গল্পঃ আমি চাই তোরা ভালো থাক

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo (1)6


গল্পঃ আমি চাই তোরা ভালো থাক

(সমাপ্তি) 


তিনি অবাক হয়ে দেখলেন যে যদি গ্লাসটা বের করতে একটুও অসাবধান হয় তাহলেও ছেলেটার মৃত্যু অবধারিত। তিনি আবার চিন্তিত হয়ে উঠলেন।  একটু অসাবধান হলেই কিডনি থেকে যে নালিকাটি ওর মূত্র থলিতে মিলিত হয়েছে সেটা কাটা যাবে।যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে।     তিনি ভাবলেন, কাজটাকি বড় স্যারকে দিয়ে দিব।পরক্ষনে ভাবলেন না এটা আমাকে পারতেই হবে। তা না হলে আমার ডাক্তারি করাটাই বৃথা হবে।আমি পারব।আমাকে পারতেই হবে।এরই মাঝে নিরার প্রবেশ। এসেই দেখল শাকেরের চিন্তিত মুখটা। দ্রুত জিজ্ঞেস করল,
:কি হয়েছে স্যার।আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? কোন খারাপ কিছু? 
:না তেমন কিছু না।তবে...
:তবে কি স্যার?
শাকের বিষয় টা ওকে বুঝাল।নিরা শাকেরকে অভয় দিয়ে বলল,
স্যার আপনি পারবেন। আর এর চেয়ে আরও কত বড় বড় অপারেশন আপনি করে পেলেছেন।এ আর এত কঠিন কি?
শাকের নিরার কথায় অনুপ্রেরিত হল।আত্ননির্ভরশিলতা বাড়ল এবং অপারেশনটা নিজে করবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করল।তবে তা বাইরে প্রকাশ করলেন না।
'
তাসফি আর রুপার বাবা ডাক্তারের রুমে বসে বসে ডাক্তারের কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনলেন।কথা গুলো শুনার পর তাসফি প্রায় কেঁদেই দিল।নিজেকে সামলে ডাক্তারকে বলল,
আপনি অপারেশন এর ব্যবস্থা করুন।পেমেন্টের বেপারটা আমি দেখছি।
শাকের বলল,
ওকে।আমি দেখছি।তবে সব কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।
আমি বললাম,
জি।
রুপার বাবা আর আমি বের হলাম।উনাকে কেমন জানি অস্থির। আমি বললাম,
আঙ্কেল আপনি বাড়ি চলে যান।আপনার মনে হয় অসস্থি লাগছে।
তিনি রাগত স্বরে বললেন,
বেশি বুঝবা না।তুমি এত টাকা পাবে কই? সাথে করে কি টাকা নিয়ে আসছ?
আমি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।কি বলব।উনি তো মিথ্যা বলেন নি।আমার কাছে তো টাকা নেই।উনি থামলেন না।খুব তাড়াতাড়ি হেটে চলে গেলেন।তাসফি পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়ল।মুখে হাত গুঁজে বাচ্ছাদের মত কান্না শুরু করে দিল।ভাবল,
আমি থাকলে হয়ত এমনটা আর হত না।সব হয়েছে আমার জন্যে। আমি আসলেই একটা অপয়া।এসব ভাবতে ভাবতে তাসফি কেঁদে উঠল।শব্দ ছাড়াই কান্না করে ও।হঠাৎ-ই সামনে কারো উপস্থিতি টের পেল ও।তাকাতেই দেখল রুপা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুই বলছে না।তাসফি নিজেকে আটকাতে পারে না।রুপার সামনেই কান্না করে দিল।
তাসফির কান্না দেখে রুপাও কেঁদে উঠল।তাসফির পাশে বসে বলল,
প্লিজ স্যার।শান্ত হন।আল্লাহ্‌ এর কাছে দোয়া করুন।দেখবেন আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।
তাসফি কান্না করতে করতে বলল,
সব আমার জন্যে হয়েছে।আমি থাকলে হয়ত এমনটা হত না।
এই বলে আবার কান্না শুরু করে দিল ও।রুপা আবাত শান্তনা দিয়ে বলল,
এখানে আপনার দোষ নেই স্যার। যা হয়েছে...
কথাটা শেষ করতে পারে না ও।একজন মা ও এক জন বাবা দৌড়ে আসছেন দেখে ও শান্ত হয়ে গেল।তারা কান্না করছে। তাসফি সেদিকে তাকাতেই দাড়িয়ে গেল।হ্যাঁ এরাই আরাফাতের বাবা মা।তারা এসেই রুমে ঢুকে গেলেন।তাসফিও তাদের সাথে ভিতরে ঢুকল।ঢুকতেই খুব অবাক হল ও।আরাফাতের নিথর দেহের পাশে বসে কেউ কান্না করছিল।হ্যাঁ তিথি। সম্ভবত ওর হাত ধরেছিল এতক্ষন।আমরা আসাতেই ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে গেল।এবং চোখের পানি মুছে ফেলল।তাসফির বুকের বাঁপাশটা শুন্য হয়ে গেল।কেমন জানি ব্যথা অনুভব করল।হিসেবের অনেকটাই মিলে যাচ্ছে।তাহলে? তাহলে তিথি।নাহ।এ ভাবা যায় না।তাসফি রুম থেকে বের হয়ে গেল।চেয়ারটাতে বসল।স্থির হয়ে বসে রইল।চোখের জল আসছে না।কেন? তা ও জানে না।খুব কষ্ট হচ্ছে।এত কষ্ট কেন? কেন? মুখে হাত গুঁজে বসে রইল।ভেতর থেকে 
আরাফাতের মায়ের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। কি করবে এখন ও। কিছুই ভালো লাগছে না।অস্থির লাগছে ওর কাছে।হঠাৎ-ই রুপা এসে বসল ওর পাশে। বলল,
আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।
আমি কিছুই বললাম না।কিছু বলতে মন চাচ্ছে না আমার।আরাফাতের বাবা আসল।বলল,
কি ভাবে এসব হল? তুমি ছিলে না ওর পাশে? তুমি জান না ছোট বেলায় ওর কি হয়েছিল। তুমি জান না?
তুমি ওর পাশে আছ তাই এত দিন নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু সেই তুমি কি ভাবে এত বড় ভুল করলে বাবা? সত্যি এটা মানা যায় না।কিভাবে হয়েছে এসব বল তাসফি বল?
আমি কিছু বললাম।তারপর রুপা বলা শুরু করল।কিভাবে কি হয়েছে সব।শেষে আমি অঙ্কেরকে বললাম,
আমায় ক্ষমা করবেন প্লিজ।আমার অসাবধানতায় এমন হয়েছে।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
উনি কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
মানুষকে খুন করার পর যদি সরি বলা হয় তাহলে তা মানা যায় না।
কথাটা শুনার পর আমি স্তব্দ হয়ে গেলাম।আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ক 'ফোটা জল  গাল বেয়ে পড়ল।তিনি তা উপেক্ষা করে আবার বললেন,
:তোমাকে যেন এই হাসপাতালে আর না দেখি।
এই বলে তিনি ভিতরে চলে গেলেন।
উনার প্রতিটা কথা আমার বুকে গাঁথল।যেন কষ্টে ফেটে যাচ্ছে বুকটা। নাহহ! আমি থাকব না এখানে।চলে যাব।
আমি হাঁটছি।পিছন পিছন রূপাও আসছে। কাউন্টারের সামনে যেতেই  দেখলাম রুপার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন।হয়ত অপারেশনের টাকা দিচ্ছেন। উনি টাকা গুলো দিয়ে কিছুটা স্বস্থি পেয়েছেন মনে হয়।যা উনার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আমাদেরকে দেখতেই উনি এগিয়ে এলেন।
:কোথায় যাচ্ছ?
:বাসায় যাচ্ছি।আরাফাতের বাবা মা আসছে।
:তোমার বন্ধু কে এভাবে একা রেখে চলে যাবে তুমি।এতটা স্বার্থপর তুমি?
এখানেও? নাহ। আর থাকা যাবে না এখানে।যতই থাকব কষ্ট গুলো ততই ধেয়ে আসবে।সবাই ভুল বুঝবে।
আমি উনার কথা উত্তর দিলাম না।সোজা হাঁটা ধরলাম।
রুপা আসবে এমন সময় ওর বাবা বলে উঠল,
:তুই কই যাচ্ছিস?
:আমি বাড়ি যাব বাবা।
:কিছুক্ষণ দাঁড়া আমি যাব।
:না বাবা। আমি স্যারের সাথে যাব।
:দরকার নেই।আমি তোকে নিয়ে যাব।কি ভেবেছিলাম আর হল।এই বন্ধু? ঘৃনা হয় আমার।আস্ত একটা সেলপিশ।
তাসফির গমন পথের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বললেন তিনি।এতটুকু শুনেছে তাসফি। ততক্ষনে ও হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেল।রুপার সাথে ওর বাবার কথোপকথনের বাকি অংশ সে শুনতে পায় নি।
তাসফি রিক্সা না নিয়ে ফুটপাতের পথ ধরে হাঁটছে।আর কথা গুলো ভাবছে।কেউ যেন সুই দিয়ে ওর হৃদয় টা কে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।কত গুলো কষ্ট যেন ওর মাথা খেয়ে পেলছে। এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে ও।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ও।খানিক পর পর চোখটা ভিজে উঠছে ওর।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে  সেগুলো মুছে পেলছে। আবার পড়ছে।আবার মুছে পেলছে।কিন্তু ও জানেনা যে ও রাস্তার মাঝ পথে চলে আসছে।যে কোন মূহর্তেই কোন গাড়ি এসে ওকে চির বিদায় জানিয়ে দিতে পারে।হঠাৎ ই পেছন থেকে কিসের জানি আওয়াজ আসছে।কিন্তু তাসফি তা শুনছে না।সামনের দিকে তাকিয়ে হেঁটেই চলছে।আওয়াজ টা খুব কাছে চলে এসেছে।তবুও তাসফি তা শুনতে পারছে না।কেমন জানি এক রোখা হয়ে হাঁটছে।আওয়াজ টা একেবারে পাশ থেকেই আসছে।এবার একেবারে তাসফির সামনে থামল।তাসফি সামনে তাকানোর আগেই শুনতে পেল রুপার প্রশ্ন,
:স্যার আপনি এদিকে কই যাচ্ছেন?
তাসফি অবচেতন ভঙ্গিতে বলল,
:হুম।
:স্যার আপনি এদিকে কি যাচ্ছেন?
:কি?
:রিক্সায় উঠুন ?
:কেন?
:কেন আবার? বাড়ি যাবেন তাই?
:নাহহ। আমি যাব না।তুমি যাও।
:আপনাকে উঠতে বলছি স্যার।উঠুন!
:না আমি উঠব না।তুমি যাও।
:নাহ।আপনাকে উঠতেই হবে।উঠুন! যে ভাবে হাঁটছেন তাতে তো একসিডেন্ট হওয়ার উপক্রম।
:হলে তো ভালোই হত।একটা স্বার্থপর এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিত।পৃথিবীটা একটা স্বার্থপর মানুষ থেকে  মুক্ত হত।
:ছিঃ স্যার কি বলছেন এগুলো।আপনি স্বার্থপর নন স্যার।অন্তত আমি চিনি আপনাকে। আপনার মত ভালো মানুষ আমি খুব কম দেখেছি।প্লিজ স্যার বাবার কথায় কিছু মনে করবেন না। 
:নাহ! কিছু মনে করব কেন? উনি তো জুট বলেন নি।যা সত্যি তাই তো বলেছেন।তুমি বরং চলে যাও।আমি আসছি।
:নাহ।স্যার। আপনাকে এখনি আমার সাথে যেতে 
 হবে।আপনার যা অবস্থা কোন সময় আবার কি ঘটিয়ে ফেলেন... না না না।অন্তত আমি থাকতে তা হতে দিব না।এতে পরে আমারি ক্ষতি।
:তোমার ক্ষতি মানে?
:আপনাকে মানে খুঁজতে হবে না।আপনি চলুন আমার সাথে।
আমি কথা না বাড়িয়ে উঠে গেলাম।জানি হাজার না বললেও সে শুনবে না।কারন টা আমার কাছে পরিষ্কার। আপনাদের কাছেও।
রিক্সা চলছে। তাসফি সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।মস্তিষ্কে জমা থাকা কথা গুলো বের হয়ে আমার হৃদয়ে আঘাত করছে। কি অদ্ভুত।কিছুক্ষণ আগে, যখন রুপার সাথে কথা বলছিলাম তখন কথা গুলো আঘাত করে নি।কারন তখন আমি ওর সাথে কথা বলা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম।তাই তারা সুযোগ পায় নি।যেই না সুযোগ পেয়েছে আঘাত করা শুরু করে দিয়েছে।আমার নিজের শরিরের অঙ্গ গুলাও স্বার্থপর পর।একটু সুযোগ পেলেই একে অপর কে আঘাত করতে শুরু করে।তাহলে বলেন, আমি কেন স্বার্থপর হব না।আমিও স্বার্থপর। আমিও স্বার্থপর। 
হঠাৎ-ই আমি অনুভব করলাম যে কেউ আমার হাত ধরছে।খুব শক্ত করে হাতের পাঁচ অঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে  নিজের আঙুল দিয়ে ফাঁকা স্থান পুরো করে খুব শক্ত করে ধরে আছে।আমি ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম  আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম। ও এত শক্ত করে ধরেছে যে আমি ছাড়িয়ে নিতে পারছি না।আমি বললাম,
:কি করছ কি রুপা?
:একদম চুপ।একটা কথা বললে একেবারে রিক্সা থেকে ফেলে দিব।চুপচাপ বসে থাকুন।স্টুপিড একটা।
:কি? আমি স্টুপিড?
:তা নয়ত কি? কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছেন? আর কি বললেন না? ওই যে, মেয়েটা আপনার দিকে তাকায়। সেটা আসলে ভুল কথা।আচ্ছা আপনি আর আরাফাত এক সাথে বসতেন না?
:হু।তো?
:এখানেই তো সমস্যা।আপনি ভাবছেন আপনার দিকে তাকায় মেয়েটা  কিন্তু না।সে তো আরাফাতের দিকে তাকায়।আর আপনি কি না কি ভাবছেন?
আমি বেপারটা হাসপাতালেই বুঝেছি।সব ক্লিয়ার আমার কাছে।তাই তেমন অবাক হলাম না।বরং কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু রুপার কথা এবং ওর মুখের দিকে তাকালে বুঝা যায় যে মেয়েটা খুব  খুশি হয়েছে।তাই আমি বললাম,
:তোমার খুব খুশি লাগছে তাই না?
:তা তো বটেই। খুশি লাগবে না।এত বড় একটা ভালো নিউজ।
আমার মেজাজটাই গরম হয়ে গেল।আমি রিক্সাওয়ালা ভাই কে বললাম,
:এই মামা থামান তো।আমি এখানেই নেমে যাব।
পাশ থেকে ও বলে উঠল,
:মামা আপনি যান।একে আমি দেখছি।
তারপর আমার তাকিয়ে বলল,
:ওই নেমে যাবা মানে? নামতে দিলে তো।সারা জিবন এভাবে ধরে রাখব।কোত্থাও যেতে দিব না।
:মানে কি?
ও কিছু বলল না।ওর মাথাটা আমার বাজুতে রাখল। এমন ভাবে রাখল যেন এতটুকুতেই সে অনেক সুখ পাচ্ছে।আমারো কেন জানি ভালো লেগে উঠল।কেননা আমি পূর্বে কোন মেয়ের সাথে রিক্সায় উঠি নাই বাহুতে মাথা রাখাতো দুরে থাক।কিছু বললাম না ওকে।আমার জন্যে যদি মেয়েটা একটু আনন্দ পায় তাহলে পাক।সমস্যা কি।আর কিছু বলার মুডেও আমি।
এলাকাতে ঢুকতেই কেমন জানি ভয় লাগল। কেউ যদি দেখে ফেলে?  যদি ওর বাবার কাছে বলে দেয়? তাহলে তো মানসন্মান যেটুকু আছে সেটাও যাবে।তাই খুব দ্রুত ওকে বললাম,
:এই সর।কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।তোমার বাবার কাছে বিচার দিবে।
ও আস্তে করে বলল,
:কিছু হবে না।তুমি চুপচাপ বসে থাক।
আমি অনিচ্ছা ভঙ্গিতে বললাম,
:এ হয় না রুপা।লোকে পরে...
:বেশি  কথা বলবা না।তা না হলে পরে আরও জটিল কিছু করব।
আমি আর কথা বললাম না।ওটার থেকে এটাই ভালো।সিড়ি বেয়ে রুপাদের দরজার সামনে আসতেই রুপা দাড়িয়ে গেল।আমি উপরের তলায় মানে যে খানে আমরা থাকি সে দিকে পাঁ বাড়ালাম।আমাদের রুমের দরজার সামনে আসতেই পিছনে দেখলাম রুপাও আসছে।
:কি বেপার তুমি আসছ কেন?
ও বাচ্ছাদের ভঙ্গিতে দাড়িয়ে রইল।এক হাতের নখ দিয়ে অন্য হাতের নখ খুঁটছে। খুব চিন্তায় থাকলে এমনটা করে মেয়েরা।কিন্তু ওর চিন্তা কিসের?
আমি আবার বললাম,
:কথা বলছ না যে?
ও কিছু বলল না।এগিয়ে এসে হুট করেই আমার গলা জড়িয়ে ধরল এবং খুব তাড়াতাড়ি আমাকে চুমু খেল। আমি চোখ বন্ধ করলাম এবং অবাক হয়ে তা অনুভুব করছি।আমি কেমন জানি শিউরে উঠলাম। ঠান্ডা, শীতল হওয়া বয়ে গেল হৃদয় মাঝে।
চোখ খুলেই দেখলাম ও নেই।কারো নিচের দিকে যাওয়ার আওয়াজ আসছে।আমি অনেকটাই ঘোরের মাঝে চলে গিরছিলাম।তবে মেয়েটা যা করছে তা মোটেও ঠিক করে নাই। রিক্সার টা কোন ভাবে মানা যেত।কিন্ত এটা...? একদম বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।এর শাস্তি ওকে পেতেই হবে।
আমি রুমে ঢুকতেই শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দিকে চোখ গেল।কয়েকটা কাচের টুকরো পড়ে আছে মেজেতে। আমি বসে পড়লাম সেখানে।বললাম,
খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না রে দোস্ত।আমি কি করব বল।আমি তো জানতাম না যে এমন কিছু ঘটবে।তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস প্লিজ।একটু ক্ষমা করে দিস।এই বলে তাসফি কান্না শুরু করে দিল।এবং ওই রক্তের উপরই শুয়ে পড়ল। রক্ত গুলো শার্টের উপর লেপ্টে গিয়েছে।কিছু কাছের টুকরো তাসফি শরিরে আঘাত করল।কিন্তু তাসফি ব্যাথা পেল না।ও সেখানেই শুয়ে রইল।কিছুক্ষণ পর কি জানি ভেবে উঠে আরাফাতের ডায়েরিটার দিকে হাঁটা ধরল।টেবিলে গিয়েই পড়া শুরু করে দিল।
শেষ পর্যন্ত পড়ে সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না।খুব জোরে কলম দিয়ে নিজের হাতে আঘাত করল।কিছুক্ষণ পরেই সেখান থেকে রক্ত পড়া শুরু হল।কিন্তু তাসফি ব্যাথা পেল না।ঝাপশা চোখ নিয়ে ডায়েরিটা বন্ধ করল।উঠে গিয়ে নিজের ডায়েরিটা নিল।লিখা শুরু করল।তিথির কথা।যে ওকে নয় আরাফাতকে ভালোবাসে।আরাফাতের কথা, ওর বাবার কথা এবং রুপার বাবার ভুল বুঝার কথা লিখল।আজ রুপার কথা লিখল।সেও ওর জিবনের চরিত্রে পদার্পণ করেছে।তাই ওর কথা লিখতেও ভুলল না তাসফি। 
লিখাটা শেষে কি যেন ভাবল তাসফি। হ্যাঁ তিথির কথা। যার জন্যে সে ভালোবাসার পাহাড় গড়েছিল। এক সাথে চান্দ্র বিলাশ করার স্বপ্ন দেখেছিল ও।গৌধুলি লগ্নে একজন অপরজনের হাত ধরে সূর্য দেখার স্বপ্ন দেখছিল।স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।পূর্ন হল না।জগৎ-এ সকলের স্বপ্ন পূরন হয় না।কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।সকলের স্বপ্ন পূরন হলে আর স্বপ্ন ভঙ্গনের যে কষ্টটা সেটা আর থাকবে না।সেই কষ্টটা কেউ অনুভব করতে পারবে না।আর আর কোন মানুষ কষ্ট ছাড়া বাঁছতে পারে না।কষ্ট ছাড়া সুখের মুল্য নেই।তাই জগৎ-এ কাউকে কাউকে এমন কষ্ট পেতেই হয়।এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। বিধাতার বিধি।
হঠাৎ-ই  ওর ফোনটা বেজে উঠল। ধরার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে  তাসফির বাবার ঝাঁজালো কন্ঠ শুনতে পেল ও।কথা শেষে ফোনটা আপনা আপনি হাত থেকে পড়ে গেল।সাথে কিছু অস্রুজল ও।যখন খুব কাছের কেউ ভুল বুঝে তখন এই পৃথিবীটাই অসার লাগে।খুব একলা মনে হয়। তাসফির বাবার কথা শুনে ও হু হু করে কেঁদে দিল।নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না।মেজেতেই শুয়ে রইল।আর কান্না শুরু করে দিল।ওর বাবার কথা গুলোর সারমর্ম এই যে,
তিনি আরাফাতের কিছু হয়ে গেলে তাসফি কে দায়ি করবেন। কারন ছোট বেলায় ক্লাস ফাইবে থাকা কালিন সময় মাথায় যে আঘাত টা পায় আরাফাত তা তাসফি জন্যেই হয়।তাই যদি কিছু হয় তাহলে তার দায়ভার তাসফি কেই নিতে হবে।এবং তিনি তাসফি কে অপয়া বলে সম্বোধনও করেছেন।
তাসফি একা।খুব  একা।তাই কথা গুলো সুযোগ পেয়েই খোঁচাচ্ছে। খুব আঘাত করছে। ও উঠে দাড়াল।ডায়েরিটাতে যতটা তিথির নাম আছে সব গুলো কেটে দিল।আর যাই হোক বন্ধুর জন্যে এটুকু তো করতেই পারি নাকি। সামান্য কিছু করে যদি নিজের দোষটা ঢাকতে পারি তাহলে নিজের আত্নাটাও একটু প্রশান্তি পাবে।
রাত দশটা। তাসফি নিচে নেমে রহিম চাচার দোকানে গেল ও।তিনি ওর অবস্থা দেখেই ভড়কে গেলেন।জামায় লেগে আছে রক্ত।হাতে একটা ছোট ফুট বিদ্যমান। রক্ত ঝরে পড়ার চিহ্নও বিদ্যমান।জামায় রক্ত। সাথে কয়েক টুকরো কাচ গায়ের সাথে লেগে আছে।ও সোজা হয়ে দাড়িয়ে  আছে।রহিম চাচা কিছুটা ভয় পেয়ে বললেন,
:বাবা তোমার এই অবস্থা কেন?
:চাচা সিগারেট দেন।
:কি বলচ তুমি। সিগারেট খাবে?
:জি খাব।আপনি দেন?
:না বাবা এ হয় না।তোমার মত ছেলে যদি সিগারেট খায়...
:চাচা ভালো মানুষের খুব কষ্ট থাকে তখন যে তারা সিগারেট খায় সেটা কি আপনি জানেন না?
:হুম জানি।কিন্তু তুমি...
:আপনি দিবেন?
ওর রক্ত বর্নের চোখ দুটো দেখে তিনি অনেক টাই ভয় পেয়ে ওকে এক প্যাক সিগারেট দিলেন।আর একটা লাইটার ও।সোজা ছাদে উঠে গেল ও।বৃ্ষ্টি আসবে মনে হয়।আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে।তাই ডায়েরিটা তাড়াতাড়ি পুড়ে পেলতে হবে।
'
রুপা আজ খুব খুশি।ঘরে ঢুকেই প্রথমে ওর মাকে জড়িয়ে ধরল।ও মা বলল,কি রে কি হয়েছে।
ও কিছুই বলে না।শুধু হাসে।
রাত দশটা বেজে ১১ মিনিট।রুপা টিভি দেখছে।ওর মা ঘুমিয়ে গিয়েছে।কিন্তু ওর বাবা এখনও হাসপাতাল  থেকে আসেন নি। সাড়ে এগারোটায় আরাফাত ভাইয়ের অপারেশনে। তাই  অপারেশনটা শেষ করেই চলে আসবেন তিনি।এমনটাই জানিয়েছেন।
রুপা ভাবছে একবার তাসফির রুমে যাবে নাকি।তাসফির  জন্যে খুব খারাপ লাগছে ওর।ছেলেটা যে আজ কত গুলো কষ্ট পেল? এগুলো ভাবতেই সে দরজার দিকে পাঁ বাড়াল এর মধ্যেই কেউ একজন হস্তদন্ত হয়ে ওদের দরজায় আঘাত করছে।খুব উত্তেজিত হলে এমন করে মানুষ। ও তাড়াতাড়ি দরজা খুলল।রহিম চাচা চিন্তিত মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। বললেন,
তোমার বাবা কই মা।
রুপা সহজ ভাবে বলল,
উনিত নেই? হাসপাতালে আছেন? কেন চাচা কি হয়েছে?
উনি খুব দ্রুত বললেন,
তাসফি আছে না? চিন তো। তোমার মাস্টার?
হ্যাঁ।কি হয়েছে উনার?
রুপা উত্তেজিত হয়ে বলল কথাটা।
ছেলেটা রক্ত ঝরা গা নিয়ে আমার কাছ থেকে সিগারেট নিল।চোখ দুটো খুব লাল ছিল।কি হয়েছে সেটা দেখার জন্যেই তোমাদের বাসায় আসা।
রুপার বুকটা ধক করে উঠল।ওর দুনিয়া যেন স্থির হয়ে গেল।কিছু বলতে পারছে না।বাক শক্তি হারিয়ে ফেলছে রুপা।
রহিম চাচা যেতেই রুপা তাসফির রুমের দিকে দৌড় দিল। দরজা খোলা।জিনিস পত্র সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। 
,
ডাক্তার শাকের সাফল্যের হাসি দিলেন, সাথে নিরাও। বলল,
স্যার, আমি বলেছি না আপনি পারবেন।দেখেছেন।
শাকের শুধু মৃদু হাসল।এতেই নিরা খুব খুশি।এই লোকের মৃদু হাসিটা দেখলেই খুব লাগে নিরার।সেই প্রথম থেকেই।আরাফাত মাথায় যে আঘাতটা পেয়েছে সেটা আগ থেকেই কেমন জানি ক্ষত হয়ে আছে।তাই মাথা ব্যাথাটা করে ওর।এর জন্যে কিছু ঔষধ লিখে দিল শাকের।এগুলো খেলেই সেরে উঠবে বলে মনে করে শাকের।
বাইরে আরাফাতের বাবা মা,রুপার বাবা বসে আছেন। খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে তাদের।আরাফাতের মা কান্না করছে।কেউ উনার কান্না থামাতে পারছেন না।তিথিকে অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিছেন রুপার বাবা।মেয়েটা কিছুতেই যেতে চাচ্ছিল না।তবুও পাঠালেন। খামটা শরিরটা খারাপ করার দরকার কি।তবে ফোন নাম্বার টা রেখে দিয়েছেন তিনি।
ডাক্তার বের হতেই উনারা দৌড়ে উনার কাছে গেলেন।ডাক্তার উনাদের আস্বস্থ করলেন।ওর বাবা মা গ্লাস দিয়ে দেখছেন। আর রুপার বাবা ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছেন।প্রথমেই তিথি কে।তারপর রুপাকে।
'
কোথা থেকে যেন গুন গুন কান্নার আওয়াজ আসছে।রুমে ঢু মারতেই দেখল রুমটা খালি,নিঃসঙ্গ  একাকি।কেমন জানি থমথমে অবস্থা।রুমে না পেয়ে রুপা ছাদে গেল।আগুন জ্বলছে। ডায়েরিটা জ্বলে পুড়ে শেষ হবার পথে।পাশেই শুয়ে আছে তাসফি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আগুনের দিকে। রুপা দৌড়ে আসে।
ভালোভাবে পরক্ষ করল তাসফি কে।
তাসফি কারো উপস্থিত টের পেতেই  পিছন ফিরে তাকাল।তাকিয়ে ভয়ার্ত ভাবে হাসি দিল।বলল,
হা হা হা হা।পুড়িয়ে ফেলেছি। সব সৃতি গুলো পুড়িয়ে ফেলেছি। জান তিথিকে নিয়ে সব গুলো স্বপ্ন এখানে লিপি বদ্ধ ছিল। আজ তা পুড়িয়ে ফেললাম।ভালো হয়েছে না? আরাফাতের কথাও ছিল।পুড়িয়ে ফেললাম।তোমার কথা আজ লিখলাম।সেটাও পূড়িয়ে ফেললাম।ভালো হয়েছে না।
রুপা নির্বাব হয়ে তাকিয়ে আছে।কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে।হ্যাঁ মেয়েটা কিছুক্ষণ পর মেয়েটা কান্না করবে।
তাসফি উঠে বাচ্ছা দের মত পাঁ মেলে বসল।
বলল,
সবাই আমাকে ভুল বুঝে।সব নাকি আমার কারনে হয়েছে। আচ্ছা আমার কি কোন দোষ আছে এখানে।আমি কি জানতাম নাকি যে এমন কিছু হবে।নাহ।সব পুড়িয়ে ফেলব।ভেতরটাও ফুড়িয়ে ফেলব।এই বলে সিগারেটের প্যাকটা বের করল। রুপা সেটা দেখা মাত্রই কেড়ে নিল।তাসফি রাগান্বিত হয়ে বলল,
কি বেপার তুমি এটা কেড়ে নিলে কেন?
রুপা বলল,
তুমি এমন করছ কেন তাসফি? দেখ সবাই তোমাকে খারাপ বললেও আমি বলি নি। প্লিজ নিজের ক্ষতি করিও না।
তাসফি বলল,
আমার ক্ষতি আমি করব।তোমার কি? তুমি যাওয়া এখান থেকে। যাও? আর আমাকে তুমি করে বলছ কেন? জান না, আমি তোমার শিক্ষক। বেয়াদব! যাও এখান থেকে?যেখানে মা বাবা দয়ালু নয় সেখানে উনি আসছে দয়া দেখাতে। আমি আমার ক্ষতি করব। সেটা একান্তই আমার বেপার।তুমি যাও।
:না তা হয় না।সেটা তোমার বেপার হয় না।সেখানে আমারও আসার অনুমিত আছে।
:কিসের অনুমিত হুম।আর তুমি কে?  তোমার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক?  যাও এখান থেকে যাও। 
:আমি তোমাকে ভালোবাসি তাসফি। এই বলে ওর হাত ধরছিক রুপা।অম্নি সেটা সরিয়ে ফেলল তাসফি। রুপা অবাক হয়ে অনুভব করল,ছেলেটার গা জ্বরে পূড়ে যাচ্ছে।ও তাড়াতাড়ি তাসফি উঠাতে যাবে ঠিক তখনই ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তাসফি। রুপা কিছুটা চোট পায় হাতে।তারপরেও উঠে ওকে ধরতে যায়।তখন তাসফি দাড়িয়ে গিয়ে বলে,
আর সামনে এগুলে একেবারে ছাদ থেকে নিচে ঝাপ দিব।ভালোর ভালো।সিগারেটের প্যাকটা দিয়ে বিদায় হ ।
রুপা উপায় না পেয়ে দিয়ে দিল।সিঁড়ির রুমে দাড়িয়ে তাসফি কান্ড দেখছে। কি করছে তা দেখছে।তাসফি আবার শুয়ে গেল।সিগারেট ধরাল দুইটা এক সাথে।ডায়েরিটা জ্বলে পুড়ে শেষ। ধোয়া উড়ছে সেখান থেকে। কিছুক্ষণ পর ও গুন গুন আওয়াজ করে, অস্ফুট স্বরে গান গায়।তবে এমন গান আছে কি বা তা কেউই জানে না।গানটা হল,
আমি স্বার্থপর। আমি স্বার্থপর।
সবাই বলে আমি..
এমন গান গায় ও।রুপার খারাপ লাগে খুব। তবুও ও কিছুই করতে পারছে না।তার হাত পা বাঁধা।তাসফি সিগারেটের আগুন নিজের হাতে।তারপর হেসে উঠে।আবার লাগায়, আবার হাসে।সহ্য করতে পারে না রুপা।ডুকরে কেঁদে উঠে ও।
বৃ্ষ্টি আসে।তাসফি সেই বৃ্ষ্টিতে ভিজে।শুয়ে থাকে মেজেতে। তাসফি আর গান গায় না।আর নড়ে না।সিগারেট টা নিভে গিয়েছে।
রুপা আড়াল থেকে বের হয়।দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দেয় তাসফি কে।নড়ে না তাসফি। কথা বলে। স্বপ্ন দেখে না।হারিয়ে যাওয়ার পথে তাসফি। রুপা কেঁদে উঠে।জড়িয়ে ধরে তাসফির অর্ধ মৃত দেহ।
'
ডাক্তার জানায় তাসফির মাথার ঠিক পিছন টা একটা টিউমার আছে। অতিরিক্ত টেনশনের ফলে ওই  টিউমারটার উপর চাপ পড়ে।এবং এক পর্যায়ে কঠিন রূপ ধারন করে টিউমার টা।অনেকটা ফুলে যায়।এতে ব্রেইনে এপেক্ট করে। অতি তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে হবে।আদারওয়াইস আমরা তাকে বাঁচাতে পারব না।
'
তাসফির বাবা আরাফাতের বাবাকে ফোন দেয়।তিনি খুব উচ্ছাসিত হয়ে ফোব তুলেন।
:কি রে বল? কি খবর। (তারাও এক কালে খুব ভালো বন্ধু ছিল)
:এখন আমার ছেলের কিছু হয়ে গেলে তার দায় ভার কে নিবে। তুই? নাকি তোর ছেলে।
:কি বলছিস? কি হয়েছে?
:আমার ছেলেটা ধুকে ধুকে মরছে।অথচ, আমি বেঁচে থেকেও ওর বিপদে ওকে সাপোর্ট দিলাম না।দিলাম শুধু বঞ্চনা।
এই বলে তিনি কান্না শুরু করেন।
ও পাশ থেকে আরাফাতের বাবা হ্যালো হ্যালো করছেন। তবে তার উত্তর পাচ্ছেন না।
'
আরাফাত চোখ মেলেই দেখল তার পাশে তিথি বসা।খানিকটা অবাক হল ও।কি বেপার এই মেয়ে এখানে কেন? তিথির দিকে না তাকিয়ে ওর মাকে বলল,
মা তাসফি  কই?ওর মা কিছু বলে না।কয়েকবার বলার পর যখন কোন উত্তর পেল না তখন ওর বাবাকে বলল।তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলেন।কিছুক্ষণ বাদে বললেন,
মস্ত বড় একটা ভুল করে  ফেলেছি রে বাবা।জানি না এই ভুলের মাসুল কখনো দিতে পারব কি না।
কি হয়েছে বাবা।বল প্লিজ কি হয়েছে। আরাফাত বলল।
কিন্তু ওর বাবা উত্তর দিলেন না।বাধ্য হয়ে তিথি কে জিজ্ঞেস করল।
আপনি জানেন আমার ভাইটার কি হয়েছে। কোথায় এখন আপনি জানেন।
তিথি বলল,
তুমি সুস্থ হও তারপর সব জানতে পারবে।
আরাফাত বলল,
আমাকে এখনি বলতে হবে।তা না হলে কিন্তু আমি উঠে যাব বলে দিলাম।
বাধ্য হয়ে তিথি বেপারটা বুঝিয়ে বলল আরাফাত কে।আরাফাত নির্বাক হয়ে ওর বাবার দিকে চেয়ে থাকে। আর ওর বাবা মাটির দিকে তাকিয়ে চোখের জল পেলে।
কয়েক মাস পর।
,
আরাফাত সেই চির চেনা রুমটাতে আসে।রুমটা সে আগোছালোই রয়ে গেল।মেজেতে রক্ত গুলো শুকিয়ে গেল। কাচের টুকরো গুলো এখনো আছে।ওই তো তাসফি এখানেই শুত।আত পাশে আমি।ওই আমার ডায়েরিটা। খুলতেই একটা লিখা চোখে পড়ল।তোর তিথি তোরই থাকবে বন্ধু।আমিতো শুধু অভিনয় করেছি তিথির কথায়
আমি রুপাকে ভালোবাসি।তিথিকে নয়।ভালো থাকিস। আর পারলে ক্ষমা করে দিস।
-তাসফি
চোখের জল গুলো যেন বাধা মানছে না।পড়ছে তো পড়ছেই।ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে নিল ও।
'
তাসফি চোখ মা বাবা রক্ত বর্নের চোখ নিয়ে দাড়িয়ে অাছেন।দুজনের চোখেই অপরাধা বোধ দেখা যাচ্ছে।দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে রুপা।মুখে তৃপ্তির হাসি।মনে হচ্ছে তার এত দিনের চেষ্টায় সাফল্য এসেছে।আহারে। এই তো সেদিন ওকে কত কি বললাম। খারাপ লাগছে ওর কাছে।
কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ফোন দেয় তিথির ফোনে।সব বুঝিয়ে বলে তিথি কে।আরাফাত যদি বলে, এ সব কি সত্য? তাহলে তুমি বলবে সত্য। শুধু এই টুকুই সাহায্য চায় ওর কাছে এবং ওদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানায়।
,
তাসফি রুম থেকে বের হয়ে রুপাদের বাসায় যায়। রুপার বাবা দরজা খুলে।কথা বলার পর জানতে পারে রুপা বাসায় নেই।আর তাসফির কথা তারা জানে না।
আরাফাত বের হয় যায়।তিথিকে ফোন দেয়।আসতে বলে মনপুরি পার্কে।সেও যায় সেদিকে।
'
মনপুরি পার্ক।আরাফাত ভেতর ঢুকে। কেমন জানি ভালো লাগা কাজ করে এই পার্কে আসলে।হাজারো দুঃখ থাকলেও মন ভালো হয়ে যায়। তাসফি থাকলে ওর সাথে এখানে আসত প্রায়ই।
তিথি পেছন থেকে ডাক দিল।আরাফাত তাকিয়ে দেখল সেই ভার্সিটির প্রথম দেখা মেয়েটি সামনে দাড়িয়ে আছে। আজ আবাত ওর প্রেমে পড়ল আরাফাত। মুখটা অন্য দিকে নিয়ে বলল,
:তাসফি যা বলেছে তা কি সত্যি?
:হুম সত্যি?
আরাফাত কিছু বলে না আর।সামনের দিকে হাটা ধরে। পাশেই তিথি।বলল,
:খুব ভালোবাস আমায় তাই না?
ও খুব তাড়াতাড়ি উত্তর দিল।
:হুম।
:তাহলে বলনি কেন?
:তাস...
একটা ছেলে দেখতে একেবারে তাসফির মত। সাথের মেয়েটা রুপার মত।আরে হ্যাঁ।এরা তো। এরা তো তারাই যাচের আমি খুজছিলাম। আরাফাত সেদিকে হাটা দিল।সাথে তিথিও।আরাফাত ভাবে,আজ শালাকে দেখাব মজা। কি পেয়েছেটা কি? নিজেইই হিরো হয়ে যাবে।আজ দেখাব মজা। আহারে। কতদিন দেখি না ওর মুখটা কে।ভাবছি আগে গিয়ে মারব।নাহ।মারব পরে। আগে ওর বুকের সাথে আমার বুক মেলাতে হবে।তা না হলে যে শান্তি পাব না।
'
:আচ্ছা এই মিথ্যেটা বলে লাভ হয়েছেটা কি?
রুপা বলল তাসফি কে।
তাসফি বলল,
:ওর ভালো এবং আমার ভালোর জন্যেই বললাম।
:যদি কখনও জানতে পারে?
:হা হা হা।পারবে না।
:কিভাবে?
:তিথি কখনওই সে কথা ওকে বলবে না।এতে পরে ওর প্রব্লেম হবে।
:আচ্ছা তুমি কি এখনও তিথি কে ভালোবাস।
:আগে বাসতাম।এখন আর সেটা চিন্তাও করি না।কারন আমার পাশে যে মেয়েটা বসে আছে সে তার ভালোবাসার রাবার দিয়ে মুছে দিয়েছে।এখন আমার জগৎ টা শুধু তোমাকে নিয়েই।প্লিজ আমাকে কখনও ছেড়ে যেও না।
:চুপ একদম চুপ।ছেড়ে যাওয়ার কথা মুখেও আনবে না।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে বিয়ে করে নিজের করে  নিতে হবে।তা না হলে কে আবার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে নিয়ে যায়।না না।দেরি করা যাবে না।
তাসফি মৃদু হেসে বলল,
:হা হা হা।বিশ্বাস করতে পারছ না।
:ওমা আমি তা বলেছি নাকি।আসলে খুব একা একা লাগে তো তাই বললাম আরকি।আমার এত বড় রুম।সেটাও খালি খালি লাগে।
এই কথাটা বলে সে লজ্জায় লাল হয়ে গেল।গৌধুলির শেষ সময়ের রক্তিম আভা রুপার সেই লজ্জা মাখা হাসি মিস্রিত  মুখে পড়ছে।রুপাকে খুব সুন্দর লাগছে। পরিবেশটা যেন রুপাময় হয়ে উঠছে।হুম রুপার ন্যায়।
এর পরেই আরাফাত আসবে।জড়িয়ে ধরবে ঘভির মায়ায় তাসফি কে।হয়ত কয়েক ফোট জল বেয়ে পড়বে। তবুও পড়ুক।একটু জল পড়া মানে একটু কষ্ট কমে যাওয়া।ভালো থাকুক ওরা। সাথে আপনারাও
#তাসফি_আহমেদ।
বি.দ্র.: কিছু বানান ভুল থাকতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url