Bangla Golpo: মেয়েটির কথা

Bangla Golpo-Bangla New Golpo-Bangla Choto Golpo-Bangla Love Story-Bangla Valobasar Golpo-বাংলা গল্প


Bangla Golpo: মেয়েটির কথা



ধ্যাত! বৃষ্টিটা আর নামার সময় পেল না। এখনই কেন নামলো!  আর একটু পরে নামতে পারত না! কি এমন ক্ষতি হত!   আমার রাগ হল ভীষণ। খারাপ লাগতে লাগল। সব সময় কেন আমার সাথেই এমন হয়। আমি যা চাই তা কখনই হয় না। হলেও আমার মন মত হয় না। এটা কেবল আমার সাথেই হয়। কেন হয়?
আমি মন খারাপ করে সিড়ি রুমে দাঁড়িয়ে থাকলাম কেবল। 
তাসফি যে এই সময়ে ছাদে যায় সেটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। ওকে কেবল এই সময়টা ছাড়া আর একবারও দেখি না। সারাদিন নিজের ডাক্তারি নিয়ে পড়ে থাকে। আর রোগী গুলোও কি! ওকে পেলেই ছাড়তে চায় না। প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই ওকে দেখতে ছাদে যাই। গিয়ে ওকে দেখি। ওকে একদিন না দেখে আমি থাকতে পারি না। দম যেন বন্ধ হয়ে আসে। এইতো সেদিনের কথা। এক কাজীনের বিয়ে ঠিক হল। হুলুদের দুদিন আগেই আমাদের যেতে বলল। আমরা সবাই সকাল সকাল চলে গেলাম ওখানে। বিয়ের অনুষ্ঠান। সবাই কত আনন্দ করে! আমার কি পোড়া কপাল কোন আনন্দই করতে পারলাম না। পুরোটা সময় কেবল তাসফির কথা ভেবে অস্থির হয়ে থাকলাম। কেবল মনে হতে থাকল আহারে! আজ ওকে দেখতে পারব না! ওর মায়াময় দুচোখ বুঝি আজ দেখতে পারব না। কি সুন্দর করে তাকায় ও। আমার এত ভালো লাগে! ওর দিকে তাকালেই আমার অদ্ভুত অনুভূতি হত। এত ভালো লাগা কাজ করত যে বলে বুঝাতে পারবো না। চট করেই ছেলেটা যেন আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে রূপান্তরিত হল। প্রথম দিন ওর চোখ দুটো দেখেই আমি চমকে যাই! আশ্চর্য!  কোন ছেলের চোখ কি এত সুন্দর হয়! কি তীক্ষ্ণ চোখ! একবার তাকালেই যেন ভেতরের সব পড়ে ফেলতে পারবে। সেদিনের পর থেকেই ওকে এক নজর দেখার জন্যে বিকেল হতেই ছাদে ওর জন্যে অপেক্ষা করতাম। কেবল ওকে দেখার জন্যে। সেই আমিই এখন বিয়ে বাড়িতে এসে বসে আছি! এখন কি হবে! আজ তাহলে সত্যিই ওকে দেখবো না! আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগতে লাগল। ইশ! এখন কি যাওয়া যাবে! নাকি বাসায় চলে যাবো! এরা যেভাবে ধরেছে এভাবে তো বাসায় আগামী এক সপ্তাহেও যাওয়া যাবে না। আল্লাহ! আমি ওকে এতদিন না দেখে থাকব কিভাবে? আমি আর পারছিলাম না। পুরোটা দিন আমার প্রচন্ড অস্বস্তি আর অস্থিরতায় কাটল। কেবল বারবার এদিক ওদিক পায়চারী করতে থাকলাম। নিজের মনকে কোন ভাবেই শান্ত রাখতে পারছিলাম না। রাতেও ঠিক মত ঘুম হল না। ওকে একনজর না দেখে আমি যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না। মনের ভেতর যেন কেমন করছিল। পুরো রাত কেবল তার কথাই ভাবলাম। আমার ঘুমটা হারাম হয়ে গেল। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।তিনটা দিন এভাবে কেটে গেল। এই তিনদিন যে কিভাবে বেঁচে ছিলাম সেটা আমি নিজেও ঠিক  জানি না। কেবল কোন মতে বেঁচে ছিলাম। খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করতে পারছিলাম না। গলা দিয়ে কিছুই নামছিল না। চতুর্থ দিন আমি আর থাকতে পারলাম না। সত্যি বলতে আমার দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। কেবল মনে হতে থাকল ওকে একবার না দেখলে আমি আর বাঁচব না। যেন দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। সকাল বেলাই রওনা দিলাম। কাজীনের বাসা এত বেশি দূরে না। প্রায় ঘন্টা খানেকের পথ। চলে এলাম বাসায়। বিকেলের আগেই ছাদে গিয়ে বসে থাকলাম। বসে বসে কেবল ওর আসার প্রহর গুনছিলাম।  ঠিক যথাসময়ে কারো ছাদে উঠে আসার শব্দ পেলাম। আমার বুকের ধপ ধপ শব্দ যেন বেড়েই যাচ্ছিল। যতই শব্দটা কাছে আসতে থাকল ততই যেন বুকের ভেতর শব্দের মাত্র বাড়তে থাকল। আমি কেবল কোন মতে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার উৎসুক চোখ দুটো নেশা কাতুর হয়ে সিঁড়ি রুমের দরজার দিকে তাকিয়েছিল। যখন তাসফিকে দেখলাম ঠিক তখনই যেন আমার অদ্ভুত আনন্দ হতে থাকল। আমি যেন নিঃশ্বাস সহজেই নিতে পারছি। যেন নিজের ভালোবাসাকে চট করেই ফিরে পেলাম। আনন্দের চোটে কতক্ষণ যে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম সেটা আমি নিজেও ঠিক জানি না।কেবল তাকিয়েই থাকলাম। আমার দম যেন ফিরে এল এবার।
.
আমি কিছু সময় সিঁড়ির রুমে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাবছি যাব কি যাবো না। গেলে মস্ত বড় প্রব্লেম হয়ে যাবে। ইদানীং বৃষ্টি আমার একদমই সহ্য হয় না। একটু ভিজলেই গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। শরীর খারাপ করে খুব। এখন যদি ভিজি তাহলে আম্মু তো বকা দিবেই  সাথে ফ্রি তে জ্বরও চলে আসবে। জ্বর আসুক! তাতে প্রব্লেম নেই। কিন্তু জ্বর এলে যে আম্মু আর ছাদে যেতে দিবে না। আর ছাদে না এলে আমি আমার প্রান মনিকে একবারের জন্যেও দেখতে পারবো না। ওকে না দেখে কি আমি থাকতে পারি? এখন কি করি! ধুরর! যা হবার হবে। জ্বর আসলে আসুক। আমি এই বৃষ্টিতে ওর সাথে না ভিজে থাকতে পারব না। লোভ সামলাতে পারলাম না আর। ছাদে চলে এলাম। তারপর এক ফোটা দুফোটা করে বৃষ্টির পানি আমায় ভিজিয়ে দিতে থাকল। আমি অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করলাম। যেন স্বর্গে আছি এখন। আল্লাহ তুমি ওই ছেলের মাঝে কি এমন দিয়েছো যে আমার এত ভালো লাগে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। যেন পুরো জিবন এই চাহনির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো। আমি কেবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা তাসফির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। আমার খুব ইচ্ছে হতে থাকল যে ওর হাত ধরি। ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। ইচ্ছে গুলো দমন করতে হল। আমি চাইলেই যে সব হবে তা কিন্তু না। তাসফি আমার দিকে তাকাল এবার। একটু হাসল। আমার কাছে ওর হাসিটাও দারুণ লাগল।  বৃষ্টিতেভিজতে থাকা ছেলেটার মুখে এত সুন্দর হাসি সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করল। ভীষণ রকমে মুগ্ধ করল। আমি এগিয়ে গেলাম। বললাম,
-আপনার বৃষ্টি খুব পছন্দের তাই না?
ও আমার চোখে চোখ রাখল এবার। আমি আর তাকাতে পারলাম না। চোখ নামিয়ে নিলাম। ও বলল,
-হু! খুব পছন্দ! তোমারও কি খুব পছন্দের?
-মোটামুটি। আসলে খুব একটা ভিজতে পারি না। ডাক্তার...
আমি এতটুকু বলেই থেমে গেলাম। হায়! কি বলতে যাচ্ছিলাম আমি। ওকে যদি বলে দেই যে বৃষ্টি আমার সহ্য হয় না তাহলে তো ও আমাকে এখানে আর থাকতে দিবে না। মাঝে মাঝে কি সব গাধার মত কাজ করি না আমি বুঝি না। আমি তাসফির দিকে তাকালাম এবার। ও আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে ভীষন অস্থিরতা মিশে আছে।  আমার সাথে চোখচোখি হতেই আমার ভেতরটা যেন কেঁপে উঠল। তাহলে কি ও সব জেনে গেছে? বুঝে গেছে সব!  আমি চোখ নামিয়ে নেই চট করেই। তাসফি আমার দিকে এগিয়ে আসে আরেকটু। বেশ অস্থির হয়ে বলে,
-মিরা! তুমি থেমে গেলে কেন? ডাক্তার কি তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে নিষেধ করেছে?  
-নাহ! তেমন কিছু না। এমনিই...
-মিথ্যা বলবা না একদম! তোমার চোখ বলছে তুমি মিথ্যা বলছো!
আমি কিছু বলতে পারলাম না। কেবল চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ও বলল,
-এখন রোগ বাধালে তোমাকে দেখবে কে শুনি? আন্টি বেচারি একজন মানুষ কদিক সামলাবে। তুমি তো বুঝের মেয়ে! এমন পাগলামো কর কেন?
আমি অনেক্ষণ চুপ
করে থাকলাম। একটু সময় নিয়ে মনে খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে বললাম,
-একটা পাগল আছে যে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। আড়াল থেকে ভালোবাসে। তার জন্যে পাগলামি করি।আর অসুখের  কথা বলছেন? শুনুন, অসুখ হলে প্রব্লেম নেই। দেখার মত সেই মানুষটা আছে আমার।
-তা কে আছে শুনি? তোমার বয় ফ্রেন্ড?
আমি লজ্জা মিশ্রিত হাসি দেই। মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম কেবল। ও বলল,
-তা কে সেই মহারাজ বলেন তো! নামটাই না হয় আগে বলুন।
আমি আবারো একটু সময় নিলাম। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম,
-নাম তাসফি!  একজন ডাক্তার! আমার অসুখ হলে সেই আমাকে দেখবে। আমার ভয় নেই এখন আর। অসুখকে ভয় পাই না।
এতটুকু বলে আমি থামলাম।কাপা কাপা চোখে তাসুর দিকে তাকালাম।ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কি ঘোরা লাগা চোখেই না তাকিয়ে আছে। আমি ভীষণ অবাক হলাম। আমি ভেবেছি ও আমার কথা শুনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু তেমন কিছুই হল না। ও স্বাভাবিক ভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে থাকল!  একটু সময় নিয়ে ও বলল,
-তাই বলে এসব পাগলামো করলে হয়! অসুখ আসলে তোমার ক্ষতি হবে। আর তোমার ক্ষতি হলে, কষ্ট হলে সব থেকে বেশি খারাপ লাগবে কার জানো? এই আমার। তুমি জানো না তোমার কষ্ট আমার একদমই সহ্য হয় না। যেন আমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছি।
আমি কি করব ভেবে পেলাম না। তাসফি আমাকে ভালোবাসে! সত্যিই ভালোবাসে! এ আমি কি শুনলাম! নাকি ভুল শুনলাম। ভুলই হবে। কিন্তু ভুল হবে কেন? ও নিজেও তো আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। ভালো তো বাসতেই পারে!  নাকি আমাকেই ভালোবাসে! আমি নিজের কানকে, মনকে ঠিক বিশ্বাস করাতে পারলাম না। কেবল ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নিজের সন্দেহ দূর করতে হবে। তা না হলে এই অস্বস্তি আমার জিবনেও কাটবে না। আমি বললাম,
-তুমি আমায় ভালোবাস তাসফি!
এবার আমি নিজেই অবাক হলাম। হায়! এ কি করলাম আমি। ওকে তুমি করে বলছি।এখন কি হবে! ও কি কিছু মনে করবে!  আমি চোখে খানিকটা ভয় নিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। একটু হাসল কেবল। বলল,
-যে মেয়ে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে তিনদিন আমাকে না দেখে অস্থির হয়ে চতুর্থ দিন আমাকে দেখার, কেবল আমাকেই দেখার জন্যে সমস্ত বিয়ের আয়োজন ফেলে ছুটে আসে তাকে আর যাই হোক ভালো না বেসে পারা যায় না। আমি সত্যিই আমার বিকেল পরি কে ভালোবাসি। যে পরি এই বিকেল বেলা কেবল আমাকে দেখার জন্যে ছাদে আসে, নিজের অসুখ হবে জেনেও বৃষ্টিতে ভিজে কেবল আমারই জন্যে আমি সত্যিই বিকেল পরিকে ভালোবাসি। ভীষন ভালোবাসি। এই বিকেল পরিকে ভালো মা বেসে পারা যায় না। মোটেও না। মিরা আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।
খুব বড়সড় ধাক্কা খেলাম যেন। কথা গুলো বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না আমার। কেবল অনুভব করলাম। ভীষণ আনন্দ অনুভব করলাম নিজের মাঝে। যেন এত খুশি জিবনেও হই নি। অদ্ভুত শিহরন বইতে থাকল বুকের মাঝে । খুশিতে আমার চোখে জল জমতে থাকল। চোখের জল আর বৃষ্টির জল দুটোই এক হয়ে আমার গাল বেয়ে পড়তে থাকল। আমি জলভরা চোখ নিয়ে তাসফির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তাসফি আরেকটু এগিয়ে এল। আমার দুচোখের জল মুছে দিল। তারপর আলত করে আমার হাত ধরল। হাত ধরতেই যেন আমি শক খেলাম। পুরো শরির কেঁপে উঠল। অদ্ভুত শিহরন বইতে থাকল আমার মাঝে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকলাম না। এমন একটা মুহুর্তে চুপ করে থাকা যায় না। প্রচন্ড আনন্দে চোখে একগাদা জল নিয়ে  চট করেই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপরেই অজোর ধারায় কাঁদতে থাকলাম। আমি সত্যিই এই ছেলেটাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। কোন ভাবেই পারবো না।


ভুলত্রুটি মার্জনীয়
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url