গল্পঃ ভালবাসা । লেখকঃ তাসিফ আহমেদ

গল্পঃ ভালবাসা 

লেখকঃ তাসিফ আহমেদ



এই গল্প গুলো না পড়াই ভালো বলে মনে করি। পুরনো লেখা বলে এগুলোতে অসম্ভব বানান ভুল। কখনও এডিট করিনি। রেখে দিয়েছি এভাবে, স্মৃতি হিসেবে।

কিছুদিন থেকেই একটা মেয়ে আমার পিছু নিয়েছে। নিয়েছে তো নিয়েছেই।আর ছাড়ার নাম গন্ধ নেই।ওই মেয়েটার জন্যে ফেবু তেও থাকতে পারি না।খালি মেসেজ দেয়।কি যে করি।।।
রাতে শুয়ে শুয়ে একথাগুলোই ভাবছিল তাসফি। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল ও।
:তাসফি। এই তাসফি। উঠ। জলদি উঠ।
:হুম
:জলদি উঠতে বলছি। নামাজ পড়তে হবে।
:এইত উঠতেছি।যাও তুমি।
ওর মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে
:উঠ বাবা।উঠ। জামাত দাঁড়িয়ে যাবে। নামাজ টা পড়ে আয়।পরে না হয় আবার ঘুমিয়ে নিবি।
পরম স্নেহে কথা টা বলল ওর মা।
তাসফি ওর মাকে খুব ভালবাসে।তাই তাড়াতাড়ি উঠে গেল।
নামাজ পড়ে ঘুমায় না তাসফি। করন তখন ওর ঘুম আসে না।তাই সকালের প্রাকৃতি দেখতে বের হয়। চারদিকে ঘুরে বেড়ায় ও।সকালের বাতাস টা ওর খুব ভাল লাগে।মনের সকল বিষন্নতা কেটে যায় তখন।
নাস্তা করে ভার্সিটির পথে পাঁ বাড়ায় ও।ভার্সিটি গিয়ে ক্লাস এ যায়।বন্ধুদের সাথে কিছুহ্মন কথা বলে।যথা সময়ে ক্লাস শুরু হয়।
লাষ্ট ক্লাস টা হবে না।তাই বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু করে। ভালই জমে উঠেছে ওদের আড্ডা।
বাসায় পেরার পথে
:ভাইয়া ভাইয়া দাঁড়ান।
:জি বলেন
:আমি ইফতু। আপনাদের এলাকাতেই থাকি।
:কই আপনাকে তো কখনই দেখি নাই।
:তা দেখবেন কি ভাবে। যে ভাবে হাঁটেন।আসে পাশে কি হচ্ছে তার কি খেয়াল রাখেন
:তা ডেকেছিলেন কেন?
:খুব তাড়া আছে নাকি?
:না তা না।তবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভাল লাগছে না।এমনিতেই যে গরম পড়তেছে। :আচ্ছা তাহলে চলেন। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।
:হুম তাই ভাল।চলেন।
:আমি আপনার ছোট ভাইয়া। তাই তুমি করে বললেই খুশি হব।
:আচ্ছা তাহলে তাই হবে।
:বাই দা ওয়ে আপনি ফেবু তে আমার মেসেজ এর আনসার দেন না কেন?
:আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে তুমি আছো না কি?
:হুম। "কাল্পনিক প্রেম "আইডি টা আমারি।
:ও তাহলে ওই বজ্জাত মেয়েটা তুমি ?
:কিহ আমি বজ্জাত?
:তা নয় তো কি।সারাদিন খালি মেসেজ দাও।পড়ালিখা কর কখন।
:তা আপনার না জানলেও চলবে। হুহ।
:আচ্ছা যাই।আমার বাড়ি এসে গেছে।
:এটা আপনাদের বাড়ি।
:কেন সন্দেহ আছে নাকি?
:না।সন্দেহ থাকবে কেন।
:বাই।
তাসফির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ডাক দিল
:তাসফি
পিছনে পিরল তাসফি।
:ভাইয়া। আমার মেসেজ এর আনসার দিবেন কিন্তু। তা না হলে খবর আছে কিন্তু।
এই বলে পালাল মেয়ে টা।
তাসফি ভাবছে মেয়েটা এত দুষ্ট হল কোথা থেকে। প্রথমে নাম ধরে ডাকল।তারপর ভাইয়া বলল।আর আজিব বেপার হল ও আমার নাম জানলো কিভাবে।
:কিরে ঘরে আসবি না?
আমি চমকে উঠে পিছনে পিরলাম।মা দাঁড়িয়ে আছে।নিশ্চই তিনি আমাদের কথাফোকথন শুনে পেলেছেন।
আমি ঘরে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে খেতে আসলাম। আমি জানি আমার মা খায় নি এখনো। মানুষ মাত্র দুই জন আমরা।তাই আমি আসলে আমার সাথে খায়।
খাওয়া শেষে আমি আমার রুম এ চলে আসলাম। কিছহ্মন পর মাও আসল। আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কি ভাল লাগছিল না।আমার মনে হয় আমার সারা জিবন এই কোলে থেকেই শেষ করে দিতে পারব।হঠাৎ মা বলে উঠল
:মেয়েটা কে রে?
:চিনি না মা।আমাদের ভার্সিটি তে নাকি পড়ে।
:তোর সাথে পড়ে?
:না।তবে কোন ইয়ারে সেটা আমার জানা নেই।
:সেকি তুই ওর থেকে জানতে চাস নি যে ও কিসে পড়ে?
:না মা।
:কেন?
:আমার ইচ্ছা হয় নি।
:তাই বলে জানতে চাইবি না ও কিসে পড়ে।
:আচ্ছা পরে জেনে নিতে পারব।এখন তুমি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও তো মা।
:আচ্ছা ঠিক আছে।
:
:
কি বেপার। উনি এখনো ফেবু আসেন নি কেন? আমার কথায় আবার রাগ করেন নি তো।রাগ করলে তো আমি শেষ হয়ে যাব। এইসব ভাবছে ইফতু। ও এবার অনার্স থার্ড ইয়ার এ পড়ে।ইফতু তাসফি কে খুব ভালবাসে। এক কথায় তাসফি কে অন্ধের মতন ভালবাসে। আজ ৫ মাস হতে চলল।তাসফির সম্পর্কিত সব তথ্য ওর কাছে আসে।ও যে তাসফি ক্র ভালবাসে এটা ওর বন্ধু তানহা ছাড়া আর কেউই জানে না।মেয়ে মানুষ তো তাই বলতেও পারে না।বুক ফাটাবে মাগার মুখ ফাটাবে না।
::
::
রাত সাড়ে এগারো টা। তাসফি ফেবু তে ডুকল।সাথে সাথে ইফতুর মেসেজ এসে হাজির।
:কি বেপার আজ এত দেরি করে আসলেন যে।
:এমনি।কিছু পড়া বাকি ছিল।সেগুলা কাবার দিলাম আর কি।
:ওওওও
:আচ্ছা আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
:শুধু নাম না।আরও কত কিছু জানি আপনার সম্পরকে।।।।
:কিভাবে?
:হবে কোন এক ভাবে।ডিনার করছেন,
:হুম।আপনি,,?
ওদের মধ্যে অনেকহ্মন কথা হয়।তাসফি ইফতু এর সম্পর্কীয় সকল তথ্য জানে এখন।।ওদের কথা দিন দিন বাড়তে থাকে।এই কয় দিনে তাসফি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে যে ইফতু কি বলতে চায়।কিন্তু ও এসব কিছুই শুনতে চায় না।ওর এমন এক জন কে চাই যে ওর মাকে হাসি খুশি রাখতে পারবে।ওর মাকে কখনই অবহেলা করবে না।আর এগুলা এই মেয়েকে দিয়া হবে না।অন্তত পহ্মে এই এক মাসে এটা বুঝতে পেরেছে। তাই ঈ চাচ্ছে যে ওই মেয়েকে সব জায়গা হতে ব্লক করে দিবে।কোন যোগাযোগ রাখবে না।মেয়েটা কে ওর খুব ভাল ল লাগত।কিন্তু কিছুই করার নেই। খুব ছোট বেলায় ভাবাকে হারায় ও।তারপর থেকে এই মাই ওকে এত বড় করে তুলেছে।তাই ও দুই বছরের সম্পর্কএর জন্যে ২৮ বছরের সম্পরক নষ্ট করতে চায় না।।ওর মাকে ও বৃদ্ধা আশ্রমে পাঠাতে চায় না। (এমন সন্তান বাংলার প্রত্যেক ঘরে থাকা আবশ্যক) মায়ের সুখের জন্য শুধু এই মেয়ে না।আরও অনেক মেয়েকেই এভাবেই ব্লক করে দিছে নিজের জিবন থেকে।
মেয়েটা কে ব্লক মারতে ওর হাত টা কেন যানি কেঁপে উঠল।ও ভাবল ও কোন ভুল করেছ না তো।পরহ্মনে এই সব চিন্তা বাদ দিয়ে ও ব্লক মেরে দিল
:
:
ইফতু যাথ রিতি তে ভার্সিটির পথে পা বাড়ালো।কিন্তু আজ আর পথে তাসফির সাথে দেখা হয় নি।ও ভাবল হয় তো ও আগে চলে গেছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ভার্সিটি তে উনি নেই।তাড়াতাড়ি করে ফেবু তে ডুকল।কিন্তু ও যখন দেখল ওকে ব্লক মারছে তখন ওর ভেতর এক অজানা ভয় কাজ করল। চারদিক যে অন্ধকার হয়ে আসল। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে বাঁধাহিন ভাবে পানি পড়তে শুরু করে।
।কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পড়ল। নিজেকে সামলে বাড়িতে চলে আসল।রুম এর দরজা বন্ধ করে বালিশের উপর মুখ চেপে কান্না করতে থাকল।যে কান্নার আওয়াজ এই চার দেওয়াল এর ভিতরেই থাকবে।কেউ শুনতে পাবে না এই কান্নার আওয়াজ। আজ এক সপ্তাহ ও ভার্সিটি যায় না।ঘর থেকেও বের হয় না।কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলে না।ওর মায়ের সাথেও ঠিক মতন কথা বলে না।
আজ তানহা আসল ওকে দেখতে। আসলে তানহাও খুব অসুস্থ। তাই এত দিন আসতে পারে নি।এসেই বন্ধুর এই অনুকুল অবস্থা দেখে জড়িয়ে ধরল। ইফতুও ওকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়ল।
:কাঁদিস না বোন।সব ঠিক হয়ে যাবে।কাঁদিস না।
ও শুধু কান্নাই করতেছে।
::
২য় অংশ (শেষ)
তাসফি রুম এ বসে আছে।নিজেকে কেমন জানি অপরাধী মনে হচ্ছে।কিন্তু ও বা কি করবে।হঠাৎ ওর মা জিজ্ঞাস করল
:কিরে ইফতু কে এই কয়দিন দেখলাম না যে।কি হাল মেয়েটার।খোঁজ খবর রাখিস কিছু ওর।
:না মা।কোথাকার কোন মেয়ে।তার খবর আমি রাখব কেন,,,?
: কিই? ও না তোর বন্ধু। তুই আর ও মিলে তো প্রতি দিনই এক সাথে ভার্সিটি যাচ।
:না মা আসলে আমি ওর সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।
:কেন?
:মেয়েটা মনে হয় আমাকে ভালোবাসে। তাই ওর সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।
:আমার এখন কি করা উচিৎ জানিস?
:কি?
:তোর গালে কয়েক টা চড় দিতে।
:কেন?
:তুই জীবনে ভুল করলে এই একটাই ভুল করছিস। । আমি জানি তুই আমাকে ভালবাসিস।তুই আমাকে কতটা ভালবাসিস এটা আমার থেকে বেশি আর কেউই জানে না।আর মেয়েটা তোকে কতটা ভালবাসে এটাও আমার থেকে বেশি কেউই জানে না।।আচ্ছা তুই কি ওর চোখ দেখেও বুঝিস নি যে তোর জন্যে ওর মাঝে কত ভালবাসা ছিল।
:তুমি জানো কিভাবে মা?
: মেয়ে মাঝে মাঝেই আমার সাথে দেখা করতে আসত।আমাকে চা বানিয়ে খাওয়াত।দুজনে বসে বসে গল্প করতাম। তুই আসার আগে ও চলে যেত।
:তুমি তো আগে আমাকে এ কথা বলনি।
:ইফতু মানা করেছে বলতে। তাই বলি নি।
:তুমি জানো মা আমি কেন ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছি।
:পাগল একটা। আমি জনব না তো কে জানবে।ভাবিস না মেয়েটা আমাকে যথেষ্ট ভাল রাখবে।
:কিন্তু আমি এখন ওর সামনে যাব কিভাবে,,,,,?
:সেটা তোর বেপার। আমি কিছুই জানি না।তুই থাক আমি গেলাম।
মা চলে গেল।এখন কি হবে। মেয়েটাকেও আমি যথেষ্ট ভালবেসে পেলেছি। খুব মিস করছি এই কয় দিনে।যাক মায়ের পছন্দ হয়েছে এটাই বড়।এখন চিন্তা হচ্ছে মেয়েটা কে নিয়ে। কিভাবে যে মেয়েটা কে মানিয়ে নিব।যাক আজ ঘুমাই।কাল দেখা যাবে।
ভার্সিটি আসলাম এক মাত্র ইফতুর জন্যে। ওকে যে কই পাই।ওদের ডিপার্টমেন্ট তন্ন তন্ন করে খুজলাম।কিন্তু পেলাম না।হঠাৎ দেখলাম তানহা আসতেছে। সাথে ইফতুও আছে।কিন্তু ওর চেহারা এমন হল কিভাবে।নিজের মধ্যে অপরাধী বোধ কাজ করল।
আমি ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তানহা আমাকে দেখা মাত্রই কেমন করে যেন তাকাল।এটাই স্বাভাবিক। তানহা কে ইসারা করলাম চলে যেতে।ও চলে গেল না।একটু দুরে গিয়ে দাঁড়াল।
আমি ও ইফতু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।নিরাবতা ভেংগে আমি বললাম
:দেখ ইফতু তোমার রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আসলে আমি এমন একজন কে চাচ্ছিলাম যে আমার থেকে আমার মাকে বেশি ভালবাসবে।আমি ভাবছিলাম তুমি তা পারবে না।কিন্তু তুমি আমার আড়ালে আমার মায়ের জন্যে এত কিছু করেছ যে আমার মা এখন তোমাকে নিজের মেয়ের মতন ভালবাসে। তুমি জানো আমি আমার মাকে কতটা ভালবাসি।উনার জন্যে তুমি কেন আমার জান টাও দিয়ে দিতে পারি।
কিছুক্ষণ নিরবতা।
"
:আমার অজান্তেই আমি তোমাকে ভালবাসতে শুরু করি।কিন্তু কখনো প্রকাশ করি নি।বিশ্বাস কর এত দিন আমিও ভাল ছিলাম না।কাল যখন মা তোমার কথা বলল তখনি বুজলাম তুমি এক মাত্র মেয়ে যে কি না আমার মাকে ভাল রাখতে পারবে।
"
:আমি জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য। তবুও বলছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
অন্তত আমার মায়ের জন্যে। প্লিজ প্লিজ। এটা বলেই কান্না শুরু করে দিল তাসফি।
কিছুক্ষণ পর ইফতু এসে তাসফির হাত দুটি নিজের দু হাতের মাঝে নিয়ে বলল
:আমাকে ছেড়ে যাবে না কখনো প্লিজ।তাহলে আমি মরেই যাব।তুমি যা বলবে আমি তাই করব।তবুও আমাকে ছেড়ে যাবে না প্লিজ।
:এই যে তোমার হাত ধরলাম।আমার প্রাণ থাকতে এই দুই হাত ছাড়ব না।
:মনে থাকে যেন।
:হুম মনে থাকবে।
" " """ " " """
:কিরে রুমে যাবি না নাকি?
ভাবনার রাজ্য হতে বের হল তাসফি। কিছু একটা চিন্তা করে তাসফি ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল
:আমি খুব ভাগ্যবান যে তোমার মত একটা মা পেলাম।তুমি হচ্ছো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা।আই লাভ ইউ মা।
:হুম হয়েছে যা।ঘরের ভিতরে আরেক জন বসে আছে একা একা।যা
:ওকে মা যাচ্ছি।
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
বাসর রাতের কাহিন বলব না।
( বিয়ের পর বুঝলাম যে মেয়েটা আমাকে কত টা ভালবাসে। কিন্তু আমি কখনই ওকে বলি নি যে আমার কি কি পছন্দ।আমার ভাল লাগা খারাপ লাগা সব জানে ও)
:এই উঠ।তাড়াতাড়ি উঠ। (ইফতু)
:হুম(আমি)
:কি হুম উঠতে বলেছি। উঠ।
:হুম
:আবার হুম?
:তুমি যাও আমি উঠতেছি।
:আমি কই যাব,,,?কি বলতেছ এগুলো। উঠ। তা না হলে কিন্তু আমি অন্য উপায় ভেবে নিব।
:না থাক লাগবে না।আমি উঠে গেছি।এবার বল ডেকেছ কেন?
:কেন মানে? তুমি জানো না এ সময় কেন ডাকি।
:বুঝেছি
একথা বলেই হাই তুলতে তুলতে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
কিন্তু ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।এমন ভাবে তাকাল যেন আমি এমন টা করতেই পারি না।কিন্তু ও কিছুই বলল না।
আমি অজু করে নামাজ পড়তে চলে গেলাম।আমি প্রতিদিন নামাজ পড়ে ঘরে যাই।আজ যাই নি।একটু হাটা-হাটি করে ঘরে গেলাম। ইফতু জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকাল। কিন্তু কিছুই বলল না।এই মেয়ের এই এক সমস্যা। কিছুই জিজ্ঞাসা করে না।শুধু তাকিয়ে থাকে।।তাই আমার ওর চোখ বলতে হবে ও কি চায়। এমন ওর সাথে কথা ছিল।কথাটা হল,
"তোমার কাজকর্ম নিয়ে আমি তোমাকে কিছুই বলব না।কিন্তু আমার প্রতিদিনকার ভালবাসা আমাকে বুজিয়ে দিতে হবে। "
তাই তো কিছুই বলছে না।যা বলার রাতে বলবে।আর আমিও তার অপেক্ষায় আছি।
বারান্দায় চেয়ারে বলসলাম।একটু পর চা নিয়ে হাজির হয়েছে উনি।আমি চা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম। এ আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে অবাক দৃষ্টি তে।
কিছুক্ষণ পর নাস্তা করে অফিসের পথে পাঁ বাড়ালাম।পিছনে তাকিয়ে দেখলাম দরজার হাতল ধরে দাড়িয়ে আছে করুন দৃষ্টি তে।কিছু না পাওয়ার বেদনায় ওর বুকটা হা হা কার করছে এমন ভাবে তাকাল।মনে হয় একটু পরেই কান্না করে দিবে।আমারও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কি কিছুই করার নেই।
আমার রুম এ আমি চুপ চাপ বসে আছি।ওর কথাই ভাবতেছি। এমন সময় ওর ফোন।প্রথম বার ধরলাম না।আবার দিল ধরলাম
:হুম বল।(আমি)
:অফিসে আসছ?
কন্ঠ টা শুনেই আমার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল। নিজেকে সামলে বললাম
:হুম আর কিছু বলবে?
:খুব ব্যস্ত মনে হয়।
:হুম কাজের খুব চাপ।(যদিওবা তেমন কাজ নেই) কিছু বলবে?
:নাহ কি বলব।
:তাহলে রাখি।বাই।
মেয়েটা খুব চাপা স্বাভাবের। কষ্ট গুলো প্রকাশ করে না কখনো।
কিছুক্ষণ পর মায়ের ফোন আসল।
:হ্যাঁ মা বল।
:বউ মায়ের সাথে তোর কিছু হয়েছে,,?
:না তো।হঠাৎ এই প্রশ্ন?
:না আসলে দেখলাম ওর মনটা খারাপ।
:এখন কই?
:দরজা বন্ধ করে বসে আছে রুমে।
:একটু খেয়াল রেখ মা।যেন কিছু না করে পেলে
:আচ্ছা ঠিক আছে।
মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। ভাল লাগছে না ।কি যে করি।কাজেও মন বসছে না।
৫ টা বাজে।বাড়ির পথে পাঁ বাড়ালাম। অন্যদিন যাই ৭ টা বাজে। আজ একটু তাড়াতাড়ি যাচ্ছি।শপিং করতে হবে কিছু। প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনে বাড়িতে আসলাম।ঘরে না গিয়ে গেলাম ছাদে।আরাফাত কে ফোন দিলাম।
৮:৩৯ ঘরে গেলাম। প্রতিদিনকার মতন আজও ইফতু ই দরজা খুলল।
হায় হায় একি অবস্থা হল ওর।ইচ্ছা করছে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। কিন্ত তা না করে রুম চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বলসলাম। এমন সময় সামনে চা হাজির। চা দিয়েই পাশে দাড়িয়ে আছে।অন্যদিন হলে পাশে বসত।কিন্তু আজ বসে নি।বুকের বাম পাশটা খুব বেথ্যা করছে। ওর দিকে তাকাতেও পারছি না।
'
রাতের খাওয়া খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি শুয়ে আছি দেখি ও শুয়ে পড়ল।আমি সিউর ও কান্না করছে। আমারও ঘুম নেই ওর ঘুম নেই।
১১ :৩০ বাজে। আমি উঠে গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম। আমি উঠছি দেখে ও চোখ বন্ধ করে পেলল।কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে। আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওকে উঠালাম।কিছুটা না পুরাই অবাক হল ও।বললাম ওখানে একটা শাড়ি আছে।ওটা পরে ছাদে চলে আসবা।ঠিক ১১টা ৫৯ এ।
ছাদে দাড়িয়ে আছি।যে অন্তিম সময়ের জন্যে আজ এত কষ্ট। সেটা আসতেছে।
কি ভাবছেন আজ কি এমন দিন যার জন্যে এত আয়োজন। আজ ওর জন্মদিন। একটা সারপ্রাইজ এর জন্যে এত কিছু।যার জন্যে দুজনেই এত কষ্ট পেলাম।আসলে ভোরে ঘুম থেকে উঠলে প্রথমে ওকে জড়িয়ে ধরতে হবে।নামাজ পড়ে তাড়াতাড়ি ঘরে আসতে হবে।তারপর ও চা দিবে।কিন্ত চায়ে প্রথম চুমুক ওই দিবে।তার পর আমি খাব।অফিস যাওয়ার আগে ওর কপালে একটা চুমু দিতে হবে। অফিস গিয়ে ও ফোন কিছুক্ষণ পর ফোন দিতে হবে।কিন্ত প্রথমে ও ফোন দিবে।অফিস থেকে আসার পর ওর কপালে চুমু দিতে হবে।দুজনে এক প্লেটে ভাত খাব।সেখানে আজ আমি একা খেয়েই চলে আসলাম। ও খেয়েছে কি না।জিজ্ঞাসাও করি নি।কত টা নিষ্ঠুর হতে হয়েছে আমাকে কারন পুরা দিন কষ্টের পর দিনের শেষে ওর মুখে একটু হাসি ফুটবে। যা দেখার জন্যে আমি অনেক আগ্রহে নিয়ে বসে আছি।আমি আর মা ছাদে দাড়িয়ে আছি।মা ডেকে বলল
:তাসফি বউ মা আসছে।
:রেডি হও মা।
অন্ধকার। ও ছাদে আসল।বাতি জ্বলে উঠল। দুইটা কন্ঠ মিলে বলা হল
happy birthday to u.happy birthday to u dear iftu.happy birthday to u.
আর কোন কথা নেই। সোজা এসে আমার বুকে।অজোর ধারায় কান্না শুরু করল।
:এই কি করছ। মা আছে না।
আমাকে ছেড়ে নিজেকে সামলে নিল ও।তারপর কেক কাটল।প্রথমে মাকে খাওয়াল তারপর আমাকে।মা তো আনন্দে কান্নাই করে দিল।
:তোরা দুজন একজন অপর জন কে সারা জিবন এভাবেই ভালবাসিস সে দোয়াই করি।
এ কথা বলে মা চলে গেল।
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি।যাক শেষ মেষ আমি আমার কাজ সম্পন্ন করতে পারলাম। অহ কি ধকল নাই গেল।কপাল টা একটু মুছে নিলাম। ইফতুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।কি বেপার রাগার মত তো কিছুই করি নি।এক পাঁ পাঁ করে আমার দিকে আগাল আর আমি এক পাঁ করে পিছাতে থাকলাম। রেলিং এর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর যেতে পারছি না।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ শার্ট এর কলার ধরে বলল
:এত কষ্ট দিলে কেন হ্যাঁ।
:তোমার খুশির জন্যে।
:জানো আমি কত কষ্ট পেয়েছি।
:আমি মনে হয় পাই নি।
:অত কিছু বুজি না।পুরা দিনের ভালবাসা আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর কিছুই চাই না।
:খুব ভালবাস আমায় তাই না।
:কেন তুমি জানো না?
:হুম খুব জানি।পাগলি টা আমাকে কত টা ভালবাসে।
:আমার ভালবাসা আমাকে এখন দিতে হবে।জানো সারা দিন তোমায় একটু ধরতেই পারি নি।এত কষ্ট দিলা কেন। আজ খবর আছে তোমার ।এই বলে
কলার ছেড়ে এবার পায়ের উপর দাড়াল।দুই হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরল।
দুজনেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করল।ওর ঠোট টা কেপে উঠল।লাইট টাও নিবে গেল। দুজনেই হারিয়ে গেল ভালবাসার দেশে। চরম এই সিন টা মিস করল চাঁদ টা।তারাও নেই আকাশে।পাখিরাও ঘুমিয়ে আছে।পুরা শহর ঘুমন্ত। একমাত্র অন্ধকারই এই পরিবেশ টা উপভোগ করছে।


(ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)
তাসফি আহমেদ



Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url