Bangla Golpo: মিহিন

বাংলা-গল্প-Bangla-Choto-Golpo-Bangla-Golpo


Bangla Golpo: মিহিন 

তাসফি আহমেদ


মিহিনের ভীষণ রাগ হচ্ছে।কতটা রেগে আছে সেটা সে নিজেও জানে না।মিহিন রেগে গেলে ওর মুখ লাল হয়ে যায়।কানও লাল হয়।কানের গোড়া বেশ উত্তপ্ত হয়ে যায়।কানের পর্দা ভেদ করে যেন আগুন বের হয়।মিহিনের এমন অবস্থা দেখে বেশ মজা পায় তাসফি।মিহিনকে রাগিয়ে দিতে পারলে ভীষণ মজা লাগে ওর।বেশ আনন্দের সহিত ব্যাপারটা উপভোগ করে।এই মূহুর্তেও ঠিক তার ব্যতিক্রম হল না।ও খুশি খুশি দৃষ্টিতে মিহিনের দিকে তাকিয়ে থাকল। এই দেখে মিহিনের রাগটাও আরেকটু চটে গেল।ওর এক মুহুর্তের জন্যে মনে হল এই গাধাটার সাথে তার বিয়ে না হলে সত্যিই অনেক ভালো হত।মানুষ এতটা বোকা হয়! আশ্চর্য! মানুষটার কি ক্লান্তি নেই।এই নিয়ে ক'বার সিড়ি বেয়ে নিচে নামল কে জানে? এই মানুষটাকে নিয়ে আর পারা যায় না।
.
তাসফি অফিস থেকে আজ একটু জলদিই এল।এসেই মিহিনকে বলল তার খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।প্রতিদিন একই রকম খাবার দিয়ে ইফতার করতে আর ভালো লাগছিল না।মিহিনও নিষেধ করি নি।একদিন অন্যকিছু হলে তাতে মন্দ কি? খিচুড়ির জন্যে পোলাউর চাল ও মাংস সহ বেশ কিছু উপকরণের প্রয়োজন।তাই তাসফিকে একটু রেস্ট নিতে দিয়েই বাজারে পাঠায়।কিন্তু কিসের কি? সে চাউল আর রাঁধুনি গুড়ো মশলা আনতে ভুলে গিয়েছে।রান্না মূল উপাদানটাই সে আনতে ভুলে গেছে।মিহিন বকে ঝকে আবার পাঠালো।তাসফি আবার গেল।আসার সময় চাল আনলো ঠিকই কিন্তু গুড়ো মশলা আনতে ভুলে গিয়েছে।মশলার বদলে এনেছে বাবুর জন্যে খেলনা।এসবের কোন মানে হয়? আর মানুষটার বুঝি কষ্ট হয় না।সে কি জানে না যে তার কষ্ট হলে মিহিন নিজেও কষ্ট পায়।এমন বোকামি মানুষ করে? মিহিন নিজের রাগটা ঠিক কন্ট্রোল করতে পারল না।চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,
:মশলার প্যাকেট কই?
তাসফি এমন একটা ভাব করল যেন সে সত্যিই ভুল করে প্যাকেটটা নিয়ে আসে নি।ভ্রু কুছকে বলল,
:আরে তাই তো! প্যাকেটটা কই গেল? নিয়েছিলাম তো?
:আরে হাদারাম। নিলে প্যাকেট কই?এখন কি তোর মন্ডু নিয়ে রান্না করব আমি?এত বোকা হয়েছিস কোত্থেকে! হায় আল্লাহ! এ কাকে বিয়ে করলাম আমি।এই কোন হাদারাম এসে আমার কপালে জুটল।ধুরর...
তাসফি হুট করেই আবিষ্কার করল যে মিহিন অসম্ভব রেগে যাচ্ছে এবং ওকে তুই-তুকারি  করছে। আশ্চর্য! এমন তো কখনো হয় নি? তুই-তুকারি এই প্রথম করছে।তার মানে ব্যাপারটা এখন হাতের বাইরে।মিহিন আসলেই প্রচন্ড রেগে গেছে।তা না হলে এমন করত না।আমিও অতিরিক্ত করে ফেলেছি।ধুরর ছাই! নিজের পাঁয়ে নিজে কুড়াল মারলাম।এখন করি কি?
তাসফি কথা গুলো ভাবছিল।এমন সময় মিহিন আবার বলল,
:কি ব্যাপার কথা বলছিস না কেন! এখন চুপশে গিয়ে মুখটা বাংলা পাঁচের মত করে রাখলি যে?শুন, তোর খিচুড়ি খাওয়ার খুব সখ হয়েছে না।এখন তুই নিজে রেঁধে খা।আমি রাঁধতে পারবো না।
এই বলে মিহিন হন হন করে নিজের রুমে যেতে থাকল।তাসফির মনটা হুট করেই খারাপ হয়ে গেল।করতে চাইল কি আর হল কি! মুখ ঘুরিয়ে দরজা দিয়ে বের হবে এমন সময় চোখ গেল তার মায়ের রুমের দিকে।তার মা দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি ভীষণ খুশি। ওদের মাঝের ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছেন।তাসফির সাথে চোখাচোখি হতেই উনি মৃদু হাসলেন।তাসফির মলিন মুখটা আরেকটু মলিন হয়ে গেল।কাছে এসে বলল,
:মা তুমি হাসছো! এদিকে তোমার ছেলের অবস্থা প্রায় নাস্তানাবুদ। 
:ঠিকই হয়েছে! আচ্ছা তুই এমন করিস কেন মেয়েটার সাথে।এত বোকামি মানুষ করে।
:এখন কি তুমিও বকা দিবা নাকি?
:দিব না কেন সেটা বল। মেয়েটাকে রাগিয়েছিস। এখন সে রাঁধবে না।অথচ তুই বাজারে যাওয়ার পর রান্না নিয়ে কত আহ্লাদই না করল মেয়েটা। এভাবে রাঁধবে, এই করবে সেই করবে।কত কথা বলে গিয়েছে আমাকে।এখনই তুই দিলি মেয়েটার মন ভেঙ্গে।এটা কি ঠিক করেছিস।
:আমি মানছি আমি ভুল করেছি।এখন তুমি একটু হেল্প কর না প্লিজ!
:তোদের ব্যাপার তোরা সামলা।আমি কেন সাহায্য করব।
:মা! এমন করো না।পরে কিন্তু ইফতারও করতে পারব না।জলদি করে তোমার বউকে নিয়ে রান্না ঘরে যাও। আমি এসে যেন তোমাদের দুজনকে রান্না ঘরে দেখি।ঠিক আছে?
তাসফি উত্তরের অপেক্ষা করল না।পিছন ফিরে হাঁটা ধরল।কিছুদূর যেতেই ওর আম্মু বলল,
:বাহ! ছেলের সখ কত!যেভাবে আদেশ করছে যেন আমরা এই ঘরের কাজের বুয়া।শুন, আমি যেতে পারব না।প্রয়োজন হলে আজ বাসায় ইফতার হবে না।তবুও যাব না।
তাসফি কিছু বলল না।হাসল কেবল।তারপর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
.
মিহিন নিজের রুমে এসে বিছানার উপর বসে আছে।কোন মতেই নিজের রাগ কমাতে পারছে না।রাগ যেন বেড়েই যাচ্ছে।তবে যতই রাগ হোক না কেন ওর প্রচন্ড খারাপও লাগছে।মানুষটা কে আবার নিচে নামতে হবে।এই বাড়িতে লিফটও নেই।এখন পাঁচ তলা থেকে নামতে হবে নিচে।আবার উঠতে হবে।এই রোজা রেখে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে যে কতটা কষ্ট সেটা মিহিনের বেশ ভালোই জানা আছে।তারউপর অফিস থেকে এসেছে কিছুক্ষণ আগে।আচ্ছা এই ছেলেটা এমন কেন? এই যে আমি এত বকলাম একটু প্রতিবাদও করল না।ইস! ঝাড়ি খেয়ে ছেলেটার মুখটা কি মলিন হয়ে গেল! আর যাই হোক তাসফির মুখের বিষন্নতা মিহিনের মোটেও ভালো লাগে না।তাই মিহিন নিজের সিদ্ধান্ত 
পরিবর্তন করল।সে রান্না করবে।ছেলেটা খুব সখ করেছিল।ওর চাওয়াটাকে এভাবে ফেলে দিতে পারবে না ও।মিহিন যখন উঠবে উঠবে ভাবছে ঠিক তখনই ওর শাশুড়ি ঢুকলেন ওর রুমে। এসে মিহিনের পাশে বসলেন।বললেন,
:খারাপ লাগছে তাই না!
মিহিন কিছু বলে না।মাথা নিচু করে রাখে।তাসফির আম্মু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।বলে,
:কি করবে বল! আমার ছেলেটাই যে এমন।একটু বেশিই করে ফেলে।
মিহিন নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকে।বলে,
:সে না হয় বুঝলাম।কিন্তু ওর কতবার উঠানামা করতে হয়েছে ভেবে দেখেছেন? এই রোজা রেখে এতবার উঠানাম করা কি কষ্টের না! ও নিজের কষ্ট নিজে বুঝে না।ওর কষ্ট হলে যে অন্য কারো কষ্ট হয়ে সেটাও সে বুঝে না।পরে অসুখ বাধিয়ে ঘরে উপড় হয়ে পড়ে থাকবে।এসব কি ঠিক?
:মোটেও ঠিক না।আজ যদি রোজা না হত তাহলে তোমার সাথে আমি সহ ওকে বকা দিতাম।কিন্তু এখন তো ওকে বকা দিতে পারছি না।সিড়ি বেয়ে উঠানামায় কষ্ট হয় ওর।তারউপর রোজা।এদিকে তোমার একধপা ঝাড়ি খাওয়াও শেষ। মুখটা যে এত কালো হয়েছে বলে বুঝাতে পারব না।এখন যদি তুমি ওকে আবার বকা দাও তাহলে ওর মনই ভেঙ্গে যাবে এদিকে ছেলেটা তার প্রিয় খাবার খেতে চাইছে।এখন ওকে এভাবে হতাশ করে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক হবে? 
মিহিন কিছু বলে না।নিচের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে।কিছু একটা ভাবছে ও।তাসফির আম্মু আবার বললেন,
:রাগ না হয় তুমি করলে এবং রাগ করেই থেকো।এখন আসো।আমরা বউ-শাশুড়ি মিলে রান্নাটা সেরে ফেলি।চল!
.
মিহিন আর তাসফির আম্মু রান্না করছে। রান্না ঘরে দুজনের গল্প করার আওয়াজ আসছে।মাঝে মাঝে দুজন শব্দ করে হাসছে।তাসফি ড্রয়িংরুমে টিভির সামনে বসে সেগুলো শুনার চেষ্টা করছে কিন্তু শুনতে পারছে না ঠিক করে।ও খানিকটা বিরক্ত হচ্ছে।বিরক্তির কারণ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।তবে মনে মনে প্রচন্ড ভয়ে আছে ও।মিহিন মেয়েটাকে একটু বেশি রাগিয়ে দিয়েছে ও।এখন রেগে গিয়ে যদি কথাই বন্ধ করে দেয় তাহলে তাসফির বাঁচাটাই মুশকিল হয়ে যাবে।তাসফি ঠিক করল ও রান্না ঘরে যাবে।বউ-শাশুড়ির রান্না কতদূর এগুলো সেই বাহান ধরে যাবে। তবে তার মূল লক্ষ্য থাকবে মিহিনকে দেখা।তার রাগত চেহারা দেখা।তাসফি উঠে দাঁড়াল। ঠিক তখনই বাবুর কান্নার আওয়াজ এল।বাবুর বয়স আট মাস।কোল ছাড়া সে কিছুই বুঝে না।বেশ দুষ্ট হয়েছে ছেলেটা।বাবুর একটা সুন্দর নাম আছে। মাহির আহমেদ।মিহিনের সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে। নামটা রেখেছে তাসফিই।তাসফি কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না।তার এখন মিহিনকে দেখতে ইচ্ছে করছে।এদিকে বাবুর কাছেও যাওয়া উচিৎ। তাসফি ঠিক করতে পারল না ও কোনদিকে যাবে।একটু ভেবেই রুমের দিকে গেল।মিহিন বাবুর কান্না শুনে এখানে আসবে নিশ্চই।তখনই মিহিনকে দেখা যাবে।
.
বাবুর কান্না থামে নি।ও তাসফির কোলে থেকেও কান্না করছে।এমনটা হওয়ার কথা না।কিন্তু এমনটাই হচ্ছে।তাসফি অবাক হল বেশ।ছেলেটা এত কাঁদছে কেন! হুট করেই মনে হল বাবুর খিদে লেগেছে নিশ্চই।তা না হলে বাবার কোলে উঠে কাঁদত না ছেলেটা।তাসফি ওকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হল।কিচেনের সামনে গিয়ে বলল,
:এই মিহি! শুনছো! বাবু উঠেছে।খিদে লেগেছে।দেখো কেমন হা করে কান্না করছে।
তাসফি মিহিনকে দেখতে পেল।আগুনের তাপে মুখটা লাল হয়ে আছে। আগুনের তাপে নাকি প্রচন্ড রাগে সেটা ঠিক বুঝতে পারছে না ও।তাসফি  আরেকটু ভালো করে মিহিনকে লক্ষ্য করল।মিহিনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।নাকের ডগাতেও ঘাম জমে আছে।কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে রাখা! তাসফি অদ্ভুত ভাবে আবিষ্কার করল যে মিহিন মেয়েটাকে এই অবস্থায় দারুন লাগছে।অদ্ভুত সৌন্দর্য বিরাজ করছে তার মাঝে।মুখে স্নিগ্ধতা আর কোমলতা যেন লেপ্টে আছে।এই মেয়েটাকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না যে একটু আগে সে তার স্বামীর সাথে বেশ রুক্ষ ব্যবহার করেছে।ও যে এতটা কঠোর সেটা ওকে দেখে মোটেও বুঝা যায় না।অল্প সময়ের জন্যে তাসফি যেন ঘোরে পড়ে যায়।ঘোর লাগা মায়া মেয়েটার মাঝে।
.
মিহিন এক প্রকার জোর করেই বাবুকে তাসফির কোল থেকে নিল।বলতে গেলে কেড়ে নিল বাবুকে।ঠিক তখনই তাসফির হুস ফিরে আসে।মিহিন বাবুকে নিয়ে রুমে চলে গেল।তাসফির হুস ফিরতেই সে পিছন পিছন গেল।কিন্তু কোন লাভ হল।মিহিন দরজা বন্ধ করে দিল। তাসফি এবার সত্যিই খানিকটা হতাশ হল।খানিকটা খারাপও লাগল।মেয়েটাকে আসলেই বেশি রাগিয়ে দেয়া হয়েছে।এটা মোটেও ঠিক হয় নি।তাসফি ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় চুপচাপ বসে থাকল। তার খারাপ লাগছে ভীষণ।মেয়েটাকে আসল সত্যিটা বলা হয় নি।বললে সে আরো রেগে যেতে পারে।সেই ভয়টাও তাসফির মাঝে আছে।তাসফি চুপচাপ বসেই থাকল।টিভি অন করা যেতে পারে।কিন্তু ওর সেই ইচ্ছেটাও এখন নেই।কিছুতেই ভালো লাগছে না ওর।বেশ কিছু সময় পর মিহিন রুম থেকে বের হল।কোলে ছোট্ট বাবুটা।সে নিজের হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল বেশ আনন্দের সহিত ছুসে খাচ্ছে।যেন ললিপপ খাচ্ছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এই আঙ্গুল খেতে পেরে ভীষণ খুশি।এবং এর থেকে মজার জিনিস আর কিছুই হতে পারে না।মিহিন হাঁটতে হাঁটতে বেশ আগ্রহের সাথে বাবুর এই আঙ্গুল ছোসা দেখল।বাবু বেশ কিছু দিন ধরেই নিজের হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুসছে।এতে যে বাবু অদ্ভুত মজা পাচ্ছে সেটা তাকে দেখেই বুঝা যায়।আর এই জিনিসটাই মিহিনের বেশ ভালো লাগে।তাই মুগ্ধ হয়ে বাবুর আঙ্গুল ছোসা দেখে।প্রথম প্রথম মিহিন ঠিক বুঝে উঠতে পারল না যে আসলে আঙ্গুলটায় কি আছে।কি এমন আছে যাতে বাবুর এত আগ্রহ।তাই কৌতুহল মেটাতে মিহিন একদিন বাবুর আঙ্গুল ছুসে দেখল।কিন্তু তেমন কিছুই পেল না।তবে বাবুরা এই বয়সে নাকি নিজের হাতে বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুসতে ভালোবাসে।এটা সে শুনেছে কোথাও।মিহিন হাঁটতে হাঁটতে তাসফির কাছে চলে এল।তাসফি উঠে দাঁড়াবে ঠিক তখনই মিহিন বাবুকে তাসফির কোলে খুব যত্ন করে রাখল।তারপর কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা কিচেনে চলে গেল।
.
তাসফি বাবুর জন্যে নিয়ে আসা খেলনাটা বাবুর হাতে দিল।বাবু প্রথম প্রথম ঠিক ভালোভাবে ধরতে পারল না।কিন্তু যখনই মোটামুটি ভাবে ধরতে পারল তখনই সোজা নিজের মুখের দিকে নিয়ে যেতে থাকল। তাসফি সেটা সরিয়ে দিল প্রথমবার।বাবু বাধা মানল না।সে ঠিকই খেলনাটা নিজের মুখের সামনে নিয়ে গেল এবং ছুসতে চেষ্টা করল। তাসফি যখন জিনিসটা সরিয়ে দিল ঠিক তখনই বাবু কান্না শুরু করে দিল।তাসফি পড়ল মহা জ্বালায়।এখন কান্না থামায় কে? তাসফি খেলনাটা বাবুর হাতে আবার দিল এবং সাথে সাথেইই পিচ্ছিটার কান্না থেমে গেল।তাসফি অবাক হয় ভীষন।বিড়বিড় করে বলে,
:যেমন মা তেমন ছেলে! এত জেদি যে কোত্থেকে হল কে জানে!
মিহিন কিচেনের আড়াল থেকে ব্যাপারটা লক্ষ্য করে। ভীষণ মজা পায় ও।তাসফিকে একটু হলেও অস্বস্তিতে পেলা গিয়েছে।এখন বুঝুক। সামলাক বাবুকে।মিহিন ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ ভাবে।ঠোটের কোনাটা খানিকটা চওড়া হয়ে খুব সুন্দর একটা স্নিগ্ধ হাসিতে পরিনত হত।তাসফি যদি হাসিটা একবার দেখত তাহলে কেবল বোকার মত চেয়েই থাকত। ঘোর ধরত ওর চোখে।
.
মিহিনের সাথে তাসফির আর কোন কথা হয় নি।বলতে গেলে তাসফি নিজে থেকে কথা বলতে যায় নি।আর মিহিন এত সহজ মেয়ে না যে সে এসে কথা বলবে।ইফতারের পর মেয়েটাকে দেখতে ক্লান্ত লাগছিল।তাই নামাজ পড়েই বিছানায় শুয়ে পড়ল।এটা দেখে তাসফি আর কিছু বলল না।সে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল।
তাসফিকে ল্যাপটপ নিতে দেখে মিহিনের রাগ হল ভীষণ।মিহিন যে রাগ করে আছে এতে যেন তাসফির কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।রাগ ভাঙাতেও আসল না! মিহিন  এক খন্ড রাগ যুক্ত অভিমান নিয়ে শুয়ে থাকল। মানুষটা ওকে একটুও বুঝতে পারে না।
.
তারাবীহ এর নামাজ পড়ে এসে দেখল মিহিন বিছানায় শুয়ে আছে।ওর নামাজ পড়া শেষ।তাসফির একটা দৈনন্দিন রুটিন এটা।সে তারাবীর নামাজ পড়ে এসে দেখবে মিহিন শুয়ে আছে।তাসফি মিহিনের পাশে যাবে।এবং মিহিনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকবে।ওপাশ ফিরে থাকা মিহিন তখন মৃদু হাসবে এবং একটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। এপাশ ফিরে সে চটজলদি তাসফির বুকের সাথে লেপ্টে যাবে।অদ্ভুত শান্তি অনুভুত হয় তখন মিহিনের।যেন এত শান্তি পৃথিবীর কোথাও নেই।
কিন্তু আজ তেমনটা হচ্ছে না।তাসফি মিহিনের কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছে।তবুও দুরুদুরু পায়ে সে মিহিনের পাশে গেল।মিহিনের পাশে বসতেই মিহিন খানিকটা নড়ে উঠল।এমন একটা ভাব করল যেন সে বুঝতেই পারে নি তাসফি এসেছে।আসলে তা কিন্তু না।মিহিন অনেক্ষণ অপেক্ষা করছিল মানুষটার জন্যে। এসে যখন ভয়ে মিহিনের পাশে আসছে না দেখে খানিকটা মজা পেল মিহিন।তাসফি মিহিনের কাঁদে হাত রাখল।বলল,
:জেগে আছো?
মিহিন চোখে মুখে বিরক্তি ছাপ এনে কড়া স্বরে বলল,
:জেগে থাকলে কি হবে শুনি?
:মিহি তুমি কি খুব রেগে আছো!
:বলতে পারছি না।
:দেখো আমি আসলে না বুঝেই তোমার সাথে এমন করেছি।আমি বুঝতে পারি নি যে তুমি এতটা রেগে যাবা।আমাকে ক্ষমা করে দাও।প্লিজ! এই দেখো।কান ধরেছি।সরি সরি সরি।প্লিজ মিহি মাপ করে দাও আমায়।
মহিন তাসফির মুখের দিকে তাকাল।ইস! এই মলিন মুখ দেখে এই পৃথিবীর কেউই ক্ষমা না করে থাকতে পারবে না।মিহিনের বুকের বাঁ পাশে একটু নাড়া দিয়ে উঠল। খানিকটা মায়া হল ওর।তাসফি আবার বলল,
:দেখো।এই কান ধরেছি। আমি আর কোন দিনই এমন করবো না।কখনই না।আমি আসলে ভুল গুলো ইচ্ছে করেই করি।তোমার সাথে রাগারাগি করতে আমার ভালো লাগে।আমি সব গুলো বাজার আগেই নিয়ে এসেছিলাম।তারপর ছাদে রেখে দিয়ে এসে তোমার সাথে এমন করে...
এতটুকু বলেই তাসফি নিজের জিহ্বায় কামড় দিল। এই যা! একটু আবেগি হতেই মুখ দিয়ে আসল সত্যটা বের হয়ে গেল।এখন কি হবে? এমনিতে রেগে আছে। তারউপর যেন আরেকটু রাগিয়ে দিলাম।নিজের উপর ধিক্কার দিল তাসফি। সে যে আসলেই বোকা সেটা এখন মেনে নিচ্ছে ও।তাসফি গোল গোল চোখে মিহিনের দিকে তাকাল।দেখল মিহিনের ভ্রু জোড়া কুছকে আছে।গাল ফুলে গিয়েছে চট করেই। যাহ! এবার আর রেহাই পাওয়া যাবে না।তাসফি চোখ নামিয়ে নিল। মিহিন কড়া স্বরে বলল,
:এক্ষুনি আমার সামনে থেকে যাও।আজ তুমি বারান্দায় ঘুমাবে।এই রুমে তুমি আর থাকছ না।আর যদি তুমি থাকতে চাও তাহলে আমাকে বারান্দায় যেতে হবে। চয়েজ তোমার।
তাসফি উঠে দাঁড়াল।তার মুখ মলিন।চোখে হতাশা।মিহিন একটা বালিশ ছুড়ে মারল। বালিশ নিয়ে তাসফি বারান্দায় চলে গেল।
.
তাসফি বারান্দায় শুয়ে আছে সত্যি সত্যিই। তবে তার মন ভালো না।এদিকে মশা কামড়ে অবস্থা নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে।সে কি করবে সেটা ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। এদিকে তাসফি রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় যেতেই বালিশে মুখ চেপে হাসতে থাকল মিহিন।মানুষটা এত বোকা! একটা ছোট্ট মিথ্যা লুকিয়ে রাখতে পারে না।
.
মিহিন অনেকক্ষন বিছানায় এপাশ ওপাশ করল। তার ঘুম আসছে না।মানুষটার বুকে মাথা রেখে এতদিন ঘুমিয়ে আসছে।আজ কিভাবে একা একা ঘুমায়।তাই আজ সেই শুন্যতায় ভুগছে ও।মিহিন নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না।বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল।একটা কয়েল জ্বালাতে হবে।মানুষটাকে মশায় আদর করছে অনেক।মিহিনের হিংসে হচ্ছে এতে।তার স্বামিকে আদর করার অধিকার কেবল তারই। কোন মশা সেই অধিকার ফলাবে এ হতেই পারে না।
.
মিহিন বারান্দায় আসতেই দেখল তাসফি বারান্দায় শুয়ে আছে।সে আর অপেক্ষা করল না।মানুষটাকে আর কষ্ট দেওয়া যাবে না।সে খুব দ্রুত তাসফির পাশে গেল এবং তাসফির এক হাত মেলে সে হাতের উপর শুয়ে পড়ল। আলত ভাবে জড়িয়ে ধরল তাসফিকে। তাসফি নিজের হাত দিয়ে মিহিনকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে এল।মিহিন অভিমানে ভরা কন্ঠে বলল,
:একটুও ভালোবাস না আমায় তাই না।
:মিহি তোমায় কতটা ভালোবাসি সেটা তুমি আমার থেকে বেশ ভালোই জানো।
:কচু! তাহলে বিকেলে বাবুকে নিয়ে যে রুমে এলাম তখন তুমি এসে রাগ ভাঙ্গালে না কেন? 
:যাব কিভাবে।রাগ করেই তো দরজা আঁটকে দিলে।
:হাদারাম একটা।ধাক্কা দিলেই তো দরজা খুলে যেত।ছিটকিনি দেই নেই।
:আমি কি জানতাম নাকি।এমনিতেই  ভয়ে আমার অবস্থা খারাপ।
:এত ভয় পাও কেন? আমি কি বাঘ বা ভাল্লুক!
:সেগুলো হলেও চলত।তোমার যা রাগ।এরচে বাগ ভাল্লুকই ভালো।
:কিহ! কি বললা তুমি!
:ঠিকই বলেছি। তোমার এত রাগ কেন গো!
:এই! একদম চুপ। আবার রাগাবা না বলে দিলাম।তা না হলে এখানেই মেরে ফেলবো।
:মারো না।তোমার হাতে মরতে পারলেও শান্তি পেতাম।
:দেখো।এসব ফালতু কথা বলবা না আর।এগুলো একদম ভালো লাগে না আমার।
:আচ্ছা! আর বলব না।আর তোমাকে রাগাবোও না।
:তুমি আমাকে রাগাবে না! তুমিই! তোমাকে আমার হাড়ে হাড়ে চেনা আছে।আমাকে না রাগিয়ে শান্তি পাও না তুমি।
:বুঝতেই যখন পারো তখন এত রাগো কেন?
:বোকা! আমি না রাগলে তো খেলাটাই ভেস্তে যাবে।মজা হবে না।
:সেটাও তো কথা।তবে শুনো! একটু লিমিটের ভিতর রাগো।বেশি রাগলে আমার ভয় হয়। কখন কি করে ফেল।রাগলে তো আবার তোমার মাথা ঠিক থাকে না।
:আচ্ছা।কম রাগবো।তবে আজকের পর থেকে তো আর এই বাজার নিয়ে আর রাগাতে পারবা না।
:হাহা।তুমি এই বাজার নিয়েই আবার রাগবে।তোমাকে আমার চেনা আছে।আর তোমাকে রাগানোর সকল পন্থা আমার জানা আছে।
:দেখি।এখন রাগাও তো!
তাসফি মৃদু হাসল।তারপর বলল,
:পাশের বাসার মিরু মেয়েটা আমাকে কি বলেছে জানো!
মিরা লক্ষ্য করল যে তার মেজাজটা সত্যি সত্যিই গরম হয়ে যাচ্ছে।অল্প অল্প করে রাগ বাড়ছে।তাসফিকে আর বলতে দেওয়া যাবে না। পরে পুরোপুরি মেজাজটাই গরম।রাগ বেড়ে গেলে কি হবে সেটা ও নিজেও জানে না। তাই ওকে থামাতে হবে এবং তাসফিকে থামানোর উত্তম একটা ঔষধ তার কাছে আছে।মিহিন আর দেরি করল না।চুমু থেরাপিটা দিয়েই দিল।তাসফি খানিকটা অবাক হল।বলল,
:এত দ্রুত কাজ করবে জানলে কথাটা আরো আগেই বলতাম।
:আর কখনই ওর মেয়ের কথা মুখে আনবে না।তা না হলে সারা জিবনের জন্যে চুমু খাওয়া হারাবে।
:আচ্ছা! ওই মেয়ের কথা কখনই মুখে আনবো না।
:কেবল ওই মেয়ে না।কোন মেয়ের এত সুনাম করার প্রয়োজন নেই।
:তোমারও না!
:মাইর খাবা!
:না চুমু খাবো।
:তাহলে ওসব কথা বলা বাদ দিতে হবে।
:বাদ দিলাম।
:এইতো লক্ষি বাবুটা আমার।
:এখন দাও।
:এত তাড়াহুড়োর কি আছে।দিচ্ছি তো।আমি তো কোথাও যাচ্ছি না।
তাসফি মৃদু হাসল।বলল,
:শুনো! শুভ কাজে মোটেও দেরি করতে নেই। বুঝেছো?
মিহিন মৃদু হাসল।বলল,
:এত পাগল মানুষ হয়!
এই বলে মিহিন নিজের মুখ উঁচিয়ে সামনে এগুলো।
তাসফি কিছু বলতে পারল না।আগত কিছু একটার জন্যে অধির আগ্রহে চেয়ে থাকল ও।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ।

Next Post Previous Post
2 Comments
  • Shawal Hossain Tamim
    Shawal Hossain Tamim ৭ অক্টোবর, ২০২০ এ ৯:২১ PM

    অসাধারণ ভাই😍

    • Author
      Author ৭ অক্টোবর, ২০২০ এ ১০:৪১ PM

      Thank you

Add Comment
comment url