গল্পঃ ভুতুড়ে মেয়েটা

বাংলা ছোট গল্প| Blangla Love Stories Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo


গল্পঃ ভুতুড়ে মেয়েটা


(২য় পর্ব)

তাসফি আহমেদ

.
দেখলাম মেয়েটার গলা বেয়ে রক্ত পড়ছে।ছোট্ট মেয়েটা আমার গায়ের উপির বসে জোরে একটা চিৎকার দিল।চিৎকার দিয়ে আমার দিকে চাইল।তার বড় বড় নখওয়ালা হাত দুটো আমার দিকে এগিয়ে আসছে।ঠিক আমার হৃদপিন্ডটার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে।ততক্ষনে আমি ঘেমে একেবারে গোসল করার মত অবস্থা।চোখ দিয়ে ক'ফোটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।মায়ের মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে মার কি হবে।একা একা থাকবে মা? রুপার মায়াবি মুখটা ভেসে উঠছে।মেয়েটার সাথে হয়ত আর চন্দ্রবিলাশ করা হবে না।মেয়েটার এই ইচ্ছাটাও আমি পূরন করতে পারলাম না।ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।মেয়েটা ঠিক আমার বাঁপাশের বুকের উপর হাতটা রাখল।বিবৎস মুখ খানা নামিয়ে আনল আমার গলার কাছে।আমি নড়তে পারছি না।প্রতিবাদ করতে পারছি না।গায়ের সকল শক্তি দিয়ে আমি চিৎকার দিলাম কেবল। তারপর আর কিছুই মনে নেই।
.
:কিরে তুই এখানে শুয়ে আছিস কেন? আর এত জোরে চিৎকার দিলি যে? আমার জিবনে কোন মানুষকে এভাবে চিৎকার দিতে দেখি নি।
আমি মিটমিট করে চোখ গুলো খুলতেই মাসুদ কথা গুলো বলল।আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম।কিন্তু পারলাম না।উঠে বসার শক্তি টুকু আমার নেই।মাসুদ আমাকে আস্তে করে ধরে উঠাল।তারপর বিছানায় বসাল।আমি বিছানায় বসতেই বললাম,
:এক গ্লাস পানি দে তো?
ও উঠে গিয়ে টেবিল থেকে পানি ঢেলে আমাকে দিল।আমি এক ঢোকেই পুরো গ্লাসটা খালি করে ফেললাম।গ্লাসটা ওর হাতে দিতেই দেখলাম ও প্রশ্নবোধক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।আমি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই ওকে সব খুলে বললাম। সবটা শুনে ও বলল,
:ভাগ্য ভালো যে আমি সময় মত উঠতে পেরেছি। তা না হলে যে কি হত?
:তা তুই আজ উঠলি কিভাবে? তুই তো ঘুমালে আর চারপাশের খবর থাকে না।
:জানি না!হুট করেই তোর চিৎকারের আওয়াজ পেলাম।খুব অদ্ভুত স্বরে আওয়াজ দিলি তুই।এমন আওয়াজ আগে কখনই শুনি নি।তাই আওয়াজটা শোনা মাত্রই জেগে গেলাম।আমি কিছু বললাম না।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোনটা খুললাম।খুলতেই বেশ কয়েকটা মেসেজ চোখে পড়ল। নিশ্চই অনেক গুলো কলও দিয়েছে মেয়েটা।এখনও ঘুমায় নি মনে হয়।মেয়েটাকে নিয়ে যে কি করি।এত পাগলি মেয়েটা। ফোন বন্ধ পেলেই মেসেজ দেওয়া শুরু করে।যেন আমি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি।ভাবছি ফোন দিব কি না।নাহ্! এখন ফোন দিলেই কথা বলতে চাইবে।রাত প্রায় দুইটা ত্রিশ হবে।এখন ফোন দিয়ে কথা বললে শরির খারাপ করবে।এমনিতেই যে ধকলটা গেল।নাহ্।এখন ফোন দেওয়া ঠিক হবে।বরং ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে দেই।লিখলাম,"ঘুমাও। তুমি।আমি আছি।ঠিক তোমার পাশেই। ভালো মেয়ের মত ঘুমিয়ে পড় "
ফোনটা বালিশের পাশে রাখতেই ওপাশ থেকে একটা মেসেজ এল।তাতে লিখা,"আমার পাশেই থেক।চলে যাবা না।তুমি চলে গেলে আমার ঘুম আসে না।ভয় হয়।যদি তুমি হারিয়ে যাও।একদম আমার পাশ থেকে যাবে না।চুপটি করে বসে থাক। আমি লক্ষি মেয়ের মত ঘুমিয়ে যাব "
আমি ছোট্ট করে লিখলাম,"আচ্ছা ঘুমাও "
ততক্ষনে মাসুদ নিজের বালিশে মাথা রাখে শুয়ে গিয়েছে।এখন ঘুমায় নি।তবে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।আমি লাইটটা বন্ধ করে দিলাম।চাঁদের স্নিগ্ধ আলো বারান্দায় পড়ছে।বারান্দায় আলো পড়ায় রুমটাও কিছুটা আলোকিত হয়ে আছে।বিছানার পাশের জানালাটার একটা কপাট খোলা।সেটা দিয়ে চাঁদের মন রাঙানো আলো ঘরের মেজেতে পড়ছে।সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে মিষ্টি বকুল ফুলের মাতাল করা গন্ধ। আমি জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলাম।কিছু গ্রান নিজের মাঝে নিয়ে নিলাম। নিজের বিষাক্ত কিছু কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছেড়ে আরেকটু গ্রান নিজের মাঝে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।রুমের দরজাটা খোলা। বসার রুম থেকে কিছুটা আলো আমাদের রুমে পড়ছে।হঠাৎ করেই আবার কিছু একটার শব্দ হল।শব্দটা আস্তে আস্তে তিব্র হতে লাগল।কারো কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।আমি মাসুদকে একটা ধাক্কা দিলাম।ও ঘুমায় নিয়ে।ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
:আমি শুনতে পেয়েছি।
আমি কিছু বললাম না।শব্দটা আরেকটু তিব্র হল।খুব কাছ থেকে আসছে শব্দটা।হঠাৎ ই দরজা খোলার শব্দ।কেঁচ কেঁচ করে শব্দ হল।ততক্ষনে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে শব্দটা আমাদের রুমটার ঠিক বাঁপাশের রুমটা থেকে আসছে।ওই রুম আর আমাদের রুমের মাঝে দূরত্ব বেশি না।মাঝখানে শুধু দুইটা টয়লেট। এতটুকুই।আমি উঠে বসে গেলাম।মাসুদও উঠল।ততক্ষনে শব্দটা একেবারে কাছে চলে এল। বসার রুমে যেতে হলে আমাদের রুমের সামনে দিয়ে যেতে হয়।দরজা একটাই। শব্দটা আরেকটু কাছে এল।আমি আর মাসুদ দরজার দিকেই তাকিয়ে আছি।কান্নার আওয়াজ সেদিক থেকেই ভেসে আসছে।তারপর হঠাৎ সাদা ড্রেস পরিহিতা একটা ছায়া মূর্তি দেখতে পেলাম।আমি দেখেই খানিকটা আঁৎকে উঠলাম।মাসুদ চোখ গুলো বড় করে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা ধির পায়ে বসার ঘরের দিকে এগুল।সাথে সেই বিদকুটে কান্না তো আছেই।ও রুমে যাওয়ার পর লাইটটার দিকে একবার তাকাল।তারপর হঠাৎই লাইটটা আস্তে করে নিভে গেল যেন তার প্রভু তাকে আদেশ করেছে এবং সে সাথে সাথেই সেটা মান্য করেছে।বসার ঘরের জানালা গুলো খোলা।খুব বাজে গন্ধ হয়ে গিয়েছে ঘরটায়।তাই মাসুদ বলল জানালা গুলো খুলে রাখ। কিছুগন্ধ বাইরে চলে যাক।আমিও তাই করলাম।তাই জানালা গুলো খোলা।মেয়েটা আস্তে আস্তে সোফা গুলোর সামনে গেল।সোফার মধ্যখানে যে ছোট্ট টেবিলটা ছিল ঠিক সেখানেই গিয়ে বসে পড়ল। হাত দুটো দুই উরুর মাঝে রেখে মাথা উঁচু করে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কি জানি দেখছে।আর মৃদু আওয়াজ করে কান্না করছে।আস্তে আস্তে কান্নার আওয়াজ বাড়ছে।ওর মুখ বরাবর বাঁদিকে একটা জানালা আছে। সেখান দিয়ে চাঁদের মায়াবি আলো মেয়েটার বিবৎস চেহারা খানায় বসছে।আমরা মেয়েটার চেহারা দেখছি না।ঘন, ছোট, কালো চুল গুলো ছড়িয়ে আছে মেয়েটার পিঠের উপর।আমাদের দিকে পিঠ দিয়ে বসে বসে মেয়েটা কান্না করছে।আমি আস্তে করে উঠে গেলাম।আমাদের রুমের দরজাটা কিছুটা আটকাতে গিয়ে দেখা মিলল বাঁদিকের রুমটার।লাইট জ্বলছে রুমটায়।সেদিকে ধ্যান না দিয়ে আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম।  দরজাটা পুরো আটকালাম না। একটু ফাঁক করে মেয়েটাকে দেখতে লাগলাম।আমার মাথার উপর দিয়ে তাকিয়ে আছে মাসুদ।কিছু সময় আমরা সেদিকে তাকয়ে থাকলাম।সম্পুর্ন না হলেও আমি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি যে মেয়েটা একটা পেইন্টিং এর দিকে তাকিয়ে আছে।খুব সম্ভবত সেখানে একজন বাবা আর একজন মা আছেন।তাদের মাঝখানে আছে একটা ফুটফুটে মেয়ে।তবে মেয়েটার চেহারা কিংবা ওর বাবা মায়ের চেহারা আমি ঠিক ঠাউরে উঠতে পারছি না।তবে খুব অদ্ভুত লাগল এটা যে আমরা আগে পেইন্টিং টা লক্ষ্য করি নি।ওটা আমাদের চোখেও পড়ে নি।তাহলে কি এই মেয়েটি এই বাড়ির মালিকের মেয়ে? নাকি অন্য কেউ? অন্য কেউ হবে কেন? অন্য কেউ এখানে আসবে কেন? যেহেতু এই ঘরে সেহেতু মেয়েটা এই বাড়িরই হবে।কাল লোকটার কাছ থেকে এই বাড়ির মালিকের ইতিহাস জানতে হবে।আমি মাসুদকে বললাম,
:তুই কি পেইন্টিং টা আগে দেখেছিস?
ও মৃদু স্বরে বলল,
:কই না তো।আগে তো...
ও আর কিছু বলতে পারল না।আমি আর কিছু শুনার জন্যে প্রস্তুত নই।কেননা।আমাদের এখান থেকে মৃদু আওয়াজ মেয়েটার কানে গিয়েছে নিশ্চই। তা না হলে এমন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকাত না।আমি একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলাম মেয়েটার চোখ থেকে অঝোর ধারায় রক্ত পড়ছে।চোখে রক্ত জমে আছে।গালে রক্তের ছাপ স্পষ্ট। ও এইবার আমাদের দিকে বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে তাকাল ভ্রু কুছকে আমাদের দরজার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত একটা হাঁক ছাড়ল। তারপরেই হাওয়া হয়ে গেল।আমরা কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিন্তু মেয়েটাকে আর দেখলাম না।মাসুদ বলে উঠল,
:দরজা বন্ধ কর।তা না হলে রুমে ঢুকে পড়বে। আমি ঠিক তার আগেই দুরজা বন্ধ করে ফেললাম।দুজনেই যেই না পিছনের দিকে ফিরলাম তখনই দেখলাম মেয়েটা শুন্যে ভাসছেআমাদের থেকে হাত কয়েক দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আমারা দুজনেই দরজার সাথে লেপ্টে গেলাম।মেয়েটা আমাদের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে।যখন ঠিক আমাদের খুব কাছে চলে আসল ঠিক তখন আমরা জোরে চিৎকার দিলাম।কিন্তু মেয়েটা থামল না।আসে আসে আমাদের দিকে এগিয়ে এল।এই মারবে বলে!
.
চলবে...



ভুলত্রুটি মার্জনীয়

-তাসফি আহমদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url