গল্পঃ আমার ঈদ
সবাই ঈদের গরু কিনছে।আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।খুব ভালোই লাগছে।কয়েকটা গরুও দেখেছি।গরুর গায়ে একটা থাপ্পড় দিয়েই গরুর মালিক কে বললাম,
:চাচা দাম কত?
সে হাসতে হাসতে বলল,
:এক লাক্ষ বিশ বাবা।
দামটা শুনে আমি হাসলাম। খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে অন্য গরু দেখতে গেলাম।আমার কাজই এটা।কলেজ গেলেই বন্ধুরা বলে,
আমাদের গরু কিনা হয়ে গিয়েছে।তোদের গরু কিনেছে?
আমি মৃদু হাসি। তবে কিছু বলি না।সেখান থেকে চলে আসি। আসছে ঈদ।ভার্সিটি এখনও বন্ধ হয় নি।দুইদিন পর বন্ধ হবে।আর এখন তেমন কোন ক্লাসও হবে না।তাই ভার্সিটি যাই নি।
শুয়েছিলাম ঘরে।হঠাৎই মিহিন আমাকে ফোন দেয়।বলল,
:কি রে তুই কই? ভার্সিটি আসবি না?
আমি বললাম,
:না।এসে কি করব।এই কয়দিন ঠিক মত ক্লাস হবে না।
:হুম তাও ঠিক।আচ্ছা আজ একটু আসতে পারবি প্লিজ।
কিছুটা অনুনয় করে কথাটা বলল মিহিন।
আমি বললাম,
:কেন? জরুরি কিছু?
:হুম।খুব জরুরি। তুই আয় প্লিজ।আমি তোর জন্যে অপেক্ষা করছি।
এই বলে ফোন কেটে দিল মিহিন।আমি দোটানায় পড়ে গেলাম।যাব কি যাব না।পরে কি না কি ভেবে চলে এলাম ভার্সিটি ।মিহিন আমার বন্ধু।মেয়ে বন্ধু।হুট করেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়।তবে বন্ধুত্বে আমার কোন ইচ্ছে ছিল না।মিহিনকে আমি প্রথম দেখি বাসে।এরপরে ক্লাসে এসে দেখি সেও ক্লাসে।তখন বুঝলাম মেয়েটা আমার সাথে পড়ে।আমি প্রতিদিনই ভার্সিটি যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে যেদিন টাকা থাকে না সেদিন যাই না।ও আমার কয়েক স্টপেজ পরে উঠে। একদিন উঠেই ও আমার পাশে বসল।সিটটা সেদিন খালি ছিল।বসেই কথা বলা শুরু করে দেয় নি ও।চারপাশটা ভালোভাবে পরক্ষ করল মেয়েটা। কিছুক্ষণ পর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
:তুই তো আমাদের ব্যাচেরই তাই না?
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম,
:হুম
:ক্লাসে এত চুপচাপ থাকিস কেন? আর কারো সাথে তেমন মিশিশও না।কেন?
আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললাম,
:এমনি!
ও কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল,
:এমনি কেন? আরে সবার সাথে মিশবি, কথা বলবি,হাঁটা চলা করবি, দেখবি ভালো লাগবে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম,
:তা ঠিক।তবে আমার কারো সাথে মিশতে,কথা বলতে, হাঁটতে ইচ্ছে হয় না।আমার ভিতর থেকে এগুলো আসে না।
দেখলাম মেয়েটা কেমন চুপ হয়ে আছে।কিছু বলছে না। আমিও কিছু বললাম না।
সেদিনের পর থেকেই ওর সাথে প্রায়শই দেখা হত।হালকা পাতলা কথা হত।আজকের পড়া,কালকের পড়া নিয়ে আমাদের মাঝে বিশদ আলোচনা হত।ক্লাসে মজার কিছু হলে সেটা নিয়ে দুজনের মাঝে হাসির রোল পড়ত।। এরপরেই অবশ্য ওর সাথে আমার বন্ধুত্বটাও গাঢ় রুপা ধারন করে।মেয়েটা খুব মিশুক ও বটে। আর আমার সামনে আসলেই কেবল হাসে।আর আমি শুধু ওর হাসিই দেখে যাই।খুব ভালো লাগে আমার।যেদিন ভালো ভাবে আমি ওর হাসিটা লক্ষ্য করলাম সেদিন আমার কেন জানি মনে হল এই মেয়েকে আর চাই। অন্তত একজন ভালো জীবন সঙ্গী হিসেবে।মন চাইত আমি ওকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসি।কিন্তুই পিছনে ফেলে আসা দিন গুলো মনে হতেই আমার সেই আকাশ কুসুম চিন্তা লুপে যায়।সব কিছু অল্পতেই নিমিশ হয়ে যায়।তখন হৃদয়টা কেমন জানি খাঁ খাঁ করে উঠে।কষ্ট গুলো আবার চেপে ধরে।মনে পড়ে যায় অতিরিক্ত সিগারেট সেবনের ফলে বাবার অকাল মৃত্যু।চোখে ভেসে উঠে ছোট বোন আর মায়ের নিষ্পাপ চেহারাটা। তখন আমার ভিতরের কোন কিছুই ঠিক থাকে না।শুন্য হৃদয়টা আরেকটু শুন্য হয়। আরেকটু কষ্টের বৃদ্ধি হয়।আর তা আমাকে মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়।
,
আমি গিয়েই দেখলাম মিহিন একটা কেক নিয়ে ক্লাসে বসে আছে।সাথে আরও কিছু ফ্রেন্ড। আমি কিছুটা অবাক হলাম। আজ কি ওর জন্ম দিন নাকি?তাহলে তো ওকে কিছু গিপ্ট দিতে হবে। কিছুটা চিন্তিত হলাম। ওর জন্মদিন বলে কথা। ওকে তো গিপ্ট দিতেই হবে।কিন্তু আমার কাছে তো এত টাকা নেই।ভাবলাম পিছন ফিরে কেটে পড়ি। ফোন করলে কোন বাহানা বানিয়ে সামলে নিব।
কিন্তু তার আগেই ও আমাকে দেখে ফেলে।।আমাকে দেখতে পেয়েই ও এগিয়ে আসল।আমার হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে যেতে লাগল। আমার ভেতরটা খানিকটা কেঁপে উঠল। রক্তের কনিকা গুলোর মাঝে দিয়ে বয়ে গেল হিমেল হাওয়া।এই প্রথম কোন মেয়ে আমার হাত ধরল।ওর ধপ ধপে সাদা হাতটা মনে হয় তুলো দিয়ে বানানো। ওফফ!কি নরম।হঠাৎই পাশ থেকে কেউ বলে উঠল,
:হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডিয়ার তাসফি। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
আমি খানিকটা চমকে মিহিনের দিকে তাকালাম।দেখলাম ও মিটি হাসছে।ও বলার পরেই উপস্থিত বাকি সবাই সম্মিলিত ভাবে বলল। আমার চোখ গুলো খানিকটা ভিজে উঠল।মিহিন পাশ থেকে আস্তে করে বলল,
:ওই শয়তান! তোকে এখানে কান্না করার জন্যে আমি নি।অনেক কান্না করেছিস। এখন একদম কান্না করা চলবে না।শুধু হাসবি।তোর হাসিটা দেখার জন্যেই এত আয়জন।
আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখন ও বলল,
:চুপ! একদম চুপ।নে এবার কেক কাট।
আমি কেকটার দিকে তাকালাম।সেখানে আমার নাম লিখা। কেকটার এক কোনায় ইংরেজি বড় হাতের টি দেখতে পেলাম। সেটা সাদা ক্রিম দিয়ে লিখা।এর পাশেই ইংরেজি বড় হাতের এম লিখা।তবে সেটা কফি কালারের ক্রিম দিয়ে লিখা। যেন না বুঝা যায়।আমি কেকটা কাটতেই সবার
হুলুস্থুর কান্ড শুরু হয়ে গেল।
কেক কেটে সবাইকে বিদায় দিয়ে আমি আর মিহিন আমাদের ভার্সিটির পূর্বাতে বসলাম।মিহিনকে খুব খুশি লাগছে। খুব উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছে ওকে।খুব প্রানবন্ত দেখাচ্ছে ওকে।আমি ওর দিকে তাকিয়ে ওর এমন ভঙ্গিমা গুলো অবুভব করছি।আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। সেটা ও বুঝতে পেরেছে।তবে কিছু বলে নি।আমি চোখ সরিয়ে নিতেই ও বলল,
:জানিস আমাদের একটা বড় গরু কিনেছে। লাল কালারের গরু।খুব সুন্দর। আচ্ছা তোদের গরু কিনেছে?
আমি মৃদু হাসলাম কেবল। কিছু বললাম না।ও আমার হাসি দেখে নরম কন্ঠে বলল,
:তোর এই হাসিটাই না আমার কাছে বড় অদ্ভুত লাগে।এর কোন অর্থ আমি আজও খুঁজে পাই নি।
:এই হাসিটার মানে সবাই বুঝতে পারে না রে।এইটা বুঝার ক্ষমতা সবার হয় না।
ও পরিস্থিতি সামলাতে মৃদু হেসে বলল,
:ওমা তাই নাকি?
আমি বললাম,
:হুম।
:আচ্ছা বললি না তো তোদের গরু কিনেছে কিনা?
আমি সহজ ভঙ্গিতে বললাম,
:ক্লাস সিক্সে আমি লাস্ট আমাদের দেওয়া কোরবানি দেওয়া দেখি।
ও মুখ কালো করে বলল,
:সরি রে।আমি বুঝতে পারি নি।
আমি হেসে দিয়ে বললাম,
:আরেহ এ কিছু না।বাদ দে।
কিছুক্ষন দুজনেই খুব চুপ থাকলাম।একটু পর ও বলল,
:হাতটা একটু দিবি?
:কেন?
:দিতে বলছি দে।এত কথা বলছিস কেন?
আমি খানিকটা ইতস্ত বোধ করলাম।
এমন সময় ও বলল,
:আরে তুই কি মেয়ে নাকি? হাত দিতে কেউ মুখকে এমন করে নাকি।যাহহ লাগবে না তোর হাত দেওয়া।
খানিকটা রেগে কথাটা বলল মিহিন।আমি ওর দিকে তাকিয়ে দ্রুত হাত বাড়িয়ে দিলাম।
ও মৃদু হেসে বলল,
:এই তো গুড বয়।
এটা বলে ও ওর ব্যাগ থেকে কি জানি বের করল।বের করেই আমার হাতে পরাতে লাগল। একটা কালো ঘড়ি। খুব সুন্দর ঘড়িটা।কেমন জানি অদ্ভুত সুন্দর ঘড়িটা। আমি মোহ কাটিয়ে বললাম,
:আরে করছিস কি? আমাকে ঘড়ি পরাচ্ছিস কেন? এত দামি...
:আজকের পর থেকে এই ঘড়ি যেন তোর হাতে দেখি এবং তুই আমাকে এই ঘড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার বিন্দু মাত্র চেষ্টাও করবি না।মনে থাকে যেন।
আঙ্গুল উঁচিয়ে কথাটা বলল ও।
আমি অন্য দিকে মুখ ফিরালাম। চোখ গুলো ভিজে আসছে।আমি জানি ও কেন এমন করছে।তবে এর প্রতিদান দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।আমি পারব না।
পাশ থেকে ও বলল,
:তোর হাতটা ধরতে দিবি?
আমি চট করেই ওর দিকে তাকালাম। আরে বলে কি এই মেয়ে।পাগল নাকি।আমি বললাম,
:হাত তো তোর কাছেই আছে।
ওর হাতের ভাঁজে তখনও আমার হাত ছিল।ও বলল,
:সারাজীবনের জন্যে দিবি?
আমি জানতাম ও এমন কিছু বলবে।আর আমি এর জন্যে প্রস্তুতওও ছিলাম।বললাম,
:এটা সম্ভব নারে।তুই ধরে রাখতে পারলেও আমি পারব না মিহি।
:তোর মুখ থেকে মিহি নামটা শুনতে খুব ভালো লাগে রে।সারাজীবন শুনতে চাই।সুযোগ দিবি?
এমন ভাবে বললে কোন ছেলে এই মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।আমি ক্ষনিকের জন্যে ভাবলাম নাহ, ওকে হ্যাঁ বলে দেই।পরক্ষনে আমার বাস্তবতা আমাকে জানায়,তুই একা।তোর কেউ নেই।এসব তোর দ্বারা হবে না রে ভাই।সামনে চল এগুলো ফেলে।এমন অনেক বাধাই আসবে।
আমি কিছু বললাম না।আমি আজ ওর চোখ দেখেই বুঝতে পারছি ও এমন কিছু করবে।আজ পুরোটা দিন ওর চোখে শুধু সেটাই ভেসেছিল।আর ঘভির ভালোবাসা।কিন্তু এত কিছু এই পোড়া কপালে নেই। আজ যদি বাবা থাকত, যদি তার কোম্পানিটা থাকত, তাহলে আমি ওকে কখনই ফিরিয়ে দিতাম না।বাবা ছিলেন একটা সিডি কোম্পানির মালিক।আধুনিকতা আসার সাথে সাথে সিডির প্রচলনটাও উঠে যায়।তবুও বাবা অন্য ব্যবসা খুলে।তখন আমাদের টাকার অভাব ছিল না।এত টাকা ছিল যে মদ খাওয়া শুরু করে।সিগারেট তো আছেই। এসব করেও যখন দেখল টাকা অনেক তখন বাবা দুই বিয়ে করে।প্রথমে যাকে বিয়ে করছে তিনি বাবার এমন কর্ম দেখে তাকে ছেড়ে দেয়।তবে ডিবোর্স নেয় নি।খুব ভালোবাসত নাকি বাবাকে। তাই ডিবোর্স নেয় নি।তবে যখন শুনল বাবা আমার মাকে মানে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তখন নাকি তিনি অনেক কান্না করেন।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়।পরে অবশ্য বাস্তবতা কে মেনে নেয়।তবে আর কখনও আমাদের বাড়ি আসেন নি।আমি এই সব লোক মুখে শুনেছি। বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর সবাই নাকি বাবাকে কেমন ঘৃণা করত।এক সময় বাবা দুর্বল হয়ে যায়।মুছে যায় আমাদের কোম্পানির নাম।বাবা সব হারিয়ে পেলে।ধন দৌলত সব কিছু।
আমি মিহিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,
মেয়েটা আমার দিকে চল চল চোখে তাকিয়ে আছে।তবে ওর চোখে অন্য একটা কিছু দেখলাম। তা হল ওর দৃঢ়তা।ওর চোখে আমি স্পষ্ট দৃঢ়তা দেখতে পেলাম। যেন আমাকেই ও ওর জিবন সঙ্গিনী হিসেবে চায়।আমাকেই ও জীবন সঙ্গিনী করেই ছাড়বে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম ।ওর দিকে না ফিরে বললাম,
:আসি রে। ভালো থাকিস। আর একটা কথা, আর কখনও এমন আবদার নিয়ে আসবি না।তাহলে আমি বন্ধুত্ব ভাঙ্গতে বাধ্য হব।এই বলে আমি হাঁটা দিলাম।পিছন ফিরে একটুও তাকালাম না।কষ্ট হচ্ছে।মন চাচ্ছে এক দৌড়ে ওর সামনে যাই।গিয়ে প্রান খুলে কথা বলি।সব বলে দেই যা আমার এই হৃদয়ে লুকায়িত আছে। কিন্তু না।আমি তা করলাম না।আমি সামনে এগিয়ে চললাম।পিছন থেকে ও বলল,
:ওই থাম। আমিও যাব।আর এত স্বার্থপর হলি কবে থেকে রে?
আমি কিছু দুর গিয়ে থেমে গেলাম।আমি আবার স্বার্থপর হলাম কিভাবে।আমি পিছন ফিরে ওরদিকে তাকালাম।ও দৌড়ে এসে বলল,
:তোর জন্যে এত কিছু করলাম আর সেই তুই আমাকে একটা ধন্যবাদও দিলি না।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললাম,
:ওহ।সরি। এবং ধন্যবাদ তোকে আমাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যে।
:তোর এই হাসিটা না আমার কাছে খুব ভালো লাগে।
:তুই আবার শুরু করলি?তুই থাক। আমি যাই।
।
বাসে দুজনে এক সাথেই উঠেছি।বাস চলতে শুরু করে দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর মিহিন বলল,
:দেখ তুই তো জানিস আমার বাবা একজন মেজিষ্ট্রেড।
:হুম তা তো জানি।
ও আমার হাতটা টেনে নিয়ে নিজের আঙ্গুকে ফাঁকে আমার আঙ্গুল গুঁজে দিয়ে বলল,
:তুই এটাও জানিস আমি এই পর্যন্ত পাঁচটা ছেলেকে জেল খানার ভাত খাইয়েছি।
জেলের কথা শুনতেই আমার মায়ের আর আমার ছোট বোন মুখটা ভেসে উঠল।ও কি বলতে চাচ্ছে আমি সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি।ও আবার বলল,
:তাই আমি যা বলছি তা কর। বেশি কিছু হলেই জায়গা মত পাঠিয়ে দিব।শুনে রাখ আমি যতটা বা ভালো তার চেয়ে বেশি খারাপ আমি। মনে রাখিস। আমি মনে মনে হাসলাম। ও আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।কি পাগলি মেয়েটা। আমি আস্তে করে ওর হাতের ভাজ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আনলাম। বললাম,
:পাগলামি করিস না।আর এটাই তোর সাথে আমার শেষ কথা মনে রাখিস।
ওর স্টপেজ চলে এসেছে।ও শুধু ছোট করে বলল,
:আমি দেখব তুই কথা না বলে কই যাস।মনে রাখিস তুই আমার ।
'
আজ ঈদ।ঈদুল আযহা।খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠলাম। ফজরের নামাজ পড়ে বাবার কবর জিয়ারত করলাম। এরপর গোসল করে ঈদের নামাজ পড়তে চলে গেলাম।আমার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। সবাই গরু জবাই করবে।আর আমরা? আমরা আমাদের ঘরেই বন্ধি হয়ে থাকব।নামাজ পড়ে আসার সময় আমি আর আমার দুই বন্ধু মিলে আসছিলাম বাড়িতে।কিছুদুর যাওয়ার পর তারা গরু নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল।আমাদের গরু এত টাকা নিয়েছে।এই, সেই, হেন , তেন আরো কত কি! আমি যখন দেখলাম ওরা গরু নিয়ে কথা বলছে তখন আমি তাদেরকে এড়িয়ে গেলাম তারা আগে চলে গেল।আমি যে তাদের সাথে ছিলাম তারা হয়ত এটা ভুলেই গিয়েছে।আমি আস্তে আস্তে সবার পিছন দিয়ে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরলাম।মনটা আরেকটু খারাপ হল। আমার তো মন চায় আমাদের গরু কিনবে।যবাই করবে! একসাথে খাবে।কত মজা করবে। কিন্তু সবার যে সব ইচ্ছে পূরন হয় না।চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না।এটাই সব চেয়ে বড় বাস্তবতা। আমি ঘরে বসে রইলাম।মা আর বোন ঘুমিয়ে আছে।তারা ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গেছে।আমি নিজের রুমে এসে বই নিয়ে টেবিলে বসেছি।পড়তে হবে আমাকে।অনেক কিছু করতে হবে আমাকে। অনেক বড় হতে হবে।আমাকে পারতেই হবে।আমাকে যুদ্ধ করতে হবে। বাবার স্বপ্নকে পূরন করতে হবে।এমন সময় আমার ফোনটা বেজে উঠল। নিশ্চই মিহিনের ফোন।এখন আবার অন্য সিম দিয়ে ফোন দিয়েছি।সেদিন থেকে মনে হয় পাঁচ ছয়টা সিম থেকে ফোন দিয়েছে আর আমি ব্লক লিস্টে তা দাখিল করলাম।
আমি তবুও নিশ্চিত হওয়া জন্যে ফোনটা ধরলাম। ওপাশ থেকে কেউ গম্ভির স্বরে বলল,
:আমি চাটখিল থানার টিওনো বলছি তুমি মিহিনকে চিন?
আমার বুঝতে বাকি রইল না যে হতে যাচ্ছে।তবে খানিকটা ভয় পেয়ে বললাম,
:জি চিনি। আপনি?
:ওর বাবা।আচ্ছা তুমি কি শুরু করেছ আমার মেয়ের সাথে। ওর ফোন ধরছ না যে?
:আসলে?
:দেখ আমি চাইলে তোমাকে অনেক কিছু করতে পারি। তবে আমি তা করব না।কারন তোমার সম্পর্কে আমি সব তথ্য নিয়েছি।তবে একটা কথা কি জান? আমি আমার মেয়েকে খুব বেশিই ভালোবাসি এবং ওর কোন রুপা কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না।বাকিটা তোমার ইচ্ছা।রাখলাম।
ফোনটা কেটে গেল।নাহহ! এই মেয়েটা মনে হয় আমাকে আর শান্তিতে থাকতে দিবে না।একে বারে নিজের করেই ছাড়বে।সেটা অবশ্য আমি ওর চোখ দেখেই বুঝতে পারছি।তবে...
তবে আমি আজ খুশি।খুব খুশি।এখন মনে হচ্ছে আজ ঈদ।আজ আমার ঈদ।খুশির ঈদ।নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম।মিহির নাম্বার গুলো ব্লক লিস্ট থেকে বের করতেই ওর ফোন এসে হাজির।আসলেই বড্ড পাগলি মেয়েটা। তোমার জন্যে এক বুক ভালোবাসা রইল প্রিয়তম। ভালোবাসি তোমায়। খুব বেশিই!
'
উৎসর্গ :আমার সেই বন্ধু, যে আমার ভাইয়ের মত। যার সাথে গল্পের নায়ক চরিত্রের অনেকটাই মিল আছে। আমি দোয়া করি বন্ধু। তুই জিবনে অনেক বড় হবি।এবং তোর মা ও তোর পরিবারের কষ্ট দুর করবি।ইনশাল্লাহ।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমদ