গল্পঃ ট্রেন জার্নি এবং একটি গল্প

গল্পঃ ট্রেন জার্নি এবং একটি গল্প

তাসফি আহমেদ



মেয়েটির বাবা মেয়েটিকে আড়াল করতে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না। সামনে বসে থাকা ছেলেটা সুযোগ পেলেই তাকে দেখছে। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে দেখছে। এভাবে একদৃষ্টে কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি লাগবেই। মেয়েটার অস্বস্তি লাগছে,এটা তার দিকে তাকালেই বুঝা যায়। 
আমি কাব্য। বসে আছি ট্রেনে। আমি যে কামরাটাতে আছি সেখানে আরো তিনজন আছে। একটি মেয়ে এবং তার বাবা। মেয়েটির বয়স খুব সম্ভব বিশ একুশ  হবে। বাকি একজন আমার পাশে। একটি ছেলে। দেখে মনে হয় ভার্সিটি পড়ুয়া। চেহারায় ভদ্রতা প্রকাশ পায়। কিন্তু আসলে ছেলেটা ভদ্র না। ভদ্রবেশী প্রচন্ড খারাপ একটা ছেলে। এ ধরনের ছেলেরা খুব ভয়ংকর হয়। হাতে বিভিন্ন ধরের লোহার জিনিস থাকে। অনেকটা চূড়ির মত। মাথার দিকে তাকালে দেখবেন অবিন্যাসিত চুলের সমাহার। চুল স্পাইক করে কাটা। বা বড় বড়, কাঁধ ছাড়িয়ে গিয়েছে চুল গুলো। আরো একটা জিনিস যেটা প্রায়শই দেখা যায় সেটা হল এদের চুলের বিভিন্ন সাইড কালার করা থাকে। চোখ মুখ শুষ্ক থাকে। লাল হয়ে থাকে। যেন নেশা থেকে উঠে এসেছে। টাইট প্যান্ট আর টাইট শার্ট পরে। প্যান্টের পকেট চেক করলে চাকু পাওয়া যাবে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্য করলাম যে আমার পাশের ছেলেটির সাথে ওইসব ছেলেদের কোন মিল নেই! একেবারে নরমাল। তবে তার প্যান্টের পকেটে যে লোহার চুরি আছে সেটা আমি টের পেয়েছি। সিটে বসার সময় প্যান্টের পকেট গলে চাকুর মাথা বের হয়ে গিয়েছি। পরে সেটাকে ঠিক করে নিল সে। চাকুটা দেখে আমি রীতিমত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কে জানি কখন হুট করেই বের করে সুইচ টিপ দিয়ে সান দেওয়া সরু চাকুটা বের করে আমাদের গলায় চালিয়ে দেয়! আমি তীব্র ভয়ে চুপ করে থাকলাম। মেয়েটির বাবাও। হয়ত খেয়াল করেছেন চাকুটা। তবে আমি প্রস্তুত আছি। যদি ছেলেটা মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করে তাহলে কি করব সেটা ভেবে রেখেছি। কেবল কাজে লাগানো বাকি।

ট্রেনে উঠার পর থেকেই মেয়েটিকে দেখছে। প্রথম প্রথম আড়চোখে দেখতো। এখন দেখছে সরাসরি। এতে মেয়েটির বাবা বিরক্ত হচ্ছেন। ছেলেটি তা উপেক্ষা করে। আমি কেবল এসব কান্ড দেখে যাচ্ছি। আমার উচিৎ ছেলেটিকে বাধা দেওয়া। কিন্তু আমি দিচ্ছি না। প্রচন্ড ভয়ে চুপ করে আছি। কাপুরুষের মত। 
-দেশের যা অবস্থা আজকাল। দেখুন একজন শিক্ষককে কিভাবে মেরে ফেলে তার গায়ের সাদা জামায় রক্ত দিয়ে লিখেছে "ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যু"। এটা কোন কথা হল! দেশে কি কোন আইন কানুন নেই! মানুষের বাঁচাটাই দেখছি মুশকিল হয়ে গিয়েছে। দেখুন, এই সাধারণ শিক্ষকটা উপর কি অত্যাচারই না করা হল! 
মেয়েটির বাবা আমার দিকে খবরের কাগজটা বাড়িয়ে দিল। আমি দেখলাম। সত্যিই! এ তো অন্যায় হয়েছে। একজন স্যার কিভাবে ধর্ষণ করতে পারে। এটা মানা যায়!  শিক্ষক হল জাতির মেরুদন্ড। সেই শিক্ষক কিভাবে এসব করতে পারে!  রিপোর্ট অনুযায়ী শিক্ষকটি তো অনেক ভালো। এলাকাবাসীরও একই বক্তব্য।  তাহলে! মারল কেন? আমি পেপারটা ভদ্রলোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
-আসলেই নিরীহ মানুষ গুলোকে অকারণেই মেরে ফেলা হচ্ছে। তা না হলে দেখুন এই সাদাসিধে শিক্ষকটার উপর কেন এত অত্যাচার হবে!
ভদ্রলোক এবার ছেলেটার দিকে তাকাল বিরক্তি নিয়ে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-দেশে সন্ত্রাস যে হারে বাড়ছে, এসব তো হবেই। ন্যায় কথা যে বলবে পরের দিনের খবরের কাগজে তার লাশের ছবি আসবে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে তাকে। এটা তো এখন নিত্য দিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে।

আমি ভদ্রলোকের কথা সায় দিলাম। আমরা কথা বলছি। কিন্তু পাশের ছেলেটি অবিরত মেয়েটাকে দেখছে। দেখেই যাচ্ছে। মেয়েটার বিরক্তির মাত্র এবার ছাড়িয়ে গেল। সে তার বাবার দিকে আরেকটু সরে বসল। মেয়েটির বাবা খবরের কাগজ রেখে নিজের মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে বসে থাকলেন। ছেলেটি এবার মেয়েটির দিকে তাকালো না। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকল কেবল। অনেকক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি এবার একটু সাহস পেলাম। ছেলেটির সাথে কথা বলে দেখি। ওকে গল্প শুনাবো। আমার কাছে ভালো হওয়ার একটা গল্প আছে। গল্পটা আমার। খারাপ,বদ মানুষদের আমি গল্পটা শুনাই। অনেকে শুনে ভালো হয়ে যাব বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা নেয়। আমার গল্পটা এমনই। আমাকে প্রচন্ড খারাপ মানুষ থেকে ভালো মানুষে রূপান্তরিত করেছে। এতেই মানুষ একটু বেশিই আকৃষ্ট হয়। আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলি,
-কি নাম তোমার!
ছেলেটি আমার দিকে তাকালো না চট করেই। কিছু সময় পর তাকাল। আমি চমকে উঠলাম। চোখ দুটো যেন চোখ নয়, মানুষ পড়তে পারার একটা যন্ত্র। কি তীক্ষ্ণ চোখ! যেন ভেতরের সব পড়ে ফেলতে পারে। আমি চট করেই চোখ নামিয়ে নিলাম। এ ধরনের মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। তবে  খারাপ মানুষের চোখ তো এমন হয় না। খারাপ মানুষের চোখ হবে নেশা কাতুর। লাল হয়ে থাকবে। কিন্তু ছেলেটার চোখ তেমন না। তাহলে কি আমি ছেলেটার সম্পর্কে ভুল ভেবেছিলাম? 
-মাসুদ!
ছেলেটি এক কথায় উত্তর দিল। তার নাম মাসুদ। সুন্দর নাম। আমি বললাম,
-তোমার নামটা সুন্দর! যাচ্ছ কোথায়?
-দূর অজানায়। যেখান থেকে ফিরে আসা যায় না। যেখানে কোন অন্যায় হয় না।
আমি চমকালাম। কি বলছে ছেলেটা! 
- পড়ালিখা কর?
-করতাম। এখন করি না। 
-কেন?
-একটা গল্প ছিল। গল্পটা আমার পুরো জীবনটা বদলে দেয়। বা বলা যেতে পারে গল্পটাই আমার জীবন যেটার শেষ তীব্র কষ্ট মিশে আছে।
অবাক হলাম। ছেলেটার জীবনেও একটা গল্প আছে! কষ্টের গল্প!  যেটা শুনার জন্যে আমার মন অপেক্ষা করছে। আমি বললাম,
-বলা যাবে গল্পটা!
ছেলেটি কিছু বলল না। চুপ করে থাকল কিছু সময়। বাইরে ঘন অন্ধকার। মাথার উপর একটা লাইট জ্বলছে নিভু নিভু ভাবে।  আমাদের কামরাটাতে যেন চট করেই নিস্তব্ধতা নেমে এল। সাথে একটা গল্প ভাসতে থাকল চারপাশে। কষ্টের গল্প।
.
-আমাদের গ্রামের নাম মিরন পুর। আর দশটা গ্রামের মতই। সুন্দর দৃশ্যে মন্ডিত। গ্রামে কয়েকটা জিনিস মানুষ তীব্রভাবে বিশ্বাস করে। প্রথমত কুসংস্কার, দ্বিতীয়ত সমাজ এবং সমাজের উচ্চ আসনে বসে থাকা মানুষগুলোকে। মুর্খ গ্রামের মানুষগুলো তাদের পায়ের উপর পড়ে থাকে। আর তারাও মূর্খ মানুষ গুলোকে পায়ের তলায় মাড়িয়ে রাখে। আমি তেমনই এক গ্রামের ছেলে। গল্পটা খুব ছোট বেলা থেকেই শুরু হয়। আমার বয়স তখন চার বছর হবে। আর আমার ছোট বোনটির বয়স দুই বছর। মাকে অল্প বয়সেই বিয়ে দেয়। তার বয়স যখন বিশ বছর পেরিয়ে তখন তিনি দুই বাচ্ছার মা! অথচ এই বয়সে শহুরে মেয়েরা পড়ালিখায় ব্যস্ত থাকে, এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। আর আমার মা তার ঝগড়াটে স্বামীর সংসার চালাতে ব্যস্ত। আমাদের লালন পালন নিয়েও ব্যস্ত। ঠিক আমাদের এই অবস্থায় মাঝ রাস্তায় ফেলে চলে যায় আমার বাবা। পাশের গ্রামের একটা মেয়ের সাথে। যার একটা ছোট্ট বাচ্ছা ছিল। স্বামী মারা যায় তার। বাবা তাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা এত অল্প বয়সে বাবা হারাই। আর মা হারায় তার স্বামী। ভাবছেন, তখন তো আমি ছোট ছিলাম। এই গল্প জানলাম কিভাবে! ওই যে বলেছি না সমাজ আছে। কড়া সমাজ। সেই সমাজ আমাকে জানিয়েছে। দৈনিক সমাজের দুষ্ট লোক গুলো আমাকে বলে দিয়েছে আমি কিভাবে বাবাকে হারাই।  বাবার নষ্টামির গল্প বলেছে। কি বিশ্রী ভাবে গালি দিয়ে বলতো! বাবাকে জীবনে দেখি নিই। না দেখেই তীব্রভাবে ঘৃণা করতে থাকি তাকে।
 আমাদের আর্থিক অবস্থা যায় যায়। কোন আয় নেই। খেতে পেতাম না দু বেলা। নানার বাড়ির অবস্থাও খারাপ। মামারা একে অপরের পিছনে লেগে থাকে, মারামারি করে। নানার জায়গা সম্পত্তি একেবারেই নগণ্য। এই অল্প জায়গা নিয়েও কি ঝগড়া তাদের মাঝে! মা আর সাহস পায় নিই সে বাড়িতে যেতে। মানুষের বাসায় কাজ করা শুরু করে। হাহ! এই জীবনে মানুষের কত এটো ভাত খেয়েছি!
 এই বলে মাসুদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমরা তিনজন উৎসুক শ্রোতা কেবল তার দিকে তাকিয়ে আছি। কেবল গল্প শুনবো বলে।
 -পানি হবে!
 আমি মাথা নাড়ালাম। পানি নেই আমার কাছে। সামনে বসে থাকা মেয়েটি পানির বতল বাড়িয়ে দিল মাসুদের দিকে। তার বিশ্বাস হতে শুরু করল যে এই ছেলেটা তার সাথে খারাপ কিছু করবে না। যার এমন একটি গল্প আছে সে কখনই খারাপ কিছু করতে পারে না। মাসুদ বতল নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকল। অদ্ভুত ভাবে  আমি তার চোখে জল দেখতে পেলাম। সাথে অন্য কিছুও। কি সেটা? তাহলে কি আমি ভুল ছিলাম! মাসুদকি সেই নষ্ট দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকায় নিই!
-ধন্যবাদ বোন! 
মেয়েটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বতলটা নিল। তারপর আবার নিরাবতা। এবং আবার সেই গল্পটি।
.
আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি ঠিক সেই সময়েই আমার মায়ের নামের পাশে বেশ্যা শব্দটা যোগ হয়। আমি ঠিক তখনো পরিচিত না বেশ্যা শব্দটার সাথে। সমাজ আমাকে খুব সুন্দর করে তার সংঙ্গা দিয়েছে। প্রায় বিকেল বেলার দোকানের আড্ডায় ছিল আমার মায়ের বেশ্যাগিরির কথা। বলত,"আরে সাহিজ্জার বউ মা* চেয়ারম্যান সাবের লগে **** করতে গেছে। বেশ্যাগিরি করতে গেছে।" এই বলে বেশ শব্দ করে হাসত। আবার কেউ বলে,"চেয়ারম্যান তো বেকুব। সুযোগ কামে লাগাইলো না। মা*র স্বামী নেই তো তাই টক জাগছে।" আবার সেই বিশ্রী হাসি। আমার গায়ের চামড়া যেন ছিড়ে যেত। প্রচন্ড ঘৃণা জাগে। আমি মায়ের সাথে কথা বলি না। রাত্রিবেলা মা পাশে এসে আমার মাথায় বুলিয়ে দেয়। আমি মুখ ফিরিয়ে নেই প্রচন্ড অভিমানে। মা কান্না করে দেয়। বলে,
-তোর মা এত খারাপ না রে বাবা , এত খারাপ না। যা টেকা রোজগার হয় তা দিয়ে এই সংসার চলে কেমনে ক! মাইনসের বাড়ি কাম কইরা পোষায় না। তাই ওই বদ চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম একটা জামা সেলাই করার মেশিনের জন্যে। সরকার নাকি বিনা পয়সায় গরীবগরে মেশিন দেয়। ছোট বেলায় শিখছিলাম সেলাইয়ের কাজ। ভাবছিলাম সেলাই কইরা কিছু টেকা আয় করুম। তার কাছে গিয়া একটা মেশিন ভিক্ষা চাইলাম। হে কি করছে জানোচ! হেই আমার হাত ধরছে প্রথমে,তারপর আমারে জড়াই ধরছে।
এই বলে মা কান্না করতে থাকে। আমি কেবল মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি ভেজা চোখ নিয়ে। মা আবার বলে,
-যখন চিৎকার দিয়া লোক জড়ো করলাম তখন হে এই মিথ্যা নাটক বানাইলো। আমারে বেশ্যা কইলো। আমি মানুষগুলারে এত বার করে কইলাম যে আমি কিচ্ছু করি নাই,সব এই চেয়ারম্যানের দোষ তখন কেউই আমার কথা বিশ্বাস করে নাই। উল্টা আমারে মারছে। বেশ্যা বইলা গালি দিছে। 
মা কান্না করতে থাকে। আমার কি হল জানি না। আমিও চট করেই মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকি। তখন আমার কেবল মনে হয়েছে আমার মা এমন করতে পারে না। কখনই না।
সে ছোট বেলায়ই এমন একটা গল্প শুনতে হল আমায়। আমার মায়ের মিথ্যা বেশ্যার গল্প। এসবের পর মানুষের বাসায় কাজ করা বন্ধ হয়ে গেল মার। আর যাই হোক, তারা কোন বেশ্যাকে বাসার কাজে রাখতে চায় না। মা সেই কাজ গুলোও হারায়। আমরা পথের ভিখারি হই। খাওয়ার কষ্টে ভুগতে থাকি। ঠিক সেই সময়ে আমাদের দেবতা রূপে দেখা দেন মহি চাচা। মানুষ ভালো। বেশ সহজ সরল। আমাদের পাশে দাঁড়ান তিনি। মাকে একটা চাকরি জোগার করে দেন। রাস্তায় কাজ করা। রাস্তা কুড়ানো। মা সেই চাকরি করতে রাজি হয়। আর যাই হোক নিজের চামড়া বিক্রি করা থেকে এই কাজই ঢের ভালো। মা মোটামুটি দু মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার মত বেতন পেত। কোন রকমে সংসার চলত আমাদের। সামনে যা পেতাম খেতাম। কি খেতাম সেটার দিকে লক্ষ্য ছিল না। এত কিছুর পরেও মা আমাদের পড়ালিখা করানো বাদ দেন নিই মা। আমাদের পড়ালিখা করিয়ে মানুষ করবেন। চাকরি করব আমি। আমাদের বাড়ি হবে। গাড়ি হবে। এই নষ্ট  সমাজের মূর্খ গুলো তখন আমাদের পায়ে এসে নুইয়ে পড়বে। ক্ষমা চাইবে। মায়ের স্বপ্ন ছিল এগুলো। ছেড়া খাতায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতো। দেখুক না। সমস্যা কই। সমস্যা হল মানুষকে নিয়ে। কেবল খুঁছিয়ে খুঁছিয়ে কথা শুনাতো মাকে, আমাকে, আমার ছোট বোনটকেও ছাড়ত না। দশ জনের দশ কথা শুনে দম বন্ধ করে চুপচাপ পড়ে থাকতাম আমরা তিনজন। কিচ্ছু বলতাম না। সময় আসলে জবাব দিব তার অপেক্ষায় দিন যায়। সময় আসার আগেই আরো একটা গল্প এসে কড়া নাড়ে এই গরীবের দরজায়। গরীব মানুষ গুলোর জীবন বোধ হয় এমনই। একটার পর একটা গল্প এসে কড়া নাড়ে। কষ্টের গল্প। সুখের গল্প আসে না। আসলেও বড্ড দেরি হয়ে যায় তখন।

আমি তখন ইন্টার পরিক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।  আমার বোন দশম শ্রেণীতে পড়ে। মা আছেন তার সেই রাস্তা কুড়ানোর কাজ নিয়ে। আমি মাকে এ নিয়ে একটুও হেয় করি না। সম্মান করি। মাকে নিয়ে গর্ব করি। বুক ফুলিয়ে বলি আমার মা রাস্তা কুড়িয়ে আমাদের পড়াচ্ছেন। ক'জন মা পারে এমন। আমার মা অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন এই জিবনে। কেবল আমাদের ভবিষ্যৎ এর জন্যে। এদিকে মাকে নিয়ে রটে যাওয়া বেশ্যার মিথ্যা গল্পটাও চাপা পড়ে। কারণ যে এই গল্পটা বানিয়েছে সে এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তিনমাস বিছানায় গড়িয়ে মারা যাওয়ার পূর্বে তার মিথ্যা গল্পের কথা বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। তবুও মানুষের কাছ থেকে এতটুকু সম্মান পেতাম না। যাক গল্পটা চাপা পড়েছে এতেই খুশি। কিন্তু কে জানতো চাপা পড়ে যাওয়া গল্পটা যে আবার ভীন্ন রূপে উঠে আসবে! 
সেদিন আমি বাসায় ছিলাম। আমি আর মা! নিরা আমার ছোট বোন। ও বাসায় নেই। প্রাইভেট পড়তে গিয়েছে বিকেলে। আসতে আসতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে যাবে। সন্ধ্যা হল। নিরা বাসায় আসল না। মা খানিকটা ভয় পেয়ে গেললেন। দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। মেয়েদের রেপ করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। আমি ভয় পেলাম ভীষণ। একটা মাত্র বোন আমার। কি সুন্দর চেহারা! পড়ালিখায় চতুর। এই বোনটার সাথে আমার অনেক স্মৃতি মিশে আছে। হাসি,কান্না আর ভালোবাসার স্মৃতি। বড্ড ভালোবাসি ওকে। ওর কিছু হয়ে গেলে আমার বাঁচাটাই যে মুশকিল হয়ে যাবে। আমি কি করবো ভেবে পেলাম না। কিছু একটা করতে হবে। চুপ করে থাকা যাবে না। মা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। কান্না শুরু করে দিলেন তিনি। আমি ওর স্যারকে ফোন দিলাম। উনি বললেন ও নাকি আরো আগেই বেরিয়ে গিয়েছে। চিন্তাটা যেন আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল। বাইরে বের হওয়া দরকার। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক তখন দরজায় কেউ অস্থির ভাবে কড়া নাড়ে। সেই কেউটা হল একটা গল্প। নষ্ট গল্প। আমি দরজা খুলে দেই দ্রুত। ওপাশে তাকাতেই আমি চমকে উঠি। নিরা দাঁড়িয়ে আছে। চোখে একগাদা জল। বিকেল বেলা আমি কিনে দেওয়া যে লিপষ্টিকটা ও দু'ঠোটে বেশ যত্ন করে লাগিয়ে  গিয়েছিল সেটা এখন লেপ্টের আছে ঠোটের চারপাশে। চোখের কাজলও। সুন্দর করে,যত্ন করে রাখা চুল গুলো এখন বেশ এলোমেলো। আমার চোখে জল জমে জলদিই। নিরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে ঘরে ঢুকে। তারপর চট করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে। কান্না করে ভীষণ। মা জলদি করে দরজা বন্ধ করে দেয়। এই গল্পকে বাইরে বের হতে দেয়া যাবে না। তা না হলে এই নষ্ট সমাজের মানুষগুলো কুড়ে কুড়ে খাবে আমাদের। মা এসেই আমাদের দুজকে জড়িয়ে ধরে চাপা স্বরে কান্না করে। যার শব্দ মিলিয়ে যায় একটা ছোট ঘরের ভেতরেই। আমরা তিনজন প্রচুর কান্না করি সে রাতে। এখনো যেন কান্নার শব্দ আমার কানে প্রতিধ্বনিত হয়।

এই বলে মাসুদ কান্না করে দেয়। শব্দহীন ভাবে কান্না করে। হঠাৎ ই যেন ট্রেনের এই কামরাটাতে একঝাক কষ্ট এসে বাসা বাঁধে। আমি বাইরের ঘন অন্ধকারে চোখ রাখলাম। আড়াল করে নিজের চোখের জল মুছে সামনে বসে থাকা ভদ্রলোক আর মেয়েটির দিকে তাকালাম। তাদের চোখ ছলছল করছে। একটু আগে যে ছেলেটাকে প্রচন্ড ঘৃণা করা হয়েছে, এখন তার গল্প শুনে মানুষ গুলো কান্না করছে। কি অদ্ভুত মানুষের মন। আমি মাসুদের দিকে তাকালাম। ওর কাঁধে হাত রেখে তাকে সান্তনা দিলাম। কিছু বললাম না। সামনে বসে থাকা মেয়েটি অনেকক্ষন চুপ থেকে বলল,
-তারপর! গল্প কি শেষ? 
মাসুদ মাথা নিচু করে। বলে,
-শেষ না। গল্প শুরু এখান থেকে।  
-তাহলে বলে ফেলুন না।
মেয়েটার কণ্ঠে অস্থিরতা প্রকাশ পায়। 
মাসুদ বলতে শুরু করল।
-পরের দিন খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গে। আমি উঠে মুখ ধুতে যাব ঠিক তার আগে কি মনে করে জানি  নিরার রুমের দিকে গেলাম। দরজা ঠেলে ভেতরে তাকাতেই দেখলাম নিরা শুয়ে নেই,ঝুলে আছে। সিলিং ফ্যানের সাথে। চোখ দুটোর দিকে তাকাতেই দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কি অসহায় দৃষ্টি! কিছু না পাওয়ার কষ্ট লেপ্টে আছে সেখানে। স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার কষ্ট।  আমার ভেতরটা যেন চট করেই গুলিয়ে গেল। হাত পা শীতল হয়ে আসল খুব দ্রুত। যেন পাগল হয়ে যাব মুহূর্তে। পাগলের মত চিৎকার দিয়ে  ছুটলাম নিরার কাছে। পা দুটো ধরতেই দেখলাম সব বরফ হয়ে আছে।
 নিরা মারা যায় আরো আগেই। সহ্য করতে পারে না। নারীর সতিত্ব বড় মূল্যবান। যে নারী হারায় সেই বুঝে এর মূল্য কত। আমি নিরাকে নামিয়ে নিজের কোলে রাখি। দু'চোখ দিয়ে অশ্রু যেন বাধাহীন ভাবে পড়ছে। আমার ফুটফুটে বোনটা, কাল পর্যন্তও তো ভালো ছিল। এখন কেন চলে গেল। আমাদের কি একটুও ভালোবাসে না ও। আমাদের কথা একটুও ভাবল না! আমি কান্না করি। তীব্রভাবে কান্না করি। ঠিক তখনই কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পাই। সামনে তাকাতেই দেখি মা পড়ে আছে। চোখ মুখ শক্ত করে পড়ে আছে। নিরাকে এভাবে দেখে ঠিক থাকতে পারেন নিই। আমি মায়ের কাছে ছুটে যাই। বহু কষ্ট বিছানায় শোয়াই। পালস চেক করি। মা তখন জ্ঞান হারায়। এটা আমার ভাবনা ছিল। আমি ভুল ছিলাম। মা তখন স্টোক করছিল। আমি পাগল হয়ে যাই। একদিকে মা আর অন্য দিকে নিজের ভালোবাসার বোন।

মাকে হাসপাতাল নিয়ে যাই। বিকেলের মধ্যে বোনের সমাধি সেরে নেই। আশ্চর্যের ব্যপার কি জানেন! আমার বোনের সমাধিতে কেউ আসে নি। কেউ না। কেবল যারা এসেছেন তারা কবর  খোঁড়ার কাজ করেন। তারাও থাকত না। নেহাত তাদের কাজই এটা বলে থাকছে। সবাই অবশ্য একবার একবার এসে নাক ছিটকে চলে গিয়েছে। অনেকে দূর থেকে দাঁড়িয়ে মজা নিয়েছে। অদ্ভুত! মানুষ এমন কেন?
সেদিনই বোনের কবরের পাশে আরো একটি কবর খুঁড়তে হয়। আমার মায়ের জন্যে। সন্ধ্যায় খবর পাই মা মারা গিয়েছে। শেষ যখন জ্ঞান ফিরেছিল আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। আমার অভাগী মা-টা সেটাও দেখে গেল না। অথচ কদিন আগেও মা স্বপ্ন দেখতে আমাদের নিয়ে। আমাদের বাড়ি হবে,গাড়ি হবে, টাকা হবে আরো কত কি! হায় মা! এগুলো স্বপ্নই ছিল। তোমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হবে না। স্বপ্ন তো বাস্তবে হলই না বরং তুমি তোমার ছেলেটাকে শেষ দেখাও দেখলে না। অভাগী তুই মা! বড্ড অভাগী! 
মাসুদ কান্না করছে। আমি তার পাশে বসে আছি। আমাদের সামনে আরো দু'জন মানুষ বসে আছে। তারাও কান্না করছে। হঠাৎই যেন একটা থমথমে পরিবেশ তৈরি হল ট্রেনের এই কামরাটায়। আমি চুপ করে থাকলাম। বুক ফেটে কান্না আসতে থাকল আমার। ইচ্ছে হল চিৎকার দিয়ে কাঁদি। এত নিষ্ঠুর কেন মানুষ। এত সুন্দর তিনটা মানুষকে এভাবে মেরে ফেলল। তিনটা! না দুটো! না তিনটেই। মাসুদ ছেলেটাও তো এখন না মরে মরার মত বেঁচে আছে। এই বাঁচাতে আনন্দ নেই। মজা নেই। কেবল কষ্ট ছাড়া। অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে ওকে।
-খুন করে ফেলেছি ওই হারামাজাদাকে। যে আমার কাছ থেকে আমার অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা আর লড়াই করে বেঁচে থাকা মা-টাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। যে আমার ফুটফুটে বোনটিকে নিরবে খুন করেছে তাকে।

মাসুদের কণ্ঠ পরিবর্তন হল মুহূর্তেই। কড়া কণ্ঠে তীব্র রাগ নিয়ে কথাটা বলেছে। আমি চমকে উঠি। দেখি ওর চোখে মুখে তীব্র রাগ আর ঘৃণা ভাসছে। কার কথা বলছে ও। কাকে খুন করেছে!
- একটু আগে বলেছিলেন, সাদাসিধে, নিরীহ শিক্ষক! আসলে এসব ওর ভান, অভিনয়, একটা মুখোশ মাত্র। একটু আগে যে খবরটা আপনি পড়েছেন না, সেই খবরে যাকে মেরে ফেলা হয়েছে সে হল আমার বোনের ইংরেজি শিক্ষক যাকে আমি একটু একটু  করে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলেছি। ওই শিক্ষকই আমার বোনকে চার দেওয়ালের ভেতর আটকিয়ে নির্মম ভাবে রেপ করে। সেদিন নিরার গালে তার দেওয়া প্রতিটা চড়ের দাগ আমি লক্ষ্য করেছি। নিরাকে জিজ্ঞেস করি। ও কিছু বলতে পারে না। কেবল কান্না করে।
কিন্তু ও মারা যাওয়ার পর আমি যখন ওর রুমে যাই তখন একটা চিঠি পাই। আমার বোনের শেষ চিঠি। যেখানে ওই নরপিশাচটার কথা বলা আছে। তারপরেই মাস খানেক পর সুযোগ বুঝে খুন করে ফেলি ওকে। গোপনাঙ্গ কেটে কুচিকুচি করে ফেলি। ওর সামনেই করি। এই যে এই ছুরি দিয়ে।
মাসুদ চাকুটা বের করে। বলে,
-এটা দিয়ে মোট একশো বাইশটা ঘা দিয়েছি ওই খান***রে। বুকের বাঁ পাশে আছে না! ওখানে গর্ত করে ফেলেছি। হাহা! চোখ দুটো উপড়ে ফেলে মালা বানিয়ে তার গলায় ঝুলিয়েছি। ওর জীবনে ও আর কিচ্ছু করতে পারবে না। আরেহ! করবে কিভাবে! ওর তো ওইটাই নাই। হাহাহাহা। 
মাসুদ হাসে। উন্মাদের মত হাসে। আমরা অবাক হয়ে কেবল ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-জানেন! ওর সাথে এত কিছু করার পরও শান্তি পাচ্ছিলাম না। ইট দিয়ে আঘাত করে মাথা থেতলে দেই। মনে শান্তি মিলছেই না। তাই একেবারে মেরেই ফেলি। তারপর স্কুলের সামনে নিয়ে গিয়ে ঝুলিয়ে রাখি। যাতে কোন ধর্ষক ধর্ষণ করতে গিয়ে একবারের জন্য হলেও কেঁপে উঠে। যেন এই দৃশ্য মনে রাখে। কি ভাবছেন! অপরাধ করেছি।  অন্যায় করেছি! আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছি। হাহ! সেই যুগ শেষ। আরে যে দেশে ন্যায়ই হয় না সে দেশে অন্যায় হবে কিভাবে? দেশ ঠিক নাই দেশের আইন ঠিক নাই। তা না হলে এমন গোপন ভাবে যারা ধর্ষণ করে না তারা একটাও বেঁচে থাকত না। এদের ফাঁসির হওয়া উচিৎ। কিন্তু এদের ফাঁসি হয় না। ক'বছর জেল খেটে এসে আবার শুরু করে নষ্টামি। এখন দেখুন, তারা বুক ফুলিয়ে হাঁটছে। কোন ধর্ষিতার ভাই হয়ে কি আপনি এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারবেন? বলুন পারবেন?

আমি, আমার সামনের ভদ্রলোক  এবং মেয়েটি চুপ করে থাকলাম কেবল। কি বলব! কিছুই যে বলার নেই। আবার যেন কোথা থেকে কষ্ট ময় নিরাবতা নেমে এল। অনেকক্ষন হল! কেউ কোন কথা বলল না। তারপরে হুট করেই মাসুদ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
-আমাকে ক্ষমা করে দিও বোন। তোমার চেহারা আমার বোনের সাথে অনেক মিলে। তাই এতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। শেষ দেখা দেখে নিলাম।
মেয়েটি কেবল ওর দিকে তাকিয়েই থাকল। কিচ্ছু বলল না। মাসুদ বলল,
-আমার সময় হয়ে গিয়েছে। আমাকে যেতে হবে এবার। 
আমি চট করেই বলে উঠলাম,
-কই যাবে তুমি?
মাসুদ হাসল। কি সুন্দর হাসি ওর! মুখে হাসি রেখেই বলল,
-বলেছি না দূর অজানায় চলে যাবো!
আমি ঠিক বুঝে উঠলাম না। কেবল ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
মাসুদ চলে গিয়েছে। ঠিক তার কিছু সময় পরই ট্রেন থেকে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ এল। সাথে সাথে জানালা দিয়ে কিছু একটা ছিটকে এসে আমার মুখের উপর পড়ল। আমি মুখে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলাম। তরল জাতীয় কিছু একটা। বেশ গরম। গরম পানি আসবে কোত্থেকে! সামনে বসে থাকা মেয়েটি আমার দিকে তাকালো। তারপরে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দিল। আমি বুঝে উঠতে পারলাম না। হাতটা লাইট বরাবর সামনে আনতেই আমি চমকে উঠলাম। শীতল একটা রক্ত  শ্রোত বয়ে গেল আমার শরীরে। রক্ত! রক্ত আসবে কোত্থেকে! তারপরেই চমকে উঠলাম! মাসুদ নেই আর! ও চলে গেছে? সত্যি ও চলে গেছে। চলে গেছে কোন এক দূর অজানায়। যেখানে অন্যায় হয় না। বেচারা! বেঁচে থাকলেও শান্তিতে বাঁচতে পারত না। কারণ শান্তিতে বাঁচার জন্যে যা ছিল সব ওপাড়ে চলে গেছে। কেবল ও বাকি ছিল। এখন ও নিজেও চলে গেল। কেবল রেখে গেল একটু কষ্ট। আর একটা কষ্টের গল্প। যেটার শেষে প্রচুর কষ্ট মিশে থাকে এবং মাসুদ নামের ছেলেটি মারা যায়। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না এবার। কান্না করে দিলাম। মুখে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকলাম। আমার সামনে বসে থাকা দুজন মানুষও কান্না করছে। কে জানতো, এই ট্রেনের, এই কামরাটাতে এমন একটা গল্প থাকবে। কাঁদিয়ে ছাড়বে কাউকে। একটা গল্পে এত কষ্ট মিশে থাকবে জানা ছিল না। জানলে গল্পটা শুনতাম না। মাসুদদের গল্প এখানেই শেষ হয়।

ভীষণ কষ্ট নিয়ে শেষ হয় এই গল্প। আজ যদি মাসুদের বাবা এমন একটা কাজ না করতেন,ঠিক মত নিজের সন্তানদের কাছে থাকতেন তাহলে আজকের এই গল্পটা হয়তো  অন্য রকম হত। প্রচন্ড সুখ নিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিত মাসুদের মা,নিরা এবং মাসুদ। কষ্ট তাদের থেকে এক সময় বিদায় নিত। কিন্তু এমনটা হয় নিই কেবল একজন বাবার জন্যে। একজন মেরুদন্ডহীন শিক্ষকের জন্যে।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ

বাংলা গল্প| Bangla Love Stories| Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.

Next Post Previous Post
2 Comments
  • মি. হাবিব
    মি. হাবিব ৩১ জুলাই, ২০২০ এ ২:৫১ AM

    অসম্ভব সুন্দর,তবে মর্মান্তিক গল্প ।

    • Author
      Author ৩১ জুলাই, ২০২০ এ ১১:৫০ AM

      ধন্যবাদ

Add Comment
comment url