গল্পঃ মূহুর্ত বদল - প্রথম পর্ব | লেখক - তাসফি আহমেদ।

গল্পঃ মূহুর্ত বদল - প্রথম পর্ব | লেখক - তাসফি আহমেদ।

গল্পঃ মূহুর্ত বদল - প্রথম পর্ব | লেখক - তাসফি আহমেদ।


গল্পঃ মূহুর্ত বদল - প্রথম পর্ব | লেখক - তাসফি আহমেদ।


বাসাতে ঢুকতেই দেখলাম এক ভদ্রলোক সোফায় বসে আছেন৷ স্যুট-কোট পরা ভদ্রলোক। তিথির সাথে কথা বলছিলেন৷ দু'জনেরই হাস্যজ্বল চেহারা৷ আলোচনার বিষয়বস্তু মধুর ছিল নিশ্চিত। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেখেই তিথির চেহারার হাসিটা মুছে গেল। মুহুর্তে তার চেহারা ছাই বর্ণের হয়ে গেল। ইদানীংয়ের মতো কেমন কর্কশ স্বরে বলল,

-উনি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছেন।
কথাটা বলেই তিথি ভেতরের ঘরে চলে গেল। আমি বাজারের ব্যাগ হাতে রেখে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমার হাসিতে আকর্ষণীয় কিছু নেই৷ মলিন চেহারার শুকনো হাসি কারোই ভালো লাগে না। ভদ্রলোকেরও লাগেনি। তিনি আমার দিকে অপ্রস্তুত হয়ে তাকিয়ে থাকলেন কেবল। ঠোঁটের কোণে মৃদু অপ্রস্তুত হাসি এসেও যেন আসছে না তার। আমি বললাম,
-একটু বসুন প্লীজ৷ আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসি৷
ভদ্রলোক এবার হাসলেন। কিছু বললেন না৷ আমি আড় চোখে তাকে দেখলাম আবার। সুদর্শন চেহারার এই মানুষটাকে আমি এর আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হলো না। কে এই মানুষ? তার এতোটা স্মার্ট হয়ে আমাদের বাসায় আসার কারণ কী?
একটু ভালো করে তাকাতেই তার হাতে একটা খাম দেখলাম৷ খাম? খাম কেন? এই লোক খাম হাতে কেন এলো? তখনই আমার মাথায় চিন্তাটা এলো। তিথি কি তাহলে উকিলের সাথে কথা বলে ফেলেছে? ইনিই কি সেই উকিল? আশ্চর্য! তিথি এটা কীভাবে করতে পারলো৷ এসব করছে কী ও? তার মাঝে কি তাহলে বিতৃষ্ণা চলে এসেছে? সে কি মুক্তি চায়? আমাদের ছোট্ট ছেলেটার কথাও কি সে ভাববে না?
আমার মাথাটা ভার হয়ে এলো। আমি ভেতরের ঘরে চলে এলাম। রান্নাঘরের কাছে বাজারের ব্যাগটা রাখতেই দেখলাম তিথি এক মনে ফল কাটছে৷ আপেল আর মাল্টা। আঙ্গুরও আছে। আমি বলল,
-এসব পেলে কই?
তিথি জবাব দিলো না৷ শুনলো বলেও মনে হলো না৷ ইদানীং তিথি আমার কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেয় না। দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না৷ এক প্রশ্ন বারবার করলে সে চেহারায় রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে তাকায়৷ তার এমন চেহারা দেখলে আমি আর কিছুই বলতে পারি না৷ চুপ করে থাকি।
আজকাল তিথিকে বড্ড অচেনা মনে হয়। তাকে আরেকটা প্রশ্নও করার ছিল৷ সে কি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে? উকিলের সাথে কথাবার্তা বলে ফেলেছে? বসার ঘরের ভদ্রলোকই কি সেই উকিল? কিন্তু কেন জানি কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। বাথরুমে চলে এলাম। মাথায় তখন রাজ্যের চিন্তা। প্রথম চিন্তা হচ্ছে সুদর্শন ভদ্রলোককে নিয়ে৷ দ্বিতীয়টি হচ্ছে ভদ্রলোকের হাতের খামটি নিয়ে। তিথি কি আসলেই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে? বিশ্বাস হচ্ছে না৷ আমার কেমন জানি লাগছে৷ কেমন বাধাহীন অস্বস্তিবোধ কিংবা কোনো অপ্রাপ্ত অনুভূতি হচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো আমার কী যেন নেই। কিছু একটা যেন ছুঁটে যাচ্ছে আমার ভেতর থেকে। আশ্চর্য, এমন কেন মনে হচ্ছে?
.
তিথির সাথে আমার একটা সময় গভীর প্রেম ছিল। তরুণী তিথি প্রায়ই শাড়ি পরে তাদের বাসার ছাদে হাঁটাহাঁটি করতো৷ আমি এ-পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে আড় চোখে তা খুব লক্ষ্য করতাম। খোলা চুলে এই তরুণীকে শেষ বিকেলের আলোয় অন্য রকম দেখাতো৷ তার চেহারার মায়া, ঠান্ডা আচরণ এবং বেশি কথা না বলাটা আমায় বেশ আকর্ষণ করতো। হালকা-পাতলা গড়নের এই মেয়েটি যখন আমার দিকে ভুল করে তাকাতো তখন আমার বুকের ভেতর কেমন জানি ঝড় শুরু হয়ে যেতো। অদ্ভুত এক আনন্দঘন অনুভূতি আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরতো৷ কোথা থেকে জানি একঝাঁক কোমল বাতাস হুটহাট আমাকে ছুঁয়ে যেতো। কেমন শিরশিরে অনুভূতি জাগাতো।
সেই তিথি এক অনবদ্য কন্যা ছিল। যার চোখ ছিল তীক্ষ্ণ। যার কাজল ভরা চোখে যেন রাজ্যের মায়া লেপ্টে থাকত। সে যখন মৃদু হাসত তখন তাকে আশ্চর্যরকম সুন্দরী লাগত। আমার বুকের ভেতরটা কেমন শীতল হয়ে যেত। এক ঝাক প্রশান্তি যেন আমায় ছুঁয়ে যায় মূহুর্তে।
সে সময় এই তিথির প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছিলাম৷ তখন আমি অনুভূতির এক অতল গহ্বরে ডুবে আছি। সব কিছু অসাধারণ লাগতো তখন৷ প্রেমের শীতল শিহরণ কি অনিন্দ্য ছিল।
আহা! কী অসাধারণ সময় ছিল তখন৷ কতো মুগ্ধতা ছিল নিজের মাঝে। কতো মুগ্ধমায়া ছিল তিথির চোখে, কাজলে, হাসিতে, চঞ্চলতায়। এখন কী সে সব নেই? নাকি আমি খেয়াল করি না৷ অর্থাভাব কি আমাকে দিক হারা করে ফেলছে? আমি কি এখন আর তিথিকে ভালোবাসি না? তিথি বাসে? বাসলে নিশ্চয়ই আজ উকিল ডাকতো না৷
আমি পানির কল ছেড়ে দিলাম৷ ধীরে ধীরে মুখে পানি ছিটতে থাকলাম। নিজের চেহারাটা অনেকদিন দেখা হয় না আয়নায়। চেহারার সেই উজ্জ্বলতা কি এখনও আছে? নিজের মাঝে কি কোনো অবশিষ্ট মুগ্ধতা আছে যা দেখে এক সময় তিথি আমার প্রেমে পড়েছিল? নেই বোধহয়। থাকলে তিথি নিশ্চয়ই ডিভোর্সের কথা ভাবতো না!
তিথি আমাকে ডিভোর্স দিলে আমার কিছুই করার থাকবে না৷ আমি কিছুই করতে পারব না। এই মেয়েটিকে আঁটকানোর কোনো অধিকার আমার নেই৷ কোনো অধিকার আমি রাখি না৷ একটা মানুষ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে পারে। কষ্টের মাত্রা তীব্র হয়ে গেলে সেখানে বিষাদ ছাড়া আর কিছুই বেঁচে থাকে না৷ সমস্তই তখন তিক্ত লাগে৷ তিথির কাছে কি সব কিছুই তিক্ত লাগছে? আমি, আমার এই ছোট্ট সংসার, এই সমস্তই কি তার কাছে এখন তিক্ত লাগে? বিষাদ লাগে? তাহলে কি তিথি এ জন্যেই নিশিরাতে একা একা বসে কাঁদে৷ কী আশ্চর্য ব্যাপার। মেয়েটা এখন আর আমাকে কিছু বলে না৷ কোনো কষ্ট ভাগ করে না৷ যা হয় নিজের ভেতর রাখে৷ নিজে গিলে খায়৷
অথচ এই তো ক'বছর আগের কথা, আমরা তখন কষ্ট ভাগ করে নিতে শিখেছিলাম। তখন সদ্য তিথিকে আবিষ্কার করি আমি৷ দূর থেকে যাকে লাগে শান্ত-নীরব কাছে এলেই সে যেন প্রাণচঞ্চল। তখন তিথির সাথে সবে বন্ধুত্ব হয় আমার৷ টুকটাক কথা দিয়ে শুরু হয় একটা গভীর বন্ধুত্ব। সে সময়ই আমি আবিষ্কার করি, এই মেয়ে একদম শান্ত নয়৷ দূর থেকে তাকে যতোটা শান্ত-নীরব লাগে, কাছে এলেই সে ততোটা চঞ্চল। তিথিকে আমার মনে হতো বন্দী পাখির মতো৷ কোনো একটা অদৃশ্য বাঁধন মেয়েটা যেন বন্দী করে রেখেছিল এতোকাল৷ হঠাৎ সেই অদৃশ্য বন্দী বাঁধন ছিড়ে যেতেই সে যেন মুক্ত হয়ে যায়৷ খোলা আকাশে মুক্তভাবে ডানা ঝাপটে উড়তে থাকা পাখি মনে হতো তাকে৷
আমাদের বন্ধুত্বের পর সে নির্দ্বিধায় আমার সাথে মিশতো৷ তার মাঝে কোনো জড়তা ছিল না৷ কোনো অস্বস্তিবোধ ছিল না৷ যেন সে মন থেকেই মিশছে। আমি যেন আরো মুগ্ধ হলাম তার প্রতি৷ তার কাণ্ড কলাপ যেন আমাকে তার প্রতি আরো কিছুটা অগ্রসর করলো৷ আমি একটু একটু করে ডুবছিলাম যেন৷
সময়ের সাথে আমাদের সম্পর্কটা গভীর হয়৷ এতোটা গভীর হয় যে সেখানে থেকে বেরিয়ে আসাটা আমার জন্যে অসম্ভব ছিল৷ আমি পারছিলাম না আসলে৷ নিজের ভেতরে কতোগুলো অব্যক্ত কথা জমে জমে পাহাড় হয়ে আছে৷ সে গুলো কেবল প্রকাশের অপেক্ষা করে৷ নিজেকে মেলে ধরতে চায়৷ মাঝে মাঝে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না৷ হুটহাট কিছু কথা যেন আপনা আপনিই চলে আসতো৷ সেটাকে বাধা দেওয়া ছিল চরম মুশকিল কাজ৷
মাঝে মাঝে তিথি একটা প্রশ্ন করতো,
"অ্যাই, তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?"
তার এই প্রশ্নটা ছিল আমার জন্যে সবচে জটিল প্রশ্ন। যার উত্তরটা আমার জানা। অথচ আমি এই জানা উত্তরটাই ঠিক ভাবে দিতে পারতাম না। তার প্রশ্নটা এতোটা জটিল যে আমাকে চুপ করিয়ে দিতো৷ আমাকে নিস্তব্ধ করে ফেলতো। আমার চারপাশ যেন নীরব হয়ে যেতো৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তার চোখে চোখ রাখতাম। কী তীব্র মায়া নিয়ে মেয়েটা আমাকে দেখছে৷ আমি বলতাম,
"তোমার কী মনে হয়? কাউকে পছন্দ করি?"
সে অন্য দিকে তাকিয়ে বলতো,
"আমার কি মন বোঝার ক্ষমতা আছে? আনি তো জ্যোতিষ না।"
"তাও বলো। অনুমান করে!"
তিথি নীরব থাকত কিছু সময়। তারপর বলত,
"উমমম! আছে বোধহয়। চোখে মুখে প্রেম প্রেম ভাব রয়েছে!"
বলে মৃদু হাসত সে। কী এক অভিনব ভঙ্গিমা নিয়ে কথাটা বলতো সে৷ আমিও হেসে ফেলতাম। তার দিকে তাকিয়ে বলতাম,
"আছে কেউ৷"
সে বেশ অবাক ভাব ধরতো,
"আল্লাহ তাই! সত্যি আছে? আমাকে বলো না সে কে? আমি তাকে দেখতে চাই৷ দেখাবা আমাকে?"
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসতাম। কিছু বলতাম না৷ মেয়েটা জোর করতো৷ বলতেই হবে আজ। আমি বলতাম,
"তিথি, আমি এক মায়াবতীকে ভালোবাসি৷ এক ঘোর ধরানো মায়াবতীকে। তার মায়ার তীব্রতা এতো তীব্র যে তুমি সহ্য করতে পারবে না৷"
তিথি তাকিয়ে থাকতো৷ তার চেহারায় রাগী ভাবটা চলে আসতো দ্রুত৷ বলতো,
"তুমি বলবে না এই তো?"
সে নিশ্চুপ হয়ে যেতো৷ কোনো কথা বলত না। রাগ করতো৷ চেহারা ভরা অভিমান। সে আমার বন্ধু। তার সমস্তই জানার অধিকার আছে। অথচ আমি জানাই না৷ তার রাগ-অভিমান হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ সেই রাগ অভিমান আবার আমাকেই ভাঙ্গাতে হতো৷ ছলে, বলে, নানান কৌশলে।
একদিন আমি আর পারলাম না৷ আমার অদৃশ্য প্রেমিক পুরুষকে ভেতরে রাখা মুশকিল হয়ে গেল। তাকে সমস্তই বলে ফেললাম,
"তিথি, তুমি কি জানো স্রষ্টা তোমায় কতোটা নিপুণ ভাবে সৃষ্টি করেছে? তোমার চোখ, চেহারা, চুল সবই স্রষ্টার নিপুণতা নির্দেশ করে৷ তুমি তাঁর এক অকৃত্রিম সৃষ্টি। যাকে একবার দেখলে আবার দেখতে ইচ্ছে হয়৷ যার চোখের দিকে তাকালে সেই চোখের গভীরতা হারিয়ে যেতে হয়৷ যার মায়া একবার চেপে বসলে তা কাটানো যায় না৷ তোমার মায়া চেপেছে আমার উপর তিথি। আমিও সেই মায়া কাটাতে পারিনি। তুমি আমার ভেতরটা জয় করে নিয়েছো৷ আমি তোমার চোখের গভীরতায় হারিয়েছি৷ আমি তোমার মাঝে মুগ্ধতা পেয়েছি৷ চিরস্থির মুগ্ধতা। আমার এই পৃথিবী চাই না৷ আমি কোনো কিছুই চাই না৷ আমি কেবল মাত্র তোমাকে চাই৷ তোমাকে নিজের করে পেতে চাই৷ আমি চাই তুমি আমার হও৷ তোমার সমস্ত আমার হোক৷ তিথি, আমি কি তা চাও?"
তিথি অনেকটা সময় তাকিয়ে ছিল আমার দিকে৷ কী ঘোর ধরানো দৃষ্টি তার। ধীরে ধীরে তার চোখ ঘামলো৷ চোখের পাতা ভিজল। কিছু সময় পর তার গাল ভিজল৷ সে সশব্দে কেঁদে উঠল চট করেই৷ আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না৷ চুপ করে ছিলাম কেবল৷ ভয় হচ্ছিল৷ কথাটা বলে ভুল করে ফেললাম না তো! নিজের উপর রাগ হলো। কেন হঠাৎ কথাটা বলতে গেলাম? তিথি হুট করেই উঠে দাঁড়ালো৷ আমার দিকে না ফিরেই বলল,
"মাহমুদ, আমি বাসায় যাই৷ এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না আমার৷ বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে৷ আমার না ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কী এক অদ্ভুত খুশির কান্না৷ আমার এতো খুশি লাগছে কেন মাহমুদ?"
কথাটা বলেই তিথি চলে গেল। আমি বোকার মতো সেখানে বসে থাকলাম। হাসবো না কাঁদবো ঠিক ভেবে পেলাম না৷
আমাদের প্রেম হবার পর যে জিনিসটা সবচে কষ্টের ছিল সেটা হচ্ছে রাতের ঘুম৷ কারণ এই সময়টাতেই আমরা দীর্ঘ বিরতিতে থাকতাম। আমাদের কথা হতো না। মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে হতো রাতে ঘুম না যাই৷ সারাটাক্ষণ দু'জন মিলে কথা বলি৷ এতো এতো কথা বলি। আমাদের প্রেমে তেষ্টা ছিল ভীষণ। তৃপ্তি ছিল না। সেই অতৃপ্তিটা আমাদের ভালোবাসাকে বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে আসে৷ আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি৷ আমি তখন সবে চাকরিটাতে জয়েন করেছিলাম। সেই বলেই বিয়েটা করে ফেলা। এদিকে তিথির বাবা আমাকে মেনে নিতে পারেননি৷ তিনি আরো ভালো কাউকে আশা করেছিলেন তিথির জন্যে৷ আরো উচ্চপদস্থ, অর্থবান, প্রভাবশালী কাউকে। সে জন্যেই তিনি মেনে নেননি। আমার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন৷ এরপরই পালিয়ে বিয়ে করে ফেলা।
বিয়ের পর আমাদের দু'জনের চমৎকার একটা সংসার হয়েছিল৷ আমাদের প্রেমে তেষ্টা ছিল ভীষণ, অথচ আমরা তৃপ্ত হতাম না। এই অতৃপ্তিটাই আমাদের সম্পর্ককে আরো গভীর করে তোলে৷ আমাদের প্রেম-বন্ধন আরো গভীর হয়৷ আমরা দু'জন দু'জনকে আরো তীব্র ভাবে চাইতে শুরু করি।
এতো দিন পর, সেই গভীরতা কি আজো আছে? সেই তীব্র রকম চাওয়া পাওয়া? আমরা দু'জনেই কি আজ তৃপ্ত? নাকি তৃপ্তির প্রতি ভীষণ অনিহা জেগেছে আমাদের? অর্থাভাব কী সব কিছুকেই মেরে ফেলে? ফিকে করে দেয়? আমি কি এখন তিথির জন্যে কিছুই না? রাস্তার ময়লাটুকুর মতোও না?
আমাদের সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। আমাদের ছোট্ট একটা বাবু হয়৷ সেই বাবুটার বয়স এক বছরও হয়ে যায়৷ আমরা তাকে নিয়ে ভীষণ খুশি ছিলাম। আনন্দঘন এক অনিন্দ্য পরিবার আমাদের৷ অথচ এই আনন্দের মাঝেই বেদনা চলে আসে। সুখ কখনই চিরস্থায়ী হয় না৷ দুঃখও না৷ দুটোই ব্যালেন্স করে হয়। কিংবা দুঃখটাই হয়তো একটু বেশি হয়৷
আমরা ভেবেছিলাম ধাক্কাটা সামলে নিতে পারবো৷ অথচ আমরা তো এটা জানতাম না যে সুঃখ যতো গভীর হবে দুঃখটা ঠিক ততোটাই গভীর বিষাদময় হবে! কিংবা হয়তো তারচে বেশি কিছু।
চাকরি জীবনে আমি দু'পয়সা ঘুষ নেইনি৷ কেউ খুশি মনে কিছু টাকা দিতে চাইলেও নিতাম না৷ আমি পরিশ্রমে বিশ্বাসি ছিলাম। হারাম পয়সা নিয়ে কারো গলায় পাঁ দিতে চাইনি৷ কারণ আমি জানি ঘুষটা কতোটা খারাপ৷ যার থেকে ঘুষ নেয় তার কী অবস্থা হয়। তার পারিবারিক অবস্থা কতোটা জঘন্য হয়ে দাঁড়ায়৷ যা হারাম, হারামই৷ আমি এড়িয়ে যেতাম। ঠিক সেটাই কারো পছন্দ হয়নি৷ কিংবা অন্য কিছু। আমার নামে অফিশিয়াল নোটিশ আসে৷ অফিসের টাকা লুটের অভিযোগ। অনেক গুলো টাকার হিসেব নেই৷ সেগুলো নাকি আমি সরিয়েছি৷ পাশাপাশি আমি মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে৷ সেই অভিযোগের প্রধান সাক্ষী হয় আমার অফিসের সবচে প্রিয় কলিগ রায়হান ভাই৷ আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু বলতে পারছিলাম না৷ কী থেকে কী হয়ে গেল। আমি রায়হান ভাইয়ের কাছে গেলাম। বললাম,
"ভাই, এসব কী?"
উনি খানিক হেসে বললেন,
"আপনাকে আমি প্রায়ই বলতাম ভালো মানুষের ভাত এই দেশে নেই৷ আপনি তো শোনেনইনি।"
"কিন্তু ভাই আমি তো কোনো ঘুষ কিংবা টাকা নেইনি অফিস থেকে। তাও কেন? সাক্ষী হিসেবে আপনার নাম দেখলাম।"
উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
"মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছি ভাই।"
এই বলেই তৃপ্তির হাসি দিলেন। আমি মুখ কালো করে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। এরপর মাথা নিচু করে নিলাম। অফিস থেকে যখন বের হচ্ছিলাম তখন নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছি। বুক ফেটে কান্না আসছিল। তীব্র চিৎকার দিতে মন চাচ্ছিল। অথচ আমি তার কিছুই করতে পারিনি
.

গল্পঃ মূহুর্ত বদল
(প্রথম পর্ব)
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url