ভালোবাসার গল্পঃ প্রাশান্তির দীর্ঘশ্বাস | লেখকঃ তাসফি আহমেদ।

ভালোবাসার গল্পঃ প্রাশান্তির দীর্ঘশ্বাস | লেখকঃ তাসফি আহমেদ।



ভালোবাসার গল্পঃ প্রাশান্তির দীর্ঘশ্বাস | লেখকঃ তাসফি আহমেদ। 



"আপনি তো খুব ব্যস্ত মানুষ। একবার দেখা করার সুযোগও আপনার হয় না।"


আমি চুপ করে থাকলাম। মিহিনও চুপ করে আছে। কিছু সময় বেশ নীরবতায় কাটে। কেউ কোনো কথা বলি না। খানিক পর মিহিন বলে,

"এতো ব্যস্ত হলে প্রেম করার দরকার নেই।"


আমি এবারেও চুপ করে থাকি। মিহিন বেশ রেগে আছে। রেগে থাকলে সে অনেক কিছুই বলে। তুমি থেকে চট করেই আপনিতে চলে আসে। সে এক অভিমানী কন্যা৷ আমার প্রতি অভিমান যেন একটু বেশিই।


এদিকে ভীষণ শীত৷ মাঝে মাঝে মৃদু বাতাস যখন গা ছুঁয়ে যায় তখন সমস্ত গা শীতল হয়ে যায়৷ গা কাঁটা দিয়ে উঠে৷ আমি বলি,

"গ্রামে ভীষন শীত মিহি।"

"আমাকে মিহি বলে ডাকবেন না৷"

"তো কাকে বলে ডাকবো?"

"সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? আমি কী জানি?"

"আমি মিহি বলে ডাকি কেবল একজনকে। সারাজীবন এই একজনকেই ডাকবো৷ আর কাউকে ডাকবো না।"

"সেটা আপনার ইচ্ছে৷ এসব নিয়ে আমার সাথে আর কথা বলবেন না৷"

"তাহলে কি মিহি ডাকাটা বাদ দিয়ে দিবো?"

"আশ্চর্য! আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? আমি এসব জানি না৷"


আমি খানিকটা চুপ করে থাকি। মিহিন মিনমিন করে বলে,

"মিহি নামটা একেবারে জীবন থেকেই বাদ দিয়ে দিন না! আর রাখার দরকার কী?"


আমি এবারেও চুপ করে থাকলাম। মিহিনও চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম,

"এখানে অনেক জোনাকি দেখা যায় মিহিন।আমি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে এদের দেখছি৷ জানো, একটা জোনাকি আমার গায়েও বসেছিল। কী অসাধারণ লাগছিল তখন!" 


মিহিন চুপ করে থাকলো৷ কিছু বলল না৷ আমি আবারও বললাম,

"মিহিন, আমি অনেকক্ষন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি। এখানকার অন্ধকারটাও অসাধারণ।"

"আপনার কাছে তো দুনিয়ার সব কিছুই অসাধারণ লাগে৷"

আমি মৃদু হাসি,

"আমার স্রষ্টার নিপুণ হাতে সৃষ্টি। অসাধারণ লাগবে না?"

"আপনি হাসবেন না প্লীজ। আপনি হাসলে আমার গা জ্বলে।"

"গা জ্বলে? তবে কি আমি হাসা বন্ধ করে দিবো? নাকি যে মানুষটার গা জ্বলে তার উচিৎ আমাকে ছেড়ে দেওয়া?"

"বাহ! বেশ তো। এবার ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলছেন তিনি৷ ভালো ভালো৷ খুব ভালো।"

"আমি চাই না আমার জন্যে কারো গা জ্বলুক।"

"গা জ্বললে আমার জ্বলবে। আপনার কী?

"মানুষটা তো আমার। তার আত্মা কষ্ট পাবে, তাও আমার জন্যে, তা কী করে হয়? আমি তা কী করে মেনে নেই?"

"ঢংয়ের কথা বলতে আসছে এখানে।"

"ঢংয়ের না। তোমার সুবিধার কথা বললাম।"

"আমার সুবিধার কথা বলতে হবে না আপনাকে।"

"আশ্চর্য! আমার মানুষ তুমি। তোমার সুবিধা অসুবিধা আমি দেখবো না?"

"তো এই কথা এখন মনে পড়েছে? যাওয়ার সময় মনে ছিল না?"

"ঝেড়ে ফেলো না ওই ব্যাপারটা।"

"পারবো না ঝাড়তে। আপনি আমার সাথে এমন করবেন কেন?"

"কাল পুরোটা সময় তুমি আমাকে এটা নিয়ে বকেছো। এখনও কথা শোনাচ্ছো। আর কতো শোনাবে?"

"আরো অনেক শোনাবো৷ সারাক্ষণ শোনাবো৷ আপনাকে শুনতে হবে।"

"ফর গড সেক মিহিন। এবার অন্তত আপনি আপনিটা ছেড়ে দাও৷ তুমি করে বলো!" 

"কেন? ভালো লাগছে না? অসহ্য লাগছে? এইতো সবে শুরু৷ ধীরে ধীরে আমি মানুষটাকেই তো অসহ্য লাগবে৷"


আমি চুপ করে থাকি৷ কিছু বলি না৷ কথা বাড়াই না৷ দু'জন মানুষের এক সাথে রেগে যাওয়াটা কুলক্ষণ। একজন রেগে গেলে অন্যজনের চুপ থাকা উচিৎ। রাগ-জেদ মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মিহিনও চুপ করে থাকে। অনেকটা সময় আমাদের নীরবতায় কেটে যায়৷ হঠাৎ মিহিনের নাক টানার শব্দ পাই। আশ্চর্য! মেয়েটা কাঁদছে নাকি?

"কান্না করছো তুমি?"

মিহিন চুপ করে থাকে। কোনো শব্দও করে না। আমি আবার ডাকি,

"মিহিন? তুমি কাঁদছো?"

কিছু সময় পর তার জবাব আসে, 

"না, আমি আমি কাঁদছি না। আর তাছাড়া কার জন্যে কাঁদবো? আমার তো এমন কেউ নেই যে আমি তার জন্যে কাঁদব!"

"মিহিন, প্লীজ। আমি আগ থেকেই অনেক টেনশনে আছি৷ তুমি প্লীজ আমাকে আর টেনশনে ফেলিও না।"

মিহিন চট করেই বলে,

"তুমি কেন টেনশনে আছো? তুমি তো গ্রামে গিয়েছো আনন্দ করতে। সেখানে তো তোমার টেনশনের কিছু নেই৷"

আমি জিবে কামড় বসালাম। এই কথাটাই এতোক্ষন মেয়েটার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কথা কম বলছিলাম যাতে সে বুঝতে না পারে৷ তাও কেন যে বলে ফেললাম! নিজের উপরই রাগ হলো অনেক। এতো গাধা কেন আমি? বললাম,

"তেমন কিছু না। আম্মার শরীরটা একটু খারাপ। এই যা!"


মিহিন খানিক সময় চুপ থেকে বলে,

"শোনো, আমি তোমার কথার সত্য-মিথ্যা বুঝে ফেলতে পারি। তোমাকে চিনি আজ অনেকদিন। প্লীজ, আমার কাছ থেকে কিছু লুকানোর চেষ্টা করবা না৷" 


আমি চুপ করে থাকি। কিছু বলি না৷ মিহিন বলে,

"বলো আমাকে।"

আমি কীভাবে কথাটা বলব বুঝে উঠতে পারি না। মুখ দিয়ে যেন কথাটা বের হচ্ছে না। মিহিন খানিকটা জোরে বলে,

"আজ যদি এই কথাটা আমাকে না বলো তবে তোমার খবর আছে বলে দিলাম।"

আমি মৃদু স্বরে বলি,

"মিহিন, আম্মা এখানে এসে একটা কান্ড বাধিয়ে ফেলেছেন।"

"কী করেছেন আন্টি?"

আমি খানিকটা চুপ থেকে বলি,

"তিনি আমাকে নিয়ে তার বান্ধুবির বাসায় এসেছেন। তার বান্ধুবির একটা মেয়ে আছে৷ আমার থেকে দুই বছরের ছোট। তিনি আমার জন্যে ওই মেয়েটাকে পছন্দ করেছেন।"


অনেকটা সময় ফোনের ওপাশ থেকে কোনো শব্দ এলো না। আবার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত নীরবতা। আমি বললাম,

"মিহিন?"

সে জবাব দিলো না। আমি আবার ডাকলাম,

"মিহিন কথা বলো?"

সে চাপা স্বরে বলে,

"আমার কথা বলার শক্তি নেই তাসফি।"

এরপরই আমি তার ফোঁপানোর শব্দ পেলাম। আমি বললাম,

"কেঁদো না প্লীজ। আমি হেন্ডেল করে নিবো তো। কিচ্ছু হবে না৷ আমার এই মানুষটাকে ছাড়া আমি আর কাউকেই বিয়ে করবো না। এটা ইম্পসিবল।"

মিহিন নিচু স্বরে বলে,

"রাখলাম।"


কথাটা বলেই সে কল কেটে দিলো। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে৷ এ জন্যেই আমি তাকে কথাটা বলতে চাইনি৷ নিজের টেনশনটা তার উপর চাপাতে চাইনি৷ এখন আর কী করার! সে এমন একটা মানুষ যে তাকে মিথ্যা বলা যায় না৷ কীভাবে যেন ধরে ফেলে৷ ভীষণ জেদি। শুনবে বলেছে তো শুনবেই৷ না বললে আরেক এলাহি কান্ড বাধবে।


আমি তাকে ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ৷ সে হারহামেশা এমনই করে। কিছু থেকে কিছু হলেই ফোন বন্ধ করে রাখে৷ এতো রাগ,এতো অভিমান তার ভেতর যে বলে বোঝানো যায় না। অথচ এসব কেবল সে আমার সাথেই দেখায়৷ অন্যদের সাথে স্বাভাবিকই থাকে। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,

"আমার সাথেই কেন এমন করো? এতো রাগ-অভিমান দেখাও?" 

সে মৃদু হাসে৷ বলে,

"আমি নিজেও জানি না কেন এমন হয়৷ তোমার সামান্য একটা কথা আমার মাঝে বিস্তর প্রভাব ফেলতে পারে। তুমি অন্য কোনো মেয়ের প্রসংশা করলে গা জ্বলে যায়৷ তোমাকে ঝাড়ি দিতে ভালো লাগে। ভালো লাগে বলতে সেটা কীভাবে যেন তোমার উপরই চলে আসে। মনে হয় যেন এই মানুষটাকে ঝাড়ি দেয়ার অধিকার আছে আমার। তোমার উপর অধিকার খাটাতে পারি আমি৷ আবার তোমার সামান্য কথাও আমার উপর ভীষণ অধিকার খাটাতে পারে।"


মিহিন আমার জন্যে অদ্ভুত এক মেয়ে৷ সে মায়াময়ী। মুগ্ধ রমনী। সে কাউকে কাছে টানে না৷ অথচ একবার টানলে ছাড়তে জানে না৷ সে হৃদয়স্পর্শী। দূরে থাকলেও আমি যেন তার ছোঁয়া অনুভব করি৷ তাকে অনুভব করি। সে ভালোবাসা আর আবেগে ঘেরা এক মায়াবীনি। 


আমি মিহিনকে আর ফোন দিলাম না। জানি দিলেও লাভ হবে না৷ আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অন্ধকারে তারাদের রাজত্বে চোখ বুলালাম। মনটা হঠাৎই কেমন বিষন্নতায় ভরে গেল। ভেতরটা কেমন অস্থির হয়ে উঠতে থাকলো৷ 


ঠিক সে সময়ে পেছন থেকে কারো সামনে এগিয়ে আসার শব্দ হলো। অন্ধকারে কারো অবয়ব দেখলাম। শাড়ি পরা এক কন্যার অবয়ব। সে এসেই রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। মৃদু স্বরে বলল,

"অন্ধকার আপনার পছন্দ?"

আমি ফ্যাকাসে হাসি দেই। বলি,

"হ্যাঁ।"

"আমারও। ওপাশে একটা চেয়ার আছে। আমি রাত হলে এখানে এসে বসে থাকি। আমার ভালো লাগে৷"

আমি মৃদু হেসে বলি,

"আচ্ছা। ভালো।"


নীলাশা চুপ করে থাকে৷  আমিও চুপ করে থাকি৷ কিছু সময় শব্দহীন ভাবে কাটে। গ্রামের রাত ভীষণ নিরব। সুনশান, শব্দহীন৷ নিলাশা চট করেই বলে উঠে,

"মিহিন মেয়েটা কে?"

আমি অবাক হয়ে তাকাই নিলাশার দিকে। বলি,

"আপনি এই নাম জানেন কী করে?"

"দুঃখিত। আমি আপনার পেছনে অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আপনার সাথে কিছু কথা বলতে আসলাম আসলে। এসে দেখলাম আপনি কারো সাথে কথা বলছেন। একবার ভাবলাম চলে যাই। কিন্তু হঠাৎ একটা কথা শুনে মনে হলো আমার যাওয়াটা ঠিক হবে না৷ এই কথা গুলো আমার শোনা উচিৎ। তা না হলে আপনি হয়তো আমাকে স্বাভাবিক ভাবে বলতে পারবেন না কথা গুলো৷ আমি ক্ষমা চাচ্ছি এই ভুলটার জন্যে।"


আমি কী বলব ভেবে পেলাম না৷ কেবল বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম মেয়েটার দিকে। নিলাশা আবার বলল,

"আপনি কি তাকে ভালোবাসেন?"

আমি মৃদু হাসি। প্রসন্ন হাসি। বলি,

"হ্যাঁ, ভালোবাসি তাকে।"

"উনি রেগে আছেন নাকি আপনার উপর?"

"হ্যাঁ।"

"কেন?"

"তার রাগার কারণটা অদ্ভুত। এইযে আমি এখানে এলাম, তার সাথে দেখা করে আসিনি। এ জন্যে তিনি রেগে আছেন।"

"এতো নরম্যাল একটা ইস্যুতে এতো রাগ?"

"আপনার কাছে নরম্যাল হতে পারে। বাট আমাদের কাছে না। আজ পনেরো দিন হয়েছে আমরা একজন অন্যজনের সাথে দেখা করি না৷"

"প্রেমের ক্ষেত্রে দেখা করাটা কি বিশেষ জরুরী?"

"ঠিক তা না৷ মিহিনের সাথে দুদিন পর পর দেখা করার একটা অভ্যাস তৈরী হয়েছে আমার৷ এখন অভ্যাসে যদি বিচ্ছেদ ঘটে তবে মানুষ তো রাগ করবেই তাই না?" 

"তা অভ্যাসে বিচ্ছেদ কেন ঘটলো?"


"বিচ্ছেদটা সে-ই ঘটিয়েছে। সে তার ফ্যামিলিকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে। ফ্যামিলি ট্যুর আরকি। সে যেদিন ট্যুর শেষ করে আসবে আমাকে সেদিনের কথা জানায়নি। সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। অথচ তার আসার দিনই আমি গ্রামে চলে আসি। সারপ্রাইজের জন্যে সে আমাদের বাসার সামনে এসে আমাকে ফোন দেয়। কল রিসিভ করে আমি তাকে বলি যে আমি বাসায় নেই। গ্রামে যাচ্ছি। এই কথা শুনেই নাকি মহারানীর অবস্থা খারাপ। বাসায় গিয়ে কান্নাকাটি করে যাচ্ছেতাই অবস্থা। এ জন্যেই সে আমার উপর রেগে আছে। আমি তাকে কেন জানিয়ে গ্রামে আসিনি, তাকে একবার জানালে কী এমন হতো! এসব বলে অনেক ঝাড়লো। আসলে গ্রামে আসার প্রোগ্রামটা চট করেই হয়ে গেল তো তাই ফোন করে জানানোর সুযোগটা হয়ে উঠেনি। আর আমার ফোন দেওয়ার আগেই তিনি ফোন দিয়ে ফেলেছিলেন।"

"তা এখন তো উনি আরো রেগে আছেন। বিশেষ করে বিয়ের ব্যাপারটায়। উনি ব্যাপারটা কীভাবে নিবেন আল্লাহই ভালো জানেন।"

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বলি,

"চিন্তা হচ্ছে আমার। তবে ও খারাপ কিছু করবে না৷ এই আত্মবিশ্বাসটা আছে আমার।"

"আপনাদের মাঝে অনেক মিল তাই না?"

আমি মৃদু হেসে বলি,

"হ্যাঁ। আপনি কি জানি বলতে এসেছিলেন?"


নিলাশা মৃদু হাসে। বলে,

"বলতে তো এসেছিলাম। তবে এখন বলতে ইচ্ছে করছে না।"

"কেন?"

"কি জানি৷ মনের গতিপথ চট করেই পাল্টে গেল হয়তো।"

"আপনি কি কোনো কারণে আপসেট?"

মেয়েটা অবাক স্বরে বলে,

"কীভাবে টের পেলেন?"

"আপনার স্বর শুনে বোঝা যায়।"

"ভাগ্য দেখুন! যার বুঝার কথা সে বুঝে না৷ বুঝে অন্য কেউ। যার বুঝাটাও অপার্থিব।"

"কী হয়েছে বলুন আমাকে।" 

"কিছু না। আপনি আমাকে বুঝতে পেরেছেন দেখে ভালো লাগলো। জানেন, আমি ভাবতাম আমি খুব ভালো অভিনয় জানি। আমার যে এতো বেদনা-বিষাদ তা কেউই টের পায় না। কেউই বুঝতে পারে না৷ কেবল আপনি পারলেন।"

"আপনার এতো কষ্ট কিসে নিলাশা?"


নিলাশা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। আমি তার জবাবের অপেক্ষা করি৷ সে বলে,

"আমার একটা গল্প আছে৷ গোপন বিষাদময় গল্প। এই গল্পটাই আপনাকে শোনাতে এসেছিলাম। বলতে চেয়েছিলাম আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না৷ কখনোই না। আমি একজনকে প্রচণ্ডরকম ভালোবাসি। আমার তাকেই চাই।"


নিলাশা এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেলে। তার কণ্ঠস্বর মলিন, ভেজা হয়ে আসে। সে চট করেই সেখান থেকে চলে যায়৷ আমি তার অন্ধকার গমন পথের দিকে চেয়ে থাকি। এই পৃথিবী অদ্ভুত। অদ্ভুত তার মানুষ গুলো। 


রাতভর আমি মিহিনের ফোনে কলের পর কল দিয়ে গেলাম। তার ফোনে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার ঘুম এলো না ঠিক ভাবে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে সময় পার করলাম। নিজের ভেতর অস্থির ভাবনাটাকে দমিয়ে নিতে চাইলাম। অথচ সেটা আমি কোনো ভাবেই পারিনি৷ মনের ভাবনা, অস্থিরতা দমানোর জন্যে মনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকা লাগে৷ আমার কাছে সেই নিয়ন্ত্রণ নেই৷ সেটা আছে আমার মহারানীর কাছে৷ 


সকালে আম্মার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। নেহাত কাঁচা ঘুম। আমি চোখ মেলে তাকাতেই আম্মা অবাক স্বরে বললেন,

"তোর চোখ লালচে হয়ে আছে যে? রাতে কী ঘুম হয়নি?"

আমি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলি,

"কী বলবে বলো?"

"তেমন কিছু না। তুই শুয়ে থাক।"

আমার মেজাজটা চট করেই গরম হয়ে গেল। বললাম,

"কিছু না তো আমাকে উঠালে কেন?" 

আম্মা কেমন অস্বাস্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন৷ যেন কিছু বলতে চাইছেন অথচ বলতে পারছেন না৷ আমি নিজেকে শান্ত করে বললাম,

"কী হয়েছে বলো আমাকে।"

"কিছু হয়নি৷ তোর নানার বাসায় যেতাম। আম্মা সকালে ফোন দিয়ে যেতে বললেন।"

"তো এই কথার জন্যে তুমি আমাকে ঘুম থেকে উঠালা? মা তুমিও না মাঝে মাঝে কী যে করো!"

আম্মা কেমন জড়ানোর স্বরে বললেন,

"জলদি করে উঠ৷ নাস্তা সেরেই আমরা এখান থেকে চলে যাবো।" 


আম্মা চলে গেলেন। আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। আমার মনে হলো এখানে কিছু একটা ঠিক নেই৷ কী যেন হয়েছে৷ আমি উঠে ব্রাশ নিয়ে বের হলাম। পুরো বাসায় কেমন নীরব অস্থিরতা ছোটাছুটি করছে৷ সবার চেহারাতেই কেমন মলিন একটা ছাপ বসে আছে৷ কেউই কোনো কথা বলছে না৷ আশ্চর্য ব্যাপার। হলোটা কী? আম্মাকেও আশেপাশে দেখতে পেলাম না৷ বসার ঘরে আসতেই দেখলাম নিলাশা বসে আছে৷ তাকে দেখে আবার তেমন মনে হলো না৷ সে যেন খুশিতেই আছে৷ চেহারা ভর্তি প্রাণচঞ্চল উজ্জ্বলতা। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সে৷ তারপর চট করেই ওখান থেকে চলে গেল। আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না৷ 


নিলাশাদের বাসায় আমরা এসেছি দু'দিনের জন্যে। কিন্তু সেই দু'দিন পুরো হতে না হতেই আমাদের সেই বাসা ত্যাগ করতে হলো৷ কেন করতে হলো তার কারণটা এখনও স্পষ্ট নয়৷ গাড়িতে উঠলে আম্মাকে জিজ্ঞেস করা যাবে। আম্মা এখন নিজের ব্যাগপত্র ঘোচাচ্ছেন। তার মেজাজ মর্জি বিশেষ ভালো ঠেকলো না। 


আমি বাইরে এসে মিতুকে কল দিলাম। মিতু মিহিনের বান্ধুবি। মিহিনের হলমেট৷ একসাথে হলে থাকে। মিহিনের যাবতীয় খোঁজখবর আমি এই মেয়েটির মাধ্যমে পেয়ে থাকি৷ আমি তাকে ফোন দিলাম,

-হ্যালো মিতু?

-হ্যালো, কেমন আছেন ভাইয়া?

-আমার খবর ছাড়ো৷ তোমার বান্ধুবির খবর জানাও৷ 

মিতু দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,

-কিছু হয়েছে আপনাদের মাঝে?

-ছোট্ট একটা ঝামেলা হলো আরকি। 

-বিশ্বাস করবেন না ভাইয়া৷ পুরো রাত জ্বালিয়ে মারলো আমাদের। 

-কেন? কী হয়েছে? 

-কী আর হবে৷ মেজাজ মস্তিষ্ক ভালো না থাকলে সে কী করে জানেনই তো। সারাক্ষণ বই নিয়ে পড়ে থাকে। পুরো রাত ঘুমায়নি। লাইট জ্বালিয়ে বই পড়েছে কেবল। এখন রাত হলো ঘুমানোর সময়৷ এভাবে লাইট জ্বালিয়ে রাখলে ঘুম হয় বলুন? 

-না, তা হয় না। 

-হ্যাঁ৷ ঠিক এই কারণেই চৈতির সাথে ওর মারাত্মক ঝগড়া হয়েছে। বিশ্বাস করবেন না ভাইয়া মিহিন যে এতো ঝগড়া করতে জানে জানা ছিল না৷ সবাইই হতভম্ব হয়ে ছিল৷ মেয়েটাকে কেমন স্বাভাবিক মনে হলো না৷ শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে যদি হঠাৎ এমন পাগলাটে আচরণ করে তবে সেটা তো অস্বাভাবিকই লাগবে তাই না?

-ঝগড়া কি খুব মারাত্মক হয়েছে? 

-হ্যাঁ৷ 

-ও কই এখন?

-নীলা আপু নিয়ে গিয়েছে উনার কাছে৷ আপনি তো জানেনই, এই হলে এক মাত্র নীলা আপুকেই সে যা কদর করে। বাকি রাতটা উনার সাথেই ছিল। 

-একটু দেখে আসিও কী করছে ও, কেমন?

-জি আচ্ছা৷ 

-আমাকে জানিও পরে। 

-জানাবো৷ আপনি কোথায় এখন?

-গ্রামে আসছি একটু।

-ঝামেলা কি বেশি জটিল?

-আমি নিজেও বুঝতে পারছি না আসলে। 

-ও যেভাবে রিয়েক্ট করলো আমার কাছে তো জটিল কিছুই মনে হলো৷ 

-এই মেয়েকে নিয়ে যে কী করি! একটু খেয়াল রাখিও। 

-জি আচ্ছা৷ 


মিহিন আমার টেনশন আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো। মন মেজাজ ধীরে ধীরেই কেমন রুক্ষ হয়ে আসতে থাকলো৷ নিলাশাদের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে আসার পথে আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম,

"ওদের বাসাতে কী হয়েছিল মা?"

"কই? কী হবে?"

আমি মৃদু হেসে বলি,

"কিছু না হলে তুমি এভাবে চলে আসার মতো মেয়ে না।"

"তুই সব সময়ই বাজে বকিস৷ তেমন কিছুই হয়নি।"

"আমার কাছে লুকিয়ো না মা।"


আম্মা কিছু বললেন না। চুপ করে থাকলেন। আমি নিচু স্বরে বললাম,

"বিয়েটা কবে হচ্ছে?"

"কিসের বিয়ে?"

"সেকি? তুমিই তো বললে। নিলাশা আর আমার বিয়ের কথা।"

"আরেহ ওটা কথার কথা বললাম আরকি।"

"মা, আমার কাছে অন্তত মিথ্যা বলিও না৷"

আম্মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন৷ বললেন,

"নিলাশা স্পষ্টই জানিয়েছে সে তোকে বিয়ে করতে চায় না৷ তোকে তার পছন্দ হয়নি।"

আমি মন খারাপ করে বললাম,

"কী বলো মা?"

"হ্যাঁ, আরো অনেক কিছুই বলেছি৷ তোর নাকি ভং ধরা স্বভাব। কবি কবি ভাব৷ এসব নাকি তার অপছন্দ। আরো কতো কি! পুরো মেজাজটাই গরম করে দিলো। বেকুব মেয়ে ভালো জিনিস কোনো পরিশ্রম ছাড়া পেয়ে গেল তো তাই কদর করতে পারলো না। শুনিয়েছি একগাদা কথা৷ আমার রাজপুত্রের মতো ছেলেকে রিজেক্ট করার কে সে? ওদের বলে এসেছি নিলাশার চেয়ে আরো ভালো একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো আমি তোকে। এই? তোর কী মন খারাপ হয়ে গেল?

আমি খানিকটা রূঢ় স্বরে বললাম,

"তোমাকে কে বলেছে আগ বাড়িয়ে এমন কাজটা করতে যেতে? আমি কি তোমাকে একবারও বিয়ের কথা বলেছি? আর আমার বয়স হয়েছে এখন? চাকরিও তো নেই।"

"আমি ভাবলাম আগ থেকে..."

"কথা বলিও না মা। তোমার অগ্রিম চিন্তাভাবনা গুলো আমাকে বড়ই পীড়া দেয়৷"

আমি কিছু বললেন না৷ চুপ করে থাকলেন। আমি মনে মনে হাসতে হাসতে খুন হয়ে যাচ্ছি৷ নিলাশা তাহলে কাজটা নিজেই করে ফেলল? সাহসী আছে বলতে হবে! তবে আমাকে বললে আমি আরো ভালো এডভাইস দিতে পারতাম। কী সব উল্টাপাল্টা বলল আমার নামে আল্লাহই ভালো জানেন। 


আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে বললাম,

"চুল টেনে দাও।"

আম্মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। অদ্ভুত এক প্রাশান্তি আমায় তীব্রভাবে আক্রমণ করল। আমি বললাম,

"মা, আমরা নানুরবাড়িতে একদিন থাকবো৷ কেমন?"

আমি অবাক স্বরে বললেন,

"একদিন? মাত্র একদিন? ওরা তো আমাদের যেতেই দিবে না।"

"আমি ওসব জানি না। তুমি ম্যানেজ করে নিও৷ আমার এখানে একদমই ভালো লাগছে না৷"

আম্মা আর কিছু বললেন না৷ চুপ করে থাকলেন। 


যেদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সেদিন মিতুকে ফোন দিলাম একবার,

-খবর কি মিতু?

-ভালোই। আপনি কেমন আছেন? 

-আরে আমার খবর বাদ দাও৷ ওর কী খবর? 

-ওকে দেখলে বোঝা যায় না কিছু৷ তবে ভেতরে ভেতরে ও যে ভীষণ কষ্টে আছে আমি বেশ বুঝতে পারি। রাতে বোধহয় অনেক কেঁদেছে। চোখ ফোলা ফোলা লাগছে৷ 

-ঘুম যায় তো?

-রাতে ওর ঘুম হয় না ঠিক ভাবে৷ আমি মাঝে মাঝে চোখ মেলেই দেখি সে শোয়া থেকে উঠে বসে আছে। যদি জিজ্ঞেস করি কী হয়েছে, সে বলে, কিছু না। এমনিই ঘুম আসছে না৷ আমি যদি শান্তনা দিতে যাই তবে সে আরো রিয়েক্ট করে৷ বলে,

"আমাকে অযথা শান্তনা দিবি না মিতু৷ আমি ঠিক আছে৷ আব্বু একটু অসুস্থ৷ এই নিয়েই যা টেনশন৷ তাসফিকে নিয়ে আমার কোনো টেনশন নেই৷ সে তার মতো৷ আমি আমার মতো। এখানে টেনশনের কিছু নেই।"

-আচ্ছা, তাহলে মহারানি এসব বলে বেড়াচ্ছেন?

-হ্যাঁ। মজার ব্যাপার হলো আমি আঙ্কেলকে ফোন দিলাম খবর নিতে৷ ভাবলাম আসলেই উনি অসুস্থ কী না৷ ফোন দিয়েই জানতে পারলাম উনি বেশ সুস্থ আছেন৷ উনার কিছুই হয়নি। বোঝেন এবার৷ 

আমি মৃদু হাসলাম। বললাম,

-কাউকেই বুঝতে দিতে চায় না আসলে। নিজে নিজে কষ্ট পেতে চায়৷ আচ্ছা একটা কাজ হেল্প করো আমার। 

-কী হেল্প?

-আমি ফিরে আসছি৷ পথে দিয়েছি অলরেডি। মহাশয়াকে এই খবরটা জানিয়ে দিও৷ তবে সে যেন বুঝতে না পারে যে আমি তোমাকে বলেছি বলার জন্যে৷ আমি ফেসবুকে একটা পোষ্ট করেছি৷ ওটা দেখে বলবা আরকি। কী পারবা না?

-চিন্তা করবেন না। এই কাজ আমি দারুণ ভাবে করতে পারবো। নো টেনশন। 

-ওকে। রাখি তাহলে। 


আমি ফোনটা হাতে নিয়েই বসে থাকলাম। একবার পাশ ফিরে আম্মাকে দেখলাম। তিনি বেশ আনন্দের সহিত ঘুমাচ্ছেন৷ ড্রাইভার চাচা মনোযোগ সহকারে ড্রাইভ করছেন। তিনি স্বভাবত বেশি কথা বলেন না৷ গাড়িতে উঠলে তো মোটেও বলেন না৷ 


এর প্রায় দশ পনেরো মিনিট পর আমার ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে না তাকিয়েই আমি মৃদু হেসে ফেললাম। কারণ আমি জানি এই মূহুর্তে কে ফোন করবে৷ আমি খুব সাবধানে কলটা কেটে দিলাম। ধরলাম না৷ মিহিন আবার কল করলো। তাও ধরলাম না। ধরবও না৷ যতো ইচ্ছে কল দিক সে৷ আমি তার কল ধরব না৷ সে দু'দিন কথা বলেনি আমার সাথে৷ এতো সহজে কীভাবে ছেড়ে দেই? 


কিছুক্ষন পর একটা ছোট্ট মেসেজ এলো,

"কী ব্যাপার? ফোন ধরছো না কেন?"

আমি সেটা সিন করে রেখে দিলাম। রিপ্লাই করলাম না৷ মিহিনের আবার কল এলো। আমি সেই কলটা কেটে ফোনটা বন্ধ করে দিলাম। থাকো তুমি তোমার মতো৷ কথা নেই তোমার সাথে। 


ঢাকায় পৌঁছালাম সন্ধ্যার দিকে৷ বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হতে হতে সাতটা বেজে গেল। আম্মা আসতে দিচ্ছিলেন না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে বের হলাম। মিহিনের হলের কাছে যেতে যেতে আটটা বেজে গেল। ওখানে গিয়েই প্রথমে ফোন অন করলাম। অন করে কল দিতে যাবো ঠিক তার আগেই মিহিনের কল এসে হাজির। হঠাৎ আমি কেমন নার্ভাস ফিল করলাম। মনটা কেমন জানি করে উঠলো। কল বেজে বেজেই শেষ হয়ে গেল। আচমকা আমি কেমন জানি হয়ে গেলাম।  রিসিভ করে কূল পেলাম না। হাত কাঁপছিল যেন। দ্বিতীয়বার আবার ফোন এলো। আমি চট করেই রিসিভ করে ফোন কানের পাশে চেপে ধরলাম৷ ওপাশ থেকে মিহিনের জোরালো কান্নার স্বর ভেসে এলো। ভেজা স্বরে বলল,

"তোমাকে আমি খুন করবো৷ হাতের কাছে একবার পাই কেবল। তোমার রক্ত চুষে খাবো আমি বেয়াদব ছেলে৷"


আমি কিছু বলতে পারলাম না৷ আমি কেমন বাকরুদ্ধ হয়ে থাকলাম। চোখ জোড়া কেমন ঝাপসাটে হয়ে এলো। বুকের ভেতর কেমন এক প্রশান্তি আমাকে ভীষণ আনন্দিত করতে থাকলো। সমস্ত শরীরে শিরশিরে এক শীতল অনুভূতির জোয়ার বয়ে গেল৷ কী এক আশ্চর্য ব্যাপার! কারো কণ্ঠস্বর এভাবে একজন মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে? মিহিন কাঁদতে কাঁদতে বলল,

"ঢাকায় তো চলে আসার কথা৷ এসেছো? এলে তোমাকে আগে আমার সাথে দেখা করতে হবে৷ যে কোনো মূল্যেই হোক, দেখা করতেই হবে।"

আমি মৃদু স্বরে বললাম,

"আমি তোমার হলের সামনে।" 


এরপর আমি তার কোনো শব্দ শুনতে পেলাম না৷ আমি কলটা কেটে দিলাম। ফুটপাতের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অল্প কিছু পরেই দেখলাম হলের গেট গলে অগোছালো চুল নিয়ে এক ছন্নছাড়া সুন্দরী বেরিয়ে আসছে৷ ফ্যাকাসে চেহারা, চোখের নিচে দুদিনের ঘুম জমে আছে। এপাশ ওপাশ তাকিয়ে সে যখন আমাকে দেখতে পেল সে হঠাৎই স্থির হয়ে গেল। চলতে পারছে না যেন৷ এক জায়গায় সোজা দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম৷ সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকলো। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তার ফর্সা গাল বেয়ে কেবল চোখের পানি পড়ে যাচ্ছে। সে একদম আমার কাছে চলে আসে। আমাদের মাঝে এখন অল্প কিছু দূরত্ব৷ সে মাটির নিচে তাকিয়ে আছে৷ সে ফোঁপাচ্ছে৷ নাক টানছে। নাগের ডগাটা লালচে হয়ে আছে। আমি বললাম,

"মেয়েটা আমাকে পছন্দ করেনি৷ রিজেক্ট খেয়েছি। রিজেক্টেড পিস। অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে।"

"রিজেক্টেড না হলে হয়তো আজ কেউ বউ নিয়ে আসতো।"

"আমার বউ তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে৷ তাকে নিয়ে আসার প্রশ্ন কেন আসছে?"

মিহিন কিছু বলল না আর। চট করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। জড়িয়ে ধরার পরেই মেয়েটার কান্নার গতি কেমন বেড়ে গেল৷ যেন অনেকদিন পর কান্না করার একটা সুযোগ পেয়েছে৷ সে গা কাঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। কান্না জড়ানো স্বরে বলল,

"আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম তাসফি। দম বন্ধ হয়ে আসছিল যেন।"

আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। বলি,

"এই পাগলিকে ছেড়ে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করি কী করে?"

মিহিন আমাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

"আমি তোমাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখবো। অনেকক্ষন।"

"সবাই দেখছে।"

"দেখুক। এই পৃথিবী জেনে যাক, এই মানুষটি কেবল আমার।"

আমি হাসলাম। সে আবার বলল,

"আই লাভ ইউ রিজেক্টেড পিস।"

আমি মৃদু হাসি। ভেজা চোখে হাসি। বলি,

"আই লাভ ইউ টু মাই গার্ল।"

মিহিন যেন প্রাশান্তির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। 


সমাপ্ত


গল্পঃ প্রাশান্তির দীর্ঘশ্বাস

লেখকঃ তাসফি আহমেদ। 


আপনি যদি আমার সব গুলো গল্পের লিস্ট পেতে চান তবে অবশ্যই নিচের লিংকটি ভিজিট করুনঃ 


Bangla Golpo Somogro - বাংলা গল্প সমগ্র  | লেখকঃ  তাসফি আহমেদ 

 

Next Post Previous Post
3 Comments
  • sadik's blogspot.com
    sadik's blogspot.com ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ এ ১:১৬ AM

    আমি আর কি বলবো!!
    আগে থেকেই জানি গল্পটায় নিজেকে খুজে নেয়া যাবে।
    এক গোছা অনুভুতি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ লেখক

  • Unknown
    Unknown ২৩ মার্চ, ২০২১ এ ৯:৫৭ PM

    প্রথমবার ব্লগে গল্প পড়লাম😊

    • Author
      Author ২৪ মার্চ, ২০২১ এ ৩:৩৭ PM

      ফেসবুক লিংক থেকে এসেছেন নাকি?

Add Comment
comment url