Bangla Golpo: বিষাদ আজ মন ছুঁয়েছে ৪

https://www.onlinetopnews.xyz/2020/04/what-is-rule-on-wearing-mask-in-prayer.html
Bangla Golpo


Bangla Golpo: বিষাদ আজ মন ছুঁয়েছে 

(চতুর্থ পর্ব)


লিলির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে। শরীরময় কেমন অবসাদ। দূর্বলতা। সে কেমন শুকনো স্বরে বলল,
-মেয়েটার ডাক নাম আলিশা। এটাই তার আসল নাম। তোর দুলাভাই, আমি এবং ওই মেয়েটার চেনাজানা গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া আর কেউই তার এই নাম জানে না। সবাই তাকে 'অতন্দ্রীলা অতোশি' বলে জানে।
তমার ভ্রু কুচকে এলো। চট করেই যেন কিছু মাথায় চলে এলো তার। সে বলল,
-অতন্দ্রীলা অতোশি? এই নামটা কেমন পরিচিত পরিচিত লাগছে।
-সে একজন বিখ্যাত লেখিকা। তার বইও তোর বুকশেল্ফে আছে৷
-মানে? কী বলছো তুমি? এই লেখিকার সাথে ভাইয়ার প্রেম চলছে?
লিলি কিছু বলল না। সে মুখ কালো করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। তমা বোনের পাশে আরেকটু সরে এলো৷ তার হাত ধরে বলল,
-তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে হয়তো আপু৷ একটু ভালো করে ভেবে দেখো!
লিলি চট করেই তমার দিকে তাকালো। বলল,
-ভুল হলে আমি আমার ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে এখানে আসতাম না৷ ভুল-সঠিক নির্ধারণ করার যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার।
তমা চুপ করে থাকলো৷ কিছু সময় পর বললো,
-এসব কবে থেকে চলছে আপু?
লিলি আনমনে বলল,
-তা আমি জানি না। বাসররাতে ও আমাকে প্রথমবার মেয়েটার কথা বলেছে। তার জীবনে দুইজন মেয়ে স্পেশাল। তার মধ্যে একজনে আলিশা এবং অন্যজন আমি।
-তুমি তখন জানতে চাওনি আলিশা কে? কেন স্পেশাল?
-আমার মন চেয়েছে। কিন্তু আমি কেন জানি মুখ ফুটে বলতে পারিনি। অথচ ও নিজ থেকেই আমার মনের কথাটা বুঝে নিলো। নিজ থেকেই বলল, "আলিশা আমার অসময়ের বন্ধু৷ হয়তো সেই অসময়ে সে আমার বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ছিল। কিংবা আমিই হয়তো আগ বাড়িয়ে তাকে নিয়ে বেশি ভেবে ফেলেছি।" কথা গুলো এখনও স্পষ্ট মনে আছে আমার৷ তোর দুলাভাইয়ের দেয়া প্রতিটা দুঃখ এবং আনন্দের মূহুর্ত গুলো আমার স্পষ্ট মনে থাকে৷ আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে কোন সময়ে কী করতো সেসবও আমার স্পষ্ট মনে আছে৷ আমার সাথে কোন কোন দিন ঝগড়া করেছে তাও আমার মনে আছে।  তাকে ঘিরে ছোটখাটো আবেগ গুলো আমার মস্তিষ্ক থেকে যাচ্ছেই না তমা! এই যন্ত্রণায় আমি যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি৷
লিলি কান্না করার চেষ্টা করলো৷ মুখের ভঙ্গিমাও তেমন হয়ে এলো৷ অথচ চোখ ভিজল না। গাল বেয়ে জল পড়লো না৷ সমস্ত জলই হয়তো শুকিয়ে গিয়েছে। ব্যাথাটাও এমন এক জিনিস, নিতে নিতে এক সময় সমস্তই নিয়ে নেয়৷ সব শেষে একটু কেঁদে শান্তি পাবার জন্যে দু'ফোটা জল ফেলবার ব্যবস্থাটাও রাখে না। 

লিলি এবং তমা সোফায় বসে আছে৷ তমা লিলির একটা হাত শক্ত করে ধরে আছে৷ হাত ধরার পর সে অনুভব করলো তার বোনের হাতটা বেশ ঠান্ডা। হাতে যেন বিন্দুমাত্র রক্ত নেই। চেহারাটা এতো ফ্যাকাসে হয়েছে যে তাকে এখন ঠিক চেনাই যায় না৷ তার পূর্বের ছবি আর এখনকার ছবির মাঝে বিস্তর তফাত পাওয়া যাবে৷ পূর্বের ছবিতে দেখা যেত চোখে মুখে তীব্র ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণীকে। যার চেহারার প্রসন্নতা যেন সমস্ত ছবিকেই আলোকিত করে তুলেছে। অথচ এখনকার ছবিতে দেখা যাবে মুখ শুকিয়ে, ভালোবাসা হেরে গিয়ে তীব্র বেদনাগ্রস্ত একজন নারীকে। যার চেহারার দুঃখভাব যেন তাকে ক্রমশই বৃদ্ধ করে তুলছে৷ ব্যাথায় ব্যাথায় মানুষ বৃদ্ধ হয়ে যায়৷ চামড়ায় দলা পড়ে। তমা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো৷ তার কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না তার দুলাভাই এমন একটা কাজ করতে পারে। সে সব সময়ই ভেবেছে তার দুলাভাই একজন অতি সৎ এবং সত্যবাদি সাধারণ মানুষ। তাকে বোঝাটা কিছুটা জটিল, কিন্তু যে আংশিকও বুঝতে পারবে সে মুহুর্তে তার সম্পর্কে ধারণা বদলে ফেলবে৷ সে বুঝে ফেলবে এই মানুষটা অতিভালো। তার সাথে কিছুদূর নির্ভয়ে হাঁটা যায়৷ তমা নিশ্চিত ভাবেই এসব ভেবেছে। পুরুষ মানুষদের ও যেন ঠিক চিনে যায়৷ কে কেমন, তার চাহনি কেমন, এসব যেন সে চট করেই ধরে ফেলতে পারে৷ তার দুলাভাই সম্পর্কে সে কখনই বাজে কিছু অনুভব করেনি৷ কিন্তু এখন যা শুনলো তা যেন তার বিশ্বাসকে বদলে দিতে চাচ্ছে। তার মনে হলো সে আসলেই পুরুষ মানুষকে চিনতে পারে না৷ লিলি চট করেই বলে উঠলো,
-তমা, জানিস, তোর দুলাভাই আর আমি প্রায়ই বারান্দায় বসে চাঁদ দেখতাম৷ এটা তার সখ ছিল। বারান্দার দেয়ালে সে হেলান দিয়ে বসবে, আর আমি তার বুকের বাঁ পাশে লেপ্টে থাকবো। আমি সব সময়ই তাকে জড়িয়ে ধরে থাকতাম। তার কোলের উপর বসে তার বুকে মাথা রাখতাম। তখন প্রায়ই সে একটা কথা বলতো,
"সময় যদি পরিবর্তন না হতো, আমি তাকে আজীবন এভাবেই ভালোবেসে যেতাম। চাঁদকে সামনে রেখে তাকে বুকে জড়িয়ে রাখতাম। পৃথিবীর অন্যতম একটি সুখকে বুকের মাঝে আগলে রাখার মূহুর্ত হতো সেটি। কারণ সে আমার অতিপ্রিয়। অতি পছন্দের একজন মানুষ। তাকে এতো ভালোবাসি, এতো ভালোবাসি, অথচ কখনই বলা হয়নি। বলা হয় না। না বলেও আমি তার খুব কাছে৷ খুব কাছে৷"
আমি যখন তার লোমশ বুকে মাথা রাখতাম, তখন কেমন জানি একটা ঘোর ধরতো৷ তমা, আমি জানি কেন এমন হতো, তবে আমি ওই মূহুর্তটা এতো চরমভাবে অনুভব করতাম যা বলার মতো না৷ ঠিক ঘোর ভাঙ্গার পরেই আমি শুনতাম সেই এই কথা গুলো বলছে। আমি প্রতিবারই ভেবেছি সে আমায় ভেবে এসব বলছে। আমাকে নিয়ে বলছে। আমি তার অতিপ্রিয় কেউ৷ তাই কখনও এসব কেন বলছে তা জানতে চাইতাম না। অথচ ওইদিনের পর থেকে আমার এই ভাবনাটা চেঞ্জ হয়ে গেল। আমার মনে হতে থাকলো সে আমাকে নিয়ে কথা গুলো বলেনি। আমাকে ভেবেও নয়৷ সে আলিশাকে নিয়ে বলেছে৷ আলিশাকে ভেবেই বলেছে। আলিশাকে 'ভালোবাসি' না বলেই তার ভীষণ কাছে আছে৷ ভীষণ কাছে৷ তমা, আমার মনে হচ্ছে তোর দুলাভাই আমাকে কখনই ভালোবাসেনি৷ সে এতোদিন আমার সাথে অভিনয় করেছে৷ ভালোবাসার অভিনয়। উপরে উপরে সে আমায় ভালোবাসে। অথচ তার ভেতরে অন্য কেউ আছে। অন্য কোনো প্রিয় কেউ।
লিলি চোখ জোড়া ভিজে এলো এবার৷ এক ফোটা জল যেন গাল বেয়ে পড়লো। চন্দ্রবিলাশের কথাটা তার ভেতরটা খানি আদ্র করে তুলেছে৷ তমা বোনের পাশেই বসে থাকলো। প্রথম প্রথম তার খানিক লজ্জা লেগেছিল। বোনের অতিগোপন কথা গুলো তার ভেতর কেমন একটা লজ্জাভাব ফুটিয়ে তুললো। কিন্তু শেষ কথা গুলো তাকে তীরের মতো আঘাত করলো৷ সে যেন চট করেই বুঝে ফেললো তার বোন কতোটা কষ্টে আছে। তমা বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো৷ এক দলা কষ্ট যেন তাকে আঁকড়ে ধরতে শুরু করলো৷ তমা চট করেই তার বোনকে জড়িয়ে ধরলো৷ একভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলো সে।
প্রায় অনেকটা সময় পর তমা বললো,
-আপু, ওইদিনের ঘটনাটা বলো, যেদিন থেকে তোমার মনে হয়েছে ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে না।
লিলি কোনো জবাব দিলো না প্রথমে। সে চুপচাপ বসে থাকলো৷ একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুক দিয়ে৷ বলল,
-সেদিন তোর দুলাভাইয়ের একজন মেহমান আসার কথা ছিল। খুবই স্পেশাল একজন মেহমান৷ সেই মেহমানকে আমিই ডেকেছিলাম৷ আমিই আসতে বলেছিলাম। হয়তো সেটাই আমার জীবনের মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। শাহেদ বার বার নিষেদ করেছে৷ সে বলেছে 'ওকে' অযথা ডাকার প্রয়োজন নেই৷ ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে৷ আমি ওর কথা শুনিনি৷ আমি নিজেই ওকে আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিছুই হবে না৷ তুমি ওকে আসতে বলো।
তমা বলল,
-সেই মেহমানটা কে আপু?
-সে ছিল 'অতোন্দ্রিলা অতোশি।' সময়ের শ্রেষ্ঠ লেখিকা।
তমা বোনকে জড়িয়ে ধরেছিল এতোক্ষণ৷ কথাটা শোনা মাত্রই সে চমকে উঠলো। বোন ছেড়ে দিয়ে বললো,
-মানে? কী বলো আপু? তুমিই উনাকে ডেকেছিলে? যার সাথে তোর হাজবেন্ডের একটা সম্পর্ক ছিল, তুমি তাকেই ডেকেছো?
লিলি আনমনে জবাব দিলো,
-হ্যাঁ৷
.
-আমি আসবো?
শাহেদ বললো,
-কেন আসবে?
-তুমি অসুস্থ শাহেদ৷ তোমার দেখভালের প্রয়োজন।
-মনে অসুখের কাছে এইসব অসুখ কিছুই না, মিস অতোশি।
-তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
-আমার কি এভাবেই বলা উচিৎ নয়?
-অবশ্যই না৷ তুমি এখন চাইলেই আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারো৷ আগের মতো নরম্যাল বিহেভ করতে পারো৷
-তাই? তাহলে কি আমি এখন ভুলে যাবো যে আমি বিবাহিত।
-ভুলতে তো হবেই৷
-কেন?
-তোমার স্ত্রী তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছে৷ এখন ভালো হয় তুমি তাকে ভুলে যাও৷ তার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো ভুলে যাও৷ তুমি আবার নতুন করে শুরু করো।
-সেই সামর্থ্য আমার নেই অতোশি৷ জীবনটা বেশ ব্যাথা সয়ে নিয়েছে। আর না৷
-শাহেদ, আমি আসি তোমার বাসায়৷
-যখন আসার কথা ছিল তখন তো এলে না।
-তুমি তো সব কিছুই জানো৷
-হ্যাঁ। জানি বলেই তো ব্যাথাটা বেশি।
-তাই তো বলছি, আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও৷ আমি তোমার সমস্ত ব্যাথা দূর করে দিবো।
-পারবে? সত্যিই পারবে?
-তুমি কেবল অনুমতি দাও৷
-কিন্তু অতোশি, আমি তো লিলিকে ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারি না৷ আমার যে তাকেই প্রয়োজন!
-সেই প্রয়োজনটা তো তোমাকে চাচ্ছে না। তাহলে তুমি কেন তাকে এতো চাচ্ছো?
-জবাবটা তোমার জানার কথা৷
-আমার? আমার কীভাবে?
-এই যে তুমি আমাকে চাও, এতো চাও। কেন চাও বলতো?
অতোশি খানিকটা চুপ থাকলো৷ চুপ থেকে বলল,
-বুঝেছি৷ তাকে ভালোবাসো ভীষণ। যেমনটা আমি তোমাকে বাসি।
-বাসো? আসলেই বাসো?
-সন্দেহ হয় তোমার?
-হওয়াটাই স্বাভাবিক না?
-শাহেদ, তুমি জানো না, তুমি আমার জন্যে কী! তোমাকে পাওয়ার জন্যে আমি যে কোনো যুদ্ধ লড়তে পারি।
-একটা সময় ছিল, যখন যুদ্ধ করারও প্রয়োজন ছিল না৷ সস্তায় পেয়ে যেতে আমায়৷ তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিল?
-আমি সেই ভালোবাসাকে পুঁজি করেছি শাহেদ। আমি সেই ভালোবাসাটা লিখে লিখে প্রকাশ করে ফেলেছি৷ আমার প্রায় অনেক গুলোই বইয়ের মূল চরিত্র তুমি৷ তোমার ব্যক্তিত্ব। আমার প্রতিটি গল্পে তুমি থাকো। তোমার ছায়া যেন গল্পে আপনা আপনিই চলে আসে।
-আমি তো কারো বইয়ের মূল চরিত্র হতে চাইনি! বইয়ের ছায়াও না। আমি কারো জীবনের মূল চরিত্র হতে চেয়েছি।
-এখন কি চাও না?
-চাওয়ার তো কারণও থাকা চাই৷ নাকি?
-একটা সত্যি কথা বলবে?
-আমাকে বিশ্বাসও করো না বুঝি?
-জানি, তোমার মাঝে মিথ্যা নেই৷ আচ্ছা বলো তো, তুমি কি তখন আমাকে ভালোবাসতে? সত্যিই ভালোবাসতে? ওই সময়ে আমাকে নিয়ে তোমার মাঝে কী ছিল?
-কে জানে৷ হয়তো ভালোবেসেছি। ভুল পথে সস্তায় নিজের অনুভূতি বিক্রি করেছি তখন।
-এখন কি সেই অনুভূতি নেই?
-মূল্য না পেলে আস্ত একটা মানুষ দড়িতে ঝুলে যায়৷ অনুভূতির বেঁচে থাকাটা তো দূরের কথা৷
-আমাকে নিয়ে তোমার মাঝে কোনো অনুভূতিই নেই?
-নাহ৷ নেই৷
-তাহলে সেদিন যে বাসায় এলাম? তখন তো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে।
-সেই তাকিয়ে থাকাটাই কাল হয়েছে। আমি জানতাম আমি নিজের অনুভূতি চেপে রাখতে জানি৷ অথচ সেদিন নিজেই ভুল প্রমাণিত হলাম।
-ভুল তো বটেই। তোমার ভেতর যে আমি আছি সেটা অবশ্যই সত্য৷ তোমার স্ত্রী নিজেও এটা বিশ্বাস করে। কেবল তুমি বিশ্বাস করো না৷ সমস্যা নেই। আমি ঠিক বিশ্বাস করিয়ে নিবো৷
-পারবে না৷
-তুমি চেনো না আমাকে। আমার যে জিনিসটা পছন্দ সেটা আমি যেকোনো মূল্যে ছিনিয়ে নিতে জানি।
-ছিনিয়ে নিলেই কি সত্যিকারের পাওয়া হয়ে যাবে?
-যাবে না হয়তো৷ তবে আমি ভালোবেসে গড়ে তুলতে পারবো।
-পারবে না৷ লিলিকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি৷ সে আর আমার ছোট্ট মেয়ে অরু হচ্ছে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ৷
-একদিন আমি তোমার বেঁচে থাকার কারণ হবো৷ দেখে নিও তুমি।
শাহেদ হাসলো। কিছু বলল না৷ অতোশি প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,
-এক্সিডেন্ট কীভাবে করেছো?
-লিলিদের বাসায় গিয়েছিলাম তমাকে একটা বই দিতে। ফিরতি পথে রিক্সার সাথে ধাক্কা লাগে৷
-ব্যাথা কেমন পেয়েছো?
-শরীরের কোথাও ব্যাথা অনুভব হয় না অতোশি৷ কেবল বুকের ভেতরটা ভার ভার লাগে৷ এক দলা কষ্ট যেন সেখানে গাপটি মেরে বসে আছে৷
-আমি ফোন দেওয়ার আগে কল ব্যস্ত পেয়েছিলাম। কার সাথে কথা বলছিলে?
-কেউ না।
-বলো আমাকে। কার সাথে কথা বলছিলে?
-একটা আপদের সাথে কথা বলছিলাম। সে আমাকে ধ্বংস করার একটা হুমকি দিলো।
-কে? কে এমন করেছে শাহেদ৷ কে তোমাকে ধ্বংস করতে চায়?
-তোমার মতোই কেউ একজন৷ অতোশি, আমি ফোন রাখি৷ কথা বলতে ভালো লাগছে না৷
-না, তুমি ফোন রাখবে না শাহেদ৷
কথাটা শেষ হবার পরই শাহেদ কল কেটে দিলো। ফোনটা বন্ধ করে বসে থাকলো। বারান্দাটা অন্ধকার হয়ে আছে। বাইরে থেকে মৃদু কিছু আলো আসছে৷ এই আলোয় নিজের হাতও স্পষ্ট দেখা যায় না৷ আজ অমাবস্যা নাকি?

শাহেদের মাথা কেমন ভার ভার লাগছে। পাঁয়ের গোড়ালিটা যেন পাথর হয়ে আছে। অসম্ভব যন্ত্রণা করছে পাঁ টা৷ নাড়তে গেলেই যন্ত্রণায় বুক ফাটা চিৎকার আসে তার৷

লিলিদের বাসা থেকে ফিরছিল৷ আনমনা হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ও। মনের মাঝে কেবল লিলিদের বাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেসব ভাবতে ভাবতেই হাঁটছিল ও। মোড়ের কাছে আসতেই কোত্থেকে একটা রিক্সা তার দিকে তেড়ে এলো। শাহেদ কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না৷ সে কেবল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। মূহুর্তে রিক্সা তার গা ঘেঁষে চলে গেলে। এরপরই যা অঘটন ঘটে গেল৷ রিক্সার চাকা আঘাত করলো পাঁয়ে গোড়ালিতে। সে সেখানেই কিছু ব্যাথা অনুভব করলো। বাকি কোথাও তার ব্যাথা অনুভব হলো না৷ তার মনে হলো মনের ব্যাথার কাছে এই ব্যাথাটা কিছু না৷ অতি সামান্য।
শাহেদ মোবাইল অন করে সময় দেখলো৷ রাত সাড়ে বারোটা বাজে৷ মাত্র সাড়ে বারোটা? ভোর হবার তো অনেক দেরি৷ এই রাত পার হবে কীভাবে? কীভাবে একাকি এই রাত পার করা যায়?
.
চলবে...

গল্পঃ বিষাদ আজ মন ছুঁয়েছে 
(চতুর্থ পর্ব)

ভুলত্রুটি মার্জনীয়। 
-তাসফি আহমেদ 


Next Post Previous Post
2 Comments
  • Nafis Abdullah
    Nafis Abdullah ৫ অক্টোবর, ২০২০ এ ৭:৫৪ PM

    ভাই আর পর্ব কইরেন নাহ!! শেষ করেন প্লিজ!😐😁

  • Author
    Author ৫ অক্টোবর, ২০২০ এ ৯:১৩ PM

    মিল দেওয়ার পর্যায়ে তো আসতে হবে নাকি?

Add Comment
comment url