Bangla Golpo: কাছে আসা


Bangla Golpo: কাছে আসা

তাসফি আহমদ



সকাল ছয়টা। বাস স্টেশনে বসে আছি। বন্ধুদের জন্যে অপেক্ষা করছি। রিমিকে ফোন দিয়েছি একটু আগে। বলছিল আসতে আর পাঁচ মিনিট লাগবে। সাদিকও চলে এসেছে। নিতু আর সাথিও যাবে। ওরা নাকি রিমির সাথেই আসছে। তাই আর ওদের ফোন দেই নি। ফোনটা বের করে সিয়ামকে ফোন দিলাম। সেও আসছে। খুব একটা দেরি হবে না বলেছিল। আমি আর সাদিক বসে রইলাম স্টেশনের চেয়ারে। সাদিক মোবাইল টিপাটিপিতে ব্যাস্ত। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। হঠাৎ ই ফোনটা  বেজে উঠল ।পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই স্ক্রিনে একটা নাম ভেসে উঠল। মিহিন! মিহিন ফোন দিয়েছে। ধরলাম না। কেটে দিলাম। ঠিক তার কয়েক সেকেন্ড পরেই ও আবার ফোন দিল। আমি আবার কেটে দিলাম। আবার দিল। আমি আবার কেটে দিলাম। এভাবে বেশ কয়েকবার ফোন দিতেই থাকল। যতবার ফোন দিয়েছে আমি ঠিক ততবার কেটে দিয়েছি। আমি ফোন ধরছি না দেখে মেসেজ দিল।
"কি রে! ফোন ধরছিস না কেন? "
আমি রিপ্লাই দিলাম না। ভালো লাগছে না। ডাটা অন করলাম। ফেবুতে ঢুকলাম। বেশ ক'টা নোটিফিকেশন ছিল। সেগুলো চেক করলাম। মেসেজ অপশনে গেলাম। নাহহ! মিহিন আমার মেসেজ সীন করে নি। কাল রাতে ওকে একটা মেসেজ দিলাম। একটা না! বেশ কয়েকটা দিয়েছি। কিন্তু ও সেগুলোর একটাও সীন করে নি। মন এমনিতেই খারাপ ছিল। তারপর এটা দেখে খারাপ লাগার মাত্রাটা আরেকটু বেড়ে গেল। মিহিনের আইডিতে গেলাম। ওর আইডিতে গিয়েই দেখলাম ওর নামের পাশের সবুজ বাতিটা জ্বলছে। আমি কিছু সময় ওর প্রোফাইলটা ঘাটাঘাটি করলাম। আমার যখন খুব মন খারাপ থাকে তখন আমি এমন করি। মিহিনের প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করি। ওর মুগ্ধ করা চেহারাটা দেখি। মায়ায় ভরা চোখ দুটো দেখি। কেন জানি না তখন আমার অদ্ভুত ভালো লাগে। বারবার মেয়েটার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয়। বেশ কয়েকবার ওর প্রেমে পড়েছিও। অদ্ভুত ব্যাপার হল আমি এখনো এই মেয়েটার প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছি। কিন্তু কেউই সেটা জানে না। আমি কাউকে জানাই নি। জানানোর প্রয়োজন বোধ করিনি। ভালোবাসলেই যে জানাতে হবে সেটা কিন্তু না। না জানিয়ে এক তরফা প্রেমের মাঝে অন্য রকম মজা পাওয়া যায়। যা সবাই পায় না।মেসেঞ্জারে টকিং করে আওয়াজ হল। মিহিন মেসেজ দিয়েছে। যাক মেসেজ গুলো দেখেছে এবার। সীন করে রেখে দিলাম। ডাটা অফ করে মোবাইলটা পকেটে রেখে দিলাম।
.
বাসে সবাই উঠে গেছে। আমি উঠতেই দেখলাম সবাই যার যার সিটে বসে গিয়েছে। আমার সিটটা রিমির পাশে। ও জানালার পাশে বসেছে ।আমি ওর পাশে বসলাম। বাস চলতে শুরু করল। সকাল বলে রাস্তা অনেকটা ফাঁকা ছিল।মোটামুটি ভালো গতিতেই চলছে গাড়ি। যাচ্ছি কক্সবাজার!  হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভার্সিটি বন্ধ নয়। অনেক দিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না বন্ধুদের সাথে। রোজ ক্লাস করে সবাই বোর ফিল করছিল। তাই হুট করে সিদ্ধান্ত নিলাম যে কক্সবাজার যাব। ব্যস! একবার বলাতেই সবাই রাজি হয়ে গেল।হঠাৎই মনে হল আমার পাঁ কাঁপছে। না! পাঁ কাঁপছে না। ফোন কাঁপছে। গোঁ গোঁ শব্দ করছে।আমি ফোনটা বের করলাম। মিহিন আবার ফোন দিয়েছে। নাহ্! ফোন আর খোলা রাখা যাবে না। তা না হলে এই মেয়ে জ্বালিয়ে মারবে। ফোন বন্ধ করে দিলাম। রিমিকে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। ও কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি তো লাগবেই। রিমি বলে উঠল,
:ফোন বন্ধ করলি কেন?
:এমনিই।
:আন্টি বা আঙ্গেল ফোন করে যদি ফোন বন্ধ পায় তাহলে তো ওরা টেনশন করবেন।
:সমস্যা নেই! উনাদের বলে এসেছি।
কিছু সময় কেউ কথা বললাম না। খানিকটা নিরাবতা নেমে এল। তারপর রিমি আবার বলে উঠল,
:মিহিন ফোন করেছিল?
:হুম।
:কেটে দিলি কেন?
:এমনিই।ভালো লাগছে না।
:ওর সাথে কিছু হয়েচে?
:নাহ! কি হবে! কিছুই হয় নি।
রিমি আর কিছু বলল না। চুপ করে থাকল। আমিও চুপ করে থাকলাম। বাসে উঠতেই দেখলাম রিমির চুল খোলা। কেন চুল খোলা রাখল সেটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। কেননা ওকে আমি আগে কখনই এমন চুল খোলা অবস্থায় দেখিনি। রিমি জানালা খুলে দিল। বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকল। ওর চেহারায় রাজ্যের মুগ্ধতা ভাসছে। জোরালো বাতাসে রিমির চুল উড়ছে। ও সেগুলো কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে। চুল গুলো আবার ওর ফর্সা মুখটায় পড়ছে। ও আবার সরিয়ে নিচ্ছে। কানের পাশে সুন্দর করে গুঁজে দিচ্ছে। রিমিকে সুন্দর লাগছে।
.
মিহিন হচ্ছে আমাদের ভার্সিটির এক সুনামধন্য নেতা গোষ্ঠির জনৈক নেতার একমাত্র আদরের বোন। মিহিন যেমন তার ভাইও তেমন। বেশ গম্ভির। কথা কম বলে। মিহিনের ভাইয়া কে আমি বেশ কয়েকবার কয়েকটা ছেলেকে মারতে দেখেছি। তাই আমি ভয়ে উনার আশেপাশেও থাকতাম না। মিহিনের দিকেও তাকাতাম না। ক্লাসের প্রায় ছেলের মুখেই ওর নাম শুনি। তাই তার একটু ভাব বেশি। সকল ছেলের এটেনশন পায় কি না! ভাব দেখিয়ে আসে আবার ভাব দেখিয়ে চলে যায়। কারো সাথে কথা বলে না। শুধু নিরা ছাড়া।নিরাই ওর একমাত্র বান্ধুবি ।আমাদের ক্লাসের ছেলে গুলো ওকে যতটা পছন্দ করত আমি ঠিক ততটাই ওকে এড়িয়ে চলতাম।এরপর রিমি সহ আরো কয়েকটা মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়।দেখা গেল যে আমি কম বেশ সবার সাথে কথা বলি কেবল মিহিন ছাড়া। মেয়েটা হয়ত সেটা বুঝতে পেরেছে।তাই মাঝে মাঝে আড় চোখে আমাকে দেখতে।তাকিয়ে থাকত আমার দিকে।আমার কেন জানি মনে হত পিছন থেকে কেউ আমাকে দেখছে।আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি তাকালেই দেখতাম মিহিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকালেই নিজের চোখ নামিয়ে নিত।আমি খুব একটা পাত্তা দিতাম না।সে তাকিয়ে থাকলে আমার কি? আসলে উপরে যতই বলি না কেন আমি ওর প্রতি একদম দূর্বল, ওকে আমার ভালো লাগে না।কিন্তু ভিরতে ভিতরে আমি সত্যিই মিহিনকে ভালোবাসাতে শুরু করি।আসলে ও যখন গোল গোল চোখে আমার দিকে তাকায় তখন আমার কেমন জানি লাগে।মনের মাঝে কেমন জানি ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়ে।যেন কোথায় তলিয়ে যাচ্ছে।অদ্ভুত ভালো লাগত ওর কাজল কালো চোখ দুটো।তবে আমি উপরে সেটা কোন ভাবেই ফুটিয়ে তুলতাম না।
.
সেদিন একটু বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলাম।পুরনো কিছু বন্ধু এসেছে।ওদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম একটা রেস্টুরেন্টে।সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম।আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সাড়ে দশটা বেজে গেল সেটা কেউই বুঝতে পারি নি।শেষে সবাই মিলে একসাথে ডিনার করেছি।বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে আসতে আসতে রাত প্রায় এগারোটা চল্লিশ বেজে গিয়েছিল।একটা রিক্সা নিয়ে আসছিলাম।পথেই দেখলাম একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি খুব একটা পাত্তা দিলাম না।কিন্তু কাছে আসতেই অন্য কিছু দেখলাম। মিহিন! মিহিন দাঁড়িয়ে আছে।যেন সেজে গুজে কোন পরি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।একটু কাছে যেতেই দেখলাম ও মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে।সুন্দর মুখটায় এমন কালো ছায়া মানায় না।রিক্সা দেখতেই ওর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কিন্তু যখন দেখল আমি রিক্সায় তখন ও কেমন জানি চুপশে গিয়েছে।আমার রিক্সা ওকে ক্রস করর চলে এসেছে কিছু দূর।আমি তাকাতেই দেখলাম ও কেমন জানি অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি রিক্সা ঘুরিয়ে ওর কাছে নিয়ে গেলাম।ওর কাছে যেতেই বললাম,
:কি ব্যাপার! এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে? বাড়ি যাবেন না।
ও মাথা নিচু করে বলল,
:রিক্সা পাচ্ছি না।তাই বাড়ি যেতে পারছি না।
আমি অদ্ভুত ভাবে আবিষ্কার করলাম যে এই মেয়েটার সাথে ক্লাসের গম্ভির, চুপচাপ, ভাবওয়ালি মেয়েটার কোন মিলই নেই।ওর প্রতি আমার কেমন জানি মায়া হল।বললাম,
:তা তোমার ভাইকে বললেই তো পার।সে তো তোমাকে নিয়ে যেতে আসতে পারে।
ও কিছু বলল না।বরং আমাকে অবাক করে দিয়ে চট করে আমার পাশে বসে পড়ল। আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করলাম।সাথে অস্বস্তিও।আসলে কখনো মেয়েদের সাথে রিক্সায় ভ্রমন হয় নি।তাও আবার রাতে। তাই কেমন জানি লাগছিল।রিক্সায় উঠে ও বলল,
:মামা চলেন! 
আমি কিছু বললাম না।আবুলের মত ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
:ভাইয়া আর বাবা! তারা কেউই বাড়ি নেই।রাতে ওদের কোথায় নাকি মিটিং আছে।তারা সেখানে! আমাকে নিতে আসার সময় ওদের নেই।
শেষের কথাটা বলার সময় একটু জোর দিয়ে বলল।আমি বললাম,
:তোমার ভাইয়ের চ্যালাপ্যালার তো অভাব নেই।একজনকে পাঠালেই তো হত?
:আপনার কি ধারনা! আমি ওদের সাথে যাব! ইম্পসিবল! প্রয়োজন হলে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাব।তবুও ওদের সাথে যাব না।আর তাছাড়া আমি বাবা কিংবা ভাইয়া ছাড়া অন্য কারো সাথে গাড়িতে চড়ি না।প্রয়োজন হলে একা একা আসি।
আমি চট করেই বললাম,
:তাহলে আমার সাথে উঠলে যে?
ও চট করেই উত্তর দিয়ে দিল না।কিছু সময় পর অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল।বলল,
:আমি উঠেছি সেটা আমার ব্যাপার।আপনাকে বলব কেন? আর শুনুন! আপনার না অনেক ভাব। ভাব একটু কম দেখিয়েন।
:সেকি! আমি আবার কখন ভাব দেখালাম।
ও একটু ঠোট বাঁকিয়ে বলল,
:ঢং।ক্লাসের সব মেয়ের সাথে কথা বলেন কেবল আমি ছাড়া।এমনকি নিরার সাথেও।আচ্ছা ওদের মাঝে কি আছে যা আমার মাঝে নেই।
:অহংকার! ওদের মাঝে এটা নেই।যেটা আপনার মাঝে আছে।
ও অন্য মনষ্ক হয়ে বলল,
:আচ্ছা! আমি কি খুব বেশি অহংকারী!
:হুম।খুব বেশি।
:আসলে ছোট বেলা হতে এমন শিক্ষা পাই নি। কি ভুল আর কি খারাপ এর মাঝে তপাতটাও কেউ বুঝিয়ে দেয় নি।
:কেন? আপনার মা নেই।তারা এসব শিক্ষা তারাই তো দেয়।
:বাবার এমন অপকর্মের জন্যে মা বাবাকে ছেড়ে চলে গেছে।আরো আগেই।এই ধরনী ত্যাগ করেছে।জানেন! আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হত মায়ের কাছে চলে যেতে।যদিও এটা চাইলেই পারা যেত না।আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত মরে যাই।কিন্তু...
:ছিঃ ছিঃ! এসব কি বলছেন।থাকুক না এসব কথা।
ও কিছু বলল না।চুপ করে থাকল কিছু সময়।নিচের দিকে তাকিয়ে থাকল।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা নিজের চোখের জল গুলোকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।আমি আমার ভার্সিটির সবচেয়ে গম্ভির মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে বেশ অবাক হচ্ছি।কিছু সময় পরই ও কান্না করে দিল। শব্দহীন কান্না।আমি আ লত করে ওর কাঁদে হাত রাখলাম।বললাম,
:বড় মেয়েদের এভাবে কান্না করতে নেই।কান্না করবেন না।দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
:তাই যেন হয়।
আমি কিছু বললাম না আর।চুপচাপ বসে থাকলাম। মিহিনও বসে থাকল।যখন ওদের বাসার সামনে চলে এসেছি তখন ও বলেছিল,
:শুনুন! এখন থেকে আর এত ভাব দেখাবেন না।বেশি ভাব ভালো না।
:জি আচ্ছা।আপনিও একটু কম ভাব নিয়েন।
ও কিছু বলল না।হাসল কেবল।আমার খুব ইচ্ছে হল ওই হাসির প্রেমে পড়তে।আমি সত্যি সত্যি সেদিন ওর হাসির প্রেমে পড়ে যায়।এরপর আমাদের খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়।এখন অবশ্য এই অহংকারী মিহিন আর অহংকারী নয়। ওর অহংকার এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে।খুব ফ্রেন্ডলি হয়ে গেছে ও।এতই ফ্রেন্ডলি হয়ে গেছে যে এখন ওর ছেলে বন্ধুও বেড়ে গেছে।এর মাঝে অবশ্য রিমির সাথে ওর এক ধপা লড়াই হয়ে গেছে।ঝগড়ার কারনটা আমি আজও জানতে পারলাম না।তাই এখন ওরা দুই গ্রুপে পরিনত হয়েছে।দুইদিকে দুই গ্রুপ।মাঝখানে আমি।বেশ কিছুদিন একটা প্যারায় ছিলাম এটা নিয়ে।আমি জানি মিহিন আমার প্রতি দূর্বল। আমিও কম না।কিন্তু ও যা করছে একদম ঠিক করে নি।অনেক গুলো ছেলের সাথে মিসছে।আমার সাথে খুব একটা কথাও বলে না।তবে দৈনিক আমাদের মাঝে একবার কথা হত।সকালে! সকালের ঘুমটা ওই ভাঙ্গাত।হাজারো ছেলের সাথে মিশলেও এই নিয়মটা ঠিক থাকত।কিন্তু ওর এত মিলামেশা আমার ভালো লাগে নি।তারউপর ও নাকি এখন রাজনীতি করবে।মহিলা রাজনীতি। ব্যাপারটা আমার একেবারে ভালো লাগল না।আমি ওকে এই ব্যাপারে নিশেধ করেছিলাম।কিন্তু ও আমাকে সেদিন বলেছিল ওর পারসোনাল বিষয়ে ইন্টারফেয়ার না করতে।সেদিন অনেক কষ্টে কথাটা হজম করেছি।খুব খারাপ লেগেছিল। কষ্ট পেয়েছি ভীষণ।যার রক্তে যেটা আছে সে তেমনই হবে।এটা নিজেকে শান্তনা দিলাম মাত্র।মূলত এই কারনেই আজ কক্সবাজার আসা।মন ভালোর উদ্দেশ্যে।
.
বাস থেকে নেমেই সর্ব প্রথম রিমি বেশ কয়েকটা ছবি তুলল।প্রথমে সবাই মিলে তুলল।তারপর আমি আর ও মিলে কয়েকটা তুলেছিল।ফেবুতে দিবে বলল।আমি কিছু বলি নি।পকেট হতে ফোনটা বের করলাম।খুলেই বাসায় ফোন দিলাম প্রথমে।ফোন ধরেই বাবা একটা ধমক দিলেন।মা নাকি আমার ফোন বন্ধ পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।যাক সেদিক সামলিয়ে নিলাম কোন রকমে। কথা বলে ফোনটা পকেটে রাখলাম।ঠিক তারপরেই আবার ফোন এল।মিহিন! আবার ফোন দিয়েছে।আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম।কলটা কেটে ওর নাম্বার ব্লক লিষ্টে রেখে দিলাম।এগিয়ে গেলাম বন্ধুদের দিকে।সবাই মজা করছে।আমি কেন করব না।আমি ওদের সাথে মজা করতে থাকলাম।প্রায় বিশ মিনিট পর আবার একটা কল এল।ফোন বের করতেই দেখলাম বাবার নাম্বার। বাবা এখন আবার কেন কল দিল।কিছুক্ষণ আগেই তো কথা হল।মার কিছু হয়ে যায় নি তো।দ্রুত ফোন ধরলাম। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কারো কান্নার আওয়াজ পেলাম।তারপর একটা বড় নিশ্বাস ফেলল ওপাশের মানুষটা।যেন হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান কিছু একটা ফিরে পেয়েছে।।আমি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি সে কে হতে পারে।আমি চুপ থাকলাম। ও পাশ থেকে ভাঙ্গা কন্ঠে আওয়াজ এল,
:কেন এমন করছিস আমার সাথে।কেন?
:তুই! তুই ফোন করেছিস কেন?
:তাসফি! প্লিজ।এভাবে বলিস না।কষ্ট হয়।
:তাহলে কোনভাবে বলব শুনি! তা তুই কি আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলছিস সেদিন।
:ক্ষমা করে দে প্লিজ।খুব রেগে ছিলাম সেদিন।তাই এমনটা বলেছি। প্লিজ।
:ফোন রাখ।কথা বলে খামখা মুড অফ করবি না।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।কি ভেবেছে ও।মেয়েটা আমার বাসায় চলে গেল? বাবার ফোন থেকে আমাকে ফোন দিয়ে মন গলাবে! এত সহজ না।
.
দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল সবাই।আমি বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।নিজেদের ছবি গুলো দেখছিলাম।আমার আর রিমির ছবিই সব থেকে বেশি।ফেবুতে ঢুকে কিছু পিক আপলোড না করলেই নয়। মিহিনের মেসেজ দেখলাম।এড়িয়ে গেলাম।নোটিফিকেশন চেক করতেই দেখলাম রিমি আমার আগেই আমার আর ওর কিছু ছবি ফেবুতে ছেড়ে দিয়েছে।আমাকে ট্যাগ দিয়েছে।আরো অবাক করা ব্যাপার হল যখন দেখলাম মিহিন সব গুলোতে রাগি রিয়েক্ট দিয়ে রাখছে।ব্যাপারটা মন্দ লাগল না।তিনটে বেজে গিয়েছে।আমি সবাই মিলে হাঁটছিলাম।প্রচন্ড বাতাস এখানে। বেশ ভালো লাগছে।ঠিক তখনই একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটল।সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখ দুটো বেশ ফোলা ফোলা।লাল হয়ে আছে।চুল গুলো উসকোখুসকো। তার চোখে তখনও জল খেলা করছিল।ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার পাশের সবাই আমাকে রেখে সামনে এগিয়ে গেল।আমি মিহিনকে ক্রস করে চলে যাবার সময় ও আমার হাত টেনে ধরল।টেনে ওর সামনে নিয়ে এল।আমার চোখে চোখ রাখল।বলল,
:আর কত কষ্ট দিবি। এবার প্লিজ আমাকে মাপ করে দে।কষ্ট হয় আমার।
:কষ্ট সেদিন আমারো হয়েছিল।হাত ছাড়।
:নাহ! আমি এই হাত ছাড়ার জন্যে ধরি নি।
:ছাড় বলছি।
:নাহহ! আমি ছাড়ব না।প্লিজ এমন করিস না আমার সাথে।ওই দিন খুব  রেগে গিয়েছিলাম।তাই এমন করেছি।
আমি কিছু বললাম না।নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।চলে আসতে থাকলাম।ও দৌড়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। কান ধরে আমার দিকে গোল গোল চোখে তাকাল।বলল,
:সব বাদ দিয়ে দিলাম। না করব রাজনীতি, না কোন ছেলের সাথে ঘুরব।তুই ছাড়া।কেবল তোর সাথেই ঘুরব।
:কেন? আমি কে যে তুই আমার জন্যে সব ছেড়ে দিবি।যা না।গিয়ে রাজনীতি কর।ছেলেদের সাথে মিশ।আমার কি?
:সত্যিই তোর কিছু না?
আমি কিছু বললাম না।চুপ করে থাকলাম।ও চট করেই বলে উঠল,
:খুব ভালোবাসিস তাই না!
আমার চোখ দুটো কেন জানি ভিজে এল।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। ও আবার বলল,
:জানিস! আমিও না তোকে প্রচন্ড ভালোবাসি।প্রচন্ড! আজ এক দিনে তুই আমার ফোন ধরিস নি।কথা বলিস নি।জানিস আমার দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল।তোর সাথে কাটানো মূহুর্ত
গুলো কেবল চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকল।তোকে প্রচন্ড মিস করতে শুরু করি।আমার কেন জানি মনে হল আমি তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না।একদম না।আমার এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমি তোকে ছেড়ে বাকি জিবন কিভাবে থাকব বল।কিভাবে থাকব।তোকে যেদিন থেকে ভালোবাসাতে শুরু করি সেদিন থেকেই নিজেকে তোর নামে করে দিয়েছি।তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি অনেক।তুই প্লিজ আমার স্বপ্ন গুলোকে অধরা রাখিস না।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।
মিহিন এতটুকু বলে থামল। আর কিছু বলল না।আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওর চোখ এখনো ছল ছল করছে।সেখানে জলের সাথে ভালোবাসা ভাসছে।পরম পবিত্র ভালোবাসা।যেটা একান্তই আমার জন্যে। আমার কেন জানি মনে হল এই মেয়েটাকে বেশি কষ্ট দেওয়া যাবে না।কোন ভাবেই না।কষ্ট দিলে বরং আমি নিজেই বেশি কষ্ট পাব।মেয়েটা সত্যিই আমাকে ভীষন ভালোবাসে।ওর চোখ তার প্রমান।আমি অদ্ভুত ভাবে আরেকটা জিনিস আবিষ্কার করলাম যে মিহিনের চুল খোলা।ও শাড়ি পরেছে।ঠোটে গোলাফি লিপস্টিক। চোখে গাঢ় কাজল।বাতায়ে মিহিনের খোলা চুল গুলো উড়ছে।মুখের সামনে চলে আসছে।ও সেগুলো কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে।আবার আসছে।আবার কানের পাশে সুন্দর করে গুঁজে দিচ্ছে। মুখে বিজয়ের হাসি দেখা যাচ্ছে ওর।মিহিনকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম কেবল।কিছু বললাম না।ও নিজেও আর কিছুই শুনতে চাইল না।দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি তাকে পরম মায়ায় জড়িয়ে ধরলাম।ভাবলাম,
"যাক!অবশেষে প্লেন কাজে দিয়েছে।"
আমি যা বোকার বোকা! আমি ঠিকই জানতাম আমার দ্বারা এই মিহিনকে কখনই প্রপোজ করা সম্ভব হবে না।আমি সেটা পারবও না।আমার মতে এর থেকে ভয়ংকর কাজ আর কিছুই নেই।তাই এত বড় ঝুঁকি নিলাম। আমি ভাবতেও পারি নি ঔষধটা এত তাড়াতাড়ি কাজ করবে।যাক এখন অন্তত বাঁচা গেল।পিছনের বন্ধু গুলোর দিকে হাত উঁচিয়ে ইশারা করলাম।থ্যাংকিউ দিলাম।যেটা মিহিন দেখতে পেল না।জড়িয়ে থাকা অবস্থায় মিহিন হুট করেই বলে উঠল,
:নে! এবার প্রপোজ কর।
এই যা।সেরেছে! সব একেবারে পানি হয়ে গেল।আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
:কি? কি করতে বলেছিস?
:কেন! প্রপোজ।
:দেখ! প্রপোজের ভয়ে এত বড় একটা প্লেন করেছিলাম।আমি মোটেও এখন এমন ভয়ানক কাজটা করতে চাই না।একদম না।ইহা আমার পক্ষে সম্ভব না।
:কিহহহ! তারমানে এইসব... দাঁড়া! তোকে দেখাচ্ছি মজা।প্রপোজ তো তুই আজ করবিই।দেখি না করে কই যাস।
আমি মিহিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অবস্থা বেশি সুবিধার না।যেকোন মুহুর্তে আমার উপর হামলা আসতে পারে।আমি বললাম,
:দেখ! ভালো হবে না কিন্তু।
কে শুনে কার কথা।মিহিন আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে এগিয়ে এল।যেন আস্ত খেয়ে ফেলবে।ও যতই এগিয়ে আসছে আমি ততই পিছিয়ে যাচ্ছি।এক সময় ও দৌড়াতে শুরু করল।আমিও তাই করলাম।আর যাই হোক! আমি কোন মতেই আজ প্রপোজ করব না।দরকার হয় লাশ হয়ে বাড়ি ফিরব।তবুও প্রপোজ করব না।হারামি বন্ধু গুলো দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে।মজা নিচ্ছে।কিছুক্ষনের জন্যে আমার মনে হল এরা বন্ধু না।বন্ধু নামে কলংক!


(সমাপ্ত)


ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমদ

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন



বাংলা গল্প| Love Stories Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url