দ্বিতীয় গল্প
দ্বিতীয় গল্প
তাসফি আহমেদ
'দ্বিতীয় গল্প' নামটা দেখে ভাববেন না এটা গল্পের নাম। নাম নয়৷ ছোট্ট একটা হেডিং। আমার জীবনে লেখা দ্বিতীয় গল্প এটি৷ প্রথমটি ডিলিট করে দিয়েছি৷ আমি কাউকেই এই গল্প পড়তে বলি না৷ কারণ গল্পটায় প্রচুর ভুল আর ন্যাকামো রয়েছে৷ অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ চয়ন রয়েছে৷ গল্পে প্রাণ নেই। গল্পটাকে আমি এভাবেই রেখেছি৷ কোনো এডিট করিনি৷ আজও যখন এই ভুলে ভরা গল্পটা পড়ি, ভীষণ হাসি পায়৷ লজ্জা লাগে৷ আশ্চর্য! আমি এমন লিখাও লিখেছি। 😄 । যাই হোক৷ এটাকে জমা রাখলাম এখানে৷ স্মৃতি হিসেবে৷
আমি তাসফি।থাকতাম গ্রামে।গ্রামের একটা ভালো কলেজ থেকে HSC পাস করি।খুব ইচ্ছা ছিল শহরের একটা ভালো কলেজে HSC পড়ব কিন্তু সবার তো আর সব ইচ্ছা পূরণ হয় না।আসল কথা হল আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না।তাই আমার ইচ্ছা টা পুরন হল না।পড়ালিখায় খুব ভালো ছিলাম। তাই গ্রামের কলেজ থেকেও খুব ভাল রেজাল্ট করলাম। ইউনিভার্সাল ভর্তি হওয়ার পালা। হলাম ভর্তি। আমার এখন একটাই উদ্দেশ্য । পড়া লিখা শেষ করে একটা ভালো চাকরি করে আমাদের আর্থিক অবস্থা ঠিক করা।যাক ভার্সিটি যাই প্রতিদিন। রেগুলার ছাত্র হওয়ার কারনে শিক্ষক দের কাছে ভাল পিরিচিত লাভ করলাম।এভাবেই দুই বছর পার করে দিলাম।এখন আমি দুই তিন টা টিউশন করি।ওই টাকা গুলা আর বাবা যে টাকা দেয় তা দিয়েই মোটামোটি চলে যায় দিন।এবার থার্ড ইয়ারে।থার্ড ইয়ারে উঠার পর আমার কেমন জানি মনে হল চার টা চোখ আমার পিছনে লেগে থাকে। মানে ২জন মেয়ে আমাকে ফলো করে।ও আপনাদের তো বলতেই ভুলে গেছি যে আমি এখানে একটা মেছে উঠেচি।মেছ থেকে ভার্সিটি বেশি দুরে না।ভার্সিটি থেকে আসার সময় ওরা আমাকে ফলো করত।আমার আবার ভালোবাসার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট ছিল না।আমার মতে ভালবাসা টালবাসা বলতে কিছুই নাই। আমি । আমি বাস্তব বাদি বা বাস্তবে বিশ্বাসী ছিলাম। কারন আমাকে আমার বাবা মা সে ভাবেই গড়ে তুলেছেন।জিবনে অনেক কষ্ট করেছি।বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে আমি এতদুর পর্যন্ত এসেছি।তাই আমি সব সময় ওদের কে এড়িয়ে চলতাম।কিন্তু একদিন মেয়ে ২ই টাআমার সামনে এসে দাড়াল।তাদের একজন আমাকে প্রপোজ করে।আমি সরাসরি না করে দি।তারপর সেখান থেকে চলে আসি।পরে জানতে পারি মেয়েটার নাম জুই।আর তার সাথে তার বান্ধবী ছিল।তার নাম তানহা।রুপের বর্নান দেওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করি না।কারন রুপের মাঝে নয় মানুষের মনের মাঝে তার আসল পরিচয় থাকে।আমি মানুষের রুপ কে নয় তার মন কে ভালবাসি।তো জুই প্রতি দিনই আসত। তার ভালবাসার দাবি নিয়ে।আমি বার বার ওকে পিরিয়ে দিতাম।কিন্তু ও তবুও আসত। এক সময় আমি ওর মায়ার জালে আটকে যাই।শুরু হয় আমাদের নতুন পথ চলা।শেয়ারিং, কেয়ারিং, রাগ,অভিমান এর মাঝেই চলছিল আমাদের পথ চলা। আমি ওকে অনেক কিছু গিপ্ট করতাম। । কিন্ত কয়েক মাস পর একটা কাহিনি ঘটে। জুই এর বান্ধুবি তানহা এসে যা বলল তা শুনে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।ও এক দিন আমার পথ আটকে দাড়াল।আমাকে বলল,
তানহা:ভাল আছেন
আমি:হুম।আপনি?
:এইত ভাল।আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল।
:বলেন?
:আসলে কথা গুলা আপনি কিভাবে নিবেন তা জানি না তবে যা শুনবেন তার সবই সত্যি।
:কি বলেন।জুই এর কিছু হয়েছে?কি হল বলেন না কেন?
:আসলে জুই আপনার সাথে এত দিন প্রেম এর অভিনয় করেছে।ও অনেক গুলা ছেলের সাথে এরকম প্রেমের অভিনয় করে।ও আসলে,,,,,,,,,,,,,,,,,, (আমি তানহা কে থামিয়ে বললাম
:ওয়েট ওয়েট ওয়েট।আপনি বলতে চাচ্ছেন যে জুই আমার সাথে এত দিন আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে।
:হুম।ও আসলে অনেক খারাপ।ও আপনাকে ঠকা,,,,,,,,,,,,,,,,(আর বলতে দিলাম না।ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় ওই মেয়ে টাকে।
:আনেক বলেছেন, আর না।আআপনার সাহস কি করে হয় যে আমার জুই এর সম্পর্কে বাজে কথা বলতে।আপনি আসলে ওর বেস্ট না কি।আসলে আপব পালতু।বেয়াদব মেয়ে।,,,,,
আরও অনেক কিছু বলছি ওই বেয়াদব মেয়ে কে।একপ্রকার অপমান করে চলে আসলাম। আসলে ওই পাজিল মেয়ে টা কে প্রথম থেকেই দেখছি যে আমার দিকে হাবলার মতন তাকিয়ে থাকে।আর আজ এসে বলে কি না আমার জুই খারাপ।আমি এই বেপারে জুই কে কিছুই বলি নাই।কারন জুই আর ওই মেয়েটা খুব ভাল বন্ধু। অন্তত জুই এর দিকে তাকিয়ে ওই মেয়েটার কথা বলি নি।জুই ছিল আমার ১ বছর ছোট।ওর ডিপার্টমেন্ট আর আমার ডিপার্টমেন্ট ছিল ভিন্ন।তাই দেখ কম হত।মোবাইল এ কথা হত বেসি।
কিছু দিন যাওয়ার পর জুই এর বন্ধু তানহা আবার আসল। তার একি কথা জুই নাকি খারাপ।এই সেই হেন তেন।আমি শুধু ওকে বলেছি যে "তোকে যেন আমি আর আমার সামনে না দেখি।আরে তুই ওর বন্ধু নামে কলংক।আজ ওকে আমি ওনেক অপমান করলাম।ও শুধু বলল
:যে দিন বুজবেন সে দিন পস্তাবেন। শুধু একটাই কথা বলব সে দিন নিজেকে শেষ করে দিবেন না।কারন আপনার জন্যে হয়ত অন্য কেউ অপেক্ষা করবে।আপনার কিছু হলে হয়ত সে বাঁচবে না।
একথা বলেই ও কান্না করতে করতে ওখান থেকে দৌড়ে চলে গেল।
এখন বুজতেছি যে ও এতদিন কেন আমার জুইর নামে মিথ্যা কথা বলেছে।বেয়াদব মেয়ে।আর একটু কিছুক্ষণ থাকলে ওরে আরও দুই টা চড় মারতাম। সেখান থেকে ফিরে জুই কে ফোন দিয়ে শুধু বললাম যে তানহার সাথে আর যেন কথা না বলে।এতটুকু বলেই আমি ফোন টা কেটে দিলাম।এখন মেজাজ গরম, তাই একটা ঘুম দেয়া খুব দরকার। তাই দিলাম একটা ঘুম। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম কতগুলা কল আসছে।আমার জুই কত গুলা ফোন দিল।কে বলেছে আমার জুই আমাকে ভালবাসে না।আমার জুই আমাকে অন্নেক লাভ করে।
এভাবেই চলছিল দিনকাল।কিন্তু একদিন জুই আমাকে কল করে দেখা করতে বলল।খুব জরুরি।আমিও বললাম ঠিক আছে।আসলে এ কয়েক দিন আমাদের দেখা হয় নিতাই আমিও খুব সাজুগুজু করে আমার জান পাখির সাথে দেখা করতে গেলাম।ওই তো আমার মহারানি বসে আছে।গিয়ে বললাম
:কি হয়েছে মহারানি।হঠাৎ এত জরুরি তলব।।।।।।।।
:,,,,,,,,,,,,
:কি হল কথা বলতেছ না কেন?
:,,,,,,,,,,,,,,,
:এই জানু রাগ করেছ।কি হয়েছে বল না (এটা বলে ওর হাত টা ধরলাম।কিন্তু ও ওর হাত টা চাড়িয়ে নিল।রাগি লুক নিয়ে বলল)
:তুই আমাকে এই দুই মাসে কোন গিপ্ট দিচস?
:না
:কথাও ঘুরতে নিয়ে গেছস?
:না। কিন্তু তুমি এগুলা বলতেচ কেন।আর তুই করে বলতেচ কেন।
:ওই তরে তুই নয় ত কি করে বলব।সালা পইন্নি।তোর মতন পইন্নির সাথে প্রেম করে আমি জিবনে অনেক ভুল করেছি।আর যা তা বলল।
:কি???তোমার সাথে আমার টাকার সম্পর্ক। আমি তোমাকে ভালবাসি জুই।
:কছুর ভাল বাসা।আমি চাই না তোর এই ভালবাসা। তোর সাথে আমার আজই ব্রেকআপ।একথা বলেই আমার সামনে থেকে চলে গেল।
আর আমি পুরা থ হয়ে গেলাম।কিছুখন আগে আমার সাথে কি হল সেটাই ভাবতেছি।
আমি ওখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা এসে আমার পাশে থামল।আমি তাকিয়ে দেখি জুই আর একটা ছেলে হাতে হাত দিয়ে রিকশা তে বসে আছে। তখন আমার বুকের ভিতর যে কেমন হচ্ছিল তা আমি বলে বুজাতে পারব না।জুই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
২ অংশ
:আমার নতুন বফ। দেখ তোর থেকে কত স্মার্ট। ওদের অনেক টাকা।তোর মতন পইন্নি না।বলে আবার তাচ্ছিল্যর সুরে হাসি দিয়ে চলে গেল।
আমি রুম এ আসে কান্না করতে লাগলাম।এই সেই জুই যাকে আমি এত ভালবাসছিলাম। যার জন্যে আমি তানহার কে কত অপমান করলাম।আজ তানহার কথা মনে পড়তেছে।এটা ভেবে আমি আর কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিলাম।আমার বুক যেন ফেটে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ এর জন্যে মনে হল আমার বেছে থাকাটাই বৃথা। কিন্তু না আমাকে বাঁচতে হবে।আর কারও জন্যে না হোক।শুধু আমার পরিবারের জন্যে বেছে থাকতে হবে।কিন্তু তানহা।আসলেই ও ঠিক ছিল।আর আমি ছিলাম জুই নামক প্রতারকের প্রেমে অন্ধ ছিলাম।এখন কিভাবে আমি ওকে গিয়ে সরি বলি।সরি বলারও মুখ নেই আমার।।প্রায় ১০ দিন ভার্সিটি যাই নি।বাড়ি তে গেছিলাম। মা বাবার সাথে থেকে নিজেকে খুব হালকা মনে হল।তাই চলে এলাম।পরের দিন ভার্সিটি গেলাম।আমার এক বন্ধু এসে আমাকে জিজ্ঞাস করল এত দিন কথায় ছিলা।আমি বললাম বাড়ি তে গেছিলাম।ও বলল
তুই যাওয়ার পর থেকে ই একটা মেয়ে প্রতিদিন তোর খোজ নিত।তোদের মেছের সামনে প্রতি দিন তোর জন্যে অপেক্ষা করত।আর শুধু কান্না করত।
আমি ওকে কিছু না বলে চলে আসলাম। কেম্পাসের একটা নিরিবিলি জায়গায় চুপ চাপ বসে ছিলাম।আর ভাবতে থাকলাম যে একটা কিভাবে এত টা ভালবাসতে পারে।ওকে আমি কত অপমান করলাম।আর ও কিনা আমার প্রতিদিন খবর নিত।জিবনে ভুল করলেই হয়ত এটাই সবচেয়ে বড় ভুল করলাম।এগুলা ভাবতেই কখন যে চোখের পানি চলে আসল। হাত দিয়ে পানি গুলা মুছলাম।পাই গুলাও খুব অবাধ্য।
:আর কত কান্না করবেন ?????
(কথা টা শুনে আমি আমার পাশে তাকালাম। তানহা।কিন্তু ও কখন আমার পাসে আসল।) কিছু বললাম না।ওর দিকে একবার তাকালাম। কি চেহারা বানিয়েছ এ কয় দিন এ। চোখ গুলা লাল হয়ে আছে।মুখটা সুকিয়ে কি হাল করেছে।।আমি আবার আমার চখ সরিয়ে নিলাম।নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার চখ দিয়ে শুধু পানি পরতেছে।
:কি হল কথা বলতেছেন না কেন?
:কি বলব আমি এখন। আমার যে কিছু বলার মুখ নেই।(কান্নার সুরে)
:কে বলছে নেই।অনেক কিছু আছে বলার। কি হাল করেছেন আপনার চেহারার।মুখ ভরতি দাড়ি।কয় দিন হয়েছে শেব করেন না।(কান্না জড়িত কন্ঠে)
:আমাকে মাফ করে দাও plz.আমি খুব বড় একটা ভুল করেছি। আমাকে মাফ করে দাও। plz plz plzzzzzzzz. (কান্না করতে করতে)
:আরে আরে কি করছেন।। আমি ত আপনাকে মাফ করব কেন?আপনি ত ভুল করেন নি।আপনার জায়গায় থাকলে আমিও এমন করতাম।আসলে আপনার ভালবাসা ছিল রিয়েল। আর জুই,,,,,(ওকে থামিয়ে)
:ওর নাম আর মুখে নিবেন না plz.এই নাম শুনলে আমার এখন ঘৃনা হয়।
:আচ্ছা।ঠিক আছে।জানেন আপনাকে আমি সেই প্রথম থেকেই ভালবাসাতাম আপনাদের প্রতিটা ডেটিং আমি যেতাম।শুদু আপনাকে দেখব বলে।প্রতি দিন আমি আপনাকে ফোলো করতাম।আপনি আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিলেন সেদিন আমার এত কষ্ট হয় নি। কষ্ট হয়ছে সেইদিন যে দিন আপনি আপনার মেছ ছেড়ে চলে গেলেন।জানেন আমি আপনাকে পাগলের মতন খুঁজেছিলাম।কিন্তু কেউ আপনার খবর দিতে পারে নি।কেউকে তো বলেই যান নি।জানেন আমি টানা ২ই দিন কিছুই খাই নি।আপনার টেনশনে আমি প্রায় পাগল হয় যাচ্ছিলাম। এই মাত্র রিয়েদ ভাই বলল যে আপনি নাকি ভার্সিটি আসছেন।তাই হাসপাতাল থেকে ছুটে আসল,,,,,,,,,,
:হাসপাতাল মানে।????
:ভাবছিলাম বলব না।কেন যে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল।আসলে আমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েচিলাম।তাই হাসপাতাল এ আডমিট করায়।এখন কিছুটা সুস্থ
:এত ভালবাস আমাকে। কেউ কাউকে এতটা ভালবাসতে পারে তা আমি তোমাকে না দেখলে বুজা যাবে না
:,,,,,,,
:কিন্তু তানহা,,,,,,
;কোন কিন্তু নয়।আমাকে আর পিরিয়ে এ দিবেন না plzzzzz.।তা না হলে আমি বাচব না।(কান্ন করতে করতে জড়িয়ে ধরে বলল।)খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।আমিও ধরলাম। আর ও সুখের কান্না করতেছে।মনে মনে ভাবলাম।জুই যাওয়া তে ভালই হয়েছে।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে।আর আমার শার্ট ভিজতেছে।আমি বললাম
:এত কান্না কর কেন?
:তুমি বুজবা না।
:ও তাই নাকি???
:হুম।বুজলেত আর এত দিন কষ্ট দিতে না।দুরে রাখতে না।(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে)
:(আমি কি বলব ভেবে পাই না।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে)
:আর রাখব না দুরে আমার এই পাগলী টা কে ?????
:ভালবাসি খুব ভালবাসি
:আমিও
:কি?
:ভালবাসি
:কাকে?
:আমার এই পাগলী টা কে।
:আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?
:কখনওই না।এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখব।(ও আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।)
ছাড়ব না।আমি আমার এই পাগলি টা কে খুব ভালবাসি। ওকে কখন ছাড়ব না।