গল্পঃ রূপার শব্দ চুরি

বাংলা গল্প Love Stories Bangla Choto Golpo  Bangla Valobashar Golpo Bangla Golpo (1)2


গল্পঃ রূপার শব্দ চুরি

তাসফি আহমেদ

এটা আসলে হুমাইয়ূন স্যারের 'রূপা' উপন্যাসের কিছু ঘটনার আলোকে লেখা। এটা প্রথম দিকে লেখা আমার। রূপা বইটা পড়ে কয়েকদিন পরে এটা লিখি। ওই গল্পে এদের মিল হয় না। খারাপ লাগে। তাই আমি নিজেই লিখে তাদের মিল দিয়ে দেই। ক্ষমা করবেন।


 
হ্যাঁ এই বাড়িটাই! আরেকবার দেখে নি! পরে যদি ভুল হয় তবে নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।এর চেয়ে ভালো নিশ্চিত হয়ে ঢোকা যাক।
নাহহ!! এটাই! কোন সন্দেহ নেই।দারওয়ান কে ডাক দিলাম।কি ব্যাপার দারওয়ান তো থাকার কথা।দারওয়ান কি নেই নাকি.......?
আবার ডাক দিলাম।কেউ একজনের আসার আওয়াজ পাচ্ছি।মাঝ বয়সী এক লোক বের হল।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের। কিন্তু তিনি দারওয়ানি করছেন কেন,,,,,,?কপালের দোষ মনে হয়।
একবার জিজ্ঞেস করে দেখব নাকি....?
নাহহ!! থাক!! মুখের যে অবস্থা করে রেখেছে তাতে মনে হয় খুব বিরক্তিত হচ্ছে। খামোখা তাকে বিভ্রান্তিতে পেলে আর কি লাভ। পরে এতে হিতে বিপরীত হবে।তার চেয়ে বরং না বলাই ভালো।
:কাকে চাই......?
:জি এটা কি আফজাল সাহেবের বাসা.....?
:হুম কেন.....?
:উনার সাথে একটু দেখা করা যাবে..
:স্যার এখন কারো সাথে দেখা করব না।তিনি এই সময় একা থাকতে পছন্দ করেন...
:তাহলে কি আবিথার সাথে দেখা করা যাবে......?
:এই কে আপনি.....?আর আফারে চিনেন কি ভাবে....?
:আসলে তোমার আফার সাথে আমার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে.....
:ওও! আপনিই তাহলে তাসফি আহমেদ.....
:জি....এখন কি আমাকে যেতে দেওয়া যাবে.....?
:আচ্ছা! দাড়ান! আমি স্যারের সাথে কথা বলে নি।
এই বলে সে চলে গেল।আর আমি দাড়িয়ে রইলাম। যে গাড়িতে করে আমি এসেছি, সে গাড়ির ড্রাইভারকে বসিয়ে রেখেছি....ভাড়া করা গাড়ি..সমস্যা নেই।যতই দেরি হবে ততই ড্রাইভারের লাভ হবে...ড্রাইভার কে দেখে মনে হয় না যে একজন গাড়ির চালক।উত্তম চেহারার অধিকারি সে।আচরণও যথেষ্ট ভালো। তাকে দেখে কেউ বলবে না যে সে ড্রাইভার। বলবে সে এই গাড়ির মালিক।তবে বেটা প্রচন্ড বকে...! আসতে আসতে আমার কানের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে।আমি চিন্তায় আছি বাকি পথ এই লোক এর সাথে যাব কিভাবে।
:আসেন স্যার,,,,আসেন.....!স্যার আপনাকে যাইতে বলছে!
,
সোফায় বসে আছি।সামনে একটা টি-টেবিল। নানা রকমের খাবার দেওয়া আছে এখানে।কি খাব......? আচ্ছা আমার কি কিছু খাওয়া উচিৎ হবে....?
নাহহ!!!খেতে ইচ্ছে করছে না....ভালো লাগছে না।
ঘরটার মেজেতে টাইলস করা। খুব বড় বড় টাইলস। আবার মাঝখানে একটা আছে সেটা সব গুলো হতে ভিন্ন।খোদাই করা।লাল রঙের কালার।খুব সুন্দর একটা ফুল তাতে।আমি ভাবছি আমার ঘরটাতেও এমন বড় বড় টাইলস করব।কিন্তু এদের এই টাইলসের মত না।এদের টাইলস গুলো আমার পছন্দ হয় নি।ঘরটার বাইরে থেকে যত সুন্দর দেখা যাচ্ছে, ভিতরটা তেমন সুন্দর না।
কারো পায়ের আওয়াজ আসছে উপর থেকে।আওয়াজ টা স্বাভাবিক না।খুব রেগে গেলে যেমন হুট হাট করে হাঁটে তেমন।উপরের দিকে তাকালাম। বয়স ষাট এর মত হবে। হয়ত তার চেয়ে বেশি।তবে কম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।এটা আমার অনুমান শক্তি বলছে।লোকটার চুল গুলো বাস্তবে সাদা বর্নের। তবে মেহেদি লাগিয়ে মনে হয় লাল করেছে।দাড়িগুলোরও একই অবস্থা।দেখে মনে হচ্ছে তিনি দাড়ির উপর আর চুলের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। কালো চুল আর কালো দাড়ি সাদা হল কেন তার প্রতিশোধ।কিন্তু ব্রু এর চুল গুলো সাদা করল না কেন...?এরা কি কোন দোষ করে নি?? এখেত্রে তিনি কিন্তু পক্ষপাতীত্ব করছেন। লোকটাও মনে হয় তেমন।
লোকটাকে দেখে আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।এই লোক কি আবিথার বাবা...! ইনিই কি আফজাল সাহেব??? দেখে মনে হচ্ছে কোন ভিখারির মত।চেহারাতে কোন প্রকার মায়া নেই।ঠিক কেমন জানি।ইনার থাকার কথা দারওয়ান এর কাজে।নাহহ এই লোককে আমার ঠিক মনে হচ্ছে না।খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে তাকে। সাথে রাগান্বিতও।
বসতে বসতে একটা সিগারেট ধরালেন। এটা আমার একেবারেই অহ্য।
:কি বেপার তুমি এখানে কেন....?
:কেমন আছেন...?
:যেমন থাকার কথা তেমনটাই আছি....ফিরিত বাদ দাও!! কেন এসেছ সেটা বল...?
:আবিথার সাথে কিছু কথা ছিল।
:তোমার মত সুদর্শন চরিত্রহিন ছেলে সাথে আমার মেয়ে কি কথা বলবে শুনি।
খুব জোরে সিগারেট টা টানছেন।
আমি কিছু বললাম না।সিগারেটটা দুই আঙুল এর মাঝে রেখে বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
:তোমার ছবি দেখে আর তোমার অবস্থান দেখে তোমার সাথে তোমার সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি।কিন্ত তুমি যে আসলে পথের ছেলে,ভিখারি সেটা দেরিতে হলেও আমি বুঝতে পেরেছি। তুমি ওত নিচ হতে পারলে....?
:আপনি যা ভাবছেন ঠিক তা না।আপনি যা শুনছেন সব মিথ্যা।এমন কিছুই হয় নি।আমি তো সেই মহিলাকে চিনিই না,,,,,,
:চুপ বেয়াদব ছেলে।সব মিথ্যা?? ওই ছোট বাচ্চা টা।যে তোমাকে বাবা বলে,সেই বাচ্ছাটাও কি মিথ্যা?? আর মহিলাটা,,,,?শুন নিজের ইজ্জত সন্মানের উপর আঘাত হেনে কোন মেয়ে চাইবে না নিজের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে।আর সেই তুমি বলছ,মেয়েটি মিথ্যা বলছে,,,,,!
এই বলে তিনি আরেকটা সিগারেট ধরালেন। এই পর্যন্ত দুইটা ধরালেন। সব গুলো কয়েক টান দিয়ে পেলে দেন।খুব রেগে গেলে কিংবা খুব টেনশনে পড়ে গেলে কেউ এমন করে। একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছে।আমি আবারো বললাম,
:আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে বাবা। আমি তেমন ছেলে না,,,,,
:এই তুমি আমাকে বাবা বললে কোন অধিকারে হুঁ,,,,,?
:আমি আপনার মেয়ের জামাই।সে হিসেবে আপনি তো আমার বাবাই হবেন,,,
:শুন,,,,! তোমার সাথে আমার মেয়ের দেখা হয় নি,,,?বিয়েটা শুধু হয়েছে কবুল বলার মাঝে।তুমি ফোনের ওপাশ থেকে কবুল বলেছ।আর আমার মেয়ে এই পাশ থেকে কবুল বলেছে।এখানে কোন কাগজ পত্রও হয় নি,,,,,,আর তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম যে আমরা আর এই সম্পর্ক রাখতে চাই না।
এমনকি তোমার মায়ের কাছে বলেছিলাম যে আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ। তাই আপনার ছেলে যেন আমার মেয়েকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব না করে,,,,
কি,,,? তোমার মা তোমাকে কিছু বলে নাই,,,?
:হুম বলেছে,,,
:তাহলে বাবা বলছ কোন যুক্তিতে,,,,?
:আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে,,,,,,,আর বলব না,,,,?কিন্তু,,,,
:কোন কিন্তু নেই,,,,,বের হয়ে যাও আমার ঘর থেকে,,,,যাও??
ভদ্র লোক খুব উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন। রাগ টা প্রচন্ড। তাই এখন তাকে কিছু বুঝায়েও বুঝবে না।বরং উল্টা বুঝবে । এর থেকে ভালো আমি আবিথা কে বুঝাই বলি,,,ও হয়ত কিছু বুঝতে পারবে।
:আচ্ছা যাচ্ছি। কিন্তু আমাকে আবিথার সাথে কিছু কথা বলতে হবে,,,,,
:কেন কি কথা বলবে হুঁ,,,,,? তোমার হাজারো কথাকে এখন আমার মেয়ে ঘৃণা করবে। আর তোমকে ও ঘৃণা করে।তোমার সাথে কথা বলতে চায় না ও।তাহলে তুমি কেন কথা বলবে,,,,
:আমি চাই না কেউ আমাকে ভুল বুঝে জীবন কাটাক। ও সারা জীবন আমার সম্পর্কে একটা বাঝে ধারনা নিয়ে থাকবে এ আমি চাই না।অন্তত ও বুঝুক বিষয়টা।।
:কোন বুঝা বুঝির দরকার নেই।যাও এখান থেকে যাও,,,,?
ছয়টা সিগারেট আপাতত শেষ। ওকে আর দেখা হবে না মনে হয়।কি আর করব।
:আচ্ছা ওকে এই চকলেট আর আইস্ক্রিম গুলো দিবেন।এগুলো ওর খুব পছন্দের।
:তোমার আইস্ক্রিম আর চকলেট তুমি খাও।এগুলো নিয়ে এখান থেকে বিদায় হও।তোমার চেহারা আমি আর দেখতে চাচ্ছি না।খামোখা আমার রাগ বাড়াবে না।পরে কিন্তু থানাপুলিশ করতে আমি বাধ্য হব। প্লীজ জাস্ট গেট লস প্রম মাই হোম,,,,,
.
গেট থেকে বের হয়ে চোখের জল মুছলাম।ড্রাইভার আমার থেকে ব্যাগ টা নিয়ে বলল,
:স্যার কি হয়েছে,,,,,?
:পৃথিবীর মানুষ গুলো বড়ই আজিব রে ভাই।বড়ই আজিব। ও শেষ মেশ আমাকে ঘৃণা করল,,,,,?
:হুম,,,,স্যার মানুষ আজিবই।এদের,,,,,,,,
:গাড়িতে উঠ।তোমার এসব ফালতু বয়ান শুনার ইচ্ছে আমার নেই।
:কই জাবেন স্যার,,,,
:নোয়াখালী!!!!!!
.
যতক্ষণ তাসফির গাড়িটাকে দেখা যাচ্ছে, ততক্ষন গাড়িটির দিকে এক চোখে তাকিয়ে আছে আবিথা।চোখের জল গুলো মুছলো ও।মনটা খুব খারাপ ওর।খুব খারাপ।
নিজের রুমে চলে আসল।ঘরের লাইট টা নিভিয়ে দিল ও।ভাবতে লাগল,
ও কি সত্যিই আমার সাথে প্রতারণা করল,,,,? ও কি সত্যিই আমাকে ধোকা দিল,,,? ও কি সত্যি অন্যকাউকে বিয়ে করেছে,,,,,,?তাহলে আমাকে কেন স্বপ্ন দেখাল,,,,,?
আচ্ছা ও যাকে বিয়ে করেছে সেকি আমার থেকেও বেশি সুন্দর। ওদের বাচ্ছাটা জানি কেমন হয়েছে।তাসফির মত,,,,,?নাকি ওর বউ এর মত? আমি তো আর ওর বউ আর ওদের বাচ্ছাটা কে দেখেই নি,,,,,?
দেখি নি......?আচ্ছা আমি তো ওদেরকে দেখি নি।তাহলে আমি কিভাবে বিশ্বাস করলাম যে সব সত্যি? আমি তাসফিকে ভালোবাসি।আমার উচিৎ ওকে বিশ্বাস করা।কিন্তু আমি ওকে বিশ্বাস করলাম না।এই ছিল ওর প্রতি আমার ভালোবাসা.....?আ
মাকে তো বাবা বলেছে.....?আচ্ছা বাবাকি আমাকে মিথ্যা বলেছে।নাহহ!! বাবা মিথ্যা বলবে কেন...?নাকি বাবার শুনতে ভুল হয়েছে.....?বাবাকে কে বলেছে....?ওই মেয়েটা....?তাসফি  তো কিছু বলতে এসেছে।আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।হয়তো আমার ভুল ভাংগাতে এসেছে। কিন্তু বাবাই তো সে সুযোগ দেন নি।আমার বাবার এই এক রোগ।রাগলে তার মাথা ঠিক থাকে না।এই জন্যেই হয়ত মা উনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন,,,,,নাহহ আমার মা কাউকে বিয়ে করে চলে যায় নি।তিনি না ফেরার জগৎ-এ চলে গেছেন। মাকে বাবা খুব ভালোবাসতেন আর আমাকেও । তাই তিনি দ্বিতীয় বিয়ের কথা চিন্তাও করেন না।
আচ্ছা বাবা যদি দ্বিতীয় বিয়ে করতেন তবে আমার সেই মা কেমন হতো...?আমি কি তাকে মা বলে ডাকতাম....?
নাহহ এই চিন্তা বাদ।আমাকে এখন আমার বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। আমার এই এক সমস্যা। খুব চিন্তিত হলে একের পর এক ভাবতেই থাকি।এতে মূল ভাবনার বিষয়টা হারিয়ে ফেলি।।নাহহ! এখন ভাবনায় হারানো যাবে না।বাবার সাথে একবার দেখা করা দরকার। বাবাকি ঘুমিয়ে গেছে,,?গিয়ে দেখি....
:বাবা তুমি এখনো জেগে আছ...?
:হ্যাঁ রে মা.....কিছু বলবি???
নাহহ বাবা রেগে নেই। তাহলে সুন্দর ভাবে কথা বলা যাবে।
:হুম..!কিছু কথা ছিল.....?
:আয় মা! ভিতরে আয়।
দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলাম। বাবাকে দেখলাম ইজি চেয়ারে বসে কি যেন ভাবছে.....
:কি ব্যাপার বাবা!! ঘুমাও নি কেন.....?
:এমনি ঘুম আসছে না।
:ওও।আচ্ছা বাবা একটা কথা বলি প্লিজ রাগ করবে না বল...?
:সেকি!! বল!! তোর কথায় আমি কি কখন রাগ করেছি....বল বল
:আচ্ছা বাবা তাসফির সম্পর্কে তোমাকে কথা গুলো কে বলেছে......?
বাবা কেমন করে আমার দিকে তাকাল।প্রথমে খুব রাগলো।পরে তা লুকিয়ে পেলল। ঘটনাটা খুব তাড়াতাড়ি হয়েছে।তাই আমি বাবা এমন ভাবে তাকানোর কোন নাম খুঁজে পাচ্ছি না।
:ওর বউ.....
:তুমি কি সিউর যে উনি তাসফির বউ.....
:তুই কি বলতে চাচ্ছিস....?
:আমি এটাই বলতে চাচ্ছি যে উনি তোমাকে যে তথ্য দিল তা কতটুকু ঠিক তুমি কি তা যাচাই করেছ.....?
:তুই তোর ছোট চাচাকে বিশ্বাস করিস....?
:কেন...?উনি এখানে কেন আসল....?
:কারন মেয়েটা দেখা করার পর আমি তোর ছোট চাচা কে পাঠাই।সেই আমাকে সব তথ্য দেয়।
:তোমার মনে আছে ছোট চাচা যে তোমাকে একবার মরতে এসেছে...../
:হ্যাঁ জায়গা জমির বেপার সেপার.....কিন্তু এই কথা এখানে আসছে কেন..?
:কারন তিনি আগে কখনই তোমাকে শান্তি দেয় নি।আর এখনো দেয় না।সব সময় উনি তোমার পিছনে পড়ে থাকে তোমাকে আটকানোর জন্যে।আর সেই তুমি তাকে দিয়ে তথ্য আনিয়েছ...?তুমি কি ভাবে ভাবলে যে উনি তোমাকে সঠিক তথ্য দিবে.....?
বাবা কিছু বলছে না।চুপ করে আছে....
:তোমার সমস্যা কি জানো বাবা....?তুমি সবাইকে খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নাও।ছোট চাচার জন্যে তোমাকে ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে।আর সেই তুমিই তার কথাতেই আমার জিবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে তোমার মেয়ের জিবন নিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত??
বাবা কি যেন ভাবছে.....
আমি আবার বললাম,
:বলছিলাম কি বাবা মেয়েটার যে ছেলে আছে তার ডিএনএ একবার পরিক্ষা করে দেখলে ভালো হত না,,,,?
:ডিএনএ লাগবে না। আমি অন্য ব্যাবস্থা করব.....এই মেয়ে আর তোর চাচার কিছু ব্যাবস্থা নিতে হবে।এরা এত দিন আমার ভালো রূপ দেখেছে।খারাপ রূপটা দেখাব এবার...তুই বরং তাসফির বাড়ি চলে যা......
না জানি ছেলেটা কত দুঃখ পেল।
:আর তুমি....?
:আচ্ছা এক কাজ করা যাক।একটা দিন ওয়েট কর।আমি আর তুই মিলে যাব।ওর মায়ের কাছ থেকে আমার ক্ষমা চাওয়ার আছে....কি পারবি তো ওয়েট করতে??
দেখিস...ভালোবাসার ব্যাপার কিন্তু।
আমি মৃদু হেসে বললাম,
:না বাবা পরব,,,,
এই বলে আমি দরজার দিকে গেলাম।
বাবা পিছন থেকে ডাক দিল।
:একটা কথা বলার ছিল রে মা....
:কি বাবা?
:আমায় ক্ষমা করে দিস মা!!!!
:ধুরর বাবা তুমি কি যে বলনা এগুলা।
কেউ ভুল করেনি।সব ঠিক আছে।
-------------
ড্রাইভার খালি কথাই বলতেছে।যা তাসফির অসহ্য লাগছে....
:স্যার বর্তমান যুগের মানুষ গুলো একে বারে পশুর মত হয়ে গেছে।পশুওও আরো ভালো আছে।জানেন স্যার, আমাদের নারায়ণগঞ্জ এ সাত জনকে খুন করে খালে ফেলে রেখেছিল।এরা কি মানুষ??
আপনিতো দেশে থাকেন না।তাই সব খবর জানেনও না। কিছুদিন আগে এক মাইয়ারে কি ভায়ানক ভাবে ধর্ষণ করেছে।আরেক মাইয়া রে চাকু দিয়া কোপ দিছে,,,,,,
ড্রাইভার বলতেই আছে।কিন্তু আমি চিন্তা করছি অন্য কিছু।কিভাবে যে কি হয়ে গেল....?
.
হঠাৎ মায়ের ফোন।মাকে ইমু চালানো শিখিয়ে এসেছি।আমার কিন্তু যথেষ্ট শিক্ষিত। তবে মোবাইল সম্পর্কে ধারনা তার খুব কম।তিনি গ্রামেই থাকেন । কত করে বললাম যে আমার সাথে লন্ডানে চলে আসেন না।তার এক কথা সে আসবেই না।নোয়াখালীর গন্ডি পেরোতে তার নাকি মন চায় না।আসলে মূল কথা হল বাবার ফেলে যাওয়া সৃতি গুলো ফেলে তিনি আসতে চাচ্ছেন না।বাড়িতে অবশ্য রুবিনা আছে।ওকে রাখা হয়েছে মায়ের খেয়াল রাখার জন্যে। ওর সাথেই মার সময় কেটে যায়।আবার আমাকে প্রতিদিন ফোন দেয়।ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম যে মা ফোন দিচ্ছে।
:একটা ভালো মেয়ের সন্ধন পেয়েছিরে খোকা। আমার বান্ধুবির মেয়ে।অবশ্য বান্ধুবিটা মারা গেছে কিছুদিন আগে....তার স্বামির সাথে আমি কথা বলেছি।
:তারা কোথায় থাকে???
:ঢাকা শহরে....
:মা তুমি ঢাকা গিয়েছ...?
:আরে নাহ।ফোন করেছি।
:তা নম্বর পেলে কই...
:জাহান্নামে....তোর এত কিছু না জানলেও চলবে....তোরে একটা ছবি পাঠাইছি।দেখে আমাকে জানাস।অবশ্য না জানালেও চলব।
:কেন...?
:কারন ওকেই তোকে বিয়ে করতে হবে। এটাই ফাইনাল।
:তাহলে ছবি দেওয়ার মানে কি......
:আইচ্ছা যা।ছবি দিয়া ভুল করছি। ছবি দেখন লাগব না।
'
নাহ মেয়েটা দেখতে মন্দ না।মায়ের চয়েস আছে বলতে হবে। কিন্তু উনি এই মেয়ের ছবি পাইল কি ভাবে......?
আমার মা টা না খুব আজিব ধরনের । কোথাকার খবর কিভাবে যে নিল আল্লাহ মালুম। তিনি অবশ্য বিকেল বেলা হাঁটতে বের হয়।সে ভাবে হয়ত কারো কাছ থেকে খবর পেয়েছে।
আমি মায়ের উপর খুব রাগ করেছিলাম। কারন ওই মেয়ের সাথে নাকি আমার মোবাইলে বিয়ে হবে। আপনারাই বলেন।এখন কি সেই যুগ আছে।মা টা বড় জিদি।যা বলবে তাই করবে।তিনি আমার রাগকে যেন গননাই করেন না।
মূল্যই দেন না।
,
বিয়েটা হয়ে গেল।কথা ছিল আমি দেশে আসলে ধুম ধাম করে বিয়ে হবে।আমি তাই সেদিক গুছাইতে লাগলাম। চাকরিটা বাংলাদেশে শিপ্ট করেছিলাম।আমাদের কোম্পানিই আমাকে এখানেই পাঠাইছে। ৫ বছর এর জন্যে।কিন্তু সবে তিন বছর হল।নতুন বিয়ে করেছি। তাই আর থাকতে ইচ্ছে হয় নি।প্রজেক্টটা অন্য কাউকে দিয়ে এমডি স্যার কে বলে চলে আসার ব্যাবস্থা করেছি।স্যার তো নারাজ। কিন্তু যখন বুঝিয়ে বললাম তখন মেনে নিলেন।এর মাঝে আবিথার সাথে আমার একটা প্রনয়ের খেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল।আমাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।মেয়েটি খুব মিশুক। তবে প্রথম প্রথম কথা বলতে খুব লজ্জা পেত।ওকে যেদিন বললাম আমার আসার কথা সেদিন সে কি যে খুশি হয়েছিল বলার বাহিরে।
'
কিছুদিন পর মা ফোন করে জানালো তারা নাকি আমার বিয়ে ভেংগে দিয়েছে। কে নাকি বলেছে আমার নাকি আগেও বিয়ে হয়েছে। একটা বাচ্ছাও নাকি আছে।বড় আজিব!!
আমার মাথায় মনে হয় আকাশ ভেংগে পড়েছে।কিছুক্ষন পুরো স্তব্ধ হয়ে রইলাম।
আবিথা কে ফোন দিলাম।ধরল না।আবার দিলাম ধরল না।পরেরবার ধরে বলল,
আমাকে আর কখনই ফোন দিবেন না।চরিত্র হিনা লোক একটা।এই বলে ফোন টা কেটে দিল।আর যোগাযোগ হয় নি।চরিত্র হিনা বলার কারনে আঘাত টা একটু বেশিই পেলাম।মানুষ এত সহজে ভুল বুঝতে পারে...?
আমি আসতাম না।কিন্তু দেশে এসেছি এদের ভুল ভাংগাতে।কিন্তু কোন লাভই হয় নি।
-
:স্যার,,,, ও স্যার,,,,
:হুঁ
:আমরা চলে এসেছি।গাড়ি আর ভিতরে যাইব না।রাস্তা খুব ছোট।

বকসিস সহ ড্রাইভার কে বিদায় দিলাম।আমি মায়ের কাছে আসছি। এতেই আমার সব দুঃখ দুর হয়ে গিয়েছে।যদিও সেই ব্যাথা এখনো রয়ে গেছে।কেউ আমার ভুল বুঝেছে সেই ব্যাথা।
'
ড্রাইভার, আবিথার বাবা,আর আবিথা প্রায় চলে আসছে।বাইরে খুব চাঁদের আলো কিন্তু মাঝে মাঝে এক খন্ড মেঘ এসে চাঁদকে গিরে পেলে। আবার চলে যায় মেঘ গুলো।।
:আমরা চলে এসেছি আফা....গাড়ি আর ভিতরে যাবে না।
কথাটা শুনার পর আমার মনের ভিতর কেমন জানি ভালো লাগা কাজ করল।মনের ভিতর আনন্দ শিহরন জেগে উঠল। আমরা চলে এসেছি.....?আমি কখনো ওকে সামনাসামনি দেখি নি।আচ্ছা ও তো আমাকে দেখে নি।যখন ওর সামনে যাব তখন জানি ওর মুখটা কেমন হবে...?আগে যাওয়া যাক।
পিছনের সিটে তাকিয়ে দেখি বাবা আনন্দের সাথে ঘুমাচ্ছে।এখন উঠালে উনার আবার হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।বাবাকে কেউ যদি ঘুম থেকে উঠায় তাহলে বাবার এই রোগটা দেখা দেয়।কাঁপনি উঠে যায় বাবার।তাই এখন না ডাকাই শ্রেয়।
:চাচা আপনি বাবার কাছে থাকেন। উনি পানি খেতে উঠতে পারেন।তখন উনি আর আপনি একসাথে আসবেন।
:ঠিক আছে,,,,
:আচ্ছা আমি যাই
এই বলে আমি চলে আসলাম।
বড় একটা গেইট দেওয়া। তাতে কি লিখা তা অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না।মনে হয়,
দৌলতপুর ভূঁইয়া বাড়ি হবে। কারন তাসফিদের বাড়ির নাম এটাই।
সরু রাস্তা।দু 'পাশে বাগান।তাতে অনেক গুলো জোনাক পোকা দেখে যাচ্ছে।আজিব ব্যাপার হচ্ছে আমি কখন জোনাক পোকা দেখি নাই।তাই আগ্রহের সাথে দেখে যাচ্ছি।কেমন জানি আনন্দ লাগছে। কি সুন্দর ভাবে লাইট জ্বলছে আর নিবছে।দেখতে দেখতে ওদের বাড়ির উঠানে চলে আসলাম।
:কে কে ওখানে.....?
ঘরের ভিতর থেকে আওয়াজ আসল।সম্ভবত তাসফির।
:আমি আবিথা.....
রুমে লাইক জ্বালালো। খুব দ্রুত দরজা খুলল। উঠানে বের হল।খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো ও।মনে হচ্ছে জিবনের সেরা অবাক হচ্ছে এটা।
ওর আর আমার মাঝে দুরুত্ব বেশি না হাত পাঁচেক হবে।
ওকে দেখেই আমার চোখটা চল চল করে উঠল। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম তাসফির চোখেও জল।  ভালোবাসার জল।

চাঁদটা কে বড় এক মেঘ খন্ড ঢেকে পেলেছে।কিন্তু ভূঁইয়া বাড়িটা অন্য এক আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। এই আলো সম্পর্কে মানুষ জানে না।প্রকৃতি এই আলো সম্পর্কে মানুষকে জানতে দেয় না।প্রকৃতি তার সব রহস্য প্রকাশ করে না।কিছু রহস্য আছে যা সে লুকিয়ে রাখে।
রাতের এই প্রকৃতি আর জোনাক পোকা গুলোই আলোটাকে দেখছে আর পরিবেশটা উপভোগ করছে।

(ভুলত্রুটি মার্যনীয়)
তাসফি আহমেদ
(বি. দ্র.:থিমটা হুমায়ন স্যারের রুপা নামক উপন্যাস হতে নেওয়া।)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url