গল্পঃ সমাপ্ততার সমাপ্তি ।
"সমাপ্ততার সমাপ্তি "
জিবনটা যে এতটা বিষাদ ময় হবে তা আমার ভাবনার অনুকুলে ছিল না।জানি না,কোন জন্মে কি পাপ করেছি।ছোটবেলা থেকেই স্কুল এর মাস্টারমশাই বলতেন,
বাবা তাসফি তুই বড় ভাগ্যবান। দেখবি তুই জিবনে অনেক বড় হবি।
আজ মনে হচ্ছে কথাটা উনি মিথ্যা বলেছেন। নাহ!!!! গুরুজন তো মিথ্যা বলে না।হয়ত অনুমানে ভুল হয়েছে। নাহ তা কি করে হয়।
জিবনে যে এমন একটা সময়ের মুখোমুখি হতে হবে সে আমার অনুমেয় ছিল না।ভালোই তো ছিলাম।ভালো বললে ভুল হবে।অতিরিক্ত ভালো ছিলাম।যা স্বয়ং বিধাতাও মেনে নিতে পারে নি।তাই বলে মাকে?????
আচ্ছা একটু বেশিই না হয় ভালো ছিলাম তাই বলে আমার মাকে নিয়ে যেতে হবে।সেই সমাপ্তির শেষে, শুরুর দেশে।মায়ের অকাল মৃত্যু আমার উপর বিরূপ প্রভাব পেলে।আমার এই বিরূপ প্রভাব দাদা দাদির মাঝে ভ্রান্ত ধারনার সৃষ্টি করে।তাদের পিড়াপীড়িতে বাবা কে বসতে হয় পুনঃ বিয়ের পিড়িতে।বাবা প্রচণ্ড বিরুদ্ধাচারন করল এর প্রতি। প্রতিবাদ করল।কারন মায়ের স্থান আমার বাবা অন্যকাউকে দিতে চায় নি।তারই ফলশ্রুতিতে প্রতিবাদ করে। কিন্ত হার মানতে হয় তাকে।সমাজ বলে কিছু একটা ছিল তখন। দাদা দাদি কে রাজি করাতে পারলেও এই জঘন্য সমাজ থেকে তার মুক্তি হয় নি।বিয়েতে যাওয়ার আগে বাবা আমাকে ধরে অনেক কেঁদেছিল। এই প্রথম বাবাকে কান্না করতে দেখলাম।আমি তখন মাত্র নবম শ্রেণী তে।। বুঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার।নাহ, আমার শোৎ তেমন খারাপ ছিলেন না।আদর পেতাম যথেষ্ট। তবুও কোথাও যেন কিছু একটার অনুপুস্থিতি আমি অনুধাবন করতে পারিতাম। কিন্তু সেই জিনিসটা কি তা আমি আজও খুঁজে পাই নি।
বেশ কয়েক বছর পর,
যখন আমি মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রবেশ করব তখন তার কিছু মাস পূর্বে আমার একটা বোন হয়।কি বলব তার কথা।আমি সেদিন এত খুশি হলাম যা বর্ননার সাধ্যি আমার ছিল না।কিন্তু তারপর থেকেই মেয়ের আচরনে পরিবর্তন দেখা দিল।সৎ মা,তার মর্যাদা রাখিতে হবে না??আচ্ছা সব সৎ মায়েরা কি এক,,,,?উত্তর টা আমার এই ছোট বিদ্যা ভান্ডারে নেই।
মাধ্যমিকে উঠার পর রাগে, খোবে বাড়ি থেকে চলে আসলাম। আসার সময় বাবার ঘরে যখন গেলাম তখন কেমন জানি অপরাধির চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল।বাবার এই রুপ চাহনিতে আমার ভেতর টা জ্বলে যাচ্ছিল।আমার যাওয়ার কারনটা বাবা যথেষ্ট উপলব্ধি করতে পেরেছন।তবে কিছুই বলেন নি।
'
এখানে আসার পর বাবাই খবোঁজ খবর নিতেন। যদি আমার সাথে এই রূপ না ঘটতো তাহলে, বাবার ভালোবাসা কি বা বাবা যে এত ভালোবাসতে পারে তা আমি কখনই বোধ করতে পারতাম না।
দাদির মৃত্যু হয়। যাই নি।কেন জানি না,তবে আমার যেতে বিন্দু মাত্র ইচ্ছা হয় নি।বাবার বিয়েতে দাদির অবদানটাই বড় ছিল।যার কারনে তার প্রতি আমার সহানুভূতি কাজ করে না।রাগটাই কাজ করে।
বাবা যেতে বলছিল। যাই নি।এই কারনটাও বাবার অজানা ছিল না।আগে মা থাকলে উনি কেমন করে জানি বুঝে যেতেন। আমার মনে হয় মায়ের সব আদর, ভালোবাসা মহান বিধাতা বাবার মধ্যে প্রতিস্থাপন করেছেন।যাক সে দিকে আর যাচ্ছি না।।
মাঝখানে বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেছে।এরই মাঝে আমি আমার সৎ ময়ের পরিবর্তন দেখলাম। খানিকটা নয়, পুরোটাই অবাক হলাম আমি।যযেদিন আমাকে ফোন করে বলল, বাবা কেমন আছিস? সেদিন যে কত কান্না করেছি তা আমার জানা ছিল না।এই মায়ের পরিবর্তন এর কারনটা আমার জানা ছিল না।।।।
আমি বিসিএস টা কম্পলিট করে এখন আমি মেজিস্ট্রেড হিসেবে এইখানে আছি।আমি এখানে থাকতাম না।চাইলেই ট্রান্সফার হয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারতাম।থাকছি তার মুখ্যম কারন হল আমার ছোট বোন।।জানেন আমার ছোট বোনটার কথা আমার প্রায় মনে পড়ত।ওর হাজারো ছবি আমার রুমে আছে।না দেখেই ওর প্রতি আমার মায়া,ভালোবাসা জন্মালো।যে দিন প্রথম বাড়িতে গেলাম সেদিন ওকে দেখেই আমি জড়িয়ে ধরি।জবাবে পেয়েছি বোনের আদর মাখা একটা চড় আর কিছু বিধ্রুপাক্ত বাণী।আমি তাকে কোন সাহসে ধরেছি।কোন অধিকারে।আচ্ছা আপনিই বলেন নিজের বোনকে ধরতে কোন অধিকারের প্রয়োজন???? সে নাকি আমাকে ভাই হিসেবে মেনে নিতে পারে নি।এ কথা যে আমি কি ভাবে শ্রবণ করেছি!!!ওর প্রতিটি কথা আমার হৃদয়ে গেঁথেছে। বুকের কষ্টটা আরো দ্বিগুণ হয়ে গেল।যার ভালোবাসা পেয়ে ভেবেছিলাম নিজের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে আজ সে কি না আমার কষ্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিল!!বাবা মা বকেছিল। কিন্তু আমি পরে তাদেরকে বলি, ওকে কিছু না বলতে।।যখন দেখলাম সে বাড়িতে আমার বোনটা আমাকে মেনে নিতে পারছে না তখন ভেবেছিলাম ঘর ছেড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকব।কিন্তু আমার মতবাদটি বাবাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি।তাই আর যাওয়াও হয়ে উঠে নি।কিন্তু আমি এটা ভাবি নি যে তানহা (আমার বোন) আমি এখানে থাকার করনে ও ঘর ছেড়ে মেছে থাকবে। যদি এমনটা আমি আগে জানতাম তাহলে আমি এই ঘর থেকে আরো আগেই পরিত্যক্ত হতাম।
জানেন এত কিছুর মাঝেও ওর প্রতি আমার বিন্দু মাত্রও ঘৃণা জন্মায়নি। তারপর তো আপনি জানেনই।
:আপনি তানহা কে এতটা ভালোবাসেন?আর গাধিটা এর কিছুই না বুঝে শুধু আপনাকে কষ্ট দিয়ে গেল।
:আপনার কাছে আমার একটাই অনুরুধ ছিল।আসা করি না করবেন না,,,?
:হুম বলতে পারেন,,,
:আপনি সব সময় ওর পাশে থাকবেন আর ওর খবরাখবর আমাকে দিবেন।আর ওকে বলবেন না যে আমি সাথে যোগাযোগ রাখছি।
:হুম ঠিক আছে।
:ধন্যবাদ।
এই বলে চলে যাচ্ছিল তাসফি। কিন্ত নিশির ডাকে পিছনে পিরতে হয়।
:আপনার নাম্বারটা দিয়ে গেলে ভালো হত।
:ওহ সরি নাম্বারটা আমারই দেওয়া উচিত ছিল।
:ওকে সমস্যা নেই।বলেন, ,,
:হুম ০১৭........
..........
নাম্বারটা দিয়ে চলে আসে তাসফি। নিশির সাথে পরিচয় হয় তানহার মাধ্যমেই।নিশির সাথে দেখা করতে আসছিলাম তাদের কেম্পাসে।দেখা করতে না,দেখতে আসেছিলাম।সেদিনও কিছুটা অপমানিত হতে হয়েছে। আবাক করা বেপার হল ও আমাকে অপমান করলেও ওর প্রতি আমার বিন্দু মাত্র ঘৃনাও জন্মায় নি।কেন? তার উত্তর আমার অজানা।
বেশ কিছুদিন পর জানতে পারলাম যে কোন এক ছেলের সাথে তানহার নাকি প্রনয় হয়েছে। ভাবতেই সবা লাগে আমার ছোট বোনটা কারো সাথে রিলেসন করছে। কত বড় হয়ে গেছে ও।নিশির কাছ থেকে ছেলেটার কিছু তথ্য আমাকে দিয়েছে।খোঁজ লাগাম।
ছেলেটার এবাউট আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি।কিছু তথ্য আমাকে চিন্তায় পেলেছে।কি করব ভেবে পাচ্ছি না।নিশিকে ফোন দিয়ে দেখা করার জন্যে বললাম।
।।।।:
নিশিকে বলার পর ও
তো বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না।আমাকে বলল আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি ওর হাতটা ধরে নিয়ে গেলাম নিলক্ষেত।দেখালাম ছেলেটার আসল পরিচয়। ওকে বিশ্বাস করানোর পর বললাম তানহা কে বলতে।
""""""
দিনকয়েক পর নিশি জানালো ওর দ্বারা সম্ভব না।কিছুতেই বিশ্বাস করছে না ও।
আমি ভাবলাম আমি গিয়ে ওকে বলি।এটাই ছিল আমার বড় ভুল।এতটা খারাপ আমি,,?এত অপমান? এত অবহেলা? আর সহ্য হয় না।ছেড়ে চলে যাব এই চেনা শহরকে ছেড়ে।কি সমস্যা ওর। কেন ও এমন করছে? আমি তো বেশি কিছু চাই নি।ভাই হিসেবে বোনের ভালোবাসা পেতে চেয়েছি।এটাই কি আমার অপরাধ।যদি তাই হয় তাহলে এদের মাঝে থেকে আর কি লাভ।তাই চলে যাওয়াটাই শ্রেয় বলে আমি মনে করি।তবে ভাই হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।বাবা কে বললাম ওর খেয়াল রাখতে।বাবাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। বললাম ও যখন বুঝতে ও ভুল করেছে তখন ওকে মেন্টেলি সাফোর্ট দিতে।এসব কথা শুনার পর বাবা চল চল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।তারপর পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরল।তোর মত ছেলের বাবা হতে পেরে আমি গর্ব বোধ করি রে।আজ তোর মা বেঁচে থাকলে হয়ত তোকে এই দিন দেখতে হত না।আমায় ক্ষমা করে দিস রে, ক্ষমা করে দিস।আমি কিছু না বলে বাবাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। বাবা পুত্রের এই ভালোবাসা দেখে মায়ের নিশ্চই হিংসে হচ্ছে। হোক ভালো করে হোক।আমাদের কেন ছেড়ে গেল। তার শাস্তি এটাই।খুব বকা দিতে ইচ্ছে করে মাকে।ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সৎ মায়ের মুখ দেখেছিলাম।কি বিবর্ন তা চেহারায়।বিষন্নতায় ঘেরা।এই মুহূর্তে কেউ বলবে না যে সে আমার সৎ মা।
কেন জানি উনার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করতেছে। অপূর্ন রাখাটা মনে হয় ঠিক হবে না।আর এতে হয়ত উনি কষ্ট পেতেন।তাই জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু এই মায়ের শরির থেকে আমার মায়ের গায়ের গন্ধ আসছে।খুব অবাক হলাম।কত দিন এই গন্ধ টা পাই না।
""""""
আমার যেতে ইচ্ছা করছে না এখন।কিন্তু আমি যে যেতে বাধ্য।ঘর থেকে বের হয়ে আমি নিশির কথা ভাবলাম।কেন? তা জানা নেই।কাল রাতেই ওর সাথে কথা হয়েছে।বললঃ
:আপনি কি কালই চলে যাবেন?
:হুম।আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম তাই সরি। আর পাশে থাকার জন্যে ধন্যবাদ।
:সত্যি কি কাল চলে যাবেন।
ও মনে হয় আমার কথা শুনে নি।কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি তার মন খারাপ।কিছু একটা ভাবছে বা অন্য মনষ্ক।
:হুম। আমার বোনটার দিকে খেয়াল রাখবেন প্লিজ।
:না গেলে হয় না।
:এখানে থেকে কি করব?
:আমার পাশে থাকবেন।।।
:আপনার পাশে থাকব মানে ???
:কিছুনা। রাখি। বাই।
"বাই "শব্দ টা আমার কাছে কেমন ভেজা মনে হল।ও কান্না করছে না তো।করুক আমার কি? আমি কি কিছু বলেছি,,,,?
কিন্তু ও যে বলল ওর পাশে থাকতে!!! ওটার মানেটা কি,,,,? সারা রাত চিন্তা করলাম।হুম আসানুরুপ উত্তর টা পেলাম।কিন্ত তা সম্ভব না।তানহা আবার কি না কি ভাবে,,,,,
:ভাই জান নামেন চলে আসছি।
রিক্সাওয়ালা ভাই ডাক দিল।চলে আসছি স্টেশনে,??এত তাড়াতাড়ি???
ভাড়া টা চুকিয়ে বসে রইলাম নতুন শহর পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায়। কিন্ত ট্রেন টা আসছে না।খুব চাপা উত্তেজনা কাজ করছে নিজের ভিতর। মনে হচ্ছে অনেক কিছু পেলে যাচ্ছি।যা আমাকে পিছু পিরতে বাধ্য করছে।কিন্তু না নিজেকে শক্ত রাখলাম।
কিছুক্ষন পর আমার পাঁয়ের সামনে কারো দুই পার দেখলাম। পাঁ দুটি কে খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।খুব দুর থেকে অনেক কষ্ট করে কেউ একজন আসছে এখানে।মাথাটা উপরে তুললাম। বিষম টা খুব জোরেই খেলাম।তানহা। দু চোখ জলে চল চল করছে। খুব কান্না করতে করতে এসেছে।আমি খানিকটা বিব্রত বোধ করে দাড়িয়ে গেলাম।তখনি আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি অপ্রস্তুত ছিলাম।তানহাকে জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থায় ওর পিছনে নিশিকে দেখলাম ওর চোখও চল চল করছে।চোখ দু'টো ফূলে লাল হয়ে গেছে।ওখানে এখনো জল স্পষ্ট দেখলাম।আমার চোখ ভিজে আসছে।হুম কান্না করেই দিলাম।
রেলস্টেশন এর সবাই বেপারটা উপভোগ করছে।আবার কেউ খুব ব্যস্ত।কিন্ত আমার ট্রেনটা আমাকে না নিয়েই চলে গেল।