Bangla new love story - হেমলতা। লিখেছেন তাসফি আহমেদ

Bangla new love story - হেমলতা। লিখেছেন তাসফি আহমেদ


Bangla new love story - হেমলতা। লিখেছেন তাসফি আহমেদ


ভূমিকাঃ Bangla new love story - "হেমলতা।" Bangla new love story - ভালোবাসার গল্প, বাস্তবিক গল্প, ফিকশন, নন-ফিকশন, ভৌতিক, রহস্যময় থ্রিলার গল্পে সমৃদ্ধ আমার এই ছোট্ট ব্লগটি। বাংলা ছোট গল্পের এই অনন্য-অসাধারণ জগতে আপনাকে স্বাগতম। ভীষণ অপূর্ণতায় ভরপুর আমার গল্প গুলো। তাও লিখি। লিখলে মনের মাঝে কেমন অদ্ভুত এক প্রশান্তি মিলে। বিশেষ করে (Bangla new love storyভালোবাসার গল্প গুলো। কারণ এই ভালোবাসার গল্প গুলোতে আমার এক প্রেমিকা থাকে। কাল্পনিক প্রেমিকা। তারে ভীষণ ভালোবাসি আমি।


Bangla new love story - হেমলতা। 


 তাসফি আহমেদ

এক.

হেম স্টেজে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আমিও হাসলাম৷ এমন একটা ভাব করলাম যেন তাকে স্টেজে দেখে আমি ভীষণ খুশি৷ সত্যি বলতে আমি খুশিই। কিন্তু আমি সেটা স্পষ্ট প্রকাশ করতে পারি না৷ আমি কোনো কিছুই স্পষ্ট প্রকাশ করতে পারি না৷ এটা আমার একটা মহা সমস্যা। তবে ব্যাপারটা হেম কীভাবে যেন বুঝে যায়। আমার বাড়তি বাড়তি অভিনয় গুলো তার কাছে ধরা পড়া যায়। সে যদি একটা হাসির কথা বলে আমি জোর করে হাসি৷ ঠোঁট মেলে ধরলেই তো হাসি হয়ে যায়৷ আমার হাসির অভিনয়টা যথার্থ হয়। এটা আমি জানি। চেহারাটা ইচ্ছে করেই উজ্জ্বল করে ফেলি। তখনই মেয়েটা টের পেয়ে যায়৷ কীভাবে পায় কে জানে৷ আমার দিকে কেমন মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-কথাটায় মজা পাওনি তাই না? 
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলি,
-মজা পাইনি বললাম কই? খুব মজা পেয়েছি তো! 
মেয়েটা হঠাৎ চুপ হয়ে যায়৷ তার চোখের কোণাটা চিকচিক করে উঠে৷ এরপর সারাটা বেলা আমার থেকে নিজের চেহারাটা লুকিয়ে রাখে৷ কী এক অদ্ভুত মেয়ে।

হেমের অভিনয় শুরু হলো৷ আমি এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে থাকলাম৷ মেয়েটাকে অত্যন্ত সুন্দর লাগছে৷ চেহারায় অদ্ভুত একটা মায়া খেলা করে৷ হেমের পুরো নাম হেমলতা চৌধুরী। আমি তাকে হেম বলে ডাকি৷ হেম ডাকাটা তার তেমন পছন্দ না। তার ইচ্ছে আমি তাকে লতা বলে ডাকি৷ আমি মানুষ হিসেবে ভালো নই। কারো ইচ্ছের তেমন দাম দিতে জানি না৷ তাই তার ইচ্ছের দাম না দিয়ে নিজের ইচ্ছের দিলাম৷ 

হেম মঞ্চ নাটক করে। এটা তার নেশার মতো৷ পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজটা সে ভীষণ পারে৷ আমার এসব তেমন ভালো লাগে না৷ নাটক-ফাটক তেমন দেখি না আমি৷ অযথা সময় ব্যয়। এরচে বাইরে ঘুরে বেড়ানো অনেক আনন্দের৷ আজও আমার এখানে আশার তেমন ইচ্ছে ছিল না৷ মেয়েটা নেহাত জোর করলো বলেই আসা৷ ইদানীং একটা ব্যাপার খুব লক্ষ্য করছি৷ এই মেয়েটি যা বলছে আমি তাই করছি। আমি যেন এই মেয়েটিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ভারটা অন্য একজনকে দিয়ে দিচ্ছি। এটা ঠিক না৷ বড় অন্যায়৷ নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ভারটা কারো উপর দেওয়া ঠিক না। মেয়েদের উপর তো না-ই। তা না হলে এরা একদম ঘাড়ে চেপে বসবে। 

দুই.

মেয়েদের সাথে আমার তেমন মেলামেশা হয় না। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই। সেখানে গুটি কয়েক মেয়ে থাকে। আমি কখনই তাদের দিকে সরাসরি তাকাই না৷ তাকাতে পারি না। আমার অস্বস্তি লাগে৷ হেম মেয়েটির ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম ঘটল৷ একদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় কোত্থেকে একটা মেয়ে এসে আমার পাশে হাঁটতে থাকলো৷ চুল বাঁধা, কপালে ছোট্ট একটি টিপ, চোখে কাজল এবং ঠোঁটে স্বল্প লিপস্টিক। স্নিগ্ধ চেহারা। অন্যরকম একটা উজ্জ্বলতা তার চেহারায়৷ পরনে সেলোয়ার-কামিজ। জামার কালারটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে৷ জাম কালারের। আশ্চর্য ব্যাপার! জামার কালারটা পর্যন্ত মনে আছে? এটা তো মনে থাকার কথা না! 


মেয়েটা যে আমার পাশে হাঁটছে এই ব্যাপারটা আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি৷ সে যখন বলল,
-আপনার পুরো নাম শাকের আহমেদ তাসফি। তাই না?
তার এমন প্রশ্নে আমি হকচকিয়ে গেলাম। পাশ ফিরে তাকাতেই মনে হলো মেয়েটা আমাকেই বলছে৷ তার মানে এই মেয়ে এতোক্ষণ আমার পাশে হাঁটছিল? আমি অবাক স্বরে বললাম,
-হ্যাঁ। 
-সবাই আপনাকে তাসফি বলে ডাকে!
-জি। 
-তাসফি বলে ডাকবে কেন? শাকের বলে ডাকে না কেন?
-জানি না৷ 
-আপনার মনে হচ্ছে না আপনার এই নামটা মেয়েলি?
-আজকাল মেয়ে ছেলেদের নামে তেমন তফাত দেখা যায় না৷ 
-তা ঠিক৷ তবে আমি কিন্তু আপনাকে তাসফি বলে ডাকতে পারবো না। 
আমি তার দিকে তাকালাম একবার৷ কিছু বললাম না৷ চিন্তায় পড়ে গেলাম। আশ্চর্য ব্যাপার এই মেয়ে আমাকে তাসফি বলে ডাকবে না বলে কী বুঝিয়েছে? মেয়েটি আবার বলল,
-আমি আপনাকে শাকের বলে ডাকবো৷ শাকের নামটা কেমন অদ্ভুত। এমন নাম আমি আর কখনই শুনিনি৷ 
তার কণ্ঠে কেমন বিস্মিত ভাব৷ আমি চুপচাপ হাঁটতে থাকলাম। হাঁটার গতি বাড়ালাম খানিক। মেয়েটা আমার সাথে পাল্লা দিয়ে হাঁটতে থাকলো। নিরিহ স্বরে বলল,
-এতো জোরে হাঁটছেন কেন?
আমি এই প্রশ্নটারও জবাব দিলাম না। এগিয়ে গেলাম। মেয়েটা বলল,
-আপনি মানুষটা অদ্ভুত। 
আমার ভ্রু কুচকে এলো। আমার মাঝে অদ্ভুতের কী পেল মেয়েটা? খানিকটা স্থির হয়ে বললাম,
-অদ্ভুত কেন?
-এইযে একটা মেয়েকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন!
-এড়িয়ে যাচ্ছি কই?
-যাচ্ছেন না? তাহলে দ্রুত হাঁটছেন যে?
-আমার কাজ আছে বলে দ্রুত হাঁটছি। 
-তার মানে আপনি মেয়েদের এড়িয়ে চলেন না? 

আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কী বলব ভেবে পেলাম না। খানিকটা ঘামিয়েও গেলাম যেন। তবে সেটা মেয়েটার সাথে কথা বলার কারণে নাকি দ্রুত হাঁটার কারণে বুঝতে পারছি না৷ মেয়েটা আবার বলল,
-আপনি মেয়েদের ভয় পান নাকি? 
আমি তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,
-ভয় পাবো কেন?
-কে জানে? মনে হচ্ছে ভয় পান। 
-মানুষের মনে অনেক কিছুই হয়৷ সব কিছু সঠিক ধরে বসাটা ভুল। 
-যাবেন কোনদিকে?
-বাসার দিকে। 
-আপনার বাসা কোথায়? 
আমি এই প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে বললাম,
-আপনি কে বলুন তো? 
মেয়েটা একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর খানিকটা হেসে বলল,
-আমার নাম হেমলতা চৌধুরী। বাংলায় অনার্স করছি। তৃতীয় বর্ষ।
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
-আমার কাছে কী প্রয়োজন? 
-কেন? আপনার কাছে কি প্রয়োজন ছাড়া আসা যায় না নাকি?
-না, তা বলিনি। কোনো প্রয়োজনে এসেছেন কি না জানতে চাচ্ছি। 
-নাহ৷ এমনি। আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলো বলে এলাম। 
-অপরিচিতজনদের সাথে আপনার এমন কথা বলতে ইচ্ছে হয়? 
কথাটা বলায় মেয়েটা যেন রাগ করলো। আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
-জি না। আপনি যেমন ভাবছেন তেমন না। আর আপনি আমার অপরিচিতও নন৷ 
এই বলে মেয়েটা দ্রুত হেঁটে চলে গেল। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার মনে হলো কথাটা বলে আসলে ঠিক করিনি। এভাবে বলা উচিৎ ছিল না। একটা ভদ্রঘরের মেয়েকে এমন কথা বলা মানে তাকে অপমানিত করা। মেয়েটাকে দেখতে ভদ্রঘরেরই মনে হয়। এভাবে হুট করে এমন কথা বলে দেওয়াটা মহা অন্যায় হয়েছে। 


তিন.

আমি সাময়িকের জন্যে ব্যাপারটা ভুলে গেলাম। রাতে ঘুমানোর আগেই ব্যাপারটা মনে পড়ে গেল। এক প্রকার অপরাধবোধ চেপে বসলো যেন আমার মাঝে। আমি ছটফট করতে থাকলাম। বারবার মনে হতে থাকলো কথাটা এভাবে বলা ঠিক হয়নি৷ মেয়েটা এখন কী ভাববে? আমাকে কেমন ছেলে ভাববে? এরপরের বার দেখা হলে তার দিকে তাকাবো কী কীভাবে? মেয়ে ঘটিত এটিই ছিল আমার জীবনের প্রথম ঝামেলা৷ তাই হয়তো একটু বেশিই ভাবাভাবি হয়ে গিয়েছে৷

সারারাত তেমন ঘুমাতে পারিনি৷ চোখ লেগে আসলেই মেয়েটার চেহারা মনের পর্দায় ভেসে উঠে৷ এই ব্যাপারটায় আমি অত্যন্ত অবাক হয়েছি। মেয়েটার সাথে এমন আচরণের কারণে হয়তো আমার অপরাধ বোধ হচ্ছে। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই মেয়েটার চেহারা চোখের উপর ভেসে আসার কাহিনী কী? আমি ভেবে পেলাম না। চোখ বন্ধ করতেই তার স্নিগ্ধ চেহারাটা বারবার ভেসে উঠে৷ রাতের ঠিক ওই সময়ে আমি আবিষ্কার করলাম মেয়েটা আসলে খুবই সুন্দরী। চামড়ার রংটা খানিক শ্যাম হলেও তার চেহারায় অন্যরকম একটা মায়া আছে। যা আমি এই যাবত আর কোনো মেয়ের চেহারায়ই দেখিনি৷ বলাবাহুল্য আমি এ যাবত কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাইওনি৷ তখন হাঁটার তোড়ে মেয়েটা যে সুন্দরী এই জিনিসটা আবিষ্কার করা হয়নি৷ কিংবা তার কন্ঠেও যে এক প্রকার শীতলতা আছে তা টের পাইনি। 

গভীর রাতের নিকষ অন্ধকারে শুয়ে থেকে আমি ব্যাপার গুলো আবিষ্কার করলাম। ওই সময়ে আবিষ্কার করলে হয়তো আমি তাকে অমন কথা বলতাম না। ওই সময়ে কেন এই ব্যাপারটা মনে এলো না এই নিয়েও খানিক দুঃখবোধ হলো। তবে আরেকটা ব্যাপার আমার কাছে কেমন জানি লাগল। মেয়েটার চেহারা আমার চোখের  উপর একদম পরিষ্কার ভাসছে৷ তার চোখের কাজল, আমার দিকে কেমন তাকিয়ে থাকা, হঠাৎ কিছু চুল সামনে চলে আসা, মেয়েটার সেই চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দেওয়া, সব, একদম সব আমার চোখের সামনে ভাসছে। একদম পরিষ্কার ভাসছে। এটা কীভাবে সম্ভব? আমি যেন স্বল্প সময় ধারণ করা একটা ভিডিও দেখছি৷ আমার মাথাটা ভার হয়ে এলো৷ আমার সাথে অদ্ভুত কিছু হতে থাকলো৷ আমি এসবের কিছুই বুঝতে পারলাম না৷ 


রাত গভীর হতেই আরেকটা চিন্তা মাথায় ঢুকলো৷ মেয়েটা বলেছে সে আমাকে চিনে। আমার পরিচিত। আমার সম্পূর্ণ নাম পর্যন্ত জানে। সবাই আমাকে 'তাসফি' বলে ডাকে এটাও তার অজানা নয়৷ এমন না যে মেয়েটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের। আমাদের ডিপার্টমেন্টের হলে একটা কথা ছিল। ধরা যাক, মেয়েটা এসব কোনো মাধ্যমে জেনেছে৷ কিন্তু সে বলল, সে আমার পরিচিত। সেটা কীভাবে? আমি এই মেয়েকে এর আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না৷ দূর সম্পর্কে কোনো আত্মীয় বলেও মনে হয় না৷ তাহলে এই মেয়ে আমাকে চিনে কীভাবে? এই ব্যাপারটা নিয়েও খানিক ভাবলাম। বলতে গেলে রাতের প্রায় অনেকাংশ আমি এসবই ভেবেছি। এসব কেন ভেবেছি তা বলতে পারছি না৷ তবে তার কথা ভেবে যে আমার ভালো লেগেছে সেটা বলা যায়৷ 

চার.

নাটকের শেষভাগ শুরু হয়েছে। এই ভাগে নায়কের দূর্দশাময় জীবনের শেষ ঘটে৷ তার একটি সুন্দর জীবন শুরু হয়৷ শেষ সীনে নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে। নাটকের শেষ সীনটা কাছাকাছি চলে এসেছে। নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরবে। নায়কের নাম শাহেদ৷ নায়িকার নাম সোমা। সোমার চরিত্রে অভিনয় করছে হেম। হেমকে নায়ক জড়িয়ে ধরবে৷ এটা ভাবতেই আমার মনে অস্বস্তি হতে থাকল। আশ্চর্য ব্যাপার নাটকের শেষে জড়িয়ে ধরতে হবে কেন? জড়িয়ে ধরা ছাড়া কি নাটকটা শেষ করা যায় না? পরিচালক ব্যাটাকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হলো না৷ এমন সীন না রাখলেও পারতো৷ আমার মনের ভেতর কেমন জানি করতে থাকলো। কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে৷ যেন আমি হেমকে জড়িয়ে ধরার ব্যাপারটা নিতে পারছি না৷ আমার অসহ্য লাগছে৷ নায়ক ছেলেটাকে খুব বিশ্রী মনে হচ্ছে৷ আমার এমন অনুভূতি হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ কেন হচ্ছে কে জানে? 

হেম মেয়েটা এর আগেও নাটকের সবটা আমাকে বলেছে৷ তখন তার কাছে গল্পটা শুনে এমন কিছু অনুভব হয়নি। নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরবে ব্যাপারটা তখন বেশ স্বাভাবিক লেগেছে৷ কিন্তু এখন কেন জানি অস্বস্তি লাগছে। ভালো লাগছে না৷ আমি চট করে উঠে এলাম সেখান থেকে। বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছে৷ কিন্তু এখানে ধরালে হেম রাগ করবে। তার সামনে সিগারেট মুখে দিলে সে পছন্দ করে না৷ তার আশপাশে যখন থাকবো তখন সে যদি আমার মুখ থেকে সিগারেটের স্মেল পায় তবে সে আমায় দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়৷ আমাকে নানান কথা শোনায়৷ সর্বোপরি সে ভীষণ রাগ করে। এই ব্যাপার গুলো আগে ঘটত না৷ এখন কেন জানি ঘটছে৷ কেমন জানি আমার চারপাশটা পাল্টে যাচ্ছে৷ আমি পাল্টে যাচ্ছি৷ কেন যাচ্ছি তা জানি না৷ 

হেমের সাথে দ্বিতীয় সাক্ষাতটা আমার নিজেরই করতে হয়৷ মেয়েটা যে আমার উপর রেগে ছিল সেটা স্পষ্ট সেদিনই টের পেয়েছি। আমার মনের ভেতর থেকে খুঁতখুঁতে ব্যাপারটা গেল না৷ একটা মেয়ে আমাকে ভুল ভেবে, আমাকে নিয়ে মনে রাগ পুষে আছে এটা ভাবতেই আমার খারাপ লাগে৷ কেউ আমার উপর রেগে থাকুক এটা আমি চাই না। তাছাড়া আমি নিজে যখন দোষ করি তখন সরি বলতে মোটেও ভয় পাই না। লজ্জা হয়, তবে সরি বলি৷ প্রথম ক'দিন লজ্জায় তার ডিপার্টমেন্টের দিকে যাওয়া হয়নি৷ পরে একদিন লজ্জার মাথা খেয়ে তাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে উপস্থিত হলাম। কিন্তু তাকে খোঁজার উপায় পেলাম না৷ তার নাম হেমলতা চৌধুরী। বাংলায় অনার্স করছে। তার পরিচয় বলতে আমার কাছে এইটুকুই আছে৷ এখন তাকে খুঁজি কী করে? কিছু সময় ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তখনই মনে পড়লো মেয়েটা তৃতীয় বর্ষে পড়ে৷ তৃতীয় বর্ষের রুমে তাকে পাওয়া গেল না। 

মাঠের দিকে আসতেই দেখলাম সে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার কোনো বান্ধুবির সাথে কথা বলছে। আমি এগিয়ে গেলাম৷ একদম তার সামনে গিয়ে থামলাম। মেয়েটা আমাকে যেন সেখান আশা করেনি। সে হয়তো ভাবেওনি যে আমি তার খোঁজে সেখানে যাবো৷ সে কেমন অবাক হয়ে তাকালো। আমি বললাম,
-আপনার সাথে একটু কথা ছিল। 
সে অন্যদিকে ফিরলো। আমার কথার জবাব দিলো না৷ তার বান্ধুবিটা যেন কিছু টের পেলো। সে নিজ থেকেই সরে দাঁড়ালো। আমি বললাম,
-আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি। 
মেয়েটা এবার ভ্রু কুচকে তাকালো। তবে জবাব দিলো না৷ আমি বললাম,
-আমাকে ক্ষমা করুন। আমি সেদিন যে কথাটি বলেছি তার জন্যে দুঃখিত৷ আমার এমনটা বলা ঠিক হয়নি৷ যদিও আমি তেমন কিছু মীন করে বলিনি৷ তবুও আমায় ক্ষমা করবেন। 

মেয়েটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। এই হলো এক সমস্যা৷ কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে তার দিকে তো তাকানো যায়ই না বরং মনের ভেতর কেমন অস্বস্তি হতে থাকে। মেয়েটা এবারেও জবাব দিলো না। আমি মাটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আপনি কি ক্ষমা করেছেন?
তার জবাব নেই। আশ্চর্য! কিছু বলছে না কেন? মেয়েটা সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাকি? নাকি চলে গেছে? একবার কি তাকিয়ে দেখবো? বললাম,
-নিরবতাই সম্মতির লক্ষ্যণ৷ আমি কি তাহলে সেটাই বুঝে নিবো?
এই বারেও তার জবাব পাওয়া গেল না৷ আমি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। খানিকটা লজ্জা পেয়ে তার দিকে তাকালাম। দেখলাম সে সেদিনের চেয়ে দ্বিগুণ রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ আশ্চর্য ব্যাপার! এখানে রেগে যাওয়ার কী ঘটলো বুঝতে পারলাম না। আমি তো তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। মেয়েটির মাঝে কি সেটি নেই? বললাম,
-আপনি বোধহয় রেগে যাচ্ছেন৷ আপনাকে রাগানোর জন্যে দুঃখিত৷ রাগ কমে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দিবেন৷ 
এই বলে আমি সেখান থেকে চলে এলাম। আমি ভাবলাম সে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে৷ কিন্তু মনকে মোটেও শান্ত করতে পারলাম না৷ বারবার মনে হচ্ছিল মেয়েটা মোটেও আমাকে ক্ষমা করেনি। বরং তার চেয়ে ভীষণ রেগে গিয়েছে৷ কী করা যায় এখন? দ্বিতীয়বার আবার যাবো? আমার কি যাওয়া উচিৎ? নাহ! আর যাওয়াটা ঠিক হবে না হয়তো৷ নিজের একটা ব্যক্তিত্ব আছে না৷ এভাবে মেয়েদের কাছে ছোট হয়ে গেলে ব্যক্তিত্ব কমে যায়৷ আমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল চাইলাম। এখন সে যদি ক্ষমা করতে না পারে এতে আমার দোষ কই? আমার মোটেও দোষ নেই৷ এসব ছাইপাঁশ ভেবে কয়েকদিন গেলাম না। কিন্তু এরপর নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি৷ চলে গেলাম তার ডিপার্টমেন্টের সামনে৷ 

পাঁচ.

আমি দেখলাম সে বেরিয়ে আসছে৷ আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাবলাম মেয়েটা হয়তো এসে জিজ্ঞেস করবে, "আজ আবার এসেছেন?" অথচ মেয়েটা এমন কিছুই করলো না৷ সে নিজ গুণে আমার সামনে দিয়ে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে গেল। আমার আত্মসম্মানে লেগে গেল ব্যাপারটা। মেয়েটা আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলছে কেন? আমি পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললাম,
-এই যে? মিস হেমলতা চৌধুরী? একটু দাঁড়ান, প্লীজ। 


গল্পঃ হেমলতা। 
(প্রথম পর্ব)
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয় 


Next Post Previous Post
2 Comments
  • Unknown
    Unknown ১৭ এপ্রিল, ২০২১ এ ৬:০৬ PM

    দ্বিতীয় পর্ব কোথায়?

    • Author
      Author ১৮ এপ্রিল, ২০২১ এ ৩:১১ AM

      এখনই পোষ্ট করছি ভাই।

Add Comment
comment url