Bangla new love story - হেমলতা। লিখেছেন তাসফি আহমেদ

 

Bangla new love story - হেমলতা। লিখেছেন তাসফি আহমেদ

Bangla new love story - হেমলতা। লিখেছেন তাসফি আহমেদ 

 

ভূমিকাঃ Bangla new love story - "হেমলতা।" Bangla new love story - ভালোবাসার গল্প, বাস্তবিক গল্প, ফিকশন, নন-ফিকশন, ভৌতিক, রহস্যময় থ্রিলার গল্পে সমৃদ্ধ আমার এই ছোট্ট ব্লগটি। বাংলা ছোট গল্পের এই অনন্য-অসাধারণ জগতে আপনাকে স্বাগতম। ভীষণ অপূর্ণতায় ভরপুর আমার গল্প গুলো। তাও লিখি। লিখলে মনের মাঝে কেমন অদ্ভুত এক প্রশান্তি মিলে। বিশেষ করে (Bangla new love storyভালোবাসার গল্প গুলো। কারণ এই ভালোবাসার গল্প গুলোতে আমার এক প্রেমিকা থাকে। কাল্পনিক প্রেমিকা। তারে ভীষণ ভালোবাসি আমি। 


Bangla new love story - হেমলতা।

তাসফি আহমেদ 
 

(শেষ পর্ব)

প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন।

ছয়.
আমি পকেট থেকে সিগারেট বের করলাম। হেম রাগ করলে করুক। আমার কী? সে আমার কী হয়? আমি কেন তার কথা শুনবো? সে কেন আমাকে নিয়ন্ত্রণ করবে? সে যা বলবে আমিই বা কেন তাই করবো? আমাদের মধ্যে কিসের সম্পর্ক? আমি কেমন জানি রেগে যেতে থাকলাম। কেন রেগে যাচ্ছি তা স্পষ্ট বুঝতে পারছি না। তবে রাগ উঠছে। আমি সিগারেট ধরাবো ঠিক সেই সময়েই হেম বেরিয়ে এলো৷ সোজা আমার দিকে এলো৷ কাছে এসে সিগারেটটা টেনে নিয়ে ফেলে দিলো৷ আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-তোমাকে না বলেছি আমি যখন পাশে থাকবো না তখন এসব না ছুঁতে?
-তুমি পাশে নেই বলেই তো ধরাতে চাচ্ছিলাম।
-আমি এখন পাশে নেই৷ কিন্তু একটু পর তো আসবো? তখন? তখন তো তোমার মুখ থেকে সিগারেটের স্মেল আসবে৷ তোমাকে না বলেছি আমার এসব একদম পছন্দ না?
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাবলাম কিছু কঠিন কথা বলবো। বলব যে, 'আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো৷ তোমার ভালো না লাগলে চলে যাও৷ গিয়ে তোমার ওই নায়ককে জড়িয়ে ধরো৷ আমার কাছে কী? আমি তোমার কথা টথা শুনতে পারবো না।' কথা গুলো গলার কাছে এসে জমাট বেঁধে গেল। বলতে পারলাম না৷ হেম বলল,
-নাটকের শেষটুকু দেখলে না যে? উঠে এলে কেন?
-এমনিই। ভালো লাগছিল না৷
-সত্যি করে বলতো? কী হয়েছে?
-কই? কী হবে?
হেম কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বলল,
-রেগে আছো?
-আশ্চর্য! রাগবো কেন?
-সেটা তুমিই ভালো জানো৷ চেহারাটা এমন করে রেখেছো যে মনে হচ্ছে তোমার কিছু একটা হারিয়ে গিয়েছে। তার জন্যে তুমি রেগে আছো। কি মহাশয়? ঘটনা কী হু?
-এখন কিন্তু মেজাজ খারাপ হচ্ছে৷ কী বলছো এসব?
হেম আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো৷ তার চেহারায় কী কোমলতা! কী দারুণ একটা সতেজতা লেপ্টে আছে বলে বোঝানো যাবে না। মেয়েটাকে কেমন খুশি খুশি লাগল। হাস্যজ্বল চেহারা৷ আমার বেশ মায়া হলো। বললাম,
-এভাবে তাকিয়ে আছো যে?
-তুমি অনেক কিছু মিস করেছো। সবাই নাটকটার বেশ প্রশংসা করেছে৷
আমি খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-যেই নাটকে তোমার মতো নারী থাকবে সেই নাটক প্রশংসা না পেয়ে যাবে কই হু?
মেয়েটা আরো ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো৷ তার চোখ দুটো যেন চিকচিক করে উঠলো। আমি বললাম,
-বাসায় ফিরবো৷ জলদি করো।
তার যেন চট করেই কথাটা মনে পড়ে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
-পাঁচ মিনিট দাঁড়াও। আমি আসছি।
হেম ভেতরে চলে গেল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আকাশে মেঘ নেই। চাঁদও নেই। কেমন অন্ধকার। কৃত্রিম আলোয় যা আলোকিত। চারপাশের কেমন শীতল নীরবতা৷ আমি দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলাম এই মেয়েটার মাঝে আসলেই কিছু একটা আছে। অদ্ভুত কিছু একটা৷ সে মূহুর্তে আমার সমস্ত রাগকে পানি করে দিয়েছে৷ এমনটা কেবল আজ না। আরো অনেকবার হয়েছে৷ প্রথমবারেরটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। সে সময় আমি হেমের উপর রেগে ছিলাম। আমি যখন তার কাছে দ্বিতীয়বার ক্ষমা চাইতে গেলাম তখন সে আমার ব্যক্তিত্ত্বে আঘাত করে বিদায় জানালো। আমার চেহারা দেখে নাকি বোঝা যায় না আমি আসলেই দুঃখিত। আমি মোটামুটি ভেবেই নিয়েছিলাম এই মেয়ের সাথে আমার আর কখনই দেখা হবে না৷ তার কথা ভুলে যাবার চেষ্টা করলাম।

Read 200+ Bangla Love Stories In Bangla

কিন্তু ওই ঘটনার কয়েকদিন পরেই আরেকটা ঘটনা ঘটলো। এক ছোট ভাই এসে জানালো আমাকে নাকি কেউ খুঁজছে। আমি ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম হেম আমাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি খানিকটা অবাকই হলাম। যাবো না যাবো না করেও চলে গেলাম। আমাকে দেখেই মৃদু হাসলো সে। আমি হাসলাম না৷ তার সামনে গিয়ে বললাম,
-আপনিই ডেকেছেন?
সে চট করেই জবাব দিলো,
-কেন? অন্য কাউকে আশা করেছিলেন নাকি?
-নাহ, আমি কখনই এমন আশায় থাকি না। ডাকার কারণ?
মেয়েটা কিছু বলল না। কেবল আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ সেবার প্রথম আমি সাহস দেখিয়ে হেমের চোখে চোখ রাখলাম। ওর চোখের দিকে তাকাতেই আমার সমস্ত গা শিউরে উঠল। আমি বরফের মতো জমে গেলাম যেন৷ মেয়েটা কেমন মলিন স্বরে বলল,
-খুব রেগে আছেন তাই না?
আমি এই প্রশ্নটার জবাব দিলাম না। সে খানিকটা চুপ থেকে বলল,
-আসলে সেদিন একটু বেশি বেশিই করে ফেলেছিলাম। কী করবো বলুন৷ রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না৷ তাই যা মুখে এলো বলে দিয়েছি।
-দেখুন, আমার একটা সমস্যা আছে৷ আমি কখনই নিজের মনের ভাবটা চেহারায় সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারি না৷ ক্ষমা চাওয়ার সময় চেহারায় যেমন নমনীয়তা আপনি চাচ্ছিলেন সেটা স্বাভাবিক ভাবেই আসছিল না৷ আমি চাইলেই অভিনয় করে নমনীয়তা আনতে পারতাম। তবে সেটার কিছুটা বাড়াবাড়ি হলেই আপনি বলতেন আমি অভিনয় করছি। তখন আবার নানান কথা বলতেন। এটিই আমার মূল সমস্যা। মানুষ আমার এই সমস্যাটা বুঝতে পারে না৷ তাই নানান কথা বলে। আমি অবশ্য এসব গায়ে মাখি না৷
এই বলে আমি থামলাম। হেম বলে উঠলো,
-আমার ব্যবহারে আমি খুব কষ্ট পেয়েছেন তাই না?
-নাহ৷ তেমন পাইনি।
-রাগ হয়নি।
-হয়েছে৷
-এখনও আছে?
-আছে।
-ঝেড়ে ফেলুন না৷ এভাবে রাগ করে লাভ কি বলুন।
-রাগ করে থেকে লাভ নেই৷ আমার রাগ আপনা আপনিই নেমে যাবে৷ চিন্তা করবেন না৷
-আমি আসলেই দুঃখবোধ করছি৷ ক্ষমা করে দিন প্লিজ৷
আমি হাসলাম। বললাম,
-ঠিক আছে৷ সমস্যা নেই৷
-রাগ পড়েছে?
-জি না৷
-কখন পড়বে?
-বলতে পারছি না।
-ঘুরতে যাবেন?
-না।
-চলুন না। কোথাও ঘুরে আসি। মন ভালো হবে৷
-আমার মন আপনা আপনিই ভালো হয়৷ ভালো করার জন্যে কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে না৷
-না পড়ুক৷ আপনি চলেন।
-আপনি যান।
-একা একা যেয়ে লাভ নেই৷
-বন্ধুবান্ধব কাউকে নিয়ে যান৷ কিংবা প্রিয়জন?
-আমার প্রিয়জন নেই৷ বন্ধুদের সাথে যেতে ইচ্ছে করছে না।
-কেন ইচ্ছে করছে না?
-জানি না। আমার আপনার সাথে যেতে ইচ্ছে করছে।
-আমি যেতে পারবো না।
-আপনি না গেলে আমার মন খারাপ হবে৷ মন খারাপ হলে আমার কান্না পায়৷ দেখা গেল বাড়ি ফিরতে ফিরতে আমি কান্না করে দিবো৷ আপনি কি সেটা চান?
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মেয়েটার চোখ দুটো সত্যিই চিকচিক করে উঠছে৷ আশ্চর্য ব্যাপার! এই মেয়ে কি আসলেই কেঁদে দিবে নাকি?
অথচ সেই মূহুর্তে আমার হেমের উপর বিন্দুমাত্র রাগ ছিল না। তার সাথে চোখাচোখি হতেই আমার কেমন জানি মন ভালো হয়ে গেল। তার সাথে ঘুরতে যেতে বলাতেও আমি খুশি হয়েছি। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছিলাম না৷ যাই হোক সেদিনই প্রথমবারের মতো কোনো অপরিচিত মেয়ের সাথে শহরের এদিক সেদিক ঘুরলাম। সত্যি বলতে সময়টা স্বপ্নের মতো কেটেছিল যেন৷ এতো ভালো লাগছিল যা বলার মতো না৷ সেখান থেকে হেমের সাথে আমার বন্ধুত্ব। তবে কখনই আমরা একে অপরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বন্ধু বলিনি। আসলে আমাদের সম্পর্কটা আসলে কিসের সেটা এখনও স্পষ্ট হয়নি৷ ধীরে ধীরে আমাদের কথা বার্তা, দেখা সাক্ষাৎ বাড়তে থাকে৷ ঘুরতে যাই মাঝে৷ হাসিতামাশা করি৷ প্রায় একসাথে থাকি৷ বন্ধের দিনে একসাথে ঘুরে বেড়াই৷ বিকেল হতে সন্ধ্যা কাটাই এক সাথে৷ এভাবে চলছি। এটা বন্ধুত্ব না কি সেটা আসলে আমি নিজেও জানি না৷ মেয়েটা আজ চট করেই আমাকে এখানে নিয়ে এলো৷ আমি আসতে চাইছিলাম না৷ তাও জোর করলো বলে চলে এলাম। এই নানান উপায়ে আমার উপর কাবু করাটা শিখে গিয়েছে৷ আমিও বোকার মতো তাকে সেই সুযোগটা দিয়ে দিচ্ছি৷ কেন দিচ্ছি তা জানি। তবে আমার যে ভালো লাগছে তা স্পষ্ট বলতে পারি৷
সাত.
হেম বেরিয়ে এলো। তার পরনে শাড়ি। কপালে ঠিক। চোখের কাজল বোধ হয় মাত্রই দিয়েছে৷ আমার কাছে আসতেই তার গা থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ পাওয়া গেল। বললাম,
-নতুন করে কাজল দিয়েছো নাকি?
সে হেসে জবাব দিলো,
-হ্যাঁ৷ বুঝলে কী করে?
-জানি না৷ মনে হলো তাই বললাম। চল!
আমরা দু'জনে থ্রিয়েটার থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি বললাম,
-রিক্সা ডাকি?
হেম বলল,
-নাহ। প্রয়োজন নেই৷ হাঁটতে ভালো লাগছে। তোমার লাগছে না?
-লাগছে৷
আমরা দু'জন ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকলাম৷ আমাদের মাঝে কিছুটা দূরত্ব। আমি বললাম,
-অভিনয়ের সখ কখন থেকে?
-ছোট বেলা থেকেই।
-খুব সখ?
-হুম ভীষণ।
আমি কিছু বললাম না আর৷ হাসলাম খানিক৷ সে বলল,
-তুমি এসব পছন্দ করো না কেন?
-কে জানে৷ আমার কেন জানি ভালো লাগে না৷
মেয়েটা কিছু বলল না আর৷ চুপ করে গেল। আমি বললাম,
-তুমি একবার বলেছিলে, আমরা পরিচিত। কিন্তু কখনই এই বিষয়ে আলোচনা করোনি৷ আমিও অবশ্য জানতে চাইনি৷ আজ কেন জানি জানতে ইচ্ছে করছে৷

Bangla Golpo: প্রেম পরশ

 
মেয়েটা হাসলো। বলল,
-আজ হঠাৎ?
-এমনিই৷ কোনো বিশেষ কারণ নেই৷
হেম মৃদু হেসে বলল,
-চলো এখানে বসি৷
আমি তেমন দ্বিমত করলাম না৷ ফুটপাতের ধারে বসে পড়াল। আমাদের মাঝে অল্প কিছু দূরত্ব। হেম অনেকটা সময় চুপ করে থেকে বলল,
-তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি রিনু আপুর বিয়েতে৷ রিনু আপুর কথা মনে আছে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
-আমাদের ভার্সিটির রিনু আপু? ওই যে রাজনীতি করতো?
-হ্যাঁ৷
-তুমি তাকে চেনো কী করে?
-তিনি আমার আপন চাচাতো বোন।
আমি হাসলাম। ঠাট্টার স্বরে বললাম,
-এজন্যেই তোমার ভেতর মাঝে মাঝে নেত্রী নেত্রী একটা ভাব দেখি।
হেম খানিকটা হাসলো৷ তবে কিছু বলল না৷ আমি বললাম,
-রিনু আপু আমার পছন্দ বালিকাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন৷ তিনি আমাকে বেশ পছন্দও করতেন৷
হেমের চেহারাটা চট করেই যেন পাল্টে গেল। বলল,
-তোমার আরো পছন্দ বালিকা আছে নাকি?
-হ্যাঁ৷ আছে। এখন অবশ্য দু'জন আছে৷
-কই? কখনও তো তাদের কথা বলনি?
-প্রয়োজন মনে করিনি। বাদ দাও৷ এরপর কী হয়েছে বলো।
-আমার বলতে ইচ্ছে করছে না।
-কেন?
-জানি না।
আমি রাগি দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। বললাম,
-এরপর কী হয়েছে বলো। তা না হলে খবর আছে তোমার।
-কী খবর করবে শুনি?
-উফ! এমন করিও না হেম। বলো না!
হেম চুপ করে থাকল কিছু সময়। তারপর বলল,
-বলব। এক শর্তে। তোমাকে তোমার ওই পছন্দ বালিকাদের নাম বলতে হবে।
-আশ্চর্য! তাদের নাম শুনে তুমি কী করবে৷
-কী করবো সেটা তোমার জানতে হবে না। শর্তে রাজি কি না বলো?
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
-হ্যাঁ। রাজি৷
হেম কিছু সরল হলো৷ কিছু সময় পর বলল,
-তোমাকে দেখে আমি বেশ অবাকই হয়েছিলাম সেদিন৷ বিয়েতে সবাই মজা করছে, ছেলেরা মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করছে, অথচ তুমি কি না বসে বসে বাচ্চাদের সাথে গল্প করছো৷ এমন চিত্র সত্যিই আমায় ভাবিয়ে তুলেছিলো। তোমাকে কেমন অদ্ভুত মনে হলো৷ জানার ইচ্ছে হলো ভীষণ। এরপর থেকে তোমাকে জানতে শুরু করলাম৷ প্রায় তোমাকে ফলো করতাম। অথচ তুমি এসব টেরই পাওনি। কী অদ্ভুত মানুষ তুমি৷ একটা মেয়ে তোমাকে ফলো করছে অথচ তুমি টেরই পাও না৷
আমি খানিকটা অবাক স্বরে বললাম,
-আপুর বিয়ের পর থেকে ফলো করছিলে?
-হ্যাঁ।
-কেন করছিলে?
মেয়েটা চট করে জবাব দিতে পারলো না৷ থতমত খেয়ে গেল। আমার দিকে কেমন মায়াময় চেহারায় তাকালো। কী অদ্ভুত আকৃষ্ট করার মতো চাহনি। হেম মাথা নিচু করে বলল,
-জানি না।
আমি কেবল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মাঝে মাঝে মেয়েটার মাঝে কিছু একটা ভর করে যেন৷ আমার কেবল তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়৷ হেম নিচের দিকে তাকিয়েই বলল,
-প্রথম দিনেত পর থেকেই আমার জানি কী হয়ে যায়৷ কেমন জানি উন্মাদের মতো হয়ে যাই। কারণে অকারণে তোমার পিছু করতে শুরু করি৷ তোমার সম্পর্কে জানতে চাই। কেমন বিশেষ একটা আগ্রহ জাগে৷ আমার মাঝে অন্য রকম কিছু অনুভব হয়৷ অন্যরকম শিরশিরে কিছু তরল অনুভূতি।
আমি হেমের দিকে তাকিয়ে থাকলব। কোত্থেকে যেন এক ঝাক হিমশীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে গেল। আমার সমস্ত দেহ শিহরিত হলো অজানা কোনো কারণে৷ গা ভর্তি কিছু অজানা অনুভূতি। মনের ভেতর কেমন জানি একটা তোলপাড়। ঝড়৷ হেম এবার আমার দিকে সরাসরি তাকালো৷ তার চোখে বিন্দু বিন্দু জল৷
সে বলল,
-আমি খুব সাধারণ একটা পৃথিবীতে ছিলাম যেখানে সব কিছুই নিয়ম মতো হতো৷ কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমার সমস্ত কিছু বদলে যায়৷ আমার সাধারণ পৃথিবীর নিয়মে অনিয়ম ঘটে৷ এখানে ভোর হলে আজকল প্রবল আনন্দ আমার হৃদয়ের আঙ্গিনা ছুঁয়ে যায়৷ সন্ধ্যা ক্লান্তি টেনে যখন বাসায় ফিরি তখন মনে হয় নিজের মূল্যবান কিছু রেখে যাচ্ছি৷ বুক ভরা কী ভীষণ শূন্যতা অনুভব হয় তা যদি তুমি বুঝতে! রোজ রাতে আমি তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমাই৷ তোমায় নিয়ে কল্পনা করি৷ তুমি আমার সামনে বসে আছো রোবটের মতো৷ আমি নানান গল্প করছি৷ তুমি কেবল সেসব শুনে যাচ্ছে। একজন মনোযোগী শ্রোতার মতো।
হেমকে কেমন অচেনা লাগছে আমার৷ কেমন অন্যরকম। তার চেহারায় অদ্ভুত একটা ভয়ের ছাপ। সে যেন ভীষণ ভয়ে কথা গুলো বলছে। হেম আমার দিক থেকে চোখ সরালো না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো৷ বলল,
-আমার সমস্ত পৃথিবী উজাড় করে দেয়া এই পুরুষটি জানে না সে ধীরে ধীরে আমার কতটা আপন হয়েছে৷ তাকে আমি কতোটা যাই৷ আমার ভেতরের কতোটা জুড়ে তার বিস্তার৷ সে জানে না, সে আমার অনুভূতির সাথে একদম মিশে গেছে। তার দৃষ্টি দেখেই আমি বুঝে যাই মানুষটা কি চায়৷ কী বলতে চায়।
হেম আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার চোখে জল। আমি স্থবির হয়ে আছি। বললাম,
-সত্যিই বুঝো? বলতো এই মানুষটার চোখ দুটো কী বলতে চাইছে এখন?
হেম চোখ সরিয়ে নিলো। আমি জানি সে এই কথাটা বলবে না৷ সে আমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছে৷ আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। গা ঘেঁষে বসা৷ আমি চট করেই তার একটা হাত ধরে ফেললাম। মেয়েটা যেন হঠাৎই কেঁপে উঠল৷ তার শরীরে যেন অদ্ভুত একটা তোলপাড় বয়ে গেল। সে অস্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো৷ আমি বললাম,
-আমার পছন্দ বালিকা দু'জন। তারা কে জানো? একজন হচ্ছে হেম। অন্যজনের নাম লতা৷ নাম দুটো ভীন্ন৷ অথচ মানুষ একজনই।
হেমের চোখের কোনা বেয়ে টুপ করে এক ফোট জল গড়িয়ে পড়লো। আমি রুমাল বের করে তা মুছে দিয়ে বললাম,
-প্রথম দিনেই তুমি কাউকে কাবু করে ফেলেছো৷ চট করেই ঢুকে গিয়েছো তার বুকের গভীরে৷ এরপর এমন ভাবে মিশে গিয়েছো যেন ছাড়িয়ে নেয়াটাই দায়৷ নিলেই যেন দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার উপক্রম।
হেম কেন জানি কেঁদে দিলো। তার কান্নায় শব্দ হলো না।
আমি বললাম,
-এতো সুন্দর করে কাজল পরো, টিপ দাও, লিপস্টিক মাখো, এসব যে আমার কতোটা পছন্দ তা তো জানোই৷ তারউপর তুমি হয়েছো ঢং করা৷ আহ্লাদী। তবুও কেন জানি ভালো লাগে। অদ্ভুত প্রশান্তি পাই তোমায় দেখে। যেন বাদলের দিনে হঠাৎ সূর্য মামার হেসে উঠা একটা চমৎকার সকাল। আমার মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেক। আমি চাই এমন আরো হোক৷ খুব হোক৷
আমি তার পাশ থেকে উঠে গিয়ে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলাম। ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
-তুমি যদি আজ আমার এই হাতটি ধরো তবে আমি আর জীবনেও ঠোঁটে সিগারেট নেবো না। বরং আমার ঠোঁট তোমার লিপস্টিকের রঙে রঙ্গিন হলে খুশি হবো৷ তুমি কি তা চাও মেয়ে?
হেমের চেহারা আচমকা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। জল ভরা চোখে সে কী দারুণ একটা হাসি দিলো। আমি কিছ্য বুঝে উঠার আগেই সে জড়িয়ে ধরলো আমায়৷ একদম মিশে গেল আমার বুকের সাথে৷ তারপরেই গা কাঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো সে। আমি চুপচাপ তার চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকলাম। বুকটা কেমন পাতলা লাগছে৷ শীতল একটা অনুভূতি হচ্ছে৷ অনুভূতিরা আজ চরম সীমানায়। আজ হঠাৎই তারা তাদের অনুভূতি সৃষ্টির কারিগর পেয়ে গেল৷ এমন এক কারিগর যে অনুভূতি থেকেও অনুভূতি সৃষ্টি করে৷ তার নাম হেম। হেমলতা চৌধুরী।
.

গল্পঃ হেমলতা।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url