাথে ছোট তারা টিও মিটি হাসে।পরিবেশটা যেন ভালোবাসার গন্ধে ভরে গেল।কি মনোরম সেই গন্ধ।
.

ভুলত্রুটি মার্যনীয়
(তাসফি আহমেদ)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url