গল্পঃ কাউকে চলে যেতে হয়

বাংলা ছোট গল্প Bangla Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo.


গল্পঃ কাউকে চলে যেতে হয়

তাসফি আহমেদ


রাফির ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে তাকাতেই দেখে ইরিনার নাম। গাড়ির গতি কমিয়ে এনে  ফোন ধরে সে। ওপাশ থেকে ইরিনা বলে,
"কই আপনি?"
"এইতো। রাস্তায় আছি।"
ইরিনা বেশ ব্যস্ত হয়ে বলে,
"কতক্ষণ লাগবে?"
"বেশি সময় লাগবে না। কেন?  কিছু হয়েছে?"
খানিকটা সময় চুপ করে থেকে ইরিনা বলে,
"এদিকটা খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার কাছে। ওদের মাঝে কিছু একটা হয়েছে। ওরা হয়ত এখানে বেশিক্ষণ থাকবে না আর। আপনি জলদি আসুন।"
"বল কি?"
"হ্যাঁ তাই..."
এতটুকু বলে থেমে যায় ইরিনা। রাফি খানিকটা অবাক হয়। বলে,
"কি ব্যাপার? থেমে গেলে কেন?"
ওপাশ থেকে ইরিনা ফিসফিস করে বলে,
"ওরা বেরিয়ে যাচ্ছে। আপনি জলদি আসুন প্লীজ।"
রাফির অবাক হওয়ার সীমা থাকল না। সে বেশ অবাক হয়ে বলে,
"সত্যিই ওরা বেরিয়ে গিয়েছে?"
"হ্যাঁ সত্যিই। আপনি প্লীজ একটু তাড়াতাড়ি চলে আসুন। তা না হলে আমরা ওদের ধরতে পারব না। ওরা পালিয়ে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।"
"শোন,তুমি একদমই চিন্তিত হবা না। জাস্ট আমি যা বলব তাই করবা। এর বেশি কিছু করবা না। আচ্ছা আমাকে এটা বল যে তুমি কি স্পষ্ট ওদের দেখছো? মানে ওরা দু'জন একসাথে আছে?"
"হ্যাঁ। ওরা দু'জন তো আছেই। সাথে আরও একজন আছে।"
রাফির ভ্রু কুচকে আসে। বলে
"আরো একজন? কে?"
"আমি চিনি না। তবে তার কাছে রাইফেল জাতিয় কিছু একটা দেখেছি।"
"রাইফেল জাতিয় কিছু? তুমি শিওর তো?"
"হ্যাঁ। আমি শতভাগ নিশ্চিত। "
"আচ্ছা ঠিক আছে। শোন, তুমি একদমই চিন্তিত হবা না। তোমার সেফটির দায়িত্ব আমার। তুমি এখনই ওদের পিছু নাও। দূর থেকে ফলো করতে থাকো। আর ওদের খবর আমাকে কিছুক্ষণ পরপর  ইনফর্ম করবা।ঠিক আছে?"
"হ্যাঁ ঠিক আছে। এখন রাখি। ওরা বেরিয়ে পড়েছে।"
"আচ্ছা ঠিক আছে। গো এহেড। বেস্ট অফ লাক।"  
ফোন কাটা যায়।ফোনটা রেখেই খানিকটা হেসে উঠে রাফি। তার হাসিতে রহস্য মিশে থাকে। হাসতে হাসতে সে গাড়ির গতি বাড়ায়।
.
রায়হান কিছু সময় অদ্রির দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর এমন তাকানো দেখে খানিকটা লজ্জা লাগে অদ্রির। তার গাল লাল হতে সময় লাগে না। সে মাথা নিচু করে রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
"এভাবে তাকিয়ে থেকো না। আমার লজ্জা হয়।"
রায়হান হাসে। বলে,
"একেবারে আগের মতোই আছ।একটুও পরিবর্তন হও নি। তবে..."
"তবে?"
"একটা পরিবর্তন হয়েছে।"
"তা কি সেই পরিবর্তন বলেন তো জনাব?"
রায়হান খানিকটা হেসে বলে,
"আগের থেকে অনেক সুন্দরী হয়ে গিয়েছ তুমি।"
এবার অদ্রির লজ্জার সীমা থাকে না। সে কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মাথা নিচু করে রাখে। পিছনের সিট থেকে তাদের এমন খুনসুটিময় কথা শুনে হাসে সাদিক। হাসতে হাসতে রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
"হয়েছে হয়েছে। রোমান্সটা না হয় পরে করিস। আগে ভালো ভাবে গাড়ি চালা। আমাদের জলদিই পৌঁছাতে হবে ওখানে। তাছাড়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাওয়া উচিৎ। একটু টেনশন ফ্রি থাকা যায়।"
রায়হান হাসে। বলে,
"চিন্তা করিস না। আমি তো আছি। এতটা কাজ কোন খুঁত ছাড়াই করে ফেললাম আর...?"
এতটুকু বলে থেমে যায় রায়হান। তার চোখ আঁটকে যায় লুকিং গ্লাসের উপর। সাদিক ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। সে অবাক হয়ে তাকায় রায়হানের দিকে। কথার মাঝে হঠাৎ থেমে যাওয়াতেই রায়হানের দিকে চট করে তাকায় অদ্রিও। খানিকটা বিপদের আশংকা জাগে ওর মনে।বলে,
"কি হয়েছে?"
পিছন থেকে সাদিকও বলে,
"কিরে? কথা থেমে গেল কেন তোর?"
রায়হান কারো প্রশ্নেরই উত্তর দেয় না। সে গাড়ির গতি বাড়িয়ে ফেলে হুট করেই। তারপর সাদকের দিকে ফিরে বলে,
"স্নাইপার রেডি আছে?"
সাদিক খানিকটা হতভম্ব হয়ে তাকায় ওর দিকে। বলে,
"হ্যাঁ আছে। তো?"
"আমি গাড়ির ছাদ খুলে দিচ্ছি। তুই রেডি হয়ে যা।"
"কেন?  কি হয়েছে?"
"কেউ আমাদের ফলো করছে।"
"ফলো করছে?"
সাদিক এবং অদ্রি দু'জনেই একসাথে বলে উঠে।
"হ্যাঁ। পেছনে দেখো।"
ওরা পিছনে তাকায়। তাকাতেই চমকে উঠে। দেখে আসলেই একটা গাড়ি ওদের অনুসরণ করছে। একেবারে ওদের সাথে সমান তালে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। অদ্রি বলে,
"তুমি কিভাবে বুঝলে গাড়িটা আমাদের অনুসরণ করছে?  অন্য কেউও তো হতে পারে।"
রায়হান খানিকটা কড়া স্বরে বলে,
"অন্য কেউ হলে আধঘণ্টা থেকে আমাদের পিছনে পড়ে থাকতো না।"
কথা শুনেই অদ্রির দম আটকে যাবার উপক্রম হলো। আধঘণ্টা থেকে ফলো করছে অথচ সে টেরও পেল না? পিছন থেকে সাদিক বলে উঠে,
"আমি প্রস্তুত।"
রায়হান একটা সুইচ টিপ দেয়। সাথে সাথে গাড়ির উপরের ছাদের অনেকাংশ খুলে যায়।রায়হান বলে,
"সিটের উপর উঠে দাঁড়া। ভালো করে দেখে শুট করিস। টার্গেট যেন মিস না হয়।"
সাদিক হাসে। বলে,
"আজ পর্যন্ত একটা টার্গেটও মিস হয় নি। তুই চিন্তা করিস না।"
রায়হান হাসে। গাড়ির গতি একটু কমিয়ে আনে।
সাদিক উঠে দাঁড়ায়। গাড়ির ছাদে অস্রটা সেট করে। টার্গেট লাইটটা ঠিক সোজা গিয়ে গাড়িটার ড্রাইভিং সিটের উপর পড়ে।
.
ইরিনা অবাক হয়ে লক্ষ্য করে যে একটা লাল বাতি গাড়ির কাঁচ ভেস করে ঠিক ওর কপাল বরাবর এসে পড়ছে। ও খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। গাড়ির গতি কমিয়ে আনে। তারপর রাস্তার একপাশে নিয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে চালাতে থাকে। ওর কানে ব্লুটুথ। ওপাশে কল কনফারেন্সে আছে রাফি। ইরিনা বেশ দ্রুত বলে,
"ওরা আমাকে দেখে ফেলেছে। স্নাইপার ইউজ করছে ওরা। স্নাইপারের লাল বাতিটির আলো একেবারে আমার কপালের উপর।"
"মানে কি? কি বলছ? তুমি কি গাড়ি থামিয়ে ফেলছ?"
"না। তবে রাস্তার এক পাশে নিয়ে আসছি।"
"গুড। এক কাজ কর। বেশ এলোমেলো ভাবে গাড়ি চালাও। একবার ডানে আবার বামে। এমন করে চালাও।দেখবে ওর টার্গেট মিস হতে থাকবে। এর মাঝেই আমি এসে যাব। প্রব্লেম নেই। যা বলেছি তা কেবল  মনযোগ দিয়ে কর।"
"আচ্ছা।"
এই বলে ইরিনা নিজের গাড়িটি বাঁয়ে ঘুরায়। ঠিক তখনই গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলিটি ঠিক ইরিনার গাড়ির সামনের গ্লাসটি ভেদ করে পিছনের দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। ইরিনা খানিকটা চিৎকার দিয়ে উঠে। মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছে ও। বাঁয়ে গিয়ে বার কয়েক ঈশ্বরের নাম নেয়। তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে মনে মনে। কিছুক্ষণ পরেই আবার গুলির আওয়াজ। এবারও মিস হল গুলিটা।
.
"শিট!"
সাদিকের মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসে শব্দটি। ড্রাইভিং সিট থেকে রায়হান অস্থির হয়ে বলে,
"কি হয়েছে?"
"এবারেও মিস হলো।"
"মানে কি? কি *লের শুটার হয়েছিস তুই। ধুরর!"
"তুই এক কাজ কর। গাড়ি থামিয়ে ফেল। তারপর দেখ আমি কি করি।"
রায়হান গাড়ি থামায়। পিছনের গাড়িটি ওদের গাড়ির অনেকটা কাছে এসে থেমে যায়।
.
ইরিনা অবাক হয়। আর সামনে এগোনো যাবে না। সামনে এগোলেই ওকে গুলি করা আরো সহজ হয়ে যাবে। সে গাড়ি থামিয়ে কি করবে ভাবতে থাকে। আর রাফির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ওদিক থেকে কোন আওয়াজ আসে না। ও খানিকটা ভয় পেয়ে যায়।ফেঁস যায় নিই তো ও। রাফি কি তাহলে চিট করেছে ওর সাথে। ও আর ভাবতে পারে না। চুপচাপ ড্রাইভিং সিটে বসে থাকে।। ঠিক তখনই ওই লাল বিন্দুটি ওর কপালের উপর এসে পড়ে।তার চোখে জল জমে দ্রুত।সে চোখমুখ বন্ধ করে চিৎকার দেয়। তারপরই ঠাস ঠাস করে করে শব্দ হয় দু'বার। তারপর সব শান্ত। একটু শব্দও হলো না কোথাও। ইরিনা আস্তে আস্তে মাথা তোলে। খানিকটা অবাক হয় নিজেকে দেখে। সে বেঁচে আছে! এখনো বেঁচে আছে! কোথাও গুলি লাগে নি। কিন্তু কাহিনী কি? গুলি তো করেছে কিন্তু ও মারা গেল না কেন? আর গুলিও তো এদিকে আসে নি।তাহলে? ইরিনা ভাবতে থাকে। তারপর আস্তে করে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। খানিকটা এগিয়ে যায়। দেখে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির ছাদের উপর কেউ একজন উপুড় হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে স্নাইপার দেখতে পায় ও। আরো খানিকটা এগিয়ে যেতেই দেখে এই গাড়িটির সামনে আরো একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওই গাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসে রাফি। ইরিনার যেন খুশির সীমা থাকে না। তার কেবল বারবার মনে হতে থাকল যে আজ খালি হাতে ফেরা হবে না। প্রতিশোধ নিয়ে বাড়ি যাওয়া যাবে।
.
রাফি আরেকটা ঘুসি মারল রায়হানের গালে। সে তাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। তার হাত দুটো পিছনে নিয়ে গিয়ে হ্যান্ডকাপ লাগানো হয়েছে। ছুরি দিয়ে বেশ কয়েকবার তার উরুতে এবং বুকে আঘাত করা হয়েছে। মাথায় বারবার লাথি মারা হয়েছে। রায়হান পড়ে যেতেই রাফি অদ্রির কাছে যায়। একেবারে ওর মুখ বরাবর গিয়ে বসে। কষে একটা থাপ্পড় মারে ওকে। বলে,
"লোভ জিনিসটা কোন কালেই ভালো ছিল না। যারা লোভ করেছে তাদের অধঃপাত হয়েছেই।"
এই বলে ও থামে। কিছু সময় অদ্রির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
"তোর সাথে আমার পাঁচ বছরের রিলেশন। রায়হান তোকে ছেড়ে যাওয়ার পর আমার কাছেই এসেছিস। বিয়ে করেছি বছরও হয় নি। তার আগেই এমন একটা চমক দিয়ে দিলি? কিভাবে পারলি? আমার কথা একবারেও ভাবলি না? কিভাবে আমাকে দেশদ্রোহী বানিয়ে দিলি? তোকে কি আমি কম ভালোবেসেছি। বল কম বেসেছি?"
কথাটা বলে সে আবার তাকায় অদ্রির দিকে। অদ্রি কান্না করতে থাকে। ঠিক তখনই কোত্থেকে ইরিনার দৌড়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে রায়হানের পেটের মধ্যে লাত্থি মারতে থাকে। হাতের লোহার রোলা দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে। যেন কোন পাগলা কুকুর খেপে গিয়েছে। রাফি ওদিক থেকে অদ্রির দিকে ফিরে। বলে,
"দেখ, এই মেয়েটাও আমার মতো। যখন জানতে পারে যে আমি যাচ্ছি তোদের মারতে তখনই প্রস্তুত হয়ে যায়। কেন জানিস? প্রতিশোধ নিতে। যতই ভালোবাসুক এমন প্রতারণা করলে কারোই সহ্য হবে না। আমারো না।"
অদ্রি শব্দ করে কেঁদে উঠে। বলে,
"আমায় ক্ষমা করে দাও প্লীজ। আমার ভুল..."
আরেকটা চড় দেয় রাফি। বলে,
"একটা শব্দও করবি না তুই।চুপ থাক! বেয়াদব। আরে যখন ওর হাত ধরে পালাচ্ছিস তখন মনে হয় নি যে তুই ভুল করছিস।মনে হয় নি যে তুই আমার সাথে না দেশের সাথে প্রতারণা করছিস? কিভাবে পারলি বল? কিভাবে?"
একটু থেমে আবার বলে,
"সেদিন তাহলে এই কারণে নিজের সাবেক বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমার পরিচয় করিয়েছিস। কি দারুন প্ল্যান বানালি। বাহ বাহ। শালা, আমিই বা কি গাধা। তোর সাবেক কে নিয়ে গেলাম আমাদের ল্যাবে যেখানে সাধারণ কারোই যাওয়া এলাউ না। আমি কি এত প্যাঁচ জানি নাকি। তারপর কি করলি?  বাংলাদেশের বিখ্যাত বিজ্ঞানী জামাল সাহেবের পেনড্রাইব নিয়ে গেলি যেখানে তার গুরুত্বপূর্ন কিছু আইডিয়া ছিল। যেখানে ক্যান্সার নিরাময়ের কিছু কৌশল ছিল যা খুব দ্রুতই আবিষ্কার হতো। আচ্ছা তোরা জানলি কিভাবে যে ওই পেনড্রাইবের দাম কয়েকশ কোটির উপরে হবে? নাকি কেউ চুরি করতে বলেছে?"
অদ্রি ভেজা গলায় বলে, 
"এসব মার্টিনের কাজ।ওকে তো চিনো। তোমাদের ল্যাবে যেই বিদেশি বিজ্ঞানী ছিল স। উনি রায়হানকে দিয়ে কাজটা করায়। রায়হান আমাকে বলে। আমি অবাক হই। ওর কাছে টাকার অংকটা শুনে..."
"থাক থাক। আর বলিস না। তোর মুখের এসব কথা শুনতে আমার ইচ্ছে হয় না। তবে..."
রায়হানের ফোন বেজে উঠে। রাস্তায় পড়েছি ওটা। ইরিনা সেটা কুড়িয়ে আনে। রাফকে দেখায়।  রাফি সেটা অদ্রিকে দেয়। বলে,
"তোর মার্টিন ফোন করেছে। ওকে অপেক্ষা করতে বল। বল যে তোরা আসছি।"
অদ্রি তাই করে। ওপাশ থেকে মার্টিনের কল কাটা যেতেই রাফি বলে,
 "তোদের প্ল্যান কিন্তু দারুন ছিল। সাপও মারলি আবার লাঠিও ভাঙ্গল না। চুরি করে আমাকে ফাঁসিয়ে দিলি। সিসি টিভির ফুটেজে দেখায় আমি তোর রায়হানকে নিয়ে ল্যাবে গিয়েছি যেটা একেবারেই অনৈতিক। পাব্লিক এখন আমার ফাঁসির দাবি করে। কি ভেবেছিস? আমি জেলে থাকব আর তুই বেঁচে থেকে আরামে জীবন পার করবি? হাহা এটা সম্ভব না। আমি বেঁচে থাকতে তো না-ই। এখন বল পেনড্রাইব কই? কই রেখেছিস?" 
অদ্রি কিছু বলে না। চুপ করে থাকি। রাফি আবার বলে। সে কোন উত্তর দেয় না। রাফি অবাক হয়। এই মেয়ে একটু আগেই ক্ষমা চেয়েছিল। আর এখন? রাফি মেজাজটা মাথায় চড়ে যায়। সে আবার কষে একটা থাপ্পড় মারে। বলে,
"বল পেনড্রাইব কই?"
অদ্রি ভেজা গলায় বলে,
"বললে আমাকে ছেড়ে দিবা?"
রাফি হাসে। বলে,
"এখানে আসার আগে দুটো সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। প্রথমটা হলো তোকে নিজ হাতে মারব। দ্বিতীয় হলো তোকে যদি না মারতে পারি তবে আমি নিজেকে নিজে মেরে ফেলব। এসব বলে লাভ নেই। নাটাই এখন আমার হাতে। তুই বলবি কি না বল?মরার আগে অন্তত আমার একটা উপকার করে যা। বল কই রেখেছিস?"
অদ্রি কান্না করে। জল ভরা চোখে রাফির দিকে তাকায়। রাফি সে চোখে চোখ রাখে না। চোখ ফিরিয়ে নেয়। অদ্রি বলে,
"ওটা গাড়িতে আছে। যাও একটা উপকার করলাম।  এবার আমার একটা উপকার কর। বল আমাকে যে তুমি কিভাবে আমার খোঁজ পেলে। যেখানে কোন ভাবেই আমার খোঁজ পাওয়া সম্ভব ছিল না সেখানে তুমি কিভাবে পেলে?"
রাফি হাসে। ইরিনার দিকে তাকায়।সেও উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রাফি বলে,
"তুই একটা ভুল করেছিস অদ্রি। ছোটখাটো একটা ভুল। যেটা আজ তোর মৃত্যুর কারণ। যখন আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলি তখনই তোর উচিৎ ছিল আমার দেওয়া সব কিছু ফেলে দেওয়া। "
"মানে?"
"অদ্রি,মানেটা হলো,আমি তো একজন। সাইন্টিস্ট। তাই আমার চিন্তাভাবনায়ও সাইন্স জড়িয়ে থাকে। তোকে একদিন একটা হ্যান্ড ঘড়ি গিফট করেছিলাম মনে আছে?"
অদ্রি সাথে সাথে নিজের বাঁহাতের দিকে তাকায়। দেখে সেই ঘড়িটা তার বাঁহাতে। সে অবাক হয়। বলে,
"কিভাবে?"
"যদি মোবাইল ঘড়ি হতে পারে তবে সেই মোবাইল ঘড়িতে লোকেশন থাকতে পারে না? আমরা এখন আধুনিক হয়েছি না! এই লোকেশন ট্র‍্যাক করেই আমি তোদের ধরতে সক্ষম হয়েছি।"
এই বলে হাসতে থাকে। অদ্রি অবাক হয় ভীষণ। শেষমেশ একটা ঘড়ির কারনে ধরা পড়ে গেল! ইরিনা রীতিমত অবাক হচ্ছে। তার একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে রাফির দিকে তাকিয়ে থেকে হাসল।রাফি বলে,
"ইরিনা? শুট করতে পারো?"
ইরিনা হাসে। বলে,
"চেষ্টা করতে পারি।"
"ওকে। লেটস ট্রাই ইট।"
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়  
-তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url