গল্পঃ অদেখা অশ্রুজল।

"অদেখা অশ্রুজল" 


আমার কিছুই ভালো লাগে না।বেশ কিছুদিন ধরে আমার মনে কেমন জানি খারাপ লাগা শুরু করে।কোন কিছুতেই আমার মন বসে না।সবার সাথে খারাপ ব্যাবহার করি।এমনকি নিধির সাথেও।কারো সাথে ভালোভাবেই কথা বলতে পারি না।তাই মা বলল ডাক্তার দেখাতে।তাই ডাক্তার দেখাতে আসলাম।
ডাক্তারের কাছে এসে আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম।সাথে অবাক আর বিস্ময় তো আছেই।ডাক্তার মেয়েটা কি জানি লিখছিল। মাথা না উঠিয়েই বলল,
তার পরের জন আসেন
আমি তখন দরজায় দাড়িয়ে ছিলাম।আমি গিয়ে দাঁড়ালাম তার ডেক্স এর সমনে।
ও আবার না দেখেই বলল,
বসুন 
আমি বলসলাম না।দিব্যি দাড়িয়ে রইলাম।
আরে এই মেয়েকে তো আমি জানি।এগারো বছরের বন্ধুত্ব ওর সাথে আমার।কিন্তু বছর তিনেক আগে ও হঠাৎই হারিয়ে যায়।তারপর আর খুঁজে পাই নি।তাই এক প্রকার অভিমান জমে গেছে ওর প্রতি।হঠাৎ ও বলে উঠল,
কি হল আপনাকে না বসতে,,,,,
ও আটকে গেল।আর বলতে পারল না।ততক্ষনে আমি আমার অবাক,বিস্ময় সব লুকিয়ে মুখে অভিমানী ভাব তুলে ধরলাম। ও দাড়িয়ে গেল।ও বলল,
কি রে তুই,,,,?
আমি বললাম,
মানে,,,,?
ও বলল,
কেমন আছিস তাসফি??
ভালো।কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে,,,?
কিরে তুই আমাকে চিনতে পারিস নি।আমি রুহি।তোর ছোট বেলার বন্ধু রুহি।
আমি বললাম
হ্যাঁ আমি রুহি নামে একজন কে জানি।তবে ও আমাকে রেখে নিজের সুখ খুঁজতে অন্য কোথাও মিলিয়ে গেছে।
ও বলল রাগ করিস না দোস্তো। আসলে আমি যাওয়ার আগে কাউকেই বলে যেতে পারি নি।আসলে স্কলারশিপ টা আমার খুব দরকার ছিল।তাই তাড়াতাড়িইই চলে গেছি।
আমি বললাম, 
তাই বলে আমাকে এক বার জানিয়েও যাবি না।
ও বলল,
আমি তোকে জানাতেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম তুই আর নিধি "মন পুরি" পার্কে যাচ্ছিস, তখন আর তোর সাথে দেখা করি নি।
আমি বললাম,
কেন,,?ওই দিন আমার সাথে দেখা করতে গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত।(এমন হয় আমার। সবার সাথেই খারাপ ব্যাবহার করা শুরু করি।)
ও শান্ত গলায় বলল,
রাগ করিস না ভাই আমার। আচ্ছা যা এই কান ধরেছি। হয়েছে??
হুহ কান ধরা লাগবে না।
প্লিজ,প্লিজ প্লিজ ক্ষমা করে দে না।
আমি বললাম,
আচ্ছা ঠিক আছে।তবে আর কখনো যদি হারিয়ে যাচ তবে কোনদিনই ক্ষমা করব না।
আমার ফোনটা বেজে উঠলল।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি নিধির নাম্বার। ফোন ধরলাম না।ও বলল,
নিধির কি খবর রে
আমি বললাম,
এইত আছে ভালো।
কিন্তু তুই এখানে কেন,,,,?
এই যা ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
"""""""
"""""""
ও আমাকে দেখছে,কি কি সমস্যা জানার চেষ্টা করছে।আমার খুব ভালোই লাগছে। পিচ্ছি রুহি আজ কত বড় হয়ে গেছে।হ। হা হা।মনের ওজান্তেই হাসি চলে আসল।
কিরে হাসছিস কেন,,,,,?
নাহ।এমনি,,,
বলতে বলছি।বল হাসলি কেন,,,?বল।
আচ্ছা বলছি।হাসার কারন টা হল আমাদের পিচ্ছি রুই মাছটা (নিক নেইম। ওকে খেপাই এই নাম দিয়ে) আজ কত বড় হয়ে গেছে।
দাড়া তুই আজ তোর খবর আছে।আমি পিচ্ছি।আমি রুই কাতল,,,?হুহ!!
এই বলে আমাকে মারা শুরু করল।
আমি বললাম,
রুগি কে এভাবে মারলে তোর অন্য রুগি সব ভাগবে,,,,হ। হ। হা
চুপ হাসবি না।
আবার ফোনটা বেজে উঠল।কিন্তু আমি তাকিয়ে দেখে অবাক হলাম
নিধি দশ বার টা মিসডকল দিয়েছে।কলই দিয়েছে।সেগুলো ধরতে না পারায় মিসডকল এ রূপান্তরিত হয়েছে। আমি ওকে বললাম,
আমি যাব রে।আমার কি করতে হবে বলে দে।
ও বলল,
তোর রোগ টা তেমন না।তোকে কোথাও ভ্রমণ করতে হবে।কিছুদিন ঘুরে আসলে তোর আবার ভালো লাগতে শুরু করবে।
আমি বললাম,
আচ্ছা আজ আসি তাহলে তোর ফোন নাম্বার টা দে তো
ও বলল,
আমি আগের সিমটাই ব্যাবহার করি।
*
নিধির পরিচয়টা দেওয়া দরকার। নিধি হল আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা।ও আমাকে এত ভালোবাসে এত ভালোবাসে যা বোঝানোর সাধ্যি আমার নেই।ও যেন ওর ভালোবাসায় আমাকে উন্মদ করে দিবে।সত্যি বলতে আমি ওর ভালোবাসায় পাগল পারা।মেয়েদের এই এক সমস্যা, যাকে ভালোবাসবে তাকে সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসবে।
ও ফোন দিচ্ছে।তাই চলে আসলাম। রুহি হয়ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। তাই কিছু বলে নি।তা না হলে কথা বলতে বলতে আমার কান ঝালাপালা করে দিলও।ও এমনই।আমারো খারাপ লাগে না।
রাতে রুহি নিজেই ফোন দিল।।যদি আমার অমত না থাকে তাহলে আমি আর ও  কক্সবাজার গিয়ে ঘুরে আসব।এমনটাই ও বলেছিল।।আমারও যাওয়া দরকার ছিল।তাই ওকে হ্যাঁ বলে দিলাম।
আমরা দুজনেই এখন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এ দাড়িয়ে আছি।আমি ওকে বললাম,
জানিস আমার না এসব কিছুই ভালো লাগে না।কেমন জানি মনে হয়।
জবাবে ও বলল,
একটু ঘুরাঘুরি কর। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই আসলে মানসিক সমস্যায় ভুগছিস। তাই এমন হচ্ছে।চিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি বললাম,
হুম তাই যেন হয়,,,!!!
আজ সহ তিন দিন হবে আমরা যে এখানে আছি।নিশ্চই দুইটা রুম ভাড়া নিয়ে থাকি।(মানুষের মন,কোন সময় কি ভাবে তার ঠিক নেই।)এখানে এসে আমি নিজের মধ্যে অনেকটাই পরিবর্তন লক্ষ করলাম।এখানে আসার পর রুহির সাথে আমার বেশ কয়েকবার জগড়াও হয়েছে। কিন্তু ও কিছু মনে করেনি।এমনটাই স্বাভাবিক। আমি যে এখানে আছি এটা নিধিকে জানাই নি।কেন জানাই নি সেটা আমি নিজেও জানি না।আমার কোনকিছুরই ঠিক ছিল না।আজ সহ পাঁচ দিন।আমি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আছি।ওর সাথে ঘুরতে আমার ভালোই লাগছে। ভার্সিটি লাইফেও আমি আর ও এভাবেই ঘুরতাম। কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ হারিয়ে যেতাম।।এখানে আসার পর আমি আমার ফোনিটা হারিয়ে পেলি।মাকে বলে এসেছি।কিন্তু তবুও আমার চিন্তা হচ্ছে। আমার মা এমনিতেই চিন্তা করে বেশি আমার জন্যে। যদিও ঘরে ছোট বোন আছে তবুও চিন্তা হচ্ছে।আমি আরেক জন কে বলে আসিনি।যে আমার সব কিছু জানার অধিকার রাখে।যে আমাকে পাগল এর মত ভালোবাসে।আর আমি স্বার্থপর এর মত নিজের ভালোর জন্যে ঘুরতে আসছি।মেয়েটা আমাকে ভালোবাসা দিয়েছে অনেক।কিন্তু আমি ভালোবাসার চেয়ে অবহেলা করে আসেছি।এমনকি এখানে আসার সময়ও আমি ওর সাথে খারাপ বিহেভ করে এসেছি।নাহ!!  আমি আর নিতে পারছি না।এ আমি কি করলাম। আমি এখন সুস্থ।তাই আমার আর এখানে থাকা উচিৎ নয়। আমাকে আবার আমার জগৎ এ ফিরে যেতে হবে।আমার মায়ের কাছে।আমার নিধির কাছে।হঠাৎ রুহি বলে উঠল,
দোস্তো দেখ,ফেবুতে আমাদের এই ছবিতে লাইক বেশি পড়েছে।
আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল। আমি ওকে বললাম তুই আমাদের ছবি ফেবুতে ছেড়েছিস???
হুম,,কেন,,,?কোন সমস্যা,,,,?
আমি এখন মনপুরা পার্কে বসে আছি।আমার ডান পাশে নিধি।
কান্না করতেই আছে।থামার কোন নাম গন্ধ নেই।ঠিক বাম পাশেই রুহি।বিস্মিত চোখে একবার নিধিকে দেখছে আবার আমাকে দেখছে। আমরা তিন জনই একটা বেঞ্চ এ বসে আছি।আমাদের ঠিক সামনেই,দশ হাত দুরে হবে কয়েকটা ফুলগাছ লাগানো আছে।অদ্ভুত ফুল গুলো। আমি কখনই এই ফুল দেখি নি।আমি এখানে আসলেই ওই ফুল গুলো কে দেখি।কেমন জানি আকৃষ্ট করে আমাকে।তার উপর দুইটা প্রজাপতি উড়ে। অদ্ভুত প্রজাপতি গুলো
  একটা বড় আরেক টা ছোট। সেগুলোর কাহিনী  পরে এক গল্পে বলব।প্রজাপতি গুলো সারাদিন এখানে থাকে।এখানেই উড়ে বেড়ায়।আমার খুব পছন্দের পার্ক এই মনপুরি।
এতক্ষণ আমি ফুল গুলো আর প্রজাপতি দু'টো কে দেখছিলাম।ততক্ষনে রুহি বেপারটা নিধিকে বুঝিয়ে বলেছে।আমার খোঁজ না পেয়ে নিধি সুইসাইড করতে গিয়েছিল।আমি যখন  আসলাম তখন নিধি হাসপাতালে ছিল।অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ ও খেয়ে পেলে।আমি রুহির ফোন দিয়ে ফেবুতে ডুকি।নিধির অনেক গুলো মেসেজ। যা পড়ে আমার অবস্থা বেগতিক হয়ে যায়।আমি বসে পড়ি।রুহি মেসেজ গুলো দেখে।ও কেমন জানি অপরাধি চোখে আমার দিকে তাকায় সেদিন।আমি কিছু বলি নি।শুধু বলেছি আমি এখনি ঢাকায় যাব।যখন হাসপাতালে আসলাম নিধি আমাকে অনেক অপমান করে।নিচ,ছোটলোক,স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক বলে আমাকে আঘাত করে। নাহ,,!আমি কষ্ট পাই নি।এ অবস্থায় যে কেউই এগুলো বলবে।আমিও তাই করতাম। আমার উচিৎ ওর ভুল ভাংগানো।তাই আজ ওকে শেষ দেখা করতে বললাম। এখানে যদি প্রমান হয় আমি বিশ্বাসঘাতক তাহলে আর কখনও এই মুখ ওকে দেখাব না।অনেক কষ্টের পর রাজি করাই ওকে।
হঠাৎই কেউ আমার হাতটা শক্ত করে ধরল।আমি চমকে উঠলাম।নিধি চল চল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হাতটা শক্ত করে ধরেই জড়িয়ে ধরল আমাকে নিধি।কেঁদেই দিল ও।রুহি চলে যাচ্ছে। ওকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। ডাক দিয়ে ধন্যবাদ দিলাম।ও শুধু মৃদু হাসল।নিধি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
আর কখনো যদি আমাকে ফেলে চলে যাও তাহলে তোমার খবর করে ছেড়ে দিব।শয়তান ছেলে!!!তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার কষ্ট হয় না? আর কখনও এমন করবা না এই বলে দিলাম।  
কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলল নিধি।আমি শুধু বললাম 
হুম
।আর কখনও করব না।
ও আর কিছুই বলল না।শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
গোধুলির এই সূর্য ডোবা সময়ে দুই কোপতকোপতির এই মনোরম দৃশ্য পরিবেশ টাকে সুন্দর করে তুলেছে।আনন্দ ময় করে তুলেছে।ভালোবাসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শুধু ভালোবাসা।যা অনেকেই মুগ্ধ নয়নে দেখছে। কিন্তু আরেকটা দৃশ্য, যা সবার অবচেতনেই হয়েছে।  সবার চোখের আড়ালেই ঘটেছে।রুহি!!! যে মেয়েটা এক সময় তাসফি কে খুব ভালোবাসত।কিন্তু ভয়ে বলত না।ও ভাবত বন্ধু যখন হয়েছি তখন ও আমাকেই ভালোবাসবে।কিন্তু ওর ধারনাটিকে ভুল প্রমানিত করে তাসফি জানায় ও নিধি নামক একটা মেয়েকে ভালোবাসে।নিধির সাথে তাসফি কে মিলিয়ে দেয় এই রুহি।কিন্তু এই তাসফি জানেনা তার জন্যে রুহির কাছে কত ভালোবাসা রয়েছে।জানেনা কারো মনে তার জন্যে এক বুক ভালোবাসা রয়েছে।সে জানেনা কেউ তার জন্যে চোখের জল ফেলছে। যা ঘটেছে তা সবার অন্তরালেই। তারকিছুদিন পরেই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায় রুহি।সেই দিন ও খুব কান্না করল।তারপর আর কান্না করে নি।  কারন আর চাইলেই কান্না করা যেত না। চোখের জল গুলো যে শুকিয়ে গিয়েছে।  কিন্তু আজ,,!!!
আজ ওদের চোখের আড়াল হতেই কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পড়ে রুহি।ওর এই কান্না কেউ দেখে না।রুহি ওর চোখের জল তাসফি কে দেখাতে পারে নি।অদেখা রয়ে যায় রুহি অস্রু।
নিজের কষ্ট গুলো।নিজেকে সম্পুর্ন ভাবে উপস্থাপন করতে পারে নি রুহি।এটা তার অপুর্নতা।যার শাস্তি সে প্রতিদিন পাচ্ছে এবং পাবে।
নিজে কষ্ট পেলেও নিজের ভালোবাসার মানুষ টা যেন সুখে থাকে এটাই শেষ চাওয়া রুহির।
ভালোবাসা রইল এমন রুহিদের জন্যে। সাথে শ্রদ্ধাও।(কাল্পনিক)
.
ভুলত্রুটি মার্যনীয়
তাসফি আহমেদ


Bangla-choto-golpo-বাংলা-ছোট-গল্প

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url