গল্পঃ ভূতুড়ে মেয়েটা

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo


গল্পঃ ভূতুড়ে মেয়েটা


(৩য় পর্ব)


আমরা দুজনেই সজোরে চিৎকার দিলাম। চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।এমন সময়  দরজার ওপাশ থেকে ঠক ঠক শব্দ এল।বেশ কয়েকবার শব্দ হল।আমরা সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম মেয়েটি হুট করেই হাওয়া হয়ে গেল।আমি কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম কেবল।মাসুদ এগুলো দরজার সামনে।আমিও তাই করলাম। মাসুদ বলে উঠল।
:কে? কে ওখানে?
:আমিই! জামিল মিঞা! এই বাড়ির কেয়ারটেকার।
মাসুদ দরজা খুলল।দেখলাম জামিল ভাই দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।দরজা ফাঁকা পেতেই তিনি হস্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলেন।আমি উনাকে দেখে কিছুটা বিচলিত হলাম।এই সময়ে এখানে কেন? প্রশ্নটা মনে জমা রাখলাম না।বললাম,
:আপনি? এই অ-সময়ে?
:এই খান দিয়েই যাইতেছিলাম আর কি।তাই ভাবলাম আপনেগরে একটু দেইখা যাই।
:এত রাতে আপনি কোথায় গিয়েছিলেন।কোথা থেকেওবা আসছেন!
:বাজারে একটু কাম ছিল।কাম সারতেই মেলা দেরি হইয়া গেছে।
আমরা দুজন অবাক হয়ে জামিল মিঞার দিকে তাকিয়ে রইলাম।তিনি কিছু সময় পর বললেন,
:তয় ভাবতাছি যে আর বাড়ি যামু না।এহানেই থাইকা যামু।কি কন?
মাসুদ পাশ থেকে বলে উঠল,
:হুম।তাই ভালো হবে।এত রাতে বাড়ি যাওয়াটা ঠিক হবে না।যা দিনকাল পড়েছে!
আমি কিছু বললাম না।জামিল মিঞার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম।সে আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসল।পান খেয়ে দাঁত গুলো লাল হয়ে আছে।আমি তা দেখে কিছুটা অবাক হলাম।কেউ পান খেলে তার দাঁত এতটা লাল হয় না।জামিল মিঞার দাঁত টকটকে লাল হয়ে আছে।কি অদ্ভুত! 
.
হঠাৎ-ই মাসুদ বসার ঘর থেকে ডাক দিল।আমি হস্তদন্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।মাথাটা কেমন জানি ঘুরছে।কিছু সময় চুপচাপ বসে রইলাম।হঠাৎ করে ঘুম থেকে কেউ ডেকে তুললে আমার গা কেঁপে উঠে।বুক ধপ ধপ করে।মাথা ঘোরায়।স্থির থাকতে পারি না।হুট করে উঠে দৌড় দিতে পারি না।মাঝে মাঝে এমন হয়।মাসুদ আবার ডাক দিল।আমি আস্তে আস্তে বিছানা থেকে স্বচ্ছ ফ্লোরে পাঁ রাখলাম।বসার ঘরের দিকে এগোলাম। 
.
মাসুদ সোফার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি দেখে দৌড়ে ওর পাশে গেলাম।বললাম,
:কি রে!এভাবে হা করে আছিস যে?
আমার উপস্থিতি টের পেতেই ওর ঘোর কাটল।বলল,
:দেখ! এখানেই শুয়েছিল জামিল ভাই।
:হুম! তাই তো? এখন কই উনি? 
:আরে আমি তো সেটাই ভাবতেছি।কই উনি?
:চলে গিয়েছেন বোধ হয়।
:কিভাবে?
:আরে হাদারাম।ঘর থেকে বের হয় কিভাবে? নিশ্চই দরজা দিয়ে।
:সে তো আমার জানা আছে।কিন্তু দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ।
:বলিস কি?
:বিশ্বাস না হলে নিজে গিয়ে দেখ। 
আমি নিজে গিয়ে দেখলাম।অদ্ভুত ব্যাপার। দরজা বন্ধ। আবার লোকটাও ঘরে নেই।গেল কই?
আমি ওকে বললাম,
:ঘরের অন্য রুম গুলোতে খুঁজেছিস?
:আরে সব তন্ন তন্ন করে ফেলেছি।তবুও তাকে পাই নি।আচ্ছা এই ঘরে কি দ্বিতীয় কোন দরজা আছে বের হবার? 
:আমি জানব কি ভাবে।তুই যেখানে আমি সেখানে।  দাঁড়া আমি ফোন দেই।
:হুম।তাই কর।সেটাই ভালো হবে।
কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল জামিল ভাইয়ে কন্ঠ। আমি হস্তদন্ত হয়ে বললাম,
:ভাই আপনি কই? কখন বাড়ি গেছেন।
:কেন ভাই? আমি তো রাইতেই বাড়ি ফিরা আইছি।
:কি বলেন মাথা ঠিক আছে?আপনি না আমাদের সাথে ছিলেন।বাজারের কাজ সারতে দেরি হওয়ায় আপনি বলেছেন আপনি আর বাড়ি যাবেন না।আমাদের এখানে থাকবেন।
:ভাই আমার মাতা ঠিকই আছে।আম্নের মাতায় সমস্য ওইতে পারে।আরে মিঞা আমি রাইতে বাজারেই যা-ই নি,আর আপনি বলতাছেন আমি বাজারে গিয়ে কি কাম করেছি। 
:আপনি একটু আমার সাথে দেখা করেন তো।
:কখন আইতে ওইব?
:এখন? খুব তাড়াতাড়ি। 
:আইচ্ছা। রাহেন।আইতাছি।
.
:আমার মনে হয় রুমটাতে কিছু আছে।
মাসুদ ভ্রু কুছকে বলল,
:কোন রুমটাতে?
:রাতে মেয়েটা যে রুমটাতে ছিল সেই রুমটায়।
:আরে বেটা রুমের চিন্তা বাদ দে।আপাতত জামিল মিঞার রহস্য বের কর।লোকটা কি আসলেই জামিল মিঞা ছিল নাকি অশরীরী কোন আত্মা।জামিল মিঞার রুপ ধরে এসেছে।
:আমারো তাই মনে হয়।সব দিক বিবেচনা করলে কিন্তু উত্তর এটাই আসবে।এ অশরীরী আত্মাই হবে।যা এই ঘরে রয়েছে।আমি তোকে এই জন্যেই বলেছি রুমটাতে কিছু একটা আছে।আমরা দুজনের একজনও জানি না রুমটাতে কি আছে।আর তাছাড়া কাল রাত্রে মেয়েটা কিন্তু এই রুম থেকেই বের হয়েছে।
:হ্যাঁ।মনে পড়েছে।মেয়েটা কি জানি একটা দেখে কান্না করছি।
:ছবি! কাল রাতে মেয়েটা একটা ছবির দিকে তাকিয়ে কান্না করছিল।
এই বলে আমি একটু এগিয়ে গেলাম।মাসুদওও আমার দেখা দেখি এগিয়ে এল।মেয়েটা  যেখানে বসেছিল ঠিক তার সামনে,দেয়ালের সাথে লাগানো একটা পেইন্টিং। সেখানে একটা বাচ্ছা মেয়ে আর তার দুপাশে দুইজন মানব মানবি।আমি মনে মনে ভাবলাম,মেয়েটার পাশের পুরুষ মানুষটা নিশ্চই ওর বাবা হবে।আর অন্য পাশে তার মা।মাঝখানে তাদের মেয়ে।কিন্তু এই মেয়েই যে সেই ভূতুড়ে সেটা বুঝা যাচ্ছে না।কেননা,ছবিটা হাতে আঁকা।খুব সম্ভব মাঝখানের ছোট মেয়েটি ছবিটা এঁকেছে এবং তার বাবা সেটা খুব যত্নে ফ্রেমে বন্ধি করে রেখেছেন।বড় লোকি কাজ কারবার। বিলাসিতা তারাই বেশি করে।পাশ থেকে মাসুদ বলে উঠল,
:আমি যা ভাবছি তুই কি তাই ভাবছিস?
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
:তুই কি ভাবছিস সেটা আমি কি করে জানব।মনের কথা তো আমার জানার 
কথা না।
:না! আমার মনে হয় তুই সেটাই ভাবছিস। ব্যাপারটা কমন।যে কেউ এই জিনিসটা ভাবতে পারে।নিশ্চই এই বড় লোক বাড়ির ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটাকে কেউ খুন করেছে বা তার উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। হয়ত সেই নির্যাতন সে না সইতে পেরে আত্মহত্যা করেছে।যার দরুন তার অতৃপ্ত আত্মা সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে এখনো এই বাড়িতে ঘুরা ফেরা করছে।
:বাহ্! তোর ভাবনা শক্তির প্রশংসা করতে হয়।আমিও এই ব্যাপারটাই ভাবছিলাম।আসলে.  .  .
:ঠক ঠক ঠক 
ঠিক রাতে যেভাবে শব্দ হয়েছে এখনো সেভাবেই শব্দ হল।আমার কেন জানি মনে হল এই শব্দ আর সেই শব্দের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।আমি চেঁচিয়ে বললাম,
:কে? কে ওখানে? 
:আমি! জামিল মিঞা! এই বাড়ির কেয়ারটেকার।
আমি যাওয়ার আগেই মাসুদ গিয়ে দরজা খুলল।দরজা খুলতেই জামিল মিঞা হস্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল।আমার দিকে তাকিয়েই বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিল।পান খেয়ে দাঁত গুলো লাল হয়ে আছে।আমি তা দেখে কিছুটা অবাক হলাম।কেউ পান খেলে তার দাঁত এতটা লাল হয় না।জামিল মিঞার দাঁত টকটকে লাল হয়ে আছে।যেন রক্ত লেগে আছে।কি অদ্ভুত!ঠিক রাতে যেমনটা হয়েছিল।সে হাসি মুখে রেখেই বলে উঠল,
:ডাকছিলেন ক্যান্! কিছু কইবেন? কইলে তাড়াতাড়ি কই পালান।আমার আবার বাজার যাইয় ওইব।
আমার থেকে কেন জানি জামিল মিঞাকে অদ্ভুত লাগল।খুব অদ্ভুত তার চরিত্র।কি অদ্ভুত তার হাসি।
আমি বললাম,
:সোফায় বসুন।
সে পান চিবুতে চিবুতে সোফায় বসল।আমি আর মাসুদ বসলাম ঠিক তার বিপরিত পাশে।



ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url